কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ১৬+১৭

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৬.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
রমাঞ্চিত পরিবেশ।বাতাসের তীব্রতা,সমুদ্রের উপচে পড়া,সামনে আগুন।সেই আগুনের আলো এসে পড়ছে জুটি জুটি ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে।রিঝ সচকিত হয়ে তুতুলের হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে।ইমতিয়াজ গিটার হাতে গান ধরে।মোট মিলিয়ে কয়েক জোড়া জুটি।সবার হাতগুলো একের সাথে অপরের হাত লেপ্টে আছে।সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে প্রিয়সীর হাতে হাত রাখতে পারা সহজ ব্যাপার নয়।আগুনের তাপে সবাইকেই অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।মেয়েদের খোলা চুল,ছেলেদের উজ্জ্বল দৃষ্টি।কি চমৎকার দৃশ্য!যেনো আজ সমুদ্রের বালিকামুয়ে নতুন রূপে কিছু রূপকথার জুটি নেমে এসেছে।রিঝের একটা হাত তুতুলের বাঁকা কোমড় আঁকড়ে ধরে রেখেছে।অন্য হাত তুতুলের চিকন সরু আঙ্গুলের ভাজে আলিঙ্গন করে মিশে আছে।রিঝের ঠান্ডা হাতের প্রথম ছোঁয়া কোমড়ে পড়তেই তুতুল কেঁপে উঠে।দু’জন দু’জনের চোখে তাকিয়ে তালমিলে নিচে চলেছে।চারপাশে এই শীতেই বসন্ত নেমে এসেছে।তুতুলের একটা হাত রিঝের বুকে।ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া টি-শার্ট ভেদ করে শরীরে লাগছে।যেনো হৃৎপিন্ড ছুঁয়ে রেখেছে সে।হিমশীতল বাতাসে তুতুলের কোঁকড়া কালো চুল উড়ছে।চিকচিক করছে পাশের বাঁকা বাঁকা চুলের বাহার।রিঝ হাতটা ছেড়ে চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দেয়।ঠান্ডা হাতের স্পর্শ গালে লাগতেই কম্পিত হয় তুতুলের শরীর।রিঝ টেরপায়।আরো নরম করে আঁকড়ে ধরে কোমড়।রিঝ ভালবাসাপূর্ন চাহনিতে তুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।গানের তালে নাচচ্ছে তারা।মাঝে মাঝে একটা আঙ্গুলের উপরে ভর করে হাত উচিয়ে তুতুলকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে।আবার আলিঙ্গন করে নিচ্ছে।তুতুল নিজেকে নিয়ন্ত্রন করছে না।রিঝ নিজের মতো করে গড়ে নিচ্ছে তাকে।তুতুলের চোখে রিঝ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভালবাসা খুঁজে।খুঁজতে গিয়ে নিজেই আরো গভীরে তলিয়ে যায়।স্নিগ্ধ বাতাসের সাথে মনের অনুভুতি মিশে আশ্চর্য প্রলয়ের সৃষ্টি করছে।ইমতিয়াজের গিটার শব্দ করে।গান গেয়ে চলেছে সে।গানের প্রতিটি কথা যেনো তুতুলের নাম করে দিয়েছে রিঝ,
“ তুমি ভাবনায় ডুবে থাকা
দূর আকাশের নীলিমায়!
তুমি হৃদয়ে লুকোনো প্রেম!
মিশে থাকা গভীর মুগ্ধতায়!
তুমি এলে,মন ছুলে
অন্যরকম হয়ে যাই!
ইচ্ছে গুলো জড়োসড়ো
ভালোবাসি বলে তাই
আমার আমি বলতে
তোমায় জানি
ঐ আকাশ জানে
তুমি আমার কতখানি——২
চিলে কোঠায় ইচ্ছে গুলো
নেই তো কোন দাড়ি কমা
বুক পকেটে তোমার জন্য
রেখেছি ভালোবাসা জমা
শিশির রোদের লুকোচুরি
তোমার হাসি ফোটা বকুল
ছোঁয়া পেলে স্বপ্ন হাজার
আনমনে হয়ে যাই ব্যাকুল।”
_______তাহসান…
কাঁধের উপরে কেউ পড়ে।রিঝ চমকে তাকায়।সে কল্পনায় ভাসছিলো।আশ্চর্য!!জেগে জেগে কি স্বপ্ন দেখা যায়??সে তো মাত্র দেখলো।কিন্তু সব তার কল্পনা।গান হচ্ছে,নাচও হচ্ছে,কিন্তু তারা দু’জনেই নেই।রিঝ পাশ ফিরে তাকায়।দেখে,এলোমেলো চুল গুলো মুখের উপরে ফেলে তুতুল বাঁকা হয়ে তার কাঁধের কাছে পড়েছে।ঘুমিয়ে গেছে সে।এতো উচ্চশব্দের গানের মধ্যেও তুতুল ঘুমাচ্ছে!!রিঝের কাছে অবাক লাগে না।সে বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে এলোমেলো বাঁকা চুল সরিয়ে দেয় একদম সাবধানে।কানের কাছে চুল গুঁজে দিতে গিয়ে কয়েকটা এলোমেলো চুল চোখের উপরে খুলে পরে।রিঝ মূদৃ হেসে ফু দিয়ে সেই চুল সরিয়ে দেয়।মুখে একটা হওয়া লাগতেই চোখমুখ কুচঁকে নেয়।মোটা কালো ভ্রু জোড়ার মাঝে ভাজ পরে।রিঝ সচেতন ভঙ্গিতে তুতুলের একটা হাত নিজের হাতে নেয়।আঙ্গুলে আঙ্গুল ঠেকায়।এক হয় দশটি আঙ্গুল।পিছনে হাত নিয়ে জড়িয়ে আর একটু কাছে নিয়ে আসে তুতুলকে।গান তখনো চলছে।সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখছে।আগুনের অগ্নিশিখা ধাউ ধাউ করছে।তাপ এসে পড়ছে তুতুলের মুখের ঠিক উপরে।হলুদ আগুনের আলোতে তুতুলের মুখের রং পরিবর্তন হয়।রিঝ আড়চোখে তাকায়।চোখ বুঝে আছে,ঠোঁট একটু আলাদা ফুলা।ঘন পাপড়ির চোখ।ঠোঁটের কোনের তিল ফুলা ঠোঁটের কারনে কুঁচকে আছে।ঘুমে মত্ত সে।রিঝ নিঃশব্দে হাসলো।গায়ের জ্যাকেট ঠিক করে দিলো।চোখ সরিয়ে আগুনের দিকে তাকালো।কিছু সৌন্দর্য মানুষকে লোভে ফেলে দেয়।যা কখনোই উচিত না।রিঝের মাঝে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো সামর্থ্য আছে।রামিমের হাতে মায়শা,হিমেলের হাতে আসমা।গানের তালে তারা জুটি বেঁধে নাচ্ছে।একটা সময় সবাই নিজের পার্টনারকে ঘুরিয়ে দেয়।আসমা এসে পরে রামিমের একদম বুকে।চোখ উপরে তুলে রামিমকে দেখেই মেজাজ বিগড়ে যায় আসমার।রামিমেরও সেম অবস্থা।দু’জনই বিরক্তি চোখে তাকায়।আসমা আস্তে করে বলে,
“ তোর সাথে নাচতে হবে??কি যুগ পড়লোরে বাবা।”
রামিমও নাক ছিটকে বলল,
“ আমারও বিন্দুমাত্র সখ নাই তোর মতো আগল পাগলের লগে নাচার।শালার মুডটাই নষ্ট করে দিছে।বাল ভাল্লাগেনা।”
রামিম আসমার হাত ধরে তাকে ঘুরায়।আসমা ঘুরে এসে সামনে পরে।রামিমের এক হাত আসমার হালকা মোটা কোমড়ে খেলা করছে।একটা হাত আঙ্গুলের ভাজে।চোখে চোখ রাখে।দু’জনের চোখ গভীর!অদ্ভুত!অনেক সময় তাকিয়ে নাচে তারা।মনে হচ্ছে এক অন্য অনুভুতি।রামিম আনমনে বলল,
“ তোর চোখ তো সুন্দর।”
আসমা চমকায়।চকিতেই রামিমের দিকে তাকায়।হঠাৎ লজ্জায় গাল লাল হয়।রামিমের বুকের পাশের হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে।কোমড়ের পাশটার হাতটাও আরো শক্ত হয়।রামিম নেচেই চলেছে।আসমা অপ্রস্তুত হয়ে পরে।পরিবেশ পরিবর্তন করতে বলে,
“ তোর জন্য এই চোখ ভয়ংকর।কারন আমি চোখ দিয়েই তোরে খুন করবো।”
“ সেটা প্রেমিকার কাজ।বা বউয়ের।তুই তো আমার কোনোটাই না।তাহলে করবি কিভাবে??” রামিম চোখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।আসমা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে সে হাসি দেখলো।আজব!এতো সুন্দর করে হাসতে কবে শিখলো রামিম?সে তো জানে না??চমকিত কন্ঠে আসমা বলল,
“ তোর হাসি তো সুন্দর!!”
রামিম দু’হাতে আসমাকে বুকের দিকে পিঠ লাগিয়ে টেনে নেয়।আসমা যখন বুকের উপরে পিঠ রাখে রামিম তখন ফিসফিস করে কানের কাছে এসে বলে,
“ শত্রুর কোনো কিছু সুন্দর লাগা প্রেমের লক্ষণ।”
