ক্যাসিনো পর্ব -১৩

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_১৩

যারা পেজটা এখনো ফলো করেন নাই! প্লিজ ফলো করে দিবেন। এমন অনেকে আছেন, গল্প পড়েন কিন্তু লাইক কমেন্ট করেন না। কারণ টা কমেন্ট না বলতে পারলে ইনবক্সে বইলেন।

আরিফাকে বেশ কদিন থেকে কেমন মন মরা দেখাচ্ছে। যেদিন থেকে মেহমেত বলেছেন যে আরিফা কে আবার বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা। ভার্সিটির ছুটি শেষ মনোযোগ দিয়ে পড়া শুনা করতে হবে তাকে।

মরিয়মের চোখ এড়ালো না আরিফার এমন আচারন টা। বাড়ির পিছনে বড় একটা পুকুর রয়েছে। শানবাঁধানো পুকুরের পাড়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। আকাশ টা লালিমা রঙ ধারন করেছে। পাখিরা তার নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য ডানা ঝাপটাতে শুরু করেছে। আরিফা পুকুর পাড়ে বসে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। মনে হাজার বিষন্নতা।

মরিয়ম গুটিগুটি পায়ে আরিফার কাছে এসে বসল। আরিফা এমন চিন্তায় মগ্ন যে মরিয়ম এসেছে সে দিকে তার কোন গ্রুক্ষেপ নেই।
মরিয়ম মুচকি হেসে শুকনো কাশি দিল। আরিফার চিন্তার সুতোয় টান পড়ল। পাশে তাকিয়ে মরিয়ম কে দেখে। শুকনো একটা হাসি দিল,

তুমি কখন আসলে ভাবি?? এই মাত্র আসলাম। তোমার কি হয়েছে বলোতো?? কি এমন ভাবছিলে?? আর এতো চিন্তিত কেন তুমি?? আফিয়া ঠোঁট প্রশস্ত করে বলল,কত প্রশ্ন করবে আর!! আমি এক দম ঠিক আছি ভাবি। কিছু হয়নি,

তাই বুঝি?? কিন্তু তোমার চোখ তো অন্য কিছু বলছে!! আরিফা চোখ দুটো ছোট ছোট করে ভ্রু নাচিয়ে বলল কি বলছে আমার চোখ তাহলে?? তোমার চোখ বলছে যে তুমি মুখে যা বলছো তা সত্যি নয়। আমার উপর ভরসা রাখতে পারো। কি হয়েছে তোমার আমাকে বল। যখন থেকে মেহমেত তোমায় বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেছে তখন থেকে দেখছি তুমি মনোরোগে ভুগছো। ডাক্তার দেখাতে হবে না কি?? আমার চাচাতো ভাই জুবায়ের কি আসতে বলবো এক বার???

জুবায়ের নাম টা শুনতেই বুকের ভিতরের হৃদপিন্ড দ্রুত বিট করতে শুরু করেছে আরিফার ‌। চোখ বড় বড় করে তাকালো মরিয়মের দিকে। আরিফার হাত কাপছে ক্ষীণ ভাবে। মরিয়ম মনে মনে ভিষন ভাবে হাসছেন। আরিফার হচকচিয়ে যাওয়া মুখ টা দেখতে দারুন লাগছে মরিয়মের।
ভাবি তুমি এসব কি বলছো, আমি এক দম সুস্থ কাউকে ডাকতে হবে না।
মরিয়ম অন্য দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে,তার পর কন্ঠে রসিকতা মিশিয়ে বললেন। তা আমার নন্দিনীর যে প্রেমের জালে আটকা পড়েছে তা কিন্তু সে ভাবি কে বলেনি। এর জন্য কিন্তু ভাবি ভিষন মনোকষ্টে আছে। এসব কি বলছো তুমি ভাবি, আমি কোন প্রেমের জালে আটকা পড়িনি। তোমায় এসব কে বলেছে শুনি।

থাক থাক আর লুকাতে হবে না। জানি সব,কালকে রাত বেরাতে কোথায় গেছিলে শুনি🧐
আরিফার জান যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম। শুকনো একটা ঢোক গিললো সে। অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বসে আছে আরিফা। মরিয়ম এবার হো হো করে হেসে ফেললো। মরিয়মের এমন হাসিতে আরিফার হাবলাকান্তের মত চেয়ে আছে। মরিয়ম আরিফার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কন্ঠ নরম করে বললেন।

