কি ছিলে আমার পর্ব – ২১

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-২১

ইরিন যখন বাপের বাড়ি এলো তখন বসার ঘরে বসে ছিলেন আবরার খন্দকার। তাঁর পাশেই তাঁর কাঁধে মাথা রেখে বসেছিল মেহের। তার ডান হাতে ব্যান্ডেজ, মাথার চুল এলোমেলো আর চোখ দুটি ভীষণ ফোলা। ইরিনরা কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলেছিল জরিনা, ময়ূখ তখনও ঘুমে। এমনিতেও মেহেরের সে ঘটনার পর এ কদিন আর রাতে ঘুমায়নি সে। মনে আ-ত-ঙ্ক ঢুকে গেছে ছোট বোনটিকে নিয়ে। আব্বু তো হার্টের রো-গী চাইলেও তিনি রাত জাগতে পারেন না। মেয়ের অবস্থা দেখে মেহেরের মা’ও স্ট্রো-ক করেছেন। বাড়ি ভর্তি কাজের লোকের মাঝে জরিনা খালা বিশ্বস্ত তবুও ময়ূখ কেন জানি কাউকেই ভরসা করতে পারছে না। নিজেই রাতে বোনকে খেয়াল রাখার নামে পাহারা দিচ্ছে চারদিন ধরে। তাই সকালের সময়টা ঘুমে কা-টা-য় সে। ইরিন যকন মেহেরের চোখ, মুখ আর হাত দেখে আঁতকে উঠলেন তখন আবরার খন্দকার বোনকে দেখে খুশি আর বিষ্ময়ের মিশ্র অনুভূতিতে ভাসছেন৷ ফখরুল সাহেব বড় অস্বস্তির সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইরিনেরই পাশে। ময়ূখের বাবা মেহেরকে ছেড়ে উঠে এগিয়ে বোনের মাথায় হাত রাখতেই তার পাশে নোরাও এসে দাঁড়ালো। তিনি একে একে তিনজনের সাথেই কথা বলতেন লাগলেন। মেহের তখনো নিশ্চুপ বসে আছে। ফখরুল সাহেবই প্রথমে প্রশ্ন করলেন, “তোমার কি হয়েছে মামনি? অসুস্থ দেখাচ্ছে কেন?”

বোন জামাইর কথা শুনে আবরার খন্দকার মেয়ের দিকে তাকালেন। কিছুটা ভণিতা করেই বললেন, “ব্যথা পেয়েছে স্কুলে গিয়ে হাত কে-টে-ছে, জ্বরও আছে৷”

ইরিন অ-স্থি-র হয়ে নোরার কাছে গেলেন। মেহেরের মা নিজের ঘরের বিছানায় শুয়েই অনেকের গলার আওয়াজ পেলেন। তার অবস্থা বিশেষ ভালো নয় বলে ডক্টর হসপিটালে রাখার পরামর্শ দিলেও তিনি কাল জো-র করেই বাড়ি এসেছেন। সাবধান থাকলেও চি-ন্তামুক্ত থাকতে পারছেন না মেয়ের জন্য। জরিনা উপরে গিয়ে মেহেরের মাকে জানালো বড় আপা আজকেই চলে আসছে৷ তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন তাই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে চাইলেন। জরিনা কিছু বলবে তার আগেই দরজার বাইরে থেকে ময়ূখ বলে উঠলো, আপনি বাইরে যাবেন না আম্মা উপরে আসবেই।

সাবধানী কণ্ঠ; ছেলেটার সাথে যত দূরত্বই থাক না কেন দূর থেকেই সে মানবিক দিক থেকে চমৎকার মানুষ। মেহেরের মা শাহনাজ আর নামলেন না অপেক্ষা করলেন ননদের। ময়ূখ নিচ থেকে আসা আব্বুর উচ্চস্বর, আনন্দের সহিত কথা শুনেই তার কাঁচা গুম ভেঙে গেছে। নিচে গিয়ে আম্মাকে দেখতেই তার বুকের ভেতর ঝ-ড় শুরু হলো। নোরার মুখে শোনা কথাটা তার ভেতর এক থম ধরা তুফা-নের সৃষ্টি করেছিল। সেই তু-ফা-ন এখন তাকে তলিয়ে নিতে চাইছে তার একমাত্র আশ্রয়স্থল কাছে পেয়ে৷ মনে হচ্ছে মায়ের বুকেই সে তার সকল দুঃখ, য-ন্ত্রণা-কে প্রকাশ করতে পারে৷ এখনই সে আম্মাকে জাপটে ধরে বলবে, “আম্মা আমার ক-ষ্ট হবে মৈত্রীকে হারালে। আমি ভালোবেসে ফেলেছি ওই পেঁচিমুখী, গম্ভীর, শান্ত মেয়েটাকে। তাকে কি করে ভাইয়ের বউ হিসেবে দেখব আমি!”

