কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ৮+৯

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৮.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
দুঃখ যে কি জিনিস তুতুলকে না দেখলে বুঝা মশকিল।সে গভীর কষ্ট নিয়ে দাড়িয়ে আছে।তাও এক পায়ে দাড়িয়ে।হাতে বই নিয়ে পড়ছে।এতো সময় নিয়ে পড়েও অনেক কিছু বলতে পাড়েনি।তাই শাস্তি সরূপ তাকে এখন এক পায়ে দাড়িয়ে থাকতে হবে।কান্না পাচ্ছে খুব।রিঝ মনের মাধুরি মিশিয়ে বই পড়ছে।এতো কিভাবে কেউ পড়তে পারে তুতুলের জানা নেই।রিঝ ভাইকে পারলে সে যাদুঘরে সাজিয়ে রাখবে।মানুষ এসে এসে এই ভয়ংকর প্রানীকে দেখবে।মজার হবে ব্যাপারটা।রিঝ বাম হাতে চশমাটা ঠিক করে তুকুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ পা নামিয়েছো কেনো??”

রিঝের কথায় তুতুলের রাগ আরো বেড়ে গেছে।রাগে ফস ফস করতে করতে সে বলল,
“ আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো রিঝ ভাই।”
“ আগে পা তুলো।এক ঘন্টায় ও পড়া মুখস্ত করতে পারো না!কেমন প্রানী তুমি??পড়ো।” রিঝের ধমনের কন্ঠ শুনে তুতুল আবার পড়া শুরু করে।আয়শা রহমান তুতুলের রুমের কাছে আসতে আসতে তুতুল আম্মা বলে ডাক দেয়।সাথে সাথে তুতুল পা নামিয়ে দিবে এক দৌড় তার আগেই রিঝ কড়া চোখে তাকিয়ে বলে,
“ আগে পড়া।”

আয়শা রহমান রুম আসে।তুতুলকে একপায়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে চমকায়।তুতুলের পাশে এসে ভারী অবাক হওয়া কন্ঠে বললেন,
“ আম্মা এভাবে দাড়িয়ে আছ কেনো??”

তুতুল সুযোগের সৎ ব্যবহার করলো।কাঁদো কাঁদো সুরে বলল,
“ কাকিআম্মু রিঝ ভাই।”

বলেই থামলো।পা দেখিয়ে বলল,
“ আমার পা ব্যথা করে।তোমার ছেলেরে বলো আমারে পা নামাইতে দিতে।”

আয়শা রেগে যান।ভ্রু দু’টি তীক্ষ্ণ হয়ে বেঁকে যায় তার।ছেলেটা তার এতো কঠিন কেনো তিনি বুঝেন না।এতো টুকু বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে দাড় করিয়ে রেখেছে??রাগে তার মাথাই গরম হয়ে উঠে।গলায় তেজ নিয়ে ছেলেকে ধমকে বলেন,
“ এগুলো কি??তুই ওরে এভাবে দাড় করিয়ে রেখেছিস কেনো??সাহস তো কম না তোর??আম্মা পা নামাও।”

তুতুল দ্রুত পা নামায়।আহা কি শান্তি।সৃষ্টি কর্তা সব হিসেব করে মানুষকে দিয়েছে।আজ তার এক পায়ের মানুষগুলোর জন্য কষ্ট হচ্ছে।আহারে।বেচারারা।রিঝ আয়শা রহমানের দিকে তাকায়।তুতুল আহ্লাদিত হয়ে ভেজা কন্ঠে অভিযোগ করে,
“ কাকিআম্মু তোমার ছেলে কি অত্যাচারটাই না করেছে জানো না।আমাকে পুরা বিশ মিনিটেরও বেশি সময় এভাবে দাড় করিয়ে রেখেছে।এর বিচার চাই আমি??”
“ পড়া না পড়লে কি সম্মান জানাতাম তোমার আম্মারে?” রিঝের কঠিন কন্ঠ।
“ কাকিআম্মু দেখছ কেমন করে চোখ বড় করে তাকাই আছে।”
“ রিঝ তুই আর কখনো আম্মারে পা তুলে দাড়াতে বলবি না।তাহলে থাপ্পড় খাবি।”
আয়শার দৃঢ় কন্ঠ

