কালো রাত্রির খামে পর্ব -১৩+১৪

#কালো_রাত্রির_খামে (১৩)
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________________

গেট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই রাত্রি অপ্রত্যাশিত একটা ব্যাপারের সম্মুখীন হলো। বাসার সামনে সামান্য পরিমাণ খোলা জায়গা রয়েছে। যেখানে নানা ফুল ও ভেষজ উদ্ভিদ লাগানো টবে। রয়েছে বসার জন্য একটা বেঞ্চও। সেই বেঞ্চে বসে একটা ছেলে সম্ভবত গেমস খেলছে। রাত্রি প্রথম এক পলক দেখে খেয়াল না করেই চলে যাচ্ছিল। আরও কিছুটা সামনে এগিয়েই মনে হলো, আরে এ ছেলে তো তার পরিচিত। এটা মনে হতেই থেমে গেল সে। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে এবার ভালো করে দেখলো। না, কোনো ভুল নেই, ছেলেটা আসলেই পরিচিত। রাত্রির মাথায় সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগলো। এটা কি কাকতালীয়? এই ছেলেটার বেলায় এত কাকতালীয় ঘটনা কেন ঘটে? আচ্ছা এ কি এ বাড়ির কোনো আত্মীয়? বেড়াতে এসেছে? কী একটা অবস্থা! যে বাড়িতে সে টিউশনি পড়ায় সে বাড়ির একজন আত্মীয় হতে হলো ছেলেটার?
তানবীন হঠাৎ তাকালো রাত্রির দিকে। সে এতক্ষণ খেয়াল করেনি রাত্রি তাকে দেখছে। চোখে চোখ পড়তেই হকচকিয়ে গেল রাত্রি। তবে কেন যেন তার চোখ সরলো না। তানবীনের ভাবনাহীন সরল দৃষ্টি জোড়া কীয়ৎক্ষণ অর্পিত থাকলো বিস্মিত, প্রশ্নবিদ্ধ মনের রাত্রির উপর। কিছু বলতে ইচ্ছা হলো। কিন্তু সে এখন গেইম থেকে বের হতে পারবে না। তার কাছে এখন গেইমটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেন। সে আবারও দৃষ্টি ফেরালো মোবাইল স্কিনে।
রাত্রি এখনও কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটা বুঝতে পারছে সে এখানে দাড়িয়ে থেকে অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না। সে ভিতরে প্রবেশ করলো। সোজা চলে গেল তুরিনের রুমে। তুরিন! তার নতুন স্টুডেন্ট। যাকে পড়ানোর জন্য তার এ বাড়িতে আসা। ভালোই মেধাবী। একটু শুকনো গড়নের। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা পরে সে। মায়ের মতোই ভীষণ সুন্দরী। রাত্রির এ কদিনেই মেয়েটাকে ভালো লেগে গেছে।
পড়াতে বসে রাত্রি ভাবছিল, বাইরের ওই ছেলেটা অর্থাৎ তানবীনের কথা তুরিনের কাছে জিজ্ঞেস করা উচিত হবে কি না। হ্যাঁ তানবীনকে সে বাইরে বসা দেখে এসেছে, তার কথা তো জানতে চাইতেই পারে।

“আচ্ছা, যখন আসছিলাম তখন বাইরে একজন ছেলেকে দেখতে পেলাম। সে কে?”

“ভাইয়ার কথা বলছেন?”

“তোমার ভাই আছে?” রাত্রি এর আগে এ কথা শোনেনি কিংবা দেখেওনি এমন কাউকে।

“হ্যাঁ। ওর নাম তানবীন খন্দকার। লেখাপড়া শেষ করে বেকার জীবন কাটাচ্ছে। ইচ্ছাকৃত বেকারত্ব জীবন বলতে পারেন।”

রাত্রি মনে মনে ভাবলো, হ্যাঁ ভাই বলেই তো দুজনের নামের সঙ্গেও মিল। তুরিন-তানবীন! কিন্তু সে তিনদিন হলো তুরিনকে পড়াচ্ছে, এর মাঝে একদিনও দেখতে পায়নি। হয়তো বিকেল বেলা বাইরে থাকে। ছেলেরা তো এমন সময় বাইরেই ঘোরাঘুরি করে সাধারণত। তবে এটা একটু অবাক করা ব্যাপার যে, সে যে বাড়িতে টিউশনি পেল সেটা তানবীনের বাড়ি। এমনটা কেন হতে হলো? আসলেই কি সবটা কাকতালীয়?

