কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব -০৪+৫

গল্পের নাম: #কিছু_জোড়া_শালিকের_গল্প
পর্ব ৪: #অদ্ভুত_মেয়েটা
লেখিকা: #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

“বলা তো যায় না! আবার আমার বিছানায় আসতে চাইতে পারো।”
চরম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো ক্যান্ডেল। কড়া কিছু কথা শুনাতে যাওয়ার আগেই ইভান হাসিটা ঠোঁটের কোণে ধরে রেখে বলল, “একবারে খুশি হও নি বললেই তো হয়। ফ্রি থাকলে চলো। খুশি করে দিচ্ছি।”
বলেই নিজের গাড়ির দিকে ইশারা করলো ইভান।
চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের।
“How dare YOU!” বলেই থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত তুলতেই হাতটা ধরে নিলো ইভান। তেতে উঠলো ক্যান্ডেল। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই হাত ঘুরিয়ে ক্যান্ডেলের পিঠটা ইভান নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দুইহাত মুঠোয় ধরে নিলো।
চমকে গেলো ক্যান্ডেল। চেষ্টা করেও নড়তে পারলো না।
ইভান পিছন থেকে ওর কানে কানে বলল,”টিপস দেই তোমাকে একটা। ভবিষ্যতে আর খেও না এসব। আর খেলেও ভুল করে কোনো ছেলের কাছে যেও না। নাহলে খুব পস্তাতে হবে।”
ক্যান্ডেল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই গেলো। না পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে ক্ষোভের সাথে বলল, “তোমার মতো মানুষের থেকে টিপসের দরকার নেই আমার। চরিত্রহীন। সুযোগ সন্ধানী।”
“তুমি সুযোগ দিলো তো নিতেই হবে। মনে নেই কীভাবে বুকের উপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে? বাইট করে সিডিউস করতে চেয়েছিলে?”
রাগে লজ্জায় কান লাল হয়ে গেলো ক্যান্ডেলের।
ইভান ছেড়ে দিলো ওকে।
কটমট চাহনিতে ঘুরে তাকালো ক্যান্ডেল।
“যথেষ্ট তামাশা হয়েছে। এখন যাও।” বলেই ইভান গাড়ির দরজা খুলতে উদ্যত হলো। তখনি ক্যান্ডেল ওর শার্টের কলার ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরালো। আর ইভান কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর কলার দুহাতে ধরে টান দিতেই ছিড়ে গেলো শার্টের উপরের তিন চারটা বোতাম।
ইভান নিজের শার্টের দিকে থেকে নজর তুলে ভ্রুকুচকে তাকালো ক্যান্ডেলের দিকে।
“জানোয়ার।” বলেই গটগট করে হেঁটে সেখান থেকে চলে গেলো ক্যান্ডেল। আর দাঁড়ালো না।
গম্ভীর মুখে ক্যান্ডেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর আবার নিজের শার্টের তাকালো ইভান।

🌻
“Good afternoon sir.” প্রয়াসকে ঢুকতে দেখে হাসিমুখে অভিবাদন জানিয়ে বলল কফি শপে কর্মরত মেয়েটি।
প্রয়াস গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে বলল, “One Iced black coffee please.”
“One minute sir.”
মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো প্রয়াস। তবে আচমকা বাহির থেকে আসা কর্কশ চিৎকারে চোখ তুলে তাকাতে হলো।
শপে থাকা বাকি ক্রেতারাও বুঝতে চেষ্টা করলো।
আওয়াজটা বাইরে থেকে আসছে৷ হয়তো পাশের শপ থেকে। খুব সম্ভবত শপের মালিক চিৎকার চেঁচামেচি করছে।
কয়েকজন ক্রেতা কৌতূহল মেটাতে শপ থেকে বের হলো বিষয়টা দেখার জন্য।
লোকটা উঁচু আওয়াজে বলছে, “বাটপার কোথাকার! খাওয়ার সময় মনে ছিলো না টাকা দিতে হবে?”

প্রয়াস পুনরায় ফোনের দিকে নজরবন্দি করলো।
এক লোক বাহিরে থেকে ঢুকতে ঢুকতে বলল,”একটা মেয়ে পাশের দোকান থেকে কী যেন খেয়েছে। টাকা দিচ্ছে না। নেই মনে হয়। বেচারা।”
প্রয়াসের কফি ততক্ষণে প্যাকেট হয়ে গেছে। ঢাকনাসহ প্লাস্টিকের কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে মেয়েটা বলল,”এইযে স্যার।”
প্রয়াস ফোন ঢুকিয়ে বিল মিটালো। কফির কাপটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো শপ থেকে।
লোকটার চড়া গলা আবার কানে এলো। গালিগালাজ করে কথা বলছে।
“টাকা না দিয়ে এক পাও নড়তে পারবি না। মেয়ে মানুষ বলে ছেড়ে দেবো না একদম।”

প্রয়াস অন্যদিকে পা বাড়াতে গিয়েও থেমে দাঁড়ালো। তারপর কী মনে করে এগিয়ে গেলো পাশের দোকানটার দিকে।
ছোটোখাটো ভিড় জমে গেছে। কেউ মিটমিটিয়ে হাসছে। কেউ ফিসফিস করছে। কেউবা হতাশ হয়ে তাকিয়ে আছে। সোজা কথায়, সাহায্য না করে তামাশা দেখছে সবাই।
লম্বা হওয়ায় দেখতে বেগ পেতে হলো না প্রয়াসের।
মেয়েটা মধ্যেখানেই জড়থবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। বয়স খুব বেশি বলে মনে হয় না। সতেরো আঠারো। বা তারও কম। যদিও পরনের থ্রি-পিসটা দেখে রাস্তার মেয়ে মনে হচ্ছে না। তাও বলা যায় না।

