কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব -২৫+২৬+২৭

গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৫ : #নতুন_সূচনা
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

দুই সপ্তাহ পরের বিয়ে যখন হুট করে এগিয়ে আনা হয় তখন বোধহয় এমন হুলুস্থুল অবস্থাই হয়।
অবশ্য বিয়ে এগিয়ে আনার পিছনেও যথার্থ কারণ আছে ইশারার। তার মনে হয় ইভান যেকোনো সময়ে ‘বিয়ে করবো না’ বলে বেঁকে বসতে পারে।
এতোদিন বলে কয়ে যেহেতু রাজি করাতে পারেন নি, তাই এখন যেহেতু রাজি হয়েছে সেহেতু কোনোরকম রিস্ক না নেওয়াই ভালো। এজন্যই জলদি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
যার বিয়ে তাকেও এ বিষয়ে কিছু জানান নি। জরুরি দরকারে ভোর বেলায় বাসায় ডেকে নিয়ে এসে বিয়ের জন্য রেডি হতে বলে দিয়েছেন।

ইভান অবশ্য দ্বিরুক্তি করতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি বলেছেন সবাইকে জানানো হয়ে গেছে। এমনকি সবাই এসেও পড়বে। সবাই বলতে গুটিকয়েক কাছের আত্মীয়স্বজন।

বাধ্য হয়ে মানতেই হয়েছে ইভানকে। এছাড়া আর উপায়ও ছিল না।

তবে বিয়ে এতোটা এগিয়ে আনায় যে সে একা অবাক হয়েছে এমন নয়। ক্যান্ডেলও হয়েছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিয়ে এগিয়ে আসায় বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে ও।
ও তো এটাই বুঝতে পারছে না যে বিয়েটা এতো জলদি এগিয়ে আনার কারণ কী! নাকি ইভানই বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে! কিন্তু ভাব তো এমন যেন বিয়ে নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথাই নেই!
সে কি নাটক করছে তাহলে?

“কিরে! কী এতো ভাবছিস তুই বল তো?” মায়ের ডাকে হুঁশ ফিরলো ক্যান্ডেলের।
চকিতে তাকাতেই বিরক্তিমাখা কণ্ঠে তাড়া দিয়ে বললেন, “গাড়িতে বসে থাকবি! নামবি না? দেরি হচ্ছে তো!”
ক্যান্ডেল ব্যগ্র চোখে তাকালো মায়ের মুখপানে।
কোলের উপরের সাদা গাউনের অংশটা মুঠোয় চেপে ধরে অনুনয়ী চাহনিতে বলল, “এতো তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে দিচ্ছো আমাকে? আরেকটু অপেক্ষা করা যেত না?”
মেয়ের কথায় ভ্রু কুচকালেন ক্যাথি। কাল হতে কয়েকশো বার এই এক প্রশ্ন নানাভাবে করেই চলেছে ক্যান্ডেল।
প্রথম কয়েকবার শান্তভাবে বুঝিয়ে বলেছেনও তিনি। কিন্তু তারপরও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই প্রশ্ন বারবার শুনতে শুনতে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

“না, আর অপেক্ষা করা যেতো না। এখন এসব না বলে চুপচাপ নেমে আয়। দেরি করলে বিয়েই হবে না দেখিস।” চোখ রাঙালেন তিনি।
ক্যান্ডেল মুখটা করুণ করলো। ঢিমে স্বরে বলল, “না হোক। কয়েকদিন পরে করি না!”
ধৈর্যের সীমা লঙ্ঘন হলো তার। খরখরে গলায় মেয়েকে শাসিয়ে বললেন, “মার খাবি তুই? বাচ্চাদের মতো শুরু করেছিস! নাম জলদি।”

ক্যান্ডেল আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই জয়িতা এসে হাজির হলো সেখানে।
জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, “কিছু হয়েছে?”
“আর বলিস না! বাচ্চামি করছে। নামতে বল তো ওকে।” আহাজারি করে বললেন ক্যাথি।

জয়িতা অবাক চোখে তাকালো ক্যান্ডেলের দিকে। ওর বিব্রতকর ভঙ্গি দেখে হাসলো মৃদুভাবে। ঝুঁকে গিয়ে ক্যান্ডেলের হাত ধরে অভয় দিয়ে বলল, “বুঝেছি। বিয়ের আগে সবারই এমন নার্ভাস লাগে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। দেখি, আসো।”

ক্যান্ডেল শুকনো মুখে একঝলক তাকালো মায়ের দিকে। তিনিও নীরব চোখের চাহনিতে ভর্ৎসনা করতেই আর রা করতে পারলো না ও। অগত্যা নামতে হলো জয়িতার হাত ধরে।

এগিয়ে গিয়ে চার্চের দরজার সামনে দাঁড়াতেই গাউনটা ঠিকঠাক করে গুছিয়ে দিলেন ক্যাথি স্র জয়িতা।
সোহান রয় নিজের মেয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ততক্ষণে। মেয়ের দিকে মুগ্ধতা মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে বললেন, “বারবি ডল লাগছে একদম।”
ক্যান্ডেল মৃদু হাসলো।
সোহান মেয়ের দুইগাল হাতের মাঝে নিয়ে পরম যত্নে চুমু খেলেন কপালে। অতঃপর মাথার উপরের পাতলা সাদা ওড়নার এক অংশ দিয়ে ঢেকে দিলেন মুখটা। নিজের ডান হাতটা ক্যান্ডেলের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “Let’s go.”
ক্যান্ডেল কয়েক মুহূর্ত তাকালো বাড়িয়ে রাখা হাতের দিকে। তারপর আলগোছে লম্বা শ্বাস নিয়ে আলতো করে বা হাতটা রাখলো হাতটার উপরে।
সোহান প্রশস্ত হাসলেন। ক্যান্ডেলকে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন ভেতরে।
প্রতিটা পদক্ষেপের সাথে সাথে হৃদস্পন্দন বাড়তে লাগলো ক্যান্ডেলের। বিনা কারণেই এলোমেলো দৃষ্টিতে একবার চোখ তুলে সামনে তাকাতেই পাতলা আবরণীর মধ্যে থেকেই ইভানের গাম্ভীর্যে ভরা দৃষ্টির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই যেন অদ্ভুত এক আড়ষ্টভাব আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো ওকে। চট করে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো ও। আর তাকালো না।

বেদীর সামনের জায়টায় এসে থামলেন সোহান। ইভানের দিকে মুক্ত চাহনিতে চেয়ে ভরসার মৃদু হাসিসমেত মেয়ের হাতটা বাড়িয়ে দিলেন ওর দিকে।

ইভান সুক্ষ্ণ এক লাজুক হাসির সাথে হাতটা ধরলো। এটুকু স্পর্শেই যেন ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলো ক্যান্ডেল। অজানা কারণেই বারকয়েক ঢোক গিলে গলা ভিজালো ও। সামান্য পদক্ষেপে সামনাসামনি দাঁড়ানোর সময় কিছুতে বেধে পড়ে যাবার উপক্রম হতেই অন্যহাতে ওর বাহু আগলে ধরলো ইভান।
অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো ক্যান্ডেল৷ চোখে চোখ পড়তেই দ্রুত ঠিক হয়ে দাঁড়ালো ক্যান্ডেল।

উপস্থিত সবাই প্রথমে চমকে গেলেও পরমুহূর্তে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলো।
ক্যান্ডেল আর মাথা তুললো না। সবার সামনে এভাবে হোঁচট খাওয়ায় লজ্জায় শিয়র অবনত করে রইলো ও।

বিয়ে পড়ানো শুরু হলো করলেন যাজক।

🌼
নীল বলাকওয়া ছাড়াই ধপ করে পাশে এসে বসে পড়তেই চমকে গেল ত্রয়ী। পাতলা লাল ওড়না দিয়ে গলা অব্দি টানা ঘোমটার আড়াল থেকে বড়ো বড়ো চোখের দৃষ্টি মেলে তাকালো ও।
নীল প্রশস্ত হেসে মাদকতা মেশানো চাহনিতে চাইতেই লাজুক ভঙ্গিতে তড়িঘড়ি করে চোখ নামালো ত্রয়ী।

নীল হালকা ঝুঁকে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
সামান্য এই উক্তিতে সারা শরীর লজ্জায় শিরশির করে উঠলো ত্রয়ীর।
কিছুক্ষণ নতমুখী হয়েই চুপচাপ বসে রইলো ও। তারপর হঠাৎ করেই ঘাড় ফিরিয়ে অন্যত্র তাকালো।ইতস্তত করে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো, “আ…আপনাকেও।”

ভূতের মুখে রামনাম শুনলে যেমন অবাক হয় তেমন অবাক হলো নীল। কিছুক্ষণ বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো ত্রয়ীর দিকে।
ত্রয়ী তখনো ওর বিপরীতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে রেখেছে। একদমই এদিকে ফিরছে না। তবে ঘোমটার আড়াল থেকেও লাজুক মুখখানা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তার।

নীল প্রশস্ত হাসলো। ভ্র‍ু উঁচু করে ফিচেল গলায় বলল, “মিথ্যে কেন বলছ? তুমি তো আমার দিকে তাকাওই নি। এইযে এখনো তো ওদিকে ঘুরে আছ!”

ত্রয়ী থতমত খেলো খানিক।
এই কথার কী উত্তর দেবে এখন? ও কি আর সরাসরি চেয়ে থেকে দেখেছে নাকি লোকটার মতো! বাড়ি ভর্তি লোকজনের সামনে সে নাহয় একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু ওর তো চক্ষুলজ্জা বলে কিছু আছে নাকি! তাছাড়া ওভাবে না তাকিয়েও তো দেখা যায়। সেভাবেই দেখেছে। কিন্তু সেটাও বা কীভাবে বলবে!
বিভ্রান্তিতে পড়লো ত্রয়ী। ঠোঁটে ঠোঁট চিপে চুপ করে রইলো তাই।
নীল কিছুক্ষণ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থেকে বক্রোক্তি করে বলল, “By any chance, তুমি কি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে?”
এমন উদ্ভট প্রশ্নে চমকে উঠলো ত্রয়ী। ঢোক গিললো অকপটে।
আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল তো! এখন তো মনে হচ্ছে বলাটাই ভুল হয়েছে। নির্ঘাত কথার প্যাচে প্যাচিয়ে মেরে ফেলবে ওকে।

নীল রয়েসয়ে খানিক চেপে এলো ত্রয়ীর দিকে। গায়ের সাথে গা ঘেঁষে বসতেই পুরো শরীর শিরশির করে উঠলো ত্রয়ীর। চকিত ভঙ্গিতে ঝটপট সরে গিয়ে জড়ানো গলায় বলল, “কেউ দেখলে কী ভাববে!”
নীল ফের চেপে এলো। ভ্রুকুটি করে পাত্তাহীনভাবে বলল, “আমার বিয়ে করা বউয়ের পাশে বসেছি আমি, এতে কার কী! তাছাড়া চুমু-টুমু তো আর খাচ্ছি না।”
নীলের এমন ঠোঁটকাটা প্রত্যুত্তরে চোখ ছানাবড়া হলো ত্রয়ীর। বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটা শুরু হলো যেনো। নড়েচড়ে আবার সরে বসতে উদ্যত হবার আগেই নীল থমথমে গলায় বলল, “নড়বা না। চুপচাপ বসো। তোমার কারণেই সবাই বেশি বেশি তাকাবে এদিকে।”
ত্রয়ী ঢোক গিলে চুপচাপ বসলো।

কিন্তু কয়েক সেকেন্ডও বোধহয় অতিবাহিত হতে পারলো না তার আগেই সেখানে হাজির হলো নীলের কাজিনগুলো।
যাদের মধ্যে গোলাপি শাড়ি পরা মেয়েটা কোমড়ে হাত রেখে বলল, “বউকে অনেক দেখেছ ভাইয়া। এখন একবারে বাসর ঘরে দেখো। ভাবীকে নিতে এসেছি আমরা। সে ফ্রেশ হবে, তারপর তাকে সাজাবো আমরা। দেখি, চলো তো ভাবী।”
নীল সরু দৃষ্টিতে তাকালো। তবে কিছু বলার আগেই বাধ্য মেয়ের মতো উঠে দাঁড়ালো ত্রয়ী।
অবাক হলো নীল।

মেয়েটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে ত্রয়ীর হাতটা ধরলো। তারপর নীলের দিকে তাকিয়ে আহামরি ভাব ধরে বলল, “বাহ! অনেক ভদ্র বউ পেয়েছ তো ভাইয়া! ভাবীকে দেখে এখন তোমারো উচিত এমন নম্র-ভদ্র হওয়া।”