পড়ানো শেষে রাত্রি যখন বের হলো তখনও তানবীন একই জায়গায় অবস্থান করছে। রাত্রি অবাক হয়ে তাকে দেখতে দেখতে এগোচ্ছিল, এর মাঝেই তানবীন তার দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো রাত্রি। আর তখনই ডেকে উঠলো তানবীন,
“শুনুন।”

রাত্রিকে দাঁড়াতে হলো। তানবীন নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে এলো। রাত্রির সমক্ষে দাঁড়িয়ে বললো,
“আপনি আমার বাড়িতে? কয়েকদিন আমাদের দেখা হয়নি বলে একদম বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন? ওয়াও! ইন্টারেস্টিং!”

রাত্রি বললো,
“আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। আমি জানতাম না এটা আপনার বাড়ি। আমি আপনার বোন তুরিনকে পড়াই। আপনার মা-ই আমাকে টিউশনিতে রেখেছেন।”

তানবীন ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। তার এই হাসিটুকু অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। যে সৌন্দর্য রাত্রির চোখও এড়ায় না। তানবীন বললো,
“মা রেখেছে? না কি মায়ের ছেলের জন্য আপনি নিজেই এসেছেন?”

রাত্রি ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করলো। বললো,
“আশ্চর্য! মায়ের ছেলের জন্য কেন আসতে যাব? আপনাকে কি আমি চিনি?”

“আমার নাম কী?”

“তানবীন খন্দকার।”

“তাহলে আমাকে চেনেন না কীভাবে?”

রাত্রির মনে হলো এই ছেলের মাঝে মানুষকে কথার প্যাঁচে ফেলে অপ্রস্তুত করে তোলার ক্ষমতা আছে।
তানবীন বললো,
“যাই হোক, এসেই যখন পড়েছো আমার ঘরে, তখন তোমাকে ধরে রাখার দায়িত্ব আমার।”

অকস্মাৎ তানবীনের আপনি থেকে তুমি সম্বোধনে চমকে যায় রাত্রি। সে ভীষণ বিপদ অনুভব করে। এক বিপদ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেক বিপদের সম্মুখীন হলো কি সে? সে আর দাঁড়ায় না।

তানবীনের ঠোঁটে হাসি। তুরিনের জন্য যখন নতুন টিচার রাখার কথা হচ্ছিল তখন সে-ই মাকে রাত্রির কথা বলেছিল। রাত্রির সুনামও করেছিল। আর ঠিক তাই রাত্রি আজ এখানে। অবশ্য এমন সে করতো না যদি না রাত্রি টিউশনি হারিয়ে ভেঙে পড়তো। সে চাচ্ছিল না রাত্রি তাকে এ বাড়িতে আসা মাত্রই দেখুক। তাই কদিনের জন্য সে বন্ধুদের সাথে দূরে ঘুরতে গিয়েছিল। তানবীন পাশে তাকিয়ে দেখলো তুরিন এসে দাঁড়িয়েছে। ও গেটের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“কতটুকু ভালোবাসো ভাইয়া?”

“যতটুকু যায় বাসা।”

“কতটুকু যায়?”

“যতটুকু সে চায়।”

“যদি না চায়?”

তানবীন বোনের দিকে তাকালো। বললো,
“চাইবে।”

“এত আত্মবিশ্বাস?”

“হুম। ভালোবাসায় আত্মবিশ্বাস থাকা প্রয়োজন। এমন মনে করতে হবে, আমি যাকে ভালোবাসি, সেও অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে অথবা বাসবে।”

“তাহলে কী হবে?”

“অর্জন করা সহজ হবে। আমি তাকে অর্জন করতে চাই।”

তুরিন মজা করে বললো,
“মাকে বলি?”

“মা জানে।”

তুরিন চমকে যায়। বলে,
“মাকে বলেও দিয়েছো? এত নির্লজ্জ তুমি?”

তানবীন হাসলো। হঠাৎ বললো,
“আচ্ছা, আমি একজন স’ন্ত্রাসী হলে কেমন হতো?”

“খুব বাজে হতো। বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।”

তুরিন ঘরের দিকে পা বাড়ায়। তানবীন পিছন থেকে ডেকে বললো,
“তোর জন্য একটা স’ন্ত্রাসী বর খুঁজবো। বিয়ে করবি?”

