কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব -১৪+১৫

গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ১৪ : #অঞ্জলি
লেখিকা : #Lucky_Nova (কপি নিষেধ)

ভয়ে মুখটা শুকিয়ে গেলো সমীর আর নীরার। প্রয়াসের সাথে অঞ্জলী দেবীর কথা হলে শেষ রক্ষা হবে না। ঝামেলায় পড়তে হবে। বড়সড় ঝামেলায়।
“মা, তুমি না অসুস্থ! আমরা বুঝে নিবো তুমি যাও।” তাড়াহুড়ো করে নড়বড়ে গলায় বললেন সমীর।
“আমি তার সাথেই কথা বলতে চাই।” বলেই প্রয়াস সরাসরি এগিয়ে গেলো অঞ্জলির দিকে।

শত চেষ্টা করেও কোনো উপায় করতে পারলেন না সমীর আর নীরা। হাল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হলো বসার ঘরটা থেকে। যাওয়ার আগে প্রয়াসকে লুকিয়ে আড়চোখে শাসিয়েও গেলেন অঞ্জলিকে। বুঝাতে চাইলেন মুখ বন্ধ রাখার জন্য।
কিন্তু অঞ্জলি ধার ধারলেন না। ওরা বের হতেই ঘট করে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন।
আস্তে-ধীরে এগিয়ে গিয়ে বসলেন সোফাতে। প্রয়াস বসলো তার মুখোমুখি।
অঞ্জলি বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে কৃতজ্ঞচিত্তে তাকিয়ে রইলেন প্রয়াসের মুখপানে।
প্রয়াস একটু অপ্রতিভ হয়ে উঠলো ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
অঞ্জলি অর্থহীনভাবে মলিন হাসলেন। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলেন, “তিয়াসার জন্মের কয়েক বছর পরেই ওর মা মারা যায়। ছোটো থেকে বাবার কাছেই মানুষ হয়েছে ও। ওর বাবা, মানে আমার বড় ছেলে অধীর বেঁচে থাকাকালীন কিছুর অভাব পড়েনি আমার তিয়াসার। মেয়ের সব খেয়াল রেখেছিলো ও। শুধুমাত্র মেয়েটা সারাদিন একা থাকবে ভেবে সমীরকে, আমার ছোট ছেলে আর তার বউ, নীরাকে এবাড়িতে জায়গা দিয়েছিলো। ওরাই থাকতে চেয়েছিলো। অধীরও মানা করলো না। থাকতে দিলো। আমার বড়ো ছেলে বেঁচে থাকা অব্দি ওদের ব্যবহার সুন্দর ছিলো। কিন্তু ওদের মনের মধ্যে যে এতটা হিংসা ছিলো তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি আমার বড়ো ছেলে। বছর খানেক আগে অধীর মারা যায়। তারপর থেকেই ওরা নিজেদের আসল রূপ দেখাতে শুরু করে। আস্তে আস্তে এই বাড়ি, গাড়ি সমস্তকিছু দখলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করে। যেহেতু পুরো বাড়িটা তিয়াসার নামে লেখা ছিলো তাই প্রথম প্রথম অনেক ধৈর্য ধরেছিলো ওরা। তাও ব্যবহার দিনকে দিন অনেক বাজে হচ্ছিলো। তারপর যখন সুযোগ বুঝে সব সম্পত্তিগুলো চালাকি করে নিজেদের নামে করে ফেললো তখনি আসল রূপটা সম্পূর্ণভাবে সামনে আসতে লাগলো ওদের। আমি গ্রামে ছিলাম বলে ওদের এসব অমানবিক কাজকর্মের বিষয় কিছু জানতেও পারি নি। বড়ো ছেলের মৃত্যুর পর আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। অসুস্থও হয়ে পড়েছিলাম। সেই অসুস্থতার জন্য আমি গ্রামেই পড়ে ছিলাম। তিয়াসার কাছে যে আসতে চাইনি এমন নয়। কিন্তু আসতে চাইলেই আমাকে ওরা মানা করে দিতো। বলতো সব ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই। আমিও বোকার মতো কিছুই বুঝলাম না। একদিন হঠাৎ খুব ইচ্ছে করলো এখানে আসতে। তাই কী মনে করে যেন না বলেই হুট করে চলে এসেছিলাম এখানে। সেদিন যদি না আসতাম তাহলে এসবের কিছুই জানতে পারতাম না। জানতেই পারতাম না মেয়েটার উপর দিয়ে কী যাচ্ছে! আর না দেখতে পারতাম! তবে আমার এখানে আসাতে যে