গল্পের নাম: #কিছু_জোড়া_শালিকের_গল্প
পর্ব ২: #ইটস_ফাইনাল
লেখিকা: #Lucky_Nova (🚩গল্প কপি নিষেধ🚩)
“তোকে পছন্দ করেছে ছেলেপক্ষ।” বলল তৃণা।
চকিত ভঙ্গিতে ফিরে তাকালো ত্রয়ী। মাত্রই ভার্সিটি থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে নিজের রুমে ঢুকেছে ও। আর এরমধ্যেই এটা কী খবর দিলো ওর আপু ওকে!
“বেঁচে গেছি রে! জানিস আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম যখন হুট করে দেখতে চলে আসলো। কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিলো একদম।” বলতে বলতে মুখটা মলিন করে পুনরায় আবার হাসলো তৃণা। বলল, “কিন্তু অবশেষে শুনলাম আমার না, তারা এসেছে তোর জন্য।”
এতোসময় হা করে কথা গুলো শুনছিলো ত্রয়ী। শেষোক্ত কথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো ওর মাথায়। কাঁধের সাইডব্যাগটা বিছানায় নামিয়ে রেখে হয়রান হয়ে প্রশ্ন করলো, “আমাকে মানে কী? তুই না বড়!”
“এইজন্যই তো ভয় পেয়েছিলাম। বড় মেয়ে বলে আমাকেই সং সাজিয়ে নিয়ে গেলো। পরে শুনি আমি না। তুই। কী যে খুশি হয়েছিলাম। ভাবতে পারিস আমাকে দেখতে এলে কী হত! এমন হুট করে বিয়ের প্রস্তাব আসবে ভাবি নি। আমি মুমিনকে বলেছি জলদি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে। দেরি করলেই আবার কে না কে উড়ে এসে প্রস্তাব দিয়ে দেয়! বাবা!” হাঁফ ছাড়লো তৃণা।
ত্রয়ীর মুখটা পাংশুটে হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে সে। এটা কী হয়ে গেলো? পছন্দ করেছে মানে টা কী! ওর-ও তো বয়ফ্রেন্ড আছে। ভেবেছিলো বড় বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসার পর পরই ও ওর বয়ফ্রেন্ডকে বলবে বিয়ের প্রস্তাব আনতে। আব্বু যেহেতু প্রেমের বিয়ে মানবে না তাই ব্যাপারটা এরেঞ্জ ম্যারেজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু মধ্যিখান থেকে বড়বোনকে টপকে ওরজন্যই নাকি প্রস্তাব এসেছে! এ কেমন বিপদ!
“আপু, বিয়েটা কি পাকা করে ফেলেছে?” বিচলিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো ত্রয়ী।
তৃণা বিছানায় বসা থেকে শুয়ে পড়ে বলল,”বলতে গেলে হ্যাঁ। খুব সম্ভ্রান্ত ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছে। খালুর নাকি চেনাজানা। যদিও খালুও জানতেন না তারা তোকে পছন্দ করে প্রস্তাব আনবে। অবাক হয়েছিলেন খালুও। আব্বু তো মনে হয় রাজি বলতে গেলে। সরাসরি পাকা কথা বলতে কালই আবার আসবে তারা।”
আতঙ্কে বুকটা হুহু করে উঠলো ত্রয়ীর। নুহাসকে কী বলবে ও! এমন কিছুর আশা যে করেই নি। যদিও নুহাস এব্যাপারে জানে যে ত্রয়ীর আব্বু লাভ ম্যারেজ সহ্যই করতে পারেন না। সব জেনে শুনেই সে ত্রয়ীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। তবে এভাবে বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়াটার বিষয়টা ওরা চিন্তাও করতে পারে নি।
“কিরে তোর কী হলো?” জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো তৃণা।
চিন্তায় মগ্ন থাকায় চকিত হয়ে উঠলো ত্রয়ী। ম্লানমুখে মাথা নেড়ে বলল,”কিছু না।”
