কাছে দূরে পর্ব ৮

#কাছে_দূরে ♥️🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ০৮

সন্ধ্যা ৭টা। আহমেদ ভিলায় আগমন ঘটেছে নতুন অতিথিদের। সানিয়ার হবু স্বামী, শশুর-শাশুড়ি এবং একমাত্র দেবর। তাদের আলোচনার মুল টপিক বিয়ের ডেট ফাইনাল নিয়ে। নেহাল একটা প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজারিং পোস্টে আছে। মাস শেষে মোটা অংকের স্যালারি। আজিম সাহেব নেহালের মাস শেষের ইনকাম দেখেই সানিয়ার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। কেননা, লোক সমাজে তার একটা নাম-ডাক আছে। এই শহরের নামকরা বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আজিম আহমেদ। আর তার একমাত্র মেয়েকে তো আর যার-তার সাথে বিয়ে দিতে পারেন না। তাই নেহাল আর সানিয়ার সম্পর্কের কথা জেনেই আগে খোঁজ নিয়েছেন নেহালের যোগ্যতা কি তার মেয়েকে বিয়ে করার। অবশেষে, নেহালের যোগ্যতা দেখে তাও তিনি মানিয়ে নিলেন। যদিও এসব ব্যাপারে তার পরিবার কিছুই জানেন না। কারন তিনি উপরে উপরে কখনই তার ভেতরের রূপটা প্রকাশ করেন না।

—-” গিন্নি, উনাদের চা-নাস্তার কিছু ব্যবস্থা করো? আর তোমার ছেলে কোথায়? তাকে ডাকো? বোনের বিয়ের পাকা কথা হচ্ছে সে না থাকলে কি চলে?”

আজিম সাহেবের আদেশে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন নাজমা বেগম। মেহমানদের খাতিরদারিতে খাবার সাজাতে সাজাতে কয়েকবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন ছেলের রুমের দিকে। মেহমানরা যে আসবে তা নাজমা বেগম ছেলেকে দুপুর বেলাতেই বলে রেখেছিলেন।সাবাবের তো এতক্ষণে নীচে নেমে আসার কথা। সানিয়াও রেডি হচ্ছে। হীর একবার এসে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে আবারও নিজের রুমে চলে গেছে। হীর সবসময় মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই পছন্দ করে। যেমন কথাও খুব কম বলে তেমন মানুষের সাথে মেলামেশাও খুব কম তার। নাজমা বেগম গ্লাসে পানি ঢেলে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রুবিকে বললেন সাবাব কে ডেকে নিয়ে আসতে। রুবি হাতের কাজ রেখে দৌড়ে গেলো সাবাব কে ডাকতে। দুই সিঁড়ি উঠতেই দেখা মিলল সাবাব আর সানিয়ার। রুবি তাদের দেখে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

—-” ভাইজান, খালাম্মায় আফনেরে ডাকে।”

সাবাব ড্রয়িং রুমের দিকে একবার উঁকি মেরে দেখল। মেহমানরা যে ঠিক টাইমে এসে উপস্থিত হবেন সাবাব সেটা মাথায় রাখেনি। তাই ঠিক সময়ে তার মিটিং শেষ করে আর নীচে আসাও হয়নি। সাবাবকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে সানিয়া তাড়া দিয়ে বলল,

—-” আবার দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? জলদি চল!”

সাবাব ঘাড় ফিরিয়ে সানিয়াকে দেখল। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল,

—-” বিয়ের তারিখ জলদি ফেলার এতো তাড়া হু? দাঁড়া মাকে বলছি এসব তারিখ রেখে কিছু হবেনা, তুমি বরং সানিকে এক্ষনি নেহাল ভাইদের সাথে পাঠিয়ে দাও। একবারে কাহিনী খতম। কষ্ট করে বিয়ের এতো রিচুয়াল্স মেনে, টাকা খরচ করে বিয়ে দেওয়ার কোনো দরকার নেই। তাতে টাকাও বাঁচল আর নিয়মও রক্ষা হলো।”

সানিয়া মুখ কুঁচকে চটাস করে চড় লাগালো সাবাবের কাঁধে। সাবাব হেসে উঠে নিজেকে আড়াল করল। সানিয়া মুখে ভেংচি কেটে বলল,

—-” এর পরের স্টেপে তো তুই আছিস। দেখিস তোর বিয়েতে আমি কি করি? তোর শশুর বাড়ির লোকের সাথে কথা বলে তোর বিয়েই ভেঙে দিবো হুহ্। দেখিস!”