রিঝ সরু চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।তুতুল বেশ মজা পাচ্ছে।চোখ সরিয়ে বইয়ের পাতায় মন দেয় রিঝ।তুতুল আয়শাকে জড়িয়ে ধরে।আজ অনেক মাস পরে আয়শা রহমান তুতুলদের বাসায় এসেছে।তুতুল আদরী গলায় বলল,
“ তুমি অনেক খারাপ কাকিআম্মু।”

আয়শা হেসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
“ কেনো??”
“ কত দিন পরে এসেছ।তাই।”
“ তার জন্য দুঃখিত।তবে এসেছি যখন মজার খবর আছে আমার কাছে।”
আয়শার কথায় তুতুল উল্লাসিত হয়ে বলল,
“ বলো বলো।”
“ আনাসের বিয়ের কথা বলবো।”

তুতুল চোখ তীক্ষ্ন করে তাকালো।আয়শা আবার বললেন,
“ তোমার আম্মুর সাথে কথা বলবো।রুচিকার সাথে বিয়ে।তারা একে অপরকে পছন্দ করে।রুচিকাদের বাসায় যাবো।”

তুতুলের খুশিতে পাগল পাগল অবস্থা।লুচি আপুর বিয়ে !!ভাবতেই আনন্দে খুশিতে তার নাচতে ইচ্ছে করছে।আয়শা আর তুতুল রুম থেকে বাহিরে যেতে নেয়।রিঝ বইয়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
“ পড়াগুলো মুখস্ত চাই।”

তুতুল পিছনে মাথা দিয়ে বলল,
“ আপনি চাইলেই আমি দিমু না কি??হি হি।টা টা।”

রিঝ বইয়ের পাতা থেকে মুখ সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলো।মাথা ঘুরিয়ে দেখতে দেখতেই তুতুল উধাও।থুতনিতে হাত রেখে রিঝ আপন মনে হাসে।আর বিড়বিড় করে,
“ পাগলী একটা।”

মায়ের আর কাকিআম্মুর মাঝের দুরত্ব দেখে ভারী অবাক হলো তুতুল।জন্ম থেকে দেখেছে দু’জনের মাঝে বোনের মত সম্পর্ক।তবে আজ দুরত্ব এতো বেশি কেনো??আমিনা আগে এগিয়ে আসে।সোফায় আয়শার পাশাপাশি বসে।আয়শার বাম হাত নিজের হাতে টেনে নেয়।আয়শা একটু অবাক হয়ে আছে।আমিনা অপরাধীর মত করে বললেন,
“ আয়শা আপা আমাকে মাফ করে দেন।সে সময় আমি নিজের কথাই বেশি ভাবেছি।আপনারটা শুনি নি।তাই আজ সব এলোমেলো হয়ে গেছে।কারো মনে কষ্ট দিয়ে সখ পাওয়া যায় না।”

আয়শা নরম হলো।হাসার চেষ্টা করে হাতের উপরে হাতে চাপা দিয়ে বললেন,
“ পুরানো কথা আমি মনে রাখিনা এটা তো তুই জানোছ আমু।তুইও সব ভুলে যা।যা হওয়ার সবই ভাগ্য।ভাগ্যে যা থাকে তাই হবে।তবে মানুষ চেষ্টা করলে কিছু বদলানো যায়।এখন ভাগ্যে যা হয়েই গেছে তা ভুলাই উত্তম।”

আমিনা কান্নায় আটকে আসা গলায় বলল,
“ আপনি কি আমাকে মাফ করেছেন আপা??”
“ আরে আরে মাফের কথা আসে কই থেকে।তুই আমার ছোট বোনের মত।আগেই বলছি।এখন এসব ভুলে যা।নতুন কথা শুন।”

আমিনা চোখের পানি কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছে।ঠোঁটে হাসি ঝুঁলিয়ে বলে,
“ বলো আপা।”
“ শুন আনাসের জন্য তোর ভাইয়ের মেয়ের জন্য বলতাছি।তুই কি বলছ??”