“তবে আশ্চর্যের বিষয় জানিস! ছেলে আসে নি। মা বাবা এসেছিলো শুধু। তবে ছেলের ছবি দেখিয়েছিলো। জোস দেখতে। বিএফ না থাকলে আমিই করে নিতাম বিয়ে।” বলেই ফিক করে হাসলো তৃণা।
“তবে ছেলে কাল হয়তো আসবে। সরাসরি দেখিস। পুরাই হট।”
ত্রয়ী মোটেই মজা পাচ্ছে না এসব কথায়। ওর চিন্তা বিয়েটা কীভাবে আটকানো যাবে সেটা। তবে তার আগে নুহাসকে জানাতে হবে।
তৃণা যাওয়ার অপেক্ষায় আছে ও। কারণ তৃণাও জানে না ত্রয়ীর বয়ফ্রেন্ড আছে। তৃণাকে না জানানোর পিছনেও কারণ আছে। সেটা হলো বড় বোন হিসেবে তৃণা প্রেম করলেও ছোট বোনকে সে প্রেম করতে দেবে না। কারণ তার মতে, অনার্সের ফাইনাল ইয়ারে এসেও নাকি ত্রয়ী ছোট। অবুঝ।
হাস্যকর কথা।
বেশ কিছুক্ষণ বকবক করে তৃণা ঘর থেকে বেরুতেই ত্রয়ী ফোন করলো নুহাসকে। হন্তদন্ত করে বলল সবকিছু। নুহাসও চিন্তায় পরে গেলো। ওর থেকে ত্রয়ী আরো অনেক বেশিই চিন্তায় পরে গেছে। ভয় পাচ্ছে খুব। নুহাস শান্ত হতে বলল ত্রয়ীকে। তারপর বলল যে ছেলের সাথে বিয়েটা পাকা হচ্ছে তার সাথে কথা বলতে। সে অবশ্যই বুঝবে। আর সে বিয়েতে নাকচ করে দিলেই বিয়েটা আটকে যাবে।
ত্রয়ী এতক্ষণে একটু স্বস্তি বোধ করলো। ঠিক করলো ছেলেটার সাথেই কথা বলবে।(লেখিকা – লাকি নোভা)
🌼
ত্রয়ী মুখ দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। এটুকু সময়ের মধ্যেই ছেলেটার ফোন নাম্বার যোগার করতে পেরেছে ও। তাও বাবার ফোন থেকে চুরি করে। ইনিয়েবিনিয়ে তৃণার থেকেই জানতে পেরেছিলো যে তারা ফোন নাম্বার দিয়ে গেছে।
ভাগ্যিস! নাহলে কী যে হতো! হয়তো কালই পাকাপাকি কথা হয়ে যেত বিয়ের। এমনিই আধপাকা কথা হয়েই আছে। তাই আজই যা করার করতে হবে।
ত্রয়ী নাম্বার ডায়াল করে ফোন কানে দিলো। কয়েকবার রিং বাজার পর রিসিভ হলো ফোন।
“হ্যালো?” ওপাশ থেকে ভেসে আসলো এক গাঢ় পুরুষালি কণ্ঠস্বর।
একটু অপ্রস্তুতই হয়ে গেলো ত্রয়ী। সম্পূর্ণ অজানা কারো সাথে সহজ হয়ে ত্রয়ী কখনোই কথা বলতে পারে না। হোক সে ছেলে বা মেয়ে। ছোট থেকেই ওর এমন অভ্যাস৷ এজন্যই নুহাসের সাথেও এখনো ফ্রি না ও।
“ত্রয়ী?”
বেশ চমকে উঠলো ত্রয়ী। পুরোদমে হতভম্ব হয়ে গেলো। লোকটা বুঝলো কী করে? ও তো এখনো কথাই বলে নি!
একটু সময় নিয়ে অবাক ভাবটা কাটালো ত্রয়ী। তারপর মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,”হ্যাঁ। আপনি কি নীল?”
“হ্যাঁ।”
ফাঁকা ঢোক গিললো ত্রয়ী।
“আসলে আমার বিয়ে নিয়ে কিছু কথা বলার ছিলো আপনার সাথে।” অনেক সংকোচ নিয়ে কথাগুলো উচ্চারণ করলো ত্রয়ী।
“হু, বলো।” শান্ত স্বরে বলল নীল।
কপাল ঘেমে উঠেছে ত্রয়ীর। কেনো যে এতো নার্ভাস লাগছে তা ও বুঝতেই পারছে না।
ত্রয়ী বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বিছানায় বসলো। ছটফটানি বাড়ছে। চোখমুখে গভীর চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।
“আমি আসলে…।” আমতা আমতা করতে লাগলো ত্রয়ী।
ত্রয়ী মুখ খুলে পরের শব্দগুলো আওড়ানোর আগেই কেউ সজোরে তিন চারটা বাড়ি দিলো দরজায়।
“কিরে দরজা খোল! আমার ফোনটা তোর ঘরে। কী করছিস দরজা আটকে?” আহাজারি করে বলল তৃণা।
ত্রয়ী বিরক্ত হয়ে তাকালো দরজার পানে।
বিড়বিড়িয়ে বলল, “উফ! এখনি কেনো আসতে হলো!”