সাবাব মুখ বাঁকিয়ে বলল,

—-” বললেই হলো নাকি? তুই কি আমায় এতো বোকা ভাবিস নাকি? এই তোর মতো এতো কাহিনি করে দেন বিয়ে করব? মোটেই না। আমি বিয়ে করব বড়জোর পাঁচ মিনিটে। এর বেশি সময় নিয়ে ধৈর্য্য ধরে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।”

সানিয়া হা করে তাকালো। অবাক হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে বলল,

—-” বলিস কি! তুই তোর বিয়ে নিয়ে এসব প্ল্যানিং করে রেখেছিস? মা জানে? আর বাবা! বাবাও তো জানেনা নিশ্চয়ই। দ্বারা আমি এক্ষনি জানাচ্ছি।”

—-” এই এই কই যাস! নীচে কিন্তু তোর হবু শশুর বাড়ির লোকজন। মুখ খুললেই তোর বিয়ে ভাঙ্গল বলে…”

ভাইয়ের হুমকি পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সানিয়া। নীচে যে তার হবু শশুর বাড়ির সবাই উপস্থিত ক্ষনিকের জন্য তা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। মনে পড়তেই আবারও মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গিয়ে শাড়ি টানাটানি করে ঠিক করতে লাগল। সানিয়ার কান্ড দেখে সাবাব মুখ টিপে হাসতে লাগল।

ছেলে আর মেয়েকে এখনও নীচে নামতে না দেখে নাজমা বেগমের কপালের ভাজ আরও সুক্ষ্ম হয়ে উঠলো। কাজ করছেন কিন্তু কাজে মন দিতে পারছেন না। ডাইনিং টেবিলের এসে ট্রেতে ফলপাকড়া তুলতে তুলতে সিঁড়িতে উঁকি দিতেই দেখতে পেলেন সানিয়া আর সাবাব কে। বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে আস্তে করে ডেকে উঠলেন তাদের। মায়ের গলার স্বর কাছাকাছি ভেসে আসতেই দু’জন দু’জনকে তাড়া দিয়ে নেমে এলো নীচে। সাবাব সানিয়াকে নিয়ে সোজা ড্রয়িং রুমে গিয়ে হাজির হলো। সাবাবকে আসতে দেখে নেহাল দাঁড়িয়ে গেলো। হাসি মুখে হাত মিলিয়ে হাকলা করে জড়িয়ে ধরে ভালোমন্দের খবর নিলো। সাবাব খেয়াল করল রাবিবও এসেছে। কিন্তু চুপচাপ শান্ত তার গতিবিধি। আজ আর হীরের সাথে আলগা ভাব দেখাবে না বলেই আশাকরা যায়। সাবাব সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করতে করতে আশেপাশে তাকালো। হীরকে খুঁজছে। কিন্তু হীর তো নেই এখানে। সানিয়া ভাইয়ের নজর ঘুরতে দেখে ফিসফিস করে বলল,

—-” যাকে খুঁজছিস সে এখানে নেই। রুমে আছে।”

বোনের হাতে ধরা খাওয়ার ভয়ে কেশে উঠল সাবাব। কাশতে কাশতে সানিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে চাপা স্বরে বলল,

—-” তোকে বলেছি নাকি আমি হীরকে খুঁজছি!”

সানিয়া অবাক কন্ঠে বলল,

—-” আমি তো কারোর নাম নেই নি!”

কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দিলো সানিয়া। সাবাব এবার হাতেনাতে ধরা। এবার যে কেশেও কুল পাবেনা সে। সানিয়া হাসতে থাকলে সাবাব লজ্জায় পড়ল। সানিয়ার পাশ থেকে ভাইবোনের গোপন আলাপে হস্তক্ষেপ করল নেহাল। তাদের মতোই ফিসফিস করে বলল,

—-” কি ব্যাপার হু? দুই ভাইবোনে মিলে কি এমন সলাপরামর্শ হচ্ছে শুনি।”

বোনের হবু বরের কাছে চোরের মতো ধরা পড়বে তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই! বেচারা টিকতে না পেরে দ্রুত পায়ে উঠে মায়ের কাছে চলে গেলো। নাজমা বেগম রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ট্রে সাজাচ্ছেন। ছেলেকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখেই তাড়াহুড়ো করে বললেন,

—-” তোরা নীচে নেমে এলি আর হীরকে নিয়ে আসতে পারলি না? না জানি মেয়েটা রুমে বসে একা একা কি করছে।”

সাবাব দেয়ালে হেলান দিয়ে হাতে একটা আপেল উঠিয়ে কামড় বসালো। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার উঁকি দিলো সিঁড়িতে। মায়ের দিকে ফিরে তাকাতে তাকাতে বলল,

—-” আমরা তো ভাবলাম হীর নীচে আছে।”

—-” এসেছিলো একবার। বেয়াই-বেয়ানের সাথে কথা বলে আবার উপরে উঠে গেছে। বলল মাথা ধরেছে। রুবিকে পাঠিয়েছিলাম ওর কাছে বলল,….”

