কিছু সমাপ্ত পূর্ণতার পর্ব -১৪

কিছু সমাপ্ত পূর্ণতার (পর্ব – ১৪)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
সকাল সকাল অপুকে বাসায় ফেরার কথা বলা গেল না—এটা নৈতিকতায় পড়ে না। আত্মীয় নিজের ইচ্ছেমতো আসবে আবার চলে যাবে। কিন্তু অপুর ব্যাপারটা অন্য সব আত্মীয়ের থেকে আলাদা। তাই নৈতিক বিষয়টা বজায় রেখে কীভাবে অপুকে বাসায় পাঠানো যায়, সেটাই ভেবে চলেছে নাহিদা। এতদিন পর সবকিছু ঠিক হতে চলেছে। এই সময়ে যদি এখানে তানজিম অপুকে দেখে, তবে কিছুই আর ঠিক হবে না। নাহিদার এখন খুব প্রয়োজন তানজিমের সাথে একা কথা বলার।

অধরা ফোন নিয়ে খেলছে। ছোট ছোট নরম আঙুলগুলো দিয়ে ফোনের ভারা সহ্য করতে পারছে না। বারবার বিছানায় ফেলে দিচ্ছে। নাহিদা এগিয়ে এসে অধরাকে কোলে নিয়ে আদর করল। কিছুক্ষণ অধরার সাথে সময় কাটিয়ে তানজিমকে কল করল।
তানজিম যেন নাহিদার কলের অপেক্ষা করে বসে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুলে গদগদ গলায় বলল, ‘বেরোচ্ছি ফ্ল্যাট থেকে।’
নাহিদা একটু ইতস্তত করে বলল, ‘তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।’
‘হুম, বলো।’
‘অপু আমাদের বাসায় এসেছে।’
নাহিদা কথাটুকু শেষ করার পরেও ওপাশ থেকে একটা কথাও শোনা গেল না। তানজিমের প্রস্তুত হওয়ার তাড়াহুড়োয় কাপড়ের খসখসানিও বন্ধ হয়ে গেছে। নাহিদা একটু ভয় পেয়ে নিজেও চুপ করে থাকল। শুধু অধরা নীরবতা ভালোবাসে না বলে নিজের দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলে যেতে লাগল।
হঠাৎ’ই তানজিম জিজ্ঞাসা করল, ‘কবে গেছে ও ওখানে?’
তানজিমের রাগহীন কথা শুনে আরও বেশি ভয় পেল নাহিদা। আর কিছু না হোক, নিজের স্বামীকে এ দিক থেকে খুব ভালো করে চিনেছে সে। তানজিমের এমন ঠাণ্ডা স্বর মানেই আড়ালে রাগের বজ্রপাত।
নাহিদা খুব ক্ষীণ গলায় জবাব দিল, ‘গত রাতে হঠাৎ করে এসেছে ও।’
‘বের করো ওকে। এক্ষুণি!’
‘এভাবে কীভাবে একটা আত্মীয়কে বের করতে পারি বলো?’ তানজিমের ভাবভঙ্গি বুঝতে চাইল নাহিদা, ‘ও এমনিতেই আজ চলে যাবে। শুধু তুমি এসে কোনোরকম ঝামেলা করো না।’

কল কেটে দিল তানজিম। দু’হাতে মাথা আঁকড়ে বসে পড়ল নাহিদা। এখন শুধু আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা, আজকের দিনটা ঝামেলাহীন কেটে যাক। দু-চার দিন পর পর এসব আর ভালো লাগছে না। জীবনের এমন ঝামেলা থেকে পালিয়ে বেড়াও মুশকিল। গোল্লাছুট খেলার মতো তাড়িয়ে বেড়ায় সর্বক্ষণ। আর ধরেও ফেলে!
__________

আজকে রোদের তেজটা শরীর ফুঁড়ে ঢুকছে। জানালার সামনে পর্দা টেনে দিয়েও লাভ হচ্ছে না। সুচের মতো দ্বিধাহীনভাবে মুখে আছড়ে পড়ছে। এই তেজ যেন তানজিমের রাগকে আরও বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে। চোয়াল শক্ত করে বসে আছে সে। শার্টের বোতামগুলো এখনও লাগানো হয়নি। অপুর কথা শুনে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার ইচ্ছেটা কেমন নিমেষেই দমে গেছে। এর জন্য কাকে দায়ী করা যায়, সেটাই তানজিম ভেবে পাচ্ছে না। শক্ত মুষ্টিবদ্ধ হাতটা বারবার টেবিলে আঘাত করছে সে। নাহিদার সামনে গিয়ে অপুকে দেখে নিজেকে কেমন লাগবে, তা ভাবতেই শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে পড়ছে।
একসময় সব দ্বিধাবোধ পেছনে ফেলে নিজেকে প্রস্তুত করল তানজিম। তারপর যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে পড়ল।