ভালোবাসো ভালোবাসা সুন্দর। তবে প্রেমে পড়ে ভালোবাসা ঠিক নয়। যদি মানুষ টাকে খুব বেশি চেয়ে থাকো তাহলে এভাবে রাত বেরাতে না দেখা করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দাও। অতিরিক্ত আবেগী হতে যেও না কখনো। সে যতখানি ভালোবাসে ততখানি ভালোবাসো। আরিফা কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,বিয়ের বিষয়ে এতো দূর ভেবে দেখিনি তো আর মাত্র এই ১মাসে চিনা পরিচিতি তে বিয়ে পর্যন্ত ভাবা টা ওল্ড ফ্যাশন। নিজেদের চিনি আগে তার পর না হয়।

মরিয়ম কিছু টা ভাবলো তার পর বললেন,,তাই যদি হয় তবে পরিচিতি হওয়ার পর তুমি কি গ্যারান্টি দিতে পারবে যে বিয়ের পর সম্পর্কের কোন অবনতি হবে না?? দেখো হাজার সম্পর্ক রয়েছে যেগুলোর বয়স ৫_৮ বছর হয় তবুও বিয়ে হয় না, আবার এমন সম্পর্ক আছে যেগুলো কয়েক দিনের হয়েও বিয়ে হয়ে যায়। আর একটা কথা লাভ ম্যারাজ ইম্পর্টেন্ট নয়। ইম্পর্টেন্ট হলো বিশ্বাস আস্থা ভরসা। আফিয়া মুচকি একটা হাসি দিল। হয়তো তার কথা গুলো পছন্দ হয়েছে।

মরিয়ম আরিফাকে বলল এসব ছাড়ো এখন আগে বল
তুমি এভাবে এক জন গ্রাম্য ডাক্তার কে এতো পছন্দ হয়ে গেল কিভাবে??

আরিফা চোখে মুখে হেসে বলল,, কোথায় আছে না এক জন সৎ মেহনতি মানুষের কাছেই এক জন নারী সব চেয়ে সুখী।
আর সব থেকে বড় কথা হলো পাশের মানুষ টাকে বুঝাতে পারার যে এক অসীম ক্ষমতা জুবায়ের ভাইয়ের মধ্যে রয়েছে তা আমাকে মুগ্ধ করেছে ভাবি। আর এতো ভালো এক জন ডাক্তার হওয়ার পর ও গ্রামে রয়ে গেছে শুধু মাত্র গ্রামের অসহায় মানুষদের সেবা করার জন্য। যেখানে শহর থেকে নিজে প্রপোজাল দিচ্ছে সরকারি হসপিটাল থেকে কাজের জন্য। এতো ভালো মানুষ কে দেখে তার জীবন সঙ্গিনী হওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। মরিয়ম ফিক করে হেসে উঠলো জুবায়ের গাধাটার এতো প্রশংসা এর আগে কেউ করেনি। এতোই যখন বুঝতে পারছো তাহলে বিয়ে নিয়ে ভাবতে এতো ভয় কেন পাচ্ছো ???

কত ভালোবাসার তো রঙ পাল্টে তাই নয় কি ভাবি!! হুমম তা ঠিক প্রথম প্রেমের এক রচ থাকে তার পর কিছু দিন পর আরেক রঙ এভাবে রঙ বদলাতে বদলাতে দেখবে সাদা কালো হয়ে গেছে সব। কিন্তু এতো কিছু ভাবলে কি চলবে বল??? তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে জুবায়ের আর পরিবারের সাথে আমি কথা বলব। তার পর পার্মানেন্ট এখানে থাকবে। আর চলে যাওয়ার কথা শুনে মনো খারাপ হবে না। আরিফার চোখে মুখে লজ্জার আভা। গাল দুটো গোলাপী রঙ পেয়েছে। কিন্তু ভাবি আমার পড়াশোনার কি হবে তাহলে?? কেন পড়াশোনার আবার কি হবে?? বিয়ের পর কি আমি পড়ালেখা করিনি,, নিজের স্বপ্ন ছিল L.L.B করার । করিনি বল?? হুমম কিন্তু তুমি পড়াশোনা টাই করলে উকিল হয়ে কখনো কোর্টে যাওয়ার ভাগ্য হলো না। মরিয়ম হাসলো তারপর বললো, পড়াশোনা মানে কি শুধু জব করাটাই বুঝায়?? শিক্ষিত এবং মনুষ্যত্ব বোধের এক চরম পর্যায় হলো পড়াশোনা। বুঝলে!!
হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে ভাবি চল বাড়িতে।

মরিয়ম আরিফার কথা ভেবে প্রশান্তি পাচ্ছে মেয়েটা একটা ভালো ছেলে কে পছন্দ করেছেন। ইনশাআল্লাহ সারাজীবন ভালো থাকবে সে।