নাজমা বেগম পুরো কথাটা শেষ করার আগেই আজিম সাহেবের ডাক পড়ল। নাজমা বেগম ট্রে হাতে নিয়ে গলা উঁচিয়ে বলল,

—-” হ্যাঁ যাই।”

ট্রে হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলেন নাজমা বেগম। তার পেছন পেছন গেলো রুবি। মায়ের পুরো কথাটা আর শোনা হলো না সাবাবের। তার চিন্তা হলো হীরকে নিয়ে। হীরের হঠাৎ মাথা ধরল কেন? টেনশনে? তার কাছে একটা মেডিসিন আছে অবশ্য। সেটা একবার দিলেই হীরের মাথা ব্যাথার উপশম হবে। সাবাব অর্ধেক খাওয়া আপেলটা ওখানেই রেখে চলে গেলো নিজের রুমে।

হীর এতক্ষণ নিজের রুমেই বসে ছিলো। ভালো লাগছিলো না বলেই ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আর ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই তার সিক্স সেন্স তাকে জানান দিলো আজ প্রচুর ঝড় উঠবে। রুমের ভেতর থেকে তো বেঝারই উপায় নেই বাইরে এমন দমকা হাওয়া বইছে। বৃষ্টি বরাবরই হীরের দূর্বলতা। বৃষ্টি হবে আর হীর ভিজবেনা সেটাও যেন অকল্পনীয় ব্যাপার। মাঝেমধ্যে তার এমন বদঅভ্যাসের জন্যই সানিয়া তার নাম দিয়েছে বৃষ্টিবিলাসী। নামটা অবশ্য খারাপ না। হীরের সাথে খুব যায়। তাই হীরও এই নামটা সাদরে গ্রহণ করেছিলো। সবার চোখ আড়াল করেই দৌড়ে এলো ছাদে। আহমেদ ভিলার বিশাল ছাদ। ছাদের পুরো জায়গাটা জুড়ে অনায়াসে বড়বড় তিনটা রুম করা যাবে। আর সেই রুমগুলোতে কম করে হলেও পাঁচ জন করে লোক আমারসে থাকতে পারবে। হীর ছাদে পা রাখতেই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা গুলো ঝুপ দিয়ে পড়তে লাগল হীরের গায়ে। সময়টা বৃষ্টির নয়। তবুও মাঝেমধ্যে দেখা মেলে বৃষ্টির। হীর ধন্য বৃষ্টির এই সিদ্ধান্তে। সে মাঝেমধ্যে প্রার্থনা করে কিছুক্ষন বৃষ্টি হবে বলে। সবসময় কবুল না হলেও মাঝেমধ্যে হঠাৎ ঝুপ করে বৃষ্টি নামে। ছাদের চারপাশ আলোয় ঝলমল করছে। আর তার মাঝে বৃষ্টি। ব্যাপারটা চরম উপভোগ্য হীরের কাছে। হীর দৌড়ে গিয়ে ছাদের মাঝখানে দাঁড়ালো। বৃষ্টির দানা গুলো বেশ ঠান্ডা। শিলাবৃষ্টি কি না বোঝার জন্য হীর দু’হাত একসাথে করে সামনে ধরল। অল্পসল্প শিলাবৃষ্টি মনে হচ্ছে। হীর পাত্তা দিলো না। দু’হাত দু’দিকে মেলে দিয়ে সমান তালে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগল সে। বৃষ্টির বড়বড় ফোঁটা তার চোখ,নাক,গাল,ঠোঁট চুইয়ে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তার শরীর। বৃষ্টির এক অসাধারণ গন্ধ থাকে। একমাত্র বৃষ্টিকে যারা মন থেকে ছুঁতে পারে তারাই পায় এই গন্ধ। হীরও পায়। আজও পাচ্ছে সে এই অসাধারণ গন্ধ। নাকে ঠেকতেই বড় করে নিঃশ্বাস টানল হীর। মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে তার।

—-” আমি তোমায় দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা হীর।”

আচমকা কোনো পুরুষালি কন্ঠ কানের কাছে বারি খেতেই চমকে উঠলো হীর। দ্রুত চোখ খুলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল রাবিব দাঁড়িয়ে আছে। অস্বস্তিতে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো হীরের। রাবিব এখানে কি করছে? হীর ঢোক গিলে কপাল কুঁচকে তাকালো। কিছু বলতে নিলেই আরেক পা এগোলো রাবিব। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,

—-” মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। তুমি এতোটা হট কেন জান?”

