কাছে দূরে পর্ব ২৭

#কাছে_দূরে ♥️
#moumita_meher
#পর্ব___২৭

বাড়ি ভর্তি লোকজনের সমাগম। লোকজন ভীড় করেছে মনিকাকে দেখতে। মনিকা দেখতে ঠিক কনিকার মতো। নাজমা বেগম সেই থেকে একই ভাবে চেয়ে আছে মনিকার দিকে। আজিম সাহেব, সানিয়া,আদ্র,এশা,মিলি কেউ বাদ নেই। সবাই শুধু অবাক দৃষ্টি মেলে দেখে চলেছে তাকে। নিজেকে নিয়ে লোকজনের এতো আগ্রহ কেবল মাত্র সে কনিকার মতো দেখতে বলে! মনিকা খানিক বিব্রত হলো সবার অদ্ভুত চাহনিতে। ঠোঁটের কোনে কৃত্রিম হাসি টেনে কেবল হাসছে। নাজমা বেগম, আজিম সাহেব বা সানিয়া কেউই মনিকাকে এই প্রথমবার দেখছেনা! কিন্তু কম করে হলেও যে সবাই একত্রেই পার করেছে চৌদ্দটি বছর। মনিনাকে দেখতে অন্যরকম হলে হয়তো কারোর তার চেহারার গঠন অব্দিও মনে থাকতো না। ঝাপ্সা আকারেও কারোর চোখের সামনে ভাসতো না মনিকার মুখ। কিন্তু সবার মনে আজও একই ভাবে গেঁথে আছে সেই পরিচিত মুখ। আজ বহুদিন বাদে আবারও নাজমা বেগমের বুকের ভেতরটায় হাহাকার করে উঠলো কনিকার জন্য। রিয়াদ খুঁজে খুঁজে একখানা রত্ন জোগাড় করেছিলো বটে তার জন্য। কনিকার প্রশংসা যত করা হতো ততই যেন কম পড়ে যেতো তার জন্য। রূপে,গুনে,ব্যাক্তিত্বে বরাবরই সে ছিলো অসাধারণ। রিয়াদ শান্ত হলেও সে ছিলো বরাবরই চঞ্চল। দশ জনকে একাই মাত করে দিতো তার বুদ্ধিতে। কনিকা বিয়ের পর থেকে নাজমা বেগমের খুব নেওটা ছিলো। রিয়াদ যেমন নাজমা বেগমকে খুব মান্নি করে চলতো কনিকাও ঠিক রিয়াদের মতোই তাকে ভীষণ মানতো। মায়ের মতো ভালোবাসা পেত নাজমা বেগমের থেকে। তাদের মাথার উপর বটগাছের মতো ছায়া দিতে শশুর – শাশুড়ী ছিলো না বলেই নাজমা বেগম হয়ে উঠেছিলেন সবার গুরুজন। তার যেমন ভালোবাসা ছিলো তেমন শাষন বারনও ছিলো। দুটো পরিবারের সাজানো-গোছানো সংসার ছিলো। দিন শেষে আস্ত একখানা সুখী পরিবার ছিলো আহমেদ ভীলা। হীর জন্মানোর আগ অব্দি কনিকা রিয়াদ এই পরিবারেরই বড় এক অংশ ছিলো। কিন্তু হীর জন্মাতেই আজিম সাহেব কেমন অদ্ভুত এক আচরন করতে আরম্ভ করেন ভাইয়ের সাথে। দুই ভাইয়ের সম্পর্কের ফাটল ধরে হীরের জন্মসূত্রেই। এসবের কিছুই হীর জানতো না, সাবাব বা সানিয়াও এসবের কিছু জানেনা। জানতো কেবল তারা চারজনই। হীরকে ছোট থেকে আজিম সাহেব মোটেই পছন্দ করতেন না। কারনটা অবশ্য সে ছাড়া আজ অব্দি কেউই জানতে পারেনি। তবে এখন সে হীরকে চোখে হারান। নাজমা বেগমের ভাবনা মতে আজিম সাহেব ভাইকে হারানোর শোকে ভাইয়ের মেয়েকে আপন করতে পেরেছেন। হারানোর ভয়টা যে তাকেও কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।

নাজমা বেগম কেঁপে উঠলেন। মৃত্যসয্যায় শোয়া কনিকার মুখটা মনে পড়তেই দ্রুত মনিকার দিকে তাকালেন। মনিকা হাসেও ঠিক কনিকার মতো! তবে কৃত্রিম নয়, সবটাই ছিলো ন্যাচারাল। নাজমা বেগম মনিকাকে টেনে তার পাশে বসালেন। ভরাট চোখ জোড়া দিয়ে মনিকাকে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললেন,

—-‘ কনিকাটা আজ বেঁচে থাকলে কত খুশি হতো তার বোনকে দেখে। কিন্তু মানুষটা যে আর নেই পৃথিবীতে। নিষ্ঠুর পৃথিবীটা বাঁচতে দিলোনা মেয়েটাকে!’

