#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (২য় পর্ব)
#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম
~ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি। ওইদিকে ঋতু আপু আর অনিক ভাইয়া কথা বলছে। অনিক ভাইয়া? উনিই হলেন পাত্র। বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে দুজনে কথা বলছে আর আমি দাঁড়িয়ে আছি আরেক দিকে। নিজে থেকেই দূরে চলে এসেছি যাতে ওরা কথা বলতে পারে।
ওহ্ আগের কাহিনী বলি আসুন…
পাত্র অন্য কোথাও দেখা করবে শুনেই আমরা সকলেই ভ্রু কুঁচকে রইলাম। সামনে বসে থাকা দুই ব্যক্তি হয় তো বা আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে অস্বস্তিকর হাসি দিয়ে বললেন,
–“না মানে আমাদের ছেলে আপনাদেরই বাড়ির ছাদে আছে। মেয়ের সাথে সেখানেই দেখা করতে চায়।”
–“ঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটা? ছেলে দেখা করতে চায় তাও আবার আমাদেরই ছাদে? ও নিজে থেকে চলে গেল এভাবে?”
জিজ্ঞাসু সুরে কথাগুলো বলে গেলেন খালু। ছেলের মা কিছুটা আশ্বস্ত করে বলতে লাগলেন,
–“বেয়াইন বিষয়টা আপনার কাছে অদ্ভুত লাগতেই পারে। তবে চিন্তা করবেন না আমরা আপনাদের মেয়েকে সম্পূর্নভাবে নিজেদের করে নিয়ে যেতে চাই। বিয়ের আগে ওরা একান্তে কথা বলতে চাইতেই পারে তাই নয় কি? ওকে যেতে দিন একটু, আশা রাখছি এই বিয়েতে মেয়ে দ্বিমত পোষণ করবে না।”
–“আরেহ আমাদের কাছে অদ্ভুত লাগবে কেন? কি যে বলেন আপনারা। আমার নাতনির জন্য এতো ভালো পরিবার থেকে প্রস্তাব আসছে। আর ছেলে যদি আলাদা করে কথা বলতে চায় তাতে সমস্যা হবে কেন? কোনো সমস্যা নেই।
কেউ কিছু বলার আগেই গদগদ করে বাক্যগুলো বলে গেলেন ছোট নানি। খালামনি অগ্নিচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে তা দেখেও না দেখার ভান করলেন। কিন্তু ছেলের মায়ের বলা কথাগুলো বেশ সন্দেহজনক মনে হলো আমার কাছে। ওনারা কিভাবে জানলেন আপু মত দিবে? আর ছেলে এসেই ছাদে উঠে পরেছে মনে হচ্ছে কত আগের থেকে চিনে সব!
–“অনামিকা মা…..
খালুর ডাকে ধ্যান ভাঙল আমার। উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,
–“একটু ঋতুর সাথে উপরে যাবে মা? মেয়েটাকে একা একা যেতে দিতে মন সায় দিচ্ছে না। তুমিও একটু যাবে ওর সাথে?”
উনি যে অনেকটা আশা নিয়ে কথাটা বলছেন এটা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ওনার আশায় জল ঢেলে দিতে ইচ্ছা করছে না একদমই। তাই আমি ধীর গলায় “হ্যা” বলে রাজি হয়ে গেলাম। ঠিক তখনই ছোট নানি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন!
–“এই না অনামিকা কোথাও যাবে না। ওর যাওয়ার কি দরকার? ঋতু কি বাচ্চা না কি যে ওর সাথে কাউকে পাঠাতে হবে?”
