কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ পর্ব ৩১+৩২

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : 31+32
#writer: DaRun NayEm (Rejon)

– আপনি চান বা না চান আপনি সুস্থ হলেই আপনাকে জান্নাতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
– বাবা এভাবে কথা বলছো কেন?
– তো কিভাবে আপনার সাথে কথা বলব?
– আপনি আপনি করে বলছো কেন?
– যার কাছে আমার কথার কোন দাম নেই সে শিওর আমার অপরিচিত কেউ না তাই আপনি বলছি।
– ওকে বাবা তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে।
– এখন প্লিজ একটু ভাল ভাবে কথা বলো ?
– মানে তুমি বিয়েতে রাজি?
– জানি না তবে তোমাদের খুশির জন্যে আমি সব কিছু করতে পারবো।
– ওকে আমি সব আয়োজন করছি বিয়ের।
– হুমম।

এভাবেই প্রায় কেটে গেল ১ মাস। এখন প্রায় পুরোপুরি অসুস্থতা থেকে বেড়িয়ে এসেছে রেজন। এই একটি মাস জান্নাত সব সময় রেজনের পাশে থেকে সেবা যত্ন করছে।
জান্নাত রেজন কে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যেতে। যদিও ইচ্ছার বাইরে ঘোরাঘুরি করেছে রেজন। প্রায় প্রতিদিন জান্নাত রেজন কে নিয়ে নদীর দাঁড়ে যেতো। জান্নাত জানতো একমাত্র নদীতে গেলে রেজনের ভাললাগা বিরাজ করবে। সপ্তাহের প্রায় ৬ দিনই জান্নাত রেজনকে বাইরের মনোরম দৃশ্য দেখাতে নিয়ে যেতো। আসলে জান্নাত চাইতো বাহিরে ঘুরাঘুরি করলে রেজনের এক পর্যায়ে ডানাকে ভুলতে থাকবে আর আমাকে আপন করে নিবে। জান্নাত নিজের অফিস রেখে প্রায় দিন রাতের সবটা সময়ই রেজনকে দিতো যাতে তাঁর প্রতি রেজন আসক্ত হয়। জান্নাত বাবা আবার অফিসের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

– রেজন তুমি তো এখন প্রায় সুস্থ তাই না?
– হুমম বাবা।
– আমরা চাচ্ছি কি তোমার আর জান্নাতের বিয়ে সামনের ২১ তারিখে হবে।
– ২১ তারিখ?
– হুমম ২১ তারিখ।
২১ তারিখের কথা কানে পৌঁছে রেজন ভাবনার জগতে চলে যায়। এই ২১ তারিখে ফাস্ট টাইম রেজন ডানাকে তাঁদের বাড়িতে দেখেছিল, এবং ফাস্ট সেদিনই কথা হয়। সেই ২১ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে ডানাকে নিয়ে সব যেন চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
– এই রেজন ( গাঁয়ে সামান্য হাত দিয়ে)
– হুমম।
– বাবা এটা কি মায়ের ও চাওয়া জান্নাতের সাথে আমার বিয়ে হোক ?
– তোমার মা বাদে সবারই চাওয়া।
– আমি অনেক আগেই তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিতাম কিন্তুক জান্নাতের বাবা হঠাৎই একদিন ফোন দিয়ে বললেন যেন তাঁদের দুজন দুজনকে কিছুটা সময় দেওয়া হোক ভাল ভাবে চেনার।
– বাবা ২১ তারিখ বাদে বিয়ের ডেট ফিক্সড্ করলে ভালো হয়তো না?
– ২১ তারিখ প্রবলেম কি?
– বাবা প্রবলেম নেই তবে আমি ২১ তারিখে বিয়ে করতে পারবো না।
– না বিয়ে ২১ তারিখেই করতে হবে।
– ওকে তাইলে নানাভাইকে বিয়ে করাবো ২১ তারিখে কেমন । নানাভাই প্রায় প্রায়ই আমার কাছে বলে সে নাকি আবার নতুন একটা বিয়ে করবে তাও আবার ইয়াং মেয়ে তাই বলছি কি আমার নাম আর নানা ভাইয়ের নাম তো প্রায়ই একই তাই আমি চাচ্ছি সেদিন নানা ভাইয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হোক। আর আমি নাই ২১ তারিখ বাদে যে কোনদিন বিয়ে করে নিবো।
– মজা করা হচ্ছে আমার সাথে।
– না বাবা মজা করব কেন তোমার সাথে।
– তাইলে কি আমার সাথে সিরিয়াসলি বললা বিষয়টা।
– হুমম নানাভাইয়ের খুব ইচ্ছা।
– কালকে থেকেই আমরা বিয়ের কেনাকাটা শুরু করব।
– তাইলে কি নানাভাইকে ফোন দিবো? ফোন দিয়ে বলি যে নানা ভাই তোমার এতো দিনের ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে তোমার জন্যে আব্বু জান্নাতের হুর চয়েজ করেছে তুমি প্লিজ যত তাড়াতাড়ি পরো চলে আসো। আর কোন কোন বলতে পারে না রেজন।
– ক্রন্দন গলায় কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে যায় রেজন।

