ক্রাশ ডাক্তার বউ পর্ব শেষ

#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:24 [ Last part ]
সারা : মামনি এই লোকটা এখানে কি করছে?
.
মামনি : আমাকে কিছু বলেনি বললো তোর সাথে কথা আছে।
.
এরমধ্যে মাহির অফিস থেকে ফিরে এসে ঐ ব্যক্তিকে দেখে বলে।
.
মাহির : রিয়ন এখানে কি করছে?
.
রিয়ন : প্লিজ ভাইয়া আমি শুধু কিছু কথা বলে চলে যাবো।
.
মাহির কিছু বলবে তার আগে মামনি ইশারায় মাহির কে থামায়।রিয়ন সারার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওর পা জড়িয়ে ধরে বলে।
.
রিয়ন : আমাদেরকে ক্ষমা করে দেও ভাবী। তোমার সুখের সংসার আমরা তসনস করে দিয়েছি। তোমার নামে কলঙ্ক রটিয়েছি।এই পাপের বোঝা নিয়ে আর বাঁচতে পারছি না প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ তায়ালা সয়ং আমাদের শাস্তি দিয়েছে।
.
সারা বেশ অবাক হয় রিয়ন ভাবী ডাকায়।আজ প্রথম ভাবী বলে সম্বোধন করেছে। আগের মত আর স্টাইলিশ ও নেই। আপনজনকে হারিয়ে বোধহয় এই অবস্থায়।
.
সারা : তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই অনেক।ক্ষমা চাইতে হলে আল্লাহ তায়ালার কাছে চাও। আমার তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি তোমার সব অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন আর তুমি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারো।
.
রিয়ন উঠে চোখ মুছে বলে।
.
রিয়ন : শুধু তুমি নও ভাবী। আমি আরো একজনের সাথে অন্যায় করেছি।মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলে রিয়া মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ওকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে এতগুলো মাস আমি সেই মানুষটা কে খুঁজে বেরিয়েছি। জানি না তাকে পাবো কি না।
.
সারা : আল্লাহ তায়ালা যদি তোমার প্রতি সদয় হন তাহলে নিশ্চয়ই পাবে। তুমি… ( সারা আর কিছু বলবে তার আগে হিয়া কিচেন থেকে এসে বলে। )
.
হিয়া : ভাইয়া এসে গেছো অফিস থেকে ( মাহির কে উদ্দেশ্য করে ) ভালো হয়েছে। আমি কফি নিয়ে এসেছি সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।
.
মামনি : তুই আবার এগুলা করতে গেলি কেনো? বাড়িতে কাজের লোক আছে কি করতে।
.
হিয়া : পরে বকা দিও এখন খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে?
.
রিয়ন : হিয়য়য়া!
.
হিয়া বেশ চমকে উঠে সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে।
.
হিয়া : তুমি এখানে?
.
মাহির : তুমি চেনো ওকে?
.
হিয়া ছলছল চোখে সারার দিকে তাকিয়ে বলে।
.
হিয়া : আপু উনার সাথে দুর্ভাগ্য বশত আমার বিয়ে হয়েছিল।তার পরের কথা তুমি তো সব জানো!
.
হিয়ার কথা শেষ না হতেই রিয়ন ওকে জড়িয়ে ধরে বলে।
.
রিয়ন : আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি তোমার পবিত্র ভালবাসা বুঝতে পারিনি।জানো এতগুলো মাস তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি। শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তোমাকে আর এক তিল পরিমাণ কষ্ট পেতে দেবো না ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো।
.
হিয়া রিয়ন কে ছাড়িয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বলে।
.
হিয়া : তা আর হয় না। তুমি তো আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলে। তাহলে আজ কেনো ফিরে আসতে চাইছো?
.
সারা : বোন শোন তোদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আমার কথা বলা ঠিক না তবুও আমি বলছি।রিয়ন যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন ওকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত। তাছাড়া রিয়ন ওর কাছের মানুষগুলোকে হারিয়ে যথেষ্ঠ শাস্তি পেয়েছে ওকে আর দূরে সরিয়ে রাখিস না।
.
