#গল্পঃকুয়াশার_মতো।
#পর্বঃ- ০৮ (শেষ)
” শাকিলা আপুর কাছ থেকে চাবি নিয়েছি ঠিকই কিন্তু আমি বাবাকে খুন করিনি। ”
” সাজু বললো, আমি তো তোমাকে বলিনি, তুমি কেন শুধু শুধু এসব বলছো? ”
” তাহলে ওভাবে কথা বললেন কেন? আপনার নিশ্চয়ই আমাকে সন্দেহ হচ্ছে নাহলে কেন অমন করে প্রশ্ন করলেন? ”
” আমি তো সবাইকে সন্দেহ করি সুমনা, তোমার আপু দুলাভাই, সজীব সাহেব, ফেরদৌস এরা সবাই আমার সন্দেহের তালিকায় আছে। ”
” আমি আপনার সঙ্গে এখনই দেখা করতে চাই সাজু ভাই, সত্যি বলছি আমি কিছু করিনি। ”
” তাহলে তোমার বোনের বাসায় চলে আসো, আমরা সবাই সেখানেই আছি৷ ”
সাজুে মোবাইলের কথা শুনে শাকিলা ও ওসি সাহেব দুজনেই তাকিয়ে রইল। সাজু কিছু না বলে চুপচাপ উপরে উঠতে লাগলো, তার সঙ্গে সঙ্গে উঠে যাচ্ছে বাকিরা।
দরজা খুলে বাসায় প্রবেশ করলো সবাই। সাজু তখন চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো, রামিশা ঠিকই পাশের রুমে গিয়ে একটা গ্লাস ফেলে দিল। ওসি সাহেব ও শাকিলা সেদিকে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু সাজু কোনো ক্যামেরা স্থাপন করে নাই।
ড্রইং রুম থেকে বেডরুমে গিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক কিছু খোঁজার চেষ্টা। তেমন কিছু এলোমেলো চোখে পড়ে নাই, ওসি সাহেব মনে হয় বেশি আশাহত হয়ে গেছে। কারণ সমস্ত ফ্ল্যাট তন্নতন্ন করে কোথাও ক্যামেরা পাওয়া যায় নাই।
রামিশা নিজেও অবাক হলো কারণ তাকে যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সে সেটা পালন করেছে। তাহলে সাজু ভাই কেন তার কাজটা করে নাই? নাকি নতুন কোনো পরিকল্পনা।
ওসি সাহেব একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন সুমনার সঙ্গে কি নিয়ে কথা হয়েছে? সাজু বললো যে সুমনা আসলেই সবকিছু বলবে, আপনি একটা কাজ করেন ওসি সাহেব।
– কি কাজ?
– হাসপাতালে কল দিয়ে ফেরদৌসকে সঙ্গে নিয়ে একজন পুলিশকে আসতে বলেন। যেহেতু এখানে সবকিছু ঘটেছে সেহেতু এখানেই সকল সমাধান করে দেই।
|
|
সুমনা এসেছে, তার সমস্ত চোখেমুখে লেপ্টে আছে চিন্তার ছাপ। সোফায় বসে সাজু সুমনার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে?
– বাবার খুনী কে, জানা গেছে?
– না এখনো জানা যায় নাই তবে আজকেই জানা যাবে চিন্তা করো না।
– ক্যামেরা পাওয়া গেছে?
– না, আমি সানোয়ার হোসেন মানে শাকিলার বন্ধু কে এখানে আসতে বলেছি। তিনি এলেই আসল খুনি বের হয়ে যাবে৷
– শাকিলা যেন চমকে গেল, বললো ” সানোয়ার? সে এখানে কীভাবে আসবে? ”
– সাজু বললো, অবাক হবার কিছু নেই আপনার বাবার কিছু অবৈধ কাজের সঙ্গীদের লিস্ট তৈরি করে ফেলেছে সানোয়ার। তার সেই লিস্টের মধ্যে আসল খুনি আছে, সে আসুক ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সবাই যেন থমথমে, একটু পরে দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো ফেরদৌস ও একজন পুলিশ। ফেরদৌস যেন আরও বেশি চিন্তিত হয়ে গেছে, একটু পরে সানোয়ার হোসেন প্রবেশ করলো।
সাজু ভাই সুমনার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুমি তোমার আপুর চাবির গোছা থেকে কখন চাবি চুরি করছ?