নীল চোখ রাঙানি দিয়ে তাকাতেই ভড়কে গিয়ে ত্রয়ীকে নিয়ে কেটে পড়লো ওরা।

🌸
গাড়ির ভেতর জবুথবু হয়ে বসলো ক্যান্ডেল। গাড়ির দরজা লাগিয়ে দুরুদুরু বুকে আড়চোখে ইভানের দিকে তাকালো একবার।
সেই মুহূর্তে সেও ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে একঝলক তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল৷ ক্যান্ডেল নিমিষেই ঝটপট দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। অগোছালোভাবে পলক ঝাপটিয়ে সঙ্গিন মুখ করে নড়েচড়ে বসলো ও।
তবে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেও ও বুঝলো লোকটার গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ একজোড়া চোখ ওর দিকেই স্থবির হয়ে আছে।
ভেতরে ভেতরে কেমন যেনো শিহরণ বয়ে গেল ওর। অস্থিরতা ভর করলো বুকে। শ্বাস আটকে আসতে লাগলো।

ওর অস্থিরতাকে শতভাগ বাড়িয়ে দিয়ে ইভান আচমকা খুব কাছে এগিয়ে আসতেই পিলে চমকালো ওর। আশঙ্কিত, বড়ো বড়ো চোখ মেলে তাকিয়ে একদম সিটিয়ে গেল সীটের সাথে।

ইভান খুব নির্বিকার ভঙ্গিতে ওর কাছ ঘেঁষে সামনের দিকে ঝুঁকে গাড়ির দরজা খুললো। তারপর খুব স্বাভাবিক ভাবে গাড়ির দরজার বাহিরে রয়ে যাওয়া ড্রেসের অংশগুলো একহাতে ভেতরে গুছিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করলো। অতঃপর সরে গিয়ে বসলো স্বস্থানে।

ক্যান্ডেল থমকালো। বোকার মতো পলক ঝাপটালো কয়েকবার। শেষে নিজের নির্বুদ্ধিতা বুঝে সোজা হয়ে বসলো চুপচাপ।

🌼
ত্রয়ীকে সাজিয়ে গুছিয়ে গেস্ট রুমে নিয়ে এলো গোলাপি শাড়ি পরা মেয়েটা। ওর নাম কথা। নীলের মামাতো বোন।

সে ত্রয়ীকে ডিভানে বসিয়ে দিতে দিতে বলল, “কষ্ট করে একটু বসে থাকা লাগবে ভাবী। বাসরঘর সাজানো হয়নি এখনো। আরেকটু অপেক্ষা করো।”

ত্রয়ী বসতেই সেদিনের কুকুরটা এসে ঢুকলো ঘরে। লেজ নাড়তে নাড়তে ত্রয়ীর পাশে এসে দাঁড়াতেই কথা সেটার দিকে একপলক তাকিয়ে বলল, “যাক ভালো, এলভির সাথে থাকো তুমি। আমি ওদিকে গিয়ে হেল্প করি। একা ভয় করবে?”

দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে ‘না’ জানিয়ে দিলো ত্রয়ী।
কথা মুচকি হাসলো। বলল, “ভাইয়া কিন্তু এখন মোটেও তোমার কাছে আসতে পারবে না। বুঝছো! কারণ বউ, বাসরঘর দুটোর জন্য আজ অনেক
টাকা গুনতে হবে তাকে। তারপরই পাবে তোমাকে। আর তোমাকেও ততোক্ষণ সবুর করতে হবে।”

কথার ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্যে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো ত্রয়ী। এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকালো এদিকওদিক।

“আসছি আমি একটু পরেই।” বলতে বলতে বেরিয়ে গেল কথা।

সে বেরিয়ে যেতেই মুক্ত শ্বাস ফেললো ত্রয়ী। এতক্ষণ পর সহজ, স্বাভাবিক হয়ে বসলো ও। সেই থেকে এতসময় ধরে এদের উলটোপালটা কথায় কান ঝালাপালা হয়ে আছে ওর।
এখন আর যাই হোক, অন্তত এসব ঠোঁটকাটা কথাবার্তা তো শুনতে হবে না ওকে!

ত্রয়ী এলভির দিকে তাকালো। সে লেজ নাড়িয়ে আরেকটু কাছাকাছি এগিয়ে আসতেই অধর ছড়িয়ে হাসলো ত্রয়ী। হাত দিয়ে মাথায় উপর আলতো করে ছুঁয়ে দিতেই আহ্লাদিত হয়ে কোলের উপর দুটো পা তুলে দিলো ও।
এলভির এমন কাণ্ডে ত্রয়ীর ঠোঁটের হাসিটা প্রসারিত হলো আরো।
আদুরে ভঙ্গিতে এলভির গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গলার কাছের নেমপ্লেটে আরেকবার চোখ আটকালো ত্রয়ীর। সেটা হাতে ধরেই হাসিটা স্তিমিত হলো ওর।
হঠাৎই মনে হলো, ফার্স্টলাভ কে ছিল তার? আর থাকলে তো কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু এখনো নাকি সেই মেয়েটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতোই গুরুত্বপূর্ণ হলে তাকে কেন বিয়ে করলো না সে!

এমন নানা রকম প্রশ্ন উদ্ভব হতে লাগলো মন মস্তিষ্কে। যার সবটার উত্তরই অজানা ওর।

🌸
ক্যান্ডেল ল্যাগেজ খুলতে উদ্যত হতেই মীরা নামের মেয়েটা বলল, “থাক থাক, ভাবী তুমি গিয়ে ফ্রেশ হও। আমি তোমার ল্যাগেজের কাপড় গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিচ্ছি। দেখি দেও।”

ক্যান্ডেল দ্বিরুক্তি করার আগেই মীরা ল্যাগেজটা টেনে নিয়ে সরিয়ে রাখলো আলমারির পাশে।

ক্যান্ডেল অপ্রকৃতস্থ হয়ে বলল, “আমার কাপড় নিবো না?”
মীরা ভোলাভালা হাসি দিয়ে বলল, “এগুলো না, শাড়ি পড়তে হবে। তুমি বরং এই তোয়ালেটা নিয়ে শাওয়ারে ঢুকে পরো, আমি শাড়িটা নিয়ে আসছি। আর ভেতরে ঢুকে এই ড্রেসটা দিয়ে দেও। এতো সুন্দর ড্রেসটা ভিজে গেলে সমস্যা।”

ক্যান্ডেল মাথা নেড়ে সায় জানালো। অতঃপর ওদের সাধুসুলভ ব্যবহার আর মিটমিটে হাসির পেছনে থাকা দুষ্টু মতলবের বিন্দুবিসর্গও আন্দাজ না পেরে ওদের কথামতোই সব করলো।

ফলতঃ ঝামেলায় পড়ে গেল লম্বা শাওয়ারের শেষে।
শাড়ি তো দূর, মেয়েগুলোর হাসাহাসি আর কথাবার্তার টু শব্দও এলো না আর। বেশ অবাক হলো ক্যান্ডেল।

অগত্যা বাথরুমের দরজা অল্প খানিকটা খুলে রুমে উঁকি দিলো ও।
পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়েও যখন একটা মানুষকেও না দেখলো তখন বেশ অবাকই হলো।
একটু আগেও তো কতগুলো মেয়ে ছিল এখানে। এটুকু সময়ে উধাও হয়ে গেল কোথাও!
তার চেয়েও বড়ো কথা, ওকে কাপড় চোপড় না দিয়েই ওরা গায়েব হয়ে গেল কেন!

বারকয়েক পলক ঝাপটিয়ে বোকার মতো চেয়ে রইলো ক্যান্ডেল।
আচমকাই কাপড়ের বিষয়টা মাথায় আসতেই অবান্তর চিন্তায় চোখ ছানাবড়া হলো ওর। চট করে ল্যাগেজের উদ্দেশ্যে আশেপাশে চোখ বুলালো।
তবে ওর অবাঞ্চিত ধারণা সত্যি হলো৷ পুরো রুমটায় অতবড়ো ল্যাগেজটার বিন্দুমাত্র হদিস পাওয়া গেল না।
ক্যান্ডেল থমকালো। এতক্ষণে পুরো বিষয়টা পানির মতো পরিষ্কার হতেই বুকের পানি শুকিয়ে গেল ওর। এমন বেজার পরিস্থিতিও আসতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি ও।

শুকনো মুখে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিয়ৎপল বিভ্রান্তিকর চাহনিতে চেয়ে রইলো ও।

এখন আলমারিতে খোঁজাটাই একমাত্র রাস্তা। সেখানে কিছু না থাকলে আজ খুব লজ্জায় পড়তে হবে ওকে।

ক্যান্ডেল অস্বস্তিকর নিঃশ্বাস ফেললো। অবশেষে বেরিয়ে এলো তোয়ালে প্যাচানো শরীরে।
তড়িঘড়ি করে আলমারির দিকে এগিয়ে দুইপাল্লা খুললো। জহুরি চোখে সেটার ভেতরে চোখ বুলাতেই ভ্রু খুব বাজেভাবে কুচকে গেল ওর। স্তম্ভিত চোখে ঝুলিয়ে রাখা অপ্রীতিকর ড্রেসগুলো হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতেই পায়ের নিচের মাটি সরে গেল ওর।

এসব কী! আর ওর জামাকাপড় কোথায়!

হকচকিয়ে গেল ক্যান্ডেল। রাগে, দুঃখে শরীর জ্বলতে লাগলো ওর।
বুঝতে পারলো না এখন কী পরবে। কারণ যা রেখে গেছে তা মোটের পরার মতো না। ওসব পরা, না পরা সমান।

মুখটা করুণ করে আরেকবার চিরুনি তল্লাশি করে খুঁজলো ও। কিন্তু বিনিময়ে পরার মতো কিছুই পেল না বলে মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেল।

ঠিক তখনি ওর নাজেহাল অবস্থার ষোলকলা পূর্ণ করতেই যেনো রুমে ঢুকলো ইভান।
ভূত দেখার মতো চমকে তাকালো ক্যান্ডেল।
ততোক্ষণে ওর আদ্যোপান্ত চোখ বুলিয়ে ইভান নিজেও অবাক হলো।

ওর বিস্ময়কর চাহনির সাথে চোখাচোখি হতেই ধরফর করে ঘাড় ফিরালো ক্যান্ডেল। দুইপা এগিয়ে আলমারি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ড্রয়ারের হ্যান্ডেলটা চেপে ধরলো হাতের মুঠোয়।
বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস নিতে নিতে চোখ খিঁচল। মনে মনে স্বগতোক্তি করলো, It’s ok, It’s ok. Be normal, be normal.

স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করেও পারলো না ও। শরীর তিরতির করে কাঁপতে লাগলো। চোখ বুজে গাঁট হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলো।

সেকেন্ড কতক পেরিয়ে যখন ঘাড়ের কাছটায় উষ্ণ নিঃশ্বাসের উপস্থিতি টের পেলো তখন ঝটপট চোখ খুললো ও। ইভান যে একদম ওর পিছনে, খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা আঁচ করতে পেরেই চরমভাবে শিউরে উঠলো। জড়সড় হয়ে নড়েচড়ে উঠতেই ইভান ওর কানের কাছে ফিচেল গলায় বলে উঠলো, “You are looking damn hot.”

চমকে গেল ক্যান্ডেল। চকিত দৃষ্টিতে বড়ো বড়ো চোখ মেলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল একজোড়া সুডোল, বক্র চাহনিবিশিষ্ট চোখের সাথে। যার ঠোঁটের আগার মুচকি হাসিতে চরম অসভ্যতামির বহিঃপ্রকাশ।

ক্যান্ডেল একটু ভড়কালো। ঘুরে দাঁড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইতেই দুইপাশে হাত রেখে আটকে দিলো ইভান।

থমকালো ক্যান্ডেল। অনুরণিত দৃষ্টিতে তাকালো ইভানের দিকে।
লোকটার পুরুষালি, গভীর দৃষ্টি ওর সর্বাঙ্গে ঘুরছে বুঝতেই একরাশ আড়ষ্টতায় ডুবে গেল ও। চকিতেই তোয়ালেটা অযথাই টেনেটুনে নিতে লাগলো।

ইভান চোখে হাসলো। চোখ তুলে আলমারির ভেতরে থাকা ড্রেসগুলোর দিকে তাকালো।
এতক্ষণে পুরো বিষয়টা বুঝে ফেললেও শুধুমাত্র ক্যান্ডেলকে হেনস্তা করতেই শঠভাবে বলল, “এতো ট্রান্সপারেন্ট ড্রেসও পরতে বলিনি আমি। কিন্তু তুমি পরতে চাইলে সমস্যা নেই। আমি তো বলেছিই আমি বেডরুমে এলাও করবো।”

কথাটা কর্ণধার হতেই রাগে লজ্জায় দাঁত কিটকিট করলো ক্যান্ডেল। পালটা জবাব দিতে গিয়েও দিলো না। দিয়ে কী হবে!
যেমন কাজিন তেমন তাদের ভাই। সব Pervert, অসভ্যের দল।

ক্যান্ডেল কুঞ্চিত ভ্রুতে ফোঁস করে বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেললো। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অসংলগ্ন চাহনি আর কথাবার্তা শোনার মানেই হয় না। এরচেয়ে চাদর মুড়িয়ে শুয়ে পড়াই ভালো। অন্তত সকাল অব্দি এছাড়া উপায় নেই আর।
তাই দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখেই গমগমে গলায় বলল, “সরো।”

ইভান সরলো না। স্থির, সটান হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো একভাবে।

ভ্যাবাচেকা খেলো ক্যান্ডেল। কুঞ্চিত চোখে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই ইভান ওর গায়ের তোয়ালেটার দিকে ইশারা করলো। গম্ভীর গলায় বলল, “এটা খোলো।”

আচমকা এমন উদ্ভট কথায় প্রচন্ডরকম ভড়কে গেল ক্যান্ডেল। বিস্ফোরিত চোখমুখে ইভানের দিকে তাকিয়ে চটপট দু’হাতে তোয়ালেটা আঁকড়ে ধরলো। থরথরিয়ে উঠলো সারা শরীর। অপ্রকৃতস্থ কণ্ঠে বলল, “মানে!”

