কাছে দূরে পর্ব ২৮

#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_meher
#পর্ব___২৮

খুব ভোরের দিকে ঘুম ভাঙল হীরের।
ফজরের আজান ভেসে আসছে খুব কাছেই। এমন সময়টা বড়মা রোজ নিয়ম করে ওঠে। নামাজ পড়ে আর আধঘন্টা লাগিয়ে মোনাজাত করে। মোনাজাতে হাত তুলে কেমন অসহায়ের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বারে বারে এক নাগাড়ে হেঁচকি তুলে যায়। বাবাই তখন গভীর ঘুমে থাকে। বড় মার কান্না বাবাইয়ের কানে পৌঁছোয় না। গেলে হয়তো উঠে এক গ্লাস জল এগিয়ে দিতো বড়মাকে। খেতে ইশারা করে খুব আদরে বলতো,

—-‘ অনেক হয়েছে। এবার জলটা খেয়ে একটু শান্ত হও তো।’

বড় মা বাবাইয়ের এই আদুরে কথায় গলে যেতো। একবুক প্রশান্তি নিয়ে হয়তো বাবাইয়ের কোলে মাথা রাখতো। বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের সব দুঃখ গুলো এক নিমিষেই ভুলে যেতো। মনের মধ্যে খালি জায়গাটা ভরাট হয়ে উঠতো। কিন্তু এসব কিছুই হয়না। বড়মা রোজকারের অভ্যাস অনুযায়ী কাজ করে গেলেও বাবাই থাকে বেমালুম।

হীর নিজের ভাবনা গুলোকে প্রশ্রয় দিলো না। এমন হাজারো ঘটনা রোজ ঘটে আর ভবিষ্যতেও ঘটবে। সেটা সে কিছুতেই বদলাতে পারবেনা। আর বদলানো যায়ও না। কিছু ব্যাপার যে এমন অটলই থেকে যায় সারাজীবন। তবে বাবাইয়ের জায়গায় সে তো একগ্লাস জল বড়মাকে দিতে পারে। আহ্লাদী গলায় বলতে পারে,

—-‘ অনেক হয়েছে। এবার জলটা খেয়ে একটু শান্ত হও দেখি বাপু।’

হীর মৃদু হাসলো। গা থেকে কাঁথা টা টেনে সরাতে সরাতে ফিরে তাকালো মিলির ঘুমন্ত মুখটার দিকে। মিলির তার পাশ ফিরেই ঘুমচ্ছে। এশা অন্যদিকে ফিরে আছে। তার মুখটা অবশ্য দেখা যাচ্ছে না। দেখার চেষ্টা চালালো। এসি রুম বরফের মতো হয়ে আছে। শীত শীত ভাব হচ্ছে ভীষণ। গা থেকে কাঁথা সরাতেই গায়ে যেন শীতের কাটা বসলো। হালকা কাঁপুনি দিয়ে রিমোট তুলে এসিটা অফ করে দিলো হীর। রিমোট টা পাশে রাখতে রাখতে আবার দেখল মিলি আর এশাকে। গায়ে ভালো করে কাঁথা টেনে দিয়ে বিছানা ছাড়ল। ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একেবারে ওজু করে বের হলো হীর। উদ্দেশ্যে বড়মার কাছে যাওয়া। বড়মার ঠিক ডানপাশে একটা জায়নামাজ বিছিয়ে ফজরের নামাজ টা আদায় করে। ভাবতেই অন্যরকম প্রশান্তি হচ্ছে মনে। বাইরে এখনও অন্ধকার কাটেনি। ব্যালকনিতে একবার উঁকি দিয়ে ব্যাপারটার অনুসন্ধান চালিয়ে ছুট্টে গেলো বড়মার রুমে। দরজাটা হাট করে খোলা। হীর সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল দরজার সামনে। ভেতরে কে কে আছেন? বড় মা আর বাবাই ছাড়াও মনে হচ্ছে তৃতীয় ব্যক্তি কেউ আছে। হীর উঁকি দিলো। কিন্তু কারোর মুখ প্রদর্শিত হলো না। ঘরের ভেতর ডিম লাইট জ্বলছে। বাবাই বিছানায় ঘুমচ্ছে। আর তার পায়ের কাছেই বসে আছে দ্বিতীয় ব্যাক্তি। আর বড় মা তার সামনে বসে আছে। আবছা আলোয় বড়মার মুখটা ঠিক আবিষ্কার করতে পারলেও বসে থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তিটি কে সেটা আন্দাজ করা গেলো না। এভাবে কারোর রুমের সামনে উঁকিঝুঁকি দিতে বিব্রত লাগছে হীরের। কিন্তু উপায় কি?

