কাছে দূরে পর্ব ৩০

#কাছে_দূরে♥️
#moumita_meher
#পর্ব___৩০

মাথায় ছাতা ধরেও বৃষ্টির পানি থেকে নিজেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হলো লোকটি। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসল হীরদের দাঁড়ানো জায়গায়। টিনের ছাওনি দিয়ে মোটামুটি দাঁড়ানোর একটা অবস্থা আছে সেখানে। তাই দ্রুত গতিতে পা চালালো সে।

বৃষ্টির মুষলধারায় হীর এবং আদ্র এখনও ঠিক দেখে উঠতে পারেনি লোকটার মুখ। তবে হাঁটা চলায় বেশ পরিচিত বলোই বোধ হচ্ছে হীর এবং আদ্রের। পরনে ধূসররঙের শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট। পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল। মুখ ভর্তি দাঁড়ি। মাথায় এক ঝাঁক চুল। উজ্জ্বল শ্যামা গায়ের রঙ। চোখের চাহনি তীক্ষ্ণ। বরাবর যেমন শত্রুপক্ষের আক্রমণের ভয় নিয়ে থাকে আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। হীরের বুকে বল এলো। মনটা হাঁকডাক পেড়ে বলো উঠলো ‘এটাতো সিয়াম’। আদ্র বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হীরের হাতটা ঝাঁকি দিয়ে বলল,

—-‘ দোস্ত। সিয়াম।’

হীর দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

—-‘ হ্যাঁ। এই সিয়াম?'(গলা উঁচিয়ে ডাকল)

বৃষ্টির এমন ভয়াবহতার মাঝে নিজের নাম নিয়ে কে ডাকে? দূর থেকে অবশ্য দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ গুলো তো বোঝাই যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঐ মেয়েটাই ডেকেছে। তাকে চেনে নাকি? আবার হাতও নাড়ছো।

সিয়াম অবাকের শীর্ষে পৌঁছে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আবারও হাঁটা ধরলো। কাছাকাছি গেলে হয়তো মুখ দেখে চিনলেও চিনতে পারে। সিয়াম খুব সাবধানে হেঁটে হেঁটে হীরদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে চমকে উঠলো। অবাক কন্ঠে বলল,

—-‘ হীর! আদ্র! তোমরা এখানে?’

হীর দম ছেড়ে বাঁচল। নিশ্চিন্ত গলায় বলল,

—-‘ সে ছাড়ো। আগে বলো তুমি এখানে কি করে? কোথাও যাচ্ছিলে?’

সিয়াম ছাতা বন্ধ করতে করতে বলল,

—-‘ এই সামনেই বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। বাড়িতে ফিরব। মা বেশ অসুস্থ। দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাই ভার্সিটি বন্ধ দিয়ে গ্রামে ফিরবো বলে বাসের টিকিট কাটতে এলাম। কিন্তু এসে পড়েছি মহা ফেসাদে।’

—-‘ কি হয়েছে তোমার মায়ের?’

—-‘ জ্বর ঠান্ডা হয়েছে নাকি। পাশের বাড়ির কাকিমা জানালো। আমার মা কেমন তাতো জানোই! নিজের সমস্যার কথা সে কখনো মুখ ফুটে বলবে না। তাই পাশের বাড়ির কাকিমাকে বলে এসেছিলাম মায়ের খেয়াল রাখতে। আর কোনো সমস্যা হলে যেন আমায় জানায় ।’

—-‘ তোমার মা ভীষণ নরম মানুষ তাইনা।’

সিয়াম অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

—-‘ তুমি কি করে বুঝলে?’

হীর হেসে জবাব দিলো,

—-‘ এই যে, সে নিজে নরম বলে বাকিদের এমনই ভাবে। ভাবে তুমি তার অসুস্থতার কথা জানলে খুব ভেঙে পড়বে। খুব মন খারাপ করবে। দুঃশ্চিতা করবে। তাই জানাতে চায়না।’

সিয়াম মুচকি হাসল। আদ্রর পানে একবার তাকিয়ে পূনরায় বলে উঠলো,

—-‘ তা দুই বন্ধু মিলে কি করা হচ্ছে এখানে? কারোর জন্য অপেক্ষা করছো?’