ইভান ভাবলেশহীন ভাবে তাকালো। বাঁকা গলায় বলল, “এভাবে তাকানোর কিছুই নেই। এই তোয়ালেটা আমার। ফ্রেস হবো আমি।”

ক্যান্ডেল হকচকালো। কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইলো বোকার মতো। ত্রাসে পরিপূর্ণ ভীত কণ্ঠে বলল, “আ..আমি কী পরবো তাহলে?”
“তুমি কী পরবা সেটা আমি কীভাবে বলব?” ইভানের পাত্তাহীন কথার ধরণে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ক্যান্ডেল। খুব বিপদে পড়লো মনে হলো। তটস্থ হয়ে বলল, “অন্য… অন্য তোয়ালে নেও।”
“আমার এটাই লাগবে।” একরোখা মনোভাবের সাথে বলল ইভান।
ক্যান্ডেল বড়ো বড়ো চোখে তাকালো।
ইভানের টানটান চোখের চাহনি, ঠোঁটের কোণের উদ্দেশ্যপূর্ণ বাঁকা দেখে যা বোঝার বুঝে গেল ও।
সে ইচ্ছে করেই ওকে জব্দ করতে চাচ্ছে। চাইলেই পারে অন্য একটা তোয়ালে নিয়ে আসতে। কিন্তু তা আনলে তো ওকে হয়রানি করা হবে না। তাইনা!

“তুমি দিবা, নাকি আমি নিয়ে নেবো?”

লাফিয়ে উঠলো ক্যান্ডেল। জড়সড় হয়ে পেছনে চেপে গিয়ে দরাজ কণ্ঠে বলল, “একদম না! ভুলেও না।”
“তো তাড়াতাড়ি দেও।”
ইভানের গম্ভীর, নির্বিকার কণ্ঠে রাগে দাঁতে দাঁত চিপলো ও। এমন আস্ত একটা অসভ্য লোক জীবনেও দেখেনি ও।
শুধু সুযোগের অপেক্ষা। বজ্জাত লোকটাকে দেখিয়ে দেবে তখন।

দাঁত কিড়মিড় করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো ক্যান্ডেল। একপলক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটকাট গলায় বলল, “আমার ল্যাগেজটা ওরা নিয়ে গেছে। ওটায় আছে আমার জামাকাপড়। দয়া করে ওটা নিয়ে আসো তাহলেই হবে।”

“আমি কেন আনবো?” ইভানের গম্ভীর গোছের গা-ছাড়া কথার ধাঁচে শরীর জ্বলতে লাগলো ক্যান্ডেলের।

বুঝলো, লোকটা প্রতিশোধ নেবার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে আজ। উদ্দেশ্য হলো ওকে হেনস্তা আর হয়রানি করা।
তাই আর কথা বাড়ালো না ক্যান্ডেল। অগত্যা ঘুরে তাকালো আলমারিতে ঝুলতে থাকা ড্রেসগুলোর দিকে। ব্যগ্রভাবে চোখ বুলালো। প্রচন্ড অস্বস্তির সাথে হাত বাড়িয়ে একটা ড্রেস বের করে নিতে যেতেই ওর হাত ধরে থামিয়ে দিলো ইভান।
চমকালো ক্যান্ডেল। বিস্মিত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখাচোখি হলো গম্ভীর চোখজোড়ার সাথে।

ইভান অতি ঘনিষ্ঠ হয়ে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “আমি চাই তুমি আমাকে পরো।”

ক্যান্ডেল ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। বোকার মতো পলক ফেললো বারকয়েক। অবশেষে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে নিতেই আচমকা ওকে কোলে তুললো ইভান।
চমকে উঠলো ও। বড়ো বড়ো চোখ মেলে ইভানের দিকে তাকাতেই তার রাশভারি চোখের অন্যরকম চাহনি দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ও। ফাঁকা একটা ঢোক নেমে গেল গলা বেয়ে।

ইভান ওকে ফুল সজ্জিত বিছানায় নিয়ে শোয়াতেই ভড়কে গেল ও। হঠাৎ এমন উদ্ভট ব্যবহার হজম করতে বেশ বেগ পেতে হলো ওকে।
তটস্থ হয়ে আগেভাগে বলল, “কী করতে চাইছ তুমি!”

ইভান ততোক্ষণে মধ্যকার দূরত্ব শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনে রাশভারি কণ্ঠে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “বাসর রাতে তোমার লিগ্যাল হাসবেন্ড তোমার সাথে কী করতে চাইতে পারে বোঝো না?”

(চলবে…)

[ কিছু কথা – খ্রিস্টান ধর্মের বিয়েতে কিস বিষয়ক ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি শুনেন –
গতদিন একজন কমেন্ট বলেছেন
“কিস করার নিয়ম বাধ্যতামূলক, নাহলে খ্রিস্টানদের বিয়ে অসম্পূর্ণ থাকে।”
আর “কোনো ধর্ম সম্পর্কে লেখার আগে সেই ধর্ম বিষয়ে সবকিছু জানা আবশ্যক।”

এটা পড়ে আমি ‘থ’ মেরে কিছু সময় বসে ছিলাম।

কারণ প্রথমত, বিয়ের শুরু হওয়ার পরে আমি শেষ অব্দি বিয়েটা লিখিনি।
সো কিস হয়নি কিনা সেটা আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন? কিস হয়নি এটাও লিখিনি, কিস হয়েছে সেটাও লিখিনি। পুরো বিয়েটাই লিখিনি। ইচ্ছা ছিলো লেখার, তবে টাইম পাইনি।😅

তার চেয়েও বড়ো কথা, এটা একদমই আপনার ভুল ধারণা যে কিস না করলে বিয়ে অসম্পূর্ণ থাকবে।

কোনো বিষয়ে বলতে হলে প্রথমে আপনাকেও জানতে হবে।
আমার অনেক ফ্রেন্ড খ্রিস্টান। বর্তমানে আমার রুমমেটও খ্রিস্টান + এ অব্দি আমি অনেক খ্রিস্টান বিয়ে attend করেছি।

ক্যাথলিক চার্চেই কিসটা বেশির ভাগ হয়। অন্য চার্চে খুব রেয়ার। তবে যারা কিস করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে তারা করতে পারে। যদি বোধ না করে, লজ্জা বা অস্বস্তি লাগে, তবে তারা করে না।

এই কিসটা যে বাধ্যতামূলক তা সম্পূর্ণ আপনাদের ভুল ধারণা।
বিশ্বাস না হলে গুগোলে সার্চ দেন যে

”is it compulsory to kiss in christian marriage?”

স্পষ্ট লেখা আসবে “বাইবেলে এমন নিয়মই নেই।”
(আমি কমেন্টে স্ক্রিনশট দিয়ে দিলাম, দেখে নিবেন।)

সব দেশে করাও হয়না কিস।
বিদেশেই করা হয়। বলতে গেলে বিদেশে এটা হয়ই। ওদের দেশে এমনটা ন্যাচারাল!

আমাদের বাংলাদেশে হয়না সব বিয়েতে।

আপনি যদি গুগলে বিশ্বাসী না হন তাহলে পার্শ্ববর্তী চার্চে জিজ্ঞাসাবাদ করেন যে কিস করটা বাইবেলের নিয়ম কিনা। আর বিয়ে অসম্পূর্ণ থাকবে কিনা।

আমার খ্রিস্টান ফ্রেন্ডগুলো অন্তত ভুল নিউজ দিবে না আমাকে। আমি তাদের থেকে জেনেছি।
এমনকি নিজে দাড়িয়ে থেকে বিয়ে দেখেছি। এমনকি এ বিষয়ে জানি৷

আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, জেনে তারপর লেখা উচিত।
আমি জেনে তবেই লিখেছি।
আর অন্য ধর্মের নিয়মও ভঙ্গ করিনি🙂।
আমার খুব ভালো ভাবেই জানা আছে যে, ধর্ম বিষয়ে উলটাপালটা লিখলে লেখক বা লেখিকাকে বাজেভাবে হেনস্তা হতে হয়😑।
ধর্ম বিষয় নিয়ে আমি যতো ভয় পাই, বাঘকেও অতোটা পাইনা😁।

তবে আপনি বললেন যে আপনি বিয়েতে কিস করতে দেখছেন, জানেন আর শুনেছেন।
এখানেই আপনার ভুল জানা, শোনা আর দেখাতে হয়তো টিভির মুভিতে দেখেছেন।

যাইহোক বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। কারণ আজ আমি না জেনে থাকলে আপনার এই ভুল ধরণাটাকেই সত্যি ভেবে নিতাম। আর পরবর্তীতে অন্যদেরও ভুল জানাতাম। তাই যেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকবে সেটা নিয়ে কনফিডেন্সের সাথে বলুন। কিন্তু না থাকলে ধারণা নিন তারপর বলুন।

আপনি বলেছেন বিষয়টা বাজেভাবে না নিতে। আমি নিই নি৷ তবে যে জিনিসটা আমার ভালো লাগে নি সেটা হলো আপনি নিশ্চিত না হয়েই কমেন্টে লিখেছেন, “অন্য ধর্মের নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে।
অন্য ধর্ম বিষয় আমি না জেনে লিখেছি।
আর বিয়ে অসম্পূর্ণ।”

অথচ আমি কোনো ভুল করিনি।

ধন্যবাদ।

(আমার খ্রিস্টান ফ্রেন্ডটাকে আমি মাত্র জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি বিয়েতে কিস করবা?
সে বলল, না। কারণ সে কম্ফোর্ট ফিল করেনা + তাদের এটা বাধ্যতামূলক না😊।)

(আশা করি আমি বিষয়টা সব পাঠকদেরই ক্লিয়ার করতে পারলাম।)গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৬ : #প্রণয়
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

মেঘবিহীন নিষুপ্তি মোড়া গগনে আজ পূর্ণচন্দ্র। জোছনা যেনো ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে ধরনীতে। সাফেদরাঙা রোশনাইয়ে বুঁদ হয়ে আছে চারপাশ। যার কিয়দংশ জালানার গ্রীল ভেদ করে এসে গলে পড়েছে ঘুমন্ত ত্রয়ীর উপরে।
ডিভানেই মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।
ইচ্ছে করে নয়। দিব্যি জেগে থেকে অপেক্ষাই করছিলো। তবে আস্তে আস্তে কখন চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারেনি।

ঘড়ির কাঁটা বারোর ঘরে আসার কিয়ৎপল আগেই রুমটার সামনে এসে দাঁড়ালো নীল। পুরো রুমটা অন্ধকার দেখে অনেকটা অবাকই হলো বোধহয়।

মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে গেছে ওরা!
ভ্রু কুচকে গেল নীলের। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনবাতি জ্বেলে সন্ধানী চোখে পা রাখলো ঘরের ভেতরে।
আঁধার ছাপিয়ে কৃত্তিম আলোতে ঘরটা কিছুটা আলোকময় হতেই চোখে পড়লো নিদ্রামগ্ন ত্রয়ীকে।
জড়সড় হয়ে বামকাত হয়ে শুয়ে আছে মেয়েটা। ভর্তি চুড়ি পরা ডান হাতটা বেরিয়ে এসেছে ডিভানের বাহিরে।
তার পাশেই থুতনি ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে এলভি। যদিও আলোর ঝলকানিতে মাথা তুলে তাকিয়েছে সে।

নীল অবাক হলো। কয়েক মুহূর্তের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ত্রয়ীর দিকে।

যাহ্ বাবা! বউ তার ঘুমিয়ে গেছে! তাও গেস্ট রুমের ডিভানে!

সময় নিয়ে ধাতস্থ হলো নীল। কয়েক মুহূর্ত ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করলো কিছু।
ত্রয়ীকে ডাকবে কি ডাকবে না বুঝতে পারলো না।

ওদের ঘর সাজানো সবে শেষ হয়েছে। টাকা পয়সার দেনাপাওনা মিটিয়ে মেয়েটাকে নিতে এসেই দেখে সে কিনা ঘুমিয়ে পড়েছে গেস্ট রুমেই!