তুরিন কানেই তুললো না যেন তানবীনের কথা। তানবীন বেলি ফুলের টবের কাছে বসে বললো,
“তোমাদের স্থানান্তর করার সময় এসে গেছে।”

__________________

সকালে খেতে বসে শ্রাবণী সম্পূর্ণ খেতে পারলো না। যতটুকু ভাত তাকে দেওয়া হয়েছিল তা থেকে অর্ধেকটা খেলো। ভাতের সঙ্গে ছিল ঢ্যাঁড়শ ভাজি। ঢ্যাঁড়শ এমনিতেও তার পছন্দের নয়। সে হাত ধুয়ে উঠে গেল। বসার ঘর পেরিয়ে রুমে ঢুকতে গেলেই দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা গেল। দরজা খুললো শ্রাবণী। মাথায় ক্যাপ পরা একজন লোক বললেন,
“আপনাদের পার্সেল।”

এ ঘরে এর আগে কখনও কোনো পার্সেল আসেনি। তাই লোকটার কথা মানতে একটু অসুবিধা হলো শ্রাবণীর। সে বললো,
“আমার মনে হয় আপনি পাশের বিল্ডিংয়ের পার্সেল ভুলে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমরা কিছু অর্ডার করিনি।”

“এটা চামেলি ভিলা না?”

“জি।”

“দ্বিতীয় তলা?”

“হ্যাঁ।”

“রাত্রি নামের কেউ থাকে এখানে?”

“জি থাকে।”

“তাহলে আমি ঠিক জায়গাতেই এসেছি।”

লোকটা পার্সেলের বক্সটা শ্রাবণীর হাতে দিয়ে চলে গেল। শ্রাবণীর সন্দেহ হলো, লোকটা কি আসলেই ডেলিভারি বয়? কোনো সিগনেচার নিলো না কেন? শ্রাবণী বক্সটা রুমে নিয়ে এলো।

“কে এসেছিল?” রাত্রি প্রশ্ন করলো।

“ডেলিভারি বয়। এটা দিয়ে গেছে। তোমার কাছে এসেছে।”

রাত্রি অবাক হয়। তার কাছে পার্সেল আসার কথা নয়। সে তো আর কিছু অর্ডার করেনি। না কি কেউ তার নামে পাঠিয়েছে? আদিল?
সে বক্সটা খুললো। বেলি ফুল। বেলি ফুলে সম্পূর্ণ বক্স ভর্তি। সুবাস ছড়াচ্ছে।
শ্রাবণী বললো,
“আপু, এটা কি দুলাভাই পাঠিয়েছে?”

“কী বলছিস? এমন কেউ নেই।”
কী যেন ভাবতে ভাবতে উত্তর দিলো রাত্রি। আদিল এসব কী শুরু করেছে? এটা ঘরের অন্য কারো হাতে পড়লে কী হতো? ছেলেটার কিছুদিন পর অন্যত্র বিয়ে হবে অথচ এখানে ফুল পাঠাচ্ছে?
শ্রাবণী বক্সের ভিতর থেকে ফুল তুলতে গিয়ে তার হাতে কিছু লাগলো। ফুলের ভিতর থেকে সেটা তুললে একটা লকেট চেইন দেখা গেল। এটা দেখে দুজনের চোখই চড়কগাছ। শ্রাবণী রাত্রির হাত থেকে বক্সটা নিয়ে বললো,
“দেখি এর ভিতর আরও কিছু আছে কি না।”

সে ফুলগুলো বিছানায় ঢাললো। হ্যাঁ, আরও একটা জিনিস পাওয়া গেল। ভাঁজ করা কাগজ। শ্রাবণী রাত্রির দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপু, লাভ লেটার মনে হয়।” শ্রাবণীকে ভীষণ উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছে। সে কাগজটা রাত্রিকে দিয়ে বললো,
“তুমি পড়ো। ব্যক্তিগত জিনিস।”

রাত্রি ভাঁজ খুললো। সেখানে লেখা,
‘আমায় একটি আকাশ দিয়ো,
শেষ বিকেলের আলো দিয়ো,
বর্ষার প্রথম বৃষ্টি দিয়ো।
প্রেয়সী,
আমায় একটু ভালো থাকার ভালোবাসাও দিয়ো।’

এটা কি আদিলের হাতের লেখা? সে আদিলের বাংলা হাতের লেখা দেখেনি। তানবীনের হাতের লেখা দেখেছে। তানবীন এর আগে তাকে একবার চিরকুট দিয়েছিল। তানবীনের হাতের লেখা এর থেকে অনেক সুন্দর। রাত্রি নিশ্চিত হলো, অবশ্যই এটা আদিলেরই দেওয়া হবে।

শ্রাবণী জানতে চাইলো,
“ভাইয়ার নাম কী?”

