কাছে দূরে পর্ব ১৪

#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_mehra
#পর্ব___১৪

হসপিটালে আজ হীরের আট দিন পূর্ন হলো। পরশু তাকে রিলিজ দেওয়া হবে। চারপাশে মেডিসিনের গন্ধে প্রায় অতিষ্ট হীরের জীবন। বেচারির দ্বারা আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই দশ দিন বাদে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা উঠল। অন্যথা ডাক্তার তো বলেই দিয়েছেন পনেরো দিনের আগে পেসেন্টকে কোথায় নিয়ে যাওয়া চলবেনা। আপনাদের যতই অসুবিধা হোক না কেন? পেসেন্টের খাতিরে তার সকল ট্রিটমেন্ট এখানে থেকেই হবে।

আজ সকাল থেকেই সবাই খেয়াল করছে হীর ভীষণ চুপচাপ হয়ে আছে। অন্যদিন যাও একটু কথা বলে আজ তার একটুও বলছে না। তার হঠাৎ মন খারাপের কারনটা কেউই ধরতে পারল না। তাই সাবাব প্ল্যান করে হীরের বন্ধুদের নিয়ে হাজির করলো হীরের সামনে। অনেকগুলো দিন বাদে বন্ধুদের সাথে এভাবে দেখা হবে হীর যেন ভাবতে পারেনি। অবশ্য হীরের এক্সিডেন্টের খবর কারোরই অজানা নয়! বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আজিম আহমেদের ভাতিজীর মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সে তো এখন খবর কাগজের প্রতি পাতায় পাতায় উঁকি দিচ্ছে। তারাও টিভির সুত্রে জানতে পেরেছিলো। তাৎক্ষণিক এখানে আসতেও চাচ্ছিলো কিন্তু সাবাবই তাদের বারন করে। হীরের কন্ডিশন এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো যে সে নিজেই নিজের উপর ভরসা রাখতে পারছিলো না। তারউপর ওরা এলে বাঁধত আরেক বিপত্তি। আর আজ যখন সাবাবেরই কল ছিলো তাদের এখানে আসতে বলে তখন আর কেউ এক মিনিটও দেরী করল না। ছুটে চলে এলো।

হীর তাদের দেখতেই যেন প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠল। মন খারাপের ভাবটা যেন মুহুর্তেই গায়েব হয়ে গেলো তার। ঠোঁটের কোনে দেখা মিলল এক ঝলক মিষ্টি হাসির। আদ্র, এশা, মিলি তিনজনই হীরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সবার মুখেই বিরাজমান হীরকে হারানোর ভয়। এবারও না হয় ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলো হীর কিন্তু তারপরে?

—-” গাল ফুলিয়ে চেয়ে আছিস কেন এভাবে?”

আদ্রকে উদ্দেশ্য করেই প্রশ্ন ছুড়ল হীর। আদ্র ফিক করে হেসে দিলো। নাক টেনে বলল,

—-” গাল ফুলিয়ে না, বল নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছি! আসলে হয়েছি কি বলতো? ক’দিন ধরে না কেমন সর্দি সর্দি ভাব হয়েছে। নাক থেকে রস.. আইমনি সর্দি ঝরছে। তাই নাক ফুলিয়ে আছি যেন সর্দি গড়িয়ে বাইরে না পড়ে।”

আদ্রর কথাটা শেষ হতেই ধুরুম করে এক কিল পড়ল তার পিঠে। আদ্র ব্যাথায় কুঁকড়ে যেতে শব্দ করে হেসে উঠলো হীর। সাথে বাকিরাও হু হা করে করে হেসে উঠলো। আদ্র আর হাসতে পারল না সবার তালে। বাঁ-হাত টা উল্টো করে পিঠে ঘষতে ঘষতে মুখ কুঁচকে তাকালো মিলির দিকে। কিলটা অবশ্য এশা দিয়েছে! হাসির মাঝেই এশা জায়গা বদলে ফেলাতে বোধগম্য হয়নি আদ্রর। আদ্রর কুঁচকানো মুখের দিকে তাকাতেই মিলিরও কপাল কুঁচকে গেলো। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—-” আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন…”

