কোনো এক পূর্ণিমায় পর্ব -০৪+৫

#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (৪র্থ পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে পুরো। তারপরেও নিজেকে শান্তনা দিতে দিতে গেলাম। আপু আর ভাইয়া কথা বলছে তখনও আমি গিয়ে চুপচাপ বসে পড়লাম সেখানে।

–“তোমরা কি খাবে বলো অর্ডার করি।”

–“না ভাইয়া। আমি তো কিছু খাবো না। দুপুরের খাবারই হজম করে উঠতে পারছি না তার উপর ঘুম আসছে।”

–“তাহলে কফি আনতে বলি?”

–“হ্যা কফি খাওয়াই যায়।”

–“আচ্ছা আর ঋতু তোমার জন্য কি আনতে বলবো?”

–“আমারও কফিতেই হয়ে যাবে।”

–“ওকে।”

ভাইয়া ওয়েটারকে ডেকে তিন কাপ কফি আনতে বললেন। পাঁচ মিনিট পর ওয়েটার তা নিয়েও এলো। গরম গরম কফি থেকে ধোঁয়া উঠছে তাতে চুমুক দিয়ে বললাম,

–“আচ্ছা ভাইয়া আপনার মেঝো ভাই ওমন তাড়াহুড়ো করে চলে গেল কেন?”

–“তোমার কি ওর সাথে দেখা হয়েছে না কি?”

–“না মানে সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় দেখলাম।”

–“ওহ্ আচ্ছা। আরেহ অভ্র তো পুরো কাজ পাগল ছেলে। কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে ফোন এসেছিল তাই ওভাবে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। দেশে এসেই আবার সেই কাজের মধ্যেই ডুবে থাকে কি যে করবো ছেলেটাকে নিয়ে।”

–“তাহলে কি উনি বিয়ে উপলক্ষেই এসেছেন?”

–“হয় তো আসলে আমরাও জানি না অনামিকা। অভ্রর মনে কখন কি চলে তা বলা যে বড্ড মুশকিল। যাই হোক এসব কথা বাদ দাও আসল কথা যেটা বলতে ভুলেই গেছি।”

–“কি কথা?”

–“না মানে ওই যে আম্মু বলছিল যে তিনদিন পর কাবিন করাতে চায় তো আমি সেটাই বলতে এসেছিলাম আর কি।”

–“ভাইয়া আপনি কাঁপছেন কেন?”

আমার কথায় ভাইয়া চোখ তুলে তাকালো। ওই দিকে আপু মুখ চেপে হাসছে। তা দেখে অনিক ভাইয়া আপুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলো,

–“হাসছো কেন হ্যা?”

–“তুমি কাঁপছো কেন সেটা বলো? আর আন্টি তোমাকে পাঠিয়েছেন না কি নিজে থেকে এসেছো শুনি?”

–“তেমন কিছু না ওই আর কি।”

–“হ্যা হ্যা বুঝেছি।”

–“কিন্তু খালামনি যে কিছুই বললো না আমাদের? খালামনি কি জানে না ভাইয়া?”

–“আম্মু তো বলেছিল কথা বলবে।”

–“আমাদের এখন বাসায় যাওয়া উচিত। চল অনু যাই।”

–“তোমার আবার কি হলো? এতো তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে চাইছো কেন?”

–“অনেকক্ষণ হয়েছে তো। এখন যাওয়া উচিত তাই যাচ্ছি। বাকি কথা বিয়ের পর হবে। টাটা।”

অতঃপর আপু আর হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। ভাইয়াও সাথে সাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো। আপু আমাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো। তারপর আংকেলকে ফোন দিয়ে গাড়ি এদিকে আনিয়ে নিল। দুজনে গাড়িতে উঠে পড়লাম আর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

•••••••••••••••

বাসায় এসে জামাকাপড় পাল্টে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়েছিলাম আর কিছুক্ষণ পরে ঘুম। সবার কথার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলে চোখ মুছতে মুছতে ড্রয়িং রুমে গেলাম তবে সেখানে গিয়েই চমকে উঠলাম।

–“আব্বু? তুমি?”

আব্বু আমার ঘাড় ঘুরিয়ে মৃদু হাসলো। আমি ছুটে গিয়ে আব্বু পাশে বসলাম। কতদিন পর দেখলাম মানুষটাকে এই কয়েকদিন তো ভালো মতো কথাও হয়নি।

–“কখন এসেছো তুমি?”