তিয়াসার উপর ওদের অত্যাচার কমলো এমন নয়। আর আমিও এমনই দুর্ভাগা যে তিয়াসার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। কিছু বলতে বা করতে গেলে উল্টো আমাকেই মারতে আসতে চাইতো ওরা। আমি নিরুপায় ছিলাম। একবার ওদের বলেছিলাম ওকে নিয়ে আমি গ্রামে থাকি। সেটাও শুনলো না। গ্রামের জায়গাটাও দখল করে বসে রইলো। আরেকবার ভাবলাম পুলিশকে বলি। চেষ্টাও করলাম। জানালামও। লাভ হলো না। ওরা পুলিশকে টাকা খাইয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দিলো। উল্টো আমার এভাবে জানিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়েটাকেই আরো ভুগতে হলো। সাথে আমাকেও। ওরা আমাকে আর তিয়াসাকে সহ্যই করতে পারছিলো না। এজন্যই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে আর তিয়াসাকে শেষ পর্যন্ত একটা জানোয়ার লোকের সাথে বিয়ে দেবে বলে ঠিক করলো ওরা। আমি বুঝতেও পারিনি যে ওই জানোয়ার এতটাই নীচ যে তিয়াসাকে বিয়ের আগেই জোর করতে চাইবে। আমি না থাকলে সেদিন হয়তো মেয়েটাকে শেষই করে ফেলতো জানোয়ারটা। কুলাঙ্গার, লম্পট।”
বলতে বলতে রাগে, ঘৃণায় মুখটা বাজেভাবে কুচকে ফেললেন অঞ্জলি। ভিজে চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে উঠলো।
“বাড়িতে ওরা ছিলো। তবুও কেউ একজন মেয়েটার জন্য আগালো না ভাবতে পারো! কতটা নীচে নামলে মানুষ এমনটা করতে পারে! মেয়েটার গায়েই হাত তুললো ওরা। সেদিন মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে বেরিয়েই চলে গেলো। তারপর আর আসে নি। আমি ভেবেছিলাম মেয়েটার বোধহয় কিছু হয়ে গেছে। উল্টোপাল্টা চিন্তা নিয়ে এই কয়েকটা দিন আমি কীভাবে ছিলাম আমি নিজেও জানিনা।” চোখ ছলছল করে উঠলো তার। খুব অসহায় দেখা গেলো মুখখানা।
“এর আগেও নাকি মারধর করলে মেয়েটা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো। তবে পরে ফিরে আসতো। কিন্তু সেদিন আর এলো না। ওই জানোয়ারটা খোঁজাখুঁজিও করলো। পেলো না৷ আমি চাচ্ছিলাম তিয়াসা ফিরুক। কিন্তু ফিরলেই আবার এই নরক যন্ত্রণা যে ওর জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে। এসব ভাবলেই মনে হতো মেয়েটা আর কখনই না ফিরুক।” ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি। শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলেন অনবরত।
হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো প্র‍য়াস। ও ধারণাও করতে পারেনি যে তিয়াসার সাথে দিনের পর দিন এতকিছু হয়ে গেছে।
অঞ্জলি নাক টেনে চোখ মুছলেন শাড়ির আঁচলে। বললেন, “আজ লুকিয়ে ওদের কথা শুনেছিলাম। ওই জানোয়ারটা তিয়াসার জন্য রিপোর্ট লিখিয়েছিলো। সেজন্যই খোঁজও পেয়েছিলো আজ যে তিয়াসা কারো কাছে আছে। হয়তো তোমার কথাই বলছিলো। কথা শুনে বুঝলাম তুমি ওদের হাতে তিয়াসাকে দেওনি। ওকে নাকি পুলিশের ভয়ও দেখিয়েছ। আবার তিয়াসাও নাকি তোমার কাছে থেকে আসতে চায় নি। আসতে চাওয়ার কথাও না। এখানে ওর কেউ নেই। আমি থেকেও নেই। আমি কিছুই করতে পারিনি ওর জন্য।”
বলতে বলতে চোখদুটো ভিজে উঠলো বৃদ্ধার।
“এমন একটা দিন ছিলোনা যেদিন মেয়েটা মার খায় নি। ও কী ক্ষতি করেছে ওদের তা আমি জানিনা। এমন ছেলে আমি পেটে ধরলাম কী করে!” আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি।
বাকরুদ্ধ হয়ে বিবশ চোখে তাকিয়ে রইলো প্রয়াস।