মিলি কথাটা শেষ করার মাঝেই আদ্র কুঁচকানো মুখ করে মিলির মাথায় গাট্টা মারল। মিলি অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো কিছু টা! বিনা কারনে গাট্টা খেতে যেন মিলির রাগ চড়াও হলো। তাই রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বিপরীতে এশার মতোই ধুরুম করে এক কিল বসালো আদ্রর পিঠে। আদ্র আবারও ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো। দু’জনকে মারামারি করতে দেখে মাঝখান থেকে ভাব নিয়ে এশা বলে উঠলো,

—-” কি রে? একটা ভদ্র সমাজে দাওয়াতে এসে তোরা এমন কুকুরের মতো কামড়াকামড়ি শুরু করলি কেন? লোকে দেখলে কি বলবে?”

এশার কথা শুনে ফুঁসে উঠল মিলি। দাঁতে দাঁত চেপে এশার দিকে তাকাতেই আদ্রও সাপের মতো ফুঁসে উঠল এশার বিরুদ্ধে। অতঃপর দু’জনেই একসাথে কিল আর গাট্টা মেরে চুপচাপ করে দাঁড়ালো। এশার উপর হঠাৎ হামলা যেন আশা করেনি সে। নিজেকে রক্ষা করার দায়ে এশা দৌড়ে গিয়ে নাজমা বেগমের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। তাকে হাতের তলোয়ার বানিয়ে বলল,

—-” এদিক আসবি তো একদম পিচ পিচ করে কেটে দিবো তোদের।”

এশার হাতিয়ারের দিকে একবার দেখে আর তার পেছন গেলো না আদ্র আর মিলি। দু’জন দু’জনের দিকে একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করার মাঝেই হীর হাসতে হাসতে আদ্রর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

—-” তোর থেকে একটা বেশি মার এডভান্স পাবে এশা। কারন প্রথম মারটা কিন্তু এশাই তোকে দিয়েছে।”

হীরের কথায় আদ্র যেন দিগুন ফুঁসে উঠল এশার প্রতি। রাগে কটমট করে বলল,

—-” আজ সর্দি লাগল বলে তুই পার পেয়ে গেলি। নয়ত দেখতিস কি করতাম!”

এশা নাজমা বেগমের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল,

—-” কি করতিস শুনি?”

—-” বেশি কিছুনা, সর্দির জল জমিয়ে তোকে খাওয়াতাম!”

“ইয়াক!”

মিলি বমি করার ভান করে বলে উঠলো কথাটা। আদ্র নাক ফুলিয়ে মিলির দিকে তাকাতেই মিলি চুল টেনে দিলো আদ্রর। আদ্র চুলে টান খেয়ে খানিকটা ঝুঁকে গেলো মিলির দিকে। রাগান্বিত চোখে তাকাতেই মিলি চটাস করে চড় এক বসিয়ে দিলো আদ্রর গালে। আদ্র চড় খেয়ে যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মিলির হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে সেও মিলির টেকনিক অবলম্বন করল। মিলির কাঁধ বরাবর চুল গুলো ঝুলে আসায় আদ্রর বেশ সুবিধাই হলো চুলের গোছা ধরে টান মারতে। চুলের গোছা ধরে টান মারতেই মিলি ‘আহ্ ছাড়’ বলে পিছিয়ে গেলো। তাদের দু’জনের এমন ভয়ংকর মারামারি দেখে এবার ছাড়াতে ছুটে এলো সানিয়া। দু’জনকে দু’দিকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

—-” বাপরেহ্! তোমরা তো দেখছি কেউ কারোর থেকে কম যাও না।”

মিলি অসহায় মুখ করে সানিয়ার দিকে তাকাতেই দূর থেকে এশা বলে উঠল,

—-” আপু তুমি বুঝবানা এগুলা। কুকুর কি ভদ্রসমাজ বলতে কিছু বুঝে বলো তো? ওরা তো হলো কুকুর। মনে করো সামান্য চোখাচোখি হলেও ওদের ঘেউঘেউ শুরু হয়ে যায়।”