এরপর বাড়ির সবাই হিয়া কে বুঝালে হিয়াও মেনে নেয় রিয়ন কে।রিয়ন যখন জানতে পারে ওর একটা পুতুলের মত একটা মেয়ে আছে তখন রিয়ন দিয়া কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করে।রিয়নের এই অবস্থায় দেখে সবাই ভালো ভাবে কথা বলেও মাহির বলে না। সন্ধ্যার পর সবাই নিচে হল রুমে বসে বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে। সারা ওর রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসগুলো বিনা অনুমতিতে সারার আঁচল আর চুলের সাথে খেলা করছে।এক মগ কফি সারার দিকে এগিয়ে দেয় কেউ। সারা অনুসরণ করে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে কফি মগ টা নেয়।এক চুমুক কফি মুখে নিয়ে কফি মগটা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে।
.
সারা : আকাশের কালো মেঘ কেটে গিয়ে বিশাল থালার মত চাঁদটা স্পট দেখা যাচ্ছে।তাই না মাহির?
.
মাহির : তা ঠিক কিন্তু তুমি রিয়ন কে ক্ষমা করে ভুল করোনি তো?
.
সারা : তুমি তো জানো তোমার থেকে বেশি মানুষ আমি চিনি।রিয়ন ওর মাকে হারিয়েছে। নিজের চোখের সামনে আদরের বোনকে মানসিক ভারসাম্য হারাতে দেখেছে।ও নিজের কাজে অনুতপ্ত।ওর রইল বাকি ক্ষমার কথা আমি ক্ষমা করার কে? আমি মাত্র ওকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে সৎ পথে চলার।
.
মাহির সারার দিকে তাকিয়ে বলে।
.
মাহির : তা না হয় বুঝলাম কিন্তু আমার কি হবে?
.
সারা ভ্রু কুঁচকে মাহিরের দিকে তাকালে মাহির ওর কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলে।
.
মাহির : কি বললাম বুঝতে পারেনি তাই তো?
.
সারা মাথা নেড়ে না বলে। মাহির বারান্দার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দুই হাত বুকে গুজে দিয়ে বলে।
.
মাহির : আমার বউ আমাকে আগের মত ভালোবাসে না আর আদরও করে না। বাড়ির সবার খেয়াল রাখে শুধু মাত্র আমার দিকে তার নজর নেই। এখন বলুন তো আমি কি করলে আমার #ক্রাশ_ডাক্তার_বউ আমাকে খুব ভালোবাসবে?
.
সারা মুচকি হেসে কফি মগের সারার খাওয়া অর্ধেক কফিটা মাহিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
.
সারা : আপনি তো দেখি খুব বড় সমস্যায় পড়েছেন!
.
মাহির এক চুমুক কফি খেয়ে বলে।
.
মাহির : তাহলে আর বলছি কি?
.
সারা : আমার কাছে মনে হয় এর সমাধান আছে।
.
মাহির কৌতূহল হয়ে বলে।
.
মাহির : কি সমাধান?
.
সারা মাহিরের দিকে এগিয়ে এলে মাহির সোজা হয়ে দাঁড়িয়। সারা মাহিরের পায়ের উপর উঠে গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।
.
সারা : আপনি আমার সাথে রাতে দেখা করুন।দেখি আপনার স্ত্রীকে বলে ভালোবাসা আর আদর দিতে পারি কি না।
.
এই বলে মাহিরের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে যায়। মাহির সারার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক চিলতে হেসে আবার কফি মগে চুমুক দেয়।
.
ভালোবাসার সময় বোধহয় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। কেটে গেছে আট মাস সারা আর মাহিরের ভালোবাসার ছোট্ট সুখের সংসারের। আরফিন-আকাশ, জারা-মাহিন,মাহি-আরাফ এদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। একদিনে আরফিন আর জারার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর সবাই মিলে মাহিনদের বাগান বাড়িতে ঘুরতে গেলে তখন জারা মুখ ফসকে মাহি আর আরাফের কথা বলে দেয়।ওরা সারার বিয়ের পর থেকে প্রেম করছে এ কথা শুধু জারা জানতো।এর কিছুদিন পর পরিবারিক ভাবে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। রিয়া সে এখন সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে গেছে। রিয়া যে হসপিটালে ভর্তি ছিলো সে হসপিটালে এক ডাক্তার রিয়া কে ভালোবাসে ফেলে। রিয়া তাকে মাহিরের বেপারে সব বলে তাও তিনি রিয়া কে সুস্থ করে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রিয়াও রাজি হয়ে যায়।এক মাস আগে তার সাথে রিয়ার বিয়ে হয়েছে। রিয়া মাহির আর সারার কাছে ক্ষমা চেয়েছে ওরাও রিয়া কে ক্ষমা করে দিয়েছে। হিয়া ওর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। সারা হিয়া কে ওর কাজ থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি দিয়েছে কারণ হিয়া এখন ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট।রিয়ন তার কথা রেখেছে হিয়া আর দিয়া কে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে। বলতে গেলে সবাই যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। রোদ আর রোদ্রি কে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে।
.