প্রয়াস সাধারণত ঝামেলায় জড়াতে পছন্দ করে না। আর না পছন্দ করে কারো বিষয়ে নাক গলাতে।সবসময় এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করে। তবে আজ ব্যতিক্রম ঘটলো। প্রয়াস দুই তিনজন মানুষকে সাইড কেটে ঢুকে গেলো ভিতরে।
ভদ্র সভ্য পোশাক পরিহিত কাউকে এগিয়ে আসতে দেখে দোকনদার একটু নিভলো। গম্ভীর মুখটা দেখে একটু অপ্রস্তুতও হয়ে গেলো।
প্রয়াস একবার তাকালো পাশের মেয়েটার দিকে। মাথা একদম নুয়ে আছে মেয়েটা। গলার সাথে থুতনিটা ঠেকে গেছে একদম। ওড়নাটা হাতে চেপে ধরে কেঁপেই যাচ্ছে মেয়েটা।
প্রয়াস দোকানদারের দিকে তাকিয়ে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলো, “কত টাকা?”
লোকটা হয়তো বুঝলো না।
“অ্যাঁ?”
প্রয়াস একবার মেয়েটার দিকে ইশারা করে বলল, “কত টাকার খাবার খেয়েছে?”
“ওহ, ওহ! আপনার চেনা লোক?” হাসার চেষ্টার আদিক্ষেতা শুরু করলো দোকানদার।
“বেশি কথা পছন্দ না আমার।” গম্ভীর গলার আঁটসাঁট কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো লোকটা।
ইনিয়েবিনিয়ে বলল,”পঞ্চাশ টাকা।”
মুখটা আরো শক্তপোক্ত হয়ে গেলো প্রয়াসের। মাত্র পঞ্চাশ টাকার জন্য এত কাহিনী!
যদিও পঞ্চাশ টাকা সাধারণ মানুষদের কাছে অনেক। তাই বলে এত বাজে গালাগাল করাটাও কি মানায়?
“এটা ধরুন।” প্রয়াস কাপটা লোকটার দিকে এগিয়ে দিলো।
বোকাসোকা চাহনিতে চেয়ে আগেভাগে ধরলো লোকটা। ভীত চাহনিতে লোকটাকে পুরো চাকরের মতো লাগছে।
প্রয়াস মানিব্যাগ বের করে সদ্য ভাংতি হওয়া টাকা থেকে একশো টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলো।
লোকটা নিলো।
প্রয়াস কফির কাপটা নিতে নিতে ইশারা করলো কিছু। লোকটা বুঝে মাথা নেড়ে দ্রুত ভিতরে গিয়ে পঞ্চাশ টাকার নোট নিয়ে ফেরত এলো।
এবার নিজে থেকেই কফির কাপটা নিতে হাত বাড়িয়ে দিলো। প্রয়াস দিয়েও দিলো। টাকাটা মানিব্যাগ ভরতে ভরতে একবার তাকালো পাশের মেয়েটার দিকে। মেয়েটা এতক্ষণে মাথা তুলেছে। নিষ্পাপ মুখভঙ্গিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে প্রয়াসের দিকে।
প্রয়াস কী মনে করে মানিব্যাগ থেকে হাজার টাকার একটা নোট বের করে গুজে দিলো মেয়েটার হাতে।
মেয়েটা প্রয়াসের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালো। নির্লিপ্ত চাহনিতে তাকিয়ে রইলো টাকার নোটটার দিকে।
দোকানদার লোকটা বেশ অবাক হলো।
মেকি হাসি দিয়ে প্রয়াসকে বলল,”আপনে চেনেন না? এতগুলো টাকা দিয়া দিলেন?”
মেয়েটা আবার চোখ তুলে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
প্রয়াস লোকটাকে কোনো উত্তর দিলো না। এমনকি তার দিকে তাকালোও না। নিজের মতো মানিব্যাগটা পকেটে ঢুকিয়ে কফিটা নিয়ে উলটোদিকে হাঁটা শুরু করে দিলো।
হালকা অপমানিত বোধ হলো লোকটার।
খুক খুক করে গলা ঝেড়ে মেয়েটার দিকে জহুরি নজরে একবার দেখে নিজের দোকানে ঢুকে গেলো সে।
ঘাড় ঘুরিয়ে প্রয়াসের দিকে দেখতে দেখতে চোখমুখে একটু পুলকিত ভাব চলে এলো মেয়েটার। একটুও দেরি না করে পিছু নিলো সে প্রয়াসের।

কিছুদূর এগিয়ে প্রয়াস আন্দাজ করলো কেউ পিছু করছে তাকে। সন্দিহান চোখে একপলক তাকালো ঘাড় ঘুরিয়ে। হালকা অবাক হলো।
সেই মেয়েটা। দুই কদম দূরে দাঁড়িয়ে পড়েছে। চোখে মুখে উজ্জ্বল ভাব। ঠোঁটে মিইয়ে যাওয়া হাসি। কৃতজ্ঞতা নাকি আরো কিছু চাওয়ার সেটা আন্দাজ করতে পারছে না প্রয়াস।
আন্দাজ করার চেষ্টাও করলো না। পুনরায় হাঁটা শুরু করলো। মেয়েটাও পিছু নিলো।
কয়েক কদম এগিয়ে একটু বিরক্তি নিয়ে তাকালো প্রয়াস।(লেখিকা-লাকি নোভা)
“ফলো কেনো করছো আমাকে? আরো টাকা লাগবে?”
মেয়েটা আদৌ কিছু বুঝলো কিনা কে জানে! আগের মতোই উজ্জ্বল চাহনিতে চেয়ে রইলো।
প্রয়াস মানিব্যাগ বের করে আরেকটা হাজার টাকার নোট এগিয়ে দিলো।
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটা।
নিতে দেরি করছে বলে প্রয়াসই হাতে গুজে দিলো টাকাটা। ভ্রুকুটি করে তাকালো মেয়েটা।
প্রয়াসকে আবার চলে যেতে দেখে পুনরায় পিছনে পিছনে হাঁটা শুরু করলো।
প্রয়াস এবার চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে বলল,”ফলো কেনো করছো?”
মেয়েটা একটু ঘাবড়ালো।
“ফলো করবা না।” তর্জনী তুলে আদেশের ভঙ্গিতে বলল প্রয়াস।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! মেয়েটা পিছু ছাড়লো না।
প্রয়াস আবার থেমে দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো। গম্ভীর মুখে ঘুরে তাকালো মেয়েটার দিকে।
মেয়েটাও দুই কদম পিছনে দাঁড়িয়ে গেছে। চোখমুখে জৌলুস ভাবটা স্পষ্ট।
প্রয়াস কিছু একটা চিন্তা করে হাতের কফির কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা চাও?”
প্রয়াসের হাতের দিকে তাকালো মেয়েটা। ঠান্ডায় ঘেমে যাওয়া কফির কাপটা কালো রঙের ঠান্ডা পানীয় দিয়ে ভরা। এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে সে নিলো কাপটা। নিয়েই চুমুক বসালো। হয়তো তৃষ্ণা পেয়েছিলো খুব।
কিন্তু এক চুমুক দিয়ে চোখ মুখ কুচকে ফেললো। অর্থাৎ খুব তিতা।
প্রয়াস হাত উলটে ঘড়ি দেখলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রয়াস হেঁটে এগিয়ে গেলো গাড়ির কাছে। মেয়েটাও এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রয়াস একপলক তাকিয়ে গাড়িতে উঠলো।
প্রয়াস গাড়িতে উঠতেই মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে অস্থির হয়ে গাড়ির কাচে হাত দিয়ে আলতো করে বাড়ি দিতে লাগলো।
প্রয়াস অধৈর্য হয়ে তাকালো। মেয়েটা এতো জ্বালাবে জানলে ও সাহায্যই করতো না।
মেয়েটাকে অনবরত কাচে বাড়ি দিতে দেখে বাধ্য হয়ে কাচ নামালো প্রয়াস। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কী সমস্যা তোমার? সবই তো দিলাম।”
মেয়েটা কিছু বললো না। কিন্তু চোখ মুখ দেখে বোঝা গেলো সে খুব উতলা হয়ে পড়েছে।
প্রয়াস বিরক্ত হয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে মানিব্যাগটা বের করলো। ক্রেডিট কার্ড গুলো বাদে মানিব্যাগে থাকা সব টাকা বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,”নেও আর দয়া করে পিছু ছাড়ো।”
মেয়েটা ভ্রু কুচকে তাকালো।
প্রয়াস ওর হাতে টাকাগুলো ধরিয়ে দিয়ে কাচ তুলে দিলো। হকচকিয়ে গেলো মেয়েটা। তবে এবার কাচে আঘাত করার আগেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো প্রয়াস। সামনে এগিয়ে গেলো গাড়িটা। ড্রাইভ করতে করতে একবার সাইড মিররে তাকালো প্রয়াস। মেয়েটা ওর গাড়ির দিকে ম্লান মুখে তাকিয়ে ওখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
“Whatever.” বিড়বিড়িয়ে বলে সামনের দিকে তাকালো প্রয়াস। লেখিকা: লাকি নোভা

