#খেলাঘরে_তুমি_আমি
পর্ব —০৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
ঘুমটা ভাঙতেই ধপ করে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।লক্ষ্য করছি আমার শরীর ঘামছে।কপাল বেয়ে কয়েট ফোঁটা ঘাম বিছানার চাদরের ওপরে পড়লো।পাশেই পারমিতা আর রিসালাত ঘুমিয়ে আছে।আমি ছুটে মিথিলার ঘরের দিকে গেলাম।দরজাটা খুলে ওর ঘরের ভেতরে ঢুকি।তারপর ওয়্যারড্রপটা চেক করতে শুরু করি।শুধু ওয়্যারড্রপ নয় ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস তন্ন তন্ন করে চেক করলাম।কিন্তু কোথাও কোনো পি স্ত ল অথবা বু লে ট খুঁজে পেলাম না।ভাবতেই পারছি না এরকম একটা স্বপ্ন কেনো দেখলাম।এমনিতেই সারাদিন টেনশনের ওপর দিয়ে গিয়েছে,এসব তারই ফল। নিজেকে সামলে আবারো ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।গিয়ে দেখি রিসালাত ঘুম থেকে উঠে কান্না করছে আর পারমিতা ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।যে মানুষটা অন্যের বাচ্চাকে এতোটা ভালোবাসতে পারে তার পক্ষে নিজের বোনকে খু ন করা কি সত্যিই সম্ভব?কি লাভ হলো পারমিতার নিজের বোনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে।পারমিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো।
—কোথায় গিয়েছিলে এতো রাতে?
—একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।
—ওয়াশরুম তো রুমের পাশেই,কিন্তু আমি যে তোমায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসতে দেখলাম।
—আরে বাবা জল খেতে গিয়েছিলাম।
—দেখো না,রিসালাত সেই কখন থেকে কান্না করছে।সামলাতে পারছি না কিছুতেই।
—আমার কাছে দাও,আমি দেখছি।
পারমিতা রিসালাতকে আমার কোলে তুলে দিলো।আমি ওকে নিয়ে ঘরের বেলকনির দিকে গেলাম।বাইরে তখন আলো ফুটেছে।রিসালাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ও আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে।রিসালাতকে নিয়ে একটা অদ্ভুত ভয় আর আতংক আমার মনে দানা বেঁধে আছে সেই সকাল থেকে।ওকে পারমিতার কাছে কিছুতেই একলা ছাড়তে মন চায় না।যে আমার স্ত্রীকে
খু*ন করতে পারে সে আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করবে না কে বলতে পারে।তাই এখন থেকে নিজের ছেলেকে যতোটা সম্ভব সাবধানে রাখতে হবে।আর পারমিতা মিথিলাকে কোনো খু ন করিয়েছে সেই রহস্যের সমাধান করতে হবে আমায়।এবং সেটা যতো দ্রুত সম্ভব।নিজের স্ত্রীর অপরাধীকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না আমি,তাতে সে যেই হোক না কেনো।
–
–
–
সকালবেলা মিথিলা চোখের আড়াল হতেই আমি ওর ফোন থেকে সেই নম্বরটা টুকে নিলাম। যে নম্বর থেকে কল করে টাকার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছিলো।এরপর আমি আমার এক পরিচিত বন্ধুকে কল করি।
—রিফাত,কেমন আছিস…?
—ভালো আছি দোস্ত,তুই কেমন আছিস?
—আছি কোনরকম।
—তোর খবর কি,কতোদিন ধরে কোনো খোঁজ খবর নেই।তা শুনলাম নতুন বিয়ে করেছিস নাকি,
—দোস্ত এগুলো নিয়ে পরে কথা হবে। ইমিডিয়েটলি তোর একটা হেল্প লাগবে আমার।
—হেল্প… কিকরম হেল্প বল?
—একটা নম্বর দিচ্ছি তোকে,একটু ডিটেইলস বের দিবি আমায়।
—ওহহ,এই ব্যপার।ঠিক আছে বের করে দেবো।কিন্তু আজ যে হবে না,দুদিন সময় লাগবে।
—কোনো ব্যপার না।এই হেল্পটুকু কর আমার তারপর সব খুলে বলছি।
রিফাতের সাথে কথা বলে আমি ফোনটা রেখে দিলাম।যাক আমার কাজ কিছুটা হলেও এগিয়েছে।হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ যেনো আমার কাঁধের ওপরে হাত রাখলো।পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে।
—কি হয়েছে বাবা…সেই কাল থেকে লক্ষ্য করছি তোর কোনো কাজে মন নেই,কেমন জানি একটা উদাস উদাস ভাব।
—মা,একটা কথা বলবো তোমায়!