আমি কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়ালাম। পাত্রের মা বাবাও মনে হচ্ছে এমন আচরণে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। নানি একটু কেশে গলা ঝাঁঝরা করে ওনাদের উদ্দেশ্যে বলতে আরম্ভ করলেন,
–“হে হে না মানে আমাদের মেয়ে তো ছোট না তাই না। এই জন্যই বলছিলাম যে একাই যাক।”
–“মা তুমি এতো কথা বলো না তো। ঋতুর বাবা যখন অনুকে যেতে বলেছেন তবে অনু যাবে।”
খালামনির কথায় চোখ পাকিয়ে তাকালো ছোট নানি। আমি আর কি করবো আপুকে নিয়ে হাঁটা দিলাম ছাদের উদ্দেশ্যে। লিফটে উঠে টপ ফ্লোরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। এদিকে ঋতু আপু দেখি শীতেও ঘামু ঘামু হাল! আপুকে শান্তনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম।
–“এইভাবে ঘামছো কেন তুমি? শান্ত হও আমি যাচ্ছি তো। তোমার পছন্দ না হলে মানা করে দিবে শেষ এতো টেনশন নেয়ার কি আছে? তুমি না বললে খালামনি বা খালু কেউই বিয়েতে রাজি হবে না। ভয় পেও না।”
আপু খালি মাথা নেড়ে হ্যা সূচক বার্তা দিল। এর মধ্যেই আমরা ছাদে এসে পৌঁছালাম। দুজনেই গুটিগুটি পায়ে ভিতরে গেলাম। চাঁদের আলোয় আলোকিত গগন, একই আলো উপচে পড়ছে ছাদেও। লম্বা চওড়া পরনে কোর্ট প্যান্ট একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে কিন্তু বিপরীত দিকে ঘুরে যার কারণে তাকে দেখতে পেলাম না।
–“এই যে ভাইয়া শুনছেন? আপনিই কি ঋতু আপুকে দেখতে এসেছেন?”
আমার ডাকে উনি আমাদের দিকে ফিরলেন।
–“নতুন করে কি দেখবো? কত দিনই তো দেখলাম শুধু রজনীতে দেখা বাকি ছিল।”
–“আপনি?”
আপুর কথায় তার দিকে তাকালাম আমি। দুজনে কি একে অপরের পূর্ব পরিচিত? এই যাহ এরা কি তবে লাভ ম্যারেজের প্ল্যানে আছে? আমার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে আপু কিছুটা এগিয়ে গেল ভাইয়াটার দিকে।
–“আপনি এখানে কি করছেন?”
–“কথা রাখতে এসেছি, এবার যে হারিয়ে যাওয়ার আগেই আঁকড়ে ধরতে চাই।”
–“তবে কি আপনি পরিবার সমেত……
–“হ্যা পরিবার নিয়েই এসেছি যাতে কোনো অজুহাত দেখিয়ে তোমায় নিয়ে বিলম্ব না করতে হয়। মনে আছে ১ বছর আগে বলেছিলাম না? নিজেকে তৈরি করে তোমাকে নিতে আসব। তুমি তো আগে আমায় ভালোবাসলে না, অনেক আশায় ছিলাম আজ না হয় কাল বাসবে। তোমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করবো ভাবছিলাম এরমধ্যে খবর পাই তোমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করে দিয়েছে। প্রচন্ড ঘাবড়ে গেছিলাম এই ভেবে যে তুমি হারিয়ে না যাও। আর পারিনি ওয়েট করতে বাবা মাকে বলে আজকেই চলে এসেছি যাতে পরে আফসোস না করতে হয়।”
–“১ বছর আমার জন্য অপেক্ষা করেছো?”
–“তুমি বললে আরো কয়েক বৎসর করতে রাজি আছি প্রিয়তমা।”
কিছুটা দূরে গিয়ে দুজনের কথপোকথন মনযোগ সহকারে শুনছিলাম যাতে ওরা ভালো মতো কথা বলতে পারে। খেয়াল করলাম আপুর মিষ্টি মুখশ্রী হতে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সাথে সাথে সামনে থাকা মানুষটা তা মুছে দিল নিজ দায়িত্বে। আহা! কি মধুর দৃশ্য♡।
–“আমার যে একজন ছোট্ট শালী রয়েছে এটা তো জানতাম না।”
–“হাহ? আমাকে বলছেন?”