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতায় কেটে গেলো।
অতঃপর অঞ্জলি চোখ মুখে একটু হাসার চেষ্টা করে বললেন, “মেয়েটা তোমাকে খুব জ্বালায় বোধহয়! ও একটু মনের মতো কাউকে পেলেই আর ছাড়তে চায় না।”
প্রয়াস আমতাআমতা করলো।
“আমি যে মেয়েটাকে খুব কদর করতাম এমন না। বংশের প্রথম সন্তান হিসেবে বোবা বলে আমি ওকে ঠিক পছন্দ করতে পারি নি।” কথাটা বলতে বলতে মাথা নিচু করলেন অঞ্জলি।
বললেন, “আস্তে আস্তে মেনে নিয়েছিলাম। তবে রুমি, মানে আমার এই ছেলের মেয়েটাকেই বেশি গুরুত্ব দিতাম।”
চোখমুখে অনুশোচনা দেখা গেলো বৃদ্ধার।
হতাশভাবে নিঃশ্বাস ফেলে প্রয়াসের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি জানিনা মেয়েটাকে এখন আমি কী করব! এখন তো আমার থাকার জায়গাটাও নেই। মেয়েটাকে নিয়েই বা কোথায় যাব!”
প্রয়াস তাকালো তার দিকে।

🌸
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ক্যান্ডেল। দুইহাত একত্রে ধরে কচলা কচলি করতে লাগলো অনবরত। এই পরিবারের লোক যেনো শুনেই ছাড়বে যে ইভানের সাথে ওর গভীর রকমের সম্পর্ক সত্যিই আছে।
“সারাদিন সময় নেই আমাদের। আমি শুধু এটাই জানতে চাই যে মিথ্যা কথা কোন সাহসে বলছো তুমি?” ইশারা উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।
“মা, ঠান্ডা হও। এভাবে অচেনা কাউকে বকাঝকা করা ঠিক না।” চাপা স্বরে বলল ইমন।
খেঁকিয়ে উঠলেন ইশারা।
“কীসের ঠান্ডা হবো আমি? এই মেয়েকে এখন ওর বাসার ঠিকানা বলতে বল। আমার সংসারে অশান্তি বাঁধিয়ে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবো না আমি। আমিও দেখি এই মেয়ে কি করে পার পেয়ে যায়।” বলেই কঠোর নজরদারিতে তাকালেন ক্যান্ডেলের দিকে।
ক্যান্ডেল খানিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
“ভালোয় ভালোয় বলো। এতক্ষণ যথেষ্ট সময় দিয়েছি আর দেবো না।”
জয়িতা তটস্থ হয়ে তাকালো ইমনের দিকে। ইমন মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ বের করলো।

এতক্ষণে মুখ খুললো ক্যান্ডেল। মিনমিন করলো,
“আমাদের মধ্যে সত্যিই কিছু নেই।”
হতভম্ব হয়ে গেলেন ইশারা।
আবীর মুখার্জি ভ্রুকুটি করে তাকালো ক্যান্ডেলের দিকে।
“আপনারা সত্যিই ভুল বুঝছেন আমাদের। আম…”
“যথেষ্ট হয়েছে তোমাদের মিথ্যে বলা।” কর্কশ গলায় বলে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন ইশারা।
চমকে উঠলো ক্যান্ডেল।
ইমন এগিয়ে এসে ইশারাকে ধরতে চাইতেই হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলেন তিনি। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন, “আমার সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। ওরা কি ভেবেছে আমি কিছুই বুঝিনা? ধরা পড়ে যাবার পরেও কীভাবে বলছে যে আমি ভুল দেখেছি?”
“মা, শোনো..।”
“কতটা সাহস হলে এমন কাজ করেও ওরা বড়োমুখ করে কথা বলে!” শান্ত হওয়ার বদলে উলটো ব্যগ্র হয়ে উঠলেন ইশারা।
ইমন বেজার বিপদে পড়ে গেলো। তার মায়ের জেদ সমন্ধে সে অবগত। সে যা ভেবেছে সেটাই সঠিক, এটা না শোনা পর্যন্ত সে থামবে না। সে একবার যা ধারণা করবে সেটা যে ভুলও হতে পারে তা সে কখনই মানবে না। তোলপাড় হয়ে গেলেও না।
এদিকে ইভানও একরোখা।
ওর মুখ থেকে একবার যেহেতু বের হয়েছে ও কোনো দোষ করেনি, মানে ও করেনি। এখন যা-ই হয়ে যাক না কেনো ওর কথার নড়েচড় হবে না।
অর্থাৎ আজকের এই বিবাদের নিষ্পত্তি হবে বলে মনে হয় না।