তেমন কিছুই করলো না ময়ূখ। যা ভাবা যায় তা করা হয়ে ওঠে না৷ সে হাসিমুখে আম্মাকে জড়িয়ে ধরলো৷

“কেমন আছো আম্মা?”

ইরিন কথার জবাব না দিয়ে ময়ূখকে সরিয়ে দাঁড় করালেন। মনোযোগে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন, “কি হয়েছে তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?”

“ক ক কই কেমন লাগছে! ঘুম থেকে উঠলাম মাত্র।”

আবরার খন্দকার পাশ থেকে বলে উঠলেন, “মেহেরের খেয়াল তো রাতে ওই রাখছে তাই খাওয়া-ঘুম সবই ন-ষ্ট হয়ে গেছে ওর।”

ইরিনের মন মানতে চাইলো না কথাটা। ময়ূখের চোখ মুখ বলছে সে ভালো নেই। মেহেরের চেয়ে মা-রা-ত্মক অসুস্থ ছিল ইরিন বছর দুই আগে। রাত দিন এক করে ছেলেটা তার পাশে পড়েছিল তখন। ইরশাদ আর তার বাবা কাজে কর্মে ব্যস্ত থাকতো বলে ময়ূখই তার সার্বক্ষণিক সেবায় ছিল কই তখন তো এমন লাগেনি! কিন্তু এই মুহুর্তে এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না ভেবে ইরিন ফিরে চাইলেন মেহেরের দিকে।

” ঘটেছিল কি বলতো মেহের।”

“আমি বলি আম্মা, ওর ক্লাসে জানালার কাঁ-চ ভাঙা ছিল সেখানেই বেখেয়ালে হাত রেখেছে। তাতেই হাত কে-টে রক্তার-ক্তি কান্ড। স্কুল থেকে কল এলে আমিই গিয়েছিলাম আনতে দেখেছি আসলে কাঁ-চ-টাই এমন যে, একটুতেই কে-টে যাবে।”

নোরা অনেকক্ষণ ধরে নিষ্পলক ময়ূখকে দেখছিল৷ ময়ূখের চোখের তারা আর তার ঠোঁট লক্ষ্য করতে করতে সে আন্দাজ করলো সে একসাথে অনেকগুলো মিথ্যে বলছে। চোখের তারা আর ঠোঁটের নড়চড় দুটোতে কোন মিল নেই৷ তারপরই নোরা তাকালো মেহেরের দিকে৷ কিছু সময় তাকেও পর্যবেক্ষণ করলো। এবার মনে হলো ঘটনাটা ঠিক এমন নয় যেমনটা ময়ূখ বলল৷ সারাটা দিন সবার ইরশাদ আর মৈত্রীর বিয়ের আলোচনাতেই কা-ট-লো। ফখরুল সাহেব কাল চলে যাবেন রাজশাহী তাই মৌখিক ভাবে ময়ূখের বাবাকে অগ্রিম দাওয়াত করে ফেললেন আগামী সপ্তাহে যাওয়ার জন্য। কাল নিজের বাড়িতেও বড় ভাইকে বলে আসবেন। তারপর মৈত্রীর পরিবার আর নিজেদের সবাই মিলে একটু আয়োজন করে বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন৷ রাতে মেহেরের ঘরে আজ আর ময়ূখকে পাহারা দিতে হবে না বলে সে নিজ ঘরে গেল ঘুমানোর উদ্দেশ্যে। মেহের বিছানায় তার পাশে বসে আছে নোরা ফোন হাতে। ইরিন একই প্লেটে ভাত নিয়ে দুই ভাতিজিকেই খাইয়ে দিলেন। তাদের খাওয়া শেষ হতেই বললেন, “নোরা তুই তো পাশের ঘরেই ঘুমাবি মা একা ঘুমাতে পারবি না! আমি আজ মেহেরের পাশে থাকি।”

“শিওর!”

“আচ্ছা, আমি একটু বাবুকে দেখে আসি ঘুমালো কিনা।”

ময়ূখকে ফুপির এই বাবু ডাকা নিয়ে নোরা মেহের বড়ই হাসিঠাট্টা করে। কিন্তু আজ দুজনের কেউই কোন কথা বলল না এ নিয়ে৷ ইরিন চলে যেতেই নোরা মুখোমুখি বসলো মেহেরের।

“হাতে ঠিক তিন মিনিট সময় তার মাঝেই পুরো ঘটনা বলবে।”

“কি বলছো আপু?”