—-‘ কে ওখানে?’

বড়মায়ের গম্ভীর গলা ভেসে আসল। হীর সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। জবাব গোছাতে গোছাতে আবারও আওয়াজ দিলেন নাজমা বেগম,

—-‘ হীরপরি?’

হীরের চোরের মতো পা টিপে টিপে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো। হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তে সাবাবের পরিচিত কন্ঠ আওয়াজ তুলল হীরের কানে,

—-‘ হীর, এতো ভোরে ঘুম থেকে উঠলি যে?’

হীর সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সাবাবের দিকে। এটা সাবাব? আর সে চিনতে পারেনি! নিজেকে মহা বোকার খেতাব তুলে দিয়ে জবাব দিলো হীর,

—-‘ হ্যাঁ। উঠে পড়েছি। ঘুম ভেঙে গিয়েছে।’

—-‘ কেন মা? রাতে ঘুম হয়নি ভালো করে?’

নাজমা বেগমের স্নেহভরা গলার স্বর কানে আসতেই হীর ভয়মুক্ত হয়ে জবাব দিলো,

—-‘ না বড়মা। আসলে রাতে ঘুমোতে এসে ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছিলো। তখন প্রায় রাত ৩টা। তাই ভাবলাম যে এখন খাওয়ার থেকে সকালেই একবারে খেয়ে নিবো। এখন ঘুমিয়ে পড়াই ভালো হবে। প্রথমে বুঝতে পারিনি যে পেটে ক্ষিদে নিয়ে ঘুম হবেনা। ঘন্টা দুই এপাশ ওপাশ করার পর ফজরের আজান দিয়ে দিলো। তাই উঠে গেলাম।’

নাজমা বেগম অবাক চোখে তাকালেন। বিস্মিত কন্ঠে বললেন,

—-‘ শুনো মেয়ের কথা! রাতে ক্ষিদে পেয়েছে আর তুমি কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে মা? আমাকে ডাকতে পারতে? আমি কিছু খাবার করে দিতাম না হয়?’

—-‘ না। না। বড়মা তুমি ব্যস্ত হয়োনা। ওরকম ক্ষিদে আমার মাঝেমধ্যে লেগে থাকে। কিন্তু অভ্যাস তো তোমার হাত থেকে আগে খাওয়া৷ আর ওতো রাতে তোমাকে কোথায় পাই বলো৷ সারাদিন খাটাখাটুনি করে রাতেও কি আবার কষ্ট করবে আমার জন্য?’

—-‘ তাই বলে না খেয়ে ঘুমোবে?’

—-‘ তোমাকে কষ্ট দেওয়ার থেকে না খেয়ে ঘুমোনোই আমার কাছে বেটার মনে হয় বড়মা। আচ্ছা ছাড়ো ওসব কথা! আগে বলো নামাজ পড়েছো?’

নাজমা বেগম মৃদু হেসে বললেন,

—-‘ না মা। এই যে মহারাজ এসে গল্প জুড়লেন। তাই নামাজ রেখেই কথায় কথা বাড়িয়ে যাচ্ছি। এক্ষনি পড়বো।’

বড়মা এখনও নামাজ পড়েনি কথাটা শুনতেই খুশির ঢেউ খেলে গেলো হীরের মনে। আনন্দে মন নাচ পেড়ে উঠতেই উৎসাহিত কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ গুড। এবার জলদি চলো আমরা আজ একসাথে নামাজ পড়বো। আর নামাজের শেষে দু’জনে অনেক্ষন সময় নিয়ে মোনাজাত করবো। কেমন?’