প্রতিদিনের মত সারা সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বাড়ির সবার জন্য সকলের ব্রেকফাস্ট আর রোদ আর রোদ্রির টিফিন বানিয়ে নেয়। রোদ আর রোদ্রি কে ঘুম থেকে তুলে ওদের রেডী করিয়ে মাহির কে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ হতে বলে রোদ আর রোদ্রি কে নিয়ে নিচে চলে যায়। সারা ওদের খাইয়ে দিতে দিতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে সাতটা বাজতে চাললো। ওদের তাড়াতাড়ি করে খাইয়ে দিয়ে সারা রেডী হতে চলে যায়। সারা রেডী হয়ে এসে দেখে মাহির খাবার নিয়ে বসে আছে তা দেখে সারা মুচকি হেসে দিয়ে মাহিরের পাশে বসে। মাহির আর সারা সব সময় একসাথে খায় যতই কাজ থাকুক না কেনো,যতই সময়ের অভাব থাকুক না কেনো ওরা সব সময় একসাথে খাবে। খাবার খেয়ে মামনি আর বাবাই কে বায় বলে ওরা চারজনে গাড়িতে উঠে। রোদ আর রোদ্রি পিছন সিটে,সারার মাহিরের পাশের সিটে। রাস্তায় প্রথমে সারার হসপিটালে পড়বে, আর মাহিরের অফিসের পাশেই রোদ আর রোদ্রির স্কুল। মাহির সারার হসপিটালে সামনে গাড়ি থামালে সারা তিন জনের দিকে তাকিয়ে থাকে কেউ কিছু বলছে না দেখে সারা রাগ করে গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালে দিকে হাঁটা শুরু করে এক এক বলে।
.
সারা : দেখে নিবো তিনটাকে আমাকে বায় না বলে যাওয়া। রাতে কাউকে আমার পাশে ঘুমাতে নেবো না।
.
মাহির গাড়ি স্টাট দিলে রোদ বলে।
.
রোদ : পাপা গাড়ি থামাও মাম্মা কে বায় বলতে মনে নেই।( এখন আর ওরা আধো আধো কথা বলে না, ভালো ভাবে কথা বলতে পারে।)
.
মাহির : তাড়াতাড়ি চল না হলে তোর মাম্মা রেগে যাবে।
.
সারা রেগে হেঁটে যাচ্ছে তখন রোদ আর রোদ্রি মাম্মা বলে ডাক দিলে সারা পিছন ফিরে দেখে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকে। সারা তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে বসে ওদের জিজ্ঞাসা করে।
.
সারা : কি হয়েছে তোমাদের?
.
রোদ আর রোদ্রি সারার দুই গালে চুমু খেয়ে বলে।
.
রোদ আর রোদ্রি : সরি মাম্মা আজ বায় বলতে ভুলে গেছিলাম।
.
সারা : ইটস ওকে আমার কলিজারা।( এই বলে ওদের মুখে চুমুতে ভরিয়ে দেয় )
.
মাহির রোদ আর রোদ্রি কে বলে।
.
মাহির : এবার তোমরা চোখ বন্ধ করো আমি তোমাদের মাম্মা কে বায় বলে নি।
.
মাহিরের কথা শুনে ওরা দুজন খিলখিল করে হেসে দুহাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে। মাহির সারার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
.
মাহির : আপাদত এইটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকো।রাত না হয় এর থেকে বেশি আদর করবো।
.
মাহিরের কথা শুনে সারা মাহিরের হাতে একটা চিমটি কেটে বলে।
.
সারা : অসভ্য!
.
.
এইভাবেই মাহির আর সারার ভালোবাসার সংসার চলতে থাকে।রোদ,রোদ্রির দুষ্টুমি আর মাহির,সারার অফুরান্ত ভালোবাসা নিয়ে।

🍁সমাপ্ত 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here