আসমা সচেতন হয়।বিরক্তি গলায় বলে,
“ প্রেম আর তোর সাথে?? মরা ভালো আবাল একটা।আর তোর না গার্লফ্রেন্ড আছে??সাথে আমারও বয়ফ্রেন্ড আছে।সো দুর হ বলদ একটা।”
“ আমি কখন বললাম তুই আমার প্রেমে পড়ছিস??কথায় আছে মনের কথা হুট করে মুখে চলে আসে।তোর বেলায়ও তাই হচ্ছে দেখি।হা হা হা।আমি মরে গেলেও তোর লগে প্রেম করমু না।”
“ আমি মনে হয় বইসা আছি।আয় প্রেম করবো প্রেম করবো বলতাছি??ঢং।আমিও মরে যাবো তাও তোর লগে প্রেমের কথা ভাবতেও পারবো না।যা ভাগ।”
রামিম উচ্চশব্দে হাসে।গান আরো আগে শেষ।সবার থামা হয়ে গেছে।রামিমরা এখনো নাচ্ছে আর ঝগড়া করছে।তর্কবিতর্ক করছে।আসমা রেগে বুকে কিলঘুশি মারছে।রিঝ তখন তুতুলকে কোলে নিতে ব্যস্ত।সবাই হা করে দেখে।রোমান্টিক রোমান্টিক পরিবেশে রোমান্টিক মুহূর্ত মনে হচ্ছে সবার কাছে।কয়েকটা ছেলে মেয়ে চেচিঁয়ে উঠে।রিঝ চোখ বড় করে সবাইকে ধমকে উঠে।চুপ করতে বলে।সবাই হা করে আবার তাকিয়ে থাকে।রামিমদের হুশ হয়।আলাদা হয়ে যায় দুজনেই।মুহূর্তটা মনে রাখার মতো!!তুতুল রিঝের টি-শার্টের এক পাশ চেপে রেখেছে।মুখ কুঁচকে আছে।রিঝ সাবধানে কোলে তুলে নেয়।আকাশ শয়তানি করে আস্তে করে বলল,
“ রিঝ এতো কষ্ট করছ কা??আমারে দে আমি নি।”
রিঝ কঠিন চোখে তাকায়।আকাশ হেঁসে উঠে।জোড়ে শব্দ হয়।তুতুল নড়েচড়ে উঠে।আকাশ মুখে দু’হাত দেয়।নিজের হাসি থামায়।ইমতিয়াজ আসে।বলে,
“ আমরা কালকে সকালেও থাকবো।তখন দেখা করে যাবো।এখন যা তুই।”
“ ওকে বাই।”
রিঝ হাঁটে ঝাউবনের মাঝে।সারি সারি ঝাউবন।গাঢ় সবুজ বনের মাঝে কালো সাদার পথ চলা।রিঝের গায়ের টি-শার্ট কালো।তুতুলের গায়ের জ্যাকেট কালো কিন্তু গায়ের টি-শার্ট সাদা।তুতুল ঘুমের মাঝে দু’হাতে গলা জড়িয়ে আছে।মাঝে মাঝে গরম অনুভব করছে।তাই আরো ঘেঁষে জড়িয়ে ধরছে।রিঝ সামনে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়।মানুষ অনুযায়ী তাদের ভালোবাসা হয়।এক একজন এক এক করম ।তাদের ভালোবাসা প্রকাশের ধরনও তাদের মতো ভিন্ন।রিঝের ভালোবাসা তার মতো।ভিন্ন প্রকাশে সে বিশ্বাসী।নিজের মতো করে সে প্রকাশ করে।বুঝতে দিলেই যেনো ফুরিয়ে যাবে সময়।আলাদা হবে অনেক কিছু।রিঝ ঠোঁটে হাসি আঁকে।নিঃশব্দে হাসে।এই হাসিতেও অদ্ভুত কিছু আছে।
______________________
পরেরদিন সকাল সাত টায় ঘুম ভাঙ্গে তুতুলের।আড়মোড় ভেঙ্গে উঠে বসে সে।গায়ে সাদা চাদর।নিজের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে এক হাতে পেঁচিয়ে খোঁপা করে।বিছানা থেকে উঠতেই শীত শীত লাগে।চাদরটা গায়েই পেঁচিয়ে নেয়।জানালার পাশে এসে দাড়ায়।জানালায় সিল্কের সাদা পর্দা।সরিয়ে দিয়ে দেখে।সমুদ্র ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।তুতুল বারান্দায় আসে।দূরে শান্ত সমুদ্র দেখা যাচ্ছে।ঢেউ একদম আস্তে আস্তে আসছে।পানির উপরে ধোয়ার মতো উড়ছে কুয়াশা।তুতুলের রুম থেকে সরাসরি সমুদ্র দেখা যায়।তুতুল আরো জড়িয়ে নেয় চাদর।বারান্দার সোফায় বসে পরে সে।দৃষ্টি শূন্যে ভাসে।সমুদ্র একদম শান্ত।নিরিবিলি,নিরব।তুতুলের টনক নড়ে।মনে পরে সে তো কাল রাতে সমুদ্রের কাছেই ছিলো।তাহলে এখানে কিভাবে এলো??তুতুল সোজা হয়ে বসে।কপালে চিন্তার ভাজ।দুই তিন রেখাও দেখা যাচ্ছে।চোখ কুঁচকে ঠোঁট উল্টে ভাবছে সে।এরিমধ্যে দরজায় করঘাত।দরজা খুলে রিঝের মুখ দেখে।ঘুম থেকে উঠেছে তুতুল মাত্র।তাই মুখটা তেলতেলে,নিষ্পাপ, স্নিগ্ধ ,দেখাচ্ছে ।তুতুল বিড়বিড় করে বলে,
“ দিনটা আজকে বকা খাইতে খাইতেই যাইবো মনে হয়।”
“ তা তো যাবেই।এতো ঘুম কিসের তোমার??”
রিঝ তুতুলকে সরিয়ে রুমে ঢুকে।বারান্দায় চলে যায়।সোফায় পা গুটিয়ে বসে।কালো ট্রাউজার,কালো টি-শার্ট তার সাথে মিলিয়ে কালো মগ।তুতুল ঠোঁট উল্টে বলল,
“ মেচিং মেচিং সব কই পান বলেন তো??”
“ আমার পেতে হয় না।নিজের জিনিস নিজেই নিয়ে আসি।”
“ আপনি কফির মগও নিয়ে এসেছেন??” তুতুল বিস্মিত।
“ হুম। তো কি হয়েছে??আমি নিজের মগ ছাড়া কফি খেতে পারি না।”
“ আমাদের বাসায় দিলে কিভাবে খান??”
“ সেটা যেনে তোমার কাজ কি??যাও ফ্রেশ হও।”
“ আপনি কি নিষ্ঠুর!একা একা খাচ্ছেন??আমারও খাইতে ইচ্ছা করতাছে।”
তুতুল অভিমানী সুরে বলতে বলতে সোফায় বসে।রিঝ মৃদু হাসে।সোফায় আরো ঠেঁসে বসে।সমুদ্র দেখার নাম করে এসেছে।আসলে অন্য কিছু দেখতে এসেছে সে।তুতুল চকিতেই রিঝের দিকে ফিরে।ভাব এমন যেনো চমকিত কিছু হয়েছে।রিঝ ভ্রু বাঁকিয়ে দু’ভ্রু এক করে।তুতুল তীর্য চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
“ আমি এখানে কিভাবে এসেছি??”
“ অবশ্যই পা দিয়ে হেঁটে।এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে।কিছুক্ষণ আগেই এসেছো এখনই ভুলে গেলে??ভালো ডাক্তারের প্রয়োজন মনে হচ্ছে।”
“ আরে আমি এখনের কথা বলছি না।কাল রাতের কথা বলছি।কিভাবে এসেছি??আমার কিছু মনে নেই।আমি আগুন দেখতে দেখতেই ঝিমিয়ে পড়েছিলাম।তারপর কি হলো??”
“ তারপর যা হওয়ার হয়েছে।”
“ কি হয়েছে সেটাই জানতে চাচ্ছি।” তুতুলের কন্ঠে বিরক্তি।রিঝ মুচকি হেসে মগে ঠোঁট বসায়।শীতের সকালের গন্ধ মুগ্ধ করে তাকে।তাই সকালে দ্রুত উঠে সব সময়।তুতুলের তাড়া,
“ বলেন না।”
“ তারপর ঘুম।তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে।এটা ছাড়া আর কিছু কি হতে পারে??”
“ তাহলে কিভাবে এখানে এসেছি??”
“ আমার কোলে উঠে।আর কিভাবে আসবে বলো।তবে তুতুল আমার মনো হয় তুমি মোটা হয়ে যাচ্ছো।ওহহহ কালকে তোমার ভারে আমি নিচে তলিয়ে যাচ্ছিলাম।ভাগ্যিস সমুদ্রের তীরে ছিলাম না।তহলে তো আমি একদম নিচে।”
রিঝের শয়তানি হাসি ঠোঁট জুড়ে।তুতুল রাগে ফস করে উঠে।সোফার কুশন একটা একটা করে ছুড়ে মারে।রিঝ উঠে দাড়ায়।তুতুল যা হাতের কাছে পায় তাই মারে।না পারতে রিঝ দ্রুত রুমের বাহিরে চলে যায়।যেতে যেতে বলে,
“ ফ্রেশ হও।”
তুতুল রাগে কিটমিট করে বলল,
“ দেখি কেমন চিকন বউ পান আপনি।যাই দেখেন আপনার নিজের বউই হাতি হবে।”
রিঝ হেসে উঠে বলে,
“ সেটা নিয়ে তোমাকে কষ্ট করে ভাবতে হবে না।এই বডি এমনে এমনে বানিয়েছি বলে তোমার মনে হচ্ছে??মোটেও না।আমার বউকে কোলে কোলে রাখবো বলে বানিয়েছি।
“ ভাবতে চাইও না।থাকেন বউ নিয়া।শুধু কোলে না পারলে মাথাও নেন।হুহ।”
তুতুল ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।রিঝ ঠোঁট জোড়া চেপে হাসে।কফির মগের সব কফি তার গায়ে।একটুর জন্যে মগটা বেঁচে গেছে।রিঝ দ্রুত কয়েকটা শ্বাস ফেলে।হাপিয়ে উঠেছে সে।কে বলে মেয়েদের শক্তি কম??পাইলে থাপড়ে দিবে সে।জিজ্ঞেস করবে,
“ শালা চোখ কি অন্ধা??ঘরে ঘরে যাইয়া দেখ মেয়েরা কি কি করে।”

