কুঁড়েঘর ২ পর্ব – ১৬+১৭

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩১।

সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হয়ে যায় কিছু সময়ের ব্যাবধানে। রিধিশাকে আজকে হসপিটালেই থাকতে হবে। জোতি রিধিশার সাথে থাকতে চায় আর নিশাদও যেতে চাইছে না। রেহান নিশাদকে বললো
” তোর চাকরির কি খবর? ইন্টার্ভিউ কেমন দিয়েছিলি?”
” অনেক ভালোছিলো আর চাকরিটাও হয়ে গিয়েছে।”
রেহান অবাক হয়ে বললো
” চাকরি হয়েছে বলবি না আগে? সূর্য আর সাদি চিন্তা করছিলো।” নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” চিন্তা দূর করতেই তো আসছিলাম। মাঝ পথেই রিধিশাকে পেলাম তারপর তো চিন্তায় বলাই হলো না।

জোতি নিশাদের কাছে এসে বললো
” তাহলে ভাইয়া আপনার তো অফিস আছে। আপনি বাসায় চলে যান আমি আছি তো।” নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” বাইরের কোনো কিছুর দরকার হলে কি তুমি আনতে পারবে? আর কালকে ফ্রাইডে অফিস বন্ধ। আর শনি বারও তো এখন বন্ধ থাকে। তাই আমার অফিস নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি আজকে রাতে এখানেই আছি।”
রেহান কোমড়ে হাত রেখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো
” তাহলে আমি আর একা গিয়ে কি করবো? আমিও আজকে থেকে যাচ্ছি।”

নিশাদ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
” এমন ভাবে বলছিস যেনো পিকনিক করতে বসেছি আমরা! হসপিটাল এটা।” রেহান চেয়ারে টেনে বসে বললো
” ধুর হসপিটাল তো কি হয়েছে? আমরা কি নাচ গান করবো নাকি?” ওদের কথা বলার মাঝে রিধিশার ফোন বেজে উঠে। তিনজনের দৃষ্টি ফোনের দিকে যায়। জোতি গিয়েই কে ফোন করেছে না দেখে রিসিভ করে কথা বলতে থাকে। কথা শেষে নিশাদ জিজ্ঞেস করে
” কে ছিলো?”
জোতি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো
” একটা ছেলে। রিধি’র ভাইয়া মনে হয়।” রেহান ভ্রু কুঁচকে বললো
” মনে হয় মানে? নাম দেখোনি কে?” জোতির বোকার মতো মাথা নেড়ে না বললো।

.
নিশাদ রিধিশার পাশে বসে আছে। জোতি আর রেহান নিচে গিয়েছে। রিধিশার মলিন চেহারাটা দেখে নিশাদের বুকের বা পাশ’টা ব্যাথা করছে। নিশাদ রিধিশার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রিধিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। রিধিশা দুর্বল দৃষ্টিতে তাকায় নিশাদের দিকে। নিশাদ তড়িঘড়ি করে তার হাত সরিয়ে নেয়। রিধিশাকে দেখে মনে হলো নিশাদকে দেখে অবাক হয়েছে। রিধিশা ধীর গলায় বললো
” আপনি এখনও আছেন? বাসায় যাবেন না?” নিশাদ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” বাসায় যাওয়ার পথ বন্ধ করে বলছো বাসায় যাবেন না? স্বার্থপর মেয়ে! তাড়াতাড়ি সুস্থ হও তোমাকে পানি চুবিয়ে শাস্তি দেবো। আমাকে কতো চিন্তায় ফেলেছিলে!”