এশার কথা শুনে হেসে ফেললেন নাজমা বেগম। সানিয়া হাসতে হাসতে বলল,

—-” আহা বলো না এগুলো। ওরা বেচারা…”

আদ্র দাঁতে দাঁত চেপে সানিয়ার কথার মাঝেই বলে উঠলো,

—-” তুই তো আমাদের সাথেই বাসায় ফিরবি। দেখিস, যাওয়ার সময় যদি তোরে ড্রেন থেকে তুলে পানি না খাওয়াই তো আমার নামও কুত্তা না…(ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) ম,,মানে আদ্র না।”

মিলি হোহো করে হেসে উঠে বলল,

—-” থাম তুই। ও তোরে কুত্তা বলল আর তুইও ঘেউঘেউ শুরু করলি।”

আদ্র রাগ চেপে বলল,

—-” কুত্তা শুধু আমায় না তোকেও বলছে।”

মিলি চোখ ছানাবড়া করে বলল,

—-” কি কইলি!”

আদ্র দাঁত খিঁচিয়ে বলল,

—-” কানের লক খোল তারপর আবার রিপিট করছি।”

মিলি আদ্রর দিকে তাকিয়ে মুখ ঝামটি মেরে এশার দিকে তাকালো। চোখে মুখে শয়তানিভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,

—-” সত্যি বলছি, আজ তোকে ড্রেনের পানি খাইয়ে খাইয়ে মেরে ফেলব।”

আদ্র তাল মিলিয়ে বলল,

—-” সাথে কুত্তার পটিও খাওয়াবো।”

—-” ইয়াক ছিহ্! থাম তোরা!”

হীর চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে নিলো আদ্রর কথা শুনে! দাঁত খিঁচিয়ে কথাটা বলতেই থেমে গেলো আদ্র আর মিলি। ঐপাশ থেকে এশা আরও কিছু বলতে নিলে হীর এশার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল,

—-” তুই যদি আবার মুখ খুলিস তো তোকে এবার আমিও ড্রেনের ময়লায় ফেলে দিবো।”

হীরের সঙ্গ পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো আদ্র আর মিলি। আদ্র ইচ্ছাকৃত ভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল।

—-” দল ভারী হলো। এবার দেখবি কেমন টেসস ড্রেনের পঁচা খাবার!”

হীর আদ্রর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল,

—-” আমি সবাইকেই চুপ করতে বলেছি!”

আদ্র মুখে হাত চেপে বলল,

—-” ওপস সরি!”

নাজমা বেগম আর সানিয়া তিন বন্ধুর কথায় এবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সানিয়া হাসির বেগ থামাতে পেট চেপে ধরল। বড়বড় দম ফেলে বলল,

—-” ভাই আর নেওয়া যাচ্ছে না তোমাদের কথা। এবার থামো প্লিজ!”

নাজমা বেগম বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

—-” বাবা গো, এতো কথা তোমরা কি করে বলতে পারো বলো তো?”

সবাইকে হাসতে দেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললো তিনজনে। মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চোখের ইশারায় বুঝালো ‘ডান’। এরই মধ্যে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করল সাবাব সহ আরও তিনজন। একজন মাহদী আরেকজন ইভান। আর তাদের পেছনে যে ঢুকল সে হলো নেহাল। নেহালকে ভেতরে ঢুকতে দেখেই হীর ছোট্ট করে হেসে জিজ্ঞেস করলো,

—-” দুলাভাই যে! কেমন আছো হু?”

হীরের প্রশ্ন শুনে নেহাল ফ্যাকাসে মুখে তাকালো। সবার দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে বলল,

—-” কি লজ্জা কি লজ্জা! রেগী তো আমি দেখতে এলাম! আর রোগী কেমন আছে সেই প্রশ্নটাও আগে আমারই করা উচিৎ ছিলো! কিন্তু দেখো, উল্টো রোগীই আমায় জিজ্ঞেস করছে আমি কেমন আছি?”