ত্রয়ী ইতস্তত করে বলল,”কেউ এসেছে তাই…।”
“হু। বুঝতে পারছি। এখনি যে কেনো আসতে হলো? কথাটাও বলা হলো না।” রসিকতা করে বলল নীল।
ত্রয়ী বুঝলো লোকটা ওর কথার অন্য মানে বুঝে বসে আছে। তবে ত্রয়ী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কারণ তৃণা দরজা টাকিয়েই যাচ্ছে।
আওয়াজ হয়তো ফোনের ওপাশ অব্দি যাচ্ছে।
ত্রয়ী কান্ত ভঙ্গিতে দরজার দিকে তাকালো একপলক।
তারপর একটা লম্বা শ্বাস টেনে সাহস সঞ্চয় করে বলল, “আপনি কি আজ একটু দেখা করতে পারেন?”
ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গেই সারা এলো না।
ত্রয়ী আঙুল কামড়ে উৎসুকভাবে অপেক্ষা করতে লাগলো উওরের। আর অবশেষে উওর এলোও।
“ওকে। তোমার বাসার সামনের ব্রেকটাইম কফি নামের ক্যাফেতে চলে এসো। বিকাল পাঁচটায়?! নাকি কখন সময় হবে?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, পাঁচটায় পাঁচটায়।” হুড়মুড়িয়ে দ্বিরুক্তি করলো ত্রয়ী। লোকটা যে কোনো বাড়তি কথা জিজ্ঞাসা না করেই রাজি হয়েছে এটাই অনেক।
“ওকে, সী ইউ!”
“আচ্ছা।” ত্রয়ী ফোন কাটলো। একহাতে ঠোঁটের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে চট করে সময় দেখলো। এখন বাজে তিনটা সতেরো।
ফোন রেখে ত্রয়ী এগিয়ে গেলো দরজার কাছে।
তৃণা তখনো দরজা টাকাচ্ছে।
ত্রয়ী দরজা খুলতেই কোমড়ে হাত রেখে চোখ পাকিয়ে বলল, “এত সময় লাগে?”
ত্রয়ী মেকি হাসলো।
🌼
পাঁচটা বাজতে পনেরো মিনিট বাকি। ফুচকা খাবার নাম করে ত্রয়ী বের হয়েছে ঘর থেকে। বের হতেও কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অবশ্য। একপ্রকার জেদ করে বের হয়েছে ত্রয়ী।
কারণ বিয়ের আগে বাড়ি থেকে বের হতে নেই বলে বাধ সেধে বসেছিলো ওর দাদি। আশ্চর্যের বিষয়! বিয়ে ঠিক হতে পারলো না আর আগেই এতো কাহিনী!
ঢাকার অলি-গলিতে ক্যাফে আর রেস্টুরেন্ট দিয়ে ভরা। ত্রয়ীর বাসা থেকে পাঁচ মিনিট হাটলেই ব্রেকটাইম নামক ক্যাফে।
ত্রয়ী এদিক ওদিক সাবধান নজরে দেখে ঢুকে পড়লো ক্যাফেটাতে। যদিও হরেক রকম চিন্তা হানা দিয়ে আছে মস্তিষ্কে। কেউ দেখে ফেললে ত সমস্যা আছেই, সাথে সম্পূর্ণ অচেনা একটা পুরুষ মানুষেকে কীভাবে সব গুছিয়ে বলবে সেটার জন্যও চিন্তা হচ্ছে। নুহাসের সাথেই তাই একা বের হতো না ত্রয়ী। এজন্য ভার্সিটিতেই যত দেখাসাক্ষাৎ চলতো।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ক্যাফের ভিতরে পা দিলো ত্রয়ী। হলুদ রঙের বাতি জ্বলছে ক্যাফেটাতে। চারিপাশে আভিজাত্যের ছাপ। একটা গান বাজছে হিন্দি।
বলতে গেলে আজ ক্যাফেটা ফাঁকা। তেমন কেউ নেই। সোজাসুজি দুইটা টেবিলে দুই জোড়া কাপল আছে।
ত্রয়ী ইতস্তত ভঙ্গিতে কাঙ্ক্ষিত লোকটাকে খুঁজতে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো আশপাশ।
চোখ আটকালো বাম দিকের একদম কর্নারের একটা টেবিলে।(লেখিকা – Lucky Nova)
হাস্যোজ্জ্বল মুখের অধিকারী এক সুদর্শন পুরুষ। পরনে গাঢ় খয়রী রঙের শার্ট। যার হাতার প্রান্তভাগ আর কলার কালো। সাথে কালো রঙের জিন্স। ডানহাতের কালো ঘড়ির গ্লাস রোদের ঝলকানিতে চকচক করছে। মনোযোগের সাথে ফোনের ক্রিন স্ক্রোল করছে সে।
হ্যাঁ, এটাই সে। ত্রয়ী ছবি দেখেই এসেছে যাতে চিনতে পারে।
ত্রয়ী গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে।
ও এগিয়ে যেতে যেতেই ফিরে তাকালো নীল। ত্রয়ীকে দেখার সাথে সাথে মুখের হাসিটা প্রসারিত হয়ে গেল।
ফোনটা রেখে উঠে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল হাসির সাথে তাকিয়ে বলল,”Hi.”