–“হুম আশেপাশে চতুর্থ কোনো ব্যক্তি নেই আর তোমার আপুকে তো অবশ্যই বলবো না তাহলে মেইবি তোমাকেই বলছি।”
মৃদু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ভাইয়া।
–“সরি হি হি হি। কিন্তু আপনার নামটাই তো জানতে পারলাম না।”
–“আমার নাম অনিক চৌধুরী।”
–” আচ্ছা আপনাকে অনিক ভাইয়া বলেই ডাকবো ওকে? এই আপনারা দুইজন কি লাভ ম্যারেজ করার চিন্তায় আছেন? কর্মকাণ্ড কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না আমার।”
–“তোমার কি মনে হয়? লাভ ওর এ্যারেনজ?”
–“আমার তো মনে হয়…….
–“অনু থাম তো! এতো বেশি কেন মনে তোর? আমি তোকে পরে সবটা বলবো।”
–“ঠিক আছে যদি নিজে থেকেই বলো তাহলে আর জিজ্ঞেস করবো না।”
তিনজনে দাঁড়িয়ে আমেজটা বেশ জমাচ্ছিল হঠাৎ কারো আগমনে সকলে সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। একটা ছেলে হাঁটু ধরে হাঁপাচ্ছে, জোরে জোরে শ্বাস নিল কতক্ষণ। তারপর মাথা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালো।
–“এই ভাইয়া বিয়ের আগেই তোর গল্পের শেষ হয় না তাই না? কয়বার ফোন দিয়েছে চেক করে দেখ। উপরে আসতে গিয়ে দেখি লিফট বন্ধ, সিঁড়ি দিয়ে উঠেছি এতো তলা বুঝতে পারছিস?”
–“কিন্তু তুই এখানে কি করছিস? তোর না বাসায় থাকার কথা এসময়?”
–“বাসায় ছিলাম হঠাৎ রহিম আংকেল কল করে বললেন একটা জরুরী দরকারে ওনাকে এখনি নিজ বাসায় যেতে হবে। এদিক গাড়ি রেখে যেতে পারছেন না তোরা কেউ না কি ফোন ধরছিলি না, উনি উপরেও উঠতে চাননি পরে আমাকে ফোন দিয়ে বললো।”
আমাদের দিকে এগোতে এগোতে বললো ছেলেটা।ওকে
দেখে মনে হচ্ছে আমার বয়সী হবে। তবে কি এটা অনিক ভাইয়ার ছোট ভাই না কি? হতেই পারে।
–“আরেহ হবু ভাবি দেখছি। কেমন আছো উডবি ভাবি?”
–“ভালো আছি দেবর সাহেব।”
–“অনেক দিন পরে দেখা হলো। এবার আমার ভাইটাকে বিয়ে করে উদ্ধার করো নাহলে তোমার প্রেমিক যে বিরহে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।”
ছেলেটার কথায় সবাই ফিক করে হেসে ফেললাম।ভাইয়া ওর কাঁধে হাত রেখে বলতে লাগলেন,
–“চলো সবাই নিচে যাই। বাকিটা বড়দের হাতে ছেড়ে দেই।”
সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। এর মাঝেই খেয়াল করলাম ছেলেটা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। কি অদ্ভুত রে বাবা! ওভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে?
সবাই ধীরে সুস্থে নিচে নেমে এলাম। বাসায় এসে দেখলাম বড়রা কি সুন্দর হাসি মুখে আলাপ করছে। মনে হচ্ছে এরমধ্যে খালামনি আর খালুকে রাজি করিয়ে নিয়েছে। আমাদের দেখে আমায় আর আপুকে ঘরে চলে যেতে বললো। আমরাও চুপচাপ এসে পড়লাম। বাকিরা এখনো আলোচনা করছে অনিক ভাইয়ার কন্ঠস্বরও শুনতে পাচ্ছি।
প্রায় ১০ মিনিট পর,,,
খালামনি ঘরে এলো অতঃপর ঋতু আপুকে ডেকে বললো,
–“বিয়েতে কি তুই রাজি?”