নেহালের কথা শুনে সবাই হাসতে লাগল। নেহালের কথার প্রতিত্তোরে আদ্র বলে উঠলো,

—-” হু দেখতে হবে না আপনি কোন রোগী দেখতে এসেছেন?”

নেহাল মাথা নেড়ে বলল,

—-” একদমই তাই। আমি তো খুব ভালো আছি শালিকা। তুমি এখন কেমন আছো বলো? অল গুড?”

হীর মৃদুস্বরে বলল,

—-” অল গুড ভাইয়া। তুমি বসো না? প্লিজ সবাই বসো না? দাঁড়িয়ে আছো কেন সবাই?”

হীরের প্রাণোচ্ছল কন্ঠে সাবাব যেন স্বস্তি পেলো। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে হীরের উদ্দেশ্য বলল,

—-” হ্যাঁ বসবে সবাই, তোকে এতো ব্যস্ত হতে হবেনা। মা, ওর রাতের ঔষধ শেষ হয়েছ?”

ছেলের প্রশ্নে নাজমা বেগম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন! বললেন,

—-” হ্যাঁ রে শেষ। ঐ যে নার্স মেয়েটা আছেনা? মেয়েটা যে কি ভালো কি বলবো? হীরের কি সুন্দর যে যত্ন নেয় বাবা।”

মায়ের মুখে কিরনের প্রশংসা শুনে সাবাব যেন নিশ্চিন্ত হলো। সাথে স্মিত হাসল মাহদী আর ইভানও। তাদের তিনজনকে স্মিত হাসতে দেখে সবার মাঝখান থেকে এশার চোখ আঁটকে গেলো মাহদী উপর। ছেলেটা হাসে বেশ চমৎকার করে। মুখের গড়ন আহামরি কিছু নয়। গায়ের রং উজ্জল শ্যামা। পরনে কালো টি-শার্ট। মাথায় চুল অল্প। দেখেই মনে হয় ট্রেনিং নিয়ে চুল ছাট ছাট করে কাটা হয়েছে। তার ভীষণ মনে ধরল মাহদীকে। তাই পরিস্থিতি না বুঝেই সবার মাঝখানে বোকা গলায় বলে উঠলো,

—-” আপনাকে হাসলে এতো কিউট লাগে কেন?”

এশার ছোট্ট প্রশ্নটিতে উবে গেলো মাহদীর হাসি। নিমিষেই মুখকা ঢেকে গেলো আঁধারে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ইভান। ইভান ঠিক বুঝে গেলো এশা মাহদীর হাসির প্রেমে পড়েছে। তাই বিপদ থেকে রক্ষা করতে আগেই ভাগেই সত্যিটা বলার জন্য প্রস্তুত হলো। মাহদী অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ঢোক গিলে পাশ ফিরে তাকালো ইভানের দিকে। ইভান চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলে এশার উদ্দেশ্যে বলল,

—-” ওর বউও কিন্তু একই কথা বলে!”

ইভানের কথায় এশার মুগ্ধ চোখ জোড়া বিরক্তিতে ছেপে গেলো। মাহদীর ‘বউ’ কথাটা যেন নিতে কষ্ট হলো এশার। জীবনে এই প্রথম কাউকে দেখে ভালো লাগল তার। আর মুহুর্তেই হৃদয় ভেঙে চুরমার! এটাও কি মেনে নেওয়া যায়?

এশার হৃদয় ভাঙার গল্পের সাক্ষী হতে পেরে আদ্র যেন ধন্য হলো। খেঁকখেঁক করে হেসে উঠে বলল,

—-” একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখোতো ব্যাপারটা কি মানা যায়?”

আদ্রর কথায় ফুঁসে উঠল এশা। মিলি হাসতে হাসতে আদ্রর গায়ে ঢলে পড়ে বলল,

—-” আহাগো! বেচারীর মন ভেঙে গেলো!”

