#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২০
.
থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। তার পাশে রয়েছে নীরদ আর অর্ঘমা। অপর পাশের বেঞ্চের এক কোণায় দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে আছে নিধি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে কাঁদছে। অভ্রর মাথায় বর্তমানে আশেপাশের কিছুই ঢুকছে না। তার মাথাটা ভনভন করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখ তুলে এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছুটা সামনেই একটা দোকান দেখতে পেল। এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে এক প্রকার দৌড়েই গেল সেদিকে। পেছন থেকে অর্ঘমা, নীরদ হতভম্ব হয়ে দেখল। পরক্ষণেই নীরদও ছুটল অভ্রর পেছনে।
অভ্র দোকান থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি কিনে কিছুটা আগে গলায় ঢেলে তৃষ্ণা মিটিয়ে নিল। বাকিটা মাথায় ঢালল আর চোখে-মুখে ছিটাল। পানি পড়ে শার্ট ভিজে একাকার অবস্থা। প্যান্টেও পানি লেগেছে কিছুটা। চোখ বন্ধ করে মাথার চুল ধরে টানতে লাগল। কাঁধে কেউ হাত রাখতেই চোখ মেলল। নীরদকে দেখে পেছন ঘুরে তাকাল। অর্ঘমা আর নিধিকে দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে এসব বাস্তব, কোনো কল্পনা নয়। একটু আগে যা ঘটেছে তা আসলেও সত্যি। নীরদের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল অভ্র।
-“পাশের ক্যাফেতে চলো। একটু বসা দরকার সবার। মাথা ঠান্ডা করে কথা বলা উচিত।”
-“বলার আর কিছু বাকি আছে?”
অভ্রর কণ্ঠে বিষাদ স্পষ্ট। নীরদ তাকে কী বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারল না। তাকে ধরে পাশের ক্যাফের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। যাওয়ার আগে অর্ঘমাকে ইশারা করে বলল নিধিকে নিয়ে আসতে।
টেবিলে বসে কিছু একটা বলার জন্য উশখুশ করছিল অর্ঘমা। অভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে সে চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
-“আ’ম স্যরি ভাইয়া।”
-“স্যরি বললে সব ঠিক হয়ে যাবে?”
অর্ঘমা চুপ হয়ে গেল।
-“কেন করলি এটা?”
-“নিধির ভবিষ্যৎ সিকিউর করার জন্য বিয়েটার খুব দরকার ছিল।”
-“তুই শুধু তোর বান্ধবীর কথাটাই ভাবলি। আমার কথা ভেবেছিস একবারও?”
-“ভেবেছি। অনেক চিন্তাভাবনা করেই এই কাজটা করেছি আমি। এতে ভবিষ্যতে তুমিও ভালো থাকবে আর নিধিও ভালো থাকবে।”
অভ্র রাগে টেবিলে জোরে ঘুষি মারল। আশেপাশের সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে। ব্যাপারটা খেয়াল করে নীরদ বলল,
-“আশেপাশের সবাই দেখছে। প্লিজ কোনো সিন ক্রিয়েট করো না বাইরের মানুষের সামনে।”
অভ্র তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আরে সিন ক্রিয়েট তো আমার জীবনের সাথে হয়ে গেল।”
অর্ঘমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“তোর কাছ থেকে এটা কখনোই আশা করিনি আমি। তুই আজকে আমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছিস। আমি তোকে কক্ষনো ক্ষমা করব না এর জন্য।”
হনহন করে চলে গেল অভ্র। অর্ঘমার চোখে ততক্ষণে জল জমে গিয়েছে। অভ্র এর আগে কখনো তার সাথে এতটা রুড বিহেভ করেনি। অভ্র যেতেই নিধিও উঠে দাঁড়াল। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“এবার শান্তি পেয়েছিস তুই? আমার জীবনের পাশাপাশি নিজের ভাইয়ের জীবন নিয়েও জুয়া খেলে ফেললি। এর পরিণাম কী হবে বা কী হতে পারে তা জানা স্বত্বেও তুই এই কাজটা করলি। এর জন্য তোকে আমি কখনো মাফ করব না অর্ঘ।”
নিধিও চলে গেল। এবার কেঁদেই ফেলল অর্ঘমা। নীরদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-“খামোখা দুটো জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিলে। এর পরিণাম কী হবে ভেবেছ? তোমার বাবা-মা কেমন রিয়্যাক্ট করবে ভেবেছ একবারও? যদি তারা মেনে না নেয় তাহলে নিধির জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। রাগের মাথায় হুঁশ হারিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে ওদের দু’জনের উপর। অথচ ওদের কথাটা একবারও ভাবলে না। তোমার জেদটা তোমার কাছে বড় হয়ে গেল?”