🌸
“মা তুমি?” দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেল ইভান।
থমথমে মুখে সংকুচিত চোখে তাকিয়ে ভিতরে ঢুকলেন ইশারা।
হাত ব্যাগটা ডায়নিংয়ের একটা চেয়ারে রেখে তাকালেন ছেলের দিকে।
“কোন মেয়ে নাকি ছিলো তোর সাথে গতরাতে?”
ইশারার কথায় ইভান হতভম্ব হয়ে গেলো। বৌদিকে মানা করার পরও ঠিকই বলে দিয়েছে! এটার কোনো মানে হয়!
“সত্যি তারমানে?” চোখ রাঙালেন ইশারা।
“যেমন ভাবছো তেমন নয়।”
“তাহলে কেমন? কতোদিনের সম্পর্ক? হ্যাঁ?” রাগ চটা গলায় বললেন ইশারা।
“কোনো সম্পর্ক নেই। ভুল করে চলে এসেছিলো এখানে।”
“রাতেও ভুল করে থেকে গিয়েছিলো?” মারমুখো ভঙ্গিতে প্রশ্ন ছুড়লেন ইশারা।

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ইভান। এই কথার কী উত্তর দেবে!
“এই শিখিয়েছি তোকে?”
“বিষয়টা তেমন না। কী করলে বিশ্বাস করবা তুমি?” ভ্রু কুচকে আক্ষেপের স্বরে বলল ইভান।
“নাম কী ওই মেয়ের? কোথায় থাকে?” জহুরি চোখে তাকিয়ে বললেন ইশারা।
ইভান বুঝলো এখন শত বলেও লাভ নেই। তার মা ধরেই নিয়েছে কিছু আছে। এখন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নেমে এসে বললে তবেই সে বিশ্বাস করবে।
“কী হলো? বল।”
ইভান কথা বাড়াতে চাইলো না। সবে বাসায় ফিরে এসব বিষয়ে তর্ক করতে ভালো লাগছে না। তাই হাল ছেড়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো ইভান। ইশারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন ইশারা,”তুই আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করিস! এতো বেড়েছিস?”
আরো অনেক কিছু চেঁচামেচি করে চেয়ারে বসে রাগে ফুলতে লাগলেন ইশারা। থেকে থেকে বকবকানি চালিয়ে গেলেন।(লেখিকা- লাকি নোভা)

ইভান নতুন ফোনে সিম ভরলো। ফোন চালু করতেই মেসেজ ঢুকলো কয়েকটা। জয়িতার নাম্বার থেকে মেসেজ।
সন্দিহান হয়ে ইভান ওপেন করলো মেসেজটা।
“ঠাকুরপো, গলার কাছের লাল দাগটা ভালো মতো লুকাতে পারো নি। দেখে ফেলেছি। আর অনেক কিছু বুঝেও গেছি। সম্পূর্ণ কাহিনী বলতে বলেছিলাম তোমাকে। কিন্তু তুমি তাও লুকিয়েছ। কতটুকু সত্যি বলেছ কে জানে! সন্দেহজনক ব্যাপার। তাই মাকে বলে দিয়েছি আমি। বিয়ের আগে এসব ঠিক না। আশা করি জলদিই ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবা। নাহলে খারাপ হবে। পাপ পাপ।”
ইভান চরম বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।

🌻
মিটিং শেষ করে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো প্রয়াসের। একই রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে অকারণেই একবার তাকালো সেই দোকানের দিকে। তবে চোখ ঘুরিয়ে নিতে না নিতেই চোখে পড়লো সেই মেয়েটাকে। বেশ অবাক হলো প্রয়াস। মেয়েটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। একদম সেখানেই যেখানে ওকে ছেড়ে গিয়েছিলো।
অবাক ভাবটা কাটিয়ে খানিক দূর গিয়ে ব্রেক কষলো প্রয়াস। গাড়ির কাচ নামিয়ে সরু চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মেয়েটার দিকে। মলিন মুখটা নুয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
প্রয়াস আশেপাশে তাকালো।
যদিও এখনো দোকানপাট খোলা বলে আশপাশ আলোকিত কিন্তু রাত বাড়লে তো জায়গাটা নিরাপদ হবে না।
প্রয়াস একবার ভাবলো, মেয়েটা তো রাস্তারই। আরেকবার ভাবলো রাস্তার নয়। হয়তো পথ হারিয়েছে। কিন্তু পথ হারালেও কী আর রাস্তার মেয়ে হলেও বা কী?
এমনিই একবার সাহায্য করায় মেয়েটা পিছু ছাড়ছিলো না। আবার সাহায্য করলে আরো পেয়ে বসবে। তাছাড়া ওকে কেনো সাহয্য করবে প্রয়াস! দোটানায় পড়ে গেলো প্রয়াস।
ভাবতে ভাবতেই দশ মিনিট অতিবাহিত হলো।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো মাথা না ঘামানোর।
স্টার্ট দিলো গাড়ি। কিছুদূর এগিয়ে যেতে না যেতেই ব্রেক কষলো পুনরায়। গাড়ি ঘুরালো চট করে। ফিরে এলো সেই জায়গায়।
গাড়িটা সামনে এসে থামতেই চোখ তুলে তাকালো মেয়েটা। প্রয়াসকে বেড়িয়ে আসতে দেখে চোখমুখ খুশিতে ছেয়ে গেলো তার। যেন সে জানতো প্রয়াস আসবে। আর তার আসারই অপেক্ষায় ছিলো সে।
প্রয়াস ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে প্রশ্ন করলো, “বাসা কোথায় তোমার?”
উওর না দিয়ে একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা।
এতে ভ্রু আরেকটু কুচকে ফেললো প্রয়াস। এক পা এগিয়ে এসে বলল, “কী জিজ্ঞেস করছি আমি? কোথায় থাকো তুমি? আর রাস্তায় এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? হারিয়ে গেছ?”
মেয়েটার হাসিটা একটু সীমিত হলো। তাও উওর না দিয়ে তাকিয়ে রইল। দেখে মনে হচ্ছে কথাটা শুনেছে। এমনকি বুঝেছেও। তাও উওর দিচ্ছে না বলে ধৈর্য হারাচ্ছে প্রয়াস।
“অদ্ভুত!” স্বগতোক্তি করে উঠলো প্রয়াস।
ঘুরে চলে যেতে উদ্যত হতেই হুড়মুড় করে পা বাড়ালো মেয়েটিও। তবে পা বাড়াতে না বাড়াতেই হুমড়ি খেয়ে পড়লো। হাত দিয়ে ঠেকালো। তবে হাত ছিলে গেলো। এতো সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণেই পা ধরে গেছে।
ঘুরে তাকালো প্রয়াস।
পড়ে মনে হয় ব্যথা পেয়েছে মেয়েটা। চোখমুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
তবে একা একাই উঠে দাঁড়ালো সে। তারপর প্রয়াসের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।

