কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ পর্ব ২৯+৩০

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : 29+30
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
– কখন বিয়ে করছি আমরা?
– এখনই চলো যায়।
( কথা বলেই যেই মাত্র হাত ধরেছে ডানার তখনই ফরজের আযান রেজনের কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় রেজনের।)

রেজন ডানাকে খুঁজতে খুঁজতে চোখ লেগে আসে । তারপর গাড়ি সাইট করে রেখে গাড়ির সিটে সামান্য হেলান দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে রেজন।
রেজন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পড়ে আবার কান্নায় জড়িয়ে পড়ে ।
চোখ মুছতে মুছতে রেজন গাড়ি থেকে নেমে মসজিদের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ার জন্যে পা বাঁড়ায়। ।

রাত ১০ টা।
সারাটা দিন রেজনের সকল রিলেটিভ মিলেও সারা শহরটা করে খুঁজে কিন্তুক ডানাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। রেজন গতকাল সকালে শুধু কিছু খেয়েছে আর এখন রাত পর্যন্ত বিন্দুমাত্র পানি স্পর্শ করেনি। রেজনের বাবা মা জোড়াজুড়ি করেও রেজনকে কিছুই খাওয়াতে পারেনি। রেজনের হাতে পায়ে বিন্দুমাত্র বল নেই। নিজের শক্তির উঠে দাঁড়ানোর শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। চোখের নিচে কান্না করতে করতে কালো হয়ে গিয়েছে। রেজন যেন ইচ্ছা করলেও আর কান্না করতে পারছে না কারণ সকল কান্না যেন হারিয়ে ফেলেছে। চোখে আর জল নেই রেজনের সব জল কান্না করতে করতে হারিয়ে গিয়েছে। চোখ মুখে চিন্তার রেখা বিরাজ করছে গতকাল সন্ধ্যা থেকে । রেজন বার বার ছুটে গেছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে কিন্তুক দেখে মেলেনি ডানার সাথে। রেজনের হয়তো বিশ্বাস ছিলো ডানা পথ ভুলে হারিয়ে গিয়েছিল যেখান থেকে আবার হয়তো হাসপাতালে ফিরে আসবে। রেজনের রিলেটিভ সবাই বসে আছে।
– রেজন কি করব এখন? ( রেজনের বাবা)
– জানিনা বাবা। ( চিকুন গলায় নীচু স্বরে)
– তাইলে কি পুলিশকে ইনফম করবো?
– যেমনটা ইচ্ছা।
– ওকে তাহলে তুমি খেয়ে রেস্ট নাও আমরা বিষয়টা দেখছি।
– আমিও সাথে থাকবো তোমাদের।
– না তুমি বরং খাওয়া দাওয়া রেস্ট নাও এটাই ভাল হবে।
– বাবা আমি আগেও বলেছি এখন ও বলছি আমি ডানাকে না পাওয়া পর্যন্ত পানি পর্যন্ত স্পর্শ করব না
– হ্যাঁ ভালো এভাবেই না খেয়ে খেয়ে মারা যাও কেমন? ( রাগের ভঙ্গিতে)
– দরকার পড়লে তাই হবে।

রেজন ওই অসুস্থ শরীর নিয়ে থানায় চলে যায় তাঁর রিলেটিভ দের সাথে।
থানায় একটি ডায়েরি করে বাসায় ব্যাক করে সবাই।
রেজনের বাবা তাঁর বন্ধুকে ফোন দিয়ে পেপারে বিষয়টা তুলে ধরতে বলে। ।

এভাবেই কেটে যায় কিছুদিন। বিন্দুমাত্র খোঁজ পাওয়া যায়নি ডানার। জান্নাত এখন পুরোপুরি সুস্থ অন্যদিকে ডানার শোকে কাতর হয়ে রেজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পুলিশ, পেপার পত্রিকা, মিডিয়া কেউ কোন রকম খোঁজ পায়নি। মিডিয়ার বক্তব্য এটা কোন কিডন্যাপ করে মুক্তিপন আদায়ের ব্যাপার না এটা হচ্ছে পরিকল্পিত হত্যা।
কিন্তুক রেজনের মনে দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর ডানার কিছুই হয়নি। একদিন সে ফিরে আসবে তাঁর স্বামীর অধিকার আদায় করতে।

