খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ২৭+২৮+২৯

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-২৭

— এতোই যখন ভালবাসেন তাহলে প্রকাশ করছেন না কেনো আয়ান। তাসনুর কথা কানে যেতেই আয়ানের হাত থেকে ফোন পড়ে যায়।

— আয়ান বলে তুমি এখানে?
— হ্যাঁ আমি। কেনো এসে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি নাকি আপনার সত্যিটা জেনে ফেলেছি বলে..
-কিসের সত্যি তোতলিয়ে বলে আয়ান। তাসনু একটা তাছ্যিলের হাসি দিয়ে বলে ধরা পড়ে গেছেন আপনি আয়ান। আপনি ও যে আমাকে ভালবাসেন এটা স্পষ্ট আমার কাছে এখন। তাহলে কেনো আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছেন কেনো আমাকে দূরে দূরে রাখছেন বলে কেঁদে দেয় তাসনু।

– তুমি ভুল ভাবছো তাসনু। আমি কাউকে ভালবাসি না। ওইটা তোমার মনের ভুল ধারণা। আর এই ছবি গুলো হঠাৎ সামনে চলে এসেছে ফোন ঘাটতে ঘাটতে তাই আর কি।

– এখনো? এখনো মিথ্যা বলবেন আমাকে। আপনি যে ভালো নেই আমি খুব ভালো করে জানি। তাহলে কেনো করছেন এমন। আমাকে কি একটু ভালবাসা যায় না আয়ানের কলার ধরে ঝাকিয়ে বলে তাসনু। আয়ান অসহায়ের মতো তাসনুর দিকে তাকায়। আজ কয়দিন পর তাসনুকে এত কাছ থেকে ভালো করে দেখছে।

— মুখটা শুকিয়ে গেছে তাসনুর এই কদিনে। চোখের নিচে হাল্কা কালি পড়েছে। হয়ত ঠিক মতো ঘুমায় না। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না। ঠোঁট দুটো কেমন নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। আয়ানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে তাসনুকে এমন দেখে। আয়ানের এখন বেশি কষ্ট তাসনুকে দেখে।

– আয়ান তাসনুর দুই গালে হাত রাখে। তাসনু এবার অবাক হয় সাথে মুখে হাসি আসে।
— দেখো তাসনু তুমি খুব ভালো করে জানো কেনো আমি এমন করছি। আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই। হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালবাসি অনেক আগে থেকে তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু আমার হাত-পা বাধা। আমি চাইলেও তোমাকে কখনো আপন করতে পারব না। আমার মাকেও আমি অনেক ভালবাসি আর তার মুখের হাসি আমার কাছে সব থেকে আগে। তাই আমি আমার মায়ের জন্য সব কিছু করতে পারি।

– তোমার বাবা আমাদের সম্পর্ক কখনো মানবে না এটা তুমিও খুব ভালো করে জানো। তারপরও কেনো এমন পাগলামি করছো। নিজেকে এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছো। কি অবস্থা করেছো এই কদিনে নিজের দেখেছো। আমাকে কি সারাজিবন তোমার কাছে অপরাধী করে রাখতে চাও। আমি তোমাকে এই ভাবে দেখতে পারছি না। আমি আমার আগের তাসনুকে ফিরে চাই। যে সব সময় হাসবে মজা করবে। দিবে আমার সেই তাসনুকে ফিরিয়ে যার আমি না থাকলেও তার মুখে হাসি ঠিক থাকবে।

– তাসনু এবার আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে আমি পারব না। কিছুতেই পারব না আপনাকে ছাড়া ভালো থাকতে। আপনার অনুপস্থিতিতে মুখে হাসি রাখতে। প্লিজ আমাকে আপনার করে রাখুন। কেনো কাঁদাচ্ছেন আমাকে। আমি আর সয্য করতে পারছি না আয়ান। আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে বলে আরো শক্ত করে ধরে আয়ানকে। আয়ানের চোখেও পানি আসে কিন্তু সেটা আড়ালেই শেষ করে ফেলে। তাসনুর সামনে তার দুর্বল হলে চলবে না।

– তাসনু প্লিজ ছাড়ো কেউ দেখলে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে।
— হোক সর্বনাশ। দেখুক সবাই আমি কাউকে ভয় পাইনা। তাও আপনাকে ছাড়ব না আমি।
— আয়ান জানে তাসনুকে এখন বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। তাও বুঝাতে হবে নাহলে এই ভাবে চলতে দেওয়া যায়না।

