কাব্য গোলাপ পর্ব -০৮

#কাব্য _গোলাপ

#Neel

রাত রৌজীর দিকে এগিয়ে গেলো। কাঁথা টা সরাতেই রাত চমকে গেল। দ্রুত মা মা বলে ডাক দিলো। রাতের মা হুরমুরি করে দৌড়ে রৌজীর রুমে ঢুকলো।

রাত মাকে দেখে বলল – মা , মা দেখোতো ওর শরীর টা কত্তো গরম।

রৌজীর মা রৌজীকে দেখে চমকে উঠল। রৌজীর সেই জ্বর।রৌজীর ভাই ও মা অস্থির হয়ে পড়লেন।

____

আজ নিয়ে দু’দিন রৌজী কলেজ আসে না। কাব্যের মন অস্থির হয়ে আছে, প্রথমত‌ সে তার গোলাপ ফুল কে দুদিন ধরে দেখে নাই , মনে হচ্ছে কত জনম জনম দেখে না। ভালোবাসা বুঝি এমনই, চোখের আড়াল হলে মরন যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়। তার উপর কেউ থেকে গোলাপ ফুলের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ও করতে পারছে না। সেদিন কি সে গোলাপ ফুলের খুব ই কাছে চলে গিয়েছিল।সে কি ভুল করে ফেলেছে? না, ভালোবাসায় প্রিয় মানুষের সাথে করা পাগলামি গুলো ভুল নয়।এতো কিছু তো সে তার গোলাপ ফুলের জন্য ই করছে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে কাব্য রৌজীদের ক্লাসে ঢুকলো। ক্লাসে ঢুকতেই কাব্য চমকে উঠল। মুখে এক আকাশসম খুশি ফুটে উঠেছে। প্রিয় গোলাপ ফুল কে নিজের চোখের সামনে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। ক্লাসে প্রবেশ করে ই গোলাপ ফুলের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল- তুমি ঠিক আছো তো গোলাপ ফুল। দুদিন কোথায় ছিলে ? কলেজ কেন আসো নাই?(রাইটার -নীল)

রোজী এতক্ষণ কাব্যের কথা ই ভাবছিল। হঠাৎ তার সামনে কাব্য কে দেখে চমকে উঠে। কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল ক্লাসের সবাই কেমন চোখে তাকিয়ে আছে। রৌজী পরিস্থিতি সামাল দিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল – স্যা স্যার, কাব্য এটা ক্লাসরুম। আপনার বিহেবিয়ার ঠিক করুন।সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।(রৌজী কথাটা ফিসফিস করে কাব্য কে বলল)

রৌজীর এহম কথায় কাব্যের হুঁশ ফিরে। সত্যি ই তো সে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছে।ইশ্ আরেকটু হলেই বেপার টা হাত থেকে বেরিয়ে যেতো। কাব্য নিজেকে ঠিক করে ক্লাশ নিতে থাকলো। কিন্তু বার বার আড় চোখে তার গোলাপ ফুল কে দেখা বন্ধ করলো না। যেন কত দিনের তৃপ্তি মিটাচ্ছে।
এমন ও কয়েকবার রৌজী আর কাব্যের চোখাচোখি ও হয়ে গেল। কাব্য ঠিক ই খেয়াল করল, তার সাথে যতবার চোখের দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে ততবার ই রৌজী লজ্জায় লাল হয়ে চোখ সরিয়ে নিল। কাব্য মনে মনে খুশি হলো হয়তো এটাই তার গোলাপ ফুল কে পাওয়ার সংকেত।
কাব্য নিজ ক্লাস করিয়ে চলে গেল।

অন্যদিকে কাব্য যেতেই রাহি উপছে পড়ে রৌজীর উপর। রাহি সহ সবাই এখন কমন রুম এ বসে আছে। মূখ্যবিন্দু রৌজী।

রৌজী সেদিনের ঘটনা সব কিছু খুলে বলল।

রাহি – ইশ্, কত্তো রোমান্টিক ।এত কিছু হয়ে গেল তুই আমাদের কিছু ই বললি না।

শিপু – এই ছেড়ি থাম, আমি ভাবছি কাব্য ভাইয়া এরকম করবে কেন?

