#কাব্য_গোলাপ
৬
#Neel
সন্ধ্যায় আবার ও গ্যাং এর সাথে এক জোট হলাম। শপিং এ যাবো। কাল জুনিয়র দের নবীন বরণ। শপিং মলে এসে পৌঁছলাম সবাই। শপিং মল ঘুরে ঘুরে দেখছি তখন ই কাব্য কে দেখলাম। বিকেলে ওদের কথা শুনে মনে পড়ে গেল। কাব্য মন থেকে একটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ওদের বললাম, তোরা শপিং কর আমি আসছি।
যেই বলা সেই কাজ। কাব্য কে দেখে আমার খুশির অন্ত নেই। দ্রুত কাব্যের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কাব্য ফোনে কথা বলছে । আমাকে দেখে একটু নার্ভাস হয়ে হচকচিয়ে উঠলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। আমার তর সইছে না, কখন কাব্য ফোনে কথা বলা অফ করবে। আমাকে দেখে হয়তো কাব্য বুঝতে পারছে যে আমি কাব্যের সাথে কথা বলার জন্য কৌতুহল তাই হাত দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বললো।
মিনিট পাঁচেক পর কাব্য ফোন কেটে দিল। কাব্য ফোন কাটতে দেরি নাই, আমার মুখ থেকে কথা বুলেটের মত ফুটতে দেরি নাই।
খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে কাব্যকে বললাম – আপনাকে ধন্যবাদ অনেক অনেক অনেক। আপনার জন্য আমি সেই লায়ন পাগলার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি আর আপনার জন্য সে সারাজীবন এর জন্য আমার পিছু ছেড়েছে। ওহ্ আল্লাহ। ধন্যবাদ তোমাকে ও।
কাব্য কিছু বলবে তার আগেই একটি মেয়ে দৌড়ে এসে কাব্য কে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে বলল – ওওও কাব্য বেবি, তোমাকে কখন থেকে খুঁজছি । বাসায় ও পেলাম না। অবশেষে জানলাম তুমি এখানে তাই চলে আসলাম। বেবি তুমি আমাকে না বলে এভাবে চলে এলে কেন?আর এই মেয়েটি কে?
আমি আবুল মার্কা চোখে তাকিয়ে আছি। মেয়েটির কথায় একটা সৌজন্য বোধ হাসি দিয়ে বললাম – আমি, আমি কেউ না? কেউ না?
মেয়েটি ভুরু কুঁচকে তাকালো, আমার খেয়াল এলো আমি ভুলে কী যেন বলে ফেলছি। ধ্যান ই ছিল না। আমি কিছু বলার আগেই কাব্য বলল – রোজী, তুমি যাও।যাও (চোখ বড় বড় করে, রাগী কন্ঠে)
হুটহাট রাগ উঠে গেলো। কাব্য আর এই মাইয়া কে আমি কি এমন বলে ফেলেছি, আমি তো ঠিক ই বলেছি, আমি কেউ না। কাব্যের দিকে চোখ মিটমিট করে তাকিয়ে, মনে মনে বললাম- দাঁড়াও কাব্য মজা দেখাচ্ছি। রৌজীকে রাগ দেখানো। সাথে সাথে কলেজের ঘটনা মনে পড়ে গেল। কাব্য আমাকে যা যা বলেছে আজ। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।ইউরেকা ইউরেকা।হুরেএএ।
আমি মেয়েটিকে সরিয়ে দিয়ে কাব্য কে আচমকা জরিয়ে ধরলাম। কাব্য হচকচিয়ে উঠলো। আসলে আমি যে এমন করবো কাব্য ভাবতে পারে নাই।
ন্যাকা ন্যাকা সুরে বললাম – কাব্য, তুমি বলছো না কেন আমি কে? কাব্য ওওও। আমি কিন্তু কান্না করে দিব , তারপর থামাতে পারবে না। বলো না কাব্য এই মেয়েকে, তুমি আমার কি হও আমি তোমার?