রাত্রি বিরক্ত হলো। সেই থেকে শ্রাবণী কী ভাবছে আর কী বলছে! রাত্রি রাগ-বিরক্তির মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় উত্তর দিলো,
“মিস্টার পাগল!”

শ্রাবণীর চোখ ছোটো ছোটো হয়।
“তার নাম পাগল? এমন নাম কেউ রাখে?কেন তার এই নাম? সে কি পাগলামি করে?”

এমন সব প্রশ্নে রাত্রি আরও বিরক্তবোধ করে। সে প্রশ্ন সমূহের উত্তর না দিয়ে বললো,
“কাউকে এসবের কথা বলবে না।”

“আচ্ছা।”

রান্নাঘর থেকে ডাক এলো। সকলের খাওয়া শেষ হয়েছে তাই রাত্রিকে ডাকছেন প্রিয়ারা।
রাত্রি বিছানা থেকে সব ফুল তুলে বক্সে ভরে রাখলো। চেইন এবং কাগজটাও তার ভিতর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।
শ্রাবণী বক্সের ভিতর থেকে কাগজটা বের করে দেখলো। ও মা! এই বক্স প্রেরণকারী কবি না কি? এটা কি কবিতা? ভালোই হবে একজন কবি দুলাভাই থাকলে। শ্রাবণীর কেন যেন খুশি খুশি লাগছে। এই বক্স আর চিরকুট যদি সত্যিই আপুকে কেউ দিয়ে থাকে, তারমানে আপুর বিয়েটা এবার হতে চলেছে। শ্রাবণী খুশি খুশি মনে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

রাত্রিকে খাওয়ার মাঝ পথে রুমে ছুটে আসতে হলো কলের শব্দে। পারভীন কল দিয়েছেন। রাত্রি সামান্য অবাক হলো। তিনি কেন কল দিয়েছেন? একটু দ্বিধা বোধ নিয়ে কল রিসিভ করলো রাত্রি।
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”

“ওয়াআলাইকুমুস সালাম। রাত্রি, তুমি কি একবার আমাদের বাড়িতে আসতে পারবে?”

পারভীনের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। রাত্রির এবার চিন্তা হলো। হঠাৎ তাকে এভাবে কেন ডাকছেন পারভীন? সে চিন্তিত গলায় বললো,
“কী হয়েছে আন্টি? কোনো…”

পারভীন কথা শেষ করতে দেন না, বলেন,
“প্লিজ, একবার তুমি এসো। আসবে তুমি?” পারভীন যেন অনুরোধ করছেন।

“আচ্ছা, যাব আমি।”

“ধন্যবাদ তোমাকে।”

পারভীন কল কেটে দিলেন।
রাত্রি ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। হঠাৎ কী হলো? তাকে এরকমভাবে ডাকা হচ্ছে কেন? রাত্রির চিন্তা আরও সমুজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তার চোখের তারায় স্পষ্ট ভয়। আদিল কোনো অঘটন ঘটায়নি তো?

(চলবে)#কালো_রাত্রির_খামে (১৪)
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________________

রাত্রি কলিং বেল চাপলো। তার মস্তিষ্কে চিন্তা নিগূঢ়। হাতে সকালের আসা পার্সেল। এটা সে দিয়ে যাবে আদিলকে।
কিছু সময় অপেক্ষা করার পর দরজা খুললেন পারভীন। রাত্রি সালাম দিলো। পারভীন সালামের উত্তর দিয়েই বললেন,
“আদিলের ঘরে যাও।”

রাত্রি চমকে তাকালো। পারভীন তাকে এভাবে আদিলের ঘরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন? কী হয়েছে আদিলের? রাত্রি উৎকণ্ঠা হয়ে জানতে চাইলো,
“কী হয়েছে ওনার?”

“ভীষণ অসুস্থ। তোমাকে দেখবে বলে পাগলামি শুরু করেছিল। আমি দুঃখিত তোমাকে ওর জন্য ডাকার জন্য।”

“না, সমস্যা নেই।” ইতস্তত করে বললো রাত্রি।

“একবার ওকে দেখে এসো।”

রাত্রি ভীষণ জড়তা নিয়ে আদিলের রুমে গেল। আদিল শুয়ে আছে। চোখ বোজা। ঘুমাচ্ছে? রাত্রি দুয়েক মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে চলে আসা দিলেই আদিল বললো,
“ঘুমাচ্ছি না।”

রাত্রি থামলো। ফিরে তাকিয়ে বললো,
“আপনি কেমন আছেন?”