হীরের কথায় বিস্ময় খেলে গেলো দু’জনেরই মুখে। নাজমা বেগমের আগেই বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো সাবাব,

—-‘ তুই এতো ভোরে মায়ের কাছে আসলি নামাজ পড়বি বলে?’

হীর মুচকি হাসল। তুমুল বেগে মাথা নেড়ে ছোট্ট করে জবাব দিলো,

—-‘ হুম।’

মা-ছেলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। সাবাব চোখ ঝাপটে মাকে কিছু একটা ইশারা করে মাথা নাড়লো। ছেলেকে মাথা নাড়তে দেখে নাজমা বেগম হেসে পড়লেন। হীর দু’জনের দিকেই ফিরে ফিরে দেখছে। তাদের ইশারায় বলা কথা কোনোটাই ধরতে পারলো না৷ নাজমা বেগম আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পাশেই বড় আলমারিটা খুলে দুটো জায়নামাজ বের করে এনে হীরের হাতে তুলে দিলেন। মৃদু হেসে হীরের গালে আলতো করে হাত রেখে স্নেহময় কন্ঠে বললেন,

—-‘ আমার সোনা মা। তুমি জায়নামাজ বিছিয়ে দাও আমি ওজু করে আসছি।’

হীর মিষ্টি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। নাজমা বেগম হীরের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন ওযু করতে৷ হীর দ্রুত বসে জায়নামাজ বিছাতে লাগলো। অন্যটা পাশে রেখে দিলো। একটা বিছানো শেষ হতেই অন্যটা বিছাবে বলে হাতড়ে জায়নামাজ টা নিতেই সেটা হাতে উঠিয়ে নিলো সাবাব। হীরের পাশে বসে জায়নামাজটা সে নিজ হাতে বিছাতে লাগলো। হীর অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

—-‘ এমা। তুমি কেন বিছাচ্ছো। আমায় দাও?’

সাবাব জায়নামাজ বিছাতে বিছাতে জবাব দিলো,

—-‘ আমি কি মিস করবো এই মোমেন্ট টা?’

হীর ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—-‘ কিসের মোমেন্ট?’

সাবাব বাঁকা হেসে জবাব দিলো,

—-‘ এই যে তুই এখন কেঁদে কেঁদে তোর বয়ফ্রেন্ডকে স্বামী হিসেবে চাইবি। আল্লাহর কাছে অনুরোধ করবি। সানির বিয়েটা হতেই যেন তোর বিয়েটাও হয়ে যায় সেই প্রার্থনা করবি। বিয়ের পর যেন তোর হ্যাংলা বরকে নিয়ে এ-বাড়িতেই সেটেল্ড হতে পারিস। এসবই আরকি।’

হীরের শরীরে যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো সাবাবের কথায়। বিস্ফোরিত চোখে সাবাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

—-‘ আমার মনে এসব কখনোই আসেনা। তোমার মনে এসব আসে আর তুমি সেটাই আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো। বদ লোক কোথাকারে।’

হীরের কথা শুনে সাবাব সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকালো হীরের দিকে। চোখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-‘ তুই আমাকে বদ লোক বললি? তোর এতো বড় সাহস?’

হীরের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। রাগের মাথায় কি বলে ফেললো সে। এখন যে নিজের গালে নিজেরই চড় মারতে ইচ্ছে করছে। হীর ঢোক গিলে খানিক সরে গেলো পেছনের দিকে৷ আমতাআমতা করে কথা জোগাতে জোগাতে বলে উঠলো,

—-‘ ব,,বলেছি! হ্যাঁ বলেছি। ব,,বলবো না কেন? ত,,তুমি ওসব কি ক,,কথা বলছিলে আমায়?’

সাবাব হাতে ভর দিয়ে এগিয়ে গেলো হীরের দিকে। মুখোমুখি হয়ে চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

—-‘ ভুল কি বলেছি?’