আদ্র আর হীর মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। আদ্র আমতাআমতা করে বলল,

—-‘ হ,,হ্যাঁ সেরকমই।’

আদ্রর কথায় সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সিয়াম। হীরের দিকে তাকিয়ে চিন্তাক্লিষ্ট কন্ঠে বলল,

—-‘ কিছু হয়েছে হীর? তোমাদের দু’জনকেই ভীষণ ভীত লাগছে। সব ঠিকঠাক তো?’

হীর আস্তেধীরে সব খুলে বলল সিয়ামকে। সবটা শুনে সিয়ামের মনেও ভয় ঢুকল। এমন নিরিবিলি জায়গায় খুন খারাবি হওয়া আহামরি কিছু নয়। আর তারউপর হীরের শত্রুপক্ষরাও তো দু একজন নয়। সবটা ভেবে সিয়াম দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। সন্দেহ জনক কিছু মনে না হতেই তাদের উদ্দেশ্যে বলল,

—-‘ এখনও পর্যন্ত সন্দেহজনক কাউকে চোখে পড়েছে?’

হীর আদ্র একত্রেই না সূচক মাথা নাড়ল। অর্থাৎ ‘না’।
সিয়াম নিজের ফোন বের করলো। কাউকে একটা কল করে দ্রুত আসতে বলল এখানে। হীর প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। সিয়াম কল কাটতে হীর তাড়াহুড়ো করে প্রশ্ন করতে নিলে তার আগেই সিয়াম বলে উঠলো,

—-‘ তোমরা যতদ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যাও হীর। এখানে বেশ কিছুক্ষন যাবত নাকি কিছু অপরিচিত লোকজনের চলাচল দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটা সন্দেহজনক।’

হীরের ভয়টা পুনরায় জাতা দিয়ে বসল। আদ্র অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ হ্যাঁ হীর। আমরাও মনে হয় আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ।’

হীর বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

—-‘ যাবো। কিন্তু মাঝপথে যে আবারও এট্যাক হওয়ার অনেক সুযোগ আছে। তখন আমরা কি করবো?’

সিয়াম আগে-পরে চিন্তা করে বলে উঠলো,

—-‘ আমি তোমাদের কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে পারি। সেফ জায়গা বুঝে আমি না হয় নেমে যাবো?’

হীর খুশি হয়ে গেলো সিয়ামের প্রস্তাবে। আদ্রও একপ্রকার স্বস্তি পেলো। চারপাশ ভালো করে নজর বুলিয়ে তিনজনেই উঠে গেলো গাড়িতে। গাড়ি ছুটল বাড়ির পথে। তিনজনের মনই দুরুদুরু কাঁপছে। ভয়,চিন্তা সবটাই যেন অন্যরকম হয়ে ঘেঁটে যাচ্ছে। শত্রুরা প্ল্যান করেও আজ মুখ ফিরিয়ে চলে গেলো! কিন্তু কেন?

হীরদের গাড়ি মেইন রোডে ঢুকে যেতেই সাবাবদের গাড়ি এসে থামল সেখানে। সাবাব দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে হয়রান হয়ে হীরকে খুঁজতে লাগল। সঙ্গে তো আদ্রও ছিলো? কিন্তু লোকেশন মতো এখানে তো দু’জনের কেউই নেই৷ ভয়ে সাবাবের হাত-পা জমে যাচ্ছে। কোথায় গেলো দু’জনে? শত্রুরা বড় কোনো ক্ষতি করে দেয়নি তো তাদের? সাবাব পাগলের মতো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ছানমান করে চারপাশে খুঁজতে লাগল হীর আর আদ্রকে৷ কিন্তু কেউ যে কোত্থাও নেই। ইভান,মাহদী এবং আভিক তারাও ছোটাছুটি করতে আরম্ভ করে দিয়েছে এতক্ষণে। বৃষ্টির ভেতরেই ভিজেপুরে সব জায়গা ঘুরে খুঁজতে লাগলো তাদের। কিন্তু কারোরই হদিস মিলছেনা।

কিরন সাবাবের সাথে ছোটাছুটি করার মাঝে বলে উঠলো,

—-‘ স্যার? ওরা কি কিডন্যাপ করলো হীর আর আদ্রকে?’

—-‘ আমি জানিনা কিরন। আমার মাথা কাজ করছে না! আমার হীরপরি কোথায়?’