সূঁচালো দৃষ্টিতে তাকালো প্রয়াস।
মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেনো? মাথায় কি সমস্যা নাকি?
প্রয়াস জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে তাকালো আশেপাশে। ফার্মেসী আছে পাশেই একটা।
প্রয়াস এগিয়ে গেলো সেদিকে।
মেয়েটাও প্রয়াসের পিছু পিছু ফার্মেসীতে ঢুকলো।
তুলা আর এন্টিসেপটিক ক্রিম কিনে প্রয়াস ঠেলে এগিয়ে দিলো মেয়েটার দিকে।
মেয়েটা তাকালো টেবিলের দিকে।
“নেও আর লাগাও।”
মেয়েটা কিঞ্চিৎ ঠোঁট উলটে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
যা বোঝার বুঝে গেলো প্রয়াস। মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে এন্টিসেপটিক ক্রিম হাতে নিলো।
ইশারায় হাতটা এগিয়ে দিতে বলল মেয়েটাকে।
মেয়েটা এগিয়েও দিলো।
প্রয়াস হাতে ক্রিমটা লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,”তুমি কোথায় থাকো?”
প্রশ্নটা করে একপলক চোখ তুলে তাকালো প্রয়াস।
মেয়েটা আগের মতোই উওর দিলো না। তার মনোযোগ নিজের হাতের দিকে।
প্রয়াস তূরী বাজালো ওর মুখের সামনে। একটু চমকালো মেয়েটা।
“কি জিজ্ঞেস করছি শোনো নি? মনে তো হয় কানে শোনো। তাহলে উত্তর দেও না কেনো?” কপাল কুচকে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা প্রয়াসের কথা শুনে উত্তর না দিয়ে কিছু চিন্তা করলো। তারপর হাতের ইশারা বুঝালো ‘কলম’।
অবাক হলো প্রয়াস।
“তুমি কী কথা বলতে পারো না?”
মেয়েটা আগের ভঙ্গিতে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। অর্থাৎ সে পারে না।
আর না পারার কারণে তার আফসোস আছে বলেও মনে হয় না।

একটা নোটপ্যাড আর কলমও নিলো প্রয়াস। কিন্তু সবকিছুর জন্য টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে দেখলো মানিব্যাগ ফাঁকা। কারণ কয়েকঘণ্টা আগেই সব টাকা এই মেয়েটাকে দিয়ে দিয়েছিল।
‘তিক’ করে বিরক্তসূচক শব্দ বের করলো প্রয়াস। তাকালো মেয়েটার দিকে।
সে হাসিমুখে নোটপ্যাডটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
খুক খুক করে গলা ঝাড়লো প্রয়াস। তারপর বলল, “তোমাকে টাকা দিয়েছিলাম না? কোথায় সেই টাকা?”
মেয়েটা চোখ তুলে একপলক তাকালো। তারপর নোটপ্যাডের প্রথম পৃষ্ঠাটা বের করে লিখতে শুরু করলো কিছু।
প্রয়াস তাকালো।
‘দিয়ে দিয়েছি’ লেখাটা পরে হতবাক হয়ে গেলো প্রয়াস।
“দিয়ে দিয়েছো মানে? অতগুলো টাকা কাকে দিয়েছো?”
মেয়েটা প্রশ্ন শুনে আবার লিখলো।
“একজন চেয়েছিলো? চাইলো আর দিয়ে দিলা?” দৃশ্যতই বিরক্ত প্রয়াস।
মেয়েটা আরো কিছু লিখতে শুরু করতেই প্রয়াস গমগমে গলায় বলে উঠলো, “আর বর্ণনা দিতে হবে না।”
বাধ্য মেয়ের মতো নোটপ্যাড বন্ধ করলো মেয়েটা।
এখন টাকা আসবে কোথা থেকে সেটাই ভাবতে লাগলো প্রয়াস। এই দোকানে কার্ড পেমেন্ট করা যাবে মনে হয় না। সিস্টেম নেই।(লেখিকা – লাকি নোভা)
“আর কিছু লাগবে স্যার?” দোকানদার প্রশ্ন করলো।
“না। আসলে…।” প্রচুর দ্বিধাবোধ করতে লাগলো প্রয়াস। টাকা নেই শুনলে কী হবে কে জানে?
দোকানদার বিনয়ী চোখে তাকিয়ে আছে।
প্রয়াস কিছু একটা ভেবে নিজের মানিব্যাগ দেখিয়ে বলল, “আসলে কার্ড আছে কিন্তু ক্যাশ নেই।”
“সরি স্যার। আমরা কার্ড পেমেন্ট নেই না। বিকাশ আছে?”
প্রয়াস ছোটো করে উত্তর দিলো, “না।”
তারপর আশ্বাস্ত করে বলল, “আমি কাল অবশ্যই দিয়ে যাবো।”
দোকানদার ভারি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লো মনে হলো।
“এমন তো নিয়ম নেই।” ভদ্রতার খাতিরে হাসার চেষ্টা করলো লোকটা।
প্রয়াস কটাক্ষের চোখে মেয়েটার দিকে তাকালো একবার। সে নোটপ্যাডটা দেখছে এই ধ্যানে।
প্রয়াস নিজের হাতঘড়ি খুলে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা কাল অব্দি রাখুন। কাল অবশ্যই টাকা পেয়ে যাবেন।”
প্রথমে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হতেই হলো দোকানদারকে। কারণ এছাড়া আর কিছু করার নেই।
তাছাড়া প্রয়াসকে দেখে মনে হয় না সে ধাপ্পাবাজি করবে।

প্রয়াস বেরিয়ে এলো মেয়েটাকে নিয়ে। গাড়িতে বসতে ইশারা করতেই বসে পড়লো সে। হাতে কলম আর নোটপ্যাড। মুখে খুশির ঝিলিক।
প্রয়াস গাড়ি স্টার্ট দিলো।
কাছাকাছি কোনো একটা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে গাড়ি থামালো। তারপর ভিতরে গেলো মেয়েটাকে নিয়ে।
মেয়েটা ভিতরের পরিবেশ অবাক নজরে দেখতে লাগলো।