অর্ঘমা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকাল। তার কান্না থেমে গেছে। নীরদ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে অর্ঘমা বলল,
-“এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমি কোনো চিন্তাভাবনা ছাড়া নিব ভাবলেন কী করে আপনি? আমার আপন ভাই হয় অভ্র। আমি ওর জন্য যা করব তা অবশ্যই ভেবে চিন্তেই করব। ঠিক তেমনই নিধি আমার বেস্টফ্রেন্ড। আমার বোনের মতোই। ওর জন্যও যা করব ভেবে চিন্তেই করব। নিধি আর ভাইয়ার ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই আমি তাদের একে অপরের জীবনের সাথে জুড়ে দিয়েছি। ওদের ভালোর জন্যই করেছি। আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া আর নিধি আমার সিদ্ধান্তে কিছু সময়ের জন্য কষ্ট পেলেও অন্তত আপনি আমায় বুঝবেন। কিন্তু ভাবিনি আপনিও আমাকে ভুল বুঝবেন।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল অর্ঘমা। তার ভেতর থেকে স্পষ্ট ফোঁপানোর আওয়াজ আসছে। কান্না আটকানোর যে খুব করে চেষ্টা করছে তা বুঝাই যাচ্ছে।
-“নিজের জেদ আমি নিজের উপরেই দেখাই। আমার জেদের জন্য অন্য কারও ক্ষতি আমি ভুল করেও করি না। আর কখনো করবও না।”
অর্ঘমা চলে যেতে গেলে তার হাত ধরে ফেলল নীরদ। কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্ঘমা হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।
___
ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল অর্ঘমা। তার সারা শরীর দরদর করে ঘামছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মৃদু কাঁপছে তার শরীর। বালিশের পাশ হাতড়ে ফোন খুঁজে টর্চ জ্বালাল। পাশের টেবিলেই পানির বোতল রাখা। বোতলটা তাড়াতাড়ি নিয়ে অর্ধেক বোতল পানি এক নিমিষেই শেষ করে ফেলল। স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লাগল তার। কী ধরনের স্বপ্ন ছিল এটা? নিধির কথা মাথায় আসতেই তৎক্ষনাৎ বিছানার অপর পাশে তাকাল। নিধি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল অর্ঘমা। আজকাল সে অভ্র আর নিধিকে নিয়ে বেশি ভাবছে। হয়তো এই স্বপ্নটা সেই জন্যই দেখা। পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে একা পেলেই অভ্র আর নিধিকে জড়িয়ে কথা বলা শুরু করে দেয়। তার মন বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অর্ঘমা এসবে কান দেয় না। কিন্তু তার মাথায় একটা ভাবনা এসেছে। রিয়া নেই অভ্রর জীবনে। নিধির জীবনেও কেউ নেই। বেচারি একদম একা। তার একটা ভরসাযোগ্য আশ্রয়স্থল দরকার। দরকার একজন নিজের মানুষের। যার সাথে দিন শেষে মনের সকল কথা শেয়ার করতে পারবে। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারবে। নির্দ্বিধায় সবরকম আবদার করতে পারবে। সেই মানুষটা তো অভ্র হতেই পারে। বেশ কিছুদিন ধরে সে এই কথা ভাবছে যার কারণে আজকে এমন একটা স্বপ্ন দেখা। তা-ও এমন একটা স্বপ্ন দেখল, যেখানে কিনা তাকে সবাই ভুল বুঝল? অভ্র, নিধি এমন কি নীরদ পর্যন্ত তাকে ভুল বুঝে বসে আছে স্বপ্নে। অর্ঘমা তৎক্ষনাৎ ভেবে ফেলল এমন কিছুই সে করবে না। যার ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে। খামোখা সবার কাছে বিনা দোষে দোষী সে হতে পারবে না। এর চেয়ে যেভাবে যা চলছে চলুক। টর্চ অফ করে আবারও শুয়ে পড়ল অর্ঘমা।
___
সময় যেন চোখের পলকে চলে যায়। মনে হচ্ছে এইত সেদিন এই বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে আসলো অর্ঘমারা। অথচ চলতি মাসে পুরোপুরি সাড়ে চার বছর হতে চলল তারা এসেছে। অর্ঘমা আর নিধি বর্তমানে ভার্সিটিতে পড়ছে। নীরদ গত মাসেই চাকরিতে যোগদান করেছে। পাশাপাশি মাস্টার্সেও ভর্তি হয়েছে।