সাবাবের শেষ প্রশ্নটা ভীষণ অসহায় ঠেকলো কিরনের কানে। কিরন অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সাবাবের দিকে৷ অতঃপর হঠাৎই বলে উঠলো,

—-‘ স্যার, হীরের নাম্বারে একবার ট্রাই করে দেখুন না? যদি কোনো লোকেশন পাওয়া যায়?’

সাবাব যেন স্বস্তি পেলো কিরনের এই প্রস্তাবে। সে দ্রুত ডায়াল করল হীরের নাম্বারে। কিন্তু নাম্বার বারবার বিজি আসছে। মানে ফোন এখনও নেটওয়ার্কের বাইরে পরে আছে। প্রকৃতি যেন আজ তার কঠিন রূপ দেখাচ্ছে।

দূর থেকে ছুটে আসল মাহদী,আভিক এবং ইভান। তাদের ভাষ্যমতে হীররা এখানে নেই। হয়তো শত্রুরা তাদের তুলে নিয়েছে। তারা এখানে পৌঁছানো মাত্রই ওরাও এই জায়গা ত্যাগ করেছে। সাবাব মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়ল স্টিলের বেঞ্চে। সাবাবকে এভাবে বসে পড়তে দেখে চারজনেই চমকে উঠলো। একজন আরেকজন দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে যে যার মতো করে বেঝাতে শুরু করলো সাবাবকে। সবাই আশ্বাস দিচ্ছে, ‘স্যার, আপনি ভেঙে পড়বেন না। আমরা আছি তো। সবাই আছি। আমরা থাকতে ওরা হীর বা আদ্র কারোরই কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।’

সাবাব কারোর কথায় জবাব দিলো না। আস্তে করে উঠে গেলো গাড়ির দিকে। বৃষ্টির পানিতে তার সারা শরীর ভিজিয়ে একাকার করে দিয়েছে। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসতেই স্ব জোরে এক ঘুষি মারলো গাড়িতে। অসহ্য রকমের কষ্ট হচ্ছে তার বুকের ভেতর। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে হীরের দুশ্চিন্তায়।হীরের সাথে ওরা ঠিক কি কি করবে ভাবতেই পুরো পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে তার। বাবাই আর ছোটমার মত তাকেও কি বিভৎস মৃত্যু দেওয়া হবে? ঐ হিংস্র পশুগুলো এর থেকে ভালো আর কিই বা করতে পারে। না না না! নিজের সবটা ছেড়ে, হীরকে ছেড়ে সে এতো বছর নিজেকে শুধু ট্রেন করে এসেছে আজকের এই দিনটা দেখার জন্য নয়। হীরকে সারাজীবনের জন্য প্রটেক্ট করার জন্য।

সাবাবের সারা শরীর পূনরায় কেঁপে উঠলো। তবে এবার আর কষ্টে নয় রাগে। হীরকে খুঁজতে যেতে হবে। কথাটা মনে হতেই গাড়িতে উঠে বসল সে। ইতিমধ্যে বাকিরাও দৌড়ে এসে উঠলো গাড়িতে। ইভান গাড়ি স্টার্ট দিতেই সাবাব বলে উঠলো,

—-‘ কাশিমপুর জমিদার বাড়ি,গাজীপুর সদর। সেখানে চলো।’

ইভান অবাক দৃষ্টি মেলে তাকালো সাবাবের দিকে। বাকিদের সবার দৃষ্টিও একই পর্যায়ে অবাক-বিস্ময়ে ভরে উঠেছে। পেছন থেকে আভিক অবাক কন্ঠে বলে উঠলো,

—-‘ স্যার, হঠাৎ কাশিমপুর জমিদার বাড়ি কেন?’

সাবাব শান্ত মেজাজে জবাব দিলো,

—-‘ সেখানে হীরের নানুবাড়ি।’

কিরন হোঁচট খাওয়া কন্ঠে বলল,

—-‘ কি বলছেন স্যার! কনিকা ম্যামের জন্মস্থান তো মালয়েশিয়া! উনার পরিবার তো সব ওখানেরই। তাহলে?’