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো নীল। অধরকোণে ঠাঁই পেলো অপার্থিব নৈশব্দ হাসি। অবশেষে না ডাকার সিদ্ধান্তই নিলো সে।
ঘুমোচ্ছে ঘুমাক। ক্লান্ত হয়তো।

নীল ফোনের বাতি নিভালো। কাছে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো ডিভানের সামনে, এলভির পাশে।
এলভি এখনো যায় নি। সেই থেকে বসে আছে স্বস্থানে। শুধু ত্রয়ী ঘুমিয়ে পড়ার পর লাইটটা অফ করতে একবার উঠেছিল।
এটা খুব ভালোভাবেই শেখা আছে ওর। নীল ছোটো থেকেই শিখিয়েছে।
আর সুইচগুলোও মেঝে থেকে কম উচ্চতায় হওয়ায় বেগ পেতে হয়না তাকে। ছোটো থাকতে একটু সমস্যা হতো।

ত্রয়ীর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এলভির দিকে একবার তাকালো নীল। ভ্রু বাঁকিয়ে খুব নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বলল, “পাহারা দিতে বলেছিলাম। ঘুম পাড়িয়ে দিতে বলেছি?”

এলভি ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে লেজ নাড়লো শুধু।
সে তো ঘুম পাড়ায় নি। শুধু ঘুমোনোর পর লাইটটা বন্ধ করে দিয়েছে।

নীল আবার ত্রয়ীর দিকে তাকালো। অন্ধকার সয়ে যেতেই চাঁদের জোছনায় স্পষ্ট দেখতে পেল তার স্নিগ্ধ মুখ। অপার্থিব সৌন্দর্য।
মৃদু হাসলো নীল। একরাশ মুগ্ধতা ভর করলো চোখে। নিমেষহীন চাহনিতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।

তারপর হাতের ফোনটা বিছানাতে রেখে সেখান থেকে বালিশ নিয়ে এলো একটা। ডিভানের এক কোণে সেটা রেখে ঝুঁকলো ত্রয়ীর দিকে।
আলতো করে ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করিয়ে শোয়ালো ওকে। অতি সন্তর্পণে বালিশটা দিয়ে দিলো মাথার নিচে।
ফলে একটু নড়েচড়ে উঠলো ত্রয়ী। তবে চোখ খুললো না। আরাম করে শুয়ে রইলো।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নীল। চাদর এনে গায়ে টেনে দিতে গিয়েই খেয়াল হলো ত্রয়ীয় গায়ের গহনাগুলোর দিকে।
গলায়, কানে, হাতে ভর্তি করিয়ে রেখে দিয়েছে ওরা।
অবাক হলো নীল। ভ্রু কুচকে গেল বিস্ময়ে।

বাসররাতে এতোকিছু পরায় কেউ? শুধু শুধু হয়রানিতে ফেলা!
এসব নির্ঘাত কথা আর ওই বাকী বিচ্ছুগুলোর কাজ!
ওদের উপর চরম বিরক্ত হলো নীল।

অগত্যা গহনাগাঁটি খোলার জন্য বসলো সে।
মেয়েটার ঘুমের বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত না ঘটিয়ে খুব আস্তেধীরে সব খুলতে গিয়েই পাক্কা বিশ মিনিট লাগিয়ে ফেললো নীল।
তবে এখানেই শেষ নয়। শাড়ির সেফটিপিন খুলতে গিয়েও আরো পনেরো মিনিট হিমশিম খেতে হলো ওকে।

প্রথমে ভেবেছিলো কাধের কাছের পিনটা খুলে না দিলে ঘুমের ঘোরে নড়াচড়া করলে শরীরে বিঁধে যেতে পারে। আর সেটা খুলতে গিয়েই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ও।
একটা নয়, সেখানে তিনটা পিন আটকেছে তারা। তাছাড়া বুকের কাছে তিনটা, পিঠের কাছে তিনটা আর কোমড়ের কাছে পাঁচটা।
সর্বমোট চৌদ্দটা! ভাবা যায়!
সাধারণ একটা শাড়িতে এতো এতো সেফটিপিন কেউ মারে!

নীলের ইচ্ছে করলো এখনি গিয়ে ওদের সবগুলোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে। হয়রানির তো একটা লিমিট থাকে! সেটাও অতিক্রম করে বসে আছে ওরা।

ভাগ্যিস খেয়াল করেছিল। নাহলে নিশ্চিত গায়ে বিঁধতো ত্রয়ীর।

মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো নীল। এই শীতের রাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে তার।
গহনা আর পিনগুলো বিছানার উপর রেখে ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটা বন্ধ করলো ও। পিন খোলার সময় দরকার পড়েছিলো ওটা।

শার্টের হাতায় কপাল মুছে হাঁফ ছাড়লো নীল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো দরজার দিকে।
এলভি উলটো ঘুরে বসে আছে সেখানে।
আসলে নীলই পিনগুলো খোলার সময় বাহিরে গিয়ে ওভাবে বসে থাকতে বলেছিলো ওকে। আর সেও বাধ্য ছেলের মতো পালন করেছে।

নীল মুচকি হাসলো। আস্তে করে শিস বাজাতেই চকিতে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো এলভি।

নীল ওকে বিছানায় শুয়ে পড়তে ইশারা করতেই এগিয়ে এলো ও। একলাফে উঠে বসলো বিছানায়। সামনের দুই পায়ের উপর থুতনি রেখে শুয়ে পড়তেই নীল একটা চাদর টেনে দিলো ওর গায়ে। মাথায় একচোট হাত বুলিয়ে দিয়ে নিচুস্বরে বলল, “গুডনাইট।”

এলভি স্বচ্ছ দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

নীল এগিয়ে গেল ডিভানের কাছে। ত্রয়ীর পাশের অবশিষ্ট জায়গাটুকুতে বামকাত হয়ে শুয়ে হাত আগলে বুকে টেনে নিলো ওকে।
ত্রয়ী ঘুমের আবেশেই গুটিশুটি মেরে লেপ্টে এলো ওর শরীরের সাথে।
নীল নীরব হাসলো। কপালে চুমু এঁকে পলকহীন চেয়ে রইলো ওর মুখপানে।

🌻
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের টাই বাঁধতে বাঁধতেই তিয়াসার দিকে একপলক তাকালো প্রয়াস।

সে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। গভীর মনোযোগ ওর গলদেশেই নিবদ্ধ এখন। খুব সুক্ষ্ণ নজরে টাই বাঁধা দেখছে সে।

সবিস্ময়ে মুচকি হাসলো প্রয়াস। ভ্রু উঁচু করে নামিয়ে বলল, “কী দেখো?”

তিয়াসার ধ্যান ভাঙলো। চকিতে চোখ পিটপিটিয়ে টাইয়ের উপর থেকে চোখ তুলে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
তার হাসির বিপরীতে মৃদু হেসে প্রত্যুত্তর জানালো সে।

প্রয়াস কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো। টাই খুলে তিয়াসার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওর দিকে ঝুঁকলো।
অধরসুধায় হাসি ফুটিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল, “নেও, পরাও।”

তিয়াসা চোখ পিটপিটালো। হাতের টাই-টার দিকে একঝলক তাকিয়ে উচ্ছল হাসি ফুটলো ওর ঠোঁটজুড়ে।
চোখের তারায় প্রাণবন্ততা নিয়ে প্রয়াসের দিকে তাকালো ও। অতঃপর নির্দ্বিধায় সেটা পরিয়ে দিতে লাগলো প্রয়াসের গলায়।
প্রথমবার হিসেবে অপারগতা থাকলেও সেটা শুধরে দিলো প্রয়াস।
তিয়াসা খুব ভালোভাবেই পারলো।
প্রয়াসের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাতেই প্রয়াস অধর প্রসারিত করে মৃদু হাসলো। চুলের ভাঁজে হাত রেখে বলল, “ভালো হয়েছে।”
এতটুকু কথাতেই অনেক খুশি হলো তিয়াসা।

প্রয়াস বিছানা থেকে অফিসের ফাইলগুলো হাতে তুলে নিতে নিতে বলল, “একা একা বাহিরে যাবা না। আর কেউ আসলে না দেখে দরজা খুলবা না। ঠিকাছে?”

তিয়াসা মাথা কাত করে সায় জানালো।
প্রয়াস প্রসন্ন হাসলো।
গালের কাছে আলতো করে হাত রেখে বলল, “গুড। কোনোকিছু লাগলে রেখাকে বলো। আসছি তাহলে?”

বলে যেতে উদ্যত হবার আগেই ওর কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো তিয়াসা।
খানিক বিস্মিত হলো প্রয়াস। বোকার মতো তাকাতেই চোখাচোখি হলো তিয়াসার উজ্জ্বল কালো মণিবিশিষ্ট চোখের সাথে।
অনুপলেই চোখের ভাষা পড়তে দেরি হলো না প্রয়াসের। অধর প্রসারিত করে হেসে ফেললো ও।

অতঃপর ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে চুমু খেলো তিয়াসার কপালে।
ঝলমলে হাসির ফোয়ারায় অধর বিস্তৃত হলো তিয়াসার।

এটা তার প্রতিদিনের পাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ইদানীং। আর নিজ পাওয়া আদায় করে নিতে সে সদা সচেষ্ট।

🌼
এক চিলতে রোদ চোখের পাতায় পড়তেই বাজেভাবে চোখ কুচকালো ত্রয়ী। পিটপিট করে খুলতে চেষ্টা করেও রোদের তীব্রতায় আবার মুদে এলো চক্ষু।
চাপা বিরক্তি নিয়ে এক হাত বিস্তৃত করে চোখের উপরে ধরে তীব্র আলোকছটা রোধ করলো ও। এবার আস্তে আস্তে চোখ খুলতে পারলো। নড়েচড়ে উঠতে চাইতেই বুঝলো ও কারো বাহুডোরে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ।

খানিক চমকালো ত্রয়ী।
ঘুমের রেশ কেটে মস্তিষ্ক সজাগ হতেই ঘাড়ের কাছের তপ্ত নিঃশ্বাস আর উদরের উপর বলিষ্ঠ হাতের উপস্থিত খুব ভালোভাবেই টের পেল ও। অপ্রকৃতস্থ হয়ে উঠলো কিছুটা।
কম্পিত হৃদয়ে বারকয়েক পলক ঝাপটিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। ঘাড় ঘুরিয়ে আড় নজরে তাকাতেই বুঝলো নীল ওর ঘাড় বরাবর মুখ গুজে ঘুমোচ্ছে।

অবাক হলো ত্রয়ী। কয়েক মুহূর্ত বোকার মতো চেয়ে থেকে ঢোক গিলে দৃষ্টি ফিরালো। সন্তপর্ণে কয়েকটা বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে চোখ বুলালতেই চোখ চড়কগাছে উঠলো ওর।
ধাতস্থ হতেই বুঝলো এটা গতরাতের সেই গেস্ট রুমটা। আর সে যে ডিভানে বসে অপেক্ষা করছিলো বর্তমানে সেখানেই শুয়ে আছে।
তাহলে কি ও কাল অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল!

চিন্তা করেই সবিস্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেল ত্রয়ীর। লজ্জায়, রাগে নিজের মাথা নিজেরই ঠুকতে ইচ্ছে হলো।
এতো বড়ো ভুল কীভাবে করে ফেললো ও! লোকটার জন্য অপেক্ষা না করেই কীভাবে ঘুমাতে পারলো!
অন্যরাও নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছে এটা! শত হলেও তারা নিশ্চিয় ভালো চোখে দেখবে না এটা।
আর নীল!
সে তো নিশ্চিত রাগ করেছে, তাইনা!