রিধিশা মিহি হেসে বললো
” আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা কিসের আপনার? আমার জন্য এতো চিন্তা কেনো করেন আপনি?”
” কোথায় চিন্তা করি আমি তোমার জন্য? তোমার জন্য অন্যকেউ থাকলেও আমি এমন করতাম ঠিকাছে? নিজেকে স্পেশাল মনে করো না, হুহ!”
রিধিশা শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে নিশাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর বললো
” আমি বাসায় যাবো। নিয়ে চলুন আমাকে।” নিশাদ
বললো
” যেতে পারবে না তুমি। আজকে এখানেই থাকতে হবে তোমাকে।” রিধিশা জেদি গলায় বললো
” না আমি বাসায় যাবোই আপনি ডক্টরকে বলুন।”

নিশার ধমক দিয়ে বললো
” চুপ করে মুখটা বন্ধ করে রাখো। এতোক্ষণ ধরে গলা দিয়ে আওয়াজই বের হচ্ছিলো না। আর এখন আবার শুরু হয়েছে তার জেদ। এতো জেদি কিভাবে হয়েছো তুমি? বাসায় গিয়ে আরো অসুস্থ হলে হয়ে পড়লে কে দেখবে তোমাকে? আর হসপিটালেই বা কে নিয়ে আসবে? ডক্টর যা বলেছে চুপচাপ শোনো নাহলে বলো আমাকে ক্যাম্পাসের পাশের লেকে তোমাকে ফেলে দিয়ে আসি।” রিধিশা মুখ কালো করে শুইয়ে থাকে। নিশাদ বিড়বিড় করে রিধিশাকে বকে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর জোতি আর রেহান খাবার নিয়ে আসে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে।
.
রাত বাড়তেই রিধিশার আবারও গা কাপিয়ে তীব্র জ্বর
আসে। একসময় নিশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা যায় তখন অক্সিজেন দেওয়া হয় রিধিশাকে। নিশাদ চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে। এক দণ্ড বসতে পারছে না বারবার পাইচারি করছে আর ডক্টরের সাথে কথা বলছে। রেহান নিশাদের এতো অস্থিরতা দেখে ভাবনায় পড়ে যাচ্ছে বারবার।

.
ঘুমের ঘোড় কাটিয়ে জেগে উঠে রিধিশা। চারপাশে তাকিয়ে দেখে বেডের এক পাশে নিশাদ মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। জোতি আর রেহান চেয়ারে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে একে অপরের কাধে মাথা রেখে। তিনজনকে দেখে খারাপ লাগলো রিধিশার। তার জন্য তিনজন কতো কষ্ট করছে।

রিধিশাকে নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। জোতি রিধিশার সাথে হাটতে হাটতে বললো
” তোর জন্য নিশাদ ভাইয়ার কালকে কি ছটফটানি! বারবার অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো রাতে। আমার তো মনে হয় ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে।” রিধিশা আলতো হেসে বললো
” কে বলেছে তোকে? আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে এমনই করতেন উনি নিজে বলেছেন আমাকে। তাই এসব উল্টো পাল্টা ভাবিস না।”
জোতি নাকচ স্বরে বললো
” তুই বললেই হলো তাই না? আমিও একজনকে ভালোবাসি ঠিকাছে! কে কাকে ভালোবাসে সেটা দেখলেই হয়তো বুঝতে পারিনা। কিন্তু কিছু কিছু ভালোবাসায় তাদের আচার-আচরণ, কেয়ার, অস্থিরতা এসব দেখেই বোঝা যায় বা উপলব্ধি করা যায় যে সে ভালোবাসে কিনা। তোকে বুঝতে না দেওয়ার জন্য হয়তো ভাইয়া এমন বলেছে কিন্তু ভাইয়ার মনে তোর জন্য অনুভূতি রয়েছে।”

রিধিশা কথা ঘুমানোর জন্য বললো
” তুই হাটবি তো নাকি! এতো ধীরেধীরে হাটছিস যেনো আমি না তুই অসুস্থ ছিলি।” জোতি হাটার গতি বাড়িয়ে বললো
” আরে বাবা হাটছি তো।”
রিশিশাকে বাসায় নিয়ে আসে। জোতি রিধিশার সাথেই থাকবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।