“সবটা স্বীকার করে ঠিকানা বলো তাড়াতাড়ি।” গমগমে গলায় বললেন ইশারা।
বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো ক্যান্ডেল। এমন লোক এজীবনে দেখে নি সে। যা শুরু করেছে তাতে আজ বাড়ি ফিরতে পারার সম্ভাবনা একদমই নেই বললেই চলে।
“চুপ করে আছো কেনো?” ধমকে উঠলেন ইশারা।
চকিতে তাকালো ক্যান্ডেল। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চাওয়ার আগেই ইভান এসে ওর হাতের কবজি চেপে ধরলো।
হকচকিয়ে উঠলো ক্যান্ডেল।
অন্যরা আকাশ সমান অবাক হয়ে তাকালো ওদের দিকে। তবে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্যান্ডেলকে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ইভান।
সর্বোচ্চ হতবাক হয়ে গেলেন ইশারা। ওরা বেরিয়ে যাবার কয়েক সেকেন্ড পরেই ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন তিনি।
ছেলে তার পুরোপুরিই বিঘড়ে গেলো বোধহয়!

(লেখিকা লাকি নোভা)
(গল্প কপি করা নিষেধ)

(চলবে…)গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ১৫ : #প্রণয়ের_আরম্ভ
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

ইভান ক্যান্ডেল নিয়ে সরাসরি বেরিয়ে এলো। মেইন গেট থেকে বের হয়ে আসতেই গাড়িটা চোখে পড়লো ক্যান্ডেলের। উবার। এটা কে ডাকলো!
অবাক হলো ক্যান্ডেল।
ইভান হাত ধরে রেখেই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ক্যান্ডেলকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো।
গাড়ির দরজা বন্ধ করে ড্রাইভিং সীটে বসা লোকটাকে মানিব্যাগ থেকে বের করা হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল, “লোকেশন যেটা বলবে সেখানে নিয়ে যাবেন।”
কথাটা বলে ক্যান্ডেলের দিকে একবার তাকালো ইভান।
গুরুতর থমথমে মুখ আর প্রগাঢ় চাহনি দেখে চোখ নামালো ক্যান্ডেল। ইভান দাঁড়ালো না। ঢুকে গেলো গেটের ভিতরে।
ক্যান্ডেল তাকালো পুনরায়। ততক্ষণে ইভানকে আর দেখা যাচ্ছে না।

🌻
প্রয়াস ফিরে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে তিয়াসাকে নিজের আশেপাশে দেখে নি। আশেপাশে বলতে ড্রয়িং রুম থেকে নিজের রুম পর্যন্ত।
ফোনটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে হাতঘড়ি খুলতে খুলতে আরেকবার রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো সে।
পরক্ষণেই মনে পড়লো মেয়েটাকে ও গেস্ট রুমে নিয়ে শুইয়ে দিয়েছিলো। বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই ছিলো। এখনো ওখানেই থাকার কথা।
প্রয়াস একবার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো।
সাড়ে আটটা।
প্রয়াস গেস্ট রুমের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। রেখাকে ওই রুমটা থেকে বের হয়ে আসতে দেখে বলল, “তিয়াসা..”
“আপামনি ঘুমাই গেছে। আপনের উপর রাগ রইরা কিছুই খায় নাই দুপুরে। আর রাত্তিরে তো এহনো ঘুম দিয়াই ওঠে নাই।” প্রশ্ন করার আগেই রেখা বলে উঠলো।