আমিনা দারুন খুশি হয়ে বলল,
“ কি বলো আপা তাহলে তো ভালোই।আমাদের আনাস হিরার মত ছেলে।ও”

আমিনার কথা কেড়ে নিয়ে তুতুল কৌতুহলি কন্ঠে বলল,
“ কই আম্মু আনাস ভাইয়ার গায়ে তো আমি কোনো হিরাই দেখি না।দেখলে কিছু নিয়া নিতাম।বড় লোক হয়ে যাইতাম।”

তুতুলের কথায় আয়শা হাসলেন।আমিনা মেয়েকে চোখ রাঙ্গানী দিয়ে বললেন,
“ সব সময় কথার মাঝে ঢুকবি না।বড়রা কথা বললে ছোটরা চুপ থাকতে হয়।”

তুতুল মুখ ঘুরিয়ে টিভির দিকে তাকালো।এদের আজাইরা কথায় সে থাকতেও চায় না এমন ভাব নিলো।সে বিয়ের প্ল্যানিং করছে।রিঝ পিছন দিয়ে যাওয়ার সময় তুতুলের খোলা চুলের কয়েকটা ধরে টান দিলো।তুতুল চেঁচিয়ে পিছনে তাকাতে তাকাতেই রিঝ বাসার বাহিরে চলে গেছে।রাগে শরীর জ্বালা করছে তুতুলের।বিড়বিড় করে বলে,
“ শয়তার খারাপ লোক।প্রতিশোধ তো নিবোই।দেইখা নিছ।”
_______________________
তুতুল হেলে দুলে রহমান বাড়িতে পা দেয়।বাড়িতে ঢুকেই দেখে অনেক মানুষ।আজ এতো মানুষ কেনো এলো??হঠাৎ মনে পরে আজকে তো আনাস ভাইয়ার বউ দেখতে যাবে।ভালো কথা।তবে এরা এতো সকাল সকাল হাজির হয়েছে কেনো সেটাই তুতুল বুঝলো না।এদের সামনে তুতুল পড়তে চায় না।রিঝের ফুফিরা মারাত্নক মহিলা।তিন ফুফির মাঝে বড় ফুফিই একটু ভালো।বাকি দু’জন বাপরে!!তুতুল উল্টা পায়ে নিজের বাড়ির দিকে যেতে চায়।আদ্রি পিছন থেকে হাত টেনে ধরে।তুতুলের গালগুলো টেনে দিয়ে বলে,
“ তুল সোনা কই যাইতাছস??”

সবার দিকে একবার চোখবুলিয়ে তুতুল আদ্রির কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“ আপু গো ফুফিরা আসছে মানে বুঝো??ভূমিকম্প!!এরা আমারে দেখলেই কিছু আজাইরা কথা বলবে আর আমি সহ্য করতে পারমু না।ব্যস আজকে আর বউ দেখতে যেতে হবে না।আমি বরং যাই।”

আদ্রিয়া তুতুলের হাত টেনে নিয়ে আসে।রিঝের ফুফিরা জহুরি চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।রায়হান এসে তুতুলকে জড়িয়ে ধরে।অনেক ছোট তাই পা পর্যন্তই হয়।আদ্রি তুতুলকে উপরের দিকে পাঠিয়ে দেয়।রায়হানের হাত ধরে তুতুল উপরে উঠে যায়।কাজ দেয়।রিঝকে উঠানোর।তুতুল প্রথমে বিরক্ত হয় পরে শয়তানী বুদ্ধি নিয়ে উপরে উঠে যায়।রিঝের ছোট ফুফি রাহেলা বেগম আয়শার পাশে এসে বললেন,
“ এই মেয়ের না বিয়ে ভেঙ্গে গেছে??”

