ক্রাশ পর্ব -২৪

#ক্রাশ
#পর্ব_২৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
সামিরা বউ এর সাঁজে স্টেজে বসে আছে।
বিয়েটা অনেক ধুমধাম করেই হচ্ছে।
রনি এবং তার বাবার সামর্থ্য কম থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে।
কেউ বুঝতেই পারছে না বিয়েতে শুধুমাত্র পাত্রপক্ষ উপস্থিত।
কন্যাপক্ষের কেউ রাজি না এ বিয়ে তে সেটা কেউ বুঝতেই পারছে না।
রনির বাবা মাও নিজের থেকে কাউকে বলছে না কারন বাহিরের মানুষ এ নিয়ে নানা কথা বলবে আর তা শুনে সামিরার মন খারাপ হতে পারে।
বিয়ে নাই হতেই তারা সামিরাকে মাথায় তুলে রেখেছে।

মোহনা সাগরের খালার বাড়ি থেকে ডাইরেক্ট রনির বাড়িতে এসেছে।
কারন সে সামিরাকে কথা দিয়েছিলো বিয়েতে সে এটেন্ড থাকবে।
মোহনা রনি আর তার পরিবারের ব্যবহার দেখে তাজ্জব লেগে গেলো।
মোহনাকে বিয়ে তে এটেন্ড দেখে তারা যে কি খুশি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
তারা মোহনাকে দেখামাত্র ঘরে নিয়ে গেলো।
আর তার সামনে হরেক রকমের খাবারদাবার আনলো।
মোহনা জানালো সে এখন কিছু খাবে না।
কিন্তু তারা মোহনার কোন কথা শুনলো না।
জোর করেই তাকে খাওয়ালো।
সামিরাও বেশ হাসিখুশি।

সামিরার এমন হাসি মাখা মুখ দেখে মোহনা সামিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

তুমি একদম ঠিক কাজ করেছো।
একদম পারফেক্ট একটা বর আর তার সাথে পারফেক্ট শশুড় শাশুড়ী পেয়েছো।
আসলে বাড়িঘর, টাকা পয়সা দেখে যারা মেয়েকে বিয়ে দেয় তারাই জীবনে ঠকে যায়।
মানুষের আচার আচরণ ব্যবহার সবার আগে।
কথাগুলো বলতেই মোহনার চোখে পানি এসে গেলো।
কারন সামিরার শশুড় শাশুড়ী কে দেখে তার নিজের শশুড় শাশুড়ীর কথা মনে পড়ে গেলো।
যাদের কাছে মনে হয় বাড়ির বউ রা শুধু রান্না করবে আর বাচ্চাকাচ্চা সামলাবে।
তাদের আর কোন কাজ থাকতেই পারে না।
তারা কখনোই নিজেদের পছন্দমতো চলতে পারবে না।
শশুড় বাড়ির লোকজন যে ভাবে চলতে বলবে সেইভাবেই চলতে হবে।
মোহনা তার চোখের পানি মুছে ফেললো।
আর সামিরাকে বললো তুমি একদম চিন্তা করো না।
সব ঠিক হয়ে যাবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তুমি যাকে ভালোবাসো তাকেই সারাজীবন এর জন্য পেতে যাচ্ছো।
এর চেয়ে আর আনন্দের কি হতে পারে!!!

সামিরা তখন বললো,
আমার আজ আনন্দের দিন হলেও তোমাদের জন্য খারাপ লাগছে।
আজ আমার কারনে তোমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরলো।
ভাইয়া কি সিদ্ধান্ত নিলো ভাবি?
বলেছে কিছু?

মোহনা তখন বললো, তুমি আজকের দিনে অন্তত তোমার ভাই এর নাম নাও না।
ওর কি সে ক্ষমতা আছে নাকি?
ও কখনো নিজের থেকে কিছু বলবেও না আর আমাদের সম্পর্ক টা ঠিক ও হবে না।
তুমি আমাদের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের জন্য ভাবো এখন।
এই বলে মোহনা সামিরাকে স্টেজে নিয়ে গেলো।।
রনিও পাত্র সেজে বসে আছে।।।
দুইজনকে অনেক সুন্দর লাগছে।
মোহনা ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।

