নিস্বার্থ ভালোবাসা পর্ব ৮+৯

#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:৮+৯
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া

পাঁপড়ি কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। পিছন থেকে কেউ পাঁপড়ি কাধে হাত রাখে। পাঁপড়ি তাকে জড়িয়ে ধরে হো হো করে কেঁদে দেয়।

পাঁপড়ি:ও কি বুঝে না ওকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট। ওতো আমাকে ভালোবাসে তাহলে কেনো ক্ষমা করছে না। একটা ছোট ভুলের কাছে তার ভালোবাসা তুচ্ছ হয়ে গেলো।

শুভ্রতা: প্লিজ তুই শান্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে।

পাঁপড়ি: কীভাবে শান্ত হবো ভাবি। আমি যে আর পারছি না এই কষ্ট চেপে রাখতে। কিচ্ছু ঠিক হবে না।

শুভ্রতা পাঁপড়িকে ধরে কোনোমতে বাসায় নিয়ে।

—————————-

শুভ্রতার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে রিদ। রিদের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। বোনের কষ্ট সে আর দেখতে পারছে না। কিন্তু সেও তো নিরুপয়ার তার তো কিছু করার নাই। দেখতে রিদ আর শুভ্রতার যাওয়ার সময় হয়ে যায়। এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা আর রিদ। আর কিছুক্ষণ পরে তাদের ফ্লাইট।

—————————-

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে রিদ আর শুভ্রতা। কিছুক্ষণ আগেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে লন্ডনে এসে পৌছায়।
এয়ারপোর্টে থেকে একটা গাড়ি নিয়ে চলে আসে তাদের জন্য বুক করা হোটেলে। রিসেপশন থেকে রুমের চাবি নিয়ে তারা রুমে চলে আসে। রুমে এসে শুভ্রতা অবাক হয়ে চারপাশে দেখছে। সম্পূর্ণ রুম শুভ্রতার পছন্দ মতো সাজানো।

রিদ: ম্যাডাম পছন্দ হয়েছে?

শুভ্রতা: রুমটা এতো সুন্দর করে সাজানো পছন্দ না হয়ে উপায় আছে।

রিদ: অনেকটা পথ জার্নি করে আসছো যাও ফ্রেশ হয়ে এসে রেস্ট নাও।

শুভ্রতা মাথা দুলিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

এতোটা পথ জার্নি করাই দুজনই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই ফ্রেশ হয়ে এসেই দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে।

—————————-

বিকেলের দিকে শুভ্রতার ঘুম ভাঙ্গে। শুভ্রতা একটু নড়তেও পারছে না। রিদ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। শুভ্রতা রিদকে হালকা করে ধাক্কা দেয়। রিদ ছাড়া বদলে শুভ্রতাকে আরো শক্ত জড়িয়ে ধরে। এবার একটু জুরে ধাক্কায় দেয়। কিন্তু এক চুলও নড়াতে পারে না ওল্ঠে রিদ শুভ্রতার গলায় মুখ গুঁজে দেয়।

শুভ্রতা: কী হচ্ছে রিদ আমাকে ছাড়ো।

রিদ: হুশশ কোনো কথা নয়। আমি অনেক টায়ার্ড তাই ঘুমুতে দাও।

শুভ্রতা: তুমি ঘুমাও আমাকে ছাড়ো।

রিদ: ডোন্ট ডিস্টার্ভ মি।

রিদ শুভ্রতাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। রিদের ঘুম ভাঙ্গে ৭ টার দিকে। রিদ দেখে শুভ্রতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রিদ শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। ঘুমের ঘুরেই শুভ্রতা রিদের গলা জড়িয়ে ধরে। রিদ বেলকনির সোফায় বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার মায়াবীনির দিকে। মৃদু বাতাসে শুভ্রতার চুলগুলো এলোমোলো হয়ে শুভ্রতার চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে। শুভ্রতা চোখ মুখে বিরক্তে ভাব। রিদ হালকা হেসে শুভ্রতার মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। শুভ্রতার কপালে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ ছুঁয়ে দেয়। ঘুমের মাঝেই রিদের ছোঁয়া পেয়ে শুভ্রতা কেঁপে ওঠে। শুভ্রতা পিট পিট করে চোখ খুলে। রিদ শুভ্রতার চোখের পাতায় ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।

রিদ: ঘুম ভাঙলো আমার মায়াবিনীর।

শুভ্রতা আরেকটু টাইট করে রিদের গলা জড়িয়ে ধরে।

শুভ্রতা: হুম।

রিদ: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে মাই লাভ।

শুভ্রতা: কী সারপ্রাইজ?

রিদ: সারপ্রাইজ বলে দিলে কী সারপ্রাইজ থাকে। একটু ওয়েট করো নিজেই দেখতে পাবে।

শুভ্রতা: আর কতক্ষণ আমি আর ওয়েট করতে পারছি না।

রিদ: ওয়ান, টু, থ্রি।

রিদ শুভ্রতার চোখের ওপর হাত সরিয়ে নেই। ইশারায় সামনে তাকাতে বলে। শুভ্রতা একবার চোখ খুলে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয় শুভ্রতা অবাক হয়ে যায়। কারণ শুভ্রতার সামনে শত শত ফানুস উড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা ফানুসে লেখা হেপি বার্থডে মাই লাভ। তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এটা রিদের কাজ।

রিদ: হেপি বার্থডে শুভি। (শুভ্রতার কানে কানে ফিসফিস করে বললো)

শুভ্রতা: আমার তো মনেই ছিল না আজকে আমার বার্থডে।

রিদ: আপনার মনে রাখতে হবে না আমি মনে রাখলেই চলবে। এখন রুমে চলো।

শুভ্রতা: আরেকটু থাকি না। আমার অনেক ভালো লাগছে।

রিদ: তোমার জন্য আরো সারপ্রাইজ আছে।

শুভ্রতা: কী সারপ্রাইজ?

রিদ:রুমে চলো দেখতে পাবে।

রিদ শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দেয়। রুমের ভিতর ঢুকতেই তাদের ওপর ফুলের বর্ষণ হতে শুরু করে। শুভ্রতা চোখ চারদিকে ঘুরিয়ে ডেকোরেশন দেখছে। ফুল, বেলুন, লাইট দিয়ে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। সামনে একটা টেবিলে শুভ্রতার ফেবারিট চকলেট কেক রাখা। কেকটা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।

শুভ্রতা: এগুলো কখন করলে তুমি।

রিদ: চুপপপ। ফিল দিস মোমেন্ট।

রিদ শুভ্রতাকে বেডের সামনে নিয়ে দাঁড় করায়। শুভ্রতার হাতে একটা প্যাকেট দেয়। ইশারায় বলে চেইন্জ করে আসতে। শুভ্রতা চেইন্জ করে এসে দেখে রিদ তার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সাদা রংয়ের পাঞ্জাবি পড়ছে। রিদ আর শুভ্রতা দুজনকেই দেখতে অপরুপ লাগছে। দুজন দুজনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। কেউ কারো কাছ থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।

রিদ শুভ্রতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

রিদ: আমার মায়াবতীকে সাদা শাড়ীতে অপরূপ লাগছে। মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা পদ্ম ফুল। তোমাকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে তুমি নিজেও জানো না। মে আই।

রিদ শুভ্রতার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দেয়। আচমকা সব লাইট অফ হয়ে যায়। তারা দুজন চমকে ওঠে। হঠাৎ অনেক জুরে জুরে গুলির আওয়াজ আসতে থাকে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here