খেলাঘরে তুমি আমি পর্ব -০২

#খেলাঘরে_তুমি_আমি
পর্ব—০২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—কি ব্যপার পারমিতা?তোমার কথায় আমি তোমার বোনকে অপারেশনের নাম করে মে রে ফেললাম।এতো বড়ো একটা রিস্ক নিলাম শুধু তোমার জন্যে,সেই তুমি টাকা নিয়ে ঘোরাচ্ছো আমায়…এর ফল কি হতে পারে জানো তুমি?

লোকটার কথা শুনে অর্নবের পুরো শরীরটা এক ঝটকায় কেঁপে উঠলো,হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো…

অর্ণব ফোনটা তুলতে যাবে ঠিক তখন পারমিতা ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো।

—একি,অর্ণব…তুমি আমার ফোন নিয়ে কি করছো?

—তখন থেকে একটা নম্বরে কনটিউয়াসলি কল এসে যাচ্ছিলো তোমার ফোনে,তারপর আমি…

—তারপর তুমি আমার ফোনটা রিসিভ করলে তাই না?দেখো এটা কিন্তু একদম ঠিক করলে না।আমি চাই না কেউ আমার প্রাইভেট জিনিসে হাত দিক।

—আমি সত্যিই খুব দুঃখিত পারমিতা।আর তুমি এতোটা বুঝতে পারলে তোমার ফোনে হাতই দিতাম না আমি।

—আচ্ছা ঠিক আছে,আসলে আমিও চাইনি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে।কিন্তু কি করবো বলো তো,কেউ আমার প্রাইভেট জিনিসে হাত দিলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারি না।তুমি প্লীজ কিছু মনে করো না,

এই বলে পারমিতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।ও চলে যেতেই অর্ণব ধপাস করে বিছানার ওপরে বসে পড়ে।ওর সারা শরীর ঘামতে শুরু করেছে।একটা সামান্য ফোন ধরাতে কোনো মানুষ এতোটা রিয়েক্ট করতে পারে না,পারমিতার এভাবে এগ্রেসিভ হয়ে ওঠার কারণ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে অর্ণব।কিন্তু একটা বিষয় ওর মাথায় ঢুকছে না এখনো পারমিতা মিথিলার নিজের বোন।ওদের দুজনের ভেতরকার সম্পর্ক কতোটা মজবুত ছিলো তার স্বাক্ষী অর্ণব নিজেই।কি এমন কারণে পারমিতা ওর বোনকে খু ন করলো এই প্রশ্ন অর্ণবকে ভাবিয়ে তুলছে।ও কি অর্ণবকে ভালোবাসতো বা ওর প্রতি কোনো দূর্বলতা ছিলো?যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে বাসররাতে অর্ণবকে এতো কাছে পেয়েও কেনো নিজেকে গুটিয়ে নিলো,কেনো অর্ণবের কাছে নিজেকে উজাড় করে দিলো না।ওর ব্যবহার দেখে কোনোভাবেই মনে হয় না পারমিতা অর্ণবের প্রতি কোনোদিনও আসক্ত ছিলো।পারমিতার মতো একটা শান্ত শিষ্ট ঠান্ডা মাথার মানুষ এতোটা ভয়ংকর কিকরে হয়?একমাত্র পারমিতা নিজে আর সৃষ্টিকর্তা ভালো জানেন।

আজ থেকে ঠিক ছয়মাস আগের কথা,যা আজও পুরোপুরি মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি অর্ণব।চোখ বুঝলেই যে দৃশ্যগুলো ভেসে ওঠে আর অর্নবকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।

রাতের বেলা অর্ণব আর ওর গ র্ভ ব তী স্ত্রী মিথিলা বিছানার ওপরে বসে আছে।মিথিলার মাথাটা অর্ণবের কাঁধের ওপরে।মিথিলা অর্ণবের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো।

—এই পৃথিবীতে আমি দুটো মানুষকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি,সেই দুজন কে জানো তো?
মিথিলা ওর হাসবেন্ড অর্ণবকে প্রশ্ন করে।

—জানি…একজন আমি…কিন্তুজন অন্যজন কে?

—আছে একজন,তবে তাকে আমি এখন পর্যন্ত নিজের চোখে দেখিনি,শুধু অস্তিত্ব অনুভব করেছি।আর সেই অনুভূতি আমায় বুঝিয়েছে তোমার পরে যদি বেশী কাউকে ভালোবেসে থাকি তো তাকেই…

—আরে বাবা,এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে পরিষ্কার করে বলতেই তো পারো।আমি বুঝতে পারছি না কিছুই।

—সত্যিই বুঝতে পারছো না?

—না সত্যিই বুঝতে পারছি না…

—একটু মন দিয়ে ভাবো আমার কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারবে।

অর্ণব কিছুক্ষণ ভেবে হো হো করে হেসে উঠলো।

—ওহহহ…এবারে বুঝতে পেরেছি।তুমি আমাদের বাবুর কথা বলছো,

—এটা বুঝতে এতো সময় লাগলো,তুমি আসলে কোনো কাজের না।

—সেটা অবশ্য ঠিক বলেছো, আমি কোনো কাজের না।বাবা মাও ছোটোবেলায় একই কথা বলতো,

—আচ্ছা অর্ণব।ধরো আমি যদি অপারেশন থেকে সার্ভাইভ না করি,আর ফিরে না আসতে পারি তোমার কাছে।তুমি কি ভুলে যাবে আমায়,আরেকটা বিয়ে করবে নিশ্চয়ই।

মিথিলার কথা শুনে অর্ণব মিথিলার মুঠোর ভেতর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো।

—কতোবার বলেছি তোমায়,এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলবে না আমার সামনে একদম।

—সরি গো,আমি তো জাস্ট মজা করে বলেছি কথাটা।রাগ করে না বাবুটা আমার!