—-‘ ভভ,,,ভুলই তো বলেছো!’

—-‘ মোটেই না।’

—-‘ মোটেই হ্যাঁ। আমি মোটেই এসব কিছু ভাবিনা। তুমি ভাবো। আর তাইতো তোমার মাথায় এসব কথা এসেছে।’

—-‘ আচ্ছা শোন?’

—-‘ ক,,কি?’

—-‘ এক কাজ করিস। ওসব কথা বলে সময় নষ্ট না করে তুই বরং আমার আর তরীর জন্য বেশি করে প্রার্থনা করিস। প্রার্থনাতে বলবি আমার আর তরীর বিয়েটা যেন তাড়াতাড়ি হয়ে যায়!’

হীর রাগে ছিটকে উঠলো। সাবাবকে ধাক্কা দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো সে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

—-‘ আমি কেন প্রার্থনা করতে যাবো তোমার তরীর জন্য? দরকার হলে নিজে প্রার্থনা করে নাও গিয়ে।’

—-‘ আহা তুই রাগছিস কেন? সামান্য প্রার্থনা করতে এতো সমস্যা হু?’

—-‘ আমি যার-তার জন্য প্রার্থনা করিনা।’

সাবাব ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-‘ তুই তরীকে যার-তার বললি?’

হীর শান্ত ভঙ্গিতে জবাব দিলো,

—-‘ শুধু তোমার তরীকে নয়, তোমাকেও বলেছি। দ্যাট মিনস তোমাদের দু’জনকেই বলেছি।’

সাবাব মেকি রাগ দেখিয়ে হীরের দিকে আঙ্গুল তুলে এগিয়ে যেতেই ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এলেন নাজমা বেগম। সামনে দু’জনকে ঝগড়া করতে দেখে ইশারায় প্রশ্ন করলেন,

—-‘ কি হচ্ছে এখানে?’

হঠাৎ মায়ের আগমনে ভড়কে গেলো সাবাব। ভড়কে গেলো হীরও। দু’জনেই দু’জনের থেকে দূরত্ব করে দাঁড়ালো। সাবাব মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে বলল,

—-‘ খুব ক্ষিদে পেয়েছে মা। নামাজ শেষ হলে আমায় নাস্তা দিও প্লিজ।’

হীর সাবাবের পানে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কেটে জায়নামাজে দাঁড়ালো। নাজমা বেগম এবারও মুখে জবাব দিলেননা। ইশারায় বুঝালেন,

—-‘ হ্যাঁ, নামাজ শেষ হতে দু’জনকেই নাস্তা বানিয়ে দিবো।’

সাবাব জোরপূর্বক হেসে চলে গেলো নিজের রুমে। নাজমা বেগম এসে হীরের পাশে দাঁড়ালেন। নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে কোনো এক সূরা পড়ে আগে হীরের গায়ে ফু দিয়ে আদর করে দিলেন। অতঃপর নামাজ আরম্ভ করলেন।

________________

৭টার মধ্যে তাড়াহুড়োর উপর নাস্তা করলো সাবাব। নাস্তা করেই ছুটলো নিজের কাজে। সিয়ামের ব্যাপারে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। আভিক ইমার্জেন্সি কল করে তাকে ডাকলো। তাই কোনো রকম খেয়ে ছুটল সে। হীর নাজমা বেগমের সাথে নামাজ পড়ে চলে গেলো ঘুমোতে। রাতের ঘুম তাকে যাতা দিয়ে ধরেছে নামাজের পর। নাজমা বেগম তাকে নাস্তা তৈরি করা অব্দি অপেক্ষা করতে বললেও সে অপেক্ষা করতে পারলো না। রান্না ঘরে বসে বাড়ির সব মেহমানদের জন্য সকালের নাস্তার জোগাড়যন্তর করছেন তিনি। তাকে সাহায্য করছেন রুবি,শীলা,মনিকা,আর তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় দু’জন ভদ্র মহিলা। একেকজন একেক কাজে হাত লাগিয়েছে। যার দরুন নাজমা বেগমের একটু হলেও সাহায্য হচ্ছে। অন্যথা বাড়িভর্তি সব মেহমানদের জন্য সব নাস্তা, দুপুরের খাবার,রাতের খাবার সব তাকে একা হাতেই সামলাতে হতো।