মধ্যরাত।
– জান্নাত ফোন করে রেজনকে। প্রথম বার ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। দ্বিতীয় বার আবার ফোন আসে তবে এবার রেজন ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রিসিভ করল। রিসিভ করার পরে।
– আসসালামুয়ালাইকুম। (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
– ওয়ালাইকুমুস সালাম।
হঠাৎই দুজনই নিরব। কেউ কোন কথা বলছে না। নিরবতা ভেঙ্গে জান্নাত শুরু করল।
– জান!!!!!
– হুমম।
– কি করছো?
– বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি।
– মনে পড়ছিল না আমার কথা এতো টাইম।
– না।
– আমরা কালকে কোথায় কোথায় যাচ্ছি? ( মন খারাপ করে)
– জানিনা।
– জানিনা মানে কি?
– জানিনা মানে জানিনা। ( একটু উচ্চ স্বরে)
– এনগেজমেন্ট রিং কালকে যেন চয়েজ করে আসি তোমার আব্বু ফোন দিয়ে বলল মাত্র।
– ওকে ভালো আব্বু যেহেতু বলেছে তাহলে কালকে গিয়ে রিং চয়েজ করে আসবে।
– কিন্তুক আমি চাচ্ছি তোমাকে সাথে নিয়ে আমি রিং টা চয়েজ করতে চাই।
– আমাকে নিয়ে কেন রিং কিনতে হবে?
– কারণ এনগেজমেন্ট তো আমাদের তাই আমাদের ই তো চয়েজ করতে হবে তাই না।
– তোমার যেটা ইচ্ছা তুমি নিয়ে নিবা।
– আচ্ছা একটি কথা বলো তো কি ধরনের রিং নিবো গোল্ড না ডায়মণ্ডের ?
– জানিনা।
– আচ্ছা আজকে যদি এই কথাটা আমি না বলে ডানা বলতো যে কি ধরনের রিং নিবে গোল্ড না ডায়মণ্ডের তখন কি বলতে।
– তখন ডানাকে গোল্ডের উপরে ডায়মণ্ডের রিং নিতে বলতাম।
– ওকে তাহলে আমাদের এনগেজমেন্টটের রিং হবে গোল্ডের উপরে ডায়মণ্ড।
– যেমনটা ইচ্ছা।
– আর একটি বিষয় কালকে তোমাকে আমি রিসিভ করে নিয়ে যাবো রেডি থাকবে।
– যদি না যায়?
– তোমার আব্বুকে ফোন দিবো।
– প্লিজ এসব বিষয়গুলো বাবা জড়িয়ে কষ্ট দিও না।আমি যেতে পারব না।
– তাইলে কালকে সকালে রেডি থাকবে।
– হুমম।
– আর এখন ঘুমিয়ে যাও।
– হুমম।
– ওকে বাই। টেক কেয়ার।