মেহের বুঝতে পারলো না নোরা কি বলছে।

“এই হাত কা-টার কারণ এবং কবে, কি দিয়ে কা-ট-লে?”

কাঠ কাঠ গলায় বলল নোরা। মেহের লুকাতে চাইলো কিন্তু নোরার চোখের দিকে তাকাতেই কি হলো সে জানে না। ধীরে ধীরে বলতে লাগলো, “ইরশাদ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনতেই আমার ক-ষ্ট হচ্ছিলো৷ বিকেল থেকে মনে মনে অনেক ভেবেছি এমন তো হওয়ারই ছিল৷ ভাইয়া অনেক বড় তার তো এখন বিয়ের বয়স। আমি খুব ছোট আমাকে কিছুতেই পছন্দ করবে না ইরশাদ ভাইয়া। সে তো দেখতেও খুব সুন্দর৷ আমি তো সুন্দর নই তাই আমি তাকে পাবো না সেটাই তো স্বাভাবিক । কিন্তু রাত হতেই আমি আর স-হ্য করতে পারছিলাম না। আমার খুব কান্না পেল, বুকে কষ্ট হতে লাগলো ভাইয়ার বিয়ে হবে ভেবেই৷ আমি খুব ভালোবাসি ইরশাদ ভাইয়াকে। সেই ক্লাস এইট থেকে তার প্রতি আমার ভালোলাগা। আমি কিছুতেই মানতে পারবো না ভাইয়ার বিয়েটা তাই একবার ফোনও করেছি ভাইয়ার নম্বরে৷ ভাইয়া রিসিভও করেছিলো আর তখনই ইরশাদ ভাইয়ার কণ্ঠ শুনে আমি পা-গ-ল হয়ে গেছি। ভাইয়াকে আমি মনের কথাও বলে দিয়েছি সব৷”

নোরার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো৷ শাদ ব্রো’কে মেহের তার মনের কথা বলেছে! কই ভাইয়া তো বাড়িতে কাউকে কিছুই বলেনি৷ নোরার এবার মনে হলো এটাই ম্যাচিউরিটি। সে আবার মেহেরকে প্রশ্ন করলো, “ব্রো কি বলল? ”

“ইরশাদ ভাইয়া আমাকে প্রথমে বললেন ভাই বোনের মাঝে তো ভালোবাসা থাকবেই৷ আমি বোঝাতে চাইলাম এই ভালোবাসা অন্যরকম৷ ভাইয়া বলল, এটা মোহ-আকর্ষণ। আমি ভাইয়াকে আরও বোঝাতে চাইলাম। অনেক রাত পর্যন্ত সেদিন ভাইয়াকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু ভাইয়া আর শুনতে চাইলেন না উল্টো আমাকে ধ-ম-কা-লেন, বকলেন আর বললেন, মাথা থেকে এসব না সরালে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে মাথা থেকে ভালোবাসার ভূত নামিয়ে দেবেন।”

মেহের যতোটা সময়ে কথাগুলো বলল পুরোটা সময় নোরা তাকিয়ে রইলো ঠিক মেহেরের চোখের দিকে৷ মেহের থেমে যেতেই নোরা প্রশ্ন করলো, “তুমি ব্রো’কে এক্সাক্টলি কোন যুক্তিটা দিয়ে বোঝাতে চাইছিলো?”

“সায়রার সাথে তো ভাইয়ার সেই কলেজ থেকেই প্রেম ছিল। আমিও আর কয়েক দিন পর কলেজে উঠবো তাহলে আমাকে ভালোবাসতে পারবে না কেন?”

মেহেরের কথা শুনে নোরা প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে দরজার দিকে তাকালো। ফুপি তখনও ময়ূখের ঘরেই ছিল। নোরা বিছানা ছেড়ে উঠে বলল, ” আজ থেকে ঠিক বছরখানেক পর তোমার আজকের এই সময়টা মনে পড়লেই তুমি ভীষণ লজ্জায় পড়বে মেহের। বয়সটা এখনও অনেক কম তোমার। আবেগ ভালোবাসা এখন ঋতুর মত বদলাতে থাকবে। এই যে বললে ক্লাস এইট থেকে তুমি শাদ ব্রোকে ভালোবাসো একটু ভেবে বলো তো, এরই তোমার আর কাউকেই ভালো লাগেনি? কোন টিচার, কোন সিনিয়র ভাইয়া কিংবা পথেঘাটে, শপে কোথাও কাউকে আর মনে ধরেনি? আর হ্যাঁ তুমি ভীষণ সুন্দর দেখতে। যখন তুমি আরেকটু বড় হবে তখন তোমার পেছনে ছেলেদের লাইন পড়বে। শাদ ব্রো ততদিনে বয়স্ক হয়ে যাবে তোমার পাশে ব্রোকে একদমই মানাবে না৷ ”