– আমি চুরি করিনি, চাবি নিয়েছিল বাবা। বাবা যখন দারোয়ানের কাছে চাবি দিতে গেল তখন সে একটা চাবি লুকিয়ে রাখে। তারপর বাকি দুটো দারোয়ানের কাছে দিয়ে আসে কিন্তু আমার চোখে ধরা পড়ে। আমি বাবার কাছে জিজ্ঞেস করলাম তখন বাবা আমাকে ধমক দিলেন। আর বললেন “এ কথা কেউ যেন না জানে, তিনি সাজ্জাদ ভাই কে উচিৎ শিক্ষা দিবেন। ”
– শাকিলা বললো, তাহলে তুই পরদিন সকালে আমাকে বলিসনি কেন?
– সুমনা কেঁদে কেঁদে বললো, আপু আমাকে মাফ করে দিও, তুমি এমনিতেই বাবার প্রতি অনেক রেগে আছো তখন। তাই নতুন কিছু বলে তোমার রাগ বাড়াতে চাইনি, ভেবেছিলাম তুমি তো ভাইয়ার কাছে যাচ্ছো তাহলে বাবা চাবি দিয়ে কি করবে?
– তবুও তোমার বলা উচিৎ ছিল, সাজু ভাই বললেন।
– হ্যাঁ আমি বলতে চেয়েছিলাম, আর সেজন্য আপুর সঙ্গে বলেছিলাম যে বাবার বিষয় কিছু কথা আমি বলবো তবে সেটা সরাসরি। কিন্তু তার আগেই তো সবকিছু এমন এলোমেলো হয়ে গেল।
– সাজু বললো, তোমার বাবা যখন এই বাসায় এসেছে তখন তুমি কি জানতে?
– হ্যাঁ জানতাম, বাবা কাকে যেন কল দিয়ে বলে যে ” তুমি তৈরী থাকো আমি আসতেছি, আজকে একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। ” আমি ভাবলাম আপু দুলাভাই দুজনেই তো নোয়াখালী তাই ফাঁকা বাসায় গিয়ে কি করবে তারা? কিন্তু তবুও মনটা খারাপ লাগে তাই আপুর কাছে কল দিলাম কিন্তু আপু রিসিভ করে নাই রাতে।
– ওসি সাহেব বললো ” তারপর তুমি যখন দেখলে তোমার বাবা বাসায় ফিরছে না তখন একাই বের হয়ে গেলে তাই না? ”
– না আমি বাইরে আসিনি, আমাদের বাসার দারোয়ান কাকাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন।
কিন্তু আমি যদি জানতে পারতাম বাবা এই রাতেই খুন হবে তাহলে ঠিকই বের হতাম।
সাজু ভাই তখন ফেরদৌসের দিকে তাকিয়ে রইল, ফেরদৌস কাচুমাচু হয়ে গেল। সাজু বললো,
– তোমার দুলাভাই খুব নেশা করতো তাই না?
– জ্বি।
– শাকিলার বাবা মাদক ব্যবসা করতেন টুকটাক, তার অফিসের চাকরি ছিল লোক দেখানো। আর তোমার দুলাভাই ছিল তার একজন রেগুলার কাস্টমার। অনেক টাকা বাকি পড়ার কারণে সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শাকিলার বাবা তোমার আপুর বাসায় গেছিল। ঠিক?
– জ্বি।
– বলো তো আমি কীভাবে জানলাম?
– জানি না সাজু ভাই, তবে হ্যাঁ এটা সত্যি যে আমি আপুর বাবাকে আগে একবার দেখেছি। কিন্তু তিনি যে আপুর বাবা সেটা জানতাম না, আমি ঢাকায় এসে জানতে পেরেছি।
– আমি স্পেশাল ভাবে দুটো মানুষকে তোমাদের দুজনের পিছনে রেখেছিলাম ফেরদৌস।
– মানে? দুজনের পিছনে মানে কি? আমি আর সুমনা?
– হাহাহা, মুখ ফস্কে সুমনার নাম বের হয়ে গেল?
– কিন্তু এছাড়া তো কারো সঙ্গে কথা বা পরিচয় নেই আমার।
– তোমার সঙ্গে কার পরিচয় আছে তা দিয়ে তো আমি লোক নিয়োগ করিনি।
– তাহলে?