কাব্য আমার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল। আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন আমি বাঘ আর কাব্য হরিন। ঠুস করে ধরে গপ করে কাব্য কে গিলে খাব।
আমি বললাম – কাব্যে তুমি এমন করতে পারলে। আমি থাকবো না, (কান্নার অভিনয় করে দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসলাম, খুব ভালো লাগছে , খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।)
অন্যদিকে, কাব্য অবাক হয়েছে রৌজীর কান্ডে। রৌজী হঠাৎ এমন করলো কেন? একটু আগেই এমন আর এখন রুপ পাল্টালো কেন। তাও এমন সময় যখন এই কাজল ছিল । কাব্য হেসে উঠলো,সে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলেছে। মুখ ফসকে বলে ফেলল – গোলাপ ফুল, তুমি এতো পাজি।
যেই মেয়েটা কাব্য কে জড়িয়ে ধরেছিল সে হলো কাজল।(আস্তে আস্তে কাজলের সম্পর্কে সব জানতে পারবেন)
কাজল – গোলাপ ফুল? কাব্য_গোলাপ। ওওও তাহলে এই সে মেয়ে, যার জন্য কাব্য আমাকে পাত্তা দেয় না।আজ ২ বছর কাব্যের পিছনে পড়েছি আমি মেয়ে হয়ে , কি নেই আমার মাঝে যা ঐ মেয়েটির আছে।ভালো হয়েছে, মেয়েটিকে চিনে নিয়েছি। ছাড়বো না। আমার থেকে কাব্য কে ছিনিয়ে নেওয়া, কখনো সম্ভব নয়।কখনো।(মনে মনে)
কাব্য জানে সে ফেঁসে গেছে । এই মেয়ে পিছু ছাড়ছে না।আর হাজারো প্রশ্ন করবে। এখন কি করবে সে? কাব্য কাজলের দিকে তাকাতেই দেখল কাজল ধ্যানে মগ্ন আছে, সুযোগ পেয়ে কাব্য কেটে পড়লো। মনে মনে ভাবছে, রৌজী কে এর শাস্তি পেতে হবে। তবে সেটা ভিন্ন ভাবে। রৌজী না না, গোলাপ ফুল তুমি ভুল করতে যেয়ে ও আমার ভালো ই করেছো। তোমার জন্য ই তো আমার এখানে আসা। তুমি ভালোই করেছো আমার রাস্তা টা ক্লিয়ার করে দিয়েছো। তবে সময়টা ভুল ছিল তো , গোলাপ ফুল। এখন এই কাজল আজ বাসায় হাঙ্গামা করবে শিউর।
কাজল ধ্যানে ছিল ঠিক ,ধ্যান ভাঙতেই কাব্য কে খুঁজল কিন্তু পেল না। রেগে গেল। বাঁকা হাসি দিয়ে মল থেকে বের হয়ে গেল।
_____
সকালে শুয়ে আছি আমি আবার ঘুম কাতুরে মেয়ে। সহজে ঘুম আসে না আবার ঘুম আসলে সহজে ভাঙ্গে না। কাল শপিং থেকে আস্তে লেইট হয়ে গেছিলো ।তাই ঘুম থেকে সহজে উঠতে পারি নাই। আমার নবীন বরণের কথা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।
হঠাৎ শরীরে পানি পড়তেই লাফিয়ে উঠলাম। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বললাম – মা মা, ও বাবা গোওও আমাদের ছাদ ভেঙে গেছে গো। দেখ পানি দিয়ে ভিজে যাচ্ছি।
হঠাৎ ধুম করে পিঠে একটা কিল পড়লো, কিলে ঘুম তো ছুটে গেছে ,দু চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, পিঠ বেঁকে গেছে, মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল – ও মাগো…কেডা রে।
এই বলে তাকাতেই চোখ মুখ কুঁচকে গেল। সামনে…
চলবে…
/