নীরদের সাথে অর্ঘমার সম্পর্কটা এখনো আগের মতোই আছে। শুধু আগের মতো আছে বললে ভুল হবে। তাদের সম্পর্কটা আরও মজবুত আর গাঢ় হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ কাউকে একে অপরের মনের কথা বলেনি। এতে অবশ্য সমস্যা হচ্ছে না কারও। মুখে না বলেও একে অপরের মনের খবর বুঝে নিচ্ছে তারা প্রতিনিয়ত। সময় পেলেই একে অপরের সাথে ঘুরাঘুরি করা, আড্ডা দেওয়া, ঝগড়া করা সবই হচ্ছে।
অভ্র এখনো আগের গতিতেই থেমে আছে। অফিস, বাসা, বন্ধুবান্ধব, আড্ডা নিয়েই বেশ আছে সে। রিয়া অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল এর মাঝে। অভ্র তাকে কোনো প্রকার সুযোগ দেয় নি। কারণ রিয়া এর মাঝে অনেকগুলো ভুল করেছে। অভ্রকে না পেয়ে অর্ঘমার ওপর রেগে নিজের বন্ধুবান্ধব, যারা অর্ঘমার কলেজেই পড়ত তাদের দ্বারা বহুবার অর্ঘমাকে বিভিন্ন ভাবে অপদস্ত করার চেষ্টা করেছে। এমন কি নিজে গিয়েও একবার হুমকি দিয়ে এসেছিল। ফলস্বরূপ অর্ঘমার কাছ থেকে সব শুনে অভ্র নিজে রিয়ার সাথে দেখা করে তাকে দুটো থাপ্পড় সমেত হুমকি ফিরিয়ে দিয়ে এসেছিল। কলেজে গিয়ে রিয়ার বন্ধুবান্ধবদেরও শাসিয়ে এসেছিল। এরপর থেকে না রিয়াকে দেখা গেছে অর্ঘমার কলেজের আশেপাশে আর না রিয়ার বন্ধুবান্ধবদের দেখা গেছে অর্ঘমার আশেপাশে।
নিধি শুধুমাত্র নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবারের লোকগুলোর উপরে নিধি কৃতজ্ঞ। তার কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। হাজারো কটু কথা, অপমানসূচক কথা শোনার পরও এই পরিবারের লোকগুলো তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। বিশেষ করে অভ্র আর অর্ঘমা তাকে সব কিছুতে খুব সাপোর্ট দিয়েছে। এরা দু’জন একবারের জন্যও তাকে এটা ভাবতে দেয়নি যে সে একজন বাইরের মানুষ। সব সময় তাকে এই পরিবারের একজন সদস্য মনে করেই ট্রিট করেছে। এত ভালো মানুষও যে হয় তা অভ্র আর অর্ঘমাকে না দেখলে নিধি জানতই না। এমন কি নীরদ পর্যন্ত তাকে যথেষ্ট স্নেহ করে। শুধু অর্ঘমার মা একটু ব্যতিক্রম এই যা।
___
অফিস শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরেই অবাক হয়ে গেল নীরদ। তাদের বসার ঘরে অর্ঘমার বাবা বসে আছে। নীরদের বাবা-মায়ের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। অর্ঘমার বাবা এর আগে কখনো আসেনি তাদের বাসায়। আজ হঠাৎ দেখে নীরদ কিছুটা বিস্মিতই হয়েছে। অর্ঘমার বাবাকে সালাম দিয়ে টুকটাক কুশলাদি বিনিময় করে নিজের রুমের দিকে যেতে গেলে নুসরাতের রুম থেকে পরিচিত গলার আওয়াজ শুনে সেদিকে গেল। রুমের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখা গেল অর্ঘমা আর নুসরাত গল্প করছে। দু’জনকেই ভীষণ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। নীরদ হালকা করে কাশল। নুসরাত, অর্ঘমা দু’জনেই তাকাল সেদিকে। নুসরাত হেসে বলল,
-“চলে এসেছিস? আজকে দিন কেমন কাটল অফিসে?”
-“ভালো। তুই আজ এত তাড়াতাড়ি বাসায় যে?”
লাজুক হাসল নুসরাত। নীরদের হাত ধরে টেনে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসলো। বোনের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারল না নীরদ। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“লজ্জা পাওয়ার মতো কী বললাম?”
-“একটা খবর আছে।”
-“তোর জামাই তোর জন্য সতীন নিয়ে এসেছে?”
