কলঙ্ক পর্ব ৫

#কলঙ্ক
#৫ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



ভাইয়া বললেন,’মা,তোমরা আমার কাছে কী লুকাচ্ছো বলতো?’
মা থতমত খেয়ে যায়। কিছু বলতে পারে না।কথা গুলিয়ে আসে।বাবা মাথা নত করে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দার দিকে চলে যায়।
ভাইয়া এবার আমায় ধমক দেয়।বলে,’কী করেছিস তুই বল? কিসের জন্য তোকে পড়াশোনা বাদ রেখে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে বাবা মা?’
আমি কিছু বলার আগেই মা বলে উঠেন,’কিছু না। ওর মানসিক একটু সমস্যা হয়েছে।কী সব বানানো গল্প বলে বেড়ায়।’
ভাইয়া বললেন,’কী গল্প বলে?’
‘ওই যে একটু আগে কাঁদলো। কেঁদে কেঁদে বললো তার সন্তান মারা গেছে!’
ভাইয়া, যে কি না মার সাথে কোনদিন গলা উঁচু করে কথা বলেনি।সে আজ মাকে ধমক দিয়ে বললো,’মেয়েকে লায় দিয়ে দিয়ে এই পর্যন্ত নিয়েছো তাই না?ছেলেটা কে? কোন ছেলের সাথে এসব হয়েছে?’
মা চুপ মেরে যান। মুখে আঁচল চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেন।
ভাইয়া এবার আমার কাছে আসে।এক চড় দিয়ে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বিছানার উপর। তারপর আবার চুল টেনে ধরে উঠিয়ে নেয় আমায় চোখ বড় বড় আর লাল করে তাকায় আমার দিকে। তারপর বলে,’ছেলেটা কে ছিল?’
আমি কথা বলতে পারি না। ভয়ে ভেতরটা কাঠ হয়ে যায়। প্রচন্ড তেষ্টা পায় হঠাৎ।
আমায় চুপ করে থাকতে দেখে ভাইয়া আরেকবার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আমায়। এবার আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়ি শক্ত মেঝেতে।পড়ে গিয়ে আমার হাত ছিলে যায়। ঠোঁট কেটে গিয়ে কাটা স্হান থেকে লাল টকটকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে।
মা দৌড়ে আসে আমার কাছে।আমায় ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।
ভাইয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,’সত্যিটা না বললে আমি ওকে আজ মেরেই ফেলবো!’
বলে ভাইয়া আবার আমার দিকে ছুট নিয়ে আসতে উদ্ধত হয়। কিন্তু ভাইয়াকে মা আসতে দেয় না।বলে,’থাম তুই।সব বলছি।’
মা সবকিছু খুলে বলে ভাইয়ার কাছে।
ভাইয়ার রাগ এবার আরো বাড়ে।পাক ঘর থেকে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো বঁটি নিয়ে আসে সে।আর গর্জন করে বলতে থাকে,’তোকে আজ মেরেই ফেলবো আমি শুয়োর!তোর এতো বড় কলিজা?এতো বড় নষ্ট তুই!’
ভাইয়া পাগলের মতো ছুটে আসছে আমার দিকে।তার হাতে উদ্ধত দাঁড়ালো বঁটি।এক কোপ দিলেই শেষ।
একটু আগেও আমি ভেবেছিলাম, কোন ভাবে মরে যেতে পারলে ভালো হতো! কিন্তু এখন ভয় করছে।মনে হচ্ছে, মৃত্যু কঠিন জিনিস। এই মৃত্যুকে আযরাঈল নিজেও প্রচন্ড ভয় পায়!
মা চিৎকার করে বলছেন,’খবরদার বলছি নেহাল! খবরদার!আরেক পা এইদিকে আগাইলে থাপরাইয়া তোর দাঁত গুঁড়ো করে ফেলবো বদমাশ!’
কিন্তু ভাইয়া মাকে ভয় পাচ্ছে না।মার কথা সে কানেও তুলছে না।
মা এবার আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লেন।মারতে যদি হয় আগে মাকে মেরে তারপর আমায় মারতে হবে।
ভাইয়া উপায়হীন হয়ে বঁটিখানা দূরে ছুঁড়ে ফেললো। তারপর দেয়ালের কাছে গিয়ে নিজের মাথা দেয়ালের সাথে শক্ত করে ঠুকতে ঠুকতে কান্নাভেজা গলায় গর্জন করতে করতে বলতে লাগলো,’তূর্ণা,তোর মতন এমন লক্ষ্মী একটা মেয়ে কী করে এমন করতে পারে!তুই না ফরহাদ মাস্টারের মেয়ে? লজ্জা করে না তোর?এই মুখ এখনও বাবাকে দেখাস কী করে?মরে যেতে পারিস না?নাকি মৃত্যু আসে না তোর কাছে?’
ভাইয়া কাঁদছে। কাঁদছে আর দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকছে ‌।মাথা ঠুকার কারণে তার কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।লাল টকটকে রক্ত। দেখলেই ভয় ধরে যায়। আমার চোখ হঠাৎ যায় ভাইয়া যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ডানের খালি জায়গাটাই।ঠিক ওখানে এসে দাঁড়িয়েছে আমার মৃত ভ্রুণ।তার দুটো চোখ উপড়ানো।মাথা থেঁতলানো। গায়ে ক্ষত বিক্ষত।দেখলেই ভয় ধরে।সে এসে কেমন করে তাকিয়ে আছে ভাইয়ার মুখের দিকে।
আমি ধমকের গলায় বললাম,’আবার এসেছিস এখানে?যা বলছি এখান থেকে।যা!’
ভ্রুণটা বললো,’যাবো না। মামাকে দেখতে এসেছি।আজ রাতে আমি মামার সাথে থাকবো। সারারাত মামার মুখে গল্প শুনবো।’
আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আবার।
মা আতংকে অস্থির হয়ে উঠে বললেন,’এই তূর্ণা,মা,মারে,কী হয়েছে তোর?’
আমি কথা বলতে পারছি না।গোঙাচ্ছি। গোঙাতে গোঙাতে অস্পষ্ট করে বলছি,’ও আবার এসেছে। আবার! ভাইয়াকে দেখতে এসেছে। মামার মুখের গল্প শুনতে চায় ও।’
আমার দাঁতের সাথে দাঁত লেগে আসছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমি সেন্সলেস হবো।
ভাইয়া দৌড়ে এলো আমার কাছে।তার ওই রাগ,ক্ষোভ অভিমান সব মুহূর্তে মাটির সাথে মিশে গেল।সে এসে হাঁটুগেড়ে বসে আমার একটা হাত টেনে নিলো তার কোলের উপর। তারপর আমার উপর অনেকখানি ঝুঁকে এসে কান্নাভেজা গলায় ডাকলো,’তূর্ণা,এই তূর্ণা!’
আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলাম মুহূর্তে। ভাইয়া আমার কাছে এসেছে। আমার হাত ধরে মধুর গলায় ডাকছে আমায়!
আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতে চাইলাম।ওর ডাকের সাড়া দিতে চাইলাম। কিন্তু সম্ভব হলো না!
এর আগেই সারা শরীর কেমন–

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here