– তোমার পিছনে যাকে নিয়োগ করা হয়েছে সেই বের করেছে তোমার আপুর বাসায় শাকিলার বাবার প্রবেশ করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
– দেখুন সেটা আমার দুলাভাইয়ের অপরাধ ছিল তাই সে বিষয় কিছু বলার ছিল না। আর সেদিনের পর থেকে আমি আমার আপু দুলাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতাম না।
সাজু এবার সানোয়ারের দিকে তাকিয়ে বললো,
– সানোয়ার ভাই এবার আপনার লিস্টটা আমার কাছে দেন তো।
সানোয়ার তার লিস্ট বের করে দিল, ৭ টা নাম সেখানে লেখা আছে। সাজু সেগুলো চোখ বিলিয়ে তারপর বললো,
– সাতটা মহাদেশ থেকে সাতটা নাম লিখে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু আপনার নাম কোই?
– সানোয়ার বললো, মানে? আমার নাম কেন থাকবে এখানে?
– আশ্চর্য, আঙ্কেলের সঙ্গে তার ডানহাত হিসেবে কাজ করবেন, রাতারাতি টাকা ইনকাম করবেন আর নিজের নাম ব্যবহার করবেন না?
– আমি কখনো তার সঙ্গে এসব বিষয় যোগাযোগ করতাম না, শাকিলা আমার বন্ধু তাই তার বাবার পরিচয়ে তাকে চিনি।
– তাহলে প্রতিদিন এতো কথা কিসের জন্য হতো জানতে পারি ? এমনকী খুন হবার রাতে বাসায় বসে তিনি যাকে কল করেছে সেই ব্যক্তি আপনি। মানে সুমনা সেদিন রাতে আপনার সঙ্গেই কথা বলতে শুনেছে।
– আঙ্কেল আমাকে কল করতেন শাকিলাকে বোঝানোর জন্য। সাজ্জাদকে ডিভোর্স দিয়ে সে যেন তার বাবার কথা শোনে সেটাই বোঝানোর জন্য তিনি বলতেন।
– আজকে সকালে আপনি হাসপাতালে এসেছেন তাই না?
– হ্যাঁ এসেছিলাম, হাসপাতালের নিচে শাকিলা দাঁড়িয়ে আছে দেখে অবাক হলাম। কারণ তাকে জেল থেকে বের করা হয়েছে জানতাম না, আমি শুধু দেখা করতে চেয়েছিলাম।
– সাজু বললো, শাকিলা আপনি কিন্তু আমাকে বলেন নাই সকাল বেলা সানোয়ার এসেছিল।
– আপনি তো জিজ্ঞেস করেননি সাজু ভাই।
– তাহলে এখন বলো সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে তোমার কি কথা হয়েছে?
– আমরা একসঙ্গে সিড়ি দিয়ে উঠছিলাম, হঠাৎ করে সানোয়ারের কল আসে। আর সানোয়ার সেখান থেকেই বিদায় নিয়ে চলে যায়।
– আপনার সেই জুস আর খাবারের প্যাকেট কার কাছে ছিল? আপনার কাছে নাকি সুমনা আর ফেরদৌস এদের দুজনের কাছে।
– আমার কাছেই ছিল, কিন্তু সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় সানোয়ার বললো আমার কষ্ট হবে তাই সে ওটা নেবে।
– বাহহ, আর তখন দৃষ্টির অগোচরে জুসের মধ্যে বিষাক্ত ওষুধ মেশানোর কাজটা করা হয়েছে। তারপর সে মোবাইলে কল আসার অভিনয় করে তোমার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে যায়। কারণ সে জানতো যে বিষাক্ত ওষুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব তুমি পালন করবে।
সবাই হা হয়ে গেল, সানোয়ার সেই মুহূর্তে একটা অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেললো। পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে তার কাছেই থাকা সুমনার গলায় ধরলো।