নুসরাত রেগে কান মলে দিল ভাইয়ের। নীরদ হাসতে লাগল কানে হাত দিয়ে। নাক ফুলিয়ে নুসরাত বলল,
-“ভালো মুডে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম তোকে। তুই তা হতে দিলি কই? গরু একটা! তুই মামা হবি।”
কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে নীরদ বিস্ময় নিয়ে বলল,
-“মিষ্টি ছাড়া এমন সংবাদ দিতে তোর লজ্জা করল না? নাকি এজন্যই লজ্জা পাচ্ছিলি?”
-“এই গরু, তুই বের হ আমার রুম থেকে। তোকে জানানোই উচিত হয়নি।”
অর্ঘমা নিঃশব্দে হাসছে দুই ভাইবোনের খুনসুটি দেখে। নীরদ হাসতে হাসতে বোনের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ্। আমি অনেক খুশি হয়েছি।”
নুসরাতও হেসে তার ভাইয়ের চুলগুলো এলোমেলো করে দিল। নীরদ তার রুমে চলে গেল ফ্রেস হতে। মিনিট দশেক পর ফিরে এলো হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে। সেটা নুসরাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“চাকরির প্রথম স্যালারি পেয়েছি গতকাল। এটা তোর জন্য নিয়েছিলাম। কাল তো বন্ধুদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করে অনেক রাত করে বাসায় ফিরেছিলাম। তাই দিতে পারিনি। এক হিসেবে ভালোই হয়েছে। মামা হওয়ার উপলক্ষে এটা তোর।”
-“কী এটা?”
-“খুলে দেখ।”
নুসরাত তৎক্ষনাৎ ব্যাগটা খুলল। শাড়ি দেখেই খুশিতে ঝলমল করে উঠল তার চেহারা। শত হোক একমাত্র ভাইয়ের প্রথম উপার্জনের টাকায় কেনা তার এই শাড়ি। পছন্দ না হয়ে যাবে কই?
-“ভীষণ পছন্দ হয়েছে ভাই। দেখো অর্ঘমা, শাড়িটা সুন্দর না?”
-“হ্যাঁ আপু। খুব সুন্দর। তোমায় খুব মানাবে এটা পরলে।”
নুসরাত ব্যস্ত হয়ে পড়ল শাড়ি নিয়ে। আয়নার সামনে গিয়ে শাড়িটা গায়ে রেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল নিজেকে।
নীরদ হেসে বোনের থেকে চোখ ফিরিয়ে অর্ঘমার দিকে তাকাল। অর্ঘমাও তাকাল তার দিকে। তাদের ভাগ্য হয়তো সুপ্রসন্ন ছিল। তখনই কল এলো নুসরাতের হাজবেন্ডের। নুসরাত ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। নীরদ পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ভ্রু কুঁচকে ইশারা করল অর্ঘমাকে। গলার স্বর খাদে নামিয়ে অর্ঘমা জিনিস করল,
-“কী?”
-“তোমার বাবা হঠাৎ এখানে আসলেন যে?”
কথাটা শুনেই অর্ঘমার মুখ মলিন হয়ে গেল। তা খেয়াল করে নীরদ বলল,
-“কিছু হয়েছে?”
-“আগামী মাসে আমরা বাসা ছাড়ছি।”
বিস্ময়ে কপাল কুঁচকে গেল নীরদের। সে বলল,
-“আমি মনে হয় কানে কম শুনছি। কী বললে তুমি?”
-“ঠিকই শুনেছেন।”
-“কিন্তু কেন? হঠাৎ এভাবে বাসা ছাড়ার মানে কী? আর অভ্র ভাই তো আমায় কিছু জানাল না। তুমিও তো আগে কিছু বলোনি।”
-“আমরা কেউই জানতাম না। আমাদের বাড়ির কাজ শেষ হয়ে গেছে। আজকে বাবা গিয়ে দেখে এসেছেন। এখন বাবা চাইছেন আমাদের বাসায় উঠে যেতে। ভাইয়াকেও বিকালে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন বাবা।”
নীরদ কিছুক্ষণ চুপ করে পায়চারি করল ঘরজুড়ে। তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে বারবার কিছু একটা বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছে। মাথার চুল ধরে কয়েকবার টেনে সরাসরি অর্ঘমার দিকে তাকাল। অর্ঘমাও তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। নীরদের চোখ দু’টো লাল হয়ে আসছে। কীভাবে থাকবে সে এই মেয়েটাকে ছাড়া? রোজ যাকে একপলক না দেখলে তার দিন ভালো যায় না, তাকে দিনের পর দিন না দেখে কী করে থাকবে? সাড়ে তিনটা বছর এই মেয়েটাকে সে আগলে রেখেছে সকল বিপদ-আপদ থেকে। এরপর থেকে কে দেখে রাখবে? নীরদ কিছুক্ষণ উশখুশ করে প্রশ্ন করল,
-“তুমি আমাকে ভুলে যাবে?”
