#কাছে_দূরে♥️
#moumita_mehra
#পর্ব___১৫♥️
ঘড়ির কাটায় সময় এখন ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট। একটু পরই হীরের রাতে খাবার আর ঔষধ নিয়ে হাজির হবে কিরন আর শিরিন। শিরিন হলো হসপিটালের খুব পুরোনো এবং বিশ্বস্ত নার্স। তার ব্যাপারে সকল খোঁজ খবর নিয়ে তবেই হীরের জন্য রাখা হয়েছে। মেয়েটাও কিরনের থেকে কিছু কম যায়না! দু’জনেই সমান দায়িত্ববোধ নিয়ে হীরের দেখাশোনা করছে। হীর তাদের সেবা পেয়ে অল্পদিনেই বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে। সকালের দিকে ডাক্তার সাহেব একবার এসে হীরের শারীরিক কন্ডিশন চেক করে গিয়েছেন। যেতে যেতে বলেছেন, তেমন আর কোনো চিন্তা নেই। অল্প কিছুদিনের ভেতরেই হীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। কাল একবার নিয়ে গিয়ে চেকআপ করিয়ে আনলে পরে আর যেতে হবেনা। ডাক্তারের কথায় ভরসা পেলেন সবাই। হীরের শারীরিক কন্ডিশন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক বলে সানিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলায় আগ্রহী হলেন আজিম সাহেব।
বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে হীর। হাতে হুমায়ুন আহমেদের একখানা উপন্যাসের বই। নামটা খুব সম্ভবত ‘ময়ূরাক্ষী’ হবে। রুবি কোমর বেঁকে পড়তে চেষ্টা করল। হীরের হাতের নীচে পড়ায় অনেকটাই ঢেকে গিয়েছে নামটা। তবুও দাঁত খিঁচিয়ে পড়ল সে। রুবি পড়াশোনা সেভাবে না শিখলেও কোনো লেখা দেখলে সে টুপ করে পড়ে নিতে পারে। এই গুনটা সে একা একাই রপ্ত করেছে। আর তার এই গুনের জন্য মাঝমধ্যে হীরের থেকে বাহবা পেতে তার ভীষণ ভালোই লাগে। হীরের মনোযোগ এতক্ষণ বইয়ের মধ্যেই আঁটকে ছিলো। হঠাৎ মনে হলো চোখের সামনে কেউ নড়াচড়া করছে। যার দরুন পড়া থেকে তার মনোযোগ ঘেটে গেলো। হীর মুখ উঁচিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ল বিরক্তিতে ফুটে ওঠা রুবির অদ্ভুত মুখখানা!
—-” কিছু বলবি?”
স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হীরের প্রশ্ন পেয়ে রুবি নড়েচড়ে দাঁড়ালো। মুখটা অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাউকে যেন খুঁজল। অতঃপর হীরকে উত্তরের অপেক্ষায় না রেখে জবাব দিলো,
—-” একটা কতা কইতে আইছি!”
—-” কি কথা?”
হীরের প্রশ্নে রুবি তার কুঁচকানো কপালখানা চওড়া করে বলল,
—-” ভাইজান হুদাই আফনের লিগা দুইডা বেডি লইয়া আইছে.. (হীর তাকাতেই) ন,,,না মানে দুইজন নার্স নিয়া আইছে! আমি কি আফনার সেবা করতে পারতাম না আফা? আমি তো সারাক্ষণ আফনার একটা ডাকের অপেক্ষায় রই! হেইডা কেউ একটু খেয়াল করল না!”
হীর আঁড়চোখে তাকালো রুবির দিকে। রুবি গাল ফুলিয়ে হীরের জবাবের অপেক্ষা করছে। হীর উপন্যাসের বইটার দিকে একবার তাকিয়ে পড়া লাইনটা আরেকবার পড়ল। অতঃপর বইটা পাশে সরিয়ে রেখে রুবির দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এসব কথা আমায় বললে কি হবে? আমি তো আর নার্স রাখিনি। রেখেছো তোর ভাইজান। তাই এই কথা গুলো আমাকে না বলে তোর ভাইজানকে গিয়ে বল?”
হীরের কথা শুনে রুবির পুরো মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো। চোখ মুখ কুঁচকে নিয়ে বলল,
—-” ভাইজানরে কইলে তো হেয় আমারে বটি নিয়া কাটতে আইবো!”