প্রত্যুত্তরে ত্রয়ী হালকা হাসার চেষ্টা করলো।
“প্লিজ!” সামনে বসতে ইশারা করে বলল নীল।
ত্রয়ী বসলো। নীলও বসে নিজের দুহাত একত্রে ধরে টেবিলের উপর রাখলো।
ত্রয়ী নামানো দৃষ্টিতে টেবিলে চোখ বুলাতে লাগল। সরাসরি তাকাতে পারছে না। খুব অস্বস্তি হচ্ছে তার৷ শ্বাস আটকে আটকে আসছে। কীভাবে শুরু করবে বুঝতেই পারছে না।
“কী খাবা?”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো একপলক। খুবই সীমিত সময়ের জন্য। তারপর চোখ সরিয়ে মিনমিনে গলায় বলল, “কিছু না। কিছু খাব না।”
“শুধু শুধু বসে থাকতে দেবে না যে ওরা।” ঠোঁটে এলিয়ে হেসে টেবিলে রাখা ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে রিসিপশনের দিকে ইশারা করে বলল নীল।
ত্রয়ী বোকা বনে গেলো৷ তাই তো! এমনি তো বসতে দেবে না।
“আমি অবশ্য কফি অর্ডার করেই রেখেছি।” মৃদু হেসে বলল নীল।
সৌজন্যতার খাতিরে ত্রয়ী হাসার চেষ্টা করলো।
নীল পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো ত্রয়ীর দিকে।
হালকা হলুদ রঙের থ্রিপিসের সাথে সাজগোছহীন স্নিগ্ধ চেহারা। একটা বসন্ত বসন্ত ভাব আছে।
নীল কোমল হাসির সাথে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। খেয়াল করলো ত্রয়ী এদিক, ওদিক, সবদিক তাকাচ্ছে কিছু সরাসরি চোখের দিকে তাকাচ্ছে না।
নীল সুক্ষ্মভাবে হাসলো।(লেখিকা-লাকি নোভা)
ত্রয়ী কথা গোছাতে ব্যস্ত। কিন্তু অজানা দ্বিধাতে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। এমনকি লোকটার দিকে তাকাতেও পারছে না।
বেশ কয়েক মিনিট পরে নীল আঙুল ভাঁজ করে ঠকঠক করে শব্দ করলো টেবিলে।
ত্রয়ী চট করে চোখ তুললো।
“আমাকে সরাসরি দেখতে এসেছো? নাকি কিছু বলতেও?” মুচকি হেসে বলল নীল।
ত্রয়ীর দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে গেল। সময় নিয়ে আমতা আমতা করে বলল,”না। আসলে…।”
ঢোক গিলে কানের পাশে চুলগুলো গুজে নিলো ত্রয়ী।
সেই মুহূর্তেই এক ওয়েটার ট্রে তে করে দুটো কফির মগ নিয়ে এসে দাঁড়ালো।
“স্যার, আপনাদের কফি।”
নীল মাথা নাড়তেই সে মগ দুটো নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
নীল একটা মগ ত্রয়ীর কাছে ঠেলে দিয়ে অন্য মগটা ধরে চুমুক বসাতে বসাতে বলল,”হ্যাঁ বলো।”
ত্রয়ী জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,”আসলে কিছু বলতে এসেছি।”
নীল কফির মগটা নামিয়ে রেখে বলল, “হুম, শুনছি। বলো।”
ত্রয়ী ঢোক গিলে কোলের উপর দুইহাত একত্রে ধরে নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।”
নীল স্বাভাবিক ভাবেই ত্রয়ীর চোখের দিকে তাকালো।
“আসলে আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। সেও আমাকে বাসে। কিন্তু প্রেমের বিয়েতে আব্বুর একদমই মত নেই। আর আমিও বুঝিনি যে এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে। আমার বয়ফ্রেন্ড বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতো কিন্তু তার আগেই এসব হয়ে গেলো। ও নিজের বাসায় জানিয়েছে। তাই এই বিয়েটা ভেঙে গেলে ওর বাসা থেকেই প্রস্তাব নিয়ে আসবে।” কোনমতে বলে দম নিলো ত্রয়ী।
উওরের আশায় চেয়ে রইল উৎসুক ভাবে। যদিও স্থির দৃষ্টিতে তাকাতে পারছে না। দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
নীল শুনলো। তার মুখোভাব গম্ভীর কিন্তু স্বাভাবিক।
সে শান্ত ভঙ্গিতে পুনরায় কফির মগে চুমুক দিলো। কফির মগের দিকে তাকিয়ে উদাসীন একটা ভাবের সহিত বলল, “সো?!”
