কৃষ্ণবতীর মায়ায় পর্ব -০২

#কৃষ্ণবতীর_মায়ায়
#পর্ব_২
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি

কতক্ষণ ধরে ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল নীর খেয়ালই করেনি, বাবার ডাকে হুঁশ এলো তার। বাইরে থেকে আমিন চৌধুরী ডাকছেন নীর কে, তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। এসে দেখে আমিন চৌধুরী নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন, মুখ টা শুকনো লাগছে ওনার, হয়তো মেয়ের এমন পোড়া কপালের জন্য তিনিও কেঁদেছেন।নীর বাবা কে দেখে জিজ্ঞেস করল,
বাবা, তুমি এতো সকালে আমার রুমে হঠাৎ?কি হয়েছে তোমার।
আমিন চৌধুরী ভেজা ভেজা গলায় বললেন,
কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোমাকে সাড়া দিচ্ছিলে না কেন?আমি নিজের হাতে আমার মায়ের জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসেছি, আজ আমি নিজের হাতে আমার মাকে খাইয়ে দিবো,লক্ষি মেয়ের মতো চুপটি করে বসো তুমি।
নীর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে পড়লো। খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না একটুও কিন্তু বাবা কে নাও করতে পারবে না, তাহলে বাবা মন খারাপ করবেন।অগ্যতা খেয়ে নিল সে।নীর কে খাইয়ে দেওয়ার পর আমিন চৌধুরী নীরকে তৈরি হতে বলে চলে গেলেন রুম থেকে।নীর বুঝতে পারলো না এতো সকালে বাবা তাকে তৈরি হতে বললো কেনো। কিন্তু বাবা যখন বলেছে তখন কোনো কারন নিশ্চয়ই আছে,নীর আর না ভেবে তৈরি হতে লাগলো। নীল রঙের জামা আর সালোয়ার পড়লো নীর। ওড়না টা দেওয়ার জন্য ড্রেসিনের সামনে দাঁড়ালো সে, আয়নায় নিজেকে দেখে কান্না আসছে তার, অতিরিক্ত কাঁদার জন্য চোখ দুটি হালকা ফোলা ফোলা লাগছে। গায়ের কালো রঙের সাথে এই নীল রঙ টা একদম বেমানান লাগছে, কোনো কিছুই তার এই গায়ের রঙের সাথে সাথে মানায় না।নীর ভাবতে লাগলো আয়ান ওকে ডির্ভোস দিয়ে হয়তো ঠিকই করেছে, এরকম একটা কালো মেয়ের সাথে সংসার করা যায় না। আয়ানের কথা মনে হতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো তার।এ সময় আমিন চৌধুরী রুমের বাইরে থেকে তাড়া দিলেন,,
তাড়াতাড়ি এসো নীর, নাহলে আমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।
বাবার তাড়া শুনে নীর চোখ মুছে ওড়না টা ঠিক করে মাথায় আর শরীরে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আমিন চৌধুরী নীরকে বের হতে দেখে ওকে গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন।নীর গাড়িতে এসে বসলো, কিছুক্ষণ পর আমিন চৌধুরী একটা ব্রিফকেস হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলেন। বাবার হাতে ব্রিফকেস দেখে নীর কিছু বুঝতে পারলো না, তাই জিজ্ঞাসা করল,
বাবা তোমার হাতে এই ব্রিফকেস কেন? কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে?
আমিন চৌধুরী গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেন। গাড়ি চলতে শুরু করার পর তিনি নীর কে বললেন,
তুমি তোমার ফুপির বাসায় যাবে, এখন থেকে ওখানেই থাকবে তুমি। আমি কাজের ব্যস্ততার জন্য তোমার খেয়াল রাখতে পারবো না।