নিশাদ বাসায় ঢুকতেই সূর্য আর সাদি হামলে পড়ে। নিশাদ ওদের শান্ত করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে তিজনকে চাকরির ইন্টার্ভিউর কথা বলতে থাকে। সূর্য আর সাদিও খুশি হয়ে যায়। সূর্য আনন্দিত গলায় বললো
” আংকেল’কে জানিয়েছিস তো!” নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” না, হসপিটালে খেয়ালই ছিলো না। জানাবো আজকে।” সাদি জিজ্ঞেস করলো
” কিন্তু রিদিশার কি হয়েছিলো? হঠাৎ এতো অসুস্থ?”
রেহান মাথায় চাটি মেরে বললো
” অসুস্থ কি আগের থেকে বলে কয়ে আসে নাকি মেহমানদের মত?”
নিশাদ তিনজনকে বলে রুমে এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুম হয়নি কালকে তাই মাথা ব্যাথা করছে।

______________

কয়েকদিন অসুস্থ থেকে রিধিশা এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে। জোতি রিধিশার সঙ্গেই থেকেছে তিনদিন গতকালই গিয়েছে হোস্টেলে। রিধিশার দেখাশোনা করার সাথে সাথে রেহানের সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে। রিধিধা ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখ দেখে সেইদিনের তোলা ইন্টার্ভিউর ছবিটা দেখলো। আগামীকাল ইন্টার্ভিউ ডেট। রিধিশা ভাবছে একবার ট্রায় করে দেখবে।
টিউশনি থেকে এসে রিধিশা সব কিছু প্রস্তুত করে রাখে আগামীকালকের জন্য।

.
রিধিশা লিফট থেকে বের হতেই নিশাদ প্রথম দিনের মতো কালো জ্যাকেট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ফেখে ভয় পেয়ে যায়। রিধিশা বুকে থু থু দিয়ে রাগি গলায়!বললো
” আরে সমস্যা কি আপনার? এভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে?” নিশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো
” আমি দাঁড়িয়ে থাকি তোমার জন্য। একটু আগে আরেকজন আসলো সে ভয় পেলো না কিন্তু তুমি ঠিকই ভয় পেলে। আমাকে ভয় পাও নাকি তুমি?”
রিধিশা স্নেহাদের ফ্ল্যাটের দিকে যেতে যেতে বললো
” আপনাকে ভয় পাবো কেনো আমি? আপনি ভুত না বাঘ?”
” আমি বাঘ বুঝছো? আমাকে ভয় পাবা তাহলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।”

রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে ভেংচি দেয়। আচমকা নিশাদ রিধিশার হাত ধরে দেয়ালে মিশিয়ে রিধিশার দুই পাশে দেয়ালে হাত রাখে। রিধিশা বিস্ময়ের সাথে চোখ বড় বড় করে তাকায়। নিশাদ বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। রিধিশার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। রিধিশা ভীতু স্বরে বললো
” ক…কি! ককি চাই আপনার?” নিশাদ মুখ এগিয়ে নিয়ে আসতে থাকে ধীরেধীরে। রিধিশা খিঁচে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিশাদ ঠোঁট কামড়ে হেসে রিধিশার মুখে ফু দিয়ে বললো
” কি ভাবছিলে তুমি? তোমার সাথে রোমেন্স করবো আমি? ছি! এতো খারাপ ভাবনা নিয়ে চলো!”

রিধিশা চোখে খুলে তাকায়। লজ্জায় আর অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো। রিধিশা নিশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো
” আপনি তো কতো ভালো ভাবেন থাকেন। শয়তান ছেলে।” নিশাদ রাগি গলায় বললো
” কি বললে তুমি?” রিধিশা স্নেহাদের দরজায় টোকা দিয়ে বললো
” শয়তান নিশাদ একটা বিষাদ।” নিশাদ তেড়ে আসতেই স্নেহাদের দরজা খোলে দেয়। রিধিশা হেসে দৌঁড়ে ঢুকে পড়ে। নিশাদ মুখ ফুলিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো।