– রেজন!!
– হুমম বাবা।
– ডানার তো কোন খোঁজখবর পাওয়া গেলো না ।
– হুমম। ( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
– অনেক দিন তো হয়ে গেল, আমার মনে হয় মিডিয়ার বক্তব্য গুলো মিথ্যা নয় ।
– বাবা তুমি বিশ্বাস করতে পারলেও অন্তত আমি বিশ্বাস করতে পারছি না মিডিয়ার বক্তব্য।
– দেখো রেজন আজকে অনেকদিন হয়ে গেল ডানার কোন খোঁজখবর পাওয়া গেলো না। একজনের জন্যে তো আর জীবন চলবে না। এখন নিজের মতো করে জীবন সাজাতে হবে।
– আর জান্নাত তোমার সেই চির অন্ধকার জীবন থেকে বের করে আনতে চায়।
– বাবা ডানা তো আজকে অনেক দিন নিখোঁজ তাই না?
– হুমম অনেক দিন।
– বাবা তুমি কি কখনও এই কয়দিনে আমার মুখ থেকে ডানা বাদে অন্য নাম উচ্চারণ হয়েছে সেটা শুনেছো?
– না শুনিনি।
– তাইলে কিভাবে আমি অন্য একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করব। যেখানে আমি হাজার চাইলেও ডানাকে ভুলতে পারব না সেখানে অন্য মেয়ে এটা কোন ভাবেই সম্ভব না।
– যদি ডানা কোন দিন ফিরে না আসে তাহলে কি হবে তখন?
– ইচ্ছা আছে এভাবে ডানার স্মৃতি নিয়ে কাটিয়ে দিবো সারাজীবন।
– পাগলামো কথা গুলো বাদ দাও!!!
– বাবা আমি বিষয়টা সিরিয়াস।
– ওকে ভাল তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই হবে।
– থ্যাংকস বাবা। ( কথাটা বলেই রেজন তাঁর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে)
– টেনশন করবা না দেখবে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।।

– জান্নাত এটাই তোমার মোক্ষম উপায় রেজনের থেকে ভালবাসা পাওয়ার ( জান্নাতের বাবা)
– কিভাবে বাবা?
– রেজন এখন অসুস্থ, ডানা নেই রেজনের পাশে, তুমি তোমার ভালবাসা দিয়ে যদি রেজনকে সুস্থ করতে পারো তাহলে দেখা যাবে রেজন একসময় ডানাকে ভুলে তোমাকে আপন করে নিবে।
– এখন থেকে সবসময় তোমার রেজনের সাথে কাটাতে হবে। যার সাথে যত সময় কাটানো যায় তাঁর প্রতি মায়া ও জন্মায় ততটা।
– তাহলে বাবা এখন আমার করনীয় হলো আমার ভালবাসা দিয়ে রেজনের মন থেকে ডানার নামটা মুছে দিতে হবে তাই তো।।
– হুমম এখন তোমার এটাই করনীয়।
– ওকে বাবা তাহলে কালকে থেকে মিশন শুরু।
– মিশন তো অনেক দিন ই হলো শুরু হয়েছে ।
– স্যরি বাবা।

রাত ১২।
সারাদিন যেমন তেমন ভালোই যায় রেজনের কিন্তুক রাতের আধাঁর নেমে আসলেই ডানার স্মৃতি গুলো কুড়ে কুড়ে খায় রেজনকে।
সম্পুর্ণ স্মৃতি ভর করে রেজনের মাথার উপরে। রেজনের এই বেইমান পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ইচ্ছা না থাকলেও তাঁর মায়ের জন্যে জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছে।