– ডানার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছিস হঠাৎই?
– পিছন ফিরে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দন করতে থাকে।
– খুব মনে পড়ছে আম্মু। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে ডানাকে দেখতে না পাওয়ার।
– জান্নাতকে বিয়ে করে হ্যাপি হতে পারবি?
– না মা কোন দিনও না।
– আমার একটা বিষয় খটকা দূর হচ্ছে না ডানা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক দিন ধরে। আমি সেই খটকা থেকে বের হতে পারছি না।
– কি আম্মু?
– ডানা যেদিন হারিয়ে যায় সেদিন আমরা লাঞ্চ করতে না চাইলেও জান্নাতের বাবা জোড় করে লাঞ্চে পাঠায়।
– এই কথাটি তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?
– বিষয়টির যথার্থ কোন প্রমাণ নেই?
– প্রমাণ খুঁজতে চেষ্টা করতাম।
– কিন্তুক আম্মু এই মাঝে একটি বিষয় রয়েগেছে।
– কি?
– যার মেয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে কিভাবে এমনটা করতে পারে।
– এমনটাও তো হতে পারে জান্নাত সেদিন অসুস্থ ছিল না। সেটা জাস্ট নাটক ছিলো।

চলবে

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : 32
#writer: DaRun NayEm (Rejon)

– ডানা যেদিন হারিয়ে যায় সেদিন আমরা লাঞ্চ করতে না চাইলেও জান্নাতের বাবা জোড় করে লাঞ্চে পাঠায়।
– এই কথাটি তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?
– বিষয়টির যথার্থ কোন প্রমাণ নেই?
– প্রমাণ খুঁজতে চেষ্টা করতাম।
– কিন্তুক আম্মু এই মাঝে একটি বিষয় রয়েগেছে।
– কি?
– যার মেয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সে কিভাবে এমনটা করতে পারে।
– এমনটাও তো হতে পারে জান্নাত সেদিন অসুস্থ ছিল না। সেটা জাস্ট নাটক ছিলো।
– হতে পারে কিন্তুক বিষয়টা শিওর না। জাস্ট সন্দেহ প্রবন হয়ে তো আর কিছু করা সম্ভব না।
– ডানা যতদিন না আমাদের মাঝে ফিরে আসে ততদিন কিছুই বলা বা কিছুই করা সম্ভব না।
– হুমম সেটাই। তবে আমরা যদি গোয়েন্দা বাহিনীর মতো নিজেরা তদন্ত শুরু কতি তাহলে অবশ্যই মূল বিষয়টা সামনে এসে যাবে।
– রেজন আমরা এখন একটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করতে পারি।
– কোন বিষয়টা আম্মু?
– যে ডাক্তার যেদিন জান্নাতের অপারেশন থিয়েটারে ছিলো তাঁকে যদি আমরা হাতে নিয়ে আসতে পারি তাহলে সব ক্লিয়ার হবে।
– কিন্তুক দেখো না এই মাঝে আবার বাবা কি সব শুরু করেছে।
– তুই তো তোর বাবাকে ভালো করে চিনিস বা জানিস, সে একবার যে সিদ্ধান্ত নিবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে নিয়ে আসা খুব কষ্টসাধ্য।
– তাইলে এখন?
– যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মূল বিষয়টা সামনে নিয়ে আসা।
– হুমম। যথাসম্ভব চেষ্টা করে আমাদের গেম টার শেষ দেখা লাগবে।
– রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যাও।
– ওকে আম্মু।
,
জান্নাত বার বার ফোন দিচ্ছে রেজনকে। কিন্তুক রেজন এখনও গভীর তন্দ্রায়। জান্নাত শেষমেশ বাসায় কলিংবেল চাপতে বাধ্য হয়।
রেজনের আম্মু এসে দরজা খুঁলে দেয়।
– জান্নাত তুমি?
– হুমম আমি আম্মু।
– হঠাৎই?
– বৌমাকে এখানে দাঁড়িয়ে রাখবেন?
– স্যরি ভিতরে আসো।
– ধন্যবাদ আম্মু।
ভিতরে গিয়ে সোফায় বসে।
– আম্মু আসলে আব্বু রাতে ফোন দিয়ে বলল যেন রেজনকে সাথে নিয়ে এনগেজমেন্ট রিং চয়েজ করে আসি।
– ওহহ।
– তাই ভাবলাম এখন রেজনকে সাথে নিয়ে রিংটা চয়েজ করে আসি।
– দেখো রেজন ভিতরেই আছে।

