কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ পর্ব ১+২

যারা গল্পটা পড়েন নাই তাদের জন্য গল্পটা দেয়া হলো।

#কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : ১+২
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
বাসায় এসে কলিংবেল অঝোরে বাজাচ্ছি কিন্তু কারো কোন প্রকার রেসপন্স পাচ্ছি না। এক প্রকার বিরক্তিকর ভাব জমা হতে লাগল আমার মধ্যে। । কতক্ষণ পড়ে দরজা খুলে গেল।
ভিতরে গিয়ে এক প্রকার বিস্মিত হলাম। ভিতরে গিয়ে দেখলাম একটা ১৬ বা ১৭ বয়সে পিচ্চি মেয়ে ঘুমটা মুরি দিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দাড়িয়ে আছে অসহায়ের মতো ।
– এই কে তুমি? ( আমি)
কোন কথা বলছে না। নিশ্চুপ হয়ে আছে।
– ও হলো তোর আফসানা খালার মেয়ে ( আম্মু)
– কোন আফসানা খালা?
– ওই যে তোর নানুর বাসার পাশে আমার এক প্রতিবেশী চাচাতো বোন ছিল না ।
– ওহহ মনে পড়েছে। তো কি হয়েছে?
– তোর সেই খালার মেয়ে এইটা ( মেয়েটির দিকে ইশারা করে)
– তো এখানে কি করছে?
– ও এখন থেকে এখানেই থাকবে
– যত্তসব আজাইরা কথা।
– কি আজাইরা কথা?
– এই মেয়েকে আজকেই বিদায় কর। নাহলে কিন্তু আমি চলে যাব বাসা থেকে।
কথাটা বলেই চলে আসলাম রুমে। মেজাজটাই গরম হয়ে আছে। আজ একটা খুশির দিনে আপদ হাজির হয়েছে খুশি নষ্ট করার জন্যে।
আজ আমার একটা চাকুরীর ইন্টারভিউ ছিল। আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে ইন্টারভিউতে। কালকে থেকেই আমার জয়েন। অনেক চাকুরীর ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে এতো দিনে। এতোদিনে পড়ালেখা শেষ করে চাকুরীর সন্ধানী করছিলাম। আজ শেষমেস সেই স্বপ্নের চাকুরি ধরা দিয়েছে হাতের নাঙ্গালে।
– এই রেজন কোথায় তুই? ( আম্মু)
– হুমম আমি এখানে ( ঘর থেকে মুখ করে)
– আচ্ছা তুই মেয়েটার সাথে এই ব্যাবহার করলি কেন?
– কেমন ব্যাবহার করলাম?
– মেয়েটা তোর ব্যাবহারে কষ্ট পেয়ে কান্নাকাটি করছে।
– তো কি হয়েছে?
– তুই কি জানিস তোর আফসানা খালা আর নেই।
– মানে?
– মানে তোর খালা কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে ।
– কি বল এসব।
– হুমম। তোর ওই খালা মারা যাওয়ার সাতদিনের মাথায়ই তোর খালু আর একটা বিয়ে করে।
– তারপর?
– তারপর আরকি মেয়েটার কপালে নেমে পড়ল দুঃখের ভান্ডার। মেয়েটাকে তার সৎ মা খুব কষ্ট দিত। ঠিকমত খাবার দাবার দিত না পর্যন্ত। মেয়েটার খুব ইচ্ছা ছিল ভাল ভাবে পড়াশোনা করবে কিন্তু তার সৎ মা চাই তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। তাই আমি ওকে নিয়ে আসলাম যাতে ও ওর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখতে পারে। তাছাড়া বাসার টুকিটাকি কাজে একটু সাহায্যে করল। আর বাসায় আমার সাথে গল্প করার জন্যে হলেও বাসায় কারও দরকার তাই মেয়েটিকে নিয়ে আসলাম বাসায়।
– তাই বলে এভাবে……………………
– তোর ইন্টারভিউয়ের কি খবর ( কথা শেষ না করতে দিয়ে)
– তোমার তো মনেই আমি আজ ইন্টারভিউ দিতে গেছিলাম ( অভিমান সুর)
– মনে থাকলেই বা কি তোর তো আর চাকুরী হয়নি। আজ দিয়ে ২৭ টা ইন্টারভিউ দিয়েছিস কিন্তু সব গুলো তেই রিজেক্টেড।
– আম্মু আমার চাকুরী হয়ে গিয়েছে।
– দেখ বাবা চাকুরী নিয়ে মিথ্যা বলতে হয় না
– আম্মু আমার সত্যিই চাকুরী হয়ে গিয়েছে।
– কি বলিস বাবা চাকুরী হয়ে গিয়েছে ( উজ্জ্বল জরো হয়েছে মুখে)
– হা আম্মু।
– যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আয় খাবার দিচ্ছি আর একটা কথা মেয়েটি তোর কথায় কষ্ট পেয়ে চলে যেতে চাচ্ছে তুই প্লিজ মেয়েটিকে আটকা।
– কিভাবে আটকাবো?
– মেয়েটা একটু অভিমানী তুই গিয়ে স্যরি বলে আয়।
– পারব না।
– তুই মেয়েটিকে স্যরি না বললে আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না।
– আম্মু এটা কিন্তু অবিচার হচ্ছে তোমার ছেলের উপর।
– অবিচার হলে হবে কিন্তু তোকে স্যরি বলতে হবে।
– ওকে স্যরি বলব তোমাকে আম্মু ডাকার জন্যে হলেও ।
– এখন গিয়েই স্যরি বলে আয়।
– ওকে।
– কোন রুমে আছে মেয়েটি?
– গেস্টরুমে।
।।
।।
।।
তারপর আমি হাঁটতে শুরু করলাম গেস্টরুমের দিকে। গেস্টরুমে সামনে গিয়ে কারো গুণ গুণ করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তো বুঝে গেলাম কে কান্না করছে।
আমি দরজার সামনে গিয়ে
– আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
– কোন প্রকার উত্তর আসল না ভিতর থেকে।
– কি হলো আসব।
– যার বাড়ি তাঁরই ঘর তাইলে ভেতরে আসতে অনুমতি লাগবে কেন?
মেয়েটির কথা শুনে বুঝে গেলাম সত্যিই মেয়েটি অভিমানী।
ভিতরে গিয়ে মেয়েটির পাশে বসলাম। এখনও মেয়েটি ঘোমটা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে।
– এই তুমি কি আমার কথায় রাগ করেছ?
– আমার কি রাগ করার অধিকার আছে। আমি তো কাজের মেয়ে।
কথাটা শুনে মুড খারাপ হয়ে গেল।
– আচ্ছা তুমি এই কথা গুলো না বললেও পারতে।
– যেটা সত্যি সেটাতে বলতেই ব হবে। আমরা গরীব জন্যে আজ এই সমাজে দাম পাই না।
– আচ্ছা স্যরি।
– আপনি কেন শুধু শুধু স্যরি বলছেন।
– এসব বাদ দাও এখন বল তুমি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়ছ?
– ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু এখনও রেজাল্ট হয়নি।
– কেমন হয়েছে পরীক্ষা গুলো ?
– পরীক্ষার মধ্যে আম্মু মারা যায়। তারপরও মোটামুটি ভালই হয়েছে। ( হালকা কান্নাজড়িত কন্ঠে)
– তোমার এসএসসি রেজাল্ট কেমন হয়েছিল?
– গোল্ডেন প্লাস ।
– ভাল। তা তুমার স্বপ্ন কি?
– সব স্বপ্ন গুলো এখন ভেঙে গেছে।
– এখন থেকে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু কর। আমার পরিবার তোমার পাশে আছে।
– নিশ্চুপ হয়ে আছে।
– আচ্ছা তোমার নাম তো বললে না
– আমার নাম ডানা।
– আচ্ছা শুনো তোমার রেজাল্ট বের হবার পর তোমাকে আমাদের ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিব।
– ওকে ভাইয়া।
– এখন খেতে আসো।
– হুমম।
।।
খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার সকল পছন্দের খাবার গুলো রান্না করা হয়েছে।।
-খাবার মুখে দিয়ে আম্মু বলে খুব জোরে চিল্লানী দিলাম।

চলবে

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : ২
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
– আচ্ছা শুনো তোমার রেজাল্ট বের হবার পর তোমাকে আমাদের ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিব।
– ওকে ভাইয়া।
– এখন খেতে আসো।
– হুমম।
।।
খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার সকল পছন্দের খাবার গুলো রান্না করা হয়েছে।।
-খাবার মুখে দিয়ে আম্মু বলে খুব জোরে চিল্লানী দিলাম।
– কি হয়েছে এতো জোরে গরুর মত চিল্লায় তেছিস কেন ? ( আম্মু)
– খাবার হয়তো ওনার পছন্দ হয়নি ( ডানা)
– আজ রান্না করছে কে ? ( উচ্চ স্বরে)
– কেন রান্না ভাল হয়নি বুঝি। ( নিচু গলায়)
– আগে বল আজ রান্না করল কে?
– আপনি যদি রাগ না করেন তাইলে বলব।
– হুমম রাগ করব না।
– আসলে আমি রান্না করেছি ।
কথাটা শুনে একটু আশ্চর্য্য হলাম।
– এটা কি ধরনের রান্না?
– আসলে ভাইয়া আমি বুঝতে পারিনি রান্নাটা এতো বাজে হবে।
– তোমাকে রান্না করতে কে বলছে ( ধমকের সুরে)
– আসলে ভাইয়া…………………
– এতো ভাল রান্না কেউ করে নাকি। আজকে তো আমার পেটের বারোটা বাজবে। ( কথা আটকিয়ে)

আমার কথাটা শুনে যেন ডানা প্রাণ ফিরে পেল। মনে হচ্ছিল যেন দম আটকিয়ে যাবে এই অবস্থা।
– ভাইয়া রান্না কি আসলেই ভাল হয়েছে?
– হুমম অনেক ।
।।
।।
।।
তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু রেস্ট নেওয়ার জন্যে ঘুমাতে চলে গেলাম।
মনে মনে ডানার কথা গুলো ভাবছি। আজ আমি ডানার সাথে এই ব্যাবহার টা না করলেও পারতাম। মেয়েটি কত সহজ সরল বাসার মধ্যেও ঘোমটা দিয়ে থাকে।
কি ভাল রান্নার হাত। ভাবনায় ছেদ পড়ে গেল সাদিয়ার ডাকে।
(সাদিয়া আমার ছোট বোন)
– এই ভাইয়া
– কি হয়েছে রে ছোটু
– ভাইয়া তোর নাকি চাকুরী হয়ে গিয়েছে?
– হুমম। কে বলল?
– আম্মু বলল।
– তাইলে পার্টি হচ্ছে কবে?
– কিসের পার্টি?
– তোর জব হয়ে গিয়েছে সেই জন্যে।
– প্রথম মাসের স্যালারী দিয়ে পার্টি হবে ।
– আচ্ছা ভাইয়া তুই এখন ঘুমিয়ে পড় আমার একটু কাজ আছে
– ওকে।
– সারাদিনের ক্লান্তি শরীর নিয়ে চলে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।
।।
ঘুম ভেঙে যাওয়ার ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি বিকেল হয়ে গিয়েছে । আমার আবার একটা অভ্যাস ঘুম থেকে উঠেই চা খেতে হবে। আম্মুকে ডাকতে যাব তার আগেই দেখলাম ডানা চা হাতে দাড়িয়ে আছে। ।
– ডানা তুমি
– ভাইয়া আম্মু বলল আপনি নাকি ঘুম থেকে উঠে আগে চা খুঁজতে বের হন।
– হুমম। ধন্যবাদ
– ধন্যবাদ নেওয়ার অধিকার আমার নেই।
– তুমি যদি আর একবার এসব বাজে কথা বল তাইলে কিন্তু…………….
– তুমি আজ থেকে মনে করবে এটা তোমার বাড়ি।
– হুমম।
– আচ্ছা ডানা তুমি রুমের মধ্যে ঘোমটা দিয়ে রাখ কেন?
– আসলে ভাইয়া চেহারা খারাপ তো তাই নিজেকে ঘোমটা দিয়ে আড়াল করে রাখি।
– আজকাল চেহারা দিয়ে মানুষ বিচার হয় না। একটা সুন্দর মন থাকলেই একটা মানুষ পরিপূর্ণ।
– আজকালকার দিনে এই কথাটা মানায় না। সবাই এখন সুন্দর চেহারা খোঁজে।
– সবার জন্যে কথাটা প্রযোজ্য নয়।
– সেটা অব্যশই ঠিক কথা ।
– ঘোমটা টা কি নামানো যাবে? ।
( মেয়েটিকে দেখার অদম্য ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে নিজের মধ্যে। যে মেয়েটি এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে তাকে দেখার জন্যে মনকে স্থির করতে পারলাম না )
– ভাইয়া আসলে কেমন যেন ফিল করছি আমি।
– জার্স্ট ঘোমটা।
তার পর মেয়েটি আস্তে আস্তে নিজের ঘোমটা টি সরিয়ে ফেলে।
ডানার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। চোখ যেন এড়াতে পারছি না মেয়েটির চেহারা থেকে। মনে হচ্ছে যেন সামনে একটা ডানা কাটা পরী দাড়িয়ে আছে। মানুষ যে এতো সুন্দর হয় সেটা ডানাকে না দেখলে আমার বিশ্বাস হতো না।
চোখে মুখে কোন প্রকার সাজের ছাপ নেই। একটা মেয়ে না সেজেও যে সুন্দর হয় তার বড় উদাহরণ ডানা।
– ভাইয়া এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?
– মানুষ না পরী সামনে দাড়িয়ে আছি সেটা বুঝার চেষ্টা করছি।
– ভাইয়া কি যে বলেন না!!!!! ( লজ্জা মাখা মুখে)
– আচ্ছা ডানা।
– হুমম।
– আমাকে একটা চিমটি দাও তো আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি সেটা শিওর হই। ( হাতটা এগিয়ে দিয়ে)
হাতের উপর বসিয়ে দিল একটা খুব বড় আকারের চিমটি।
– আহহহহহহহহহহহহহহ।
– কি হয়েছে ভাইয়া ( মৃদু গলায় হেসে)
– তুমি চিমটি কাটলে কেন?
– আপনিই তো বললেন চিমটি কাটতে।
– তাই বলে এতো জোরে চিমটি কেউ দেয় নাকি ।
– স্যরি ভাইয়া।
– হুমম।
– এই চিমটি দেওয়ার অপরাধে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে ।
– কি শাস্তি ভাইয়া? ( নিচু গলায়)
– এটা একটি কঠোর শাস্তি ।
– কি শাস্তি ( কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
– এই শাস্তি কিন্তু তোমাকে মেনে নিতেই হবে।
– হুমম।
– এই শাস্তিতে কোন প্রকার আপিল করতে পারবে না।
– ওকে।
ডানা তো ভয়ে কাঁপতে থাকে। না জানি কি শাস্তি দেয়। ডানার মনে ভয় হতে থাকে যদি এই বাসা থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেয়। তাইলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবে।
আশ্রয় দেওয়ার মতো তো কেউ নেই এই ভুবনে।
– তোমার শাস্তি হলো………………….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here