– রেজন।
– হুমম আম্মু ( পিছন ফিরে। রেজন জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাহিরের কালো অন্ধকার রাত দেখছিল)
– খেয়ে নে। ( হাতে খাবার প্লেট নিয়ে)
– ইচ্ছা নেই আম্মু খেতে!!!
– আমি খাওয়ে দেয়?
– ভাল লাগছে না তো খেতে।
– আমার জন্যে হলেও খা।
– তোমার জন্যেই তো বেঁচে আছি।
– এই সব কথা আর বললে কিন্তুক আমাকে আর খুঁজে পাবি না বলে দিলাম।
– স্যরি আম্মু।
– হা কর।
– হা।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেজনকে ঘুমিয়ে রেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে আসে রেজনের আম্মু।
,
সকালে
অবিরাম অন্তহীন একই ভাবে কলিংবেল অঝোরে বেজে ই যাচ্ছে। রেজনের আম্মু গিয়ে দরজা আনলক করে দেয়।
– জান্নাত তুমি হঠাৎই এতো সকালে? ( অবাক হয়ে)

চলবে

কাজের মেয়ে যখন আদরের বউ
পর্ব : 30
#writer: DaRun NayEm (Rejon)
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেজনকে ঘুমিয়ে রেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে আসে রেজনের আম্মু।
,
সকালে
অবিরাম অন্তহীন একই ভাবে কলিংবেল অঝোরে বেজে ই যাচ্ছে। রেজনের আম্মু গিয়ে দরজা আনলক করে দেয়।
– জান্নাত তুমি হঠাৎই এতো সকালে? ( অবাক হয়ে)
– কেন আম্মু এতো আসলে কি সমস্যা? শ্বশুর বাড়িতে যখন মন চাইবে তখন আসবো
– না আসলে তুমি তো সাধারণত আমাদের বাড়িতে আসো না তাই বললাম আর কি।
– এখন থেকে নিয়মিত আসবো আম্মু।
– হুমম।
– রেজন কোথায় আম্মু?
– ওর রুমে শুয়ে আছে।
– কোন দিকে রুমটা আম্মু?
– নাক বরাবর চলে যাও৷
– ওকে আম্মু।