সকাল নয়টায় সবাই টেবিলে আসে।রিঝ সবার আগে এসে বসে ছিলো।সবার প্রতি ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় সে।তুতুল সেই দৃষ্টি সম্পূর্ন উপেক্ষা করে পাশে বসে পরে।ইমতিয়াজ এবং তার টিমের সবাই আসে।এক টেবিলে এতো জায়গা হয় না।সবাই আলাদা আলাদ হয়ে চারজন করে করে বসে।রিঝদের টেবিলটা বড়।সেখানে ছয়জন বসেছে।ইমতিয়াজের সাথের মেয়েটাকে দেখে রিঝ বলল,
“ কে রে??”
ইমতিয়াজ লাজুক হেসে বলল,
“ তোদের ভাবী।”
সবাই হা করে মাথা বাঁকিয়ে তাকায়।রামিম বলে,
“ তুই বিয়াও কইরা ফেলছস??”
“ হুম।বিয়ের কাজে দেরি কিসের।”
“ তাও ঠিক।কিন্তু আমারও অনেক ইচ্ছা বিয়া করে ফেলার।মাইয়া কই পামু বল??” আকাশের কন্ঠে আফসোস।
সবাই হাসে।ইমতিয়াজ বলে,
“ আছে আছে।অপেক্ষা কর।সবাই জুটি নিয়ে জন্মায়।তোর জনও আছে।হয় তো তোর আশেপাশে বা অন্য কোথাও।সময় হলেই সামনে চলে আসবে।শুধু সময়ের প্রয়োজন।”
“ তা কবে বিয়ে করলি??” রিঝের সিরিয়েস মুড।
“ একমাস হয়েছে।এখনো অনুষ্ঠান হয় নি।কিছু দিন পরে হবে।তোরা সব ঢাকায় থাকছ তাই তো??”
“ হুম।”
“ ভালো হয়েছে।নাম্বার গুলো দে।”
ইমতিয়াজ সবার নাম্বার নেয়।গল্প করে বন্ধুরা মিলে।অনেক দিন পরে দেখা।তাই গল্প করে অনেক সময় নিয়ে।