প্রয়াস রুমে ঢুকলো।
তিয়াসা সত্যিই ঘুমাচ্ছে। গুটিশুটি মেরে, উলটোদিক ফিরে।
বেরিয়ে যেতে চেয়েও থেমে দাঁড়ালো প্রয়াস। ফিরে তাকালো তিয়াসার দিকে।
শাড়ি পড়ার দরুন ঈষৎ ফর্সা পিঠটার জায়গায় জায়গায় কালো দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওর।
বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো প্রয়াস। তারপর এগিয়ে গিয়ে গায়ে চাদর টেনে দিলো।
কী মনে করে গালের পাশ গড়িয়ে পড়া চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো।
আর এটুকু স্পর্শেই কপাল কিঞ্চিৎ কুচকে চোখ পিটপিটালো তিয়াসা। আস্তে আস্তে পূর্ণদৃষ্টিতে চোখ মেলে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
খানিক অপ্রতিভ হয়ে পড়লো প্রয়াস। মেয়েটা এভাবে ঘুম থেকে উঠে পড়বে বুঝতেই পারে নি ও।
এতো হালকা ঘুম? নাকি ঘুমাচ্ছিলোই না?
যদিও লাল হয়ে থাকা চোখদুটো দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছিলো।

প্রয়াসের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে নিঃশব্দে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো তিয়াসা।
প্রয়াস গম্ভীর চোখে তাকিয়ে দেখলো। মনে মনে ভাবলো, মেয়েটাকে বিনা কারণে এতটা অমানবিক অত্যাচার কীভাবে করলো ওরা। মেয়েটা তো ওদের কোনো ক্ষতিই করে নি।

তিয়াসা উঠে বসলো।
প্রয়াস প্রশ্ন করলো, “দুপুরে খাও নি কেনো?”
প্রশ্নটা ভালোভাবে কর্ণগোচর হতেই মুখের হাসিটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো তিয়াসার। কপাল কুচকে মুখ ফুলালো সে। এতক্ষণে তার মনে পড়লো, প্রয়াসের সাথে তার আড়ি। বকাঝকা করে চলে গেছিলো সে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলো ও। কিন্তু সে আসে নি।

“কী?” মুখোভাবের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে অবাক হলো প্রয়াস।
তিয়াসা মুখ ফুলিয়েই রইলো। প্রয়াসের দিকে তাকালো না।
প্রয়াস আন্দাজ করলো কিছু। তবে সে বিষয়ে পাত্তা না দিয়ে বলল, “তোমার সাথে কথা আছে আমার কিছু। জরুরি।”
তিয়াসা ফুলানো মুখেই তাকালো প্রয়াসের দিকে।
“আমি তোমার বাসায় গিয়েছিলাম। তোমার ঠাম্মার সাথে কথাও হয়েছে আমার। সব শুনেছি আমি। পুলিশকে সব জানিয়েছিও। এখন আমি চাই তোমার কাকা-কাকি আর ওই লোকটার শাস্তি হোক। তোমার ঠাম্মাও তাই চায়। এরজন্য হয়তো তোমাকে সবটা পুলিশকে বলতে হতে পারে। মানে লিখে লিখেই। সব সত্যিটা।”
তিয়াসা বার কয়েক পলক ফেললো। গুমট ভাব সরিয়ে তাকিয়ে রইলো উন্মীলিত দৃষ্টিতে।
প্রয়াস হালকা ঝুঁকে এলো ওর দিকে। গহন চাহনিতে চেয়ে স্পষ্ট স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “বুঝেছো?”
তিয়াসা এতক্ষণে আবার ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। মাথা নেড়ে সাঁয় দিলো। অর্থাৎ সে বুঝেছে।
ধাতস্থ হলো প্রয়াস।
“গুড।” বলে তিয়াসার মাথার উপরের চুলগুলো নেড়ে দিলো একটু।
চোখ পিটপিটালো তিয়াসা।
প্রয়াস সোজা হয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ভ্রুকুটি করলো। তিয়াসার চুলগুলোর দিকে লক্ষ্য করে দেখে নিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল, “তুমি মাথা আঁচড়াও না?”
ঠোঁট কামড়ে একই ভঙ্গিতে প্রয়াসের দিকে তাকিয়ে রইলো তিয়াসা। অর্থাৎ সে আঁচড়ায় না। যার জন্যই চুলে জট পেকে আছে।
প্রয়াস সরু চোখে তাকিয়ে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো। রুম থেকে বের হয়ে রেখাকে ডাকলো। কিন্তু রেখার সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। প্রথমে একটু খোঁজাখুঁজির পর বুঝতে পারলো রেখা চলে গেছে। কারণ রাতে থাকার বিষয়ে প্রয়াস তো তাকে কিছু জানায়ই নি।

মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ করে রুমে ফিরে এলো প্রয়াস।
তিয়াসা চুপচাপ চিরুনি হাতে বসে আছে।
নিঃসন্দেহে প্রয়াস বলতে পারে যে এই মেয়ে চুলও আঁচড়াতে পারে না।
একটু ভুল হলো! আসলে মেয়েটা কিছুই পারে না।
প্রয়াস এগিয়ে গিয়ে ওর হাত থেকে চিরুনি নিলো। হাত ধরে পাশে থাকা টুলের উপর বসিয়ে দিয়ে মাথায় চিরুনি করে দিতে দিতে হালকা বিরক্ত কণ্ঠে বলল, “কত বছর আঁচড়াও নি?”

🌼
বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো ত্রয়ীর। বন্ধ চোখদুটো ডানহাতে হালকা ডলে নিয়ে চোখ পিটপিটালো। ঘাড় সোজা করে আস্তে আস্তে পুরোপুরিভাবে চোখ মেলতেই অনেক বেশিই চমকে গেলো ও।
চকিতে, নিজের অজান্তেই “আম্মু” বলে চেঁচিয়ে ওঠার আগেই মুখটা চেপে ধরলো নীল।
শিউরে উঠলো ত্রয়ী। ধুকপুক করে উঠলো বুকের ভেতরটা।
নীল ভ্রু উঁচিয়ে নিচু গলায় বলল, “শিস্! আস্তে। বর কাছে আসলে কেউ আম্মু বলে চেঁচায়?”
চোখ বড়ো করে তাকালো ত্রয়ী।
নীল মুচকি হাসলো। হাতটা সরানোর সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো ত্রয়ী। অবাক, বিস্মিত চোখে নীলকে একপলক দেখে নিয়েই ত্রস্তভাবে চোখ নামালো। তখনি নিজের গায়ের দিকে নজর আটকাতেই আরেকদফা চমকে উঠলো ত্রয়ী। ওড়নাটা নেই।
তটস্থ হয়ে উঠলো ও। অতিসত্বর বিছানায় চোখ বুলিয়েও যখন সেটা নজরে এলো না তখন বেশ ভালোই লজ্জায় পড়ে গেলো ও। একটু পিছিয়ে যেয়ে পাশের বালিশটা আস্তে করে নিজের কাছে টেনে নিতে নিতে মিনমিন করলো, “আপনি কীভাবে…!”
বিড়বিড় করতে করতে অনুসন্ধানী চোখে আরেকবার নিজের ওড়নার জন্য চোখ বুলালো আলগোছে।
নেই। কোথাও নেই।
কিন্তু বিছানার পাশেই তো ছিলো। ঘুমানোর আগ অব্দিও তো এখানেই ছিলো।