ইতিউতি চিন্তা করে মুখটা রঙহীন হয়ে গেল ত্রয়ীর। নিজের প্রতি খুব ক্ষোভ হতে লাগলো। বেশ অনেকক্ষণ তীব্র অনুশোচনায় ভেতরে ভেতরে ছটফটালো ও। কী কী বলে লোকটার কাছে ক্ষমা চাওয়া যেতে পারে তা মনে মনে গোছাতে লাগলো।

সময়ের সাথে সাথে রোদের তীব্রতাও বাড়তে শুরু করেছে। স্পষ্টতই তার অনুপ্রবেশ আরো একধাপ এগিয়েছে। একদম নীলের গালে, গলায় এসে পড়েছে।
যা প্রখর রোদ, নির্ঘাত ঘুম ভেঙে যাবে।

ত্রয়ী তাড়াহুড়ো করলো। হাত বাড়িয়ে পর্দাটা টেনে দিলো।
বাদামি পর্দায় বাধাপ্রাপ্ত হলো সূর্যরশ্মি। প্রখর সোনালী রোদ রুখে দাঁড়িয়ে পড়লো তার আড়ালে।

ত্রয়ী ফের হাত গুটিয়ে নিলো।
লোকটার এতটা ঘনিষ্ঠে থাকায় কেমন লজ্জা হতে শুরু হয়েছে এতক্ষণে। ঘাড়ের কাছের প্রতিটা তপ্ত নিঃশ্বাস শরীরে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে। শ্বাস প্রশ্বাস নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে ও। গভীর থেকে গভীরে।

অথচ ওকে এমন একটা তোড়পাড় করা পরিস্থিতিতে ডুবিয়ে রেখে সে বেঘোরে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে।

ত্রয়ী ঠোঁটে ঠোঁট চিপে এদিক ওদিক তাকালো। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ মনে হলো, ‘সময় কতো এখন?’
চিন্তায় চোখ বড়সড় করে হলো নিমিষেই।
রোদের অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক বেলা হয়ে গেছে। এগারোটা তো ছাড়িয়েছে।
এতসময় শুয়ে থাকা কি ঠিক হচ্ছে! একে তো নিয়মের বাইরে গিয়ে আগে আগে ঘুমিয়ে পড়েছিল, এখন উঠতেও বেলা বারোটা বাজিয়ে ফেলছে!

মুখটা ফ্যাকাসে হলো ত্রয়ীর।
বুঝলো, ওঠা দরকার এখন।

নীলকে কি ডাকবে!
দোটানায় পড়লো ত্রয়ী। ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দে কাটিয়ে অতঃপর না ডাকার সিদ্ধান্তই নিলো।
শুধু নিজেই উঠে যাবে ভাবলো।
ভাবনা অনুযায়ীই কাজ করলো ত্রয়ী। চাদরের ভেতরে থাকা হাতটা নীলের হাতের উপর আলতো করে রাখলো ও। ঠোঁট কামড়ে অতি সন্তর্পণে, আস্তে করে সরিয়ে রেখে দিলো হাতটা।
তারপর আলতো করে বিপরীত পাশে চেপে গিয়ে কিছুটা সরে এলো।
সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে লোকটার ঘুম নিশ্চিত করে মুখ ফুলিয়ে হাঁফ ছাড়লো।

তবে চাদর সরিয়ে উঠে বসতে যেতেই চমকে গেল ও। চোখ হলো চড়কগাছ।
শাড়ির আঁচল! আঁচল কই গেল ওর!
ভ্যাবাচেকা খাওয়া দৃষ্টিতে কোমরের অংশ থেকে চোখ ঘুরতেই থমকে গেল ও।
নীল ঠিক একদম ওর আঁচলের ওপর ঘুমোচ্ছে!
কী লজ্জাজনক কারবার। সারারাত এভাবে আঁচল ফেলে ঘুমিয়ে ছিলো নাকি ও!

বিস্ফোরিত হলো ত্রয়ীর চোখমুখ। মুহূর্তের জন্য লজ্জার সাগরে ডুবে মরে যেতে ইচ্ছে হলো বোধহয়।
ছি ছি!
এমনটা না হলেও পারতো…!
আচমকা আরো কিছু খেয়াল হলো ত্রয়ীর। খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিলো নিজের সর্বাঙ্গে।
গায়ের গহনাগাঁটি, আর শাড়ির সেফটিপিন? নেই তো! কোথায় গেল?
হা হয়ে চিন্তা করতে গিয়েই চোখ পড়লো বিছানায়। সেখানেই এগুলোকে জড়স্তুপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। ‘ওখানে গেল কীভাবে!’
সেকেন্ড পেরুলো না। তার আগেই উত্তরটাও নিজেই পেয়ে গেল।
চোখ কপালে উঠলো। অকস্মাৎ লজ্জা নামক বলয়ে তুমুলভাবে আবিষ্ট হলো ত্রয়ী। পুরোদস্তুর কেঁপে উঠলো শরীরটা।
লালচে আভা জড়িয়ে গেল মুখটা। হাঁসফাঁস করা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টা চালালো। নিজেকে বুঝ দিলো।
সে এখন তার স্বামী, অন্য কেউ তো নয়! তাছাড়া সে তো খারাপ কিছু করে নি। তাইনা!
হ্যাঁ, তাই-ই তো। তাই।

মেয়েলি মন তাও লজ্জায় বুঁদ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নতমুখে এদিক ওদিক তাকালো ত্রয়ী। ঘেমে ওঠা মুখটা হাতের উলটো পিঠে মুছলো। নাজুক চাহনিতে লোকটার দিকে একপলক তাকালো। তারপর ঢোক গিলে কম্পিত হাত বাড়ালো শাড়ির আঁচলের অংশে। খানিক ঝুঁকে আলতো করে টেনে নিতে চাইতেই নড়েচড়ে উঠলো নীল।

চমকে উঠলো ত্রয়ী। মনেপ্রাণে লোকটার না ওঠার প্রার্থনা জানিয়েও লাভ হলো না।
ঘুম ঘুম চোখ মেলে তাকিয়েই ফেললো সে।

নিদ্রা জড়ানো সেই গভীর চোখে চোখাচোখি হতেই লাল জবার মতো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো ত্রয়ীর মুখখানা। ধড়ফড়িয়ে দৃষ্টি সরালো ও।
কয়েক সেন্টিমিটার ব্যবধানে থাকা পুরুষটি
পূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছে বুঝে ঝট করে চাদরটা বুক অব্দি টেনে চেপে ধরলো ত্রয়ী।
নাভিশ্বাস উঠে গেল ওর। এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে কোনমতে বলল, “আমার… আমার শাড়ির উপর আপনি…। একটু উঠবেন?”

নীলের কান অব্দি কথাগুলো পৌঁছালো কিনা তা বোঝা গেল না।
কারণ সে উত্তর দিলো না। পলকও ফেললো না। শুধু চেয়ে রইলো অনিমিষ নেত্রে।

ত্রয়ী অন্যত্র দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখেও তা বুঝলো। সাথে লোকটা এখন কী করতে পারে তাও আঁচ করতে পারলো। আর পারলো বলেই লজ্জায়, আড়ষ্টতায় মিলেমিশে একাকার হয়ে পড়লো ও।

নীল হাত বাড়ালো। কোমড় পেচিয়ে ত্রয়ীকে বুকের উপর টেনে আনতেই সলজ্জ ভঙ্গিতে গুটিশুটি মেরে লেপ্টে গেল ও। সজোরে ধকধক করা হৃদপিণ্ডটা তার গতি সমান তালে বাড়িয়ে দিলো।

“ত্রয়ী?”
নীলের আচমকা আচ্ছন্ন, ভরাট কণ্ঠের ডাকে শিউরে উঠলো ত্রয়ী। নিঃশ্বাস আটকে এলো। গায়ে কাঁটা দিলো যেনো।
এই প্রথম বোধহয় লোকটা নাম ধরে ডাকলো তাকে।
ত্রয়ী ঢোক গিললো। ধাতস্থ হয়ে অস্ফুটে বলল, “হু?”

সেকেন্ড দুয়েক নিস্তব্ধতায় কাটলো। নীল কোমরের উপরে রাখা হাতটা ত্রয়ীর চুলের ভাঁজে গলিয়ে দিয়ে একই স্বরে বলল, “এভাবে কাঁপছো কেন তুমি?”

ত্রয়ী থতমত খেল। ভদ্রতার খাতিরে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অস্বীকার করলো, “ক…কই? না তো।”

“কাঁপছো না?” নিঃশব্দে হেসে মৃদুস্বরে ফের প্রশ্ন ছুড়লো নীল।

উৎকট লজ্জায় চোখমুখ কুচকে ফেললো ত্রয়ী।
ইস্, লোকটা বুঝে গেল! ধুর!

টুকটুকে গালে নিশ্চুপ রইলো ও।
সে কি ইচ্ছে করে কাঁপছে নাকি! সে তো কাঁপতে চায় না। কিন্তু এভাবে আস্ত একটা পুরুষ মানুষের সংস্পর্শে আসলে সে ঘাবড়াবে না?
তার কি এসবে অভ্যেস আছে নাকি!

“তুমি এখনো আমাকে ভয় পাও?” ফিচেল গলায় জিগ্যেস করলো নীল।

ত্রয়ী টু শব্দ করলো না। নীল উত্তরের আশাও করলো না। কারণ বলতে গেলে সে এখন আর কোনো কথাই বলবে না। এটাই ওর লাজুক বউয়ের স্বভাবসুলভ নিয়ম।

নীল মুচকি হাসলো। হুট করে গড়িয়ে মেয়েটাকে পাশে শুইয়ে দিতেই চোখ ছানাবড়া হলো ত্রয়ীর।
নীল ওর কাছাকাছি এসে ঠোঁট কামড়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল, “আমাকে রেখে ঘুমিয়ে পড়লা কীভাবে গতরাতে?”

ত্রয়ীর টনক নড়লো। মুখটা একটু মলিন হলো আপনাআপনি। অপরাধীর মতো বিড়বিড়ানো স্বরে বলল, “ভুল হয়ে গেছে। আসলে আমি ঘুমাতে চাই নি। কীভাবে করে যেনো…!”

ত্রয়ী চুপ করলো। এসব যদি অযুহাত মনে করে লোকটা? বিশ্বাস না করে?

ওর ভাবনা মিথ্যে হলো। নীল ওর কপালের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল, “ঠিক আছে, অত ভেব না।”

ত্রয়ী অবাক হলো। পরক্ষণেই ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি ফুটলো ওর। চোখ নামিয়ে নিলো।

নীল নির্বিঘ্নে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো ত্রয়ীকে। মোহাবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে দেখতে দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।

চমকে উঠলো দুজনেই।
দরজার করাঘাত বৃদ্ধি পেল। সাথে ভেসে এলো চিকন, মেয়েলি কণ্ঠস্বর। ফিচেল গলার বলল, “উঠবা না আজ তোমরা? শুধু বাসরই হবে! বউভাত হবে না?”
বলেই হেসে উঠলো ওরা।

ত্রয়ী হকচকালো। চটপট বাদিকে ঠেস দেওয়া নীলের হাতটা সরিয়ে উঠে বসে শাড়ির আঁচল টেনেটুনে নিলো।
নীলও উঠে বসলো। কুচকানো কপালে তাকালো দরজার দিকে।
ফিরে ত্রয়ীর দিকে একপলক তাকিয়ে চোখাচোখি হলো।
ত্রয়ী চোখ নামাতেই অনিচ্ছায় মগ্ন নীল দরজা খুলতে গেল।
ত্রয়ী ডিভান থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে। এলভিও বারান্দা থেকে রুমে ঢুকে এসেছে।

নীল বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই ওদের সবাই ভদ্র ভান ধরে একটু চুপে গেল। ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি ঝুলিয়ে ত্রয়ীর দিকে তাকালো একপলক। সাথে সাথে হাসি আরো প্রশস্ত হলো ওদের।
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ওরা কীসের জন্য হাসছে বুঝতে পেরে রক্তিম হয়ে এলো মুখটা।

একজন বলল, “বাসর ঘর পছন্দ হয়নি?”
নীল চোখ দিয়ে শাসাতেই হেসে উঠলো ওরা।
শাড়ি-ব্লাউজ সমেত গহনাগাঁটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এগুলো পরে নিতে বলো তোমার বউকে। আর তুমিও ভদ্র ছেলের মতো তৈরী হয়ে যাও। একটু পর নিচে অনুষ্ঠান।”
বলেই হাসিঠাট্টা করতে করতে কেটে পড়লো তারা। সাথে এলভিও বেরিয়ে গেল। বেচারার খিদে পেয়ে গেছে এতক্ষণে।

নীল শাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়ে কিছু ভাবলো। অতঃপর দুষ্টুমি মাখা হাসি হেসে ফের দরজা বন্ধ করে দিলো।
শাড়িটা ত্রয়ীর কাছে এগিয়ে দিতেই চট করে নিলো ত্রয়ী। পরার উদ্দেশ্য এদিক ওদিক তাকালো। তবে রুমজুরে কোনো ওয়াশরুম দেখলো না বলে খানিক বিপদে পড়ে গেল। ইতস্তত করে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আড়চোখে তাকালো নীলের দিকে।

সেও ঠোঁটের কোণে হেসে, স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বলেই চোখে চোখ পড়লো। ত্রয়ী দৃষ্টি ঘুরালো। আমতাআমতা করে বলল, “আমি শাড়ি পরবো।”

“পরো।” দায়সারা গোছে উত্তর আসতেই ভ্যাবাচেকা খেল ত্রয়ী।
সময় নিয়ে ঠেলে ঠেলে বলল, “একটু বাইরে যাবেন?”

“আমি তাকাবোনা। তুমি পরো।”

চমকে উঠলো ত্রয়ী। বড়ো বড়ো চোখ মেলে নীলের দিকে তাকাতেই সে সরসভাবে বলল, “তুমি বিশ্বাস করো না আমাকে?”