“ভালো কি রেখেছেন? কী করে ভালো থাকি?”

রাত্রি কিছু বললো না। আদিলের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ শোনাচ্ছে। আসলেই সে ভীষণ অসুস্থ। অসুস্থতার ছাপ পড়ে গেছে চেহারায়। আদিল বললো,
“এমনিতেই আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, অত দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আপনি আমার শ্বাস কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কাছে আসুন।”

রাত্রি কিছুটা কাছে এগোলো। আদিল বললো,
“না, আরও এগোন। এখানে আসুন।”

আদিল রাত্রিকে নিজের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বললো। রাত্রি গেল। আদিল মৃদু হাসলো যেন। তার চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে নামে। তা দেখে বিব্রত বোধ করলো রাত্রি। আদিল চোখ বন্ধ অবস্থায় হঠাৎ রাত্রির এক হাত নিয়ে নিজের কপালে রাখলো। ঘাবড়ে গেল রাত্রি। মনে হচ্ছে হাতে যেন আগুনের সেঁকা লাগছে।
আদিল বললো,
“আপনি হেলা করেন আমি পুড়ে যাই,
আপনি ভালোবাসেন আমি নিভে যাই। কিন্তু আমি কেবল পুড়ছি, কারণ আপনি ভালোবাসছেন না আমায়।”

আদিল চোখ মেলে। তার চোখে কাতরতা। অব্যক্ত যন্ত্রণা! ওই দৃষ্টির সম্মুখে যেন রাত্রির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,
“আমি যাচ্ছি।”

আদিল বললো,
“জানি চলে যাবেন আপনি,
কিন্তু মিছিমিছি থেকে যাওয়ার গল্প তো শোনাতে পারেন। আপনার জন্যই যে হৃদয়ের সব অনুভূতি, আপনার মনেও দুঃসাহস করে অনুভূতি খুঁজতে তো পারি। হোক না একটা বৃথা অনুসন্ধান। পৃথিবীর তো কোনো ক্ষতি হবে না তাতে।”

রাত্রি আদিলের কথার প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে বললো,
“দোয়া রইল, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন আপনি।”

রাত্রি দরজার দিকে এগোনো দিয়ে খেয়াল করলো আদিলের দেওয়া বক্সটা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। সে বক্সটা আদিলকে দেখিয়ে বললো,
“এটা কেন পাঠিয়েছেন আমার বাড়িতে?”

“কী ওটা?”
না জানার মতো করে বললো আদিল।
এরকম করে বললো না কি সত্যিই জানে না? আদিলের টেবিলের দিকে চোখ গেল রাত্রির। ওখানে কিছু বই-খাতা দেখা যাচ্ছে। আদিলের ঘরেও এরকম করে বই-খাতা থাকতে পারে সে ভাবেনি। নিশ্চয়ই আদিল ওতে হাত দেয়নি বহু দিন। ওখানে নিশ্চয়ই আদিলের বাংলা হাতের লেখা পাওয়া যাবে। রাত্রি সেদিকে এগিয়ে গেল। একটা জার্নালের মতো বস্তু টেবিলে পাওয়া গেল। সেটা খুলে আদিলের বাংলা হাতের লেখাও পাওয়া গেল। না মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বক্সে থাকা কাগজের লেখার চেয়ে আদিলের হাতের লেখা সুন্দর। তবে কি এটা আদিল দেয়নি?

“কী করছেন আপনি?” আদিলের কণ্ঠে বিস্ময় স্পষ্ট।

রাত্রি তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো,
“আপনি আমার বাড়িতে কিছু পাঠাননি?”

“কী পাঠাবো?”

আদিল সত্যিই এটা পাঠিয়ে থাকলে হয়তো এতক্ষণে তা বলতো। সে তো ভীষণ অকপটে কথা বলারই মানুষ। তবে কি আসলেই এটা সে পাঠায়নি? তবে কি তার ধারনায় ভুল হলো? দ্বিধায় পড়লো সে। রুম থেকে বের হওয়া দিলেই আদিল বললো,
“আর কিছুক্ষণ থাকলে হতো না?”

“না।”

“তবুও ধন্যবাদ। আমি এখন সুস্থ। শরীর সুস্থ না হলেও মন সুস্থ!”

এই কথার বিপরীতে বলার কিছু নেই রাত্রির, তাই সে আদিলের রুম থেকে কিছু না বলেই বেরিয়ে এলো। পারভীন বসে ছিলেন, রাত্রিকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন।
রাত্রি বললো,
“চিন্তা করবেন না। নিশ্চয়ই উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমি যাচ্ছি আন্টি।”

“চা, কফি কিছু খাবে না?”