–“আসলে আমার ভাবার জন্য একটু সময় চাই।”
–“হুম বুঝলাম। ঠিক আছে আমি আসছি।
ঋতু আপুর কাছে গিয়ে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,
–“এই এই তোমাদের কাহিনী বলো না? অনিক ভাইয়াকে কিভাবে চিনো? আর ওই যে ওই ছেলেটা যে বললো ভাইয়া তোমার প্রেমিক? তার মানে কি তোমরা লুকিয়ে লুকিয়ে এই করতে?”
–“যাহ বোকা আমি আর প্রেম? সম্ভব? তবে এটা সত্যি একটা ঘটনা তো আছেই।”
–“সেটা কি বলো না আমায়।”
–“একটু অপেক্ষা কর আসছি।”
আপু চলে যেতেই হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। তবে অচেনা নাম্বারটাও কেন জানি চেনা চেনা লাগছে। কে ফোন দিয়েছে? মনের মধ্যে একটা ভয় জেগে উঠলো। আমি যার কথা ভাবছি সেই কি ফোন করেছে?
পিছনে কারো স্পর্শ পেয়ে আচমকা চেঁচিয়ে উঠলাম,
–“কে!!???”
#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (৩য় পর্ব)
#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম
~পিছনে ঘুরে দেখি আপু দাঁড়িয়ে আছে। আমার এভাবে চেঁচিয়ে উঠায় বেচারি ভয়ে পেয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আপু ধীর গলায় বলতে লাগলো,
–“কি রে অনু? চেঁচাচ্ছিস কেন? ভয় পেয়েছি আমি।”
–“সরি আপু আসলে হঠাৎ করে কাঁধে হাত রেখেছো তাই ভয় পেয়েছি।”
–“কেউ ফোন করেছে তোকে?ফোন বাজলো মনে হচ্ছে।”
–“না না কেউ দেয় নি। এসব বাদ দাও তো, তুমি আগে আমাকে কাহিনী বলো।”
আপু আমার হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসায়। তারপর আমার সামনে এসে বসে পড়ে।
–“শুনবি সব?”
–“অবশ্যই শুনবো।”
–“তাহলে শুন। এটা প্রায় আরো কয়েক বছর আগের কথা, নতুন নতুন সব ভার্সিটিতে উঠেছি। বেশিরভাগই নতুন অচেনা মুখ তারপরেও একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম সবাই। ভার্সিটি প্রাঙ্গনে বসে গল্প করছিলাম সবাই তখনই প্রবেশ ঘটে একজনের। তার প্রবেশে আড্ডা জমজমাট হয়ে উঠে। তখন তাকে চিনতাম না আমি কারণ প্রথম দিকে ভার্সিটিতে আনাগোনা খুব কম ছিল আমার। তবে এর মাঝেই বন্ধুমহল জুটে গেছিলো। সেদিন প্রথম দেখা হয় অনিকের সাথে, ছেলেদের সাথে বরাবর কম কথা বলতাম। তাই ওর সাথে বন্ধুত্বটা ঠিক জমিয়ে উঠতে পারিনি। তবে কথা হতো মাঝে মাঝেই, আমাকে পড়াশোনায় অনেক হেল্প করেছে। এভাবেই কতগুলো বছর কেটে গেল। ভার্সিটি লাইফ শেষ করলাম একদিন, সেদিন যেমন হেসেছি তেমন অজানা কষ্ট কাজ করছিল মনে। সবাই নিজ আনন্দে মেতে ছিলাম এর মধ্যেই অনিক আসে আমার কাছে। প্রথমে ওর কথায় কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে ধীরে ধীরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ শুরু করে মানুষটা। আমি থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম যে পাগল হয়ে গেল না কি ছেলেটা? কিন্তু পরে যখন আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলছিল, “ঋতু আমাকে একটা বছর সময় দিবে প্লিজ? আমি জানি তোমার জীবনে অন্য কেউ নেই তাই হয় তো ভালোবাসার মতো সাহস দেখাতে পেরেছি। আমাকে একটু সময় দাও নিজেকে তৈরি করে তোমার সামনে আসবো কথা দিচ্ছি।” এই কথায় বুঝেছিলাম সে ঠিক কতটা সিরিয়াস।”
পুরোটা বলে ঋতু আপু একবার থেমে দীর্ঘশ্বাস নিল। কি সুন্দর একটা মানুষের জন্য নিজেকে তৈরি করে ফিরে এসেছে তার জন্যই। আমাকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আপু মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,
–“কি ভাবছিস?”