প্রয়াস রিপোর্ট লেখানোর কথা জানিয়ে বসলো একটা আইনী পোশাক পরিহিত ব্যক্তির সামনে।
‘তৌহিদুর রহমান’ লেখা তার সেই পোশাকের নেম প্লেটে। মধ্যবয়স্ক পুরুষ।
তিনি চায়ে চুমুক দিতে দিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তারপর প্রয়াসের দিকে তাকালেন।
প্রয়াস বলল,”এই মেয়েটা হারিয়ে গেছে। ওর জন্য রিপোর্ট লিখতে হবে।”
তৌহিদুল রহমান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললেন, “নাম কী তোমার?”
মেয়েটা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। অবশ্য প্রথম থেকেই এভাবেই তাকিয়ে ছিলো।
“কথা বলতে পারে না ও।” গম্ভীর মুখে বলল প্রয়াস।
তৌহিদুর রহমান হয়তো একটু অবাক হলেন। সাথে একটু আফসোসও প্রকাশ করলেন। এতো সুন্দর মেয়েটা কিনা বোবা!(লেখিকা – লাকি নোভা)
“ওহ আচ্ছা। তাহলে ঠিকানা বলবে কীভাবে?” চিন্তায় পরে গেলেন তিনি।
“লিখে দেবে।”
“ও! হ্যাঁ, হ্যাঁ। লিখে দেও তো মামনি।” বলেই একটা কাগজ কলম এগিয়ে দিলেন তিনি।
মেয়েটা লিখলো না। ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলো সেই কাগজের দিকে।
“লিখো লিখো।” কাগজটা আরেকটু এগিয়ে দিয়ে বললেন তৌহিদুল রহমান।
থম মেরে বসে রইলো মেয়েটা। যা দেখে প্রয়াস আর তৌহিদুর দুজনেই অবাক হলো।
“ঠিকানা জানে না মনে হয়। আপনি ওনাকে কোথায় পেয়েছেন?”
“রাস্তায়। কনফেকশনারির দোকানে।” ঠিকানা বলল প্রয়াস। সাথে বিস্তারিত ঘটনাও বলল।
ঘটনা শুনে কিছু চিন্তা করে তৌহিদুর বললেন, “উনি বলেছেন আপনাকে হারিয়ে যাওয়ার কথা? মানে ইশারায় বা ইঙ্গিতে?”
“বলে নি। আরকি আমার মনে হয়েছে।”
তৌহিদুর সরু চোখে তাকিয়ে বললেন, “মনে হয়েছে! কেনো?”
প্রয়াস সাথে সাথেই উত্তর দিতে পারলো না। চুপ করে গেলো। কি বলবে সেটাই ভাবতে লাগলো।
তৌহিদুর মৃদু হেসে বললেন,”যাইহোক। আমি লিখে রাখছি। যদি কেউ মিসিং ফাইল করে তাহলে জানাবো। আপনার ফোন নাম্বার দিয়ে যান।”
“আর ও?” মেয়েটার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো প্রয়াস।
“যতক্ষণ না পাওয়া যাচ্ছে আপনার কাছেই রাখতে হবে।”
কথাটা পছন্দ হলো না প্রয়াসের।
“আমার কাছে রাখবো মানে? আপনাদের কাছে এসেছি যাতে ও আপনাদের দায়িত্বে থাকে।”
তৌহিদুর রহমান মৃদু হাসলেন। তারপর দুই হাত ভাঁজ করে তার উপর থুতনি রেখে বললেন, “আমাদের দায়িত্বে চোর, ডাকাত, গুন্ডাপান্ডা এরা থাকে। তাই ওনাকে আপনারই নিয়ে যেতে হবে। আপাতত ফোন নাম্বার দিয়ে যান।”
গল্পের নাম: #কিছু_জোড়া_শালিকের_গল্প
পর্ব ৫: #সে_গুড়ে_বালি
লেখিকা: #Lucky_Nova(গল্প কপি নিষেধ)

ফোন নাম্বার আর বাসার ঠিকানা লিখে দিলো প্রয়াস। মনে মনে খুবই বিরক্ত হচ্ছে সে। এখন মেয়েটাকে তো তাহলে নিজের বাসায় নিতে হবে। তাও কতদিনের জন্য কে জানে! আদৌ মেয়েটার কেউ আছে কিনা তাও বা কে জানে!
“ঠিক আছে। কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গেই জানাবো।” বললেন তৌহিদুর রহমান।
প্রয়াস কিছু বলল না।
মেয়েটার দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর উঠে দাঁড়ালো। মেয়েটাও ওর পিছু নিতে উঠে গেলো।

প্রয়াস বাহিরে এসে মেয়েটার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলল, “ঠিকানা কেনো লিখো নি তখন?”
মেয়েটার মুখের স্নিগ্ধ হাসিটা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেলো। হাতের নোটপ্যাডটার দিকে দৃষ্টি নামালো সে।
“অদ্ভুত!” প্রয়াস শ্রান্ত ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড়ালো।
হঠাৎই মেয়েটা দুইহাতে পেট চেপে ধরলো। প্রয়াস তাকালো সন্দিহান চোখে। মেয়েটাকে অস্থির অস্থির লাগছে। মুখটাও কেমন হয়ে গেছে।
একটু চমকালো প্রয়াস।
“কী সমস্যা? পেট ব্যথা?”
মেয়েটা দ্রুত নাবোধক ভাবে মাথা নাড়লো।
মেয়েটার ছটফটানি আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে দেখে প্রয়াস বলল,”বাথরুম?”
মেয়েটা মাথা নাড়লো। চোখ মুখ করুন হয়ে গেছে।
প্রয়াস একটা পুলিশের থেকে জেনে বাথরুমের কাছে নিয়ে এলো মেয়েটাকে।
মেয়েটা প্রয়াসের হাতে নোটপ্যাড আর কলম কোনোমতে ধরিয়ে দিয়ে ঢুকে পড়লো ভিতরে।
প্রয়াস থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রইল। এই মেয়ে একটা আস্ত একটা ঝামেলা। সামনে আরো কত কী হবে কে জানে?