হঠাৎ সাগর এলো সেখানে।
সাগর কে দেখামাত্র রনি আর সামিরা দুইজনই স্টেজ থেকে নেমে গেলো।
কারন সামিরা কিছুতেই নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
সামিরা বললো,
ভাইয়া তুই সত্যি এসেছিস?
রনির বাবা মাও এগিয়ে এলো।
তারা সাগর কে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলো।
সাগর কে নিয়ে রনির বাবা মার এতো মাতামাতি দেখে সে খুবই আশ্চর্য হলো।
সাগর কোন কথাই বললো না।
কারন সে নিজের থেকে বিয়ে তে আসে নি।
মোহনাকে খোঁজার জন্য এসেছে।
মোহনার বাড়িতেও গিয়েছিলো সে।
এদিকে মোহনা ফোনটাও অফ করে রেখেছে।
কোথাও খুঁজে না পেয়ে সে আন্দাজেই এখানে এসেছে।
কিন্তু রনির বাবা মা ভাবছে সে তার বোনের বিয়েতেই এসেছে।

রনির বাবা মা বললো খুব খুশি হলাম বাবা তোমাকে দেখে।
তোমার বাবা মা থাকলে আরো বেশি ভালো লাগতো।
যাই হোক তোমরা দুইজন যে এসেছো সেটাই অনেক।
অন্তত সামিরা একটু হলেও খুশি হয়েছে।
কাল থেকে দেখছি মেয়েটার মন খারাপ।
সাগর দেখলো রনির মা শুধু সামিরাকে নিয়েই কথা বলছে।
সামিরাকে একদম নিজের মেয়ের মতো ভাবছে।
মায়েরা যেমন মেয়েদের নিয়ে টেনশন করে সেই রকম রনির মা ও করছে।
সাগর বুঝে গেলো সামিরাই ঠিক ছিলো।
আর সে ভিলেন হয়ে সব উল্টেপাল্টে দিলো।
মাঝখান থেকে তার সম্পর্কে ফাটল ধরলো।

সাগর তখন মিথ্যা কথা বললো যে যতই হোক সামিরা তার একমাত্র বোন।
সে না এসে কি করে থাকতে পারে?
তখন রনির বাবা বললো, আর দেরী না করে বিয়ের কাজ শুরু করা হোক।
কি বলো বাবা?(সাগরের দিকে তাকিয়ে)
সাগর বললো হ্যাঁ অবশ্যয়।
কাজী সাহেব বিয়ের কাজ শুরু করে দিলো।
এদিকে মোহনা সাগর কে দেখে সেখান থেকে সরে গেছে।
সাগর মোহনাকে খুঁজতে লাগলো।
এখনি ছিলো এখানে।
সে আবার কই গেলো?

মোহনা সাগরের থেকে পালিয়ে বেড়ালেও সাগর তাকে ঠিক খুঁজে বের করলো।
সাগর মোহনার হাত ধরে একটা নিরিবিলি জায়গায় আনলো।
মানুষজন থাকার কারনে মোহনা কোন বাঁধা দিলো না।
সে সাগরের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো করছো টা কি?
এখানে আনলে কেনো?
আর তুমি কি জন্য এখানে এসেছো?
সাগর মোহনার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে বললো আমাকে না বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছো কেনো?
এখানে যে আসবে আমাকে একটিবার বললে কি হতো?
পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি সেই সকাল থেকে।
মোহনা তখন বললো খুঁজতে হবে কেনো?
আর আমি তো কোন ছোট মানুষ না যে হারিয়ে যাবো?
সাগর মোহনার হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো আর বললো,
হারিয়ে যাবে না সেটা বুঝলাম কিন্তু কোন বিপদ তো হতে পারে?
মোহনা তখন বললো,
আর কি বিপদ হবে?
যা বিপদ হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
সাগর তখন মোহনার হাত ধরে বললো, বাড়ি চলো।
আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
মোহনা সাগরের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো যাবো না আমি।
যে বাড়িতে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা উঠেছে সে বাড়িতে আমি যাবো না।
আর এক সপ্তাহ পরেই আমার কলেজ খুলবে সেজন্য ভাবছি দুই এক দিনের মধ্যেই রাজশাহী যাবো।
সাগর আবার মোহনাকে টেনে নিয়ে এলো।
রাজশাহী যাবে ভালো কথা।
তার আগে তো আমাদের সম্পর্ক টা ঠিক করতে হবে।
এইভাবে চলতে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো।

মোহনা তখন বললো তুমি আমাদের সম্পর্কের কি ঠিক করতে চাচ্ছো?
যেখানে তোমাদের ফ্যামিলির মন-মানসিকতায় ঠিক নেই।
সাগর তখন বললো সবাই এক হয় না।
সেজন্য নিজেকেই ঠিক করে নিতে হয়।
তুমি চলো আমার সাথে।
তারপর যা হবে দেখা যাবে।