ত্রয়ীর মুখটা শুকিয়ে গেল। ঢোঁক গিলে জমে যাওয়া দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ও। অসার হয়ে উঠলো হাত পা।

নীল ভ্রু তুললো। বিছানায় বসে পায়ের উপর পা তুলে নাটুকে ভদ্রতায় আরেকবার শুধালো, “করো না বিশ্বাস?”
ত্রয়ীর চোখের পাতা কেঁপে উঠলো। উক্ত প্রশ্নের উত্তরে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। দৃষ্টি নামালো। হাতের শাড়িটা মুঠোয় আঁকড়ে অবনত মস্তকে দিকভ্রান্ত হয়ে নজর ঘুরাতে লাগলো মেঝেতে। মারাত্মক মুশকিলে পড়লো হয়তো। এভাবে কীকরে শাড়ি বদলাবে ও? লোকটার চোখের সামনে!
অসম্ভব!
যতই বলুক তাকাবে না, ত্রয়ী তো জানে!
এতোদিনে তার নাড়িনক্ষত্র সব জানা হয়ে গেছে ওর।

ত্রয়ী নড়লো না। স্বস্থানে দাঁড়িয়ে ব্যগ্র চোখের দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো মেঝের পানে। ভাবলো নীল হয়তো যাবে।
কিন্তু তা আর হলো না।
কতক মিনিট পেরিয়েও যখন সে নড়লো না তখন যা বোঝার বুঝে গেল ত্রয়ী। শীতল আবহাওয়াতেও শরীর ঘেমে যেতে লাগলো।
ঢোক গিলে মিনমিনে আওয়াজে কোনমতে বলল, “আপনি একটু যান না!”

“তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না তারমানে?”

“ন..না। আপনি একটু যান প্লিজ।” এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চটপট উত্তর দিলো ত্রয়ী। সে আসলেই বিশ্বাস করে না। একটুও করে না।

নীল হতাশ ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেললো। উঠে ত্রয়ীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি কিন্তু তোমার সামনেই চেঞ্জ করতে পারবো। কারণ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। দেখবা?”

চোখ বড়োসড়ো হলো ত্রয়ীর। চকিতে তাকালো নীলের দিকে।
একটু সরে গিয়ে ভড়কানো কণ্ঠে বলল, “একদম না।”

নীল নীরব হাসলো। ফিচেল গলায় বলল, “এতো লজ্জা পাও কেন? আর তাছাড়া কাল তো সব আমিই খুললাম। মানে তোমার ওই শাড়ির পিন। অবশ্য তুমি চাইলে তুমিই খুলেটুলে অপেক্ষা করতে পারতা। কিন্তু তা করো নি! কেন? তুমি কি চাচ্ছিলা যে আমি এসে তোমার…।”

“মোটেও না।” বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বলে উঠলো ত্রয়ী।
“তো?” ভ্রু উঁচিয়ে নামালো নীল।

ত্রয়ী ঠোঁট নাড়িয়ে কারণটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেল। গলায় মাঝখানে এসে আটকে গেল শব্দগুলো।
কথারা যে কীসব বলে-টলে মানা করে গেছিলো সেটা কী করে বলবে ও!
কিন্তু না বললে তো আরেক প্যাচে প্যাচিয়ে ফেলবে লোকটা।
উফ! এতো অভদ্র কেউ হয়!

করুণ ভাবে চোখ নামিয়ে ফেললো ত্রয়ী। হার মেনে নিলো হয়তো।
তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেল দরজায় টোকা পড়ায়। অহেতুক সব কথাবার্তা চাপা পড়ে গেল কথার কণ্ঠস্বরে।

ত্রয়ী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো। শাড়ি রেখে নিজ থেকেই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো এবার।
মুখোমুখি হতেই কথা মেয়েটা ভ্রু উঁচালো। কটাক্ষ করে বলল, “ভাবি, এটাতে তো ওয়াশরুমই নেই! ফ্রেশ হবা কী করে! চলো দেখি আমার সাথে চলো। শাড়ি টারি নিয়ে আসো। তাড়াতাড়ি। সবাই এসে গেছে।”

তাড়া দিয়ে বলতে বলতে বেড়িয়ে গেল কথা।
ত্রয়ী বাধ্য মেয়ের মতো ওর পিছু পিছু বেরুতে গিয়েও থেমে দাঁড়ালো। মনে পড়তেই রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিতে ফের ঘরে এলো।
জড়সড়ভাবের সাথে বিছানার কাছে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে হাতে তুলে নীলের দিকে আড়চোখে তাকালো একপলক।
তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে যেতে উদ্যত হতেই হাতটা টেনে ধরলো নীল।
চকিত ভঙ্গিতে ঘুরে তাকালো ত্রয়ী।
চোখাচোখি হতেই নীল মুচকি হেসে বলল, “আজ রাতে আবার ঘুমিয়ে পড়ো না যেনো।”

🌸
শীতল সমীরণে ঘুম হালকা হলো ক্যান্ডেলের। গায়ের চাদরটা টেনেটুনে ধীরে ধীরে চোখ মেললো ও। ঘুম ঘুম আবেশের ঘোলাটে দৃষ্টি স্বচ্ছ হতেই পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আর সেই তাকানোতেই যেনো সর্বনাশ হলো। সর্বগ্রাসী নির্লজ্জ একজোড়া চোখের সাথে দৃষ্টি বিনিময় হয়ে গেল না চাইতেও।
ক্যান্ডেল ভারি অপ্রস্তুত হলো। সজাগ মন মস্তিষ্কে গতরাতের অতিব ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলো ভেসে উঠতেই অনুরণিত হলো চোখের তারা। কঠোরভাবে অনুভূতি প্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েলি মনটাও গুটিয়ে গেল লজ্জায়৷ রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো গাল দুটো।
দৃষ্টি সরিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো ক্যান্ডেল। অনতিকাল বিলম্বে গায়ের চাদরটায় নিজেকে প্যাকেট করে নিয়ে নেমে গেল বিছানা ছেড়ে।
তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকে ধড়াম করে বন্ধ করে দিলো দরজা।
হাঁপরের মতো নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দরজায় পিঠ হেলিয়ে দিলো। হাঁফ ছেড়ে তাকালো সামনের আয়নায়। নিজের প্রতিবিম্বের দিকে।
ভ্রু মৃদু কুঞ্চিত হলো। অবিচল দৃষ্টি গিয়ে আটকালো গলদেশে।
ক্যান্ডেলের চোখের পাতার কম্পিত ভাবটা বাড়লো। ঘনঘন পলক ঝাপটালো ও। চাদরটা গলা থেকে আরেকটু নিচে নামালো।
কাধের, অতঃপর বুকের কাছের প্রণয়ের চিহ্নে নজর পড়তেই শরীর বিবশ হয়ে এলো।
আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না। সলজ্জে চোখদু’টি সরিয়ে ফেললো ও। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ঠাঁই পেতেই বিড়বিড়িয়ে আওড়ালো, “Pervert!”

(চলবে…)গল্পের নাম : #কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৭ : #ঈর্ষা ( ১ম অংশ )
লেখিকা : #Lucky_Nova(কপি নিষেধ)

বিল পে করে তিয়াসার হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিজের হাতে নিলো প্রয়াস। তারপর অন্যহাতে মুঠোবন্দি করলো তিয়াসার হাত।
তিয়াসা মিষ্টি হাসলো। চোখাচোখি হতেই প্রত্যুত্তরে স্মিত হেসে তিয়াসাকে নিয়ে শো-রুম থেকে বের হলো প্রয়াস। দ্বিতীয় তলার একপাশ থাকা বড়ো কসমেটিকস এন্ড কনফেকশনারিতে ঢুকলো।

সেখান থেকে তিয়াসার পছন্দমতো ফাস্টফুড এর মধ্যে দুটো বার্গার প্যাক করতে বলতে বলতেই ফোন এলো প্রয়াসের।
শপিং ব্যাগগুলো রিসিপশনের কাচের গ্লাস বিশিষ্ট টেবিলে রেখে ফোন বের করলো ও। অফিসিয়াল দরকারি কল হওয়ায় তিয়াসার দিকে তাকিয়ে বলল, “আরো কিছু নিতে চাইলে নেও। আমি কথা বলে আসি।”

তিয়াসা মাথা নেড়ে সায় জানাতেই ফোন রিসিভ করে একপাশে সরে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেল প্রয়াস।
তিয়াসা ওর দিকে একপলক চেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো সাজানো খাবারের তাক গুলোর দিকে। প্যাকেটজাত খাবার থেকে শুরু করে ফলফলাদি সবই আছে এখানে।
চোখ বুলাতে বুলাতে একদিকের সাজগোজের জিনিসগুলোর দিকে নজর আটকালো ওর।
সাজগোজে তার অগাধ ভালোলাগা থাকায় ঠোঁটের মিষ্টি হাসিটা প্রশস্ত হলো। সে এগিয়ে গেল দাড়াঁলো সেগুলোর সামনে।
সবচেয়ে উপরের তাকে থাকা আলতার প্যাকেটটার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ালো। কিন্তু একদম নাগালে পেল না।
পায়ের পাতায় ভর রেখে চেষ্টা করেও লাভ হলো না। ধারকাছ অব্দি পৌঁছাতে পারলো না ও।
মুখটা করুণ হলো তিয়াসার। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকালো প্রয়াসের দিকে।
তাকে তখনো ফোনে ব্যস্ত দেখে ঠোঁট উলটালো। চোখ ঘুরিয়ে সামনে তাকাতে গিয়েই একটা ছোট টুলের দিকে চোখ পড়লো।
তিয়াসা চোখে হাসলো৷ এগিয়ে গিয়ে সেটা নিয়ে এসে রাখলো দৈত্যসম কাঠের তাকটির সামনে।
সেটার উপর উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালো।
তবুও নাগাল পেতে কিঞ্চিৎ সমস্যা হওয়ায় পায়ের পাতার উপর ভর রাখলো তিয়াসা।
একটা প্যাকেট হাতে আসতে না আসতেই রিসিভশন থেকে এক সেলসম্যান আহাজারি করে বলে উঠলো, “আরে আরে ম্যাডাম, পড়ে যাবেন তো!”

তিয়াসা চমকে গেল। ঠিকঠাক ভাবে বজায় রাখা ভারসাম্যও বিঘড়ে গেল লোকটার আচমকিত আহাজারিতে।
ভীত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোর সময়ই পা পিছলে গেল ওর। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেল পেছন দিকে। আশঙ্কায় চোখমুখ কুচকে ফেললো ও।
তবে অদ্ভুতভাবেই পড়ার পরেও একটুকুও ব্যথার অনুভূতি হলো না বলে অবাক হলো তিয়াসা। কুঞ্চিত করা চোখ দুটো আস্তে ধীরে খুলে তাকালো ও। সাথে সাথে সম্পূর্ণ অচেনা একটা পুরুষ মানুষের চেহারা চোখে পড়তেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো। বিস্ময়কর বোকা চাহনিতে চেয়ে রইলো হা করে।

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বলিত হয়ে পড়লো ইভান নিজেও।
আশেপাশের কয়েকজনও চেয়ে রইলো ফ্যালফ্যালে অবাককর চাহনিতে।
তবে তাদের সবার মধ্যে শুধু একজোড়া চোখেই বিস্ময় দেখা গেল না। বরং মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ততে কপাল খুব বাজেভাবে কুচকে গেল তার।
তার একমাত্র বউটা কিনা অন্য কারো কোলে! এটাও সহ্য করার মতো!
দ্রুতপদে এগিয়ে সামনাসামনি দাঁড়ালো প্রয়াস। নেহাতই রাগ করাটা এখানে অযৌক্তিক বলে নিজেকে সামলালো সে।
কাটকাট স্বরে বলল, “ওকে নামিয়ে দিন।”

চকিতে তাকালো ওরা দুজনে।
প্রচন্ড রকমের অসন্তোষ জড়ানো একজোড়া চোখ আর কঠিন ভাবাপন্ন এক মুখের সাথে চোখাচোখি হলো ইভানের।
সেই শক্ত চোখের অধৈর্য চাহনি আর অধিকারবোধক কণ্ঠের কথায় মেয়েটির সাথে তার সম্পর্কও আন্দাজে করে ফেললো বোধহয়। আর আঁচ করতে পেরেই বিনাবাক্যে অজ্ঞাত মেয়েটিকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো সে।

প্রয়াস দেরি না করেই হাত বাড়ালো। একহাতে তিয়াসার হাতটা খপ করে মুঠোয় টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো সে।
আচমকা এমন টানাটানিতে তিয়াসা ভ্যাবাচেকা খেলো খানিক। চোখ পিটপিটিয়ে তাকালো প্রয়াসের দিকে। কিন্তু চোখাচোখি হলো না। কারণ সে তখন লঘু ভাঁজবিশিষ্ট কপালে চেয়ে আছে সামনের লোকটার দিকে। মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর।

গল্পের নাম : কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৭ : ঈর্ষা ( ২য় অংশ)
লেখিকা : Lucky Nova (কপি নিষেধ)

ইভান ভ্রু সংকুচিত করলো। অতঃপর আসন্ন ঝামেলা এড়াতে টানটান স্বরে প্রয়াসের উদ্দেশ্যে বলল, “I didn’t mean to! পড়ে যাচ্ছিলো সে, এজন্যই।”

প্রয়াস পলক ঝাপটালো। নির্বুদ্ধিতা বুঝে ধাতস্থ হলো।
এদিক ওদিক তাকিয়ে সন্তপর্ণে ত্যাগ করা নিঃশ্বাসের সাথে অহেতুক অস্বস্তি উড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলো ও।
একটা ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেও দিতে গিয়ে আটকে গেল যেন। ভদ্রতা খাতিরে ভরাট স্বরে শুধু বলল, “Yeah, It’s ok.”