মেহের কিছু সময় চুপ থেকে ভাবলো সত্যিই তো তার তো স্কুলের সেই ফিজিক্সের টিচারকেও ভালো লাগে। পরক্ষণেই নিজেকে শুধালো, সেটা ভালো লাগে কিন্তু ভাইয়ার মত কাউকেই না। আর ভাইয়া বুড়ো হলেও সে ভাইয়াকেই ভালোবাসবে। ভাইয়াকে তো সে বিয়েও করতে চায়। নোরা তাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বলল, “অন্যদেরও তোমার ভালো লাগে হয়তো ভাবছো ব্রো’র ক্ষেত্রে তা বেশি। আসলে ব্যাপারটা হলো ব্রো তোমার আপনজন তাই তোমার ভাবনা ব্রোকে চাইলেই তাকে পাওয়াও যাবে৷ সে সবসময়ই পাশে থাকবে কিন্তু ওই পথেঘাটে হঠাৎ দেখা, স্কুল টিচার কিংবা অন্যকোথাও যাদের ভালো লাগে তাদের সাথে যোগাযোগ খুব হালকা সেজন্য অতোটা ভাবো না তাদের নিয়ে৷ আমার মন বলছে তুমি অতি শিগগিরই আবেগ কাটিয়ে উঠবে। অন্তত ব্রো’র বিয়ে হতেই তোমার মো-হ শেষ হয়ে যাবে।”

নোরা মুখে এ কথা বললেও মনে মনে শঙ্কিত রইলো। অল্পবয়সী আবেগ আসলে ভ-য়-ঙ্কর হয় খুব। মেহের তার ক্ষতি তো কিছুটা করেই নিয়েছে। নোরার কথার মাঝেই ইরিন ফিরে এলো। ইরিনকে দেখে নোরা ঘুমানোর জন্য চলে গেল৷

দু দিনের মাঝেই ইরিন ফিরে গেল রাজশাহী নোরাকে নিয়ে৷ ময়ূখ পরীক্ষা আছে বলে যেতে পারলো না আবার তার মনও চাইছিলো না সেখানে ফিরতে। মন বলছিল সে ফিরে গেলেই কিছু অ-ন্যা-য় আবদার না করে বসে আম্মার কাছে। মনের কুঠিতে সে যে কথা এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল সে কথাই না বলে দেয় মৈত্রীকে৷ তার হাসির আড়ালে ডুবে থাকা যন্ত্র-ণা ভাইয়ের জীবনে আঁধার না আনুক সেই ভয়েই সে থেকে যাবে এবার অচেনা জীবনে৷ এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে তাকে মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে খুব৷ তবুও সে নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছে৷ মেহেরের মত কেঁদে বুক ভাসানোর সাধ্য তো তার নেই। অশ্রুজল বড় শত্রুর মত আচরণ করছে তার সাথে। ঘাপটি মে-রে বুকের জমিনের ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে তার প্রতিনিয়ত। ইরিন যাওয়ার আগে ময়ূখ আর নোরাকে সঙ্গে নিয়েই বিয়ের জন্য লেহেঙ্গা কিনেছে। গয়না কিনেছে কিছু নিজে আর কিছু দিয়েছে ইরশাদের দুই মামা। ইরিন যাওয়ার আগ মুহূর্তে দু ভাইয়ের দীর্ঘদিনের বিবাদ বি-চ্ছে-দ শেষ করেই গেছেন। দেখতে দেখতে সময় পেরোলো সাত দিন। একমাত্র ভাগ্নের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবে বলে আবরার, আফছার দুই ভাই-ই হাজির হলেন রাজশাহী বোনের বাড়িতে৷ হাজির হলো ইরশাদের বড় চাচা আর মেজো চাচাও। মুজিব সাহেব নিজের বাড়িতেই খাবারের আয়োজন করলেন, দাওয়াত করলেন মৈত্রীর নানী বাড়ির আত্মীয়দেরও। তারা কেউ এলো না সেদিন। বাধ্য হয়েই সব কাজের দ্বায়িত্ব নিলেন রোকসানা নিজের ওপর। শিপলুর মা এসে কাজে হাত লাগাতেই ইরিনও এসে হাজির হলেন। রোকসানা তাকে বারণ করলে সে বলে দিলো, “আত্মীয় হওয়ার আগে আমাদের মাঝে আন্তরিকতার একটা সম্পর্ক আছে তাই না ভাবি?”