“এটা খুঁজছো?”
ওড়নাটা সামনে মেলে ধরতেই অবাক হয়ে সেটার দিকে তাকালো ত্রয়ী।
“আপনি এটা…” বলতে বলতে ওড়নাটা হাত বাড়িয়ে ধরে নিতে চাইলেও ছাড়লো না নীল।
হকচকিয়ে গেলো ত্রয়ী। তাকালো নীলের দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই দুষ্টুমির মনোভাব টের পেতেই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো ও।
চোখ নামিয়ে নিয়ে নিচু গলায় বলল, “ছাড়ুন এটা।”
” ‘তুমি’ করে বললে ছেড়ে দেবো।”
লোকটার উদ্ভট আবদার শুনে বুকটা ধকধক করতে শুরু করলো ত্রয়ীর। এদিক ওদিক তাকিয়ে ওড়নাটা আরেকবার টেনে নিতে চাইতেই আবার ব্যর্থ হলো। নাস্তানাবুদ হয়ে পড়লো যেন।
“বলো!” ধীর, নরম কণ্ঠে বলল নীল।
সঙ্কোচপূর্ণ দৃষ্টিতে একনজর তাকালো ত্রয়ী। এভাবে হুট করে কীভাবে তুমি বলবে ও! বেশ শঙ্কাজনক হয়ে এলো চেহারার ভাব।
নীল তবুও ছাড়লো না। বরং ‘তুমি’ না বলা অব্দি ছাড়বে বলেও মনে হলো না।
ত্রয়ী বালিশটা বামহাতে আঁকড়ে ধরলো আরেকটু। তারপর নামানো, বিচলিত দৃষ্টিতে নিজের কোলের দিকে চেয়ে হুট করে বলে উঠলো, “তুমি। এখন দিন।”
বলেই ওড়নাটা পুনরায় টেনে নিতে চাইলো ত্রয়ী।
লাভ হলো না। নীল ধরেই রইলো। মৃদু হেসেও ফেললো।
“এটা কেমন ‘তুমি’ বলা?” বলতে বলতে ত্রয়ীর ওড়ানা ধরে রাখা হাতটা ধরলো নীল।
একপ্রকার লাফিয়েই উঠলো ত্রয়ী। তাকালো বিস্ফোরিত চোখে।
নীল ওর হাতটা ধরে টেনে নিজেদের দূরত্ব কমিয়ে আনতেই বিচলিত ভাবটা বাড়লো ত্রয়ীর।
নীল স্বর নামালো। ভ্রুদ্বয়ে ভাঁজ ফেলে গাঢ় কণ্ঠে বলল, “ফোন দিলে ধরোনা কেন? হু?”
ত্রয়ী চোখ সরিয়ে ঢোক গিললো। চোখের পলক পড়তে লাগলো ঘনঘন।
নীল গতরাতে ফোন করেছিলো। কয়েকবার। সেটা ও দেখেছিলোও। কিন্তু লজ্জার আর দ্বিধার কারণে ইচ্ছে করেই ধরে নি। কিন্তু এখন এসবের জন্য কী অযুহাত দেবে বুঝে উঠতে পারলো না।
নীল নিমজ্জিত চাহনিতে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎই অনুভূতিপূর্ণ ভারি কণ্ঠে বলে উঠলো, “I missed you.”
এই সামান্য তিনটা শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই কেমন ঝিম ধরে গেলো ত্রয়ীর সারা শরীর। শ্বাস আটকে গেলো যেনো।
“কিন্তু তুমি তো বোঝোই না!” কাটখোট্টা গলায় বলল নীল।
মাথা আরো নুয়ে ফেললো ত্রয়ী। অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের কোলের দিকে। বুকের মধ্যে তখনো তোড়পাড় চলছে।

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো নীল৷ অতঃপর ছেড়ে দিলো ত্রয়ীর হাতসহ ওড়নাটা। উঠে দাঁড়াতেই ত্রয়ী আড়চোখে ওর দিকে তাকালো একবার। ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিতে নিতে চুপচাপ নিজেও নামলো বিছানা থেকে।
নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই আচমকা চেয়ারের হ্যান্ডেলের উপর রাখা অত্যন্ত ব্যক্তিগত জিনিসটার দিকে চোখ পড়তেই চোখমুখ অপ্রতিভ হয়ে উঠলো ওর। সর্বোচ্চ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ও। মুহূর্ত দেরি না করে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গিয়ে শাড়ি দিয়ে ঢেকে ফেললো সেটা।
নীলের দিকে আলগোছে একবার তাকাতেই ঠোঁটে ঠোঁট চিপে হাসলো নীল। ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ত্রয়ী।
গতকাল রাতে ক্লান্ত থাকায় কিছুই ঠিকঠাক করে গোছানো হয়ে ওঠে নি। ওভাবেই রেখে দিয়েছিলো। কিন্তু লোকটা যে এভাবে রুমে চলে আসবে জানলে কখনই এতো অগোছালো রাখতো না ত্রয়ী। আর না এতটা লজ্জায় পড়তে হতো।

এখন ওর পক্ষে এই লোকের সামবে দাঁড়িয়ে থাকা মোটেই সম্ভব নয়। পালানোর অযুহাত খুঁজলো ও।
পেয়েও গেলো।
না তাকিয়েই রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠে বলল, “আ..আপনি এখানে থাকেন। আমি চা নিয়ে আসি।”
কথাটা বলেই বেরিয়ে যেতে চাইতেই পিছন থেকে ওর বাহাতটা টেনে ধরে দরজার সাথে দাঁড় করালো নীল।
চমকালো ত্রয়ী। চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরিয়ে ঢোক গিললো একটা।
“আবার পালাচ্ছো।” স্বগতোক্তি করে বলল নীল।
ত্রয়ী কাচুমাচু করলো।
নীল গহন চাহনিতে চেয়ে আঁটসাঁট স্বরে বলল, “তোমার কি আমার কাছে থাকতেই ইচ্ছে করে না? নাকি আমাকে ভালো লাগে না? আমি যখনি কাছে আসি তখনি তুমি শুধু দূরেই যেতে চাও!”
এমন প্রশ্নে বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ত্রয়ী। অশান্ত হয়ে পড়লো চোখের দৃষ্টি।