মোহনা তখন বললো,
তুমি তোমার বাবাকে আমার ব্যাপারে বলেছো?
আমাকে যে ডিভোর্স দিতে চাও না সেটা কি উনি শুনেছেন?
সাগর তখন বললো বাবাকে বলি নি।
তবে দাদুকে বলেছি।
কিন্তু দাদুও বাবার মতোই কথা বললো।
তখন মোহনা বললো তাহলে আমাকে কিভাবে ও বাড়িতে নিয়ে যেতে চাচ্ছো?
আমাকে সবাই আবার অপমান করুক সেটাই চাচ্ছো তো?
তাহলে চলো আরেকবার তোমার ফ্যামিলির সবার বকা খেয়ে আসি।
অসভ্য,অভদ্র বলে গালিগালাজ করবে সেগুলো শুনে আসি।
তারপর তোমার হুঁশ হবে।
সাগর তখন মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বললো প্লিজ তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।
সব ঠিক হয়ে যাবে।
একটু তো সময় লাগবেই।
মোহনা তখন বললো ছাড়ো আমাকে।
যেতে হবে।
সবাই মনে হয় খুঁজছে।
এই বলে মোহনা চলে যেতে ধরলো।

সাগর তখন বললো তোমাকে নিয়ে আলাদা করে যদি থাকি তখন থাকবে আমার সাথে?
মোহনা সে কথা শুনে দাঁড়ালো।
আর বললো, কি বললে?
সাগর তখন বললো, বাবা যদি রাজি না হয় তখন তো আমাকেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
তোমাকে নিয়ে আলাদা থাকবো আমি।
তারপর বাকি টা দেখা যাবে।
মোহনা তখন সাগরের কাছে গিয়ে বললো এই তোমার ভালোবাসা?
খুব তো বলো বাবা মাকে অনেক ভালোবাসো।
আজ বউ এর কারনে বাবা মা কে ছেড়ে আলাদা থাকতে চাচ্ছো?
সাগর তখন বললো, তাহলে আমি আর কি করতে পারি?
এছাড়া তো কোন উপাই দেখছি না।
মোহনা তখন বললো, ঠিক আছে।
তোমার সাথে আলাদাভাবেই থাকলাম।
কিন্তু এভাবে কতদিন থাকবে?
তোমার বাবা মা দিনে রাতে হা হুতাশ করতে থাকবে।
কত কষ্ট করে ছেলে বড় করে আজ সে বউ নিয়ে আলাদা থাকে।
তখন কিন্তু আমরা একটুও ভালো থাকতে পারবো না।
বিশেষ করে তুমি নিজেও শান্তি পাবে না।
আলাদা থাকা কোন সমস্যার সমাধান না।

সাগর তখন রাগ করে বললো,
আমি বুঝতে পারছি তুমিও ডিভোর্স চাচ্ছো।
তাহলে ক্লিয়ার করে বলছো না কেনো?
আমাকে যে আর ভালো লাগছে না সেটা বললেই তো হয়।

মোহনা তখন সাগর কে বললো,
তোমার চোখ সারাজীবন যে শুধু বই এর পাতাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো আবার তার প্রমান দিলে।
আসলে ভালোবাসা বলতে যে একটা জিনিষ আছে তুমি আসলেই সেটার মানে বোঝ না।
আমি যদি তোমাকে আর নাই চাইতাম সেটা ক্লিয়ার করে বলে দিতাম।
লুকোচুরি করার প্রশ্নই আসে না।
একবার যার হাত ধরেছি সারাজীবন তার সাথেই থাকতে চায়।

–তাহলে এমন করতেছো কেনো?
আমাকে এভাবে দূরে দূরে রাখতেছো কেনো?
আমি এভাবে আর থাকতে পারবো না।

তখন মোহনা বললো এতো অধৈর্য্য কেনো তুমি?
একটু ধৈর্য্য ধরো।
আর আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলাফেরা করো।
তোমার বাবা মা যদি সত্যি তোমাকে ভালোবাসে তাহলে নিশ্চয় তোমার কষ্ট বুঝতে পারবে।
তারা নিজে এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
আর তারা যখন আমাকে নিজে এসে নিয়ে যাবে তখন কিন্তু তাদের মনে আমাকে নিয়ে কোন ক্ষোভ থাকবে না।
আমি একটা সুখী পরিবার চাই সাগর।
শুধু স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকলেই সংসার সুখের হয় না।
আমি সবাই কে নিয়ে একসাথে থাকতে চাই।
সাগর তখন বললো এটা জীবনেও সম্ভব না।
আমার ফ্যামিলি কে তুমি তাহলে এখনো চেনো নি?
ওরা জীবনেও তোমাকে নিতে আসবে না।
আর আমাদের একসাথে থাকাও হবে না।
মোহনা তখন বললো তাহলে আর কি করার?
হয় অপেক্ষা করো তা নয় অন্য কাউকে বিয়ে করিও।