-আমার মা কখনো এখানে আসতে পারবে না। পরিবারের ভালবাসা পাবে না কখনো। যেটুকু উপায় ছিল তোমার সাথে সম্পর্কে তাও শেষ হয়ে যাবে। আচ্ছা তাসনু তুমি মানতে পারবে এমনটা আমাদের জন্য এই পরিবারের আবার দুরত্ব। তোমার ফুপিকে সারাজিবন এই বাড়ির জন্য চোখের পানি ফেলতে দেখতে পারবে। তাসনু এবার আয়ানকে ছেড়ে দেয়। দূরে সরে দাড়িয়ে আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

– আয়ান ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে বলে পারবে। তাসনু আয়ানের ভাষা বুঝতে পারে৷ আয়ান তাকে কি বলতে চেয়েছে সেটাও বুঝতে পেরে আর কিছু না বলে দৌড়ে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।

– আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুপিয়ে উঠে। এতখন খুব কষ্টে তাসনুর সামনে নিজেকে সামলে রেখেছে। দুই হৃদয়ের যে খনন হচ্ছে। জ্বলে পুড়ে যে ক্ষত হচ্ছে তা কি সহজে সেরে উঠবে কখনো। সত্যি কি সারবে কখনো? নাকি এই দহন চলতে থাকবে যতদিন শ্বাস প্রশ্বাস চলবে ততদিন। এর থেকে কি কোনো দিন মুক্তি নেয়। আয়ান দেয়ালে একটা পাঞ্চ মারে জোরে আর তাতে হাত কেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এমন সময় রনি আসে ঘরে। আয়ানের হাত থেকে রক্ত পড়তে দেখে দৌড়ে এসে হাত ধরে বলে কি হয়েছে হাতে। কাটলে কি করে। ইসস কতখানি কেটে গেছে। বসো আমি ফাস্টেড বক্স নিয়ে আসি।

– তুমি এত ব্যস্ত না হয়ে বসো। তেমন কিছু হয়নি অল্প একটু। ঠিক হয়ে যাবে।

– তোমার কাছে অল্প লাগছে এটা। কত রক্ত ঝরছে দেখেছো। আচ্ছা কাটলো কি করে। আয়ান এবার হকচকিয়ে যায় রনির কথায় কি উত্তর দিবে এখন। আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে রনি আবার বলে বলো।

– আয়ান আমতাআমতা করে বলে আসলে.. আচ্ছ আমি আগে এটা ব্যান্ডেজ করার ব্যবস্থা করি
ওয়েট বলে ফাস্টেড বক্স নিয়ে আসে। আর আয়ান সস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।

———————
কেটে যায় আরো এক সপ্তাহ।

— তুহিন অনেক চেষ্টা করে তানুর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তানুর অনুপস্থিতি এখন খুব করে পোড়াচ্ছে তুহিনকে। তানুর শুন্যতা তুহিন খুব বুঝতে পারছে এখন। তুহিন যে তানুকে ভালবেসে ফেলেছে এখন বুঝতে পারছে। কিন্তু কই লাভ তাতে এখন। মানুষটাই তো আজ কাছে নেই।

– তুহিন আজ দুদিন ভার্সিটি যাচ্ছে না। তার কিছু ভালো লাগছে না। তানুর হাসি মাখা মুখ, বাচ্চামু কথা, তুহিনকে নানা ভাবে জ্বালানো বিরক্ত করার সব মুহুর্ত তুহিন ভাবছে আর চোখের কার্নিশ বেয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রুকণা।

– একটা বার অন্তত আমাকে মাফ চাওয়ার সুযোগ দাও তানু। কোথায় আছো তুমি। তুমি না আমাকে ভালবাসো তাহলে আজ কিভাবে দূরে থাকছো আমাকে ছেড়ে। কেনো এমন লুকাচুরি করছো আমার সাথে৷ আমি যে আর পারছি না। তোমার না থাকার দহনে যে আমি সব সময় পুড়ছি। ফিরে এসো তানু। তোমাকে আমার প্রোয়জনীয় যে। একা একা বলতে থাকে তুহিন। দরজার আড়াল থেকে তুহিনের মা সব শুনতে ছিল।। তুহিন খুবই চাপা স্বভাবের। কষ্টের কথা কখনো মুখ ফুটে কাউকে বলে না। আজ কদিন তুহিনকে কেমন মনমরা আর সব সময় চিন্তিত দেখে তুহিনের মা রেহেনার সন্দেহ হয়। কিন্তু আসলে কি হয়েছে জানে না। কিন্তু এখন সব ক্লিয়ার তার কাছে। রেহেনার চোখেও পানি চলে আসে তুহিনের কষ্ট দেখে। সে দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে।