ত্রয়ী একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। পলক ফেললো বার দুই তিনেক।
“না মানে, আপনার পরিবার তো আমাকে পছন্দ করেছে। তারাই সব ঠিক করেছে। তাই যদি আপনি আপনার বাসায় বলে দেন যে আপনার আমাকে পছন্দ না। তাহলে আরকি এই বিয়েটা আটকে যেত।” ইনিয়েবিনিয়ে বলল ত্রয়ী।
“বাট আমার তো তোমাকে খুব পছন্দ।” স্বাভাবিক ভাবে বলেই চোখে চোখ রাখলো নীল।
চোখ বড়সড় হয়ে গেলো ত্রয়ীর। বোকা বনে গেলো সে পুরোই।
“ম..মানে?”
নীল কফির মগটা নামিয়ে টেবিলে রেখে তাকালো সে ত্রয়ীর দিকে। উদ্দেশ্যপূর্ণ হাসি দিয়ে বলল,”আমার পরিবার না, আমি পছন্দ করেছি তোমাকে। চারদিন আগে বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে প্রথম দেখেছিলাম তোমায়। তখন থেকেই আমার নজর পরে গেছে তোমার উপর। বুঝেছো?”
ত্রয়ী হতবুদ্ধি হয়ে গেল। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নীলের দিকে।
“বিয়েটা আমি তোমাকেই করছি। এন্ড ইট’স ফাইনাল।” শান্ত গলায় বলল সে।
ত্রয়ী ভারি চমকালো।গল্পের নাম:#কিছু_জোড়া_শালিকের_গল্প
পর্ব ৩: #intoxicating (🚩গল্প কপি নিষেধ🚩)
লেখিকা: #Lucky_Nova
“বিয়েটা আমি তোমাকেই করছি। এন্ড ইট’স ফাইনাল।” শান্ত গলায় বলল সে।
ত্রয়ী হকচকিয়ে তাকালো।
“আমি অন্য একজনকে..।”
“ভুলে যাও।” ত্রয়ীর কথার মাঝেই বলে উঠলো নীল। তার চোখের দৃষ্টি শীতল।
ত্রয়ী অবাক হয়ে তাকালো। ভিতরে ভিতরে ভয়ানক তোলপাড় চলছে। ও এসেছিলো লোকটা রাজি হবে ভেবে। কিন্তু সে-ই কিনা এসব বলছে!
এখন কী করবে ও!
দিশেহারা হয়ে পড়লো ত্রয়ী।
“আর কিছু?” প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল নীল।
ত্রয়ী হতবাক হয়ে তাকালো নীলের দিকে।
নীল কফির মগের দিকে ইশারা করে বলল,”কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
ত্রয়ীর গা জ্বলে গেল উক্ত কথাটা শুনে। কফি নিয়ে পড়ে আছে সে!
সত্যিই খুব অসহ্যকর একটা লোক। ত্রয়ীর ইচ্ছে করছে এই ছেলেটার মুখেই কফিটা ফিকে মারতে। কিন্তু সে অত সাহসী নয়। আর না অত বেয়াদব।
ত্রয়ীর আর বসতেই ইচ্ছে হচ্ছে না এই লোকটার সামনে। এখন অস্বস্তির জায়গায় লাগছে খুব রাগ।
নীল ত্রয়ীর থমথমে মুখটা দেখে বুঝতে পারছে সবই। তাই ত্রয়ীকে আরেকটু জ্বালিয়ে দিতে বলল,”কফি না খেলে অন্য কিছু অর্ডার করি!”