মনিকা মলিন মুখে তাকালো নাজমা বেগমের মুখ চেয়ে। তার হাতের উপর হাত রেখে বলল,

—-‘ আপা, আজকের দিনে আপনি এসব কি ভাবছেন বলুন তো? কনিকা নেই আমরা সবাই জানি! আর আজ ও বেঁচে থাকলে আমায় দেখে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত ও হতো তাও আমরা জানি! কিন্তু ও নেই বলে আমরা যে মন খারাপ করে বসে থাকবো সেটা কি ঠিক হবে বলুন তো? কনিকা যেখানেই আছে, ভালো আছে। ওকে ফিরিয়ে আনা তো সম্ভব নয় কিন্তু ওর জন্য মন ভরে দোয়া করা তো সম্ভব বলুন? আমরা পারিনা ওর জন্য কষ্ট না পেয়ে ওর জন্য মন ভরে দোয়া করতে? যেন ও খুব ভালো থাকে?’

নাজমা বেগমের চোখ গড়িয়ে জল পড়লো দু’ফোটা। মুখে হাসির রেখা টেনে ভেজা দৃষ্টি মেলে তাকালেন। হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললেন,

—-‘ প্রতি মোনাজাতে আমার কনিকা আর রিয়া সর্বদাই থাকে। সর্বদাই থাকে।’

বড়মা এবং মনির আলোচনার মধ্যমনি নিজের মা! যিনি আজ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন। পার হয়ে গেলো বারো টি বছর। বুক ফেটে কান্না আসছে হীরের! কিন্তু কাঁদলেই কি সবটা ঠিক হয়ে যাবে? জীবন কি আরও একবার সুযোগ দিবে নিজের বাবা-মাকে কাছে পাওয়ার? ফিরে পাওয়ার? জীবন কি ফিরিয়ে দিবে সেই শৈশবটুকু। যেখানে মা, বাবা,মালি কাকা, গানের টিচার,ড্রাইভার আঙ্কেল সবাই ছিলো? সুন্দর একটা জীবন ছিলো। হাসি ছিলো,আনন্দ ছিলো। যেখানে দুঃখের কোনো ঠায় ছিলো না! ফিরিয়ে দিবে কি সেই সময়কে? যেখানে মা-বাবা ছিলো। সবচেয়ে কাছের প্রিয় মানুষ দুটো ছিলো! ফিরিয়ে দিবে? কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ জোড়া তার ধন্য হলো জল পেয়ে। চোখ থেকে গড়িয়ে কয়েক ফোটা নোনা জল পড়তেই বুকটা ভারী হয়ে উঠলো। প্রিয় মাকে হারানোর দুঃখে। প্রিয় বাবাকে হারানোর দুঃখে। ইশ, কতই না ভালো ছিলো ঐ সময়টা!

—-‘ এই যে বিয়ের পাত্রী? সোশ্যাল মিডিয়াতে তো খুব এক্টিভ দেখা যায় হু? দিন দিন যে এতো গ্লো করছো ব্যাপার কি হু? বিয়ের বাতাস লাগায় কি হচ্ছে এসব?’

সানিয়া লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে নিলো। কানের পাশে চুল গুঁজতে গুঁজতে বলল,

—-‘ ঐ আসলে… আজকাল তো সোশ্যাল মিডিয়াতেই সব! তাই সারাক্ষণ ওখানেই সময় ব্যয় হয়ে যায়!’