তানুকে দুদিন পর পাওয়া যায়। তানু তার একটা ফ্রেন্ডের কাছে ছিল দুদিন। তারপর ফিরে আসে একাই। কিন্তু ভার্সিটি যায় না সে৷ তুহিন যখন জানতে পায় তানু ফিরে এসেছে তখন তানুর সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয়নি। তানু তুহিনের সাথে দেখা করেনি। তার একদিন পর তানু বাবা মাকে বলে তার নানুর বাড়ি চলে যায় কিছুদিন থাকবে এই বলে। মুলত তুহিনের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তানুর। তুহিনের সামনে আর সে যেতে চায় না।

– তুহিন পরের দিন একই ভাবে তানুর সাথে কথা বলতে আসে তখন শুনে তানু বাড়ি নেই কোথায় আছে জানতে চাইলে কেউ বলে না। কারণ তানু বাড়িতে বারণ করে যায় কাউকে যেনো না বলে সে কোথায় আছে। তানুর বাবা মা তাই মেনে নিয়েছে কারণ তারা জানে তানু কেমন জেদি। যদি আবার রাগ করে দূরে চলে যায়৷ তাদের তো একমাত্র মেয়ে৷ একমাত্র বাঁচার অবলম্বন তানু তাদের। তাই সব মেনে নিয়েছে তানুর সিদ্ধান্ত।

– তাসনুর বিয়ের দিন করা হয়েছে এক সপ্তাহ পরে। রনির বাবা মা এক সপ্তাহ পরে দেশে আসে। তারপর দিন করা হয়। আর মাত্র হাতে ৬ দিন আছে তাসনু আর রনির বিয়ের। তাসনু এখন আরো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। কারো সাথেই কথা বলে না। হাসে না। আয়ানের সামনে ভুলেও যায় না। রনির সাথে কথা বলে না তবে ভদ্রতার খাতিরে যতটা বলা যায় ততটা বলে যদি রনি তাসনুর সাথে কথা বলার জন্য আসে তো। নুসরাত অনু সবারই মন খারাপ।

– তুর্য রিক আয়ানকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তাতে লাভ হয়নি৷ আয়ান তার সিদ্ধান্তে অটুট। রায়হান শেখ আঁখিকে এখানে আসতে বলেছে তাসনুর বিয়ে উপলক্ষে। কিন্তু আয়ান এখনো কিছুই জানাইনি আঁখিকে। নুরজাহান বিবি অনেক খুশি আঁখি আসবে তাই। কতদিন পর তার মেয়েকে দেখবে সে৷ জমিদার বাড়ির সবাই প্রায় উৎসুক আখির জন্য শুধু আফজাল শেখ বাদে।

– আয়ান আঁখিকে ফোন দেয়৷ প্রথম রিং হতে কেটে যায়৷ তারপর দ্বিতীয় বার ফোন বাজতে আঁখি এসে ধরে৷ মুলত সে রান্না ঘরে ছিল তাই ফোন ধরতে দেরি করে। আখি ফোন ধরে এক হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে থাকে শাড়ির আঁচল দিয়ে।

– ফোন ধরেই বলে কেমন আছিস বাবা। কবে ফিরবি তুই। তোকে ছাড়া যে আর ভালো লাগছে না। তোর বাবা বোন খুব মিস করছে তোকে। আর আমারও ভালো লাগছে না তোকে ছাড়া। চলে আয় বাবা৷ আমার লাগবে না আর কিছু। তোরাই আমার সব। জীবনের অর্ধেক বছর তো পার করে দিলাম এই ভাবে৷ বাকি জিবনটাও কেটে যাবে ঠিক।

– আয়ান বুঝতে পারছে তার মা কতটা আক্ষেপ থেকে কথা গুলো বলছে৷ আয়ান চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস ফুকে।
“” মা তাসনুর বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে আয়ান চুপ মেরে যায়। তার কণ্ঠনালী দিয়ে আর কোনো কথা আসছে না যেনো।
— তাসনুর বিয়ে শুনে আঁখি চমকে উঠে বলে কি বলছিস। হঠাৎ বিয়ে, কবে ঠিক হলো সব।