—রাগ করবো না তো কি করবো?

—হুমমম,তোমার এই সামান্য ব্যপারে নিয়ে ছেলেমানুষের মতো রাগ করাটা আমার কিন্তু ভালোই লাগে।আমি চাই তুমি সারাজীবন এরকম ছেলেমানুষই হয়ে থাকো।

এই বলে মিথিলা অর্ণবকে বুকটা জড়িয়ে ধরলো।অভিমান ভুলে অর্ণব ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

এর একসপ্তাহ পরে।

মিথিলার প্র স ব বেদনা উঠলো।ওকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।বিকেল বেলা একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় মিথিলা।অর্ণব এই খুশিতে দোকান থেকে মিষ্টি আর ফুল কিনে হাসপাতালের উদ্দেশ্য ছুটলো।কিন্তু ওর এই খুশি আর দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী রইলো না।হাসপাতালের গেটের সামনে আসতেই অর্ণব জানতে পারে মিথিলাকে যে ওটিতে নেওয়া হয়েছিলো সেখানে নাকি দূর্ঘটনাবশত আ গু ন লেগেছে।যদিও বাচ্চাটাকে আগেই বের করে আনা হয়েছে তাই সে বেঁচে যায়।আ গু ন নিয়ন্ত্রণের পরে মিথিলার ছাই ভ স্ম ছাড়া আর কিছুই দেখার মতো সুযোগ মেলেনি কারোর ভাগ্যে।অর্ণব প্রথম কয়েকদিন নিজেকে বিশ্বাস করাতেই পারেনি যে মিথিলা আর বেঁচে নেই।যেহেতু মিথিলার মৃ ত দেহ নিজের চোখে কেউ দেখেনি,ওর বিশ্বাস ছিলো মিথিলা বেঁচে আছে।ও আ গু নে পু ড়ে মা রা যায়নি।কিন্তু আজ যখন ছয়মাস অতিক্রম হয়ে গিয়েছে অর্ণব এখন পুরোপুরি বিশ্বাস করে মিথিলা আর নেই।যে মানুষটা ওকে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো সে আর বেঁচে নেই,তার কোনো অস্তিত্ব নেই এই পৃথিবীতে।রিসালাতের মধ্যে নিজের ভালোবাসা মিথিলাকে খুঁজে বেড়ায় অর্ণব,ওর মুখের দিকে তাকিয়েই অর্ণব মিথিলার মৃ ত্যু র শোক কিছুটা হলেও ভুলতে পেরেছে।অর্ণব এখন বুঝতে পারে সেদিন ও.টি.তে আ গু ন লাগা কোনো দুর্ঘটনা ছিলো না,পরিকল্পিত ছিলো।আর এই কাজটা মিথিলার বোন পারমিতাই কোনো এক ডাক্তারের সাহায্যে করেছে।



পরেরদিন।অর্ণব মিথিলার মৃ ত্যু র পরে আর ওদের ঘরে থাকে না।বাড়িতে নতুন একটা রুমে শিফট করেছিলো ও।এখন নিজের ছেলে আর পারমিতাকে নিয়ে সেই নতুন ঘরেই থাকছে।আজ যেনো মিথিলার কথা একটু বেশিই মনে পড়ছে অর্ণবের,নিজের মনটাকে হালকা করতে প্রায় ছয়মাস বন্ধ থাকা ঘরটা প্রথমবারের মতো খুললো।তারপর ঘরের ভেতরে প্রত্যেকটা জিনিস খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।মিথিলার ওয়্যারড্রপটা খুলে অর্ণব ভেতরের জিনিসগুলো দেখতে লাগলো।হঠাৎ একটা শাড়ির দিকে চোখ পড়ে অর্ণবের।হ্যাঁ,এটা তো সেই শাড়ি যেটা অর্ণব বিবাহ বার্ষিকীতে গিফট করেছিলো নিজের স্ত্রীকে।অর্ণব শাড়িটা ওয়্যারড্রপ থেকে বের করে আনে।অর্ণব দেখলো কিছু একটা যেনো শাড়ির ভেতর থেকে মেঝের ওপরে পড়লো।শব্দ হতেই অর্ণব সেদিকে তাকিয়ে চমকে উঠে।

একটা পি স্ত ল পড়ে আছে মাটির ওপরে!কিন্তু মিথিলার শাড়ির ভেতরে পি স্ত ল এলো কোথা থেকে,আর এই পিস্তল দিয়ে মিথিলারই বা কি এমন কাজ ছিলো?অর্ণব লক্ষ্য করলো পিস্তলটার পাশে কাগজে মোড়ানো একটা জিনিস পড়ে আছে।কাগজটা খুলতেই ভেতর থেকে একটা বু লে ট বেরিয়ে আসলো।আর কাগজটায় মোটা অক্ষরে লেখা :

“শুধু অর্ণবের জন্য”

লেখাটা দেখে এক মূহুর্তেই চিনতে দেরী হলো না অর্ণবের-এটা মিথিলার ছাড়া কারোর হাতের লেখা হতেই পারে না।কাগজটা দেখে মাথাটা পুরোপুরি ঘুরে গেলো অর্ণবের।

—তার মানে মিথিলার পরিকল্পনা ছিলো অর্ণবকে খু ন করার….কিন্তু কেনো…?

নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না অর্ণব।ওর পায়ের হাঁটুগুলো রোমাঞ্চ আর অদ্ভুত শিহরণে থরথর করে কাঁপতে লাগলো।

চলবে…..

নতুন পাঠক পাঠিকারা পেজ ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here