আয়শা রহমান কিছু বললেন না।রাহেলা আবার বললেন,
“ ছেলেটা না কি বিয়ে করবে না কইছে??”
“ ছেলেটা ভালো না আপা।”

রাহেলা মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
“ এখন তো বলবেই ছেলে ভালো না।আসলে মেয়ের দোষ বুঝলা।”

আয়শা রেগে তাকালেন।কঠিন করে বললেন,
“ সব সময় মেয়েদের দোষ দেখেন কেনো বলেন তো??দেখেন আপা আপনারে আমি সম্মান করি।কারন বয়সে আপনি বড়।কিন্তু এভাবে তুতুলকে নিয়ে কিছু বললে আমি মেনে নিবো না।অন্য কথা থাকলে বলেন।তা না হলে আমার অনেক কাজ আছে।”

মিসেস রহমান সরে গেলেন।তার ননদদের কার্যক্রম তার একদম ভালো লাগে না।সব সময় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ায়।নিজের মেয়ে যে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে সেদিকে রাহেলা বেগমের চিন্তা নেই।অন্যের মেয়ের বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গলো?দোষ মেয়ের এগুলো নিয়ে যত মাথা ব্যথা।স্বামীর বোন বলেই তিনি এদের সম্মান করেন।তা না হলে দুই একটা কথা মুখের উপরেই বলে দিতেন।

তুতুল পা টিপে চিপে হাঁটে।ছোট রায়হানও তাল মিলায়।রিঝের রুম দু’টি অংশে বিভক্ত।দরজা দিয়ে ঢুকতেই একটা রুম চোখে পরে।সে রুমে শুধু সোফা আর বইয়ের বিশাল বিশাল তাক।সোফার পাশেই আর এক রুমের দরজা।বিশাল দরজা।তার ভেতরে আর একটা রুম।তুতুল দরজার কাছে এসে উঁকি দেয় প্রথম রুমের ভেতরে।আজ অনেক মাস পরে রিঝের রুমে আসা।রিঝের রুমটাকে তুতুলের মনে হয় ব্লাক হলো।সম্পূর্ন রুম জুড়ে কালো আর কালো।দেয়ালের রং কালো।বিছানার রং কালো।লেদার গুলো কালো।গোল সোফাগুলো কালো।বুকসেলপ গুলো কালো।পর্দা কালো।কার্পেট কালো।রুমের যত ফার্নিচার আছে সব কালো।এ যেনো কালোর সাগর।তুতুলের মাঝে মাঝে মনে হয় রুমে ঢুকলেই হারিয়ে যাবে সে।সব কেমন অন্ধকার দেখতে।রুমের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে রিঝ সামনের সোফায়।তুতুল “ও শেট” বলে শব্দ করে।ছোট রায়হান সেই তালে “ও শেট”বলে হাসে।তুতুল রায়হানের কান্ডে হাসে।পানি মেরে ঘুম উড়াবে ভেবেছিলো সে।কিন্তু রিঝ আগেই উঠে গেছে।হতাশ হয়ে চলে যেতে চায় তুতুল।সোফায় আধাশোয়া অবস্থায় থেকে রিঝ ডাক দেয়,
“ প্ল্যান ফ্লপ খেয়েছে বুঝি??”

তুতুল চমকে পিছনে তাকায়।রিঝ শুয়ে আছে।বুকের উপরে ল্যাপটপ।গায়ে কালো টি-শার্ট।থ্রি-কোয়াটার কালো প্যান্ট।ভাইয়া সব বুঝে যায় কিভাবে সে জানে না।সব সময় কিছু করতে যাবে তার আগে সে ধরা খায়।শাস্তি পাওয়ার ভয়ে তুতুল ঢোক গিলে বলল,
“ আরে কিসের প্ল্যান ভাইয়া।আপনার রুমে কি আসতে পারি না??”