চলবে…….#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩২।

রিধিশা স্নেহাকে পড়ানো শেষ করে বের হতেই দেখে নিশাদ নিজের ফ্ল্যাটের সামনেই কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। দুটো ফ্ল্যাটে মুখোমুখি দরজায় রিধিশা লিফটে যেতে গেলেও নিশাদ ধতে ফেলবে। রিধিশা ঢোক গিলে এক পা দুই পা করে এগিয়ে যায়। নিশাদ গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো
” আমাকে নাকি ভয় পাও না? তাহলে বিড়ালের মতো আসছো কেনো? যাও আমার সামনে দিয়ে যাও!” রিধিশার মুহূর্তেই নিজেকে মাছের মাথা আর নিশাদকে দানব বিড়াল মনে হলো। বিড়ালটা মাছের মাথাটা খেয়ে ফেলে এখনই। রিধিশা কেশে বললো
” এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? দারোয়ানের চাকরি করেন নাকি?”

নিশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো
” নিজের ঘরের সামনে দারোয়ান হলেও সমস্যা নেই।” রিধিশা ধীরেধীরে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই আসতে শুধু নিশাদের হাসিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিধিশা হঠাৎ বললো
” আরে মিলি আপি আপনি এখানে?” নিশার চমকে নিজের পেছনে তাকায়। রিধিশা হেসে দৌঁড়ে চলে যায়। নিশাদ কপাল চাপড়ে বললো
” বোকা বানিয়ে দিলো মেয়েটা? আমার ঘরে মিলি কিভাবে আসবে? ধুর!” নিশাদ ফ্ল্যাটের দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দিলো।

রিধিশা এড্রেস এর মাধমে ইন্টার্ভিউ এর উদ্দেশ্যে অফিস খুঁজছে। এদিকে অফিসের বিল্ডিং অনেক গুলো হওয়ায় বুঝতে পারছে না। একটা অফিসের গেট দিয়ে কয়েকজনকে ঢুকতে দেখে এগিয়ে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
” এখানে কি ইন্টার্ভিউ নেওয়া হচ্ছে?” দারোয়ান সায় জানিয়ে বললো
” হ্যা পাঁচ তলার রাইট সাইডে ইন্টার্ভিউ হচ্ছে।” রিধিশা বিল্ডিং এর দিকে তাকালো। এতোবড় অফিসে কি তার ইন্টারের সার্টিফিকেটে চাকরি পাবে? ভাবতে ভাবতে রিধিশা নিশ্বাস ফেলে ঢুকে পড়লো ভেতরে। লিফটে ঢুকে পাঁচতলা বিল্ডিং এ চলে গেলো

রিধিশা অনেকক্ষণ বসে থাকার পর তার নাম ডাকা হয়। রিধিশা নার্ভাসনেস নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইন্টার্ভিউ শেষ হতেই একজন বললো
” আপনার চাকরিটা হয়েছে তবে বাকিটা আমাদের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে বুঝে নিতে হবে আপনার।”

রিধিশা হাসিমুখে ম্যানেজারের সঙ্গে বেরিয়ে গেলো।
ম্যানেজার কেবিনে নিয়ে একটা কাগজ দিয়ে বললো
” আপনার পড়াশোনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আপনার পোস্ট এই কোম্পানির নতুন শাখায় হয়েছে। এড্রেস দেওয়া হবে এবং পার্ট টাইম জব হওয়ায় বেতব ১২ হাজার। দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আপনি চাইলে আগামীকাল থেকে জয়েন করতে পারবেন।”
রিধিশা আলতো হেসে বললো
“ধন্যবাদ আমি কালকেই জয়েন করতে চাই।” ম্যানেজার রিধিশাকে অফিসে এড্রেস দিয়ে দেয়।