হীর হেসে ফেললো রুবির কথা শুনে। হাসতে হাসতে না সূচক মাথা নেড়ে বলল,
—-” এটা তোর ভুল ধারনা। তুই একবার বলে তো দেখতে পারতিস!”
—-” আমার সাহসে কয় না। আমার হইয়া আফনে কইবেন আফা?”
—-” হু তারপর আমাকেও তোর মতো দা-বটি নিয়ে মারতে আসুক! তোর দিকে এলে তুই না হয় দৌঁড়ে পালাতে পারবি কিন্তু আমি? আমি তো ঠিক করে হাঁটতেই পারিনা! দৌড়াবো কি করে?”
রুবি চিন্তায় পড়ল হীরের কথা শুনে। চিন্তিত মুখে বলল,
—-” সত্যিই তো! ভাইজান আফনারে তাড়া করলে আফনে কেবাই পালাবেন!”
—-” হুম তাহলে ভাব। তোর ভাইজানকে আমি বলব নাকি তুই বলবি?”
রুবি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো হীরের দিকে। কিছু বলবে এমন সময় হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে ভেতরে ঢুকল শিরিন। হীর আর রুবিকে কথা বলতে দেখে শিরিন মুচকি হেসে হীরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বিছানার উপর খাবারের ট্রেটা রেখে পাশে বসল। রুবি শিরিনের দিকে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। হীর রুবির যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে হাসল। শিরিন খাবার সাজাতে সাজাতে হীরের উদ্দেশ্যে বলল,
—-” শরীর এখন কেমন লাগছে ম্যাডাম?”
শিরিনের প্রশ্নে হীর পূর্নদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালো। হাসি হাসি মুখ করে বলল,
—-” একদম ফ্রেশ লাগছে।”
—-” গুড। রাতে আপনার জন্য আজ হালকা খাবার আনলাম। এটা খেয়ে ঔষধ খেয়েই কিন্তু শুইয়ে পড়তে হবে। কেমন?”
হীরের হাসি মুখ খানা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। গাল ফুলিয়ে বলল,
—-” তোমাদের এই জলদি ঘুমিয়ে পড়া রুলসের জন্য আমার উপন্যাস টা এখনও শেষ হয়নি! দেখো শেষ পর্যায়ে এসে আঁটকে আছি!”
শিরিন হাসল। হীরের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলল,
—-” আর মাত্র কয়েকদিনই এই নিয়ম মানতে হবে ম্যাডাম। তারপর আপনি আবার নিজের লাইফস্টাইলে ফিরতে পারবেন। আপনি আবার আগের মতো সব নিজের নিয়মে করতে পারবেন।”
হীর মৃদু হেসে ছোট্ট করে জবাব দিলো,
—-” হু।”
এরই মাঝে হীরের রুমে প্রবেশ করল কিরন। কিরনকে ঢুকতে দেখেই শিরিন বলে উঠলো,
—-” তুমি আবার উঠে এলে কেন? আমি না বললাম আমি আজকে ম্যাডামের খেয়াল একা রাখতে পারব!”
কিরন ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালো শিরিনের দিকে। আজ কিরনের প্রচুর মাথা ব্যাথা হচ্ছে। হাত-পাও কেমন ঝিম ধরে যাচ্ছে। শরীরটা থেকে থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। সকাল থেকেই নিজের সাথে হওয়া এই অস্বাভাবিক লক্ষন কিরন বুঝতে পারছে কিন্তু এর সঠিক কারন কি সে এখনও আন্দাজ করে উঠতে পারেনি। সাবাব বা টিম মেম্বারদের কাউকেই সে এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। তার ধারনা ছিলো খানিক্ষন বিশ্রাম করলেই ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি। বরং ক্রমশ আরও বেড়েই চলেছে। শিরিন তার অবস্থা দেখে বলল, আজ সে একাই হীরের সাথে থাকবে। কিরন বরং বিশ্রাম করুক। কিন্তু কিরন নিজের ডিউটি ফেলে কখনও বিশ্রাম নিতে পারেনা। তার মনের ভেতর অস্বস্তি হয় খুব। তাই সে না পেরে আবারও চলে এলো। শিরিনের প্রশ্নের ছোট্ট করে জবাব দিলো,
—-” স্যার জানতে পারলে বকাঝকা করতে পারে। তাছাড়া আমার তেমন সমস্যা হচ্ছে না।”
হীর দু’জনের আলাপচারিতার মুল বিষয় কি বুঝতে না পেরেই প্রশ্ন করল,
—-” কি হয়েছে তোমাদের?”