হীরের চোখে আগুন জ্বলে উঠলো। রাবিব তার সীমা লঙ্ঘন করছে। কতটা বাজে মানসিকতা নিয়ে চলে সে। ঠাটিয়ে এক চড় লাগালে যদি উচিৎ শিক্ষা হয়।

রাবিবের কুনজর হীরের ভিজে থাকা শরীরের খাঁজে। হীর রাবিবের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের অবস্থা বুঝে চটজলদি ওড়না টেনে দিলো। ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে যেতেই রাবিবের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটল। যার দরুন রাবিবের ভেতরের আগুন আরও দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। হীরকে নিজের করে পাওয়ার মনস্কামনা তাকে আরও পোড়াতে লাগল। হীরের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতেই হীর আর এক সেকেন্ডও চুপ থাকল না। মুহুর্তেই ঠাসস করে চড় বসিয়ে রাবিবের কান গরম করে দিতে সময় নিলো না। চড় খেয়ে কিছুটা ঝুঁকে পড়ল রাবিব। আর সঙ্গে সঙ্গে চোখে মুখে ফুটে উঠল ক্ষোভের আগুন। চড়টা মেরে হীরের মনে হলো রাবিবকে চড় মারার চেয়ে ওকে এড়িয়ে এখান থেকে চলে যাওয়াটাই বেটার ছিলো। রাবিব ক্ষপ করে হীরের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠল হীর। তা দেখে রাবিব হীরকে টান মেরে নিজের সাথে চেপে ধরে হীরের হাতটা পেছনের দিকে নিয়ে মুচড়ে ধরল। তাতে করে হীরের হাতের ব্যাথাটা আরও কয়েকগুন বেড়ে গেলো। হীর নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে নিলেই হীরের চুলের মুঠি চেপে ধরল রাবিব। হিংস্র চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-” খুব সখ রাবিবকে চড় মারার তাই না? আজ আমি তোর সব সখ মেটাবো!”

হীরের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। তার সাথে খারাপ কিছু ঘটার আভাস পাচ্ছে হীর। এই মুহুর্তে না চেঁচালে তার বাঁচার আশা শূন্য। রাবিব টান মেরে হীরের ওড়নাটা ছুড়ে মারল উল্টো দিকে। হীর চেঁচানোর জন্য মুখ খুলতেই রাবিব হীরের মুখ চেপে ধরল। একহাতে হীরের মুখ চেপে ধরে অন্যহাতে হীরের দুইহাত চেপে ধরে খারাপ মতলব নিয়ে হীরের দিকে এগোতে লাগল রাবিব। হীরের গলার কাছে মুখ নিতেই আকস্মিক কয়েকহাত ফারাক রেখে ছিটকে পড়ল রাবিব। হীর চমকে উঠে পেছনের দিকে দৌড় দিলো। কিছুদূর গিয়ে দাঁড়াতেই মনে হলো সাবাব দাঁড়িয়ে আছে রাবিবের পেছনে। তার মানে সাবাব রাবিবকে লাথি মেরেছে। আর তাই রাবিব ছিটকে পড়ল ঐ মাথায়। হীর কম্পিত শরীর নিয়ে ঝুঁকে গিয়ে ওড়না উঠিয়ে আগে নিজের গায়ে পেচিয়ে নিলো। পেছন মুড়ে আবারও সাবাবকে দেখতে নিলে মনে হলো সাবাব আগের জায়গায় নেই। রাবিবও তার আগের জায়গায় নেই। এমনকি রাবিব আশেপাশে কোথাও নেই। আচমকা বিকট এক শব্দে কেঁপে উঠল হীর। সাবাবকে খুঁজতে আশেপাশে তাকাতেই দেখল সাবাব ছাদের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে সাবাব রাবিবকে নীচে ফেলে দিয়েছে। দোতলা থেকে পড়ে গেলে বড়জোর রাবিবের হাত পা ভেঙে যাবে কিন্তু হীর রাবিবের অবস্থা দেখার জন্য নীচে তাকাতে কোথাও রাবিবের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না। বুকের ভেতরটা আবারও কেঁপে উঠলো হীরের। সাবাব হঠাৎ করে এলো আর কি কি করে ফেললো! সবটাই যেন তার মাথার উপর থেকে গেলো। সাবাব রাবিবকে দোতলা থেকে ফেলল কি করে?