সবাই বিচে আসে।অনেক মানুষে এই বিচে।সবাই নিজেদের মতো ভিজে চুপচুপ।কেউ গোসল করছে মনের সুখে।সমুদ্রের ঢেউ বাড়ে।তুতুল দূরে দাড়িয়ে দেখে।সে কাছে যায় না।চোখমুখ উজ্জ্বল।রিঝ পাশে এসে দাড়ায় ।তুতুল তাকায়।রিঝের গায়ে সাদা শার্ট।বাদামি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট।তুতুলের দিকে তাকিয়ে রিঝ বলল,
“ পানিতে ভিজবে না??”
“ আরে না।আমার ভয় লাগে।যদি ডুবে যাই।”
রিঝ হাসলো।তুতুলের বাচ্চা বাচ্চা মুখ দেখে তার হাসি পাচ্ছে।বলল,
“ সমুদ্র এসে যদি নাই ভিজো তাহলে সমুদ্রের সৌন্দর্যে ডুবা হলো কিভাবে??”
“ আমি চোখ দিয়েই ডুব দিবো।”
“ সব সৌন্দর্য চোখ দিয়ে দেখা যায় না।কিছু সৌন্দর্য ছুঁয়ে দেখতে হয়।তাহলে এর অস্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।যদিও পাহাড়,কাশফুল,আর নারী দূর থেকেই দেখতে বেশি ভালো লাগে।কাছে গেলে সৌন্দর্য বিলিন হয়।”
“ কে বলছে??তাহলে অনেকে যে নারীদের কাছে এসেই বলে দেখতে সুন্দর।”
“ সেটা সবার কাছে না।কাছের মানুষের কাছেই সৌন্দর্য কাছ থেকে প্রকাশ পায়।তাই তো বলছি সমুদ্র ছুঁয়ে দেখো।”
তুতুল ভীতু হয়ে বলে,
“ যদি ডুবে যাই??”
রিঝ মুচকি হেসে বলল,
“ মৃত্যুকে এতো ভয় পাও??”
“ মৃত্যুকে ভয় পায় না এমন কেউ কি আছে??”
“ মৃত্যুকে নয় মৃত্যুর জনক,তোমার প্রতিপালককে ভয় করো।তাতেই হবে।মৃত্যু তো হবেই।তুমি নিজেই তার দিকে ধাবিত হবা।”
তুতুল কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে ভাবে।তারপর বলে,
“ ভয় লাগে তো।”
রিঝ আশ্বস্ত করে বলে,
“ আমি আছি তো।”
ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয় রিঝ ।তুতুল কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শক্ত করে ধরে সে হাত।সমুদ্রের মাঝে হেঁটে যায়।মাঝে মাঝের বড় ঢেউ এসে ভিজিয়ে দেয় দু’জনকেই।তুতুল তখন বাচ্চাদের মতো শক্ত করে রিঝকে জড়িয়ে ধরে।বড় ঢেউ কাছে আসলেই রিঝ তুতুলের কোমড় পেঁচিয়ে তাকে উপরে তুলে নেয়।তুতুল তখন খিলখিল করে হাসে।তাকে দেখতে একদম বাচ্চা লাগছে।যেনো প্রথম পানি দেখছে।বাচ্চারা যেমন প্রথম পানি দেখে ভয় পায়।পরে ভয় কেটে গেলে পানিই তাদের সবচাইতে প্রিয় হয়ে উঠে তুতুলের অবস্থা এখন ঠিক তেমন।সে রিঝের হাত ছাড়িয়ে নেয়।নিজের মতো লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে।রিঝ দূরে দাড়িয়ে দেখে।আকাশও রিঝের সাথে ছিলো।রিঝ কথা বলছে একটা দুইটা।আর তুতুলকে দেখছে।তুতুল কোঁকড়া চুল ভিজিয়ে পানিতে ধাপাধাপি করছে।আকাশ বলল,
“ তুতুল অনেক কিউট আর সহজসরল মেয়ে।”
“ হুম।” রিঝ সামনে তাকিয়ে ছিলো।এবার পাশ ফিরে বলল,
“ তুই এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছ??মাথা ফাটাতে চাস??”
“ আরে না না।আমি তুতুলরে বোনই মনে করি।এমনেই কইতাছি।তুই অন্য মাইন্ডে নেছ কা।ছিঃ।এটা আশা করি নাই।”
রিঝ মুখ কুঁচকে নিয়ে বলে,
“ সবকিছুর আগে নেগেটিভ দিক বিবেচনা করতে হয়।যদিও আমি এমন কিছুই করি নি।আমি মজা করছিলাম।”
“ তুই মাঝে মাঝে এমন সিরিয়েস হয়ে মজা করছ মনে হয় যেনো তিতা করলার জুস খাইতে দেছ।এমন করে রাখছ কা মুখটা।হাসলে কি জাত চলে যায়??”
“ ফালতু বকিছ না।আমি যথেষ্ট হাসি।শুধু শব্দ করি না।এটা আমার স্বভাব।”
রিঝ সামনে তাকায়।চকিতেই চারপাশে চোখ নেয়।চমকিত হয়ে আর্তনাদ করে বলে উঠে,
“ তুতুল কই??”
আকাশও তাকায়।না সামনে দেখা যাচ্ছে না।রিঝ দ্রুত চারদিকে তাকায়।বুক ধুক করে উঠে।হাত পা কাঁপছে তার।তুতুল সাঁতার পারে না।রিঝ পানির কারনে হাঁটতে পারছে না।দৌড়াতে পারছে না।বুকের শব্দ বেড়েই চলেছে।এতো এতো মানুষ!রিঝ নিজের চুল টেনে ধরে।আকাশ রামিম ,আসমা,হিমেল মায়শা সবাই হন্ন হয়ে খুঁজে।তুতুলের দেখা নেই।রিঝের সম্পূর্ন শরীর থরথর করে কাঁপছে।সে চারপাশে পাগলের মতো খুঁজেই চলেছে।রিঝের মতো শক্ত প্রকৃতির মানুষকে এমন কাঁপতে দেখে রামিম দৌড়ে আসে।বাহু চেপে বলে,
“ ওই করছ কি??তুই তো এখনই পড়বি।শক্ত হয়ে দাড়া।”
রিঝ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না।তুতুলের জায়গায় অন্য কেউ হলে সে এতো চিন্তা করতো না।তুতুল জীবনে প্রথম একা ঘুরতে এসেছে।তার মা বাবা ভাইকে রেখে।তারপর সে সাঁতার পারে না।কিছু চিনেনা।রিঝ আতঁকে উঠে।শ্বাস জোড়ে জোড়ে নিচ্ছে সে।রিঝের শরীর ঘামছে।ভিজা শরীর গরম হয়ে উঠছে।কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না।রামিম ধরে রাখতে পারছে না একা।রিঝ বসে পড়ে।আকাশ দৌড়ে আসে।সাথে আসে হিমেল।রামিম ভরসা দিয়ে বলল,
“ খুঁজে বেড় করবোই।তুই চিন্তা করিছ না।আশেপাশেই হবে।এতো মানুষ তাই দেখতে পাচ্ছিস না।তুই শান্ত হ।”
শরীরের কাঁপনি থামছে না।আকাশ হিমেল দুই হাতে রিঝের বাহু জড়িয়ে ধরে।
“ আমি কিন্তু ওর দায়িত্ব নিয়েছিলাম।দোস্ত যদি না পাই।আমি মরেই যাবো।”
রিঝ মাথার চুল টানে।সর্ব শক্তি দিয়ে উঠে দাড়ায়।পানির মধ্যে দৌড়ে খুঁজে বেড়ায়।শরীরের কাঁপনিতে সে নিজেও অবাক।সাথে সবাই খুঁজে।কোথায় গেলো মেয়েটা??রিঝের চুল এলোমেলো পাগলের মতো হয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর পর সে নিজের মাথায় থাপড়াচ্ছে।কেনো মনোযোগ দিলো না।কেনো??আকাশের উপরে তার এখন খুব রাগ উঠছে।এর চাইতেও নিজের উপরে বেশি।খুঁজে না পেলে কি করবে সে??রিঝের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।বুকে এক ধরনের ব্যথা হচ্ছে তার।হাত পা বরফের মতো ঠান্ডা।নোনা পানিতে বেশিক্ষণ থাকায় তার চোখ নাক সব লাল হয়ে আছে।বার বার মনে হচ্ছে যদি না পায়!!পরক্ষণের নিজের প্রতি সে বিরক্ত হচ্ছে।রিঝ নিজের গালে নিজেই কয়েটা চড় বসিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রন করছে।রামিম বুঝতে পারে।এই চড় গুলো আকাশকে মারতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু রিঝ নিজের বন্ধুদের কখনো আঘাত করে না।কথা দিয়েও না।রিঝের দু’হাত টেনে ধরে আকাশ আর রামিম।আকাশ অনুশোচনা ভরা কন্ঠে বলল,
“ স্যরি দোস্ত।আমি যদি ওই সময় কথা না বলতাম তাহলে এমন হতো না।”
রিঝ দাঁত চেপে আছে।সে কিছু বলছে না।ভয়ে সে কথা হারিয়ে ফেলেছে।শরীর কাঁপুনির সাথে মাথাটাও ঝিমঝিম করছে তার।
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৭.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
হিমেল অনেক দূর হেঁটে পানি নিয়ে আসে।খাওয়ার পানি।রিঝের মুখে ,মাথায় পানি ঢালে।খেতে বলে।কিন্তু সে খায় না।একটা ছেলে বল ছুড়ে মারে রিঝের গায়ের দিকে।রিঝ চমকায়।পাশ ফিরে তাকায়।ছেলেটা বলল,
“ বলটা দেও আমি ওই দিকে যাবো।”