অর্ঘমা জবাব দিতে পারল না। তার আগেই নুসরাত চলে এলো ঘরে। নীরদ তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। অর্ঘমা শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। এছাড়া আপাতত তার আর কিছুই করার নেই।
চলবে…#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২১
.
ছাদের একপাশে উদাসীন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অর্ঘমা। মনটা তার ভীষণ খারাপ। গত দুই দিন যাবৎ নীরদের কোনো খোঁজ নেই। সেদিনের পর থেকে নীরদ তার সাথে যোগাযোগ করেনি। এমন কি অর্ঘমা যোগাযোগ করতে চাইলেও কোনো রিপ্লাই দেয়নি। হুট করে এভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল কেন ছেলেটা? অর্ঘমা চিন্তায় শেষ। অভ্রকে জিজ্ঞেস করেও মন মতো কোনো উত্তর পায়নি। কারণ নীরদ অভ্রর সাথেও যোগাযোগ করছে না। একদিকে যেমন নীরদের প্রতি অভিমান হচ্ছে অন্যদিকে চিন্তাও হচ্ছে। ঠিক আছে তো ছেলেটা?
অর্ঘমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটাল অভ্র। বোনের এমন উদাসীনতা তার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। কোথায় তার সাথে মারামারি করবে, এটা-সেটা বায়না করবে, তা না করে ছ্যাঁকা খাওয়া পাবলিকের মতো বসে আছে। আজ শুক্রবার, বন্ধের দিন। অভ্র বাসাতেই ছিল। অর্ঘমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আজ তো আমার বন্ধ আছে। চল কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি। নিধিকেও সাথে নিয়ে যাব। মেয়েটার গায়ে একটু হাওয়া-বাতাস লাগলে যদি চঞ্চল হয় তাহলে তো ভালোই।”
-“আমার ভালো লাগছে না ভাইয়া।”
-“গেলেই ভালো লাগবে। যা গিয়ে রেডি হয়ে আয়। তোর বান্ধবীকে বলে এসেছি। ও রেডি হচ্ছে। এখন তুই না গেলে ও বেচারির মন খারাপ হবে।”
অভ্র আরও বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে অর্ঘমাকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিল। নিজেও গেল রেডি হতে। রেডি হয়ে অর্ঘমা আর নিধিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আজ সারাদিন ঘুরে বেড়াবে তারা।
___
কয়েক জায়গায় ঘুরাঘুরি করে একটা কফিশপে এসে বসল অভ্র, অর্ঘমা আর নিধি। ছোট্ট একটা কফিশপ। চারটা টেবিল বসানো। প্রতিটা টেবিলে দু’টো করে চেয়ার পাতা। অভ্র পাশের খালি টেবিল থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে বসেছে। পুরো কফিশপটায় তারা ছাড়া আর কোনো কাস্টমার নেই আপাতত। অর্ঘমা ঘাড় ঘুরিয়ে কফিশপটা দেখতে লাগল। জায়গাটা পছন্দ হয়েছে তার। কফিশপের মালিক যে বড্ড সৌখিন মানুষ তা সাজানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। একপাশে ছোট্ট একটা বেতের দোলনা ঝোলানো। এছাড়াও শপের সব ফার্নিচারই বেতের তৈরি। মেন্যু কার্ডটা হাতে নিল অর্ঘমা। কার্ডের ডিজাইনটা সুন্দর।
অর্ডার দিয়ে অভ্র আর নিধির সাথে টুকটাক কথা বলছিল অর্ঘমা। এমন সময় নীরদের বন্ধুদের ঢুকতে দেখা গেল কফিশপে। এদের দেখে অর্ঘমা চমকাল। এরা এখানে কী করছে? তার মানে কী নীরদও এসেছে? নীরদের বন্ধু আসিফ এগিয়ে এলো অভ্র আর অর্ঘমাকে দেখে।
-“আরে ভাইয়া, আপনারা এখানে?”
অভ্র ফোন থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকিয়ে আসিফকে দেখে হেসে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করল।
-“আমি এইত অর্ঘমা আর নিধিকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। তোদের কী খবর? তোরা এখানে?”