দরজা খুলতেই ইয়াসমিনকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল তানজিম। ইয়াসমিন ছাদে যাচ্ছিলেন। আজকাল নিজের শরীরের খেয়াল রাখতে গিয়ে আগের চেয়ে বেশি লিফট ছাড়া সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে হয় তাকে। তানজিমকে দেখে ভ্রু কুঁচকে আরও দ্রুত ওপরে উঠতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু তানজিমের ডাকে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
তানজিম সসংকোচে বলে উঠল, ‘আন্টি, সেদিনের কর্মকাণ্ডের জন্য আমি অনুতপ্ত।’
ইয়াসমিন এবার বেশ রাগ করলেন, ‘তোমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতাম। তাই সেদিন খাবার খাওয়াতে চেয়েছিলাম। নিজের বউয়ের রাগ অন্যের ওপরে ঝেড়ে দাও, লজ্জা করে না?’
কথাটা তানজিমের কাছে খুব সাংঘাতিক মনে হলো। ভদ্রমহিলা ভালোই ক্ষেপে আছেন।
তানজিম একটু ইতস্তত করে বলল, ‘আমি দুঃখিত আন্টি। সেদিন আসলে মাথাটা ঠিক ছিল না। আপনি সেদিন আমার জায়গায় নিজেকে রাখুন। দেখুন আপনি কতটা শান্ত থাকতে পারতেন!’
‘আর কিছু বলবে?’
‘অপু যদি এই কাজটা করত, আপনি কী তাকে ক্ষমা করতেন না? একটু আগেই তো বললেন, আমাকে ছেলের মতো ভালোবাসেন।’
‘ভালোবাসতাম।’
‘ভালোবাসা কখনও অতীত হয় না।’
‘ভালো কথা শিখেছ।’
‘আপনার থেকেই শেখা।’
ইয়াসমিন আর নিজের রাগকে দমিয়ে রাখতে পারলেন না। মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি কিন্তু সেদিন সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।’
‘এবার নিজের ছেলে ভেবে আমাকে ক্ষমা করে দিন আন্টি। দ্বিতীয়বার কখনও এমনটা হবে না।’
তানজিমকে ক্ষমা করার কথা মুখ দিয়ে বের করলেন না ইয়াসমিন। মন থেকে তো ক্ষমা করে দিলেন তিনি, মুখে উচ্চারণ করা বা না করা সমান।
__________

অধরাকে বুকে লেপ্টে রেখে বসে আছে নাহিদা। বাইরে যেমন রোদের তেজ, তেমনি বাতাসের বেগ। নাহিদার শরীরে বাতাসটা আরামদায়ক হলেও অধরার জন্য তা ঠাণ্ডা। পরে জ্বর না এসে পড়ে ভেবে একটা ছোট কাঁথা দিয়ে অধরার শরীর ঢেকে বসে পড়ল সে। কাঁথায় বড় বড় ফুল, পাতার ঝাড় সেলাই করা। কোণে সুন্দর করে লেখা আশফিয়ার নাম। অধরা যখন পেটে ছিল, তখন সযত্নে অধরার জন্য কাঁথাটা সেলাই করেছিল আশফিয়া। যেদিন আশফিয়া এই কাঁথা সেলাই করতে শুরু করেছিল, সেদিনের কথাটা এখনও নাহিদার মাথা থেকে বিস্মৃত হয়নি।
সেদিন বিকেলবেলা নাস্তা সেরেই বৈঠকঘরে কাঁথা নিয়ে বসে পড়ে আশফিয়া। নাহিদা হাতের কাজগুলো সেরে পাশেই বসে। আশফিয়াকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি সেলাই পার?’
আশফিয়া মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলেছিল, ‘মা নিজের হাতে শিখিয়েছিল। এখন তো আমি তাদের পর হয়ে গেছি।’
আশফিয়ার চুলের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে বিলি করতে শুরু করে নাহিদা। বলে, ‘বোকা বোকা কথা বলো না। সারা পৃথিবী তোমায় পর করে দিলেও তোমার মা তা পারবে না।’
‘সবার নিজ নিজ স্বার্থ আছে নাহিদা। তুমি আমার থেকে ছোট। আর দুই-চার বছর কাটিয়ে দাও, দেখবে।’
কথাটা এড়িয়ে যায় নাহিদা, ‘তো কার জন্য এই কাঁথা?’
‘আমার মেয়ের জন্য। ওর কাছে আমার এই চিহ্নটা রেখে দেবো। বড় হলে দেখবে। গর্বে বলবে, মায়ের হাতের সেলাই।’

চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে পড়বে, পড়বে করা জলটা মুছে নিল নাহিদা। মনে হচ্ছে না এসব এত অতীত হয়ে গেছে। কিছু স্মৃতি এসে নাড়া দিয়ে বলে, এইতো কিছুদিন আগের কথা!
আশফিয়ার এই কাঁথাটা অধরার কাছে রয়ে যাবে। তবে কখনও বলা হয়ে উঠবে না, আশফিয়া অধরার মা। কারণ অধরাকে হারানোর ভয়ে আশফিয়া নামটাকে আন্টি পদবিতে রেখে দিতে হবে। অধরার চেয়ে আশফিয়ার জীবনটাই কেমন অধরা। একটা ভুলে সমাজ, পরিবার থেকে বিচ্যুত, দম্পতির ঘৃণা, শত মিথ্যা! তবুও যদি পৃথিবী তাকে নিজের কোলে রাখত! মানুষ যে কেন এমন ভুল করে! একটা ভুলে ফুলের জন্ম হয়—কেউ যত্ম করে আর কেউ মাড়িয়ে দেয়।

নাহিদার ঘরের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হতেই চকিত তাকাল সে। ভাবনাগুলো এলোমেলো প্রজাপতী হয়ে উড়ে গেল। তানজিম দরজায় ভঙ্গুর শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ কয়েক মাসে কী অবস্থা হয়েছে তার! শুকনো মুখ আরও শুকিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। চোখের আর তীব্র চাহনিটাও নেই। তবে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসিটুকু ছড়িয়ে আছে।
অধরাকে বিছানায় রেখে এগিয়ে গেল নাহিদা। তানজিমকে প্রথম প্রশ্ন করল, ‘কী করেছ শরীরের অবস্থা?’
তানজিম নাহিদার দিকে তাকাল ভালো করে। নিজের থেকে যে নাহিদার শরীর ভঙ্গুর হয়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেও বলল, ‘কী করেছ শরীরের অবস্থা?’
জাফরিন মেয়ে-জামাইকে একা রেখে বেরিয়ে গেলেন। তানজিম ঘরের দরজা বন্ধ করতেই নাহিদা তানজিমের বুকে বাঁধাহীন ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তানজিমও আঁকড়ে ধরল প্রাণ প্রিয় স্ত্রী’কে। কত সময় এভাবে পেরিয়ে গেল হিসাব নেই।
তানজিম একসময় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘আমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?’
‘হুঁ, অনেক।’ নাহিদার সরল উত্তর।
‘তারপরও তো একবার কল করোনি। এখানে এলেও আমাকে তাড়িয়ে দিতে।’
‘খুব অভিমান জমে ছিল আমার।’

তানজিম নাহিদাকে বুকে লেপ্টে রেখেই আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নাহিদা তখনও মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।
তানজিম আস্তে করে নাহিদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘তাকিয়ে দেখ তো, আমাদের কাউকে চেনা যায় কিনা। এত অভিমান, অভিযোগ কেন? এসবের মাঝে আমাদের অবস্থা কী হয়েছে দেখেছ?’
নাহিদা মুখ তুলে আয়নার দিকে তাকাল। না, আগের সুখী দম্পতির মতো লাগছে না। মনে হচ্ছে, মুখের গড়ন ছাড়া সবটুকু যেন বলদে গেছে।
পায়ের আঙুলগুলোতে ভর দিয়ে তানজিমের কপালে কপাল ঠেকিয়ে নাহিদা বলল, ‘কেন তুমি ওমন করেছ? আজ আশফিয়া বেঁচে থাকলে—’
কথার মাঝেই আটকে দিল তানজিম, ‘আমি আশফিয়াকে আঘাত করিনি।’
কথাটা শোনা মাত্র’ই আবেগ, অনুভূতি একপাশে ঠেলে দিল নাহিদা। বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী বলতে চাইছ?’
একে একে সব কথা খুলে বলতে লাগল তানজিম। নাহিদা শুধু শুনতে লাগল আর অবাক হতে লাগল। এতদিন সে ভেবে এসেছে, আশফিয়াকে আঘাত করা ব্যক্তি তানজিম ছাড়া আর কেউ নয়। কিন্তু এখন তানজিমের সব কথা শুনে সবকিছু আরও ঘোলা হয়ে গেল।