—হ্যাঁ,বাবা বল।
—আমি পারমিতাকে বিয়ে করে কোনো ভুল করলাম না তো?
—মানে,কি বলছিস এসব বাবা।বিয়ে করে ভুল করেছিস মানে?
—মা আমার মনে হয় এই বিয়েটা করে আমি একদম ঠিক করিনি।কোথাও একটা ভুল হয়েছে আমাদের।
—দেখ তোর কথা কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কি এমন ভুল করেছিস তুই পারমিতাকে বিয়ে করে? বুঝিয়ে বল আমায়।
—সেগুলো বলার সময় এখনো আসেনি মা।আর যখন সময় আসবে তখন বলতে হবে না সব দেখতেই পাবে তোমরা!
—বাবা তোকে জোর করে বিয়ে করিয়ে কি তোর প্রতি কোনো অবিচার করে ফেললাম আমরা?
মা কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমায় প্রশ্ন করে।
—মা,তোমরা যাই করো না কেনো জ্ঞানত আমার জন্য কখনো খারাপ চাইবে না আমি জানি।কিন্তু কেউ একজন আছে যে এই পরিবারের ক্ষতি চায়,শুধু চায় না সে অনেক বড়ো ক্ষতি করেছে আমাদের।
—কে কি ক্ষতি করেছে?
—মিথিলার সেদিন দূর্ঘটনাবশত মৃত্যু হয়নি,ওকে ইচ্ছাকৃত ভাবে খু ন করা হয়েছে!
আমার কথা শুনে মা যেনো আঁতকে উঠলো।সে আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না কিছুতেই।
—এগুলো তুই কি বলছিস বাবা…খু ন করা হয়েছে মানে?কে খু ন করেছে আমাদের মিথিলাকে?
—সেটা জানতে যে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।সময় হলে সবটা সামনে আসবে, তবে এটা ঠিক মিথিলাকে খু ন করা হয়েছে।আর সেটা ওর কাছের মানুষরাই করেছে।
এই বলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।এরপর একটা জরুরী কাজে বাড়ির বাইরে যাই,সেখান থেকে অফিসে।ফিরতে ফিরতে আমার রাত হয়ে গেলো।ঘরের মেইন দরজায় নক করতে যাবো তখন লক্ষ্য করি দরজা ভেতর থেকেই খোলা।আমাদের বাড়ির মেইন দরজা কখনোই এভাবে খোলা রাখা হয় না,এটা নিশ্চিত অসাবধানতাবশত ঘটেছে।দরজাটা খুলে আমি ভেতরে ঢুকলাম।তারপর ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে যাই।কিচেনের সামনে আসতেই রান্নাঘর থেকে মা আর পারমিতার কন্ঠস্বর শুনতে পাই।মনে হচ্ছে ওরা দুজন কোনো একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া করছে।আমি ধীরে ধীরে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলাম,শোনার চেষ্টা করি ওরা ঠিক কোন ব্যপারে কথা বলছে।রান্নাঘরের জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাতেই দেখি পারমিতা মায়ের একটা হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
—কি বলছেন এসব আপনি মা..আপনার ছেলে আমাকে সন্দেহ করছে…?
পারমিতা মাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো।
—তোমার কথা সরাসরি বলেনি।তবে ও মনে করে ওর স্ত্রীর খু ন আর কেউ নয়,ওর কাছের লোকজনই করেছে।পারমিতা আমার ভয় হচ্ছে অর্ণব বুঝে যায়নি তো মিথিলার খু ন আর কেউ নয় তুমি করিয়েছো….
মায়ের কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।এগুলো কি শুনছি আমি নিজের কানে?
মা আগে থেকেই জানতো মিথিলার খু ন ওর বোন পারমিতা করিয়েছে..,তাহলে কি এসবের ভেতরে পারমিতার সাথে সাথে আমার মাও জড়িত….?
চলবে….