রিঝ বলটা হাতে নিয়ে এগিয়ে দেয়।ছেলেটা এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“ তাড়াতাড়ি দেও।এতো দুরে কেনো তুমি??পানিতে ডুবে যাবা তো??ওই আপুর মতো।আম্মু বলছে তাড়াতাড়ি উঠে যেতে।বকা দিবে তো।দেও।”
“ ওই আপু” কথাটায় রিঝ ভিসন ভাবে চমকায়।উঠে দ্রুত এগিয়ে এসে বলে,
“ কোন আপু??”
“ ওই দিকে একজন আপু ডুবে গেছিলো।”

রিঝ আঁতকে উঠে।দ্রুত দৌড়ে পিছনের দিকে যায়।তার পিছনে পিছনে সবাই যায়।রিঝ সমুদ্রের একটা পাশে এসে দেখে।তুতুল নিস্তেজ হয়ে পরে আছে বালিতে।সবাই আতঙ্কিত।রিঝ দৌড়ে কাছে আসে।তুতুলের মাথা আগেই একজনের কোলে ছিলো।রিঝ দ্রুত নিজের কোলে মাথা নেয়।পাশের লোকটিকে দেখে প্রচন্ড রাগ নিয়ে কড়া চোখে তাকায়।সেও তাকায়।দু’জনের চোখের কোণা লাল হয়ে আছে।রিঝ তাকিয়ে থেকে সময় নষ্ট করতে চায় না।তাই চোখ সরিয়ে তুতুলের দিকে তাকায়।তার শরীর এখনো কাঁপছে।তুতুলের কোনো রেসপন্স নেই।রিঝ উত্তেজিত গলায় ডাকে,
“ তুতুল!!তুতুলল!!”
তুতুল নিশ্চুপ।রিঝ পিছনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
“ তাকিয়ে তাকিয়ে মুভি দেখছ??যা পানি নিয়ে আয়।দ্রুত যা।”
“ রিঝ শান্ত হ তুই।যাইতাছে।ওই তোরা যা।” রামিমের আদেশের সুর।

হিমেল আর আকাশ দৌড়ে পানি নিয়ে আসতে যায়।আকাশ একবার প্রশ্ন করতে চেয়েছে,কেমন পানি??কিন্তু রিঝের রাগি মুখ দেখে তার নিজেরই ভয় করছে।
“ পানি বেশি খায় নি।উপরে উঠিয়ে নিয়ে আসার সময় জ্ঞান ছিলো।উপরে উঠে কাশতে কাশতে সেন্সলেস হয়েছে।”

রিঝ পাশ ফিরে গরম চোখে তাকায়।এতো কিছুর মাঝে সে ভুলেই গেছে তার চশমা ভেঙ্গে গেছে।রিঝ ভাঙ্গা কাঁচের মাঝ থেকে ইয়াজকে দেখে।তারপর তুতুলকে আরো টেনে নিয়ে এসে বলল,
“ আপনি এখানে কি করছেন??আমার হাতে একবার মার খেয়ে শিক্ষা হয় নি??তখন শুধু একটা হাত ভেঙেছি।এবার সম্পূর্ন শরীর ভেঙ্গে দিবো।আমি কে আপনি জানেন না??কল্পনায়ও ভাবতে পারবেন না এমন কিছু আমি এই মুহূর্তে করতে পারবো আপনার সাথে।সো তুতুলের এবং আমাদের জীবন থেকে দূরে থাকবেন।”

পাশ থেকে একজন এগিয়ে এসে বলল,
“ আরে ভাই আপনি দেখি উনারেই বোকছেন??উনিই তো বাঁচিয়েছে।উনি না থাকলে এই মেয়ে সমুদ্রের মাঝে ডুবেই মরতো।”

রিঝ ত্যাড়া চোখে তাকায় ইয়াজের দিকে।ইয়াজ তখন তুতুলের চোখের কোণের চুল সরিয়ে দিতে হাত বাড়ায়।রিঝ খপ করে হাত ধরে।শক্ত করে সে হাত চেপে ধরে।ব্যাথায় মুখ কুঁচকে নেয় ইয়াজ।পানি নিয়ে এসেছে।রিঝ হাতটা ছুড়ে দেয়।তুতুলের চোখে মুখে পানি মারে।তুতুল টিপটিপ করে তাকায়।চোখ খুলে উঠে বসে ধীরে ধীরে।রিঝ পানি খাইয়ে দেয়।তুতুল প্রথম পানি মুখে নিয়ে ফেলে দেয়।নোনাপানি খেয়ে গলা,নাক,সব জ্বলে যাচ্ছে।তুতুল যখন একটু ভালো অনুভব করছিলো রিঝ প্রশ্ন করে,
“ তুমি তো ওই দিকে ছিলে।এদিকে এসেছো কখন??এবং কেনো??”

তুতুল নিজের দিকে তাকায়।জমা ভিজে আছে,মুখে হাত দেয়,মুখে কেমন যেনো আঠালো আঠালো বালি লেগে আছে।চোখ জ্বলে উঠে।মাথার চুলগুলোতে বালি লেপ্টে আছে।ঠোঁট উল্টে তুতুল বলল,
“ ছিঃ দেখেন কেমন হয়ে আছে আমার অবস্থা।এতো বালি??”
“ প্রশ্ন এটা ছিলো না।এই দিকে কি করছিলে??আর এতো দূরে কেনো গেলে??তুমি তো সাঁতার পারো না।তারপরও??কেনো??”

চোখ বুঝে খুলে।এবার ভীতু গলায় বলে,
“ আসলে ওই দিকে আপনার সামনে আমি মজা করতে পারছিলাম না।তাই এ দিকে চলে এসেছি।আর আমি মনে করেছি আমি সাঁতার শিখে গেছি তাই একটু দূরে যেতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পায়ে কি যেনো লাগে আমি নিচের দিকে তলিয়ে যাই।তারপর অনেক পানি খাইছি।আপনি বিশ্বাস করবেন কি যে বাজে খাইতে এই পানি।ছিঃ।আল্লাহ্।”

তুতুল আহাজারি করে উঠে।হাত নাচিয়ে সমুদ্রের পানির ব্যাখা দিতে ব্যস্ত সে।রিঝ সিরিয়েস ভাব নিয়ে সব শুনে।তুতুলের দিকে একবার তাকায়।ভিজা সাদা টি-শার্ট তাই শরীর দৃশ্য মান হয়ে আছে।ভাজ,খাজ সব বুঝা যাচ্ছে।রিঝ চারপাশে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে।কুনজর নিয়ে তাকিয়ে আছে অনেক ছেলে।নিজের সাদা শার্ট খুলে তুতুলকে দেয়।বলে,
“ এটা পড়ে নেও।সব বকবক শুনবো।একদম সব।আগে এটা পরো।”

তুতুল শার্টের দিকে তাকিয়ে থাকে।অবাক সে।রিঝ সমুদ্রের পানিতে লেপ্টে বসে।সবাই এখনো দাড়িয়ে দেখছে তাদের।যেনো সত্যিই মুভি চলছে।তুতুল ভারী অবাক গলায় বলল,
“ আমি এটা কিভাবে পড়বো??আর এটা কত বড়।আমার হাটুর নিচে হবে।আর যা ঢোলা।আমি এটা পড়বো না।নেভার।”

তুতুল শার্ট রিঝের দিকে দেয়।রিঝ একটা হাঁটু ভাজ করে বসে।শার্ট তুতুলের হাত থেকে নিয়ে হাত টেনে নেয়।তুতুলকে অবাক করে শার্টের হাতা তুতুলের হাতে পরিয়ে দেয়ে।সম্পূর্ন শার্ট পরিয়ে বোতাম লাগিয়ে দেয়।চুল টেনে শার্টের ভেতর থেকে বের করে পিছনে ছড়িয়ে দেয়।তারপর শান্ত গলায় বলল,
“ তারপর???”
“ হোয়াট তারপর??এটা মানে কি??শার্ট পরে আমাকে কেমন মোটু মোটু লাগতাছে।ছিঃ।”
“ তুতুল তোমার কি মনে হয় না তুমি অতিরিক্ত মাত্রায় কথা বলতে পারো??”
“ অবশ্যই আমি জানি এটা।আর কথা বলতে পারাও একটা শিল্প।সবাই এটা পারে না।যেমন আপনি।”
একটু থেমে তুতুল বলল,
“ আপনার চশমা ভাঙ্গলো কিভাবে??যেভাবেই ভাঙ্গুক আমার কি।আমি পানিতে অনেক সময় ছিলাম তাই আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।আপনি তো জানেন না আমার ক্ষুধা লাগলে পেটে ব্যথা,মাথা ব্যথা সব এক সাথে করে।চলেন।”