নীর আমিন চৌধুরীর কথা শুনে ছলছল চোখে বললো, বাবা আমি কালো বলে আজ তুমি ও কি আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো?
নীরের কথা শুনে আমিন চৌধুরীর বুকে ছ্যাত করে উঠলো, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে মেয়ে কে। সেই মেয়ে কে দুরে রাখার কোন ইচ্ছা ছিল না ওনার, কিন্তু নীর কে নিয়ে খুব ভয় লাগছিল, আয়ানের সাথে ওই ঘটনার পর সে কালো বলে কেউ তাকে পছন্দ করে না এই ভেবে যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলে এই ভয়ে বোনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন নীর কে। বোনের নিজের কোন সন্তান নেই তাই নীর কে খুব আদর করে, নিজের মেয়ের মতো দেখে, সে নীরের খেয়াল রাখতে পারবে।
আমিন চৌধুরী কে চুপ করে থাকতে দেখে নীর আবার জিজ্ঞেস করল,
কি হলো বাবা, তুমি বলো আমাকে।
আমিন চৌধুরী থতমত খেয়ে বললেন, না মা। তোমাকে আমি দুরে সরিয়ে দেবো কেন? তুমি তো জানো ব্যবসার জন্য কতোখানি ব্যস্ত আমি,ব্যস্ততার কারণে তোমার খেয়াল রাখতে পারবো না ঠিক মতো তাই তোমাকে তোমার ফুপির কাছে নিয়ে যাচ্ছি। তোমার ফুপি কি তোমাকে আদর করে না?
নীর চোখ মুছে বললো,হ্যা করে।
তাহলে আর কি? আমি সপ্তাহে দুই দিন করে তোমাকে দেখে আসবো, ঠিক আছে?
নীর মাথা নাড়ল শুধু। গাড়ি চলছে আপন ঠিকানায়,নীর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, কালকের ঘটনা টা মনে হচ্ছে বারবার, বেহায়া চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। ভালোবাসা এতো খারাপ কেন? কেন এতো কষ্ট দেয়,যাকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছে নীর সে তো দিব্যি ভালোই আছে তাকে কষ্ট দিয়ে। তাহলে সে কেন এতো কষ্ট পাবে?নীর চোখ মুছে নিলো,নাহ আর কাঁদবে না সে।যার কাছে তার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই তার জন্য আর কাঁদবে না। ভুলে যাবে আয়ান কে, হয়তো ভুলতে খুব কষ্ট হবে, মনটা ভুলতে চাইবে না তাকে কিন্তু তার পরেও ভুলতে তো হবেই। সে তো আর তার নয়, একদিন আগেও ছিল তার, কিন্তু ডির্ভোসের পর সে হয়ে গেছে অন্য কারো সম্পত্তি। তাকে মনে রাখা মানে জেনে শুনে নিজেকে কষ্ট দেওয়া।
তিন ঘণ্টা পর ফুপি দের বাসায় পৌঁছে গেল ওরা।নীর কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমিন চৌধুরী নিজের কাজে চলে গেলেন।নীর ব্রিফকেস হাতে নিয়ে ফুপির বাসায় ঢুকলো, ওর ফুপি আমেনা বেগম তখন বাসায় ছিলেন না, একটা দরকারি কাজে বাইরে গিয়েছিলেন।নীর বাসায় ঢুকে দেখল কয়েকটা ছেলে মেয়ে বসার রুমে বসে গল্প করছে, ফুপি কে আশে পাশে কোথাও দেখতে পেল না।নীর কে দেখে ফুপির বড় জার ছেলে ইয়াদ ওর মাকে জিজ্ঞেস করল,,
মা, বাসায় কি নতুন কাজের লোকের আমদানি হয়েছে না কি? তোমাদের সত্যি কি চয়েস বুঝিনা,যাকে তাকে কাজে রেখে দাও।
নীর ছেলেটার কথা শুনে চমকে গেল, ওকে কাজের লোক বলছে।সত্যিই কি তাকে কাজের লোকের মতো লাগছে?

(চলবে……….. ইনশাআল্লাহ)
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here