সবাই এবার এক এক করে হাসতে আরম্ভ করেছে। তা দেখে এশা নিজের প্রেস্টিজ রক্ষা করতে নিজেও হেসে উঠলো বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে!

__________________

হীরকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার তোরজোর চলছে। হীর আজ মহা খুশি। কতগুলো দিন এভাবেই কারাবন্দী হয়ে পার হয়ে গেলো! আজ অবশেষে মুক্তি। কিন্তু হীরের মনোভাব পাল্টাতে সাবাবের একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো। হীরের সর্বক্ষণ ট্রিটমেন্ট করার জন্য তার সাথে দু’জন নার্স আহমেদ ভিলায় যাচ্ছে। হীরের সমস্ত খুশিতে জল ঢেলে দিলো সাবাব! এতোদিন পর অবশেষে যদিও বা শান্তি ফিরে পেয়েছিলো হীর কিন্তু সাবাব তা মাটি মাটি করে দিলো। তাই সে মনে মনে ঠিক করল সে সাবাবের সাথে আগামী সাতদিন কোনো কথা বলবে না!

আহমেদ ভিলায় পৌঁছেই প্রথমে হীরের বায়না ছিলো সে গার্ডেনে গিয়ে কিছুক্ষন সময় কাটাবে। এক্ষনি তার বাসায় ঢুকতে মোটেও ইচ্ছে করছেনা। তাই তার ইচ্ছে পূরনে আর কেউ বাঁধা দিলো না। কিরন তাকে হুইলচেয়ারে করে গার্ডেনে নিয়ে গেলো। গার্ডেনে আসতেই হীর প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিলো। চারপাশে ছোট বড় অনেক নতুন নতুন ফুলের টব লাগানো হয়েছে। বাতাসের সাথে তাদের মৃদু গন্ধ ভাসছে। কিরন হীরকে সব জায়গায় নিয়ে ঘেরাতেই হীরের চোখে পড়ল আবারও নতুন করে গার্ডস রাখা হয়েছে। যা দেখে তার মনটা বিরক্তিতে বিষাক্ত হয়ে উঠলো। গাল ফুলিয়ে বলল,

—-” আবারও নতুন গার্ডস!”

—-” হু,কেন তোর কোনো সমস্যা আছে নাকি?”

পেছন থেকে ভেসে আসল সাবাবের গলা। সাবাবকে দেখতেই কিরন পাশে সরে গেলো। হীরে পেছন ফিরে তাকাতে তাকাতে সাবাব সামনে এসে দাঁড়ালো তার। পূনরায় বলল,

—-” সবটাই তোর নিরাপত্তার জন্য।”

হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

—-” আমার এতো সিকিউরিটি ভালো লাগেনা বিশ্বাস করো ভাইয়া। এতো সিকিউরিটির মাঝে নিজেকে কেমন খাঁচায় আঁটকে থাকা তোতা পাখির মতো লাগে।”

সাবাব হাঁটু ভাজ করে হীরের সামনে বসল। হীরের হুইলচেয়ারের উপর হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,

—-” একজন পার্মামেন্ট সিকিউরিটি গার্ড দিলে চলবে?”

হীর সাবাবের অনুভূতি বুঝতে না পেরে বলল,

—-” নো নিড এনিওয়ান ফর মাই সিকিউরিটি! আমি একাই থাকতে চাই ভাইয়া!”

সাবাব মুখ বাঁকালো। মনে মনে বলল,(ভাবলাম একটু রোমান্টিক হবো! কিন্তু এই মেয়ে তো ভাবছে অন্য কিছু)

—-” তা বললে চলবে না! তোর নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে দরকার হলে আরও সিকিউরিটি গার্ড আনা হবে!”

—-” এতো নিরাপত্তা দিয়ে কি হবে? মরতে তো একদিন হবেই তাই না?”

হীরের কথায় অভিমানের আচ পেলো সাবাব। হীরের দিকে একবার তাকিয়ে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

—-” মৃত্যুও হোক স্বাভাবিক। তাই তো নিরাপত্তা চাই।”

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here