রিঝ ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে ভারী অবাক হওয়ার ভান করে তাকালো।যেনো সে ভারী অবাক হয়েছে।চোখের চশমাটা খুলে আসে।রিঝ যত্ন করে চোখে পড়ে নেয়।চোখ একবার বুজে আবার খুলে।তারপর জিজ্ঞেস করল,
“ আজকে কি সূর্য উঠেছে তুতুল??”

তুতুল আনমনেই জবাবে বলল,
“ সূর্য তো প্রতিদিনই উঠে।সূ্র্য না উঠলে দিন কেমনে হবে?”
“ সেটাই সেটাই।”

রিঝ আবার কাজে মন দেয়।আজ অফিসে যাবে না ।তাই বাসায় বসেই কিছু কাজ করছে সে।
“ ভেতরে আসতে পারো।”
“ ওই বারের মত তাড়িয়ে দিবেন না তো??”

রিঝ চোখ তুলে চায়।মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
“ না।আর কখনো তাড়াবো না।শুধু পূর্বের ভুল আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে না করলেই হবে।”

তুতুল বুঝলো না।হা করে তাকিয়ে থাকলো।অনুমতি পাওয়া মাত্র রায়হান দৌড়ে রুমে ঢুকে।এই রুমটা তার খুব পছন্দের।কিন্তু ভয়ে আসে না।মামার জিনিস এদিক সেদিক হলে খুব চিল্লাফাল্লা করে।তাই ভয়ে আসে না।কিন্তু রুমটা তার এতো এতো প্রিয় যে সে নিজের বাসায় নিজের রুমের রংটা কালো করিয়েছে বাবাকে বলে।কিন্তু এই রুমের মত হয় নাই।তাই তার মন খারাপ।খুব মন খারাপ।রায়হান সুন্দর করে হেঁটে সামনের রুমের বিছানায় বসে পা ঝুলায়।তুতুলও ভেতরে বসে।এমন ভাব নিয়েছে দু’জনে যেন নতুন অতিথি।রুম জুড়ে যত লাইট আছে সব জ্বালিয়ে দেয় রিঝ।রুমটা এখন ঝকঝকে লাগছে।কালোর মূল সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে।দেখতে দারুন লাগছে।রায়হান ঘুরে ঘুরে দেখে।রিঝ উঠে ড্রয়ার থেকে বক্স ভর্তি বড় চকলেটের পেকেট থেকে দুইটা চকলেট নিয়ে রায়হানকে দেয়।খুশিতে রায়হান হাসে।এতো বড় পেকেট তার হাতেও আসে না।গালের সব কটি দাঁত বের করে সে হাসে।রিঝ কোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়।তুতুল ঘুরে ঘুরে দেখে।সামনের রুমে আসে।রুমটা নতুন দেখছে না সে।তবুও দেখছে।বিশাল লম্বা বইয়ের তাক।কাঠের মই দিয়ে উঠে বই নিতে হয়।তুতুল উপরের দিকে তাকায়।বইগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।কি মনে করে মই চড়ে বসে।উপরে উঠে থাক থাক মই বেয়ে।রিঝ ল্যাপটপ থেকে আড়চোখে তাকায়।তুতুল মইয়ের উপরে খালি জায়গায় বসে।পা নিচে ঝুলিয়ে দেয়।বই দেখে একটা একটা করে।পড়ার ইচ্ছে তার নেই।শুধু উপরের কভার দেখতে ভালো লাগছে।মাঝে মাঝে মাথা কাত করে রিঝের দিকে তাকাচ্ছে।ছোট রায়হান চকলেট নিয়ে ব্যস্ত।অনেক বই দেখে তুতুল বিরক্ত হয়ে নামর প্রস্তুতি নিচ্ছে।হঠাৎ কালো কাঠের কভারের একটা ডায়েরি চোখে পরে।গোপনে সামলে রেখেছে মনে হয়।তুতুল একবার রিঝের দিকে তাকায়।রিঝ মনোযোগী নিজের কাজে।ব্যস আবার উঠে ডায়েরি হাতে নেয়।আরাম করে বসে।কাঠের কাজ করা ডায়েরি।হার্ট বিট্ খোদাই করা কাজ।কালোর উপরে লাল লাল ছাপ।রহস্য রহস্য গন্ধ যেনো উপরেই লেগে আছে।তুতুলের চোখে মুখে উত্তেজনা।এ যেনো গুপ্তধন।ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টে সাদা পাতা দেখে তুকুলের সব উত্তেজনা উবে যায়।চোখে মুখে ফুটে উঠে সহ্য বিরক্তি।ভালো কিছু তো এই রুমে নেই।যা একটু রহস্য খুঁজে পেয়েছে তাও খালি।তুতুল ডায়েরি বন্ধ করতে চায়।সাদা পৃষ্ঠার নিচে কিছু একটা আছে।উল্টে দেখে।একটা ছবি!!!উপুত করে রাখা।ছবির পিছনের অংশ সাদা।কালো কালিতে তার উপরে অসম্ভব সুন্দর হাতের লেখা।ছোট ছোট বাংলা অক্ষরে লেখা ছোট একটা অংশ।তুতুল আগে মনে মনে পড়ে নেয়।মুগ্ধতায় হালকা হাসে।রিঝের দিকে তুকিয়ে ভ্রু নাচায়।হালকা কেশে নেয়।তারপর উচ্চ শব্দ বলে উঠে,
“ হাসির তালে ঝুমকো দোলে
রূপের বাহার বাড়িয়ে তোলে
ঢেউ খেলানো চুলের তালে
তোমার লালছে ঠোঁটে শুধু হাসিই ভালো লাগে।”