সাজু শান্ত গলায় বললো, এমনিতেই একটা খুনের দায় আপনার ঘাড়ে আছে। আরেকটা ভুল করে সেটা ভারি করবেন না, সাজ্জাদকে খুনের পরিকল্পনা করা উচিৎ ছিল না সানোয়ার হোসেন সাহেব। তাহলে আরো কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে চলতে পারতেন আপনি। আমি দ্বিতীয় অনুসন্ধান করতে লোক দিছিলাম আপনার পিছনে। একজন সবসময় ফেরদৌসের তথ্য বের করতো আর অন্য জনে আপনার তথ্য বের করতো। আপনি যখন হাসপাতালে গেছেন বা শাকিলার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন সেই মেসেজ আমার কাছে এসেছে কিন্তু দেখতে দেরি হয়ে গেছে। আমি মেসেজ চেক করেছি ওসি সাহেব কল করার পরে, ততক্ষণে শাকিলা জুস খাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু মেসেজ পেলে ও বুঝতে পারতাম না কারণ সে শুধু লিখেছেন যে আপনি হাসপাতালে গিয়ে শাকিলার সঙ্গে দেখা করে চলে এসেছেন। কিন্তু আমি যখন হাসপাতাল এ গিয়ে জানতে পারলাম তখন মেসেজ এর কথা মিলিয়ে নিলাম। তখন ওসি সাহেব ও শাকিলাকে সামনে রেখে সাজ্জাদকে দিয়ে নাটক করলাম। বাসায় একটা ক্যামেরা আছে বলে তাদের নিয়ে এলাম, কিন্তু সে কথা আপনার কাছে পৌঁছাল না। তাই বাধ্য হয়ে নিজে কিন্তু কল দিয়ে আপনাকে এখানে নামের লিস্ট নিয়ে আসতে বলেছি।
যাইহোক, এবার বলেন সেই রাতে কি কি করেছেন আর কীভাবে করেছেন?
– সানোয়ার হোসেন কিছু বলতে যাবেন তখনই তার অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ফেরদৌসের সঙ্গে আসা পুলিশ তার হাতের বন্দুক দিয়ে আঘাত করলো। সানোয়ার হোসেন মাটিতে পড়ে গেল, পিস্তলের শব্দ হলো, ফেরদৌস লাফ দিয়ে তাকে চেপে ধরলো। ওসি সাহেব দ্রুত পিস্তল কেড়ে নিল।
|
|
অসহায় হয়ে বসে আছে সানোয়ার, বাড়ির মালিক ইতিমধ্যে এসে গেছে। সাজু ভাই কাচের গ্লাসে দুধ খাচ্ছে, দুধ বানিয়ে এনেছে শাকিলা। চা তৈরি করার জন্য যে প্যাকেটের দুধ ছিল আপাতত সেটা দিয়ে চলছে।
– সাজু বললো, সানোয়ার সাহেব আমরা কিন্তু আপাতত আপনার কাছে শুনতে চাই। আদালতে তো অবশ্যই বলবেন কিন্তু তার আগে আমরা একটু জানতে চাই।
– সানোয়ার বলতে শুরু করলো, আঙ্কেলের সঙ্গে আমি এই কাজে জড়িত প্রায় দেড় বছর ধরে। সবসময় আমিই আমাদের বয়সী নেশা করতো এমন মানুষ যোগাড় করতাম। সবকিছু খুবই গোপনভাবে চলছিল, কিন্তু সেদিন রাতে হঠাৎ করে কল দিয়ে বললো শাকিলার বাসায় যেতে হবে। আমি বা আঙ্কেল কেউ জানতাম না শাকিলা বাসায় নেই, আঙ্কেলের টার্গেট ছিল বাসার মধ্যে কিছু মাদক লুকিয়ে রাখবেন। তারপর পুলিশের মাধ্যমে তাকে ফাঁসানো হবে।
