কাছে দূরে পর্ব ২৯

#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_meher
#পর্ব___২৯

বাইরে দুনিয়া আধার করা বৃষ্টি। মেহেন্দি ডিজাইনার পাঁচ জন মহিলাই আঁটকে গেছেন মাঝপথে। বাড়ি থেকে কেউ তাদের আনতে না গেলে তারা পথ চিনে আসতে পারবেন না। মহাবিপদ! বাড়িতে সাবাব নেই। ছেলে বলতে আদ্র আর আজিম আহমেদের দূর সম্পর্কের আত্নীয়ের ছেলেপুলে আছে। তবে তারা বয়সে ততটাও উপযুক্ত নয়। কেউ বারো বছরের তো কেউ চৌদ্দ বছরের। উপযোগ্য কন্যাদের অভাব পড়েনি। কিন্তু বাইরের এমন করুন দশায় কে যে যায় সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়লেন আজিম সাহেব। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বারবার সময় মাপলো হীর। হাতে সময় একদমই নেই! যা করার এক্ষনি করতে হবে। দরকার পড়লে সে নিজেই যাবে তাদের আনতে। বৃষ্টির কারনে তো আর বিয়ের নিয়ম কানুন পিছিয়ে থাকতে পারেনা!
বাইরের পরিস্থিতি সম্মন্ধে বিবেচনা করেই চটপট রেডি হতে গেলো সে। তার রুমেই বৃষ্টির ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় গোল বৈঠক বসিয়ে সবাই। আলোচনার মধ্যমনি বিয়ে এবং বিয়ের কনে। লাল রঙ্গা শাড়িতে পরিপূর্ণ বউ হয়ে না উঠলেও অসাধারণ ফুটেছে সানিয়ার গায়ে। নাকের বাঁ পাশে জ্বলজ্বল করে জলছে মায়ের দেওয়া স্বর্নের নসপিনটা। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। চোখে গাঢ় কাজল। কপালে লাল টিপ। দু’হাত ভর্তি লাল রেশমি চুড়ি। সবই নাজমা বেগমের বাছাই করা সাজগোছ। ভীষণ মিষ্টি লাগছে সানিয়াকে। মুখে সারাক্ষণ জুড়েই থাকে মিষ্টি হাসি। মাঝেমাঝে নাজমা বেগম ভাবেন তার এই মেয়েটা বোধহয় এমন সুন্দর করে হাসতেই জন্মেছে। এমন সাজে এই প্রথম সানিয়া৷ তাই হয়তো একটু বেশিই ফুটেছে তার সৌন্দর্য। তাছাড়া লোকমুখে শোনা কথা, বিয়ের শাড়ি গায়ে উঠতেই নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণে বেড়ে যায়। সানিয়া যার জলজ্যান্ত প্রমান।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভাঁজহীন জামাটা আরেকটু টেনে ঠিক করে নিলো হীর। খোলা চুল গুলো হাতখোপার সাহায্যে উঁচিয়ে বেঁধে সামনে থেকে কিছু চুল বের করে দিল। কানে গোল দুটো এয়ারিং ঝুলিয়ে নিলো। চোখে টানলো কাজলের সরু রেখা। ঠোঁটে লিপস্টিকের ছোঁয়া পড়লো কি না ঠিক ঠাহর করা গেলো না। সাদা চুড়িদার পড়েছে সে। ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাড়াহুড়োর উপর হাঁটা ধরতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে পিছু ডাকল সানিয়া,

—-‘ হীর?কোথায় যাচ্ছিস?’

সানিয়ার থেকে দিগুন ব্যস্ততা দেখালো হীর। দাঁড়িয়ে থাকাও যেন তার জন্য মহাপাপ হবে। স্বল্প সময়ে কথা বলে সময় নষ্ট করা বোকামো। তাই সে যেতে যেতে জবাব দিলো,

—-‘ ফিরে বলবো।’

—-‘ মানে?’