“না, সময় নেই। ভালো থাকবেন।”

রাত্রি মিথ্যা বললো। তার কাছে অঢেল সময় এখন। কিন্তু এই পুরো ঘরটা তার কাছে নিষিদ্ধ পুরির ন্যায় ঠেকছে। সে একবার আদিলের ঘরের খোলা দরজায় তাকিয়ে চলে এলো। সে জানলোও না সে উঠান পেরিয়ে যাওয়ার সময় একজন অসুস্থ মানুষ নিজের অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বারান্দায় এসে তাকে দেখছিল। অসুস্থ মানুষটি জানে না আবার কবে সে দেখতে পাবে ওই দুর্লভ মানবীকে!

__________________

অয়ন ভার্সিটিতে যাচ্ছিল। পথে কেউ ডাকলো তাকে। তাকিয়ে দেখলো রোশনি। মেয়েটার সঙ্গে তার বেশ কিছুদিন দেখা হয়নি। পায়ের ওই অবস্থার জন্য বোধহয় এতদিন ঘরের বাহির হয়নি সে। রোশনির পরনে কলেজ ড্রেস। সে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে না কি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে জানা নেই অয়নের। মেয়েটা দোকানের সামনে থেকে ডেকেছিল, অয়ন দাঁড়াতেই প্রায় দৌড়ে সামনে এসে হাজির হলো। তার মাথার উপর একটা ছাতা। বললো,
“কেমন আছেন আপনি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনার পায়ের কী অবস্থা?”

“ভালো। আমি এখন হাঁটতে পারি, দৌড়াতে পারি। দেখলেন না দৌড়ে এলাম।” রোশনি হাসলো। জানতে চাইলো,
“কোথায় যাচ্ছেন?”

“সেটা আপনার না জানলেও চলবে।”

এতক্ষণ অবধি অয়নকে একজন ভালো ভদ্র ছেলে মনে হচ্ছিল, কিন্তু এই জবাবের পর রোশনির মনে পড়লো সে যার সঙ্গে কথা বলছে সে একজন বেয়াদব। তবে এই বেয়াদব রূপ দেখতে পেয়ে শান্তি লাগলো তার। সেও কড়া করে বললো,
“না জানলেও চলবে কেন? চলবে না। আমি জানতে চাই। বলুন, কোথায় যাচ্ছেন? খারাপ বন্ধুদের সাথে মিলে মাদক সেবন করতে যাচ্ছেন?”

রোশনির কথায় চরম মেজাজ খারাপ হলো অয়নের। মেয়েটা যে ঠিক কেমন সে বুঝতে পারেনি এখনও। নিশ্চয়ই মাথায় সমস্যা। অয়ন বললো,
“আপনার কথা শুনলে গা জ্বলে যায় আমার। গা জ্বলে গেলে সমস্যা, চিকিৎসার টাকা নেই আমার কাছে। যাচ্ছি।”

অয়ন এগোনো দিলে রোশনিও তার সঙ্গে সঙ্গে এগোতে শুরু করলো। বললো,
“আপনি রাগ করেছেন? আসলে আমি ওই কথাটা বলতে চাইনি। আসলে আমি না ইদানীং বেয়াদব হওয়ার চেষ্টা করছি। তাই নানা অদ্ভুত ও বাজে কথা বলছি মানুষের সঙ্গে।”

“ও চেষ্টা করছেন? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি একজন প্রপার বেয়াদব।”

রোশনি সলজ্জ হাসলো। বললো,
“না না, আমি অতও যোগ্যতাধর নই।”

অয়নের হাসি পেল। সে একবার তাকালো রোশনির দিকে। মনে হচ্ছে পাশে একটা কার্টুন তার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলছে। সে কিছু বললো না। হাসি চেপে রাখলো।
রোশনি বললো,
“আপনি জানতে চাইলেন না তো আমি কেন বেয়াদব হতে চাচ্ছি?”