-“নতুন কফিশপ। ভাবলাম এখান থেকে ঘুরে যাই।”
-“ওহ আচ্ছা। সবাই এসেছিস দেখছি।”
-“হ্যাঁ।”
-“আচ্ছা, বসে পড় তোরা।”
আসিফ চলে গেল বন্ধুদের কাছে। অভ্র বসে আবারও ফোন দেখা শুরু করল। নিধিও ফোন টিপছে। অর্ঘমা আর কী করবে? সে-ও ফোনের দিকে মনোযোগ দিল।
অভ্রর গলা শুনে অর্ঘমা সামনে তাকাল। ততক্ষণে অভ্র উঠে অর্ঘমার পেছনে চলে গেছে। অর্ঘমা পেছন ঘুরে তাকাল। নীরদ এসেছে। চোখাচোখি হলো দু’জনের। অভিমানী কিশোরী মনের নির্দেশে চোখ সরিয়ে আবারও ফোনের দিকে তাকাল। কিন্তু তার পূর্ণ মনোযোগ নীরদের দিকেই পড়ে রইল। মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল নীরদকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে। নীরদের বন্ধুরা সকলে উঠে এসেছে নীরদকে দেখে। বেশ খোশগল্প করছে অর্ঘমার পেছনে দাঁড়িয়ে। অর্ঘমা নিধির দিকে তাকাল। মেয়েটা মিটমিট করে হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। ভ্রু কুঁচকে অর্ঘমা জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে?”
-“কোথায় কী হয়েছে? কিছুই হয়নি।”
-“তাহলে হাসছিস কেন?”
-“ওই, ফোনে একটা ফানি মিম দেখে হাসছিলাম।”
-“আমি তো দেখলাম তুই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিস।”
-“ভুল দেখেছিস তুই।”
কথা বাড়াল না অর্ঘমা। হতেও পারে সে ভুল দেখেছে। নীরদের চিন্তায় তার মন মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল একপ্রকার। এই অবস্থায় ভুলভাল দেখাটা তার জন্য অস্বাভাবিক কিছু না।
পাশে একজোড়া পায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে অর্ঘমা সেদিকে তাকাল। নীরদ এসে দাঁড়িয়েছে। পেছনে তাকিয়ে দেখল অভ্র আর নীরদের বন্ধুরা একে অপরের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। অর্ঘমা আবারও ফোনের দিকে তাকাল। কিন্তু ফোন স্ক্রোল করার জন্য তার হাত চলছে না। ঠোঁট দু’টো তিরতির করে কাঁপছে। যেন যেকোন মুহূর্তে কেঁদে ফেলবে। অভিমানে চোখ দু’টো ভিজে আসছে।
-“তোমার সাথে একটু কথা ছিল।”
নিজেকে কিছুটা সময় দিয়ে সামলে নিল অর্ঘমা। মাথানিচু করে বলল,
-“বলুন।”
গলা ঝেড়ে অভ্র আর বন্ধুদের দিকে তাকাল। তারা সকলে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মিটমিট করে হাসছে একেকজন। আমতা আমতা করে বলল,
-“আসলে…”
এতটুকু বলেই উশখুশ করতে লাগল। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হতে চাইছে না। নীরদের এমন অবস্থা দেখে অর্ঘমার এতক্ষণের আটকে রাখা কান্নাটা পুরোপুরি গায়েব হয়ে গেল। এমন কী বলবে এই ছেলে যে এত ভাবতে হচ্ছে? এবার অর্ঘমা সরাসরি তাকাল নীরদের দিকে। থতমত খেয়ে গেল নীরদ। চুলে হাত বুলিয়ে আবারও তাকাল অভ্র আর বন্ধুদের দিকে।
-“এমন আমতা আমতা করছেন কেন?”
-“না মানে… কিছু না।”
উলটো ঘুরে চলে আসতে গেলে অভ্র আর বন্ধুদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে থেমে গেল। জোর করে হাসার চেষ্টা করে ধীর পায়ে আবারও ফিরে এলো অর্ঘমার কাছে। অর্ঘমা প্রশ্ন করল,
-“আবার কী?”
-“আমার আসলে কিছু বলার ছিল।”
-“বলুন, শুনছি।
-“আসলে বলছিলাম কী…”
-“আপনি কবে থেকে কথা বলতে গেলে এমন আমতা আমতা করেন?”
-“আজকেই এমন হচ্ছে।”
-“কেন?”
-“এসব ছাড়ো। যা বলতে চাচ্ছি তা শোনো।”
-“তার আগে বলুন এই দুইদিন কোথায় ছিলেন?”
-“তুমিই বুঝে যাবে। আগে শোনো আমার কথা।”
এবার আর কিছু বলল না অর্ঘমা। বুকের সামনে হাত ভাজ করে বসে তাকিয়ে রইল নীরদের দিকে তার কথা শোনার অপেক্ষায়। নীরদ লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,
-“আমি যে তোমাকে পপ..পছন্দ করি তা তো জানো?”