ভেতর থেকে সানিয়ার চিন্তিত স্বর ভেসে আসলো। কিন্তু হীরের কাছে জবাব দেওয়ার মতো সময় নেই। সে দ্রুত চলে গেলো আদ্রর কাছে। আদ্র সাবাবের রুমে থাকে। হীর সাবাবের রুমের সামনে গিয়ে প্রথমে খানিক থামকালো। অতঃপর বুকে বল নিয়ে চলে গেলো ভেতরে। আদ্র ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলো। পেছন থেকে যে আচমকা হীর তাকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে আসবে তা যেন কস্মিনকালেও ভাবতে পারেনি আদ্র। আকস্মিক চমকে উঠলো সে। হাঁকডাক পারবে এমন সময় হীরের মুখটা দেখতেই যেন স্বস্তি মিললো। তারপর আবার হঠাৎই চেঁচিয়ে উঠলো আদ্র। ইচ্ছাকৃত ভয় পাওয়ার ভান ধরে বলে উঠলো,

—-‘ কিছু না বলে কুত্তার মতো এমন থাবা মারলি কেন? এক মুহুর্তের জন্য তো মনে হচ্ছিলো নিজের এলাকা ছেড়ে বুলডগের এলাকায় ঢুকে পড়েছি।’

আদ্রর উদ্ভট কথা শুনে হীর থমকে গেলো। লাল চোখে তাকিয়ে বলল,

—-‘ জলদি বের হতে হবে। কথা না বাড়িয়ে চল।’

—-‘ কোথায় বেরোবো এই ঠাডার দিনে?’

হীর হাঁটা ধরতে নিয়ে আবারও থমকে গেলো তার কথায়। মুখ কুঁচকে মাথায় চাটি মেরে বলল,

—-‘ চুপ কর। আর জলদি হাট!’

আদ্র মুখ বাঁকিয়ে চিন্তার সাগরে ডুব দিলো। হীরকে হেঁটে যেতে দেখে তার পেছন পেছন হাঁটা ধরে বলল,

—-‘ আমরা কোথায় যাচ্ছিরে?’

—-‘ তোর শশুর বাড়ি।’

—-‘ আমার শশুড় বাড়ি যাবি ভালো কথা। কিন্তু এই ঠাডার দিনে কেন বাপ? চকচকা ফকফকা কোনো দিনে যা না!’

—-‘ উফফ! তুই এতো বেশি কথা কেন বলিস বলতো?’

—-‘ উফফ দুই! তুই এতো কম কথা কি করে বলিস বলতো? আমার তো মনে হয় মানুষ বেশি চুপচাপ থাকলে অতিদ্রুত মরে যায়।’

—-‘ উল্টো! মানুষ অতিরিক্ত কথা বললে অতিদ্রুত মরে যায়।’

—-‘ তার মানে কি আমি আগে মরবো?’

—-‘ অস্বাভাবিক কিছু না। তুই যে পরিমান অস্বাভাবিক কথা বলিস তাতে অতিদ্রুত মরে যেতে তোর সময় লাগবেনা।’

আদ্র কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো। তাতে হীরের দৃষ্টি আকর্ষণ হলো না বুঝতেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ এই দোস্ত?’

হীর আঁড়চোখে একবার তাকালো। আদ্রর নাটক বুঝে স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিলো,

—-‘ কি?’

আদ্র চোখে মুখে অসহায় ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে উঠলো,

—-‘ আমি মরলে তুই কানবি?’

—-‘ না।’

আদ্র বুকে হাত চেপে দাঁড়িয়ে গেলো। ভীষণ দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,

—-‘ পাষান মহিলা। তোকে যে কোন দুঃখে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে চুজ কেরছিলাম কে জানে? ভেবেছিলাম আহা সোনায় সোহাগা৷ কত লক্ষিমন্ত মেয়েটা। ওকে যদি বেস্ট ফ্রেন্ড করতে না পারি তাহলে তো জীবনই বৃথা। এখন তো দেখি তোকে বেস্ট করে আমার জীবন বৃথা।’

আদ্রর কথা শুনে হীর মনেমনে হাসলো। জবাব দিলো না৷ ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়াতেই দেখা মিলল আজিম সাহেবের। সোফায় বসে আছেন মনিকার সাথে। গল্প জুড়েছেন বেশ। হীর হাসিমুখে এগিয়ে গেলো আজিম সাহেবের পানে। আজিম সাহেব তাকে এগিয়ে আসতে দেখেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাছে বসালেন। আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

—-” মামনি হঠাৎ বাবাইয়ের কাছে? কিছু দরকার?’