রিধিশা খুশিতে নাচতে নাচতে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। রিধিশা হাটতে হাটতে বললো
” এখন টিউশনি গুলো না করে দিলেই হবে। তবে স্নেহা আর তারা’কে পড়িয়ে তারপর ভার্সিটি থেকে সেখানে চলে যাবো। উফফ যে কি ভালো লাগছে না! প্রথমবার ইন্টার্ভিউ দিতে দিতেই চাকরি হয়ে গেলো এখন আম্মুকে আর ভাইয়াকে জানাবো।”
রিধিশা টিউশনিতে পড়িয়ে তাদের চাকরির কথা বলে আর আসতে পারবে না বলে আসে।
রাতে বাসায় ফোন করে চাকরির কথা জানায়। হৃদকে জানানোর পর হৃদও খুশি হয় চাকরির কথা শুনে।

.
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায শেষ করে স্নেহাকে পড়ানোর জন্য বেরিয়ে গেলো। বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকতেই দেখলো নিশাদও তার সাথে ঢুকছে। রিধিশা থেমে নিশাদের দিকে তাকালো। নিশাদ মেকি হাসি দিয়ে বললো
” এখন তোমাকে কে বাঁচাবে রিধিশা ম্যাডাম?” রিধিশা ঢোক গিলে এদিক সেদিক তাকালো। নিশাদ হেসে বললো
” আজকে কোনো মিলি ফিলি নেই তোমাকে বাঁচাবে বলে।” রিধিশা শক্ত হয়ে পা চালিয়ে লিফটে ঢুকে গেলো। নিশাদও সাথে ঢুকে গেলো সাথে। রিধিশা এক কোণায় দাঁড়িয়ে বারবার নিশাদের দিকে কোণা চোখে তাকাচ্ছে। নিশাদ জ্যাকেট থেকে হাত দুটো বের করে রিধিশার দিকে এগিয়ে আসে। রিধিশা ভয় পেয়ে লিফটের সাথে লেগে যায়। নিশাদ দুই পাশে ঘাড় বাঁকিয়ে রিধিশার দিকে তাকায়।

লিফট খুলতেই রিধিশা ঢোক গিলে চেপে চেপে বেরিয়ে গেলো। নিশাদও ঠোঁট চেপে হেসে বেরিয়ে গেলো। রিধিশা দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিলেই নিশাদ হাত ধরে আটকে দেয়। রিধিশা ভীতু গলায় বললো
” ছাড়ুন আমার হাত ছাড়ুন!” নিশাদ মুখ বাঁকিয়ে বললো
” কেনো এখন ছাড়বো কেনো? কালকে কি বলেছিলে আমায়?” রিধিশা কাঁদোকাঁদো গলায় বললো
” কি বলেছি? কিছু বলিনি সত্যি!”

নিশাদ চোখ রাঙ্গিয়ে বললো
” কি তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমি ভুল শুনেছি? তুমি আমাকে বয়রা প্রমাণ করতে চাইছো!” রিধিশা হচকচিয়ে বললো
” না, না।”
” তারমানে তুমি আমাকে বলেছো বিষাদ বলেছো তাই তো!” রিধিশা করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। নিশাদ মনে মনে হাসলো রিধিশার চেহারা দেখে। নিশাদ হাত ছেড়ে দিয়ে বললো
” যাও ছেড়ে দিলাম এখন। কিন্তু ভার্সিটিতে ছাড় পাবে না। দেখবে কি করি।” নিশাদ কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো। রিধিশা সস্তির নিশ্বাস ফেলে স্নেহার বাসায় চলে গেলো।

.
ভার্সিটিতে এসে রিধিশা লুকিয়ে লুকিয়ে চলার চেষ্টা করছে। নিশাদের চোখে না পড়লেই বাঁচে সে। জোতি রেহানের সাথে কথা বলছে, একদম মোবাইলেই ঢুকে আছে। রিধিশা ইম্পরট্যান্ট ক্লাসগুলো করেই বেরিয়ে গেলো ভার্সিটি থেকে। নিশাদ আর তাকে পাবে না ভেবে খুশি হয়ে যায়। হাটার মাঝে হঠাৎ সামনে নিশাদ এসে দাঁড়ায়। রিধিশা ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে কয়েক পা পেছিয়ে যায়। নিশাদকে দেখে মুখ লটকিয়ে বললো
” আপনি এখানে কি করছেন?”