কিরন হীরের দিকে তাকালো। মিষ্টি করে হেসে বলল,
—-” তেমন কিছু নয় ম্যাডাম। আজ আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছিলো তার জন্যই..”
—-” কি বলছো? তোমার শরীর খারাপ লাগছে আর তুমি আমার সেবা করতে চলে এলে? দিস ইজ নট ডান! তুমি কি সাবাব ভাইয়াকে ভয় পাচ্ছো? সে কি বলবে না বলবে তা নিয়ে ভাবছো?”
—-” না না, সেরকম কিছু নয় ম্যাডাম। আপনি ব্যস্ত হবেন না আমি কিন্তু এখন একদম ঠিকাছি।”
হীর শিরিনের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণস্বরে বলল,
—-” ওকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে ও ঠিকাছে?”
শিরিন তড়িঘড়ি করে না সূচক মাথা নাড়ল। হীরের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বলল,
—-” একদমই মনে হচ্ছে না। আমিও তো তাই ওকে বারবার করে বলছি! আমি আজকে একা আপনার কাছে থাকতে পারব ম্যাডাম। কিন্তু দেখুন ও তো ওর গান গেয়েই যাচ্ছে!”
হীর কিরনের দিকে তাকিয়ে আদেশের ভঙ্গিতে বলল,
—-” তুমি এক্ষনি রুমে গিয়ে রেস্ট করবে। আমি আর কোনো কথা শুনবো না!”
কিরন অধৈর্য্য হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হীরের খাবার পর ঔষধ বাছাই করতে করতে বলল,
—-” আচ্ছা আচ্ছা আমি যাচ্ছি! তার আগে শিরিনকে অল্প একটু হেল্প করে দিয়ে যাই প্লিজ! আপনার ঔষধ গুলো খাইয়ে আপনার ঘুমোনো অব্দি আমি থাকি। তারপর না হয় চলে যাবো?”
হীর বাঁধ সাধতে নিলে কিরন অনুনয় করে বলল,
—-” প্লিজ ম্যাডাম না করবেন না।”
কিরনের ভাব ভঙ্গিমা দেখে হীর মৃদু হাসল। চোখ ঝাপটে শিরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আচ্ছা ও কি কাজ ছাড়া থাকতে পারেনা বলো তো?”
শিরিন হাসল। সাথে কিরনও মুচকি হাসল। হীরের খাবার শেষ করে ঔষধ খাওয়ার মাঝেই রুমে প্রবেশ করলেন নাজমা বেগম আর সানিয়া। তারা কিছুক্ষন হীরের সাথে সময় কাটিয়ে শুভ রাত্রি জানিয়ে চলেও গেলেন। কিরন হীরের বিছানা ঠিক করতে করতে শিরিন হীরের পায়ে জেল লাগিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন মালিশ করার মাঝেই হীর ঘুমিয়ে পড়ল। হীর ঘুমিয়ে পড়তেই শিরিন আবারও তাড়া দিলো কিরনকে গিয়ে বিশ্রাম করার জন্য। কিরন আর পারল না থাকতে। যাবে যাবে এমন সময় হঠাৎ হাজির হলো সাবাব। হীর ঘুমিয়েছে কিনা সেটাই তদারকি করে আবার চলে গেলো। সাবাব যেতেই কিরনও চলে গেলো নীচতলায়। নিজের মতো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই শরীরে ভর করল একরাজ্যের ঘুম। চেয়েও যে সজাগ থাকা সম্ভব নয় বুঝেই ঘুমিয়ে গেলো সেও। এক এক করে আহমেদ ভিলার প্রত্যেক ব্যাক্তি ঘুমিয়ে গেলো। রাত বাড়তে থাকল। চারপাশ নির্জন নিরব হয়ে উঠল। বাড়ির সব মানুষ ব্যাতিত কেবল দু’জন মানুষ নির্ঘুম রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন জানে অন্যজন ঘুমায়নি। আর অন্যজন জানে বাকি সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমচ্ছে। এই সুযোগ, যা করার এখনই করতে হবে।