বাধ্য হয়ে নিজের বাড়িটাতেই মেয়েটাকে নিয়ে এলো প্রয়াস। কাল পরশুর মধ্যে মেয়েটার বিষয়ে খবর না এলে কোনো গার্লস হোস্টেলে রেখে আসবে।
প্রয়াস ওকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল,”এখানে থাকবা। ভুলেও বের হবা না।”
মেয়েটা তাকালো প্রয়াসের দিকে।
“তোয়ালে বাথরুমেই আছে। যাও ফ্রেশ হও।”
কথাটা বলেই বেরিয়ে এলো প্রয়াস। নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে খাবার গরম করে টেবিলে সাজালো।(লেখিকা-লাকি নোভা)
একজন কাজের লোক সকাল থেকে বিকাল অব্দি কাজ করে। সে-ই রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করে। প্রয়াসের কাজ শুধু গরম করা।
টেবিলে খাবার সাজিয়ে মেয়েটাকে ডেকে আনলো প্রয়াস।
সোজাসুজি একটা চেয়ারে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বসতে বলল তাকে।
কিন্তু সে প্লেট নিয়ে প্রয়াসের পাশের চেয়ারে এসে বসলো।
সরু দৃষ্টিতে দেখে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো প্রয়াস।
তবে খেতে খেয়ে খেয়াল করলো যে মেয়েটা পাখির মতো খায়। একদম অল্প। একটা পাখিও ওর থেকে বেশি খায় হয়তো।

প্রয়াস বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে না দিতেই মেয়েটা এসে ঢুকলো। বেশ অবাক হয়েই দ্রুত উঠে বসলো প্রয়াস।
দুইহাতে বালিশটা জড়িয়ে ধরে ঝলমলে চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে সে। সাথে নোটপ্যাড আর কলম।
“এখানে এসেছো কেনো? তোমাকে না বলেছি ওই রুম তোমার?” আকাশ থেকে পড়ে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা উওর না দিয়ে গটগট করে এসে প্রয়াসের বিছানায় উঠে পড়লো।(লেখিকা লাকি নোভা)
অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো প্রয়াস।
মেয়েটা বালিশ পাতিয়ে শুতে না শুতেই প্রয়াস হড়বড়িয়ে বলে উঠলো, “মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি আমার বিছানাতে এসেছো কেনো? বের হও।”
শেষ কথাটা একটু ধমকের মতো শুনালো হয়তো। মেয়েটার মুখটা খুব চুপসে গেলো। কাঁদো কাঁদো ভাব চলে এলো চেহারায়।
প্রয়াস নিভলো।
নিচু তবে থমথমে গলায় বলল, “নিজের রুমে যাও। এটা আমার রুম। ওঠো।”
মেয়েটা চুপসানো মুখে শুয়ে রইলো। অর্থাৎ সে যাবে না।
মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেলো প্রয়াস। কিছুক্ষণ সংকুচিত চোখে তাকিয়ে থেকে ঠিক করলো নিজেই অন্য রুমে শোবো। তবে সে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে মেয়েও উঠে বসলো। প্রয়াসকে চলে যেতে দেখে সেও নেমে পড়লো বিছানা থেকে। পিছু পিছু চলেও গেলো।
আঁচ করতে পেরে ঘুরে তাকালো প্রয়াস। অবাক কণ্ঠে বলল, “তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
মেয়েটার ঠোঁটে আগের মতো উদ্দেশ্যহীন কোমল হাসি।
কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো প্রয়াসের।
“আশ্চর্য তো! চুপচাপ ওই রুমে যাও।” হাত উঁচিয়ে রুমের দিকে ইশারা করে বলল প্রয়াস।
তারপর আবার হাঁটা শুরু করলো। পাশের রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে না বসতেই দেখলো মেয়েটাও হাজির। আগের মতো আবার বিছানায় উঠে পড়েছে।
হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো প্রয়াস।
মেয়েটার উজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে রইলো প্রয়াসের দিকে।
একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো প্রয়াস। মেয়েটাকে দেখতে যতটা ইনোসেন্ট, ঠিক ততটাই ডেঞ্জারাস। এখন কী চাচ্ছে কে জানে!
“নড়বা না। এখানেই থাকবা।” হালকা হুমকি দিয়ে বলে দেরি না করে আবার নিজের রুমে গেলো প্রয়াস।
কে শোনে কার কথা! পিছনে পিছনে মেয়েটাও হাজির।
“কী চাচ্ছো বলো তো?” সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা যেন কিছুই বোঝেনা ভাব ধরে তাকিয়ে রইলো।
প্রয়াস কান্ত নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসতেই মেয়েটাও গিয়ে বসে পড়লো অপর পাশে।
প্রয়াস তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তোমার মাথা ঠিক আছে? মেয়ে হয়ে একটা অচেনা ছেলের সাথে ঘুমাতে চাচ্ছো!”
মেয়েটার মুখ আগের মতোই রইলো। মুখ দেখে মনে হলো না যে এতে দোষের কিছু আছে।
ঝামেলায় পড়ে গেলো প্রয়াস। এই মেয়ের কী মাথার স্ক্রু ঢিলা নাকি!
এবারো উপায়ন্তর দেখলো না প্রয়াস। বাধ্য হয়ে একটা চাদর দিয়ে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার লাইন বানিয়ে বলল, “এদিকে ভুলেও আসবা না। বুঝেছো?”
বুঝলো কি বুঝলো না কে জানে। তবুও হাসিমুখে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
প্রয়াস চোখ সরালো। মেয়েটা সত্যিই অদ্ভুত। কালই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।(লেখিকা লাকি নোভা)
প্রয়াস বালিশে হেলান দিয়ে বসে বলল, “এখন ঘুমাও।”
প্রয়াস চাচ্ছে মেয়েটা ঘুমিয়ে যাক। ততক্ষণ বসে থেকে তারপর অন্যরুমে চলে যাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি।
প্রয়াস বসে আছে তাই সেও বসে আছে।
“ঘুমাতে বললাম যে আমি?”
চোখ রাঙানিতে চুপসানো মুখে শুয়ে পড়লো মেয়েটা। কিন্তু চেয়ে রইলো তাও।
“ভাই এই কার খপ্পরে পড়লাম!” বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো প্রয়াস।
“দয়া করে ঘুমাও। চোখটা বোজো।” দাঁতেদাঁত চিপে বলল প্রয়াস।
মেয়েটা ম্লান মুখে তাকিয়ে চোখ বুজলো।

🌼
ফোন কানে নিয়ে সারাঘর পায়চারী করছে ত্রয়ী। বিকেলের পর থেকেই নুহাসকে ফোন করেই যাচ্ছে। এখন বাজে রাত দশটার বেশি। এখনো ফোন বন্ধ। এসবের মানে হয়!
ত্রয়ী ফোন রেখে বিছানায় বসলো। হাঁসফাঁস লাগছে খুব। লোকটা নাকি চারদিন আগে ওকে দেখেছে! তাহলে নুহাস আর ওর বিষয়ে সবটা কী করে জানে?
নুহাস কি চেনে ওকে? কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না!