–“এই তো বেশিক্ষণ হয়নি। কেমন আছিস তুই?”

–“আমি তো ভালোই আছি। তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।”

–“ঋতুর না কি তিনদিন পর কাবিন?”

–“হ্যা দুলাভাই। আজকে বেয়াইন এসেছিলেন বাসায়। মেয়ে দুটো বাইরে গেছিলো তার কিছুক্ষণ বাদেই উনি এসে কথাবার্তা বলে গেলেন।”

রান্নাঘর থেকে নাস্তার ট্রে হাতে খালামনি এলেন। ট্রে টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসে পড়লেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন,

–“বিয়েটা কেমন তাড়াহুড়ো করে হচ্ছে। আমার তো মাথাই কাজ করছে না।”

–“আরেহ এতো ভাবাভাবির কি আছে? এতো ভালো পরিবার থেকে প্রস্তাব আসছে এই সুযোগ হাতছাড়া করবি না কি তোরা।”

ছোট নানির কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন খালামনি।

–“মা তুমি থামবা? তোমার তো খালি ওই বড়লোক, উচ্চ পরিবার এইসবের চিন্তা। আমার তো নিজের মেয়ে নিয়েও চিন্তা হচ্ছে এগুলো বুঝো না তুমি?”

–“যেমনে বলছিস মনে হচ্ছে আমার নিজের নাতনি নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নাই? আমিও তো ওর ভালোর জন্যই বলছি না কি।”

–“আমি কি বলি চাচি নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না করে সমস্যা থাকলে সমাধান করে নেওয়া ভালো। ঋতুর যদি বিয়েতে দ্বিমত না থাকে তাহলে অসুবিধা কোথায়?”

–“এইতো কাজের কথা বলছে জামাইবাবা। এইজন্যই তোমারে আমার এতো ভালো লাগে। সব সময় কাজের কথা বলো।”

ছোট নানির কথায় মৃদু হাসলো আব্বু। আমি কপাল কুঁচকে নানির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আম্মুকে ওনার অপছন্দ হলেও আব্বুর প্রশংসায় উনি পঞ্চমুখ। মাঝে মধ্যে আব্বুকে কি সুন্দর তেল মাখানো কথা বলেন। আমি খালি অবাক হয়ে শুনি অথচ আমাকে উল্টা পাল্টা বলতে একবারো ভাবেন না।

খালু আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–“আসিফ তোমার কি মনে হয় বিয়েটা দেয়া কি ঠিক হবে?”

–“আমি এখন বলি ভাই কিন্তু দেখুন এইটা তো সত্যি যে এতো বড় পরিবার নিজে থেকে প্রস্তাব দিয়েছে। এটাও ভেবে দেখবার বিষয় নয় কি।”

–“সেটাই তো মেয়েও তো রাজি আর ছেলের পরিবারও তিনদিন পর কাবিন করিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বিয়ের অনুষ্ঠান পরে করতে চাচ্ছে।”

–“বুঝলাম এখন যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে তবে কাবিনটা করিয়ে দিন।”

–“হ্যা হ্যা করায় দাও তো।”

দাঁত কেলিয়ে বললেন ছোট নানি। সকলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল তিনদিনের মধ্যে সব আয়োজন করবে।সব শুনে আমার বেশ আনন্দ লাগছে। শেষমেষ বিয়েটা হচ্ছে যদিও অনুষ্ঠানটা হলে আরো ভালো লাগতো যাক ব্যাপার না। ছুটে ঘরে গেলাম আপুকে জানাতে।

ঘরে এসে দেখি আপু রুমে নেই। বারান্দায় গিয়েও খুঁজলাম তবে সেখানেও পেলাম না। ওদিকে ফোনটাও বেজে যাচ্ছে, তাড়াহুড়োয় না দেখেই ফোন উঠিয়ে নিলাম।

–“হ্যালো কে বলছেন?”

–“কেন আমায় চিনতে পারছো না?”

পরিচিত কন্ঠ সেটা শুনা মাত্রই কেমন যেন লাগছে তবে আমি যার কথা ভাবছি সেই ফোন দিয়েছে? কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

–“কে বলছেন আপনি?”