ইভান ছোটো ছোটো চোখে তাকালো। বিদ্রুপাত্মক হাসিটা ঠোঁটের প্রান্ত অব্দি এসেও অদৃশ্য হয়ে গেল তার। কারণ কেমন ‘It’s ok’ সেটা তো সে ভালোই বুঝতে পেরেছে এটুকু সময়ে। তবে মুখে কিছু বললো না।
শুধু পালটা ভদ্রতার খাতিরে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসলো। যার প্রত্যুত্তরে প্রয়াস গম্ভীর থাকলেও তিয়াসা স্বভাবসুলভ ভাবের মিষ্টি হাসি হাসলো।
আর সেটা চোখে পড়তেই আরেক বিপত্তি বাধলো যেন। সাধারণ একটা হাসিও মারাত্মক পোড়ালো প্রয়াসকে। আগের চেয়েও অধিকগুন কপাল কুচকে গেল তার।
চাপা আক্রোশে মুঠোয় ধরে রাখা তিয়াসার হাতটা একটু চেপে ধরতেই হকচকালো ও। প্রয়াসের দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকাতে না তাকাতেই ওকে সহ রিসিপশনের দিকে পা বাড়ালো সে।
তড়িঘড়ি করে তিয়াসাকেও পা মিলাতে হলো।

রিসিপশনে এসে প্রয়াসকে জলদি করে টাকাপয়সার পাওনা মিটিয়ে ফেলতে দেখে অবাক হলো তিয়াসা। চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পিছন পানে।
আলতা তো নেওয়াই হলো না ওর! দিব্যি ওখানেই পড়ে আছে সেটা। নেবে না?

প্রয়াস ফেরত প্রাপ্ত টাকাগুলো মানিব্যাগে ঢুকিয়ে নিতে নিতে একপলক তাকালো তিয়াসার দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই যেনো থমকালো।
চোখ ঘুরিয়ে তিয়াসার দৃষ্টি বরাবর চোখ রাখতেই হতভম্ব হয়ে গেল ও। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। তিয়াসা ঠিক সেদিকেই তাকিয়ে আছে যেদিকে কিছুক্ষণ আগের লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। যদিও সে ফোনের স্ক্রিনে ব্যস্ত।
কিন্তু তিয়াসা কেন তাকাচ্ছে তার দিকে? অদ্ভুত তো!

প্রয়াসের অযাচিত ভয়টা বাড়িয়ে দিতেই তিয়াসা বিনাবাক্যে সেদিকে যেতে উদ্যত হলো। গুরুতরভাবে চমকে গেল প্রয়াস।
খপ করে চেপে ধরলো তিয়াসার হাতটা।
তিয়াসা সচকিত ভঙ্গিতে তাকাতেই অতিশয় ক্ষুব্ধ মুখে চোখ রাঙালো সে।
তিয়াসা বোকা হয়ে পড়লো যেন। চোখ পিটপিটিয়ে চাইলো ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে।
প্রয়াসের ঈর্ষার দাবানলে পুড়ে যাওয়া পুরুষালি মনটা বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারলো না ও। বরং আরেকবার ফিরে তাকিয়ে পরে থাকা আলতাটার দিকে। ইশারায় বুঝানোর চেষ্টাও করতে চাইলো।

কিন্তু কে বুঝে কার কথা! প্রয়াসের তো এসব বোঝার সময় নেই। উলটো তিয়াসা ওদিকে তাকালো বলেই যেন আকাশসম দুশ্চিন্তায় পরে গেল ও।
মাত্র চারদিনও হয়নি বিয়ে হয়েছে! এরমধ্যেই যদি বউ তার অন্যকারো দিকে তাকায়! তাহলে কি সহ্য হয়!

এজন্যই ঝটপট শপিং ব্যাগগুলো তুলে নিয়ে ওকে সহ বেরিয়ে গেল শপটা থেকে।
তিয়াসা হড়বড়িয়ে গেল। পিছন ফিরে তাকালোও কয়েকবার।আলতা কেনা হলো না বলে মুখটা ভার হলো ওর।

একবারে গাড়ির মধ্যে এনে ওকে বসালো প্রয়াস। তারপর পাশের সিটে এসে বসে ভ্রুকুটি করে তাকালো তিয়াসার দিকে। নিতান্তই সংক্ষুব্ধ গলায় বলল, “বার বার ওর দিকে কি দেখছিলা তুমি? বেশি পছন্দ হয়েছে ওকে?”

আচমকিত ধমকানিতে ভেবলে গেল তিয়াসা।
উপরন্তু প্রয়াসের প্রশ্নের আগাগোড়া কিছুই বোধগম্য হলো না বলে বেকায়দা চাহনিতে চেয়ে রইলো প্রয়াসের দিকে।

প্রয়াস ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে সামনে ঘুরলো। কপাল কুচকে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে নিজেকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করলো। তারপর তিয়াসার দিকে ফিরে তাকালো গম্ভীর চোখে।
তিয়াসা চুপসানো মুখে তাকিয়ে আছে চুপচাপ। যেনো সে কিছুই জানেনা!
প্রয়াস রাগ চেপে হালকা ঝুঁকে গেল ওর দিকে। চোখে চোখ রেখে শিথিল শাণিত কণ্ঠে বলতে লাগলো, “তুমি অন্যকারো দিকে তাকাবা না বুঝেছ? শুধু আমার দিকে তাকাবা।
তখন বার বার পিছন ফিরে কী দেখছিলা তুমি? ও কি আমার থেকে বেশি সুন্দর? হ্যাঁ?” ভ্রু কুচকে গেল প্রয়াসের। আরো বলল, “আর ভুলেও অন্যকারো দিকে তাকিয়ে হাসবা না। তখন হাসতে বলেছি আমি তোমাকে? বলি নি তো না? তো! হাসলা কেন ওর দিকে তাকিয়ে? এতো খুশি হয়েছ! আমি…”

কথা শেষ করতে পারলো না প্রয়াস। তার আগেই ওকে শতভাগ হতবাক করে দিয়ে ঝুপ করে জড়িয়ে ধরলো তিয়াসা। বিড়াল ছানার মতো মুখ গুজলো বুকের মাঝে।

প্রয়াস হতবুদ্ধি হয়ে পলক ঝাপটালো কয়েকবার। বিস্ময় কাটিয়ে আস্তেধীরে চোখ নামিয়ে তাকালো তিয়াসার মুখটার পানে।
একপলক দৃষ্টি বিনিময় হতেই মুখটা করুণ করে চোখ নামালো তিয়াসা। যেন তার চেয়ে নিষ্পাপ এই পৃথিবীতে আর কেউই নেই।

এই কাজ সে কিছুদিন হলো শিখেছে। কার কাছ থেকে কে জানে!
এই যেমন প্রতিদিন সকালে আর রাতে নিয়ম করে এক গ্লাস দুধ দেওয়া হয় তাকে। যা তার খুবই অপছন্দের জিনিস। এজন্যই না খেয়ে খুব কৌশলে লুকিয়ে লুকিয়ে ফেলে দেয় সে। তারপর ফাঁকা গ্লাস ফিরিয়ে দিয়ে বলে খেয়েছে।
একাজ করে প্রথমদিন ফাঁকি দিয়ে ফেললেও দ্বিতীয় দিন যখন হাতেনাতে ধরা পড়লো তখন বকা দেওয়ার আগেই এমন কাজ করেছিল সে।
বকা থেকে বাঁচার খুব সুনিপুণ প্রক্রিয়া এটা। যা মোটামুটি ভালোই কাজ করে। না চাইলেও রাগ উবে যায় প্রয়াসের। আর বকা দিতে পারে না সে।

এবারো বোধহয় তাই হলো। রাগ কমলো।
কিন্তু পুরোপুরি নয়।
ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ ফেলে গম্ভীর, মন্থর স্বরে বলল, “দোষ করে আবার ভুলানোর চেষ্টা করছো!”

তিয়াসা আগের মতোই গুটিয়ে রইলো। শুধু শার্টটা আরো আঁকড়ে ধরলো হাতের মুঠোয়।

মুখ দিয়ে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেললো প্রয়াস। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে টানটান স্বরে বলল, “ওর দিকে তাকিয়ে ছিলা কেন তুমি?”

তিয়াসা ভ্রুকুটি করলো। চোখ তুলে তাকালো প্রশ্নাত্মক অবাক দৃষ্টিতে। সে কখন কার দিকে তাকিয়ে ছিল!

মোটামুটি সময় লাগলো বিষয়টার খোলাসা হতে। তিয়াসা কলম আর নোটপ্যাড বের করে প্রয়াসের সব প্রশ্নের উত্তর লিখে দিলো এক এক করে।
আর অবশেষে আসল বিষয়টা জানতে পারলো প্রয়াস। তারপর এতক্ষণে নিজের করা অহেতুক চিন্তাভাবনা আর ঈর্ষা বুঝতে পেরে বোকারাম সেজে গেল সে। পুরোদমে বোকারাম!

🌸
“সব এনেছো তো?” ইভানের আনা জিনিস গুলো ঘেটেঘুটে দেখতে দেখতে বলল জয়িতা।

ইভান চোখ তুলে তাকালো। জুতার ফিতা খুলতে খুলতে ছোট করে উত্তর দিলো, “হু”।

জয়িতা নেড়েচেড়ে দেখলো সবটা। তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটার কোনো হদিস না পেয়ে কপাল কুচকে ফেললো। যার জন্য অন্য বাহানায় ঠেলেঠুলে দোকানে পাঠানো হয়েছিল তাকে, সেটাই আনেনি সে!
জয়িতা বেজার মুখ করে ইভানের দিকে তাকালো। বলল, “উফফ! কই সব এনেছ? তোমাকে না বলেছিলাম গলার বা হাতের কিছু কিনতে?”

শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে জয়িতার দিকে একপলক তাকালো ইভান। নিস্প্রভ স্বরে বলল, “আনিনি।”
চোখ কপালে উঠলো জয়িতার। চাপা স্বরে আহাজারি করে বলল, “আনোনি মানে! কতবার বললাম আমি!”

“সাতবার।” হিসেবি উত্তর দিতে দিতে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।
চোখদুটো আরো সংকুচিত হলো জয়িতার। একটু সময় গমগমে চোখে তাকিয়ে থেকে মুখ লটকিয়ে বলল, “অদ্ভুত তো তুমি ঠাকুরপো! বউকে বাসররাতে কোনো গিফটই দেও নি! বউভাতেও দিচ্ছ না! কী মনে করবে সে! আর এতো আনরোম্যান্টিক হলে হয়!”

ইভান হেয়ালিভাবে মুচকি হাসলো। এসব কথা গায়ে মাখলো বলে মনে হলো না। কারণ ওই গিফট-টিফট নিয়ে সো কল্ড রোম্যান্টিকতা করার মতো ছেলে সে নয়। এসব করা একদমই অসম্ভব তার দ্বারা।
আর ব্যাপারটাও এমন নয় যে সে ক্যান্ডেলের কাছে গিফট নিয়ে যাবে আর সেও খুশি খুশি নিয়ে নেবে!
উল্টো দেখা যাবে ‘Pervert pervert’ বলে চেঁচামেচি শুরু করে দেবে!