আর তাছাড়া লোকটার হাবভাবও তো সুবিধার নয়। মনে হচ্ছে বিয়েটা করেই ছাড়বে। এমন মানুষও হয়! কালই তো পাকা কথা। নুহাসকে তো জানানোই হলো না যে ওই লোকটা মানে নি। উলটো ‘বিয়ে করবেই করবে’ মনোভাব নিয়ে বসে আছে।
অবশ্য ফোন ধরলে তবে তো জানাবে।
মাথাটা ধরেছে খুব। মাথা চেপে ধরে শুয়ে পড়লো ত্রয়ী। চিন্তায় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় চোখ লেগে এলো ওর।
ঘুমটা গাঢ় হতেই ফোন বেজে উঠলো। প্রচন্ড বিরক্তিতে কপাল বাজেভাবে কুচকে ফেললো ত্রয়ী। ঘুম ঘুম চোখে ফোন হাতরিয়ে হাতে পেয়ে রিসিভ করলো।
ঘুমকাতুরে গলায় বলল, “হ্যালো?”
ঘুম ঘুম মিষ্টি আওয়াজ পেয়ে মুচকি হাসলো নীল।
“ঘুমিয়ে গেছো?”
আধোঘুমে থাকা ত্রয়ী অস্পষ্টে বলল, “হু। কে আপনি?”
“তোমার হবু বর।”
আচমকাই ঘুমের রেশ কেটে গেলো ত্রয়ীর। হন্তদন্ত করে উঠে বসলো ও।(লেখিকা লাকি নোভা)
চকিত হয়ে বলল, “আপনি!”
“হু আমি।”
“এতরাতে কেনো ফোন করেছেন?”
“প্রেম করতে।”
চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ত্রয়ীর।
“চুপ করে গেলা যে?”
“আজে বাজে কথা না বলে ফোন রাখুন।” নিজেকে সামলে ভদ্রভাবেই বলল ত্রয়ী।
“রাখবো না।” স্বাভাবিক গাঢ় কণ্ঠে বলল নীল।
“তাহলে আমিই রাখছি।”
“রেখো না।”
থতমত খেয়ে গেলো ত্রয়ী। লোকটা সত্যিই কেমন যেন। কথাগুলোও কেমন।
“আমি মনে করেছিলাম তুমি চিনতে পারবা আমাকে। কিন্তু আমি ভুলেই গেছিলাম যে তুমি অনেক বোকা। যেমন বোকা ছিলা তেমন আছো আর থাকবাও।” দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল নীল।
ভ্রু কুচকে গেলো ত্রয়ীর।
“কী বললেন? আমি বোকা? আর হুট করে ফোন দিলে চিনবো কী করে? আর আমার চেনারও বা কী দরকার?”
নীল নিঃশব্দে হাসলো। মেয়েটা সত্যিই বোকা। এজন্যই তো এখনো প্রথম কথার মানে ধরতে পারে নি।
“সমস্যা নেই। পরে চিনে যাবা। এবার আর আড়াল হতে দিচ্ছি না। সোজা নিজের কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো।”
মুখটা বিমর্ষ হয়ে গেলো ত্রয়ীর। তর্কে তর্কে ভুলেই গিয়েছিলো কালই পাকা কথা।
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না।” ম্লান স্বরে বলল ত্রয়ী।
“কেনো চাও না?” অতি স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো নীল। যেন সে জানেই না কিছু।
একটু ক্ষেপলো ত্রয়ী। থমথমে গলায় বলল, “আপনি জানেন না, কেনো?”
“না তো।” আকাশ থেকে পড়লো নীল।
দাঁত কিড়মিড় করলো ত্রয়ী।
“এতো নাটক করেন কীভাবে? আপনি জানেন না আমার বয়ফ্রেন্ড আছে?”
“জানি তো।”
ভাবলেশহীন উত্তরে অবাক হলো ত্রয়ী।
“জানেন তাহলে কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন?”
“কারণ তোমার সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড একটা ফালতু ছেলে। তোমাকে ও ডিজার্ভ করে না। তুমি কেনো, ও কোনো মেয়েকেই ডিজার্ভ করে না।”
রাগ হলো ত্রয়ীর। যা ইচ্ছা তাই বলেছে এই লোক।
“একদম ফালতু কথা বলবেন না। ও ডিজার্ভ করে না! আপনি কে সেটা বলার? আর তাছাড়া আপনি করেন আমাকে ডিজার্ভ?”
“করি।”
হা হয়ে গেলো ত্রয়ী। বলে কিনা ‘করি’!
“মোটেও করেন না। আর আমার বয়ফ্রেন্ড না থাকলেও আমি আপনাকে বিয়ে করতাম না। একদম ইচ্ছে নেই আমার৷ অন্যের বিষয় না জেনে এভাবে…।”
“না জেনে আমি কিছুই বলি না। আর বিয়ে না করে কই যাও দেখবো। নিজ ইচ্ছাতেই বিয়ে করবা তুমি। দেখে নিও।” খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠলো নীল।
না চাইতেও ভিতরে ভিতরে বেশ চমকালো ত্রয়ী। শরীর কেমন শিরশির করে উঠলো।
“তোমাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করবো ত্রয়ী। আর তুমি নিজ ইচ্ছাতেই ধরা দিবা।”
ঢোক গিললো ত্রয়ী। বুকে ধড়াম ধড়াম করে শব্দ হচ্ছে। কী সব উদ্ভট কথা বলছে!
“নিজ ইচ্ছার জীবনেও না।”
“দেখা যাবে। এখন আসো প্রেম করি। কী টপিকে প্রেম করা যায়?”
হকচকিয়ে উঠলো ত্রয়ী।
“আমি ফোন রাখছি।”
“প্রেম করবা না?” নীল হেসে ফেললো।
“অসভ্য।” বিড়বিড়িয়ে বলে চোখমুখ কুচকে ফোন কাটলো ত্রয়ী।

🌻
মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চিত হয়ে আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে পড়লো প্রয়াস। চলে এলো পাশের রুমটাতে।
অনেকক্ষণ ধরেই ওর ঘুম পাচ্ছিলো। কিন্তু মেয়েটাই ঘুমাচ্ছিলো না। খানিক বাদে বাদে চোখ খুলে দেখছিলো প্রয়াস আছে কিনা। কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। কাল মেয়েটাকে যে করেই হোক কোনো গার্লস হোস্টেলে দিয়ে আসতে হবে।
প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়লো প্রয়াস৷
আরাম করে সবেমাত্র শুতে না শুতেই টের পেলো উলটো পাশে কেউ শুয়ে পড়েছে। অবাক হয়ে ঘাড় ঘুড়ালো প্রয়াস। সাথে সাথে হতবাক হয়ে গেলো।
মেয়েটা ঘুমায় নি এতক্ষণে?(লেখিকা লাকি নোভা)
কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। এই ধরনের চাহনি হয় বাচ্চাদের৷ ছয় সাত বছরের বাচ্চাদের। যাদের মুখে এক চিলতে ঠোঁট এলানো হাসি থাকেই।