“আগ্রহ নেই আমার।”

“কিন্তু আপনাকে তো জানতেই হবে।”

অয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রোশনির চেহারায় লজ্জা। সে দৃষ্টি নত রেখে চলতে চলতে বললো,
“কারণ ইদানীং আমি একজন বেয়াদবকে পছন্দ করে চলেছি, আমার মনে হয় তার জন্য আমারও বেয়াদব হওয়া একান্ত জরুরি।”

অয়নের পা থেমে যায়। রোশনির অস্পষ্ট কথাগুলো সে স্পষ্টভাবে ধরতে পারলো। রোশনিও অয়নকে থামতে দেখে থেমে গেছে। অয়ন বললো,
“আপনাকে ওইদিন যে পরামর্শ দিয়েছিলাম, আমার মনে হয় আপনি সেই পরামর্শ মনে রাখেননি।”

“না, মনে রেখেছি আমি। আমি মোটামুটি মেধাবী। এত সহজে ভুলে যাই না।”

মেয়েটাকে খুব বোকা বোকা দেখাচ্ছে। মেয়েটা কি আসলেই বোকা? না কি অয়নই শুধু এমন দেখতে পাচ্ছে? বোকা মানুষদের সহজে কিছু বোঝানো যায় না। অয়ন কীয়ৎক্ষণ নীরব থেকে বললো,
“আচ্ছা বলুন তো, পছন্দের দ্বিতীয় ধাপ কী?”

রোশনি খুব চিন্তায় পড়ে গেল। পছন্দের দ্বিতীয় ধাপ কী হতে পারে? কিছুক্ষণ ভাবার পর দুটো শব্দ তার মাথায় এলো। কিন্তু কোনটা হবে? প্রেম না কি ভালোবাসা? রোশনি অনিশ্চিত কণ্ঠে বললো,
“ভালোবাসা?”

“এর পরের ধাপ?”

অয়ন যখন এরপরের ধাপ জানতে চাইছে তার মানে রোশনির উত্তর সঠিক। মনে মনে আনন্দিত হলো রোশনি। প্রথম প্রশ্নের উত্তর যেহেতু সঠিক হয়েছে, পরের উত্তরটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই দিলো,
“বিয়ে?”

তবে তার এবারের উত্তর সঠিক না ভুল সেটা বোঝা গেল না। কারণ অয়নের পরবর্তী কথাটা খুবই ব্যতিক্রম। অয়ন বললো,
“দরিদ্র ঘরের ছেলের চেহারা সুন্দর হতে পারে, কিন্তু জানেন কি মেয়ে, ওই দরিদ্র ঘরটা বড়োই অসুন্দর!”

রোশনি আকস্মিক এ কথার মানে বুঝতে পারলো না। অয়ন তাকে রেখে সম্মুখে পা বাড়িয়েছে। দুই পা সামনে এগোলেই রোশনি কথাটা বুঝতে পেরে বললো,
“আমি অবশ্যই আপনার চেহারায় আকর্ষিত হইনি। আর আমার কিছু যায় আসে না আপনার ঘর কেমন সে বিষয়ে।”

অয়ন দাঁড়ালো। রোশনির কথার জবাব দেওয়ার জন্যই দাঁড়াতে হলো তাকে। সে বললো,
“হাতে একশ টাকার বার্গার নিয়ে এক টাকার চকলেটের পিছনে ছোটা বোকামি আর মূর্খতার পরিচয় বহন করে। ছুটবেন না আর। এখানেই থেমে যান, যদি না মূর্খতার পরিচয় দিতে চান।”

রোশনির মনে হলো সে সরাসরি প্রত্যাখিত হয়েছে এবং তার এটাও মনে হলো সে আসলেই মূর্খ। না হলে কেন অযথাই এরকম একজন বেয়াদব ছেলের পিছনে ছুটবে? অভিমানে রোশনির সারা মুখ কালো হয়ে যায়। এমন কষ্ট সে বহুদিন পায়নি। সে আর কলেজে গেল না, বাড়ির পথ ধরলো। জানে, বাড়ি ফিরে হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে।

_____________________

সময় বিকেল চার ঘটিকা। একদম ঠিক চারটা বাজতেই তুরিনদের বাড়ির গেট পেরিয়ে ঢুকলো রাত্রি। তার হাতে সকালে আসা পার্সেল বক্স। এটা আদিল দেয়নি, তাহলে হবে এটা তানবীনই দিয়েছে। বেলি ফুল গাছ গুলোর দিকে নজর পড়তেই যেন আরেক ধাপ নিশ্চিত হয়ে গেল রাত্রি। গতকালও ওগুলোতে কতফুল দেখেছিল সে। কোথায় সেসব? গাছ যে একেবারে শূন্য। অবশ্যই গাছ গুলোয় অনেক ফুল থাকার কথা ছিল। রাত্রি বেলি ফুল গাছের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তা করছিল। তানবীন তার পিছন থেকে প্রায় চলেই যাচ্ছিল বাড়ির বাইরে। রাত্রি লক্ষ করা মাত্রই বললো,
“শুনুন।”

তানবীন থামলো। সে গেট দিয়ে বের হতেই যাচ্ছিল। রাত্রির দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভুলে ডাকলে?”