–“তুমি এতো সহজে আমাকে ভুলে গেলে? না না এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না একদমই।”

–“তু..তুমি??”

–“একটু করে চিনতে পারছো মনে হচ্ছে। কেমন আছো প্রিয়তমা?”

–“তুমি কেন ফোন করেছো আমায়? কি দরকারে?”

–“তেমন কিছু না। একটু বারান্দায় এসে নিচে তাকাও।”

কথাটা শুনা মাত্রই ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলাম। নিচে কেন তাকাবো? ও কি নিচে দাঁড়িয়ে আছে? ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। সাহস নিয়ে নিচে তাকাতেই ভয় যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল।

চলবে…………^_^#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (৫ম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~নিচে তাকাতেই একজনকে দেখে ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেল। সাথে সাথে দৌড়ে ঘরে চলে এলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

–“কেন এসেছো এখানে? আমার পিছু করছো কেন? দয়া করে আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করো প্লিজ।”

–“ভয় পাও কেন আমাকে তুমি? কি এমন করলাম খালি তোমায় দেখতে ছুটে আসি বারবার।”

–“তুমি এই বাসা চিনলে কি করে?”

–“এইটা কোনো ব্যাপার না কি? কি সব জিজ্ঞেস করো তুমি।”

এই বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে শুরু করলো সে। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিভাবে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না কিন্তু একে এখান থেকে পাঠাতে হবে যেভাবেই হোক।

–“চলে যাও এখান থেকে চলে যাও বলছি!!”

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম। তবে মনের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছি না। কিছুক্ষণ ঘরে পায়চারি করে ধীর পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য নীচে থাকা মানুষটা চলে গেছে না কি তা দেখা। এক পা দুই পা করে এগিয়ে গিয়ে নীচে তাকালাম।

নাহ কাউকে দেখতে পাচ্ছি না তার মানে রাফি চলে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজে কিছুটা আশ্বস্ত করলাম এই ভেবে যে চলে গেছে। রুমে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম। মাথার মধ্যে সব নড়েচড়ে উঠলো, আগেই মাথায় আসছে রাফির বিষয়টা। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার দু এক মাস পর রাফির সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় বন্ধুত্ব পর্যন্ত এগোলেও তারপরে থেমে যাই। মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ আর কথাবার্তা ছাড়া অতিরিক্ত কোনো সময় ওর সাথে অতিক্রম করিনি। গত বছর সে আমাকে জানায় তার আমার প্রতি অনুভূতি কাজ করা শুরু করেছে। প্রথম দিকে এই বিষয়ে গুরুত্ব না দিলেও ধীরে ধীরে লক্ষ করলাম রাফির পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে। রীতিমত সে আমাকে বিরক্ত করছে প্রচন্ড রকমের। আব্বুকে জানাতে চাইলেও পরে ভাবলাম আমার একা আসা যাওয়াটাই যদি বন্ধ করে দেয়?

মাঝে মধ্যেই আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওর রুটিনের অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কয়েকদিন হলো ঋতু আপুদের বাসায় আসায় এগুলোর সম্মুখীন হতে হয়নি তাই স্বস্তিতে ছিলাম বেশ কিন্তু আজকে যেটা হলো? ছেলেটা দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কেমন যেন! ওকে রীতিমতো ভয় পাচ্ছি। দুটো বছর অনুভুতি চেপে রেখে গতবছর তা প্রকাশ করেছিল। ভার্সিটির চতুর্থ বর্ষ অতিবাহিত করছি সামনেই ভার্সিটি জীবনের সমাপ্তি ঘটাবো এরপরে হয় তো কিছুটা শান্তি এবং মুক্তি পাওয়া যাবে।

–“অনু?”

পরিচিত ডাক, আপুর ডাক বুঝতে পেরে ঘুরে তাকালাম। আপু মুখ মুছতে মুছতে বললো,

–“আমাকে ডাকছিলি মনে হলো। ওয়াশরুমে ছিলাম, কিছু বলবি?”

–“হ্যা না মানে ওই যে….