ত্রয়ী ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো নীলের দিকে।
“আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন?” দাঁতেদাঁত চিপলো ত্রয়ী।
নীল মৃদু হাসলো। মোলায়েম গলায় বলল, “রাগলে তোমাকে সুন্দর লাগে।”
একথায় ত্রয়ীর রাগ আরো বাড়লো।
নীল এবার সংকুচিত চোখে পাশের কাচের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,”নুহাস! মাত্র ছয় মাসের রিলেশন!”
ত্রয়ী চরমভাবে বিস্মিত হলো।
“এক বছর পিছে ঘুরেছে। রাইট?” বলেই সে একবার তাকালো ত্রয়ীর দিকে।
ত্রয়ী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো। এই লোক কী করে জানে এসব!(লেখিকা লাকি নোভা)
“আমি কী করে জানি?!” স্বগোতক্তি করে মুচকি হাসলো নীল। তারপর বলল,”সবই জানি। তুমি যা জানো না তাও জানি।”
“কবে থেকে ফলো করছেন আ…।”
“উহু। ফলো করা, পিছে ঘোরা এসব আমার কাজ না। তোমার বয়ফ্রেন্ডের কাজ।”
ভ্রুকুটি করে তাকালো ত্রয়ী। কটাক্ষ করে বলল, “আপনি সব জেনেও কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন?”
“আমার ইচ্ছা।” ভাবাবেগ শূন্য কণ্ঠে বলল নীল।
ত্রয়ীর মেজাজটাই বিঘড়ে গেলো। রাগী কটমট চাহনিতে চেয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নীল ওর চোখে চোখ রেখে তর্জনী আঙুলের ইশারায় বলল, “তোমার ঠোঁটের নিচের তিলটা অনেক সুন্দর। কিস করার জন্য পারফেক্ট একদম।”
ধক করে উঠলো ত্রয়ীর বুক। এলোমেলো হয়ে গেলো সাজানো কথাগুলো। সাথে অগোছালো হয়ে গেলো চোখের দৃষ্টিও। অস্বস্তি, লজ্জা সব একজোট হয়ে ঘিরে ধরেলো ত্রয়ীকে।
নীল পুনরায় মৃদু হাসলো। এটাই চেয়েছিলো ও।
“খেয়াল করেছো তুমি?”
ত্রয়ী আড়ষ্ট হয়ে গেলো। রাগে, লজ্জায় শরীর তিরতির করে কাঁপছে। এখানে ওর পক্ষে আর বসা সম্ভব নয়। এমনকি এই লোকের সামনেও আর আসা সম্ভব নয়। এতো ফালতু!
সবকিছু জেনেও কীভাবে বিয়ে করতে চাইতে পারে! ভেবেই অবাক হয় ত্রয়ী।
নীল ফোন ক্যামেরা অন করে ত্রয়ীর ফটো ক্লিক নিলো পর পর কয়েকটা।
ক্লিক করার আওয়াজে চমকে চোখ তুললো ত্রয়ী।
ততক্ষণে ক্লিক করা সারা।
“আপনি, আপনি আমার ছবি কেনো তুললেন?” রাগ দেখানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো ত্রয়ী।
“প্রমাণ আছে কোনো?” ভ্রু উঁচিয়ে বলল নীল।
হা হয়ে গেলো ত্রয়ী।
“মাত্রই আপনি তুললেন। মিথ্যা কেনো বলছেন? ডিলিট করেন এখনি।”
নীল লক বাটন চেপে দিয়ে বলল, “করবো না।”
নীলের ত্যাড়া কথায় থতমত খেয়ে গেলো ত্রয়ী।
নীল মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো ওর দিকে চেয়ে।
ত্রয়ী ঢোক গিললো। এখানে আর থাকা যাবে না। এটুকু সময়েই ত্রয়ী বুঝেছে যে এই লোক বিপদজনক। আর চরম অভদ্রও। যা করার অন্যভাবে করতে হবে।
ত্রয়ী উঠে দাঁড়ালো দ্রুত। দেরি না করেই দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলো ক্যাফে থেকে।
নীলও কালবিলম্ব না করে টেবিলে পাঁচশো টাকার নোট রেখে বেরিয়ে এলো ক্যাফে থেকে।(লেখিকা লাকি নোভা)
মাঝ সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়ে গেলো ত্রয়ীর সামনে। আচমকা সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ভড়কে গেলো ত্রয়ী। নীলের চোখমুখে রহস্যময় হাসি দেখে বুকে দামামা বাজতে লাগলো। নিজেকে সামলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইতেই পুনরায় পথ আটকে দাঁড়িয়ে গেলো সে।
ত্রয়ীর চোখ মুখে চাপা আতঙ্ক ছেপে উঠলো। পুনরায় পাশ কাটিয়ে যেতে চাইতেই আবার একই কাজ করলো নীল। তার খুব ভালো লাগছে এসব করতে।
এদিকে মহাবিপদে পড়ে গেলো ত্রয়ী। প্রথম দেখাতেই মানুষ এমন অসভ্যতা কীভাবে করতে পারে।
ত্রয়ী আতঙ্ক ভাবটা লুকাতে চেষ্টা করে বলল, “সরে যান। পথ কেনো আটকাচ্ছেন?”