–কি বলছো এসব?
আবার কাকে বিয়ে করবো?
মোহনা হাসতে হাসতে বললো যাকে মন চায়।
তুমি না খুঁজে পেলে আমাকে বলিও।
আমি খুঁজে দেবো নি।
এই বলে মোহনা চলে গেলো।

সাগরের এবার অনেক বেশি রাগ হতে লাগলো।
সাগর সিদ্ধান্ত নিলো আর সে বার বার মোহনাকে এভাবে বিরক্ত করবে না।
বার বার তাকে জোড় করতেও আসবে না।
মোহনা যদি তাকে ছাড়া থাকতে পারে তাহলে সে কেনো পারবে না?
সাগর মোহনার সাথে আর একটা কথাও বললো না।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে একা একা বাড়ি চলে গেলো।

মোহনা বুঝতে পারলো সাগর অনেক বেশি মন খারাপ করেছে।
কিন্তু তার কিছুই করার নাই।
সাগর কে যদি সে পাত্তা দেয়,
তার সাথে একা একা থাকা শুরু করে,
তখন সাগরের পরিবার জীবনেও ঠিক হবে না।
তারা তখন আরো বেশি বিগড়ে যাবে।
এই বিচ্ছেদে শুধু যে সাগরের কষ্ট হচ্ছে তা কিন্তু নয়,
মোহনার ও ভীষণ খারাপ লাগছে।
সে তার মনের কষ্ট মনেই রাখলো।
সাগরের সামনে কিছুতেই প্রকাশ করলো না সে।

মোহনা একা একা তার বাড়ি চলে গেলো।
মোহনাকে দেখে তার বাবা মা ভাবি নানা প্রশ্ন করতে লাগলো?
সবাই কেমন আছে?
সাগর এলো না কেনো?
মোহনা সবার প্রশ্নের উত্তর দিলো যে সবাই ভালো আছে।
সে একা একা এসেছে কারন সে কালকেই রাজশাহী চলে যাবে।
মোহনার ভাবি তখন বললো তুই আবার মেসে থাকবি?
তোর শশুড় বাড়ির লোকজন কিছু বলবে না?
আর সাগর কই থাকবে?

মোহনা তখন বললো সাগর কই থাকবে মানে?
ওর বাড়ি আছে না?
সেখানে থাকবে।
তাছাড়া ওর আর কিছুদিন পর রেজাল্ট বের হবে।
তারপর সে নিজেও বাহিরে গিয়ে থাকবে।

মোহনার ভাবি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।
তিনি মোহনার মুখ চোখ দেখে বুঝতে পারলেন সাগরের সাথে মোহনার কিছু হয়েছে।
তিনি মোহনাকে ঘরে নিয়ে গেলেন।
আর বললেন, তোর যেহেতু এখন বিয়ে হয়েছে তাই আমার মনে হয় মেসে না থেকে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে পারিস।
কারন মেসে থাকলে সাগরের সাথে থাকবি কি করে?
মোহনা সে কথা শুনে বললো ভাবি তুমি কি শুরু করলে?
বিয়ে হয়েছে দেখে কি আর মেসে থাকা যাবে না?
আর আমি কি সবসময় মেসেই থাকবো?
কলেজ ছুটি হলেই বাড়ি চলে আসবো।
বা যখন মনে হবে তখনও আসবো।
মোহনার ভাবি তখন বললো তার মানে তোরা দুইজন এখন দুইজায়গায় থাকবি?
যেটা ভালো মনে হয় তোদের।
মোহনার ভাবি এ নিয়ে আর কিছু বললো না।

মোহনা পরের দিন সকাল থেকে তার ব্যাগ গোছাতে লাগলো।
সে একবারের জন্যও সাগর কে ফোন দিলো না।
আর সাগরও দিলো না।
মোহনা তার ভাই এর সাথে রাজশাহী চলে গেলো।