এতো কিছুর মধ্যে কি জন্য এসেছিলাম তাই মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছে। চোখ বুজে নিয়ে মনে করার চেষ্টা করলাম ততক্ষনাৎ মনেও পড়ে গেল।

–“বিয়ে.. মানে কাবিন ওই যে তিনদিন পর! ঠিক হয়ে গেছে। বড়রাও রাজি হয়ে গেছে তিনদিন পরের অনুষ্ঠানের জন্য।”

–“অনুষ্ঠান?”

–“ঘরোয়া আয়োজন আর কি একদম নিরামিষ বিয়ে দিবে না কি? হালকা পাতলা আয়োজন করবে যা বুঝলাম।”

–“ওহ্ আচ্ছা।”

আপু মুখ চেপে হেসে ফোনটা হাতে নিল। ফোন ঘেটে কাঙ্ক্ষিত নাম্বার পেতেই তাতে কল দিল। ওর পাশে রিসিভ হতেও খুব বেশি সময় লাগলো না মনে হলো এরই অপেক্ষায় বসে ছিল।

–“হ্যা রাজি হয়েছে সবাই… অনু বললো ঘরোয়া আয়োজন করবে… আমার মনে হয় ছাদে করতে পারে… সেসব পড়ে ভাবা যাবে।”

আপু তড়িৎ এর গতিতে ফোন কেটে দিল। খেয়াল করলাম তার চেহারায় লাল আভা ছেয়ে গেছে। কি এমন বললো অনিক ভাইয়া?

–“আপু ওও আপু এতো লজ্জা পাচ্ছো কি নিয়ে? কি এমন বললো হবু স্বামী?”

–“চুপ থাক তো! সবাই খালি মশকরা করছে আমার সাথে।”

বাক্যগুলো বলেই গদগদ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। যাহ এমনি কি বললো যে বলা দায়? আর আমি জিজ্ঞেস করতেই ক্ষেপে গেল আবার বাহ্! এদের ব্যাপার এরাই বুঝুক আমার আর কাজ নেই।

•••••••••••••••

ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুঁই ছুঁই এদিকে ঘুম আমার সাথে আড়ি নিয়ে পালিয়েছে। তখন বাহির থেকে এসে কিছুক্ষণ বাদে ঘুমিয়ে যাওয়ার ফল এবার পাচ্ছি। সবাই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে আমার অক্ষিদ্ধয় এখনো সজাগ। আব্বু আজকে থেকে গেছে কারণ খালু যেতে দেননি। খালুর সাথেই আছে আর খালামনি ছোট নানির সাথে শুয়েছেন। দৃষ্টি ঘুরাতেই দেখলাম ঋতু আপুও নিঃশব্দে ঘুমাচ্ছে। ধ্যাত! এখন আমি নিশাচরের মতো ঘুরে বেড়াবো না কি?

পা বাড়িয়ে সারা বাড়ি একবার চক্কর দিয়ে আসলাম। তারপরেও শান্তি পাচ্ছি না, কি করা যায়? ভাবতে ভাবতে বারান্দায় গেলাম। শীতল বাতাস বইছে, শীতকালের পরশ দিয়ে যাচ্ছে। মৃদু কাঁপুনি উঠলো সর্বাঙ্গে। নাহ! ঠান্ডা লাগছে। তবে নিশ্চুপ শহরের দৃশ্যটা খুব সুন্দর। ঢাকা শহর কোলাহলে যেমন বেশ লাগে তেমনি নিঃশব্দে প্রশান্তি দেয়।

আবারো রুমে এসে বসলাম। ওদিকে ভালো ঠান্ডা যদি দাঁড়িয়ে থাকি নিশ্চিত ঠান্ডা বসে যাবে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলাম অতঃপর নীচে যেতে লাগলাম ধীর গতিতে। দৃষ্টি আটকে গেল একটা আইডি চোখে পড়তেই। “আবিদ চৌধুরী” ছেলেটাকে দেখেছি মনে হচ্ছে। ওহ্ হো এইটা না অনিক ভাইয়ার ছোট ভাই? সেদিন ছাদে আমাদের ডাকতে এলো যে। হ্যা মনে পড়েছে সেই ছেলেটাই। তাহলে ওর নাম আবিদ।