“না, ইচ্ছাকৃতভাবে ডেকেছি।”

রাত্রি এগিয়ে গেল তানবীনের দিকে। বক্সটা দেখিয়ে বললো,
“এটা আমার বাড়িতে আপনি পাঠিয়েছেন?”

তানবীন চুইংগাম খাচ্ছে। চিবোতে চিবোতে বললো,
“এটা কী?”

“আপনি জানেন না?”
রাত্রি বক্সটা খুলে দেখিয়ে বললো,
“এসব কেন পাঠিয়েছেন?”

যদিও এটা তানবীনেরই পাঠানো, তবে তার অভিব্যক্তি দেখে তা বোঝার উপায় নেই। সে বেলিফুলের উপর থেকে ভাঁজ করা কাগজটা উঠিয়ে পড়ে বললো,
“ও মা, এ তো মনে হচ্ছে তোমার প্রেমিক তোমাকে দিয়েছে। আমাকে সন্দেহ করলে? তবে কি আমি নিজের অজান্তে তোমার প্রেমিক হয়ে বসে আছি? ভেরি স্ট্রেইঞ্জ!”

“মজা রাখুন। আমি জানি এটা আপনিই দিয়েছেন।”

“কিন্তু এই হাতের লেখা তো আমার নয়।”

আসলেই হাতের লেখাটা তানবীনের নয়। এটা সে তুরিনকে দিয়ে লিখিয়েছে। যেহেতু সে আগেও একবার রাত্রিকে নিজের হাতে লেখা চিরকুট দিয়েছিল, তাই এবার ভিন্ন হাতের লেখা দিয়ে কনফিউজড করতে চেয়েছিল রাত্রিকে। কিন্তু মেয়েটা বুঝে গেছে।

রাত্রি বললো,
“হতে পারে আপনি হাতের লেখা খারাপ করে লেখার চেষ্টা করেছেন।”

“হতে পারে না। তবে এমনটা হতে পারে আপনি আমার প্রেমে পড়েছেন।”

রাত্রির ওষ্ঠদ্বয় বিচ্ছিন্ন হলো তুমুল বিস্ময়ে। এ ছেলে তো ভীষণ চতুর! তবে সে কোনো চতুরতায় থমকে যাবে না। সে তানবীনের হাতে বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“এরকম করবেন না আর। আমি এসবে অভ্যস্ত নই, আর না তো আমি আপনার ধরনের। একটা সময় মনে হবে মরীচিকার পিছনে সময় নষ্ট করেছেন, তখন ঠিকই থমকে দাঁড়াবেন। কিন্তু তার চেয়ে আপনার এখনই থেমে যাওয়া ভালো।”

রাত্রি বাড়ির দিকে ঘুরলো। বাড়ির দিকে এগোতে এগোতে শুনতে পেল তানবীনের কণ্ঠস্বর,
“কিন্তু আমি জানি আমি মরীচিকার পিছনে ছুটছি না। আমি বিস্তীর্ণ এক মরুভূমির দিকে এগোচ্ছি। আর আমি ওই মরুভূমিতে বৃষ্টি নামিয়েই ছাড়বো।”

রাত্রি কিছু বললো না। দু চোখে আবারও অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে সে। তার মনে হচ্ছে এই টিউশনিটাও বেশিদিন টিকবে না। অথচ টিউশনিটা পেয়ে সে কতই না খুশি হয়েছিল। অথচ আবারও তাকে টিউশনি হারানোর ধাক্কাটা পোহাতে হবে। আচ্ছা, এবার কি তার নিজেরই টিউশনিটা ছেড়ে দেওয়া উচিত? এতে অন্তত অপমান বোধ হবে না। হ্যাঁ, আর কয়েকটা দিন দেখবে সে। যদি মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর হয় তবে ছেড়ে দেবে। আদিল মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিল, তাই হয়তো ওরকম করতো। কিন্তু এই ছেলেটা? এ ছেলেটা তো নিছকই তার সঙ্গে মজা করছে। কারো মজায় দুর্বল হয়ে পড়া অত্যন্ত খারাপ। সে অবশ্যই নিজেকে এসবের থেকে দূরে রাখবে। কারণ এরকম ছেলেরা ভয়ংকর হয়!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here