রিঝ লাফিয়ে উঠে।ল্যাপটপ ছুড়ে সোফায় রাখে।ছুটে আসে মইয়ের কাছে।কঠিন কন্ঠে বলে,
“ তুতুল নিচে এসো।”

তুতুল খুলখিল করে হেসে বলল,
“ আরে বাহ বাহ ভাইয়া কেয়া কাবিতা বানাইয়া!!”

রিঝ রেগে উঠে।ধমকের সুরে বলে,
“ নিচে নামতে বলেছি শুনতে পাচ্ছো না!!!নিচে নামো।”

রিঝের কন্ঠ অন্যরকম শুনাচ্ছে।তুতুল অবাক হয়।সে কি করেছে যে এতো রেগে যাচ্ছে??তুতুল ডায়েরির ছবিটা দেখতে যাবে তার আগেই রিঝ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
“ ভুলেও না তুতুল।ওটা রাখো।তা না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।রাখো বলছি।”
“ আচ্ছা বাবা রাখতাছি।এমন চেতেন কা?আজিব।গার্লফ্রেন্ড আছে ভালো কথা।গর্বের কথা।দেখাইলে কি খাইয়া ফেলমু??আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনার মতই হবে।জ্ঞানী আম্মা।ঢং।হুহ।”

তুতুল মুখ বাঁকা করে।ডায়েরি ঠেলে রাখে।বিড়বিড় করে বকবক করতে করতে নিচে নামে।উল্টাপাল্টা সিঁড়িতে পা রাখে।হুট করে ভুল সিঁড়িতে পা রাখতে যায়।আর ধপ করে নিচে পড়ে যেতে নেয়।তুতুল ভয়ে চিৎকার করে উঠে।রিঝের প্রথমে প্রচন্ড রাগ হয়।তাই সে ধরতে চায় না।পরে চিৎকার শুনে দ্রুত দু’হাতে জাপটে ধরে।তুতুল নিয়ন্ত্রন হারিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরে রিঝের বুকে।চোখমুখ খিঁচে তুতুল কেঁদেই ফেলে।একটা পা তার সিঁড়ির মাঝে আটকা পরেছিলো।তাতে হালকা ব্যথা।রিঝ বিস্ময়ে হতবাক।তুতুল যে পড়ে যাবে এটা সে বুঝেছে।কিন্তু যদি না ধরত তবে কি হতো ভেবেই তার নিজের প্রতি একটা চাপা রাগ হচ্ছে।তুতুল দু’হাতে শার্ট খামছে ধরেছে।রিঝ হুট করে টাল সামলাতে না পেরে দু’কদম পিছিয়ে যায়।বুক সেলফে হাত রাখে।তুতুল এভাবে তাকে আলিঙ্গন করবে সে কখনো ভাবে নি।মাঝে মাঝেই তুতুল তার কাছে আসে।