হীর আজিম সাহেবকে আলগা করে একবার জড়িয়ে ধরে বলল,

—-‘ হ্যাঁ বাবাই। মেহেন্দী ডিজাইনারদের নিতে যাচ্ছি আমি আর আদ্র। উনারা মাঝপথে কেমন করে আঁটকে গেলেন বলো তো? কাউকে না কাউকে তো যেতেই হবে বলো? আর তোমার ছেলেও তো নেই। এখন বাড়িতে একমাত্র ছেলে বলতে আদ্র আছে। ওকে একা কি করে যেতে দেই? তাই ভাবলাম আমরা দু’জন গিয়ে উনাদের নিয়ে আসি।’

আজিম সাহেব চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলেন,

—-‘ কিন্তু মামনি বাইরের অবস্থা যে একদমই ভালো নয়। এর মধ্যে যাওয়া কি ঠিক হবে?’

—-‘ কিচ্ছু হবে না বাবা। আমরা দু’জন আছিতো? ঠিক সবটা ম্যানেজ করে নিতে পারবো।’

—-‘ সবই ঠিকাছে কিন্তু তবুও….’

—-‘ আর কিন্তু কিন্তু করোনা। এবার আমাদের বের হতে হবে বাবাই৷ আসি। মনি?’

মনিকা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,

—-‘ সাবধানে যাবে মা। ওখানে পৌঁছেই একটা কল করবে আর উনাদের গাড়িতে নিয়ে ওঠার সময়ও একটা কল করবে কেমন? সাবধানে যেও।’

হীর মনিকার ন্যায় হেসে জবাব দিলো,

—-‘ জো হুকুম রাজমাতা।’

মনিকা হেসে উঠলো। সাথে যোগ হলেন আজিম সাহেবও। হীর মৃদু হেসে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে ছুটে গেলো রান্না ঘরে। নাজমা বেগম কাজ করছেন। রান্না করার ভার পড়েছে শীলা এবং রুবির ঘাড়ে। তিনি কাটাকুটি করে তাদের দু’জনকে সাহায্য করছেন। রান্নাঘরের দরজায় হীরকে দেখতেই নাজমা বেগমের ঠোঁটের কোনে দেখা গেলো এক চিলতে মিষ্টি হাসির। হীর তাকে বাইরে যাওয়ার কথা বলে খুব দ্রুত বিদায় নিলো। ছাতা মাথায় ধরে গাড়িতে বসতেই গাড়ি ছুটল যাত্রা পথে। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। আশেপাশে কিছুই তেমন স্পষ্ট দেখা যায়না৷ ড্রাইভার গাড়ি ধীরেই চালাচ্ছে বিপদের আশংকা বুঝে। হীর আশপাশ ভালো করে দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়লো আদ্রর শুঁকনো মুখে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

—-‘ কি হলো তোর?’

আদ্র ভীষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে জবাব দিলো,

—-‘ আমি মরলে তুই কানবি না দোস্ত?’

—-‘ উফফ আদ্র… এবার একটা মার খাবি তুই!’

আদ্র দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,

—-‘ আইচ্ছা। থামলাম কিন্তু আর একটা কথা?’

হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,

—-‘ কি কথা?’

—-‘ আমি মরলে তুই কানতি ন? ক দেহি ভালা কইরা!’