নয়ন – আমি হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছি।রৌজী রাগ করিস না, আমার মনে হয় কাব্য ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।

রোজী কোন রিয়েকশন করলো না।বরং মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেলল।

হাসান – শুধু কাব্য ভাইয়া না, আমাদের রৌজী ও কাব্য ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে। দেখ কাব্য ভাইয়ার নাম শুনতেই মুখে হাসির রেশ কাটে না।

হাসান এর কথা শুনে সবাই রৌজীর দিকে তাকালো । রৌজী একটা বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে বলল – তোরা প্লিজ একশন‌ রিয়েকশন কিছু ই করিস না। আমি বলছি বেপার টা। আসলে সেদিন বাসায় গিয়ে আমি জ্বরে পরি।এই জ্বর টা তে আমি প্রতিটা মুহূর্তে কাব্যের উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করেছি। প্রথমে বুঝতে পারিনি আসলে ই কি এই অনুভূতি। পরে আমি বুঝতে পেরেছি কৈশোর বয়সে আমার প্রথম ভাললাগার মানুষ টা কাব্য। আসলে আমাদের ঝগড়া টাই হয়তো এই বন্ধন টা তৈরি হওয়ার মাধ্যম।

দেখতে দেখতে কেটে গেল পনের দিন। এই পনের দিনে কাব্য আর রোজী অনেক টাই ক্লোস হয়েছে। এতে হেল্প করেছে রৌজীর সাঙ্গ পাঙ্গ। কিন্তু দুজনের মধ্যে কেউ ই ভালোবাসা প্রকাশ করে নাই।

আজ থেকে ইংলিশ টিচার আবার ও নিজের ক্লাসের দায়িত্ব কাব্য থেকে বুঝে নিলেন। কাব্য আর ক্লাস নিবে না শুনে ক্লাসের সব ছাত্র ছাত্রীরা আশাহত হলো। কিন্তু কাব্য সবাই কে বলল – সে প্রায়ই আসবে দেখা করার জন্য।

কলেজ ছুটি, কাব্য গেইটের সামনে অপেক্ষা করছে তার গোলাপের সাথে কথা বলার জন্য।আজ থেকে আর অপেক্ষা নয় , সে তার মনের কথা আজ তার গোলাপের সামনে বলবেই। কাব্য মুচকি হাসছে।

কাব্য কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিতু এগিয়ে এলো। মিতু কে দেখে কাব্য মুচকি হেসে বলল – কেমন আছো মিতু? কিছু কি বলবে?

বলা বাহুল্য মিতু কলেজ টপার । খুব ভালো ছাত্রী। মিতু মুচকি হাসলো। লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কাব্য একটু হকচকিয়ে গেল, মিতুর পরিবর্তন দেখে । তবে তা প্রকাশ করলো না। হঠাৎ মিতু তার হাত পিছন থেকে বের করে কাব্যের দিকে এগিয়ে দিল, মিতুর হাতে একটা লাল টকটকে গোলাপ।
কাব্য ভেবে নিল , হয়তো তার ক্লাশ‌ ভালো লেগেছে বলে , মিতু ফুল দিচ্ছে।
কাব্য হাত বাড়িয়ে ফুল টা নিতেই রৌজী ও এহম সময়ে গেইটে এলো , আর মিতু ওঃ বলে উঠলো – আমি আপনাকে ভালোবাসি, কাব্য।

কাব্য হাতে গোলাপ নিয়ে একবার রৌজী , একবার নিজের নেওয়া হাতে গোলাপ আর একবার মিতুর লজ্জা মাখা মুখে তাকাচ্ছে। কাব্য একটু বেশি ই হচকচিয়ে উঠলো। রৌজীর চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে গেল। হাতের বা পাশ দিয়ে অশ্রু মুছে দ্রুত গেইট পার করে হাঁটা শুরু করলো।

কাব্য….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here