মধ্যরাত! ঘুমের ঘোরেই হীরের মনে হচ্ছে কেউ তাকে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধছে। সে ঘুমের মধ্যেই হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে। কিন্তু যে তাকে বাঁধছে, সে বেপরোয়া ভাবে তাকে বেঁধেই চলেছে। শক্ত দঁড়ির চাপে হীরের শরীরের ব্যাথা করছে। দুই বাহু, হাত,পা, শরীর সব জায়গাতেই যেন পেঁচিয়ে যাচ্ছে দঁড়ি। হীর নড়াচড়া করতে করতে হঠাৎ চোখ মেলে তাকালো। কয়েক মুহুর্তের জন্য ঘটনাটা দুঃস্বপ্ন মনে হলেও তা ধীরে ধীরে যেন বাস্তবে রূপ নিতে দেখল। পুরো ঘর অন্ধকার মনে হতেই গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো হীর। আচমকা হীরের ঘুম ভেঙে যেতে পারে সামনের মানুষটার ধারনা ছিলোনা। কারন সে তো তাকে হাই ডোজের ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলো! হঠাৎ তার মনে হলো ঔষধ গুলো সব পাশাপাশিই রেখেছিলো কিন্তু মাঝখান থেকে কিরন সব ঘেটে আবার ঠিক ঔষধ গুলোই হীরকে খাইয়ে ছিলো। পরপর রুমের ভেতর হীরের বাড়ির লোক আসাযাওয়া করছিলো বলে তখন ঘুমের ঔষধটার কথা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
হীর ভয়ে চোখ খুলতে পারছে না। প্রচন্ড ভয়ে তার মাথা কাজ করছে না। হামলাকারী তার সামনে একজন থাকলেও তার মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে অনেক লোক আছে। সবাই তাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। সবার হাতে বড় বড় রিভলবার আছে! সবাই নিজেদের সখ মেটাতে সবার রিভলবার থেকে একটা একটা করে গুলি করবে তাকে। অবশেষে তার মৃত্যু! ভয়ংকর মৃত্যু! হীর আর ভাবতে না পেরে আবারও চিৎকার করে উঠল! আমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচাতে লাগলো সে। হীরের সামনের মানুষটা হীরের চিৎকার শুনে দিশেহারা হয়ে হীরের মুখ চেপে ধরলো। কিন্তু তবুও যেন হীরের চিৎকার থামছে না।
মাত্রই হাতের কাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সাবাব। হীরকে নিয়ে আগামীকাল একবার লাস্ট চেকআপের জন্য হসপিটালে যেতে হবে আপাতত সেটাই তার মাথায় ঘুরছে। কিন্তু বেশিক্ষণ আর সেই ভাবনায় স্থায়ী থাকতে পারল না সাবাব। হীরের গলা কান অব্দি ভেসে আসতেই আতংকে কেঁপে উঠলো তার বুক। আবার কোন বিপদ হীরের? মনে হতেই দিকশূন্য হয়ে হাতের রিভলবারটা খুঁজতে লাগল সাবাব। কিন্তু আপাতত মনে পড়ছে না রিভলবার টা সে কোথায় রেখেছিলো! এই মুহুর্তে রিভলবার খোঁজার থেকেও বেশি জরুরি হীরের কাছে যাওয়া! সাবাব দৌড়ে বের হলো নিজের রুম থেকে। হীরের রুমের দিকে দৌড়ে যেতেই দেখতে পেলো কিরন নীচের গেস্টরুম থেকে দৌড়ে আসছে হীরের রুমের দিকে। কিরনকে আসতে দেখেই সাবাবের ভয় আরও বেড়ে গেলো! রুমের ভেতর হীর শিরিনের সাথে একা আছে! ‘ও শিটট’ শব্দ করেই দ্রুত গিয়ে হীরের রুমের সামনে দাঁড়ালো। রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই বোধগম্য হলো ওপাশ থেকে রুম লক করা। তাই আর দেরী না করে আগের বারের মতোই হীরের রুমের সিক্রেট দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। কিরন সাবাবকে দেখে তার পেছন পেছন গেলো। ভেতরে ঢুকতেই দেখল অন্ধকারে খা খা করছে হীরের রুম। অন্ধকার চোখে সওয়ার আগেই সাবাব চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—-” কিরন, লাইট অন করো ফাস্ট!”