–“ভালোবাসা সুন্দর।”
–“জানি তবে সেই মানুষটার জন্য আমি কতটুকু যোগ্য জানি না।”
–“সে তোমাকে ভালোবাসে এখানে যোগ্যতার কথা কেন আসছে?”
–“বুঝবি না রে। কেউ যখন এতোটা ভালোবাসা দেয় তার জন্য নিজে কতটা যোগ্য এই প্রশ্ন মাথায় ঠিকই আসে।”
–“সেসব আমি বুঝি না তুমি কিন্তু বিয়েতে না বলবে না। অনিক ভাইয়াকে আর অপেক্ষায় রেখো না।”
–“আজকেই চিনলি আর আজই ওর পক্ষে কথা বলছিস হ্যা?”
–“হে হে হে আফটার অল ওনার হবু শালী সাহেবা আমি।”
–“এই দাঁড়া তো তুই।”
বিছানা ছেড়ে উঠে দৌড় দিলাম। আপুও আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে। এমন সময়ে আবার কারো ফোন বেজে উঠলো। আপুর ফোন বাজছে নিশ্চয়ই অনিক ভাইয়ার কল এসেছে। ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগল।
–“হ্যা?….. কালকে?…. আচ্ছা আসব।”
আপু কল কাটতেই লাফিয়ে আপুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কি কথা হলো। আর এরপরে যা শুনলাম,
–“কালকে দেখা করতে যাবো আর তুইও যাবি।
–“হ্যা?? কি?? মাথা গেছে না কি? আমি গিয়ে কি করবো সেখানে। তোমরাই যাও।”
–“অনিকই বলেছে তোকে নিয়ে যেতে। বেশি বকিস না কালকে বিকেলে রেডি হয়ে যাবি চুপচাপ।”
–“কিন্তু আপু আমি………
–“কিছু শুনতে চাই না।”
এই বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। এরা দেখা করবে মাঝে আমি কাবাব মে হাড্ডি কেন হবো?
•••••••••••••••
বিকাল ৪টা বাজে। আপু রেডি হয়ে বসে আছে। আমি এখনো চুলে চিরুনি চালিয়ে যাচ্ছি কারণ যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই।
–“একটু তাড়াতাড়ি কর।”
–“এই তো হয়ে গেছে।”
এদিকে মনে মনে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিছুক্ষণ বাদে খালামনি ঘরে এলো। আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“এতো দেরি করে গেলে হবে? একটু জলদি যা দুটো।”
–“দেখো না মা সেই কখন থেকে চুল আঁচড়িয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।”
–“আরেহ হয়ে গেছে খালামনি। আমি রেডি চলো।”
–“যা যা তাড়াতাড়ি।”
আমি আর আপু বাসা থেকে বের হয়ে নামতে লাগলাম। নামার সময় আপুর ফোনটা বেজে উঠলো। আপু তুলে কথা শেষ করে আবার ব্যাগে রেখে দিল।
–“কে কল দিল?”