হীর এবার সত্যি সত্যি মার শুরু করলো আদ্রকে। হীরের হাতে মার খেয়ে আদ্র হাঁকডাক পেড়ে আবার নিজেই হেসে পড়লো। যা দেখে হীরের পক্ষেও আর হাসি চেপে রাখা সম্ভব হলো না।
___________________

বাসায় ফেরার তাড়া। এদিকে ফাইল চেক করে একটা সল্যুশন-এ আসাটাও খুব বেশি জরুরি। একের পর এক ফাইল ঘেঁটে চলেছে সাবাব। এক একটা পয়েন্ট মিলিয়েই চলেছে। মাথায় চলছে হাজারটা প্রশ্ন! কিন্তু উত্তর__ফাঁকা। হঠাৎ মাথাটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে উঠলো সাবাবের। কেসটায় যতই মনে হয় জট খুলে আসছে ততই যেন আরও পেঁচিয়ে যাচ্ছে। সবটা ঘেঁটে যাচ্ছে। একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে যাচ্ছে। হাজার খানেক প্রশ্ন উঠছে কিন্তু উত্তর খুঁজতে গেলে প্রশ্ন গুলো নিজের কাছে স্রেফ অবান্তর বলে বোধ হচ্ছে। কিন্তু না, এই প্রশ্ন গুলোর মাঝেই লুকিয়ে আছে প্রায় অনেকটা রহস্য। মাত্র কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পেলেই খুলে যেতো অনেক রহস্যের দরজা। কিন্তু উপায় কি? কার কাছে মিলবে এই রহস্যের সমাধান। প্রশ্নের উত্তর।

—-‘ স্যার? সানিয়া ম্যামের কল।’

তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে সাবাবের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো কিরন। সাবাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ উঁচিয়ে তাকালো। ফাইলটা একহাতে বন্ধ করে অন্যহাতে ফোনটা কানে তুলে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলল,

—-‘ হ্যাঁ সানি। বল।’

—-‘ ভাইয়া তুই কোথায়?’

—-‘ আমি… আমি একটু বাইরে আছি রে। কাজে..’

—-‘ অনেক হয়েছে তোর কাজ। বাইরের ওয়েদার দেখেছিস? কেমন ভয়ানক বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বৃষ্টির মধ্যে হীরটা বেরিয়ে গেলো মেহেন্দি ডিজাইনারদের পিকআপ করতে। তারা নাকি মাঝপথে আঁটকে পড়েছে৷ বাড়িতে আদ্র ছাড়া আর কোনো ছেলেও ছিলো না। তাই হীর আদ্রকে নিয়ে তাদের নিতে চলে গিয়েছে।’

—-‘ হোয়াট! মেয়েটার কি মাথা খারাপ নাকি? এই ওয়েদারে কেউ বাইরে বের হয়? কোনো বিপদ-আপদ হয়ে গেলে?’

—-‘ বাবা, মনি, মা কেউই ওকে বারন করেনি। সবাই যেতে দিলো। কেউ বাইরের অবস্থার কথা ভাবলো না। মা না হয় জানেনা তাই কিছু বলেনি। কিন্তু বাবা, মনি তারা তো দেখেছে বাইরের অবস্থা তবুও যে কি করে যেতে দিলো বুঝতে পারছিনা।’

—-‘ মনি ওকে বারন করেনি?’

—-‘ না রে। কেউ-ই বারন করেনি। ঘন্টা খানিকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলো এখনও ওদের খবর নেই। ফোন করছি বারবার কিন্তু ফোনে নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যার জন্য কল যাচ্ছে না। কি করি বল তো? এবার তুই কিছু একটা কর ভাইয়া। মা জানতে পারলে ভীষণ দুশ্চিন্তা করবে রে।’

—-‘ আচ্ছা আচ্ছা তুই আগে রিলাক্স হ। আমি দেখছি। আমি দেখছি।’

সাবাব কল কেটে দ্রুত উঠে দাঁড়াতেই সবার চিন্তিত মুখ গুলো ধরা দিলো সাবাবের চোখে। সাবাব নিজেও ভীষণ চিন্তায় পড়ল। এমন একটা সিচুয়েশন শত্রুদের জন্য তো হাতে চাঁদ পাওয়ার সমান। সাবাব চিন্তাক্লিষ্ট কন্ঠে বলল,

—-‘ হীরের বিপদ। আমাদের এক্ষনি বের হতে হবে।’

সবাই উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ বিপদ!’