নিশাদ রাগি গলায় বললো
” তোমার জন্যই তো বসেছিলাম। কি ভেবেছো আমার হাত থেকে পালিয়ে যাবে? চলো আজকে তোমার একটা হাত না ভেঙ্গে ছাড়বো না।” নিশাদ রিধিশাকে টেনে লেকে নিয়ে গেলো। রিধিশা পারে না কেঁদে দিতে। নিশাদের হাতে লম্বা স্টিক দেখে মাথা ঘুরছে তার। নিশাদ রিধিশাকে দাঁড় করিয়ে স্টিকটা উঁচু করে বললো
” বলো কোন হাতটা ভাঙবো!”

রিধিশা কাঁদোকাঁদো গলায় বললো
” কোনো হাত না প্লিজ! আর বলবো না আপনাকে।”
” না বিশ্বাস করি না আমি। আজকে তোমাকে মারবোই দেখবে।” নিশাদ মারার জন্য হকি স্টিক উঠাতেই রিধিশা চোখ বন্ধ করে আম্মু বলে চেঁচিয়ে কেঁদে দিলো। নিশাদ মুখ চেপে হাসলো পরক্ষণেই ধমকে বললো
” এই মেয়ে তোমাকে মেরেছি আমি? চেঁচাচ্ছ কেনো?”
রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে বললো
” মারবেন না আমাকে। সত্যি আর কোনো বিষাদ বলবো না আপনাকে দুই সত্যি। যা বলবেন তাই করবো।”

নিশাদ রাগি গলায় বললো
” দুই সত্যি মানে? আরেকটা সত্যি কোথায়? ঘুরতে গেছে নাকি? বলো তিন সত্যি! আর বলো নিশাদ অনেক ভালো ছেলে।” রিধিশা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” নিশাদ বিষাদ নয়। নিশাদ অনেক ভালো ছেলে।” নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” এবার তোমার অযথা কান্না বন্ধ করো আর যা বলবো তাই করবে।” রিধিশা চোখ মুছে নেয়।
” কালকে আমার বাসায় রান্না করে দিয়ে আসবে তুমি।”

রিধিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি! আপনার বাসায় গিয়ে রান্না করতে পারবো না আমি। আগেই বলেছি একদম আমাকে রান্নার কথা বলবেন না। আমি কি আপনার বুয়া নাকি? আর আপনার বুয়া তো এখন আছেই তাহলে আমি রাঁধবো কেনো?” নিশাদ হকি স্টিকটা উঠাতেই রিধিশা ঢোক গিলে পিছিয়ে যায়।
” একটু আগেই বললে আমি যা বলবো তাই করবে আর মিনিট না যেতেই কথার দাম ফুরিয়ে গেলো?”

” ফুরিয়ে গেলো মানে কি? এতো গুলো ছেলের বাসায় আমি রান্না করে দিয়ে আসবো? আমাকে পেয়েছেন কি আপনি?”
” আমি তোমার রান্না খাবো মানে খাবোই। দরকার পরলে তোমার বাসায় গিয়ে খেয়ে আসবো। নাহলে তুমি আমার বাসায় এসে রেঁধে দিয়ে যাবে।” রিধিশা চোখ বড় বড় করে বললো
” কি! একদম না আমার বাসায় আসা যাবে না। আমার মান-সম্মান চলে যাবে।” নিশাদ বুখ বাঁকিয়ে বললো
” এহ আসছে! এক বেলা খেলে ম্যাডামের মান-সম্মান চলে যাবে?”