নীল ত্রয়ীর এক সিঁড়ি নিচে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো ছিলো। হুট করে কিছু না বলে ত্রয়ীর সিঁড়িতে এক পা রাখতেই ত্রয়ী ধড়ফড়িয়ে পিছিয়ে যেতে চাইলো। ফলে পা ফসকালো। ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে ব্যালেন্স করাতে গিয়েই নীলের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো। দুইহাতে চেপে ধরলো নীলের কাঁধের কাছের শার্ট। নীলও ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের অবস্থানে নামিয়ে নিয়ে এলো।
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটে গেলো এসব।
ত্রয়ী আস্তে ধীরে চোখ খুললো। আর খুলেই নিজেকে একটা পুরুষের এতোটা কাছে আবিষ্কার করে আঁতকে উঠলো। দেরি না করে সরে গেলো ছিটকে। মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো মুহুর্তেই। শরীরও ঘামতে শুরু করে দিলো। ও ভুলের তাকালো না নীলের দিকে।
নীল ওর বিবর্ণ মুখ দেখে হেসে ফেললো। দুই পা এগিয়ে আসতেই ত্রয়ী ধড়ফড়িয়ে পিছিয়ে গেলো। বুকের মধ্যে দ্রিমদ্রিম করতে লাগলো।
খুব আফসোস হচ্ছে এখানে আসার জন্য।
নীল পকেটে হাত গুজে ত্রয়ীর দিকে সামান্য ঝুঁকতেই ত্রয়ী আতঙ্কিত হয়ে তাকালো একবার।
নীল মুচকি হেসে ফিসফিসিয়ে বলল, “Your smell is intoxicating.”
চমকে উঠলো ত্রয়ী। তাকালো বড়বড় চোখ করে।
নীল দুষ্টু হাসি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
ত্রয়ী ফাঁকা ঢোক গিললো।
নীল কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ফোন বেজে উঠলো ওর। নীল ফোনের দিকে তাকালো। ইংলিশ অক্ষরে লেখা ‘ইভান’।
নীল ফোনের দিকে মনোযোগ দিতেই আর এক মুহূর্তে সময় নষ্ট করলো না ত্রয়ী। অতিসত্বর নেমে পড়লো সিঁড়ি দিয়ে।
নীল ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো নিঃশব্দে।
তারপর ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,”আসছি।”
🌸
“তারমানে তুই সারারাত ওই ছেলের বাসাতেই ছিলি?”
“হ্যাঁ, এটাই তো। কীভাবে গেলাম আমি ওখানে? তোরা কেউ আমাকে আটকালি না কেন?” আহাজারি করে বলল ক্যান্ডেল।
“আটকেছিলাম। তুই শুনলে তো! ধমকে থামিয়ে দিলি আমাদের। আর আমরা মনে করেছি তুই পিয়াসের বাসায় ওকে পেদাতে যাচ্ছিস। ওই ছেলের বাসায় কী করে গেলি!”
“জানলে তো আর তোকে জিজ্ঞেস করতাম না।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল ক্যান্ডেল।
দিয়া দোষী দোষী চোখে তাকিয়ে বলল, “সরি রে।”
ক্যান্ডেল মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে সামনে তাকিয়ে রইলো। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো সবকিছু। কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না।
“ছেলেটা কিছু করে তো নি! না?” আমতাআমতা করে প্রশ্ন করলো দিয়া।
ওই ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই মেজাজ চড়ে গেলো ক্যান্ডেলের।
ঝাঁঝ দেখানো গলায় বলল,”কিছু আবার করবে না? আস্ত কাপুরুষ আর নির্লজ্জ। কথাবার্তা আর চালচলন যদি দেখতি তুই একবার!”