জড়িয়েও ধরে কিন্তু এভাবে কখনো ধরেনি।এতো শক্ত করে তো কখনোই না!আলতো আলিঙ্গনেই সে তৃপ্ত ছিলো।এতো কঠিন জড়িয়ে ধরার কথা সে ভাবেনি!!কখনোই ভাবেনি!!মুহূর্তে শরীর শিরশির করে উঠে।রক্তের স্রোত দ্রুত চলে।উষ্ণতার একটা জোয়ার বয়ে যায়।অল্প খনেই বুকে তোলপাড় শুরু হয়।রিঝ যখনই শক্ত করে জড়িয়ে নিওয়ার জন্য হাত শক্ত করবে তুতুল তখনই ছিটকে সরে আসে।কান্না মাখা গলায় চোখ মুছতে মুছতে বলে,
“ আপনি এতো খারাপ কেনো??”

রিঝ বিস্মিত গলায় বলল,
“ আমি আবার কি করলাম??”

রায়হান অনেক আগেই দৌড়ে তার আম্মুকে ডেকে নিয়ে এসেছে।আদ্রি ছুটে এসে বলল,
“ তুতুল তুমি না কি পরে গেছো??”

তুতুল আহ্লাদি কন্ঠে বলল,
“ আমি পরি নাই।ফেলে দিছে।মানে একপ্রকার তেমনই।”

রিঝের চোখ কপালে।সাথে সাথেই সে চেঁচিয়ে বলে,
“ আমি তোমাকে ফেলে দিয়েছি মানে কি??পাগল না কি?”

“ আরে আপনি যদি চিৎকার করে না ধমকাইতেন ,ডায়েরির জন্য না চেঁচাতেন,গার্লফ্রেন্ডের ছবি যদি দেখতে দিতেন,আমি এতো দ্রুত নামতাম??না তো।আপনার জন্যই আমি দ্রুত নামছি।আর ঠাসসস!!সব দোষ আপনার।সব সব সব।”

তুতুল রেগে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।আদ্রি চোখ ছোট করে বলে,
“ তোর গার্লফ্রেন্ড আছে??”
“ যা তো রুম থেকে।”

আদ্রি ছেলেকে হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।রিঝের চোখ লাল ,দেখেই ভয় ভয় লাগে।না জানি কোন জিনিসে হাত দিয়েছে তুতুল!!রিঝ সোফায় ধপ করে বসে।পানি খায়।মাথার পিছনে হাত রেখে বিড়বিড় করে,
“ যত সব পাগল ছাগল।আমি কোথায় বাঁচালাম সে উল্টা বলে আমি ফেলেছি।এই মেয়ে জীবনে সব ভুলবে তবে আমার দোষ দিতে না।ইনিয়ে বিনিয়ে সব কাজের জন্য আমাকেই দোষ দিবে।ফাউল।”
উঠে বসে।ল্যাপটপে মন দেয় সে।

#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here