ওদিকে সাবাব পৌঁছে গিয়েছে নিজের সিক্রেট এরিয়ায়। অফিসের ভেতর চলে গেলো তাড়াহুড়োর উপর। আভিক,ইভান,মাহদী এবং কীরন চারজন মিলে সাবাবেরই অপেক্ষা করছিলো। সাবাব আসতেই চারজনেই সটান হয়ে আগে তাকে স্যালুট করলো। সাবাব হাত তুলে ইশারায় বারন করলো। নিজের চেয়ার টেনে বসতে বসতে ল্যাপটপ ওপেট করার মাঝেই প্রশ্ন করল,

—-‘ আপডেট কি বলো?’

ইভান সাবাবের দিকে ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলল,

—-‘ স্যার, সিয়ামের গ্রাম রংপুরের পঞ্চগড় জেলায়! মাকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় সে ওখানেই পার করে। নিজেদের ছোট্ট দোতলা একটা বাড়ি আছে। নীচতলায় মা-ছেলে থেকে উপর তলা ভাড়ায় রেখেছে। সংসারে আয়-রোজগার তেমন নেই বললেই চলে। এই যেমন নুন আনতে পান্তা ফুড়োয়। তবুও সিয়াম পড়াশোনা চালিয়ে এতদূর এসছে। সব ক্লাসে সব সাবজেক্টে হাই র‌্যাংকড মার্ক। তাই পড়াশোনাটা টাকার অভাবে থেমে থাকেনি। কেউ না কেউ তার পড়াশোনায় ভালো আগ্রহ এবং প্রতিবারে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়াতে সাহায্য করতো। ছেলেটা তার গ্রামে ভীষণ আদুরে। এমন কোনো লোক নেই যে তাকে ভালোবাসে না।’

—-‘ ওর বাবার পেশা কি ছিলো? ওর বাবা বেঁচে থাকতে ওরা কোথায় থাকতো?’

আভিক দ্রুত জবাব দিলো,

—-‘ স্যার, এই প্রশ্নের জবাব আমরা কারোর কাছেই পায়নি। যাকেই জিজ্ঞেস করেছি সেই কেমন একটা ভয়ার্ত দৃষ্টি করে ছুটে পালিয়েছে। সিয়ামের বাবার পেশা সম্মন্ধে জিজ্ঞেস করতেই সবার মাঝে যেন অজানা ভয় দেখা গেলো।’

সাবাব চিন্তিত মুখে তাকালো আভিকের দিকে। চিন্তাক্লিষ্ট কন্ঠে বলল,

—-‘ কিন্তু কেন?’

কীরন বলে উঠলো,

—-‘ এটাই রহস্য স্যার! ওরা কেউই সিয়ামের বাবার সম্মন্ধে কথা বলতে নির্ভয় হতে পারছিলো না৷ সবাই কেমন করে যেন ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছিলো।’

সাবাব দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দু’হাতে পুরো মুখ একবার মালিশ করে চিন্তিত মনে বলল,

—-‘ তাহলে নিশ্চিত থাকো বাবাইয়ের খুনের সাথে সিয়ামের বাবার মৃত্যুও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

সাবাবের কথায় সবার মুখেই ফুটে উঠল চাপা ভয়। কীরন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। বলল,

—-‘ স্যার, তাহলে কি আমরা খুনীদের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি?’

সাবাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

—-‘ আই হোপ সো! সব কিছু রেডি রাখো তিনদিনের মাথায় সানির বিয়ে কমপ্লিট হতেই আমরা রংপুরের অপারেশনে যাবো।’

সাবাবের আদেশ পেয়ে চারজনেই একত্রে বলে উঠলো,

—-‘ ইয়েস স্যার।’

#চলবে_

[বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here