বলতে বলতে ক্যান্ডেলের গায়ে জ্বলন ধরে গেলো।
“ফ্ল্যাটে ঢুকলাম আর ও দরজা বন্ধ করে দিলো! কেনো! ভিতরে কেনো নিয়ে গেলো? ভালো ছেলে হলে ভিতরে কেনো নিয়ে যাবে? সকালে উঠে আমি দেখি আমার…”
“তোর?”
দাঁত কিড়মিড়িয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করলো ক্যান্ডেল।
“ঐ ছেলেটাকে খুন করবো আমি। এতোকিছুর পর ওর বড়বড় কথাগুলো যদি শুনতি!”
ফোঁসফাঁস করতে লাগলো ক্যান্ডেল।
দিয়া মুখ চুপসিয়ে চুপ করে রইলো।
“প্রতিশোধ তো নেবোই নেবো। যেভাবেই হোক নেবো।”
“কীভাবে নিবি?”
“ওর বাসায় আগুন ধরাই দিবো।” বলতে বলতে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো ক্যান্ডেল।
দিয়া আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না। বলল, “চল এখন। বের হই।”
ক্যান্ডেল রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে বেরিয়ে এলো।
পার্কিং-এ গাড়ি নিতে আসতেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে চোখে পড়লো সেই কাপুরুষকে। শরীরটা জ্বলে উঠলো রাগে। থেমে দাঁড়িয়ে কটমট চাহনিতে চেয়ে রইলো সে তার দিকে। (লেখিকা লাকি নোভা)
“দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো?” দিয়া বিরক্ত হয়ে বলল।
“ওইযে ওইটা।”
ক্যান্ডেলের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো দিয়া।
“কে? চিনিস?”
“চিনবো না? ওর ঘাড় মটকাবো আমি।” হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ক্যান্ডেল।
“এটাই সেই ছেলে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো দিয়া।
দিয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ক্যান্ডেল গটগট এগিয়ে গেলো ইভানের দিকে।
ইভান গাড়ির হুডের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করছিলো। কেউ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আন্দাজ করে তাকালো মুখ তুলে।
কটা কটা চাহনিতে চেয়ে থাকা ক্যান্ডেলকে একপলক দেখে আবার মনোযোগ দিলো ফোনের স্ক্রিনে। এমন একটা ভাব যেন সে দেখেই নি তাকে। সে অদৃশ্য।
এক কথায় ইভান ইগনোর করলো ক্যান্ডেলকে।
যা দেখে রাগেরটা অতিরিক্ত মাত্রায় বাড়লো ক্যান্ডেলের।
ইভানের ফোনটা এক থাবায় কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেললো রাস্তাতে।
চোখের পলকে ফোনের কাচ ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।
ইভান রাগটা চাপা দিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে ফোনটার দিকে তাকিয়ে তারপর দাঁড়ালো সোজা হয়ে। পকেটে হাত গুজে মুখোমুখি ঘুরলো ক্যান্ডেলের দিকে।
“ফলো করছো আমাকে?” জ্বালাময়ী হাসি দিয়ে বলল ক্যান্ডেল।
অবজ্ঞাসূচক ভাবে মৃদু হাসলো ইভান। বলল, “একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি।”
“আমি ফলো করবো তোমার মতো এক অসভ্যকে? কাপুরুষ কোথাকার!” খর্খরে গলায় বলল ক্যান্ডেল।
কথাগুলো এবারো গায়ে লাগলো ইভানের। রাগে দপদপ করে উঠলো শিরা-উপশিরা। এই মেয়েকে উচিত শিক্ষা না দিলেই নয়।
ইভান শীতল চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, “বলা তো যায় না! আবার আমার বিছানায় আসতে চাইতে পারো।”
চরম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো ক্যান্ডেল। রাগে রি রি করে উঠলো ওর পুরো শরীর। কড়া কিছু কথা শুনাতে যাওয়ার আগেই ইভান হাসিটা ঠোঁটের কোণে ধরে রেখেই বলল, “একবারে খুশি হও নি বললেই তো হয়। ফ্রি থাকলে চলো। খুশি করে দিচ্ছি।”
বলেই নিজের গাড়ির দিকে ইশারা করলো ইভান।
(চলবে…)
লেখিকা – লাকি নোভা
(