মরিয়ম ব্যাগ থেকে সযত্নে সেই ফাইল টা বের করলো। ফাইটা হাতে নিয়েই বুক টা ছ্যাত করে উঠলো। তার পর নিজের একটা লেখা পেপার ফাইলের শেষের পাতায় রেখে দিল। তার পর এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এখন ভালোই ভালোই কাজ টা শেষ হলেই হয়।

আজ আবার শহরে চলে যাওয়ার পালা। সকাল থেকে মিহির মুখ টা পানশে হয়ে রয়েছে। মরিয়ম বুঝতে পারছেন যে আবার মিহি বন্দি খানায় আবদ্ধ হওয়ার কথা ভেবেই মন খারাপ তার । দাদু আর নানু কে গলা জড়িয়ে ধরে বার বার বলছেন।
আমি যাবো না,,দাদু ভাই বলেন না আম্মুকে আমি এখানে নানুর স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়।

মিহির এমন কথায় সকলের হাসির রোল পড়ে যায়। জাবেদ আস্বাস দিয়ে বলেছে। আমার বুবু টা তো কেবল নার্সারি তে পড়ছে। আমাদের স্কুলে তো নার্সারি নেই। ক্লাস ওয়ানে উঠো তার পর এখানেই ভর্তি করে দিবো। ঠিক আছে??
মিহির মন টা একটু ভালো হলেও পুরোপুরি ভালো হতে পারলো না।

আরিফার কথা টা বাড়িতে এতো তারাতারি বলতে নারাজ আরিফা। বলছে এই বার নয় আবার দুমাস পরে এসে সবাই কে জানাতে। বিয়ে নিয়ে এতো তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছে না। মরিয়ম তেমন কিছুই বলল না এব্যাপার নিয়ে মেয়েটাকে যে বুঝাতে সে অক্ষম তা সে বুঝেছেন।

মেহমেত যাওয়ার আগে সেই ফাইল টাই আবদুর হামিদের থেকে ফাইলে স্বাক্ষর করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নতুন একটা প্রজেক্ট পেয়েছে,এটাতে যদি সফলতা আসে তো কম্পানি এবার সপ্তম স্থান থেকে আরো উপরে উঠার চান্স রয়েছে। হামিদ হাসি মুখে ফাইলে স্বাক্ষর করছে।এক বার ফাইল টা পড়ার ও প্রয়োজন মনে করলো না। কি জন্য বা ফাইল পড়বেন তিনি নিজের ছেলের প্রতি যা বিশ্বাস রয়েছে তা অন্য কারো প্রতি তার আছে নাকি সন্দেহ। চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে মরিয়ম,শেষের পাতা স্বাক্ষর হওয়ার পর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সে। মেহমেতের মুখের ভাবাবেগ দেখে বুঝা যাচ্ছে না যে সে খুশি নাকি চিন্তিত।

মেহমেত ঘরে প্রবেশ করে ফাইল টা ব্যাগে রেখে দিল সযত্নে । তার পর ফোন হাতে নিয়ে কাউকে মেসেজ দিয়ে ফোন রেখে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। মরিয়ম সেই সুযোগে ফাইল থেকে শেষের পাতা টা খুলে নিল মরিয়ম চোখ দুটো চকচক করছে। মেসেজের আওয়াজ পেল মরিয়ম, কৌতুহল বশত মরিয়ম মেহমেতের ফোন টা হাতে নিল। মেসেজ টা দেখলো সে । মেহমেতের মেসেজ ছিল, কাজ টা সফল হয়েছে। তার প্রতিউত্তরে উপর পাশের ব্যাক্তি টি লিখেছেন,,,well done ✅ এবার জলদি ফিরে আয় তার পর আসল খেলা।

নাম্বার টা যে নিশানের তা মরিয়ম বুঝতে পারছে। নাম্বার টা টুকে নেওয়ার জন্য কলম খোঁজতেই দেখলো মেহমেত টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ঘরে প্রবেশ করে। মরিয়ম কে কিছু খোঁজতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে, এভাবে খোঁজছো?? মরিয়ম হচকচিয়ে গিয়ে বলে কিছু খোঁজছি না তো। মেহমেত কিছু টা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে। শার্ট পড়াই ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
নাম্বার টা আর নেওয়া হলো না মরিয়মের।
মরিয়ম খুব বুঝতে পারছে যে মেহমেত তার anniversary পালন করার জন্য আসেনি। তার মূল কাজ হলো এই ফাইলটি তে হামিদ খানের স্বাক্ষরের।

চলবে____????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here