—-‘ না! ছোট মায়ের জন্মস্থান গাজীপুর জেলায়। কাশিমপুর জমিদার বাড়ি। ছোট মা এবং মনি তারা দু’জনে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন পড়াশোনা কমপ্লিট করার জন্য। আর সেখানেই ছোটমার পরিচয় হয় বাবাইয়ের সঙ্গে। বাবাই তখন মালয়েশিয়াতে ট্রেনিং করতো। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং মর্যাদাপূর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হলো ‘মালয়’। এটি স্থাপিত হয় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর। এটি মালয়েশিয়ার কুলালামপুরে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ছোটমা এবং মনি সেখানেই পড়াশোনা করতেন। তাদের পারিবারিক অবস্থা প্রথম থেকেই বেশ ভালো ছিলো। তাই দুই মেয়ের বিদেশ পড়ার খচর হীরের নানুভাই অনায়াসে দিতে পারতেন। বাবাই একদিন কোনো এক কারনে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন তার বন্ধুদের নিয়ে। দর্শনের জন্যও বলতে পারো। আর সেখানে গিয়েই বাবাই প্রথমবারের দেখেছিলো ছোটমাকে। প্রথম দেখাতেই প্রেম আর সেই অবস্থাতেই ভালোবাসার প্রকাশ। ছোটমা বেশ আশ্চর্য হয়েছিলো বাবাইয়ে কান্ডে। এই তাকে দেখলো আর এই ভালোবাসার কথা বলে ফেললো। ছোটমার মতে এটা ছিলো বাবাইয়ে ইনফ্যাচুয়েশন! যা সময়ের স্রোতে ভেসে যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে ছোট মার এই ধারনা কেটে গেলো। বাবাইয়ের যে তার প্রতি কোনো ইনফ্যাচুয়েশন হয়নি তা আস্তে আস্তে ছোটমার বোধগম্য হয়। এন্ড দেন টানা দেড়বছর তাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। অতঃপর বাবাইয়ের ট্রেনিং শেষ হতে যখন বাবাই দেশে চলে আসবে তখন শুরু হয় ছোটমার পাগলামি। সে বাবাইকে ছেড়ে এক মুহুর্তও থাকতে পারবেনা বলে জানায়। তাই বাবাই বলেছিলো, তাহলে চলো বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে করে বাংলাদেশে গিয়ে ওখানেই তোমার সব পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেই। ছোট মা বাবাইয়ের এক কথায় রাজি হয়ে যায়। সে তার এক স্বপ্নের জগতকে ছেড়ে পূনরায় আরেক স্বপ্নের জগত গড়ে বাবাইয়ের হাত ধরে। বাবাইও অবশ্য জানতো না ছোটমার বাবা-মা গাজীপুর থাকেন। দেশে ফিরে তখনই জানতে পারে তারা গাজীপুরে থাকেন। ছোটমার কোনো ভাই ছিলো না। তাই ছোটমার বাবার স্বপ্ন ছিলো তার দুই মেয়েই যেন পড়াশোনা করে তাদের ছেলের অভাব পূরন করে। কিন্তু ছোটমা মাঝপথে সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে বাবাইয়ের সঙ্গে বিয়ে করে দেশে ফেরায় তারা কেউ তাদের সম্পর্ক প্রথমদিকে মেনে নেয়নি। তবে হীরের নানুভাই বাবাইকে মনে মনে খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু সেটা কখনও প্রকাশ করতে চাইতেন না। অবশেষে সময়ের সাথে সাথে তারা বাবাই এবং ছোট মাকে মেনে নিলেন। ব্যস সবটা ঠিক হয়ে গেলো। তাদের দুজনেরর জীবনটা রূপকথার মতো সাজিয়ে নিলেন নিজেরা। সেভাবেই বেশ চলছিলো তাদের জীবন।’

মাহদী বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো। মন খারাপ করে বলল,

—-‘ আমার ভীষণ আফসোস হচ্ছে স্যার। শত্রুরা কেন যে তাদের এতোবড় সর্বনাশ করলো!’

সাবাব মলিন হেসে বলল,

—-‘ শত্রু যখন আপনজন হয় তখন মানুষের শেষ পরিনতি এটাই হয়।’

সাবাবের কথায় আকস্মিক ধাক্কা খেলো সবাই। আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে সবাই একত্রে বলে উঠলো,

—-‘ তার মানে কি মনিকা ম্যাম….’

—-‘ হুম।’

—-‘ হোয়াট! কি বলছেন স্যার। উনিতো হীরের মায়ের মতো। ইভেন দেখতেও কনিকা ম্যামের মতো।’

সাবাব তাচ্ছিল্যের ন্যায় হাসল। শান্ত কন্ঠে বলল,

—-‘ এখানেই তো রহস্য।’

—-‘ রহস্য। কি রহস্য স্যার?’

—-‘ এক্ষনি জানা যাবে না। ধীরে ধীরে জানতে হবে। গাড়ি এখান থেকে বাঁ-য়ে মোড় ঘুরাও।’

ইভান সামনের রোডের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—-‘ স্যার এখান থেকে তো সরু রাস্তা পড়বে। আমাদের গাড়ি তো এখান থেকে ঢুকবেনা।’

—-‘ হ্যাঁ তার জন্যই বলেছি এখান থেকে বাঁ-য়ে মোড় নাও।’

ইভান মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,

—-‘ ওকে স্যার।’

কিরন উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,

—-‘ স্যার, মনিকা ম্যাম কি হীরকে কিডন্যাপ করিয়েছে?’

—-‘ নট সিওর।’

—-‘ তাহলে আমরা গাজীপুর কেন যাচ্ছি?’

—-‘ যদি মনি হীরকে কিডন্যাপ করিয়ে থাকে তাহলে জমিদার বাড়ির গুম ঘরে হীরকে এবং আদ্রকে পাওয়া যাবে। আর যদি গুম ঘরে ওদের কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে মনি আপাতত সন্দেহের তালিকা থেকে সরে যাবে।’

—-‘ আপাতত?’

—-‘ হুম আপাতত। পুরোটা নয়। আমার সন্দেহের তালিকায় উনি গত বারোবছর যাবতই ছিলেন। আর এখনও আছেন। আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান নেই বলেই মনির বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ আমি এখনও নিতে পারছিনা। ব্যস, ছোট্ট একটা প্রমান আমার হাতে এসে যাক তারপর শুরু হবে মনির জীবনে উল্টো দিনগোনা।’

সাবাব কথা শেষ করার মাঝেই তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনটা সামনে তুলে ধরতেই সানিয়ার নামটা ভেসে উঠলো। মনটা আবারও কু ডাকল তার। সানিয়া যদি হীরের কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে সে কি জবাব দেবে তাকে? এতক্ষণে মাও নিশ্চয়ই সবটা জেনে গেছে।

সাবাব অস্থির মনে কলটা রিসিভ করে কানে ধরল। ওপাশ থেকে কোনো কথা আসার পূর্বেই সাবাব বলে উঠলো,

—-‘ সানি? আমার কথা মন দিয়ে শোন? একদম চিন্তা করিসনা তোরা। মাকে জানাস না এক্ষনি কিছু। মা জানলে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করবে। আমি হীরকে নিয়েই বাড়ি ফিরবো দেখিস। একদম নিশ্চিন্তে থাক।’

—-‘ ভাইয়া, কোথায় আছিস তুই? হীর বাসায় এসে পড়েছে। মেহেন্দি ডিজাইনাররাও এসে পড়েছেন। মা তোকে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে। তাড়াতাড়ি চলে আয়।’

সাবাবের কথা সানিয়ার কানে কতটুকু পৌঁছালো ঠিক বোঝা গেলো না। সানিয়া তাড়াহুড়োর উপর কথাগুলো বলেই কল কেটে দিলো। সাবাব হতবিহ্বল হয়ে ফোনটার দিকে চেয়ে রইলো কতক্ষণ। পাশ থেকে বাকিদের চিন্তিত গলা কানে বেজে উঠতেই সাবার চোখ বুঁজে গাড়ির সীটের সাথে মাথা হেলিয়ে নিলো। বড় করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

—-‘ হীরপরি ঠিকাছে। বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরাও ইভান।’

সাবাবের কথায় সবার বুকের উপর থেকে যেন পাথর নেমে গেলো। সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বস্তি পেলো যেন। ইভান সাবাবের আদেশে গাড়ি ঘোরালো আহমেদ ভিলার উদ্দেশ্যে। হীর ঠিকাছে জেনে সবাই স্বস্তি পেলেও সাবাব কিছুতেই স্বস্তি পেলো না। আজ কারোর না কারোর প্ল্যান কিছু একটা অবশ্যই ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের প্ল্যান চেঞ্জ কেন হলো? কি কারন থাকতে পারে এখানে?

#চলবে_

[ বিঃদ্রঃ গল্পটা কি একটু বোরিং ওয়েতে এগোচ্ছে? ]

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here