কিন্তু আমরা বাসায় গিয়ে দেখি বাসা তালাবদ্ধ, আঙ্কেল তখন পকেট থেকে চাবি বের করে বললো ” কপাল ভালো যে চাবি নিয়ে এসেছি, কিন্তু এতো রাতে দরজা তালা ঝুলছে কেন? ” আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম, বেডরুমে গিয়ে আলমারির চাবি খুঁজতে লাগলেন আঙ্কেল। হঠাৎ করে বালিশের তলায় চেকবই পেল, আমাকে দেখালেন সেই চেকবই। আমি যখন দেখলাম সবগুলোই সই করা আছে তখন উন্মাদ হয়ে গেলাম। বললাম যে ৫০-৫০ ভাগ হবে। কিন্তু আঙ্কেল এক টাকাও দেবে না বলেই আমার মাকে তুলে গালি দিল। তখনই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই রান্না ঘরে গিয়ে খুঁজে খুঁজে ছুরি বের করলাম। ড্রইং রুমে এসে আঙ্কেলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছুরি চালিয়ে দিলাম। একটা চিৎকার তিনি করেছিলেন তখন কিন্তু বাহিরে শব্দ যায় নাই।
আমি আঙ্কেলের লাশ রেখে বাতি বন্ধ করে বের হলাম আর তখনই সিড়ি বেয়ে কারো উপরে ওঠার শব্দ পেলাম। উঁকি দিয়ে দেখি সাজ্জাদ আসছে, আর তখনই ভয় পেলাম। আমি আবার রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম, একটা লোহার রড আগেই দেখেছিলাম সেটা হাতে নিলাম। সাজ্জাদ প্রবেশ করতেই তাকে আঘাত করি, সাজ্জাদ মাটিতে লুটিয়ে পরে। তারপর সেই ছুরি ও রডের মধ্যে আমার হাতের ছাপ মুছে নিলাম আর সাজ্জাদের হাত দিয়ে ছাপ দিলাম।
– সাজু বললো, আপনি তো শিক্ষিত মানুষ তাহলে আপনার তো জানা দরকার ছিল যে এতগুলো টাকার ব্যাপারে ব্যাঙ্ক থেকে একাউন্টের মালিকের কাছে কল দিবে।
– ওসি সাহেব বললেন, ওর কিছু জানতে হবে না, যা জানানোর সবকিছু থানায় গিয়ে জানাবো।
– ঠিক আছে তাই করুন, আর শাকিলা মেডাম আপনি হাসপাতালে চলে যান। সাজ্জাদ ভাইকে বলবেন সবকিছু, সে সুস্থ হয়ে বাসায় এলে আমি একদিন এসে দেখা করে যাবো৷
★★
কেবিনে বিছানায় শুয়ে আছে সাজ্জাদ, তার বুকে হাত দিয়ে একটা আরেকটা হাত মাথায় রেখে বসে আছে শাকিলা। সুমনা ফেরদৌস ও সুমনার মা দাঁড়িয়ে আছে কাছেই, সাজ্জাদের মুখে সামান্য হাসি। শাকিলার চোখে পানি, সে কাঁদছে, তার একচোখে বাবা হারানোর যন্ত্রণা আরেক চোখে স্বামী সুস্থ হবার আনন্দ।
|
|
চট্টগ্রামগামী ” ইউনিক ” পরিবহনে বসে আছে রামিশা, সে চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছে। তাকে বাসে তুলে বিদায় দিতে এসেছে সাজু ভাই, রামিশা বারবার সাজুর দিকে তাকাচ্ছে।
– সাজু ভাই… মেলা মেলা ধন্যবাদ।
– কেন?
– আমাকে আপনার এমন একটা চমৎকার রহস্য সমাধানের সঙ্গী করার জন্য। আমি কখনো ভাবিনি যে আপনার সঙ্গে এভাবে একসঙ্গে কোন খুনের রহস্যে জড়াবো।
– তাই?
– হ্যাঁ তাই, মনে হচ্ছে একটা স্বপ্ন দেখে এলাম। কেমন অদ্ভুত সবকিছু।
– যদি এমন আবারও কোন মামলার সন্ধান পাই তাহলে তোমাকে বলবো। একটা মেয়ে সঙ্গে নিয়ে রহস্য খোঁজার মজাই আলাদা।
– আমার খুব আফসোস লাগে সাজু ভাই, আমি যদি আপনার সেই ” সরি আব্বাজান ” রহস্যের সমাধান করার সঙ্গী হতে পারতাম। কারণ সেই ঘটনা আজও আমার মনে পরে, খুব মনে পরে।
– আমি চট্টগ্রামে গেলে তোমাকে জানাবো, তুমি ভালো থেকো সবসময়।
– আপনিও ভালো থাকবেন, আর সবচেয়ে ভালো হতো একটা বিয়ে করে জীবন সাজালে।
– হাহাহা, আচ্ছা সেটাও জানাবো।
#সমাপ্ত
অসাধারণ একটা গল্প