রিঝ বিড়বিড় করে বলে,
“ আর প্রেমে পড়লে মানুষের বুকে,হৃৎপিন্ডে প্রচন্ড ব্যথা করে।ভালোবাসার ব্যথা ভয়ঙ্কর!!”
“ কিছু বললেন?”
“ না।চলো।”
তুতুল এতসময়ে আশেপাশে খেয়াল করে।সবাইকে দেখে সে চমকে যায়।বিশেষ করে ইয়াজকে দেখেই মাথা গরম হয়। কিছু বলে না।সে এমন ব্যক্তির সাথে কথাই বলতে চায় না।সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে চেঁচিয়ে উঠে।সবাই তার দিকে তাকায়।তুতুল চোখ ছোট করে।মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভাবে বেড়িয়ে আসে একটি নাম,
“ রেয়ানা আপু!!”

রিঝ তুতুলের দিকে তাকিয়ে ছিলো।রেয়ানা নামটা শুনে মাথা তুলে পাশে তাকায়।রেয়ানা দু’হাত দুই গালে রেখে দাড়িয়ে আছে।চোখ সাধারনের চেয়ে বড়,মুখটা হা করে আছে সে।চরম উত্তেজিত গলায় সে চেঁচিয়ে বলল,
“ ও মাই গড!ও মাই গড! রিঝ তুমি??আই কান্ট বিলিভ ইট!!”

তুতুল চোখ ছোট থেকে আরো ছোট করে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে।মেয়েটা এতো ছোট জামা কেনো পরে??সে বুঝে না।যদিও সে অতো ভালো জামাটামা পরে না।তবে যথেষ্ট ঢেকে পরে।কিন্তু এই মেয়ে আল্লাহ!!তুতুল বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে নিলো।বিড়বিড় করে বলল,
“ এই পাগলের আবার আমদানি হয়েছে কোথা থেকে??”

নিজে বিড়বিড় করে সে নিজেই অবাক।আশ্চর্য!সে এই মেয়েকে প্রথম দেখায় যতটা পছন্দ করতো এখন হাজার গুনে বেশি অপছন্দ করছে।কেনো??একদম ভালো লাগছে না।সে যেনো এই মেয়েকে সহ্যই করতে পারছে না।গা জ্বলে যাচ্ছে দেখে।তুতুল অনুভব করে তার শরীর রি রি করে গরম হচ্ছে।চমকে যায় সে।ভারী আশ্চর্য!!রেয়ানা আরো কাছে এগিয়ে এসে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“ ওয়াও।ইউ আ’র লুকিং সো হট।”

তুতুল তরিৎ করে রিঝের দিকে তাকায়।গলায় ঝুলছে ভায়োলিনের ছোট লকেট।বুকের নিচ অবধি লম্বা সেই লকেট।মারাত্নক বডি।গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি,সাদা হাতে কালো পুতির বেসলেট গুলো ফুটে উঠেছে নিজ রূপে,বুকের খাজে খাজে জমে আছে পানি।বুকের একপাশে ট্যাটু করা।কালো রং দিয়ে করা হয়েছে।পার্মানেন্ট না।ভায়োলিনের ছবি আঁকা।তার পাশে লেখা” Beautiful bird”
তুতুল আগে কখনো রিঝের এমন খালি গায়ের দৃশ্য খেয়াল করে বা সামনে পরে দেখেনি।মোটা মোটা পেশি।ভিজা শরীর,চুল,মুখ।ফ্যাকাশে ঠোঁট।সব মিলিয়ে ভয়ংকর লাগছে।তুতুল দ্রুত মাছি তাড়ানোর মতো করে নিজের মুখের উপরে হাত নাচায়।চোখ সরিয়ে নেয়।চোখ উল্টে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়।তারপর রেয়ানার দিকে তাকায়।সে চোখ দিয়েই রিঝকে উধাও করে দিতে পারবে।তুতুলের মুখে রাগ।ফসফস করতে করতে সে দাঁতে দাঁত চাপে।আস্তে করে বলে,
“ সোনালি ভুতনী।”

আসমা শুনে।আরো পাশে এসে বলে,
“ কে??”

তুতুল খেয়াল করে না।আনমনেই বলে,
“ আর কে,সামনের ভুতনীটা ছাড়া আর কেউ না।”

আসমা প্রথমে চমকায়।পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“ এই মেয়েকে তুমি চিনো??”

তুতুল রেয়ানার চোখের ভাব ভঙ্গিতে ভারী অবাক।এই মেয়ের কি লজ্জা নাই??চরম অদ্ভুত ব্যাপার।আসমার কথা শুনে সে তাই বলে,
“ চিনি।রিঝ ভাইয়ার মা।”

আসমা চোখ বড় করে বলে,
“ হোয়াট??”
“ আরে আস্ত।উনি আসলে বাবু বাবু করে তো তাই বললাম।রিঝ ভাইয়ার কত মিনিটের যেনো গার্লফ্রেন্ড।পাগল,শয়তান ভুত একটা।সাদা ভুত।”

আসমা অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামায়।সে জানে সব।তাও বাজিয়ে দেখতে চায়।তাই আরো ঘেঁষে বলল,
“ এটাই রিঝের গার্লফ্রেন্ড??”

ক্ষেপা চোখে তাকায় তুতুল।রাগ নিয়ে কঠিন গলায় বিড়বিড় করে বলে,
“ আরে না।এই ভুতনীকে আর যাই হোক রিঝ ভাইয়া পছন্দ করতেই পারি না।চিপকালী একটা।সারা দিন চিরকাইতে চায়।দেখেন কেমন ঘেঁষতে চাইতাছে।”
“ কিন্তু তুমিই তো বললা ওর গার্লফ্রেন্ড আছে??”
“ আচ্ছে তো।কিন্তু সে স্পেশাল কেউ হবে।আরে রিঝ ভাইয়ার চয়েজ সম্পর্কে আমার ধারনা আছে।যদিও উনার পছন্দের জিনিস অনেক কম তবুও যা পছন্দ করে বেষ্ট।অনেক অনেক বেষ্ট।সব প্রান্তের মানুষ পছন্দ করতে পারবে এমন।তাই আর যাই হোক এমন সোনালি চিপকালী ভুত উনি পছন্দ করবে না আমি ১০০% শিউর।”

আসমা মিটমিট করে হাসে।তুতুল ক্ষেপে আছে।রেয়ানা কাছে আসতে চায়।রিঝ আগেই কয়েক কদম সরে ছিলো।আরো সরে বসে বলল,
“ দূর থেকে বললেই আমি খুশি হবো।”

রেয়ানার মুখটা চুপসে যায়।তাও খুশি খুশি মুখে বলে,
“ আচ্ছা।তা তুমি এখানে কিভাবে??ওয়াও।আমি তো ভাবতেই পারিনি।তোমার সাথে আবার দেখা হবে।আমি সত্যি দারুন খুশি।”

আকাশ কথার মাঝে নাক গলায়।ভেংচি মেরে বলে,
“ এতো খুশি হওয়ার কি আছে??ও তো আর টম ক্রুজ না।রিঝমান।সামান্য ইঞ্জিনিয়ার।আমিও তো ইঞ্জিনিয়ার কই আমারে দেখে তো কেউ এমন আকাশে বাতাসে খুশি হয় না।কেনো??”