সাবাব দ্বিতীয় বাক্য উচ্চারণ না করে দ্রুত কদম ফেলে বেরিয়ে গেলো। বাকিরা কোনোমতে স্যালুট ঠুকে তারাও ছুটলো তার পেছনে পেছন। ইভান বসল ড্রাইভিং সীটে। গাড়ি স্টার্ট দিতেই সাবাব ফোন থেকে লোকেশান বের করে ইভানের সামনে ধরলো। ইভান হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে গাড়ি টানল।

_____________

—-‘ আমরা আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকব দোস্ত? তোর মেহেন্দি ডিজাইনাররা কই?’

হীর ভীত চাহনিতে দেখলো চারপাশ। ঢোক গিলে ফোন বের করে মেহেন্দি ডিজাইনারদের সবার নাম্বারে একবার একবার করে ডায়াল করল। একাধারে সব ক’টা নাম্বারই বন্ধ বলল। হীরের গলা শুঁকিয়ে আসতে লাগল। আদ্রর কপালের মাঝেও চিন্তার সুক্ষ্ম ভাজ দেখা গেলো।

তারা গাড়ি পার্ক করে মেহেন্দি ডিজাইনারদের দেওয়া লোকেশানে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু চারপাশে দূর-দূরান্তের কোথাও কোনো মানুষ নেই। একদম সুনসান নিরিবিলি জায়গা। তারউপর এমন বৃষ্টি। দু’কদম যে এগিয়ে দেখারও জো নেই। হীরের বুকের ভেতর কাঁপছে। মেহেন্দী ডিজাইনারদের ব্যবহার করে এটা কোনো বড় ধরনের ষড়যন্ত্র নয় তো? এখন কোনো বিপদ হলে কি হবে? যদি হামলাকারীরা কেউ হামলা করে বসে!

—-‘ কিছু বলবি তো?’

আদ্র আবারও চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করল। হীর অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আদ্রর দিকে। হীরের অসহায় দৃষ্টি দেখে আদ্রর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। অন্তর আত্মা অব্দি চিড়চিড় করে বলে উঠলো ‘বিপদ’। আদ্র জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ এটা কারোর প্ল্যান?’

হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে দু’হাতে নিজের পুরো মুখ একবার মালিশ করল। অতঃপর নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,

—-‘ হতে পারে। বাট আমাদের ভয় পেলে চলবে না দোস্ত। সাহস রাখতে হবে। আজ এট্যাককারীরা এট্যাক করলে আমরা নিজেরাই ফাইট করব। নিজেদের সেফ করবো। বি স্ট্রং।’

আদ্র হীরের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

—-‘ ভয় পাচ্ছিস?’

—-‘ ধ… ধূর কি যে বলিস না!’

—-‘ দেখ হীর। এখন এখানে যা কিছুই হয়ে যাকনা কেন আমাদের স্ট্রং থাকতেই হবে৷ থাকতেই হবে মানে থাকতেইই হবে। আমি জানি তুই ভয় পাচ্ছিস। ইভেন আমিও যে ভয় পাচ্ছি না তা কিন্তু নয়। আমারও ভয় হচ্ছে! তবে আমার বিশ্বাস আমরা ভয় না পেলেই আমরা লড়তে পারবো।’

—-‘ ওকে। আমরা ভয় পাবোনা।’

আদ্র ঢোক গিলে চারপাশে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তার হাত জোড়া কাঁপছে, পা জোড়াও কাঁপছে। সে খুব ভালো করেই জানে এক্ষনি তাদের উপর ভয়াবহ আক্রমণ শুরু হবে। যার পরিনতি মৃত্যুও হতে পারে।

—-‘ দ,,দোস্ত! দেখ? ওটা কে?’

আদ্রর বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো হীরের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে। হীরে দৃষ্টিকে অনুসরণ করে সামনের দিকে ভালো করে তাকাতেই দেখলো কেউ একজন হেঁটে আসছে তাদের দিকে। আদ্রর মনে হলো সে লোকটাকে চিনে। খুব ভালো করেই চিনে।

#চলবে_

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here