মুখটা চুপসিয়ে আবার ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো প্রয়াস।চুপচাপ উলটোপাশ ফিরে রইলো। এমনিই খুব ঘুম পাচ্ছে। কাল অফিস আছে। আর জেগে থাকা সম্ভব নয়।
ঘুমিয়ে পড়লো প্রয়াস। তবে সে ঘুম বেশি সময় স্থায়ী হলো না। মেয়েটা ঘুমের ঘোরে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গায়ে পা তুলে দিতেই ঘুম ছুটে গেলো প্রয়াসের।
ঘুম ঘুম চোখে কপাল কুচকে ফেললো প্রয়াস। পেটের কাছে থাকা মেয়েলি হাতটা দেখে হতবুদ্ধি গেলো খানিক।
বিস্মিত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর চেষ্টা করলো।
মেয়েটা ওর পিঠে মুখ গুজে ঘুমাচ্ছে।
বিমূঢ় হয়ে কয়েকবার পলক ফেললো প্রয়াস।
“উফ!” অস্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে মেয়েটার হাতটা পেটের কাছে থেকে সরাতে চাইলো।
কিন্তু মেয়েটা শার্ট হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ঘুমোচ্ছে।
ভারি জ্বালা তো!
এদিকে পা-ও তুলে দিয়েছে। কোলবালিশ পেয়েছে নাকি!
প্রয়াস বিরক্ত হয়ে নড়েচড়ে সরতে চাইলো।
এতে মেয়েটা ঘুমের ঘোরেই আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।
নিরুপায় হয়ে হাল ছাড়লো প্রয়াস। চোখ খিচে বন্ধ করে কপাল চাপড়ালো।
সে রাতে আর ঘুম হলো না তার। প্রচন্ড অস্বস্তিতে নির্ঘুম কাটলো পুরো রাত।

🌸
ফাইল হাতে কনফারেন্স রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই ভারি অবাক হলো ক্যান্ডেল। বিস্ময়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো প্রবেশ পথে। মুখটাও আপনাআপনি হালকা হা হয়ে গেলো।(লেখিকা – লাকি নোভা)
ভুল দেখে না থাকলে ওর থেকে ছয় সাত কদম দূরে ব্যাক সুইভেল অফিস চেয়ারে ফর্মাল পোশাকে বসে আছে সেই কাপুরুষ। ফাইল উলটে উলটে চোখ বুলাচ্ছে সে।
ভ্রুদ্বয় কুচকে এলো ক্যান্ডেলের। এই লোক এখানে কীভাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
ফাইল চেক করতে করতে ইভান তাকালো একবার ক্যান্ডেলের দিকে। চোখাচোখি হলো। আর এতেই শরীরটা জ্বলে উঠলো ক্যান্ডেলের। মুখটা থমথমে রূপ ধারণ করলো।
ইভানের মধ্যে কোনো বিস্ময় বা অবাকভাব লক্ষ্যনীয় হলো না। একদম স্বাভাবিক চোখে একবার তাকিয়ে আবার ফাইলে মনোনিবেশ করলো। যেন সে চেনেই না তাকে।

“Excuse me!”
চকিতে ঘুরে তাকালো ক্যান্ডেল।
প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে থাকায় মেয়েটা ভিতরে ঢুকতে পারছে না বুঝেই নিচু গলায় ‘সরি’ বলে জায়গা করে দিলো ক্যান্ডেল।
মেয়েটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঢুকে গেলো ভিতরে।
ক্যান্ডেল আরেকবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ইভানের দিকে।
গম্ভীর মুখে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
ক্যান্ডেল ভেবে পাচ্ছে না এই লোকটা এখানে কেনো!

ক্যান্ডেলের কোম্পানির চিফ, মিস্টার আদনান জুবায়ের ঢুকতে ঢুকতে হাসিমুখে ক্যান্ডলকে বললেন, “দাঁড়িয়ে আছো কেনো! এসো।”
ক্যান্ডেল সৌজন্য হাসি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো। ক্যান্ডেল বসেছে ইভানের তিন চেয়ার পরে আড়াআড়ি উলটো দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে ইভানকে।
ইভান আর তাকায় নি।

মিটিং এর শুরুতে সবার পরিচিতি বর্ণনার সময় ক্যান্ডেল জেনেছে এই কাপুরুষের নাম ‘ইভান চ্যাটার্জি।’
আর তার কোম্পনিই অর্থাৎ ‘রয়্যাল’ এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করবে।
পুরোটা সময় জুড়ে ক্যান্ডেল ফাইল ঘেটে ঘেটে দেখলো। সত্যিই এই ফালতু চরিত্রের লোকটা ‘রয়্যাল’ কোম্পানির! বিশ্বাসই হচ্ছে না ক্যান্ডেলের।

আর এই লোকটার সাথে কাজ করতে হবে ভেবেই আরো অস্বস্তি হচ্ছে। আগে জানলে এই প্রজেক্টে কাজই করতো না ও।

মিটিং শেষে সবাই একে একে বেরিয়ে যেতে লাগলো কনফারেন্স রুম থেকে।(লেখিকা লাকি নোভা)
ক্যান্ডেল বিরক্ত মুখে বসে বসে বিভিন্ন চিন্তা করতে লাগলো। অবশেষে সবাই বের হবার পর ক্যান্ডেল উঠে দাঁড়ালো। ফাইল গুছিয়ে নিতে নিতে একবার তাকিয়ে দেখলো ইভানকে। সে গায়ের কোটটা খুলে হাতে ঝুলিয়ে ফাইল গুছিয়ে নিয়েছে। এদিকেই হেঁটে আসছে।
ক্যান্ডেল মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইভান ওর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ক্যান্ডেল বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, “অসভ্য লোক।”
কথাটা কানে আসতেই থেমে দাঁড়ালো ইভান। ভালো করেই বুঝলো ওকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। তাই একটা নিঃশ্বাস ফেলে ক্যান্ডেলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাতের ফাইলটা রাখলো টেবিলে।
ক্যান্ডেল আড়চোখে তাকালো একবার। বিরক্ত লাগছে খুব। এখানে কী চায়!
ইভান বলল, “থার্টি সিক্স, টুয়েন্টি ফোর, থার্টি সিক্স।”

ক্যান্ডেল মহাবিরক্ত হয়ে ভ্রুকুচকে তাকালো ইভানের দিকে। কী আজে বাজে বকছে!
ইভান বাঁকা হাসি দিয়ে ক্যান্ডেলের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,”তুমি তো প্রথমটাতেই মার খেয়ে বসে আছো। মিস.থার্টি ফোর।”
বলেই ইভান ক্যান্ডেলকে অপ্রস্তুত করে দিতে ওর বুকের দিকে তাকালো।
ক্যান্ডেলও কুঞ্চিত চোখে সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকালো। আর সেকেন্ডের মধ্যে বিষয়টা বোধগম্য হতেই ছিটকে সরে গেলো। বিস্ফোরিত হয়ে গেলো ওর চোখমুখ।
বাঁকা হাসিটা আরেকটু প্রশস্ত হলো ইভানের।
ক্যান্ডেল লজ্জায় দ্রুত ফাইলটা নিজের বুকের কাছে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে দাঁতেদাঁত চিপে বলে উঠলো, “Pervert.”
কথাটা বলে আর একটুও দাঁড়ালো না ক্যান্ডেল। একপ্রকার দৌড়েই বেরিয়ে গেলো কনফারেন্স রুমটা থেকে।
ইভান তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হেসে সেদিকে তাকালো। নিজের ফাইলটা হাতে তুলে নিতে নিতে বিড়বিড়ালো, “ক্যান্ডেল রয়! You better behave yourself.”

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here