নাহিদার মাথায় জট বেঁধে গেছে। মনে হচ্ছে, মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া হয় না অনেকদিন। কোনোকিছু ভাবতে গেলে উত্তরে শুধু শূন্য মিলছে। সবকিছু আরও গাঢ়, কালো ধোঁয়া হয়ে উঠছে।
নাহিদা খুব সময় নিয়ে বলল, ‘তাহলে আর কে আশফিয়াকে আঘাত করতে পারে?’
‘আমি জানি না।’ কিছু মনে পড়তেই তানজিম হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘সেদিন আমার রাগে তো জন্মদিন মাটি হয়ে গেছিল। সবাই ফিরেও গিয়েছিল তাই না? আমি ফ্ল্যাটে ফেরার পর আশফিয়ার সাথে কথা কাটাকাটি করে আবার বেরিয়ে গেছিলাম। আমার মনে আছে, আশফিয়া দরজা লাগিয়ে দিয়েছিল। এমতাবস্থায় বাইরে থেকে কেউ যদি ঢুকতে চাইত, তবে লক ভাঙতে হতো। কিন্তু লক যেহেতু ঠিক ছিল, তারমানে চাবি দিয়ে কেউ ঢুকেছিল। আর সব চাবি ইয়াসমিন আন্টির কাছে থাকে। কিছু বুঝলে?’ এতটুকু বলে নিজেই ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল তানজিম, ‘কিন্তু আন্টি কেন এমন করবেন?’
‘ইয়াসমিন আন্টি যেমন’ই হোন না কেন, এরকম একটা কাজ কখনোই করবেন না। তাছাড়া আশফিয়াকে তিনি ঠিকমতো চিনতেন না। তাই যুক্তি খাটছে না।’ বলে চুপ করল নাহিদা।
নাহিদার মাথায় যে নতুন কোনো বিষয় এসে ধরা দিয়েছে, তা তার মুখ দেখলেই বুঝা যায়। আর তানজিমও বুঝতে পারল। মাঝখানে সে কোনো প্রশ্ন করে নাহিদাকে বিব্রত করল না। নাহিদার যা বলার, সে এমনিই বলবে।

তানজিম জুতা খুলতে খুলতে নাহিদার দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগল। চোখে পড়ল নাহিদার মুখে ভেসে থাকা কিছু ভাষা। অধরার দিকে তাকাল সে। মেয়েটি খেলতে খেলতে এরমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তিরতির করে নড়ছে চোখের পাতা। মাঝে মাঝে হাতের আঙুলও নড়ছে। তানজিমের ইচ্ছে করল নিষ্পাপ শিশুটিকে একটু আদর করতে, কিন্তু সাহস হলো না।
অনেকক্ষণ ধরে নাহিদার নীরবতা সহ্য করে যাচ্ছিল তানজিম। কিন্তু সময়ে সময়ে এমন নীরবতা কাঁটার মতো হতে শুরু করলে সে জিজ্ঞাসা করে ফেলল, ‘কী ভাবছ?’
নাহিদা কাচুমাচু হয়ে সরল গলায় বলল, ‘সেদিন অপু আমাদের ফ্ল্যাটেই ছিল।’ তানজিমের বড় বড় চোখ উপেক্ষা করে নাহিদা বলতেই থাকল, ‘তুমি ওকে যেভাবে আঘাত করেছিলে সেভাবে যদি ইয়াসমিন আন্টির কাছে ফেরত যেত, তাহলে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হতো ভেবে আমি ওকে আমাদের ফ্ল্যাটেই থেকে যেতে বলি। ও কোনোরকম বাঁধা-বিপত্তি ছাড়াই থেকে যায়।’
‘তারমানে অপু এটা করেছে?’
নাহিদা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, ‘হয়তো। কিন্তু এভাবে সন্দেহের বশে কিছু বলা বা করা ঠিক হবে না।’
‘প্রমাণ মিলবে।’
নাহিদা আড়ো চোখে তাকাতেই তানজিম কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল, ‘আমি যখন অধরাকে খুন করার জন্য ডাক্টার মোস্তফাকে বলেছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, এই কেসে আরও কেউ টাকা দিয়েছে। আমার তখন একবারও জানার ইচ্ছে করেনি সে কে। তবে এখন ইচ্ছে করছে।’
‘তারমানে সব প্রশ্নের উত্তর ডাক্টার মোস্তফার কাছে আছে।’

নাহিদা আরও গাঢ় ভাবনায় তলিয়ে গেল। মাঝে তানজিম আশফিয়ার খুনি নয় ভেবে প্রসান্তির বাতাসেও দুলে চলল। এত চিন্তার মাঝেও এটুকু তাকে খুশি করে দিচ্ছে যে, তানজিম খুনি নয়। এতদিনের ভুল বুঝাবুঝি মিটে গেল। তানজিমকে কত খারাপ ভেবেছিল নাহিদা! এখন নিজের মাথায় চাটি মারতে ইচ্ছে করছে। ভালো মানুষটিকে কী করে এত খারাপ ভেবেছিল? ভাগ্যিস পুলিশকে সে উল্টাপাল্টা কিছু বলেনি! আর এতসব ভালো হয়েছে জাফরিনের জন্য। তিনি প্রতিনিয়ত বুঝিয়েছেন। স্বামী কী তার সঠিক সংজ্ঞা দিয়ে নাহিদার খারাপ ভাবনার লাগাম টেনে ধরেছেন। দৈনন্দিন হাজারও ছলে বুঝিয়েছেন সংসারের অর্থ।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here