ইভান নিজের মতো উপরে উঠে যেতে নিতেই জয়িতা পথ আটকে দাঁড়িয়ে গেল। নবাবি ধাঁচে বলল, “গিফট না কিনে আনলে বউকে আজ আর পাচ্ছ না।”
ইভান ভ্রু উঁচালো। খুব একটা পাত্তা দিলো বলে মনে হলো না। পাশ কাটিয়ে উঠে গেল উপরে।

(ক্যান্ডেলের Ex প্রয়াস নয়😑। কারা যেনো কমেন্টে বলতেছে ভুলভাল😑।)

গল্পের নাম : কিছু_জোড়াশালিকের_গল্প
পর্ব ২৭ : (৩য় অংশ)
লেখিকা : Lucky Nova(কপি নিষেধ)

🌸
ফ্রেশ হয়ে বের হলো ইভান। আলমারি থেকে শার্ট বের করে গায়ে জড়িয়ে নিতে নিতেই ঘরে ঢুকলো ক্যান্ডেল।
চোখাচোখি হলো। সাথে সাথেই অত্যন্ত অপ্রতিভ হয়ে চোখদুটো সরিয়ে নিলো ও। কিছুসময়ের জন্য স্বস্থানে থমকে দাঁড়িয়ে থেকে গটগট করে ভেতরে ঢুকলো। কোনোদিকে তাকালো না। সোজা বিছানার কাছে গেল।
খানিকক্ষণ আগে বের করে রাখা নিজের লেডিস টি-শার্ট আর পাজামা নিয়ে ঢুকে গেল বাথরুমে।

ইভান ওকে লক্ষ্য করে বাঁকালো হাসলো। বিছানায় শুয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেল তারপর। সেখানেই বালিশের পাশে রাখা একটা সোনালী রাঙা ডায়েরীতে নজর আটকালো ওর।
সন্দিহান চোখে তাকিয়ে হাতে উঠিয়ে নিলো সেটা।

ক্যান্ডেল ফ্রেশ হয়ে, চেঞ্জ করে বের হলো। তোয়ালে রেখে খুবই আড়নজরে ইভানকে একবার দেখে নিতে গিয়েই চমকালো।
ওর ব্যক্তিগত ডায়রীটা, যেটা জামাকাপড় বের করার সময় ভুলবসত বিছানায় রেখেছিল, সেটা ইভানের হাতে দেখে চোখ ছানাবড়া হলো ওর। হতবিহ্বল হয়ে পড়লো যেনো।

ঠিক তখনি ওর উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুড়লো ইভান। ঠোঁটের কোণে তথাকথিত বিদ্রুপাত্মক সুক্ষ্মহাসি সমেত বলল, “Long distance relationship! এত এত ইচ্ছে ছিল তোমার?”

শিউরে উঠলো ক্যান্ডেল। এতদূর পড়াও হয়ে গেছে ইতিমধ্যে!
ক্যান্ডেল দাঁত কিটকিট করলো। ঝটপট ইভানের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ক্ষুদ্ধ গলায় বলল, “অন্যের ডায়রী পড়া ঠিক না, জানোনা?”
বলেই একহাতে ডায়রীটা টেনে নিতে চাইলেও ডায়রীটা হাতে পেল না ক্যান্ডেল। ইভান সরিয়ে নিলো সেটা।
অবাক হলো ক্যান্ডেল। বিহ্বলিত হয়ে বলল, “অদ্ভুত তো! দেও এদিকে!”
বলে আবার হাত বাড়ালো ও। এবারো ফলাফল শূন্য। রেগে গেল ক্যান্ডেল।
ইভান উদ্দেশ্যপূর্ণ হাসির সাথে পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে বলল, “ওয়েট! এত প্যানিক হওয়ার কী আছে?”
ইভানের ব্যবহারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো ক্যান্ডেল।
ওকে লজ্জায় ফেলে দিতেই বোধহয় এবার জোরে জোরেই ওর ইচ্ছাগুলো পড়তে লাগলো ইভান।

নাস্তানাবুদ হয়ে দাঁত কিড়মিড় করলো ক্যান্ডেল। ইভান যে এটা সহজভাবে দেবে না সেটা ভালোই বুঝলো ও। তাই সরাসরি একপ্রকার ধস্তাধস্তিই শুরু করে দিলো ও। আর ডায়রীটা নিতে কাড়াকাড়ি করতে গিয়েই ও ঝুঁকে পড়লো ইভানের উপর। তবে হাতে তো পেলই না বরং অজান্তেই খুব ঘনিষ্ঠে চলে এলো ওর।
এক পর্যায়ে সেটা খেয়াল হতে ক্যান্ডেলই আগেভাগে হকচকিয়ে গেল। চকিতে তাকালো ইভানের দিকে। ওর দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে পড়লেও ইভানের দৃষ্টি স্থিরই রইলো।

আর সে স্থির দৃষ্টি হঠাৎ অসংযত হতেই চমকালো ক্যান্ডেল। বুকের কাছের শার্টটা খপ করে একহাতে চেপে ধরে বলে উঠলো, “Pervert!”
ইভান ভ্রু সুক্ষ্ণভাবে কুচকে ফেললো। ক্যান্ডেল ওর কাছ থেকে সরে যাওয়ার আগেই ধপ করে ওকে পাশে ফেলে ঝুঁকলো ওর দিকে। এক হাতের মুঠোয় চেপে ধরলো দুইহাত।

আকস্মিক কাজে থতমত খেয়ে গেল ক্যান্ডেল। বড়ো বড়ো চোখ মেলে ইভানের দিকে তাকাতেই সে কটাক্ষ করলো, “তোমাকে আমি মানা করেছিলাম এই ওয়ার্ড ইউজ করতে।”
ক্যান্ডেল একটু ভ্যাবাচেকা খেলো হয়তো। বলতে বলতে অভ্যাস হওয়ায় মুখ ফসকে গেছে আবারও। যদিও এটা একদমই সঠিক শব্দ তার জন্য, তবুও তর্কে গেল না ক্যান্ডেল। নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ সরিয়ে বলল, “আ-র বলবো না। ছাড়ো।”
“সরি বলো আগে।”
ইভানের কথায় মুহূর্তেই ভ্রু একদম বাঁকিয়ে ফেললো ক্যান্ডেল। চট করে ফিরে তাকালো ইভানের দিকে।সত্যি কথা বলায় সরি কেন বলবে ও! তাই মুখের উপর বলে দিলো, “জীবনেও না।”

ইভান চোখ সংকুচিত করলো, “বলবা না?”
“না।”
ইভান কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। তারপর হঠাৎই ঠোঁটের বক্র হাসির সাথে বলল, “সিওর?”
ক্যান্ডেল অপ্রস্তুত হলো। এই হাসির অর্থ যে মোটেও সুবিধাজনক নয় তা খুব ভালোভাবেই বুঝলো ও।

“You will regret it now.” বলতে বলতে ওর টি-শার্টের ভেতরে হাত গলিয়ে দিলো ইভান।
চমকে উঠলো ক্যান্ডেল।

🌻
রাতের খাবার পরেই আলতার বোতল নিয়ে বসেছে তিয়াসা। প্রয়াস এনে দিয়েছে অফিস থেকে ফেরার পথে।
এটা পেয়ে এক আকাশ পরিমাণ খুশি ও। এজন্যই তো দিনদুনিয়া ভুলে এটা নিয়েই ব্যস্ত।
বোতল থেকে পরতে ঝামেলা হচ্ছিল বলে বাটিতে ঢেলেছে আলতা। তারপর অনেকক্ষণ বসে একটা কাঠির মাথায় তুলো প্যাচিয়েছে।
দুঃখের বিষয় যতবারই কাঠি ডুবাতে যায় তুলোটা বাটির মধ্যেই পড়ে যায়। এই তুলো বার বার হাত দিয়ে তুলে প্যাচাতেই হাত লাল হয়ে এসেছে তার।

প্রয়াস শাওয়ার নিয়ে বের হলো। মাথা মুছতে মুছতে একবার তিয়াসার দিকে তাকাতে না তাকাতেই থমকালো। চোখ আটকে গেল ওর পানে।

মেয়েটা এখনো বুঁদ হয়ে আছে আলতা নিয়ে। চোখমুখ কুচকে তুলোর প্যাচগোচে বিভোর। কপালে আর ঠোঁটের উপর নিচে ঘামের বিন্দু জ্বলজ্বল করছে ওর। শাড়ির আঁচল কাধের উপর তুলে রাখায় নারী শরীরের অপার্থিব সৌন্দর্যে চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে যেন!

প্রয়াস বেশ কিছুক্ষণ নীরবে চেয়ে রইলো। পলকহীন চোখে, অন্যরকম চাহনিতে। হৃদপ্রকোষ্ঠে তোলপাড় হতে লাগলো ওর। তীব্র আকাঙ্ক্ষা শোরগোল শুরু করলো ভেতর ভেতর।

শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া গলা ঢোক গিলে ভিজিয়ে নিলো প্রয়াস। অতঃপর চোখ সরিয়ে নিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো কয়েকটা। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। হাতে ফোন তুলে নিলো।
অবাধ্য চোখদুটিকে স্থির রাখতে যথাসম্ভব নিজেকে ফোনে মগ্ন রাখতে চাইলো।
কিন্তু হলো না। ঘুরেফিরে তারা তিয়াসাকেই নজরবন্দি করতে চায়। এতো অবাধ্য!

অথচ তিয়াসার আজ তার প্রতি কোনো খেয়ালই নেই। এখন ওই ফালতু আলতা কিনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে ওর কাছে! এসে থেকে সে ওইটা নিয়েই ব্যস্ত। অন্যদিন তো অফিস থেকে আসলে তাকে গুরুত্ব দিতো!

মনে মনে খুব জ্বালতে লাগলো প্রয়াস৷ তবুও কিছু সময় চুপ করে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো তিয়াসার জন্য।
কিন্তু লাভ হলো না।
তিয়াসা এলো না। এমনকি ঘুরেও তাকালো না।
মাত্র কয়েক মিনিটেই ধৈর্য হারালো প্রয়াস। এত সময় লাগে নাকি আলতা পরতে!
হঠাৎই ঘর অব্দি বয়ে আনা ‘আলতা’ নামক সতিনকে খুব অসহ্য লাগলো প্রয়াসের।

তাই সে নিজেই বিছানা ছেড়ে এসে হাঁটু ভেঙে বসলো তিয়াসার পাশে।
মগ্ন তিয়াসা একদমই টের পেল না দেখে অকপটেই হাত গলিয়ে দিলো ওর কোমড়ের ভাঁজে।
আচমকিত স্পর্শে তিয়াসা একটু চমকালো। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
অধর ছড়িয়ে মুক্ত হাসি প্রকাশ করার আগেই প্রয়াস ভরাট কণ্ঠে বলে উঠলো, “ইদানীং আমার থেকে অন্যদিকেই তোমার বেশি মনোযোগ!”

তিয়াসা বিহ্বলিত হলো। চোখ পিটপিটালো বোকার মতো। কারণ সে তো বরাবরই মনোযোগ দেয়। তাই না?

প্রয়াস চোখ ফিরিয়ে আলতার বাটিতে তাকালো। অতঃপর বিনাবাক্যে নিজের আঙুল ডুবিয়ে দিলো তাতে। তারপর একে একে পরিয়ে দিলো তিয়াসার পায়ে, হাতে। গম্ভীর মুখে খুব মনোযোগের সাথেই কাজটা করলো সে।
তিয়াসা খুশি হয়ে গেল। এতসময়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত কাজটা সম্পন্ন হওয়ায় একঝলক হেসে নিজের পায়ের দিকে তাকালো সে।
ফের ঘুরে প্রয়াসের দিকে তাকাতে না তাকাতেই হুট করে ওকে কোলে তুললো প্রয়াস। চকিতে গলা জড়িয়ে ধরলো তিয়াসা। চোখাচোখি হলো প্রয়াসের গভীর দৃষ্টির সাথে।

প্রয়াস ওকে বিছানায় এনে শোয়ালো। অনুভূতিপূর্ণ গম্ভীর চোখে তিয়াসার দিকে চেয়ে ঝুঁকলো ওর উপর।
তিয়াসা অবাক হয়ে পলক ঝাপটালো। হঠাৎই প্রয়াসের গলার দিকে নজর আটকাতেই ভ্রুকুটি করলো ও।
লাল হয়ে গেছে গলার পাশটায়। একটু আগে গলা জড়িয়ে ধরায় হাতের আলতা লেগে গেছে সেখানে।
তিয়াসা হাত বাড়ালো। গলায় লেগে থাকা আলতা হাতের উলটোপিঠ দিয়ে মুছতে চেষ্টা করলো।
কিন্তু ওঠার বদলে আরো এলোমেলো হয়ে পড়লো রঙটা। অকপটেই হেসে ফেললো তিয়াসা।
এই হাসিতেই যেন আরো একবার খুন হলো প্রয়াস। লোভ সামলাতে না পেরে চট করেই একটা চুমু খেয়ে বসলো ওই ঠোঁটদুটিতে।

তিয়াসা একটু চমকালো হয়তো। হতবিহ্বল হয়ে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
প্রয়াস সুক্ষ্ণ হাসলো। একহাত তিয়াসার গালে গলিয়ে দিয়ে দীর্ঘ চুম্বনে লিপ্ত হলো।
তিয়াসা শিহরিত হলো। সম্পূর্ণ নতুন এক অনুভূতিতে শরীর, মন আলোড়িত হলো ওর।
অতিব ঘনিষ্ঠ মূহুর্তে এসে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে গেল। কুসুম ফুলের মতো লাল হয়ে উঠলো গালদুটো।
প্রয়াস ওর কানে কানে ফিসফিসালো, “তো তুমি লজ্জাও পাও!”

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here