রিধিশা শক্ত গলায় বললো
” আমি খাওয়ার কথা বলিনি। কমন সেন্স নেই আপনার? সাজেদা আন্টি দেখলে কি বলবে? আমি একা বাসায় থাকি এর মধ্যে একটা ছেলে বাসায় গেলে সবাই কটু দৃষ্টিতেই দেখবে।”
” ঠিকাছে বাবা যাচ্ছি না। তাহলে তুমি রান্না করেই দিয়ে যাবে কালকে। আর সকালে রেহানরা সবাই ঘুমিয়ে থাকে।”
” ঠিকাছে।” রিধিশা নাক ফুলিয়ে চলে গেলো। নিশাদ হাসতে হাসতে হকি স্টিকের দিকে তাকিয়ে বললো
” ভীতু মেয়ে! তোমাকে আমি মারতে যাবো কেনো?”

.
রিধিশাকে তার অফিসের দেওয়া এড্রেস খুঁজে রিধিশা ১টার আগেই অফিসে উপস্থিত হয়। অফিসের ম্যানেজার রিধিশাকে তার কেবিন দেখিয়ে দেয়। আর পাশের খালি কেবিন দেখিয়ে বললো
” যেকোনো সমস্যা হলে তুমি যার আন্ডারে কাজ করছো মানে আব্দুল্লাহ রয়েছে তাকে বলবে আর না হলে আমি রয়েছে।” রিধিশা মাথা নেড়ে। বিজয় স্যার হেসে চলে যায়। রিধিশা ফুরফুরে মুডে বসে কাজে লেগে পড়ে তার।

রিধিশা আগেই এসেছিলো তাই কয়েকজন রয়েছে। আর বাকিরা একে একে এখন আসছে মাত্র। হঠাৎ নিশাদের গলা শুনতে পেলো বলে মনে করে রিধিশা। কিন্তু অন্যকেউ ভেবে সেদিকে তাকায় না। রিধিশা কাজ করতে করতে পাশের কেবিনের দিকে চোখ যেতেই রিধিশা চমকে উঠে দাঁড়ায়। নিশাদও বোকার মতো তাকিয়ে আছে। বেচারা রিধিশাকে দেখে বুঝতে পারছে না রিধিশা কোথা থেকে এসেছে।
রিধিশা বিস্ময়ের সাথে বললো
” আপনি! আপনি এখানে কি করছেন?”

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” আমি কি করছি মানে কি? এক সপ্তাহ ধরে অফিসে কাজ করছি কখনো তোমাকে দেখলাম না। হঠাৎ তুমি এখানে কিভাবে উদয় হলে?” নিশার আর রিধিশার কথা শুনে বিজয় এগিয়ে এসে দুজনের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো
” এনি প্রবলেম?” নিশাদ বিজয়কে জিজ্ঞেস করলো
” স্যার, ও এখানে কি করছে?” বিজয় হেসে উত্তর দেয় বললো
” নতুন জয়েন হয়েছে আজকে। আমাদের অফিসের আগের শাখা থেকে মিস. রিধিশার পোস্ট এখানে করা হয়েছে। আপনি কি চেনেন উনাকে?”

নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো
” জি স্যার খুব ভালো করে চিনি।”
” তাহলে তো ভালোই হলো। মিস. রিধিশা আপনার জুনিয়র। সমস্যা হলে তাকে হেল্প করবেন।” নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা, হ্যা কেনো নয়!” বিজয় চলে যেতেই রিধিশা নাক মুখ ফুলিয়ে বসে পরে। আর নিশাদ বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো
” আজকের দিনটা আমাকে জন্য খুব লাকি। রিধিশা ম্যাডাম দেখলেন তো! আমাদের ভাগ্য বারবার আমাদের এক জায়গায় নিয়ে আসে। উফফ! জুনিয়র বেবি কাজ করুন মন দিয়ে।”

রিধিশা ক্ষেপে বললো
” ওই কে বেবি? আমাকে দেখে বেবি মনে হয়? বজ্জাত ছেলে।” নিশাদ চোখ রাঙ্গিয়ে কাজে মন দেয়।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here