কি মনে করে আইডিতে ঢুকলাম। ফ্রেন্ডলিস্ট পাবলিক করা সেখানে চোখ পড়তেই অন্য কিছুতে দৃষ্টি গেল। অভ্র চৌধুরী না? আরেহ হ্যা আইডি নামেও তাই লেখা উনিই তো মেজো জন। সেদিক যার কারণে পড়ে যাওয়া উপক্রম হয়েছিল। আল্লাহ বাঁচিয়েছিলেন বলে আস্ত আছি। একটাবার ‘সরি’ শব্দটা উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি।

অজান্তেই বেশ রাগ হলো। আবার কি মনে করে ফোনটা রেখে দিলাম। শুয়ে পড়ি বরং ঘুমের ইচ্ছা হলেই চলে আসবে আমি শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। যেই ভাবনা সেই কাজ, চক্ষুদ্ধয় মেলে শুয়ে পড়লাম।

•••••••••••••••••

ধীরে ধীরে চোখ খুলে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১০টা বাজে। নড়েচড়ে উঠে বসলাম ঘুমের রেশ এখনো রয়েছে কিছুটা। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংরুমে চলে গেলাম। বাসায় ভালোই হইচই হচ্ছে, নানুবাড়ি থেকে মামা মামি আপুরা সবাই এসেছে। আমি যেতেই আমায় দেখে সকলে মুচকি হাসলো। টেবিলে গিয়ে বসতেই খালামনি নাস্তা দিয়ে গেল।

–“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে যাবি বুঝলি?”

–“রেডি হবো কেন আবার?”

–“পরশু যে বিয়ে তুই কি ভুলে গেছিস রে? সপিং করবি না?”

–“ওহ্ হো তাই তো। ভালো বলেছো আমি রেডি হয়ে যাবো।”

–“আচ্ছা তাড়াতাড়ি কর।”

কিছুক্ষণ বাদে কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। খালামনি গিয়ে দরজা খুলে দিল। অতঃপর ড্রয়িং রুমে আবার হইচই শুরু হয়ে গেল। এখন কে আসলো? সবাই আবার হইহুল্লোড় শুরু করলো কেন?

–“এই অনু.. অনু রে..”

কলি আপুর ডাকে সেদিক তাকালাম। আপু খুব আগ্ৰহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। মনে হচ্ছে কিছু জিজ্ঞেস করতে এসেছে।

–“হ্যা আপু বলো?”

–“ওই ছেলেটা কে রে?”

–“কোন ছেলে?”

–“ওই যে পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে এসেছে।”

আপুর কথায় ড্রয়িংরুমে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। ড্রয়িং আর ডাইনিং এর মাঝে একটা পর্দা দেয়া তাই কিছুটা হলেও দেখা যায়। পর্দার ফাঁকা দিয়ে দেখার প্রয়াস চালালাম। তবে ভালো মতো দেখা যাচ্ছে না।

দেখলাম খালামনি ছেলেটাকে উঠিয়ে এদিকেই নিয়ে আসছে। ওমা এদিকেই তো আসছে সত্যি সত্যি! না দেখার ভান করে খাওয়ার মনোনিবেশ করলাম। খালামনি ওকে নিয়ে আসতেই বুঝলাম এইটা তো আবিদ, অনিক ভাইয়ার ছোট ভাই। সেদিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।

–“বাবা তুমি এখানে বসো।”

–“থাক না আন্টি আমি খেয়ে এসেছি।”

–“তা বললে হয়? তুমি হলে বেয়াই বাড়ির মানুষ এমনি খালি মুখে যেতে দিব না। তুমি বসো আমি এখনি আসছি।”

আবিদকে বসিয়ে খালামনি রান্নাঘরে চলে গেল। দুজনে একদম মুখোমুখি বসে আছি। আবিদ আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে বুঝতে পেরেও তাতে মনোযোগ দিচ্ছি না। কলি আপু আমার পাশের চেয়ার টেনে ধাপ করে বসে পড়লো। আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,

–“এই অনু ওর নামটা জিজ্ঞেস কর না একটু।”

–“তুমিই করো।”

–“ইস তুই একটু কর না রে। প্লিজ প্লিজ অনু কর না!!”

–“আরেহ বাবা রে….

হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠায় সবাই আমার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আবিদ, কলি আপু দুজনেই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। এদিকে এই ঘটনায় মাথা নিচু করে বসে রইলাম আমি।

চলবে………………^_^

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here