—-” তোর নাকি মাথা ব্যাথা? তাহলে এই বৃষ্টির মধ্যে ছাদে কি করছিস তুই?”

আচমকা নিজের খুব কাছেই সাবাবের গলা পেয়ে কেঁপে উঠলো হীর। সবটা কেমন ভৌতিক ভৌতিক মনে হচ্ছে তার। সাবাবকি কোনো কারনে ভূত হয়ে গেলো নাকি?

—-” র,,,রাবিব কোথা,,য়য়?”

কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো হীর। সাবাব ভ্রু কুঁচকে হীরের দিকে এগিয়ে আসতেই হীর লেপ্টে গেলো দেয়ালের সাথে। সাবাব ধাম করে বারি বসালো হীরের পাশে। হীর কেঁপে উঠে কুঁকড়ে গেলো আরও কিছুটা। চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে বারবার ঢোক গিলতে লাগল। সাবাব রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেই হীরকে শক্ত করে চেপে ধরল। নিজের দিকে টেনে নিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

—-” রাবিবের সাথে রোমান্স চলছিলো তাই না?”

হীর চোখ মেলে তাকালো সাবাবের দিকে। কান্না পেয়ে বসতেই ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

—-” আ,,মি ভিজতে এসেছিলাম! র,,রাবিব কোথা থেকে এসে পড়েছে আ,,মি… দেখতে পাইনি!”

সাবাবের মন গললনা হীরের কথায়। সে আরও ভয়ংকর রেগে গেলো হীরের উপর! রাবিবের এতোটা দুঃসাহস সে হীরের দিকে হাত বাড়ায়! তার মাথা আরও গরম হয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে যে সে এক্ষনি না এলে কত বড় বিপদ ঘটে যেতে পারতো। হীর সাবাবের রাগ দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সাবাব হীরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজের রাগটা কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করছে। না না এখানে হীরের কোনো ভুল নেই! যা করার রাবিব করেছে। আরে হীরের তো ধারনাও ছিলো না রাবিব এখানে এসে এমন এক কান্ড বাঁধাতে পারে। তবুও! হীরের বোঝা দরকার ছিলো! কিন্তু কি বুঝতো হীর? এটা তো ওর নিজের বাড়ি! তো? নিজের বাড়িতে বিপদ কি এই নতুন হীরের জন্য? নিজেকে একটু সেফ রাখলে কি এমন ঘটে যাবে?

সাবাব দোমনা হয়ে যুদ্ধ করতে লাগল নিজের সাথে। কয়েক সেকেন্ড ব্যাতিরেকে হঠাৎ-ই সাবাবের মনে হলো গার্ডেনের পাশে কেউ হীরের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। কথাটা মনে হতেই মনের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল সাবাবের। হীর এখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সাবাব পেছনে ঘুরে হীরকে হেঁচকা টান মারতেই দেয়াল ফেটে গুলি বেরিয়ে গেলো। আর এদিকে হেঁচকা টান খেয়ে হীর টাল সামলাতে না পেরে সাবাবের উপর এসে পড়ল। হঠাৎ সাবাবও হীরের ভার নিতে পারেনি। তাই হীরকে নিয়েই পিছিয়ে গেলো কয়েক কদম। বিকট শব্দে হীর কেঁপে উঠে জড়িয়ে ধরল সাবাবকে। সাবাবও জড়িয়ে নিলো হীরকে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গার্ডেনের দিকে তাকাতেই দেখল জঙ্গল ভেঙে কেউ বেরিয়ে গিয়েছে। সাবাবের রাগে সারা শরীর কেঁপে উঠলো। শত্রুদের দুঃসাহস দিনকে দিন বাড়ছে বৈ কমছে না। এর একটা বিহিত করতেই হবে!

হীর সাবাবকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই কাঁপতে লাগল। সাবাবের মনটা অস্থির হয়ে উঠল। মেয়েটা একের পর এক ভয় পেয়েই যাচ্ছে। রোজ রোজ এমন হতে থাকলে তো ওর মানসিক সমস্যা হতে সময় লাগবেনা। বেঁচে থেকেও মেয়েটা যে বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিবে।

হীরের হাত-পা বরফ হয়ে উঠলো। সাবাব হীরকে সোজা করে দাঁড় করাতে নিয়ে মনে হলো হীর ঢুলছে। তার শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে হীর। সাবাব বুঝতে পারল হীর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here