কিরন অন্ধকার হাতড়ে সুইচের কাছে পৌঁছোতেই হীরকে ছেড়ে দিলো শিরিন। হীরের ব্যালকনির দিকে দৌড়ে যেতেই সাবাব আবারও চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—-” কিরন, সুট হার।”
সাবাবের অর্ডার পেয়ে কিরন অন্ধকার হাতড়েই সুট করলো শিরিনের পায়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়ল শিরিন। গুলির শব্দে কেঁপে উঠল হীর। ততক্ষণে অন্ধকার সয়ে গেছে সাবাবের চোখে। হীর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বিছানা খামচে ধরে বিরবির করতে লাগল শুধু। সাবাব দৌড়ে গেলো হীরের কাছে। হীরকে উঠিয়ে বসাতেই হীর তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। সাবাব হতভম্ব হয়ে গেলো হীরের কান্নায়। কি বলবে বুঝতে না পেরে হীরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিরনের দিকে তাকিয়ে শিরিনকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে ইশারা করল। কিরন হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে কাজে লেগে পড়ল। কয়েকমিনিট পার হতেই হীরের রুমের দরজায় ধুমধাম বারি পড়লো। বাড়ির বাকিরাও জেগে গেছে এতক্ষণে। আজ হীর ঘুমিয়ে পড়েছে বলে তাদের পাঠিয়ে দিলে কাজ হবেনা। হীরের শারীরিক কন্ডিশন নিয়ে নাজমা বেগম বরাবরই খুব চিন্তিত। আজ তাদের ভেতরে আসতে দিতেই হবে। কিরন কাজ শেষ করে সাবাবের সামনে এসে দাঁড়াতেই সাবাব দরজার দিকে ইশারা করল। কিরন বুঝতে পারল সাবাব দরজা খোলার জন্য বলছে। তাই দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো কিরন। দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড় করে ঢুকে এলো সবাই। ঘর অন্ধকার দেখেই যেন ধাক্কা খেলো সবাই। নাজমা বেগম আতংকিত কন্ঠে বললেন,
—-” ঘরের আলো জ্বলছে না কেন?”
সানিয়া নিজের ফোনের আলো জ্বালিয়ে ধরতেই সুইচ টিপে ঘরের লাইট অন করল কিরন। হীরকে সাবাবের বুকে পড়ে কাঁদতে দেখে আবারও কেঁপে উঠলেন সবাই। ‘আবারও হামলা’ মনে হতেই এক এক করে ছুটে গেলো সবাই হীরের কাছে।
সাবাব হীরকে ছেড়ে উঠতেই আজিম সাহেব কঠিন স্বরে বলে উঠলেন,
—-” তোমার এতো জোরালো সিকিউরিটি থাকতেও আবারও কি করে মেয়েটার প্রতি এট্যাক হলো?”
সাবাব শুঁকনো মুখে তাকালো বাবার দিকে। মৃদুস্বরে বলল,
—-” শত্রু যে পায়ে পায়ে ঘুরছে বাবা! বোঝারই উপায় নেই!”
—-” এসব অজুহাত না দিয়ে এবার তো অন্তত কিছু করো সাবাব।”
বাবার কথার জবাব সাবাবের কাছে নেই। মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
—-” বাকি রাত টুকু হীরকে তোমার কাছেই রাখো মা। কিরন, আমার সাথে এসো!”
কিরন সাবাবের সাথে যেতেই আজিম সাহেব আবারও বলে উঠলেন,
—-” ও তোমার সাথে কোথায় যাবে?”
সাবাব বাবার দিকে তাকিয়ে কিরনকে ইশারা করে বলল,
—-” শি ইজ মাই টিম মেম্বার বাবা।”
—-” হোয়াট।”(বিস্মিত কন্ঠে)
—-” হু।”
—-” হীরের কাছে নিজের টিম মেম্বার রেখেও ওকে এট্যাক হওয়া থেকে বাঁচাতে পারলে না? এই নাকি তুমি তোমার বাবাইয়ের মতো হবে?”
—-” বাবা! তুমি কিছু না জেনে বুঝে এভাবে বলতে পারো না!”
আজিম সাহেব তিক্ত স্বরে বললেন,
—-” তোমার দৌড় আমার জানা হয়ে গেছে সাবাব। এখন যাও এখান থেকে।”
সাবাব আর জবাব দিলো না বাবার কথায়। চুপচাপ বেরিয়ে চলে গেলো।
#চলবে_♥️