জান্নাত রেজনের রুমের ভিতরে প্রথমেই প্রবেশ করে অগোছালো রুমটাকে গোছাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষন পড়ে জান্নাতের চোখ আটকিয়ে গেল দেয়ালের একটি জায়গায়। দোয়ালের একটা পৃষ্ঠ সম্পুর্ণ টাই সাজিয়ে রাখা আছে ডানার ছবি দিয়ে। জান্নাতের প্রচন্ডভাবেই রাগ উঠে যায় মাথায়। সবগুলো ছবি নিজের মতো করে ছিঁড়ে ফেলে। সব গুলো ছবি ছিঁড়ে ফেলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জান্নাত।
রুমটা এখন সম্পুর্ণ পরিপাটি করে ফেলেছে জান্নাত। জান্নাত রেজনের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনও রেজন ঘুমের দেশেই আছে। জান্নাত আস্তে আস্তে করে রেজনের সামনে চলে আসে। রেজনের পাশে বসে রেজনের চুল নিয়ে খেলা করতে থাকে। রেজন জান্নাতের হাতটা ধরে ডানা ভেবে জড়িয়ে নেয় বুকের মাঝে। রেজন এখনও ঘুমের ঘোরেই আছে।
– এই পাগলী পাপ্পু দাও একটা?
– কোথায় দিবো?
– লিপ।
– ওকে বাবু সোনা।
– জান্নাত ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে গেল রেজনের ঠোঁটের দিকে।
– কতক্ষণ পড়ে চারটি ঠোঁট মিশে যায় একসাথে।
রেজনের কেন জানি আজকে অন্যরকম খারাপ লাগা বিরাজ করছে। রেজন তাঁর ঠোঁট ভিড়ে নেয় জান্নাতের থেকে। রেজন চোখ খুলে দেখে জান্নাতকে জড়িয়ে আছে। তাড়াহুড়ো করে রেজন ছাড়িয়ে নিজেকে জান্নাতের থেকে।
– তুমি এখানে?
– হুমম আমি এখানে।
– আমার শ্বশুর বাড়িতে আমি আসবো না!!
– প্লিজ জান্নাত আমার ফ্যামেলির সবাই তোমাকে চাইলেও আমি তোমাকে আপন করে নিতে পারবো না।
– সমস্যা কি আমাকে মেনে নিতে?
– কারণ আমি এখনও ডানাকে আগের মতোই ভালবাসি। বিন্দুমাত্র ভালবাসা কমে যায়নি ডানার প্রতি।
– মরা মানুষের প্রতি আবার ভালবাসা।
– মানে?
– ডানা হয়তো এতো দিনে মারা গেছে তার প্রতি আবার ভালবাসা
– তোমাদের সবার কাছে মারা গেলেও আমি জানি আমার ডানা আমাকে একা করে রেখে যেতে পারে না।
– ভালবাসি তো আমি তোমাকে?
– স্যরি আমি বাসি না।
– কেন?
– কারণ আমি একজনকে ভালবাসি।
হঠাৎই রেজনের পায়ের নিচে ডানার ছেঁড়া ছবি পড়ে থাকতে দেখে। রেজন ছবিটা হাত নিয়ে যেন রেগে কঠিন হয়ে যায়। তারপর রেজন দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখে দেয়ালে একটাও ছবি নেই।
– ছবি গুলো কোথায় গেলো? ( উচ্চস্বরে)
– মরা মানুষের ছবি রেখে দিয়ে কি হবে এখন?
– আচ্ছা জান্নাত তুমি জানলে কেমনে যে ডানা মারা গেছে?
– হঠাৎই জান্নাত কি বলবে কথাটা গোল পাকিয়ে বসে।
– কি হলো বলো? ( রাগী মনোভাবটা বজায় রেখে)
– না মানে। আসলে সবাই ই তো জানে যে ডানা মারা গেছে তাই না।
– কিন্তুক তুমি বিষয়টা জোড় দিয়ে বলছো।
– আসলে আমি মিডিয়ার বক্তব্য মেনে নিয়েছি।
– তো কি হয়েছে সবাই মেনে নিলে আমিতো মেনে নেইনি।
– আর তুমি কোন সাহসে আমার বাড়িতে এসে আমার রুমে প্রবেশ করে, আমার দেয়ালে সকল ছবি গুলো ছিঁড়ে ফেলেছো?
– আমি তোমার স্ত্রী। আমি যদি না আসি তাহলে কে আসবে শুনি।
– তুমি আমার দেয়ালের ছবি ছেঁড়ার কে? তুমি কি জানো আমি শুধু জাস্ট এই ছবির জন্যে বেঁচে আছি। আমি যখন এই ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি তখন মনে হতো আমার ডানা আমার সাথেই আছে।
– তুমি এখন থেকে দেয়ালের যাতে আর না তাকাও সেই জন্যে এমনটা করেছি। এখন থেকে তুমি আমাকে দেখবে।
– ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস। জান্নাতের গালে কষে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে তাঁর গাল লাল করে দেয় রেজন। পরক্ষনেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
– তুমি ভালোবাসো আর না বাসো আমি তোমাকে ভালবাসব এটাই ফাইনাল। ( কান্নায় জড়িয়ে পড়ে)

রাত ১০ টা।
রেজনের গাঁয়ে প্রচন্ড জ্বর বিরাজ করে। মাথা উঠিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে রেজন।
– জান্নাত রেজনের মাথায় জলপটি দিচ্ছে।
রেজনের বাবা মা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে।
জান্নাত তাঁদের কে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে সালাম দেয়।
– কি অবস্থায় আছে এখন রেজন?
– আব্বু এখন অনেকটাই জ্বর নেমে গিয়েছে।
রেজনের আব্বু দিয়ে রেজনের মাথা নেড়ে দেয় আর বলতে থাকে।
– আমি কতোবার বলেছি এভাবে জীবন নষ্ট করিস না?
– একজনের জন্যে কি আরো জীবন থেমে থাকে?
– কারো থেমে না থাকলেও আমার থেমে থাকে।
– আপনি চান বা না চান আপনি সুস্থ হলেই আপনাকে জান্নাতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
– বাবা এভাবে কথা বলছো কেন?
– তো কিভাবে আপনার সাথে কথা বলব?
– আপনি আপনি করে বলছো কেন?
– যার কাছে আমার কথার কোন দাম নেই সে শিওর আমার অপরিচিত কেউ না তাই আপনি বলছি।
– ওকে বাবা তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে।
– এখন প্লিজ একটু ভাল ভাবে কথা বলো ?
– মানে তুমি বিয়েতে রাজি?
– জানি না তবে তোমাদের খুশির জন্যে আমি সব কিছু করতে পারবো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here