এই কথা শুনে অর্ঘমা প্রচণ্ড অবাক হলো। হাত ঢিলে হয়ে ঢলে পড়ল কোলের মাঝে। জিহ্ব দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। কী জবাব দিবে প্রথমে বুঝতে পারল না। কিছুটা সময় নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
-“তু..তুমিও আমাকে পছন্দ করো আই থিংক।”
-“ইউ থিংক?”
অর্ঘমার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল নীরদ। বলল,
-“না মানে আমি শিওর পছন্দ করো।”
এর বিপরীতে কিছু বলল না অর্ঘমা। মাথানিচু করে বসে আছে সে। নীরদ অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মিনমিন করে বলল,
-“আ..আই লাভ ইউ।”
-“কী?”
অর্ঘমা চমকে উঠে প্রশ্ন করল। বিস্ময়ে কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার অধরজোড়া। নীরদ তৎক্ষনাৎ দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
-“কিছু না। আমি কিছু বলিনি।”
অর্ঘমা সামলে নিল নিজেকে। কানের পিঠে চুল গুঁজে মিনমিন করে বলল,
-“কিন্তু আমি যে শুনলাম।”
আসিফ এসে নীরদের পিঠে দুম করে একটা কিল মেরে চলে গেল। নীরদ পিঠে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ব্যথা সহ্য করল। অভ্রও চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। নীরদ এবার চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলল,
-“আই লাভ ইউ অর্ঘমা।”
অর্ঘমা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল। পেছন থেকে নীরদের বন্ধুরা ‘ওহো’ বলে চেঁচিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ। লজ্জায় গাল দু’টো রক্তিম বর্ণ ধারণ করল অর্ঘমার। চোখের পলক নামিয়ে নিল মুহূর্তেই। একরাশ লজ্জা এসে ভর করল তার ভেতরে। এভাবে সকলের সামনে প্রপোজ! নিশ্চয়ই বন্ধুরা বাধ্য করেছে? তার ওপর অভ্রও আছে এখানে। তার মানে সে-ও জানত এই বিষয়ে। এসব তাদের প্ল্যান ছিল? অর্ঘমা চোখ বন্ধ করে ফেলল। লজ্জায় তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
নীরদের সব বন্ধুরা এবার সামনে চলে এসেছে। আসিফ হেসে নীরদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-“কী অর্ঘমা? আমার বন্ধুটাকে পছন্দ হয় না? অবশ্য পছন্দ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ও তো একটা গাধা। আমি বলি কি তুমি ওর প্রপোজাল রিজেক্ট করে দাও।”
নীরদ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আসিফের পিঠে দুমদাম করে পর পর দু’টো কিল বসিয়ে দিল। অর্ঘমার এই মুহূর্তে মন চাচ্ছে এখান থেকে পালিয়ে বাসায় গিয়ে কম্বল জড়িয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে। এত লজ্জায় সে এর আগে কখনো পড়েনি। অভ্র বলল,
-“তাহলে তোর জবাব কী আমরা নেগেটিভ ধরে নিব? যদি তাই হয় তাহলে তো..”
-“না।”
-“কী না?”
আসিফ হেসে বলল,
-“আরে বুঝো না কেন? ওর লাজে রাঙা চেহারাই বলে দিচ্ছে রিপ্লাই পজিটিভ।”
অভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
-“সত্যি?”
লাজুক হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করল অর্ঘমা। সবাই আরও একবার চিল্লিয়ে নিজেদের উল্লাস প্রকাশ করল। অর্ঘমা চোখ বন্ধ করে মুখ ঢেকে বসে রইল।
নীরদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“এটা কী হলো?”
-“কী?”
-“আমাকে আই লাভ ইউ বলানোর জন্য তোরা যে অত্যাচার করলি, ওর বেলায় তাহলে উলটো কেন? ওকেও মুখে বলতে হবে।”
-“এটা তোদের ব্যাপার। আমাদের কাজ এতটুকুই ছিল। তাছাড়া বেচারি লজ্জায় এমনিতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। এখন আই লাভ ইউ টু বলাতে গেলে ওকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।”
-“এটা ঠিক না।”
-“এটাই ঠিক। তুই যা বলবি সেটা বেঠিক।”
অভ্র নীরদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-“ও কিন্তু আমার কলিজা। ওর খেয়াল রাখিস। কোনো কষ্ট দিবি না ওকে। নাহলে কিন্তু তোর একদিন কী আমার একদিন।”
নীরদ চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল অভ্রকে। অর্ঘমা চোখ রাঙিয়ে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“তার মানে এই দু’দিন তোমার সাথে ওনার যোগাযোগ ছিল না কথাটা তুমি আমায় মিথ্যে বলেছিলে?”