নীল নমনীয় দৃষ্টিতে একভাবে চেয়ে রইলো কিছু শোনার আশায়।
এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট।

মেয়েটার মুখে কোনো কথা নেই। জড়োসড়ো হয়ে শিয়র নত করে আছে তো আছেই। তাকায়ও নি। মুক্ত হাতটায় ওড়না প্যাচাচ্ছে সে। তটস্থ হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে পালাতে পারলেই বাঁচে।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো নীল। ধরে রাখা হাতটা আলতো করে ছেড়ে দিয়ে নিরাশ গলায় বলল, “যাও, চা-ই বানাও।”

আশ্চর্য! বিন্দুমাত্র দেরি করলো না ত্রয়ী। কথাটা মাটিতে পড়তে না পড়তেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ও।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নীল।

চা নিয়ে সে আসবে এ আসা নীল করলো না। নিজেও নেমে এলো নিচে।
নামতে নামতেই ত্রয়ীর দিকে তাকালো। সোফার কোণ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সে। চোখমুখের অপ্রাকৃত ভাব দেখে মনে হচ্ছে বড়ো ঝড়ের মুখ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে।
ওর মুখোমুখি বিপরীত দিকে এসে দাঁড়ালো নীল।

বাসন্তী বাকিদের সাথে খোশগল্পে মেতে ছিলেন। ছেলেকে দেখে বললেন, “এতক্ষণে আসার সময় হলো।”
নীল প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলো।
বাসন্তী খোলা গহনার বক্সগুলো খুলতে খুলতে ত্রয়ীর উদ্দেশ্যে সচ্ছল কণ্ঠে বললেন, “এখানে আসো। দেখো তো পছন্দ হয় কিনা!”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো বাসন্তীর দিকে। সাবলীল হাসি হাসলেন তিনি।
ত্রয়ী মুখ ফিরিয়ে মায়ের দিকে একপলক তাকাতেই মৃদু হেসে এগুতে বললেন তিনি। ত্রয়ী এগুলো। গিয়ে বসলো তার পাশে।
তিনি একটা গলার হার বক্স থেকে তুলে নিয়ে ত্রয়ীকে পড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, “সবকিছু এতো তাড়াহুড়ো করে হলো যে বানাতে দেরি হয়ে গেলো। বাহ! সুন্দর মানিয়েছে।”
হাসিমুখে সাবিহার দিকে তাকালেন বাসন্তী। নিঃশব্দ হাসিতে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন তিনিও।
“খাওয়াদাওয়া করে তারপর যান।” বললেন ফারুক আহমেদ।
“না, না। অন্য আরেকদিন। একটু কাজ আছে আজ এনজিওতে।”
“ও আচ্ছা। তাহলে তো আর আটকানো যাচ্ছে না।” নির্মল কণ্ঠে স্বগতোক্তি করলেন ত্রয়ীর বাবা।
“আর তুমি?” নীলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন সাবিহা।
নীল স্মিত হাসলো। ভনিতা না করেই বলল, “আমি আজ একটু ত্রয়ীকে নিয়ে বাহিরে যেতে চাচ্ছি। একে অপরকে জানার জন্য। সন্ধ্যার আগেই ফিরিয়ে দিয়ে যাব।”
বক্ষপিঞ্জরের মধ্যের যন্ত্রটা ধক করে উঠলো ত্রয়ীর। চোখ বড়ো করে মেঝের দিকে তাকালো ও।
বাসন্তী ভারি অবাক হয়ে চাইলেন নীলের দিকে।
সাবিহা আর ফারুক আহমেদ চোখাচোখি করলেন। হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে অনুমতি দিয়ে দিলেন কিয়ৎপলের মধ্যেই।
প্রসন্ন হাসলো নীল। ত্রয়ীর দিকে তাকালো অনুরাগী দৃষ্টিতে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here