– আয়ান এবার নিজেকে সামলে বলে অনেক আগে থেকে ঠিক ছিল। আর এক সপ্তাহ আছে বিয়ের৷ তোমাকে আসতে বলেছে নানাভাই। তুমি কি আসবে না? করুণ কন্ঠে বলে আয়ান।
— আখির চোখ ছলছল করে উঠে। তার বাবা তাকে যেতে বলেছে। তার মানে সে জমিদার বাড়ি আবার যাবে। সবার সাথে আবার দেখা হবে। খুশিতে চোখ দুটো চকচক করে উঠে আঁখির।

– সত্যি বলছিস তুই। আমাকে সত্যি বাবা যেতে বলেছে৷ আয়ানের মুখে এবার হাসি আসে। কারণ সে বুঝতে পারছে তার মা কতটা খুশি হয়েছে। কিন্তু চোখে যে পানিও আছে এটাও জানে আয়ান। তাই বলে আগে চোখের পানি মুছো বলছি। তোমাকে না কান্না করতে বারণ করেছি। তোমার কান্না আমার ভালো লাগে না কেনো বুঝো না।
— আঁখি চোখে পানি মুছে হেসে বলে আমি আর কাঁন্না করব না৷ এই দেখ হাসছি। আয়ানও হাসে এবার।।
— তোমাকে খুব মিস করছি মা। আমার খুব ইচ্ছে করছে ছুটে তোমার কাছে যেতে৷ তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শান্তির ঘুম দিতে। কেমন দম বন্ধ লাগছে চারিপাশ আমার আয়ান বলে আঁখিকে।।

– তাসনুকে ভালবাসিস তুই আয়ান। আঁখির এমন কথায় চমকে উঠে আয়ান। চুপ করে থাকে আয়ান কিছু বলে না।

— কি হলো বল বাবা৷ তুই তাসনুকে ভালবাসিস বল মায়ের কাছে।।
– এই সব কি বলছো মা। আর কদিন পর ওর বিয়ে আর তুমি কি বলছো এই সব। আমি কেনো তাসনুকে ভালবাসতে যাব কাপা কাপা কন্ঠে বলে আয়ান।
— আমি মা আয়ান তোর। ছোট থেকে তোকে দেখে আসছি আমি। আমাকে অন্তত তোকে চেনাতে আসিস না। আমি অনেক আগেই জানতাম তুই তাসনুকে ভালবাসিস। ভালবাসা তো কোনো দোষের কিছু না বাবা। তাহলে কেনো এড়িয়ে যাচ্ছিস। তাছাড়া আমিও একদিন প্রেম করেছি আমিও একদিন কাউকে ভালবেসেছি। তাই কোনোটা ভালবাসা আর কোনটা মায়া মোহ বুঝি আমি।

– আয়ান আর কিছু বলতে পারে না। কারণ তার মা সত্যি যে জেনে গেছে সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।।
— তুই আমার কথা ভেবে এইভাবে নিজের ভালবাসাকে বিসর্জন কেনো দিচ্ছিস বাবা৷ আমি কি তাহলে কোনো দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারব৷ আমার ছেলে সারাজিবন কষ্ট পাবে আমার সামনে সেটা কি করে সহ্য করি আমি।
— এখন এই সব বলে কোনো লাভ নেই মা। আর ৬ দিন পর তাসনুর বিয়ে। আর আমি চাই ওর বিয়েটা ঠিকঠাক হয়ে যাক। রনি খুব ভালো ছেলে মা।।তাসনুকে খুব সুখে রাখবে।
– সত্যি কি তাসনুকে সুখি করতে পারবে? তুই নিশ্চিত তাসনু ভালো থাকবে এতে।।
— আয়ান চুপ থাকে৷ কি বলবে এর উত্তরে তার জানা নেই কিন্তু এখন যে আর কিছু করারও নেই এটাও সত্যি…
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-২৮

— জমিদার বাড়ি সাজানো হচ্ছে দুইদিন আগে থেকেই। জমিদার বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা বিশেষ আয়োজন তো হওয়ায় লাগবেই।
— তাসনু নিজেকে যতটা কঠিন দেখায় সবার সামনে ভেতর ভেতর