রিঝ পিছনে হাত রেখে হাসে।সাথে সবাই।আকাশের দুঃখি মুখ দেখলে সবারই হাসি আসবে।কিন্তু দুঃখতো দুঃখই!রিঝ চুল ঠিক করতে করতে বলল,
“ আমারও তোমাকে দেখে ভালো লাগছে।নাইস টু মিট ইউ।তা একা এসেছো??”

রেয়ানার খুশিতে পাগলের মতো নাচতে ইচ্ছে করছে।নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সে সত্যিই লাফিয়ে উঠে।কন্ঠ অনেক উঁচুতে তুলে বলে,
“ ওয়াও কি সুন্দর করে কথা বলো তুমি।আমি তো তোমার কথায় নেশা খুঁজে পাই।সে নেশায় আমি মাতাল হয়ে পড়ছি।”
“ শুধু মাতাল কেনো হচ্ছেন??পারলে ডুবে মরেন।”

তুতুলের কন্ঠে প্রচন্ড রাগে।রিঝ নিজের চশমাটা নাকের ডগায় নিয়ে এসে তার মাঝ থেকে তুতুলকে একবার দেখে।তারপর আবার চশমা ঠিক করে।রেয়ানা বুঝতে না পারার ভঙ্গিতে বলে,
“ হোয়াট??”

তুতুল সাবধান হয়।হাসি হাসি মুখে বলে,
“ আসলে এই মরা সেই মরা না।আমি নেশার গভীরে তলিয়ে যেতে বলেছি।নেশা মানে তো নিশ্চুয়ই মদ ,ওয়াইন বা বিয়ারের কথা বুঝাচ্ছিলেন।সে হিসেবে তা পানির মতো তরল হয়।আর পানির মতো তরলে আপনি যদি মাতাল হতে চান তাহলে তো তাতে চুমুক দিতে হবে।চুমুকে ডুবের সাথে তুলনা করাই যায়।আর ডুব দিলে গভীরে তলিয়ে যাওয়া উঁচিত।আর পানির গভীরে গেলে মরাটা স্বাভাবিক।আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম।”

আকাশ রামিম হা হা করে হাসে।রেয়ানার কাছে সব কথা মাথার উপর দিয়ে যায়।তাই সে কিছু বুঝতে পারেনা।রিঝ ছোট শ্বাস ফেলে বলল,
“ তো তুমি এখানে একা এসেছো??”

রেয়ানা উত্তরে বলে,
“ না।মিফতা আমার বান্ধুবী হয় আর ইয়াজ ওর কাজিন এবং ফিয়ন্সে।ওদের সাথেই ঘুরতে এসেছি।ইয়াজের সমুদ্র ভালো লাগে।তাই প্রায় আসে।”

তুতুল শান্ত চোখে ইয়াজের দিকে তাকায়।তার এখনো মনে আছে,তাদের বেশির ভাগ পছন্দ মিলে যেতো।যেমন,তুতুলের সমুদ্র পছন্দ,ইয়াজেরও তাই।তুতুলের বিরিয়ানি পছন্দ,ইয়াজেও।তুতুল হাঁটতে পছন্দ করে না,ইয়াজও।তুতুলের প্রিয় রং সাদা ,ইয়াজেরও।তুতুলের প্রিয় ফুল কৃষ্ণচূড়া,ইয়াজেরই।এতো মিলের মাঝে মনটা মিললো না।আসলে সবাই মিল খুঁজে।এটা ভুল।সম্পূর্ন একুই মানসিকতার মানুষ হলেও সম্পর্কে মনের সাথে মনের মিলটা প্রয়োজন।সম্পর্ক,মায়া,অনুভুতি,সম্মান,ভালোবাসা মন থেকে হয়।মস্তিষ্কের এখানে কাজ নেই।পানির চপচপ শব্দ হয়।তুতুল সামনে তাকায়।রেয়ানা রিঝের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো।তুতুল উঠে একদম রিঝের গা ঘেঁষে বসে।আসমা উঠে তুতুলের পাশে বসে।তুতুলের গায়ের ধাক্কায় রিঝ সংযত হয়ে বসে।ভ্রু কুঁচকে তুতুলের দিকে তাকায়।রেয়ানার মুখটা ভোতা হয়ে গেছে।একটু সামনে এসে বসে।এই দিকে পানির ঢেউ আসে।মাঝে মাঝেই সবাই পানিতে একটু ভাসে।ইয়াজ চলে যায়।তার সাথে মিফতাকে দেখা গেলো না।ইয়াজের নাম শুনে সবাই চমকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।তারপর বুঝতে পারে আসল কাহিনী কি।তুতুল দাঁত কেলিয়ে হাসে।রিঝের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর রেয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ আমাকে চিনতে পেরেছেন আপু??”
“ হুম।চিনেছি।বিরক্তি কর জিনিসকে মনে রাখতে হয়।” রেয়ানার বিরক্তি গলা।তুতুল ফস করে উঠে।মনে মনে হাজার গালি দেয়।শয়তান মেয়ে!
রিঝ প্রশ্ন করে,
“ তারপর বলো,আর কোথায় যাবে??মানে ঘুরা কি শেষ??”
“ না।আমার বান্দরবানে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।কিন্তু ইয়াজের পাহাড় পছন্দ না।তাই সে এবং মিফতা যাবে না।তুমি যাবে??”
“ হুম।”
“ ওয়াও।আমি তোমাদের সাথে যাবো প্লিজ প্লিজজজজজ।”
রেয়ানা বিনিত কন্ঠে বলল।রিঝ কিছু সময় ভাবছে।তুতুল শুধু মনে মনে বলছে যাতে বলে না।রেয়ানার চোখ দেখে তার ইচ্ছে করছে খুলে ফেলতে।মেয়েটা বেয়াদপ।বেহায়া।রাগে নাকটা ফুলে উঠে।আসমা ফিসফিস করে বলে,
“ এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো??”
“ আরে দেখেন না কিভাবে তাকিয়ে আছে।যেনো জিন্দাই গিলে নিবে।ভুতনী।”
“ তোমার কি খারাপ লাগছে??”

তুতুল পাশ ফিরে তাকায়।আল্লাহ!কি সব বলছে সে।তুতুল নিজেকে ঠিক করে বলল,
“ আরে খারাপ তো লাগবেই বলেন,শত হোক আমার ভাইয়া হয়।এখন এই জায়গায় আমার ভাইয়া থাকলেও আমি এমন করতাম।কারন কোনো বোন কি চায় তার ভাইয়া একটা চিপকু চিপকালির পাল্লায় পড়ে তাকে গলায় ঝুলাক??চায় না তো।আমিও চাই না।”
আসমা চোখ সরিয়ে নিয়ে মুখ বাঁকা করে বলে,
“ বোন!”
রিঝ কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলে,
“ আচ্ছা ঠিক আছে যেতেই পারো।সমস্যা নেই।”