মোহনা চলে যাওয়ার তিনদিন পরে সাগর মোহনাদের বাড়ি আসলো।
কারন সে ভাবতেই পারে নি মোহনা সত্যি সত্যি এভাবে চলে যাবে।
সাগর কে দেখে সবাই অনেক খুশিই হলো।
সাগর তখনও জানে না যে মোহনা বাড়িতে নেই।
সাগর এদিকওদিক তাকাতে লাগলো।
তখন মোহনার ভাবি বললো,
কি ব্যাপার সাগর?
কাকে খুঁজছো?
–না মানে মোহনাকে দেখছি না যে?
মোহনার কথা শুনে ভাবি চমকে উঠলো।
তিনি যা আন্দাজ করেছিলেন সেটাই হলো।
তখন মোহনার ভাবি সাগর কে বললো,সত্যি করে বলো দেখি তোমাদের কি হয়েছে?
সাগর বললো কই কি?
তখন ভাবি একটা ধমক দিয়ে বললো কিছু যদি নাই হতো তাহলে তো তোমার জানার কথা মোহনা কই আছে?
সাগর তখন বুঝতে পারলো তাহলে মোহনা সত্যি সত্যি রাজশাহী চলে গেছে।
সে আর একটা কথাও বললো না।
তখন মোহনার ভাবি বললো,কি হয়েছে সাগর?
মোহনাকেও অনেক চিন্তিত দেখলাম।
আর মোহনা যে রাজশাহী চলে গেছে সেটা তুমি জানো না?
সাগর তখন বললো কই কি হয়েছে?
আমি জানি তো ও রাজশাহী আছে।
মোহনার ভাবি সাগর কে এ ব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
যেহেতু সাগর কিছু বলতে চাচ্ছে না।

কিন্তু সাগর হঠাৎ করে তার ভাবিকে বললো,
ভাবি মোহনা আপনাকে কিছুই বলে নি আমাদের ব্যাপারে?
তার ভাবি মিথ্যে কথা বললো হ্যাঁ বলেছে।
এই মিথ্যা কথা না বললে মোহনার মতো সাগরও কিছুই বলতো না।

তখন সাগর বললো তাহলে বলুন তো ভাবি আমি এখন কি করতে পারি?
মোহনার ভাবি তো আগামাথা কিছুই বুঝছে না।
তিনি কৌশল করে বললেন,
কি আর করবে?
তুমিও রাজশাহীতেই থাকো।
একটা বাসা ভাড়া নাও।
তারপর দুইজনে মিলে ওখানেই থাকো।
মেসে থাকাটা কেমন দেখায় না?
তাছাড়া ও মেসে থাকলে তুমি তো ওর সাথে দেখাও করতে পারবে না।
তখন সাগর বললো,আপনার ননদিনীর জিদ সে আমার সাথে আর থাকবে না।
যতক্ষন না আমার বাবা মা তাকে নিতে আসবে?
সে কিছুতেই আমাদের বাড়িতেও যাবে না।
আর আলাদা বাসাতেও থাকবে না।
জানেন ভাবী?
সে তার হাত পর্যন্ত আমাকে ধরতে দেয় না।
আর এদিকে বাবা মাও তো রেগে আছে ওর উপর।
কারন বাবা মা মনে করে মোহনা তাদের মানসম্মান নষ্ট করেছে।
তারা তো রাগ করে বলেই দিয়েছে তাকে আর বাড়িতে উঠতে দেবে না।
আমাদের ডিভোর্স নিয়েও কথা উঠেছে।

সাগরের কথা শুনে ভাবি বুঝে গেলো এদের মধ্যে মারাত্নক রকমের ঝগড়া চলছে।
যেখানে ডিভোর্স এর কথা উঠেছে সেখানে তো ছোটখাটো কোন ঝামেলা হয় নি।
তাছাড়া মোহনা যে অতিরিক্ত মাত্রার জেদী মেয়ে তিনি ভালো করেই জানেন।
যদিও ভাবি তাদের পুরো কাহিনী জানেন না তবুও তিনি সাগর কে একটা বুদ্ধি দিলেন।
সাগর সেই বুদ্ধি শুনে বললো,
এতে কাজ হবে তো?
ভাবি বললো ১০০% কাজ হবে।
তাছাড়া মোহনা এতোটাও কঠিন না যে তার মন গলবে না।
সবার আগে তোমার মোহনাকে ঠিক করতে হবে।
তারপর তোমার পরিবার কে।
সাগর খুশিমনে বাড়ি চলে গেলো।

চলবে,,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।
মোহনার ভাবি সাগর কে কি বুদ্ধি দিতে পারে????
আন্দাজ করো সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here