–“অনিক।”
–“কি বললো?হবু বউকে দেখার জন্য তর সইছে না।”
–“এই চুপ ফাজিল। আমাকে কফি সপের লোকেশনটা বললো খালি।”
–“ওহ্ আচ্ছা।”
নিচে নেমে ড্রাইভার আংকেলকে লোকেশন বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িতে উঠে কাচগুলো নামিয়ে দিতে বললাম। এমনিতেই ঘুম ধরে আছে, এসির মধ্যে পড়লে এখন ঘুমের সাগরে ডুব দিব। গাড়ি আপন গতিতে চলছে আর বাইরের দৃশ্য দেখছি। ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ লাগছে। চুলগুলো ভালো মতো বেঁধে এসেছি ওদের অবাধ্যতা এখন নিতে মন চাইছে না।
কখন যে চলে এসেছি খেয়ালই হয়নি। গাড়ি থামাতে মেজাজ একটু এদিক ওদিক হলো। কপাল কুঁচকে তাকাতেই আপু বললো আমরা এসে গেছি। দুজনেই নেমে গেলাম, ড্রাইভার আংকেল গাড়ি পার্কিংয়ে চলে গেলেন। আপুর সাথে হাঁটা ধরলাম ভিতরে, যেতে যেতে দেখলাম অনিক ভাইয়া দাঁড়িয়ে আমাদের ডাকছেন।
–“যাক এসেছো তোমরা। চলো ওদিকটায় আমি ছাদে আলাদা টেবিল বুক করে রেখেছি।”
সেদিকে গেলাম তিনজনেই। কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে খেয়াল করলাম আগের থেকেই কেউ বসে আছে সেখানে। এটা আবার কে? ভাইয়ার সেই ছোট ভাই না কি? টেবিলে গিয়ে বসলাম তিনজন। আপু ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো,
–“আমি যদি ভুল না করি এইটা অভ্র তাই না?”
–“ঠিকই ধরেছো এইটা আমার মেজো ভাই অভ্র।”
হ্যা? আবার মেজো ভাইও আছে দেখছি। মানে এরা তিন ভাই? বাহ্ দারুণ। আপু এবার অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল,
–“কেমন আছো অভ্র? কতদিন পর দেখলাম তোমায়।”
–“ভালো আছি আপু। দুই বছর তো দেশের বাইরে ছিলাম তাই দেখা হয়নি।”
–“ওহ্ আচ্ছা তাহলে ফিরলে কবে?”
–“গত পরশু রাতে এসেছি।”
–“যাক ভালো করেছো।”
–“ভালো কথা মনে পড়লো। অর্থি কেমন আছে অনিক?”
–“অর্থি ভালোই আছে। বিয়ের কথা শুনে তো লাফানো শুরু করে দিয়েছে।”
ভাইয়ার কথায় মৃদু হাসলাম সকলে। আচ্ছা তারমানে ওনাকে একটা বোনও আছে? এক বোন তিন ভাই? আরো ভালো। আর কিছুই বললাম না থাক।
–“আপু আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।”
–“আরেহ শালী সাহেবা এতক্ষণ পরে আপনার মুখে কথা ফুটলো?”
–“না মানে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না তাই আর কি।”
–“ওয়াশরুম মনে হয় নিচের দিকে। একা যেতে পারবি না কি সাথে যাবো?”
–“একাই পারবো। তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”
উঠে চলে এলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিলাম কয়েকটা। এবার একটু ভালো লাগছে। ইস বাসায় থেকে ঘুমালেও কাজে লাগতো। কি যে ঘুম পাচ্ছে, মাথা ঘুরিয়ে পড়ে না যাই আবার। হেলতে দুলতে আবার টেবিলের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে হঠাৎ কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিবো তার আগেই নিজেকে সামলে নিলাম।
–“দেখে চলতে পারেন না?”
–“দোষ আমার নাকি আপনার?”
–“আমার হতে যাবে কেন হ্যা? আপনিই তো তাড়াহুড়া করে নামছিলেন।”
–“তাহলে আপনি একটু সাইড হয়ে দাঁড়াতেন। করেছেন সেটা? করেননি তো?”
–“নিজের দোষ আমার উপর দিচ্ছেন বাহ্।”
–“মানছি আমার ভুল আছে আপনারো তো আছে।”
–“থাকতেই পারে। কথা বলার সময় নেই আমার কাছে আসছি।”
–“আরেহ অদ্ভুত মানুষ তো! সরি তো বলে যান।”
–“সেটা আপনার স্বপ্নে সম্ভব, বাস্তবে নায়।”
এরপরে লোকটা গাড়িতে করে বেড়িয়ে গেল। এদিকে রাগে গাল গরম হয়ে গেছে আমার। গাল ফুলিয়ে আনমনেই বলে উঠলাম,
–“আপনাকে তো দেখে নিব।”
চলবে…………….?^_^
[