রেয়ানা লাফিয়ে উঠে।তুতুল নাক মুখ ফুলিয়ে রিঝের দিকে তাকায়।রিঝও তাকায়।ভ্রু বাঁকিয়ে চশমা ঠিক করে।রেয়ানা খুশিতে রিঝকে জড়িয়ে ধরতে যায় তখনই একটা বড় ঢেউ আসে।তুতুল পানির ভিতরে পা টা নিয়ে রেয়ানার পায়ের ভাজে ঢুকিয়ে দেয়।পায়ের সাথে পা লেগে ধপ করে পরে যায় রেয়ানা।সম্পূর্ন দৃশ্য রিঝ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দেখে।রেয়ানা পরে গেছে দেখে তুতুল হু হা করে হেসে উঠে।আকাশও হাসে।সবাই তাদের দিকে তাকাতেই তুতুল মুখ চেপে ধরে।হাসি থামায়।রিঝ উঠে দাড়ায়।হাত বাড়িয়ে দেয়।তুতুল ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে থাকে।রাগে সে উঠে যায়।লম্বা শার্ট হাঁটুর নিচে পরে।ঢোলা শার্ট।হাত গুলো হাতার ভিতরে।এতো লম্বা হাত যে তার হাত গুলো ভিতরেই রয়ে গেছে।তুতুলের কোঁকড়া চুলগুলো উড়ছে।কালো প্যান্ট একটু উপরে তুলে সে হাঁটে।সবাই তার পিছনে পিছনে আসতে চায়।রিঝ দেখে।তুতুলের কাজ গুলো তাকে ভারী অবাক করছে।আশ্চর্য!!তুতুল তো এমন কখনো করে না।তাহলে আজ কি হলো??রেয়ানা রিঝের হাতের দিকে তাকিয়েই ছিলো।খুশিতে হাত ধরতে পারছে না।তুতুল কিছু দূর যেতেই তার পা ধারালো ঝিনুকে লেগে কেঁটে যায়।তুতুল আর্তনাদ করে উঠে।পা ধরে বসে পরে।রেয়ানা হাতটা ধরতে যাবে তখনই রিঝ দৌড়ে তুতুলের কাছে চলে যায়।বাকি সবাই ও পিছনে পিছনে যায়।রিঝ তুতুলের পা ধরে।কাছে নিয়ে উত্তেজিত গলায় বলে,
“ কি দরকার ছিলো এদিকে আসার??ওহ স্যরি আমি তো ভুলেই গেছি তুমি তো তুমিই।যা মন চায় তাই করবে।গুড।তোমার থেকে এগুলোই আশা করি।তুমি এসব অদ্ভুত কাজ না করতে আমি বরং নিজেই বিস্মিত হয়ে পড়ি।ধন্যবাদ।আমাকে বিস্ময়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।”

রিঝ পা টা দেখে।বেশি কাঁটে নি।কিন্তু চিৎকার শুনে মনে হয়েছে অনেক কিছু হয়েগেছে।রিঝ পানি দিয়ে পা ভালো করে পরিষ্কার করে দেয়।তারপর তুতুলের দিকে কিছুক্ষণ একনজরে তাকিয়ে থেকে বলল,
“ একটু এদিয়ে এগিয়ে আসবে??”

তুতুল প্রথমে সবার মতো চমকায়।তারপর এগিয়ে আসে।রিঝ দু’হাতের ভাজে তুতুলকে নেয়।জড়িয়ে ধরে।চুলে হাত বুলায়।বুকের যে তুমুল শব্দ হচ্ছে তা তুতুলের কানের পর্দায় এসে লাগে।হাতের বাঁধন শক্ত।কিছু সময় এভাবেই কেঁটে যায়।সবাই মুগ্ধ চোখে দেখে।তুতুল একদম চুপ হয়ে কান পেতে শব্দ শুনে।তাকে একদম শান্ত বরফের মতো লাগছে।রিঝ তুতুলকে ছেড়ে দেয়।হাতের বাঁধন ছাড়া পেয়ে তুতুলের হুশ হয়।হঠাৎ সবার দিকে তাকিয়ে সে লজ্জায় লাল হয়।অদ্ভুত!!সে লজ্জা পাচ্ছে!!তুতুলের হাঁটতে কষ্ট হয় তাই রিঝ তুতুলকে কোলে তুলে নেয়।রেয়ানার দিকে তাকিয়ে তুতুল মুখ বাঁকায়।তার দারুন লাগছে রেয়ানার চেহারা।রিঝের গলা জড়িয়ে নেয় সে।রিঝ একবার তাকায়।মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে???রিঝ বুঝতে পারছে না।সবাই মিটমিট করে হাসে।আকাশ রেয়ানার কাছ ঘেঁষে বলে,
“ পোড়া পোড়া একটা গন্ধ আসছে।তুমি কি পাচ্ছো রেয়ানা??”

রেয়ানা রাগি চোখে তাকায়।আকাশ দায়সারা ভাব নিয়ে পিছয়ে যায়।ঠোঁট উল্টে বলে,
“ ফান করছিলাম।এমন করে তাকাছো কেনো??আমি কি কিছু করেছি??”

তুতুল পা নাচায়।তাকে দারুন খুশি দেখাচ্ছে।রিঝ প্রশ্ন করে,
“ তুমি রেয়ানাকে পা দিয়ে ফেলে দিলে কেনো??”

তুতুল চমকায়।ভারী অবাকও হয়।কথা লুকাতে ভাবটা এমন নেয় যে সে কিছুই জানে না।বলে,
“ কই??আমি কেনো এটা করবো??”
“ আমি দেখেছি।মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না।”
তুতুল মাথা উচিয়ে বুক ফুলিয়ে বলল,
“ যার জন্য করি চুরি সে বলে চোর।আরে আমি তো আপনাকে বাঁচাতে এটা করেছি।এখন আপনিই আমাকে এমন কথা বলছেন??কি যুগ পড়েছে আল্লাহ কারো ভালো করতে নেই।”

তুতুল আহাজারি করে।রিঝ সামনে তাকিয়ে হাঁটে।বলে,
“ আমাকে বাঁচাতে??কেনো??ও কি খুন করতে এসেছিলো??”
“ তা নয় তো কি।দেখেন ও আপনাকে জড়িয়ে ধরতো।নিশ্চুয়ই অনেক জোড়ে জড়িয়ে ধরতো।চোখ দিয়েই গিলে খেয়েছে।বুঝেন এবার।ফলে আপনার দম বন্ধ হয়ে যেতো।আপনি মারাও যেতে পারতেন।তাই বাঁচালাম।কিন্তু আপনার তো মরার ইচ্ছে।ঢং।হাত বাড়াই দিছেন।মরেন যান।আমি আর বাঁচাবো না।”

এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে ফেলে তুতুল।হৃৎপিন্ডটা খুব শব্দ করছে।তুতুল একটা হাত গলা থেকে এনে বুকে রাখে।বাপরে।কি সব করছে সে।পাগল হয়ে গেলো না কি?? আল্লাহ!!
রিঝ পালটা প্রশ্ন করে।বলে,
“ আ’র ইউ জেলাস??”

তুতুল চকিতেই তাকায়।একদম নাকঁচ করে বলে,
“ না।মোটেও না।জীবনেও না।আমি কেনো জেলাস হবো??আমি কি পাগল না কি??আর এই কথাটা উঠছেই বা কেনো??আপনি কিন্তু উল্টাপাল্টা বুঝছেন।আমার ফিয়ন্সে ইয়াজের কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড তাকে জড়িয়ে ধরলেও আমি জেলাস হতাম না।উল্টা বলতাম চাইলে নিয়ে যেতে পারো।আসলে জেলাসি প্রোগ্রাম আমার মাঝে একদমই নেই।এটা কি আমি তো জানিও না।আর আপনার জন্য জেলাস??মরে গেলেও না।”
“ কুল তুতুল শান্ত হও।আমি এমন কিছুই বলছি না।মজা করছি জাস্ট।”
“ এমন মজা একদম করবেন না।আমার পছন্দ না।যত সব।”
তুতুল জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।রিঝ ঠোঁট কামড়ে হাসে।তুতুলের তো নিজের প্রতিই রাগ লাগছে।সে কি সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছে??
“ তুমি মনে হয় প্রথম নারী যে নিজের হাজবেন্ড কেও দান করতে পারবে।”

তুতুল এবার প্রচন্ড রেগে আছে।রিঝ চুপ করে যায়।ঠোঁটের হাসি চমৎকার!ভারী চমৎকার!তুতুল রাগ ঠেলে মুগ্ধ হয়ে দেখে।ইসস এতো চমৎকার কেনো মানুষটা!!

#চলবে…………
রি-চেক করা হয় নি।আমি কেনো গল্প দেরি করে দিচ্ছি আশা করি বলতে হবে না।আমার ভালো লাগে না এসব বলতে।বুঝে নিবেন।আজকে অনেক কষ্টে লিখছি।মাথা ভনভন কতাছে।তবুও দিলাম।অনেকে দেখি অপেক্ষা করছে।ছোট পর্ব।কিন্তু কিছুই করার নেই।এই বছরটা সত্যি আমার জন্য ভয়ংকর।দোয়া করবেন একটু সবাই।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here