অভ্র জিহ্বে কামড় দিয়ে নীরদের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আমার কোনো দোষ নেই। ও চাচ্ছিল তোকে প্রপোজ করতে। কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। নার্ভাস ছিল প্রচণ্ড। তাই সাহস যোগাতে তোর সাথে দু’দিন যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিল। আর প্র্যাকটিস করছিল কীভাবে প্রপোজ করা যায়। আমাকে বলেছিল তোকে মিথ্যে বলতে।”
অর্ঘমা আড়চোখে তাকাল নীরদের দিকে। নীরদ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। আসিফ অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“তোমার মতো ভাই প্রথম দেখলাম। যে কিনা বোনের প্রেমিককে আইডিয়া দেয় কীভাবে বোনকে প্রপোজ করা যায়। ভাই, তোমার মতো ভাই প্রতিটা বোনের থাকা উচিত। তাহলে আমাদের মতো অসহায় নিষ্পাপ ছেলেদেরও একটা করে গার্লফ্রেন্ড থাকত।”
হেসে ফেলল সকলে। অর্ঘমা তখন লাজুক হেসে বারবার আড়চোখে নীরদকে দেখছিল। আসিফ উচ্ছসিত গলায় আবারও বলল,
-“এই অর্ঘমা, তুমি শুনেছ তোমার ভাই আর তোমার প্রেমিক মিলে যে একটা কাণ্ড ঘটিয়েছে?”
অর্ঘমা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কী?”
-“যে কফিশপে তুমি বসে আছ এটা তোমার ভাই আর প্রেমিক দু’জনে মিলে দিয়েছে।”
বিস্ময়ে হতভম্ব অর্ঘমা তার ভাই আর নীরদের পানে চোখ বড় বড় করে তাকাল। অভ্র, নীরদ দু’জনেই দাঁত বের করে হাসল। অর্ঘমা বিস্মিত সুরে প্রশ্ন করল,
-“আসলেই?”
-“হ্যাঁ, মাস দুয়েক হয়েছে। সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে ছিলাম দু’জনে। তা দিয়েই এই শপটা করেছি। পরিচিত কয়েকজনকে দায়িত্বে রেখেছি।”
অভ্রর কথায় অর্ঘমা খুশি হয়ে বলল,
-“জায়গাটা ভীষণ সুন্দর। সবাই পছন্দ করবে। শুভকামনা রইল।”
সবাই যার যার মতো চেয়ার টেনে বসল। অভ্র আর নীরদ গেল দায়িত্বরত কর্মীদের সাথে কথা বলতে। অর্ঘমা নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“তুই আগে থেকেই জানতি নীরদ ভাই আজ আমায় প্রপোজ করবে?”
-“হ্যাঁ। অভ্র ভাই আর নীরদ ভাই বলেছে। কীভাবে প্রপোজ করবে তা আমার সামনেই ডিসকাস করেছে। কিন্তু নীরদ ভাই সেসব শোনেন নি। তিনি বলেছেন অতো ফিল্মিভাবে তিনি কিছু করতে পারবেন না। যা বলবেন সরাসরি বলার চেষ্টা করবেন। কারণ তার প্রচণ্ড নার্ভাস ফিল হচ্ছিল।”
-“এতটা রসকষহীন প্রপোজ মনে হয় এই পৃথিবীতে আমিই পেলাম একমাত্র। তবুও আমার আফসোস নেই। যাকে চেয়েছি তাকেই পেয়েছি। ইট’স এনাফ।”
-“তোদের দু’জনকে পাশাপাশি মানায় ভালো। একদম পারফেক্ট মনে হয়। যেন একে অপরের জন্যই তৈরি। তার ওপর আবার ভাইয়া মানুষটা ভীষণ ভালো। তুই না বলতেই অনেক কথা বুঝে যায়। তোর কত কেয়ার করে। এমন মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তুই খুব লাকি অর্ঘ। সঠিক মানুষটাকে পেয়েছিস জীবনে। খেয়াল রাখিস একে অপরের।”
মৃদু হাসল অর্ঘমা। কিছু বলল না। তাকাল কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীরদের দিকে। যে এখন দায়িত্বরত কর্মীদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। এভাবে এত সহজে নিজের পছন্দের মানুষটাকে সে পেয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। বুকের ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।
চলবে…
গল্প রেগুলার কেন দিই না?
>কারণ আমার ফোন নষ্ট। কম্পিউটারে বাংলা টাইপ করার অভ্যাস নেই। তাই লিখতে সময় লাগে অনেক।