রোকসানা আর কিছুই বললেন না। হাতে হাত মিলিয়ে সবাই মিলে কাজ করলেন৷ দুপুরপ জম্পেশ খাওয়া হলে পুরুষরা সবাই মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন৷ এক ফাঁকে ইরশাদকেও ফোন করে জিজ্ঞেস করা হলো কোন তারিখটা দেওয়া যায়! তার এক কথা আম্মু যেদিন বলবে সেদিনই হবে তবে তার আবদার বড় কোন অনুষ্ঠান যেন না হয় । ইরিন বললেন মৈত্রীর পরিবার যা বলে তাই হবে। সকলের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো, খুব বড় অথবা খুব ছোট নয়৷ মোটামুটি আয়োজন হলেই ভালো হয় যেহেতু ছেলে বেশি কিছু চাইছে না। আর বিয়ের তারিখও পড়ে গেল পনেরোদিন বাদে। এত সব আলাপ আলোচনায় ময়ূখের বাবা বলে উঠলেন, “আমরা কি আমাদের বউমা দেখে যাবো না!”

আবরার খন্দকার এর কথা শুনে ইরিনই নিয়ে এলো নিজের বউমা দেখাতে। মৈত্রীকে দেখে একে একে ইরশাদের মামা, চাচারা অনেকগুলে সালামি গুঁজে দিলো তার হাতে। সন্ধ্যে নাগাদ সব আয়োজন সাঙ্গ করে সবাই যখন চলে গেল নিচতলায় ইরশাদ তখন ফোন করলো মৈত্রীকে। গত কয়েকদিনে তাদের মাঝে কথা হয়েছে। মোটামুটি দুজনে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাদের সে সম্পর্ক কোন হবু দম্পতি কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার মত নয় নিছকই পরিচিতের মত কথপোকথন। তবে আজ ইরশাদ সে থেকে বের হয়ে একটু ভিন্ন গলায় বলল, ” কাল আমি ট্রিট পাচ্ছি তাইনা!”

“জ্বী!”

“শুনলাম তোমার হবু মামা, চাচা শ্বশুররা মোটা অংকের সালামি দিলো! তো আমি সেখান থেকে ট্রিট পাবো না?”

মৈত্রী বুঝতে পারলো ইরশাদ মজা করছে৷ কিন্তু সে তো ওরকম ভাবে জবাব দিতে জানে না! তবুও চেষ্টা করলো, “আপনি কেন পাবেন? সালামি তো আমার শ্বশুররা দিলো।”

“তোমার শ্বশুররা দিলো বলেই তো আমাকে দেবে।”

“কেন? আপনি কে হোন!”

মৈত্রী কথাটা বলেই জ্বিভ কা-ম-ড়ে ধরলো৷ এ কি বলে দিলো! ইরশাদ হেসে উঠলো তার নিঃশব্দ হাসি৷ মৈত্রী মজার ছলে যে প্রশ্ন করে বসলো তার উত্তরে কি বলবে একটু ভাবতে হলো ইরশাদকে তারপরই সে বলল, ” কে হই আমি? তুমিই বলো।”

মৈত্রী বললো না সে কথা। বেলকোনিতে ছিলো সে কথা বলার সময়। রাতের তারা ভরা আকাশে তাকিয়ে থেকে অতি সন্তর্পণে দু ফোঁটা চোখের জল ফেলল মৈত্রী। আজ মা’কে খুব মনে পড়ছে। ইরশাদ তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়। তার জীবনে প্রথম এক চাওয়া যা সে চাইতেই কেমন করে যেন পূরণ হয়ে গেল। আজকাল নামাজে সে উপরওয়ালার খুব করে শোকর আদায় করে। ইরশাদ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ফোন হাতেই ঘর ছেড়ে বেলকোনিতে এলো৷ যা ভেবেছিল তাই। মৈত্রী বেলকোনিতেই আছে, এখনও সে কলেই আছে। ইরশাদ ধীরে ধীরে বলল, “আমি তোমার সেই মানুষ যে তোমার প্রতি মুহূর্তের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবো। বলতে পারো আপন মানুষ কিংবা তোমার মনের মানুষ।”

“মনের মানুষ!” অতি অল্প আওয়াজে উচ্চারণ করলো মৈত্রী।

চলবে
(আজ তাড়াতাড়ি দিলাম সবাই বেশি বেশি মন্তব্য করবেন 😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here