মনিকা হেসে উঠলো। চোখ ঝাপটে আশ্বস্ত করল সানিয়াকে। বিশাল আকারের বড় লাগেজটার দিকে তাকিয়ে শীলাকে খুলতে ইশারা করলো। শীলা আদেশ পেয়ে তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে লেপ্টে বসে পড়ল। লাগেজটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে খোলায় ব্যস্ত হতেই মনিকা সানিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

—-‘ সেটাই তো। এখন তো ওখানেই হয়। মানুষ বিয়েও করে ওখানে। জানেন আপা, আজকাল মানুষ রিয়েল লাইফের চেয়ে ভার্চুয়াল লাইফের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে। সোশ্যাল জগতে পা রাখলেই দুনিয়ার সব খবর চোখের কোনে। এই হলো আজকালের অবস্থা। আমি কিন্তু ফেসবুকে সানিয়াকে ফলো দিয়ে রেখেছি। ওর সব পোস্ট, পিকচার্স সবই কিন্তু দেখতে পাই আমি।’

নাজমা বেগম স্মিত হাসলেন স্রেফ। জবাবে কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। দ্রুত কিছু ভাবারও সময় পেলেন না৷ কারন ইন্টারনেট দুনিয়া নিয়ে তার জ্ঞান বরাবরই শূন্য।

সানিয়া মনিকার কথায় আগ্রহী হয়ে সোশ্যাল জগত নিয়েই বেশ কিছুক্ষন গল্পের আসর জমালো। এর মাঝে আজিম সাহেবের সঙ্গেও ভালোমন্দের কুশলাদি বিনিময় হলো মনিকার। শীলাকে খুলতে বলা লাগেজে হীরের বন্ধুদের থেকে শুরু করে বাড়ির সবার জন্য উপহারে কিনে লাগেজ ভরিয়ে রেখেছিলো মনিকা। সবার হাতে হাতে উপহারের প্যাকেট দিয়ে তবেই তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। এই সবার মাঝে সাবাবকে অনুপস্থিত দেখা গেলো। মনিকাকে বাড়ি অব্দি ছেড়ে সে আবারও বেড়িয়ে গেলো ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে বলে। আসতে আসতে রাত হবে।

________________

কাল থেকে বিয়ের সব রীতি রেওয়াজ শুরু হবে। প্রথমে মেহেন্দি, সংগীত, রং খেলা, গায়ে হলুদ অতঃপর বিয়ে। সব সিরিয়াল অনুযায়ী লিস্ট করার জন্যই হাতে কাগজ কলম নিয়ে লিস্ট করতে বসেছে সব মেয়েরা। লেখালেখি, লিস্ট করা সবটাই হীরের কাজ। আর বাকিরা বসেছে লিস্ট করতে সাহায্য করার জন্য। তাই ছাদের এক পাশ দখল করেছে মেয়েরা আর অন্য দখল করেছে ছেলেরা।

ছেলেদের মেইন লিডার হলো সাবাব। সে সবাইকে যেভাবে যেভাবে আদেশ করবে সবাই সেভাবেই কাজ করবে। তাঁদের পাশ জুড়ে তৈরি হচ্ছে বিশাল স্টেজ। এখানেই হবে মেহেন্দি, সংগীতের অনুষ্ঠান। আর রং খেলা এবং গায়ে হলুদ হবে গার্ডেনের স্টেজে। স্টেজ তৈরীর কাজ জমজমাট ভাবে হচ্ছে। সবাইকে আঙ্গুল তুলে আদেশ করে যাচ্ছে সাবাব। ব্যাপারটা মন্দ লাগছেনা তার কাছে। সবকিছুর লিস্ট করার মাঝেই আঁড়চোখে সেই দৃশ্য দেখতে ভুলছে না হীর।

সময়টা কারোর জানা নেই। মধ্যরাতের মতোই বোধ হচ্ছে। চারপাশে নিস্তব্ধ শীতল। ঝিরিঝিরি বাতাসে লুকানো অনুভূতি গুলো যেন দৃঢ় মনোবল নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। কেউ কেউ ঘুমে ঢুলছে। লিস্টের কাজ এখনও কিছু টা বাকি। ঐদিকে স্টেজের কাজেরও একই অবস্থা। হীর হাতের কাজ বাকি রেখেই এশা এবং মিলির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

—-‘ বাচ্চাগুলোকে নীচে নিয়ে যা। যাদের ঘুম পাচ্ছে না তারা দুই-এক জন থাকলেই চলবে। বাকিরা সবাই চলে যাও।’

হীরের আদেশে বাচ্চারা উঠলেও বড়রা কয়েকজন উঠল না। হীর তাঁদের দিকে তাকিয়ে আস্বস্ত করে বলল,

—-‘ আরে বাবা কাউকে জোর করে থাকতে হবেনা। বললাম তো দুই একজন থাকলেই চলবে। লিস্ট বেশি বাকি নেই। অল্পকিছু নাম লেখা বাকি। সেটা আমরা দুই তিনজন মিলেও করতে পারবো।’