জান্নাত ভিতরে গিয়ে।
– এই রেজন এখনও উঠো নাই ১২ টা বাজে তো ।
– এই জান পাখি!!! ”
– হুমম।
– চলো।
– আমি যাবো না।
– কেন?
– এমনিই।
– আব্বুকে ফোন দিবো।
– আব্বুকে বলা লাগবে না। যাচ্ছি।

পাশাপাশি বসে আছি দুজন। জান্নাত ড্রাইভিং সিটে আর আমি পাশের সিটে।
– আজকে রিং কেনা শেষে কিছু শপিং করা লাগবে।
– শপিং করবে সমস্যা কি?
– তুমি থাকতেছ?
– তুমি শপিং করবে আমি গিয়ে কি করব?
– আমি তো আমার জন্যে শপিং করব না।
– তাইলে?
– তোমার জন্যে আর সাদিয়ার জন্যে।
– স্যরি লাগবে না।
– যা বলছি সেটাই ফাইনাল।
কথা বলতে বলতে হঠাৎই রেজনের ফোনে একটা অপরিচিতা নাম্বার থেকে ফোন আসে। রেজন ফোনটা রিসিভ করার পরে।
– আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?
– কোন সাড়াশব্দ নেই।
– কে বলছেন?
– এবারও সাড়াশব্দ নেই।
– ফোন দিয়ে কথা বলছেন না কেন। কে আপনি?
হঠাৎই ফোনটা কেটে গেল।
– কে ফোন দিয়েছিল? ( জান্নাত)
– জানিনা ফোন দিয়ে কথা বলছে না।

,
কিছুক্ষণ পরে আবার সেই নাম্বার থেকে ফোন আসে।
আবার রেজন সালাম দিয়ে বলল।
– কে আপনি কথা বলছেন না কেন?
– এবারও ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই।
– কথা না বললে কিন্তুক নাম্বারটা ব্লগ করে রাখব।
– কথাটি শেষ করতে না করতেই অন্যপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল।
– কে আপনি কান্নাকাটি করছেন কেন?
– এবার যেন কান্নার আওয়াজ টা আরও বৃদ্ধি পেলো।
– কি হচ্ছে এসব? ফোন দিয়ে কথা বলছেন না ।
আবার ফোনটা কেটে গেল ।
রেজন এবার কল ব্যাক করল। কিন্তুক ফোনটা সুইচ অফ দেখাচ্ছে।

– কে ফোন দিচ্ছে বার বার?
– জানিনা তবে জাস্ট কান্নাকাটি করছে।
– ফোন দাও তো আবার।
– দিয়েছিলাম সুইচ অফ দেখাচ্ছে।
রিং চয়েজ করা, শপিং করা আরও যাবতীয় কাজ ছেড়ে বাসায় ফিরছে দুজন।

রাত ১২ টা।
আবার ফোন আসল সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে।
– কে বলছেন প্লিজ বলেন?
– আবারও কান্নার আওয়াজ।
– প্লিজ বলবেন কে?
– জাস্ট কান্না করেই চলছে।
আবার হঠাৎই ফোন কেটে গেল
রেজন আবার ফোন ব্যাক করল কিন্তুক সেই আগের ইতিহাস ই সুইচ অফ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here