সবাই এবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। আস্বস্ত হয়ে এখন আর একজনও রইলো না। সবাই হাসি মুখে দৌড়ে গেলো শরীর বিশ্রামের জন্য। হীর প্রথমে অবাক হলো বটে, কিন্তু পরক্ষণেই আবার হেসে উড়িয়ে দিলো।
সাদা টপসের সাথে কালো প্লাজু পড়েছে হীর। শূন্য গলা ঢাকতে গলার দু’পাশ থেকে কালো সিল্কের ওড়নাটা পেঁচিয়ে রেখেছে। চুলগুলো এতক্ষণ কাঠি দিয়ে পেঁচিয়ে থাকলেও হঠাৎ কি হলো দূর থেকে বুঝতে পারলো না সাবাব। হীর কাঠিটা টেনে বের করে আনলো। আর সঙ্গে সঙ্গে একঝাঁক চুল ছড়িয়ে পড়লো পিঠে। মাথা নীচু করে থাকার দরুন সামনের চুল গুলো ঝুলে পড়লো। কাঠি হাতেই সেই চুল গুলোকে কানের পাশে গুঁজে দিলো সে। মনোযোগ সম্পুর্ণ লিস্টের খাতায়। আনমনে চুল নিয়ে খেলা চলছে। সাবাব হাতের কাজ বাকিদের বুঝিয়ে দিয়ে পা টিপে টিপে এসে হীরের ঠিক পেছনটাতে দাঁড়ালো। হীর টেরও পেলোনা। হীরের আনমনার সুযোগ নিয়েই সাবাব চুপিসারে হীরের পেছনে বসল। গায়ে গা ঘেঁষল না। আলতো হাতে স্পর্শ করল হীরের চুল। খুব সাবধানে আরেকটু খানি এগিয়ে চুলের ঘ্রাণ নিতেই হীরের টনক নড়ল। আকস্মিক ভয় পেয়ে সামনের দিকে সরে গেলো। ভীত চোখে পেছন মুড়ে দেখার মাঝেই সাবাব সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। এমন ভাবে দাঁড়াল যেন সে এই মাত্রই এলো এখানে। হীর শুঁকনো গলায় ঢোক গিলো আমতাআমতা করে বলল,

—-‘ ত,,তুমি! কখন এলে?’

সাবাব মুখে হাত চেপে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলো। তৎক্ষনাৎ কিছু ভাবতে নিলেই হীর আবারও বলে উঠলো,

—-‘ তুমি কি বসেছিলে এখানে?’

সাবাব সেকেন্ডের চেয়েও কম সময়ের মাঝে না সূচক মাথা নাড়লো। মাথা চুলকে কথা বানাতে প্রস্তুত হয়ে তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,

—-‘ ভূত ছিলো হয়তো!’

হীর আঁতকে উঠে তাকালো। চোখে ভয়ংকর ভয় দেখা যাচ্ছে। লাফিয়ে পড়ে জায়গা ছেড়ে আতংকিত গলায় বলল,

—-‘ ভ,,ভূততত! ক,,কোথায়?’

কথা ঘুরে যাচ্ছে। সাবাব মনে মনে নাচ পেড়ে বলে উঠলো,

—-‘ তোর পেছনেই! কে যেন বসেছিলো। আমি ওখান থেকে দেখেই তো হেঁটে এলাম। আর এসে দেখি কেউ নেই। জানিস,ইয়া লম্বা তার দুটো বড় বড় দাঁত দেখা যাচ্ছিলো!’

হীরের বুক কেঁপে উঠলো ভয়ে। সে ভয়ে ছিটকে পড়লো সাবাবের দিকে। সাবাবকে খামচে ধরে খিঁচে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। ভয়ে কাঁপতে লাগল মুহুর্তেই। সাবাব ভয়ে আরও ভয় বাড়ালো। হীরের সিল্কি চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে বলল,

—-‘ মনে হয় তোর এই খোলা চুলের প্রেমে পড়ে গিয়েছে ভূত।’

হীর কাঁদো কাঁদো মুখ তুলে তাকালো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

—-‘ হায় আল্লাহ কি বলো?’

সাবাব অত্যন্ত আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে বলল,

—-‘ তা নয়তো কি? তুই এই রাতদুপুরে কেন চুল খুলেছিস?’

—-‘ চুল গুলো কাঠিতে পেঁচিয়ে রেখেছিলাম বলে বারবার টান লাগছিলো। মাথায় চিনচিন করে ব্যাথা করছিলো! তাই খুলে দিয়েছি।’

—-‘ চুলে শ্যাম্পু করেছিস?’

ভয়ার্ত দৃষ্টি খানা মুহূর্তেই তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো। ভাবুক কন্ঠে বলল,

—-‘ মানে?’

সাবাব সতর্ক হয়ে উঠলো। গলা খাঁকারি দিয়ে আবারও হীরকে ভয় দেখানোর ফন্দি আঁটতে আঁটতে বলল,

—-‘ আমি না! ভূত বাবাজির প্রশ্ন!’

হীর ভ্রু কুঁচকে বলল,

—-‘ ভূত বাবাজির শ্যাম্পু নিয়ে এতো আগ্রহ কেন? আর তুমিই বা কি করে বুঝলে ভূত বাবাজির প্রশ্ন?’

সাবাব আঁটকে গেলো। আর কিছু ভাবা তার দ্বারা সম্ভব হলো না। ধরা পড়া চোরের ন্যায় দৃষ্টিখানা শুধু এদিক ওদিক করতে থাকলো। হীর বুঝতে পারলো আসল ঘটনা। মুহুর্তেই সাবাবকে ছেড়ে দিয়ে ঘুরে এসে নিজের আসনে বসে পড়লো। মনে মনে মুচকি হেসে আবারও কাজে মনোযোগ দিলো। সাবাব এখনো বোকার ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। পরক্ষণেই আবার নিজেকে গুটিয়ে নিলো। গলা খাঁকারি দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে হীরের পাশে বসল। মনে মনে হেসে আবারও গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো,

—-‘ ভয় পেলে এখনও তোকে ভীষণ মিষ্টি লাগে। ঠিক সেই ছোটবেলার মতো।’

হীর প্রচন্ড বিষ্ময় নিয়ে তাকালো। বিস্মিত কন্ঠেই বলে উঠলো,

—-‘ ছোট বেলার কথা তোমার মনে আছে?’

সাবাব মৃদু হেসে বলল,

—-‘ একটু একটু।’

হীর প্রথমে খুশি হলেও সাবাবের উত্তরে সেই খুশির ইতি টানল। মলিন হেসে বলল,

—-‘ ওহ।’

—-‘ তোর মনে পড়ে ছোটবেলার কথা?’

—-‘ (ভীষণ মনে পড়ে। চোখ জোড়া বন্ধ করলেই মনে পড়ে সেই মায়া মায়া দেখতে ছেলেটার মুখখানা। ভীষণ মনে পড়ে তার মুখে বারবার ‘হীরপরি হীরপরি’ ডাকা নামটা। ভীষণ মনে পড়ে)। নাহ্! কিছুই মনে পড়ে না। কোন সেই বারো বছর আগের কথা। সেসব কি এখনও মনে পড়ে?’

সাবাব মাথা নীচু করতে করতে মলিন হাসলো। হীরের অভিমান আচ করতে পেরে তার বুকটাও ভারী হয়ে উঠলো। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। কথা ঘোরানোর তালেই বলে উঠলো,

—-‘ লিস্ট কতদূর কমপ্লিট হলো? মেহেন্দি পড়াতে কাল কতজন লোক আসবে?’

হীর জোরপূর্বক হাসির চেষ্টা করে বলল,

—-‘ হ্যাঁ প্রায় শেষের দিকে। এই দেখো, এটা হলো মেহেন্দির লিস্ট। কাল পাঁচজন লোক আসবেন মেহেন্দি পড়াতো। দু’জন আসবেন রাঙামাটি থেকে আর বাকি তিনজন রুংপুর। উনাদের কন্টাক্ট নাম্বার এখানেই দেওয়া আছে। কাল একবার কল করে নিতে হবে। আর উনাদের টাকার ব্যাপারটাও ঠিক করে নিয়েছি। বাকি সব ঠিকঠাক। রাতে সঙ্গীতেও এগুলো প্ল্যানিংয়ে আছে….।’

হীর প্রত্যেক লাইন ধরে ধরে বোঝাতে লাগলো সাবাবকে। কিন্তু সাবাব যে তার কিছুই খেয়াল করতে পারছে না। এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে দুনিয়াতে হীর ছাড়া কোনো মেয়েই নেই যে কিনা এতোটা সুন্দর করে কথা বলতে পারে। প্রত্যেক টা কথার অসাধারণ সব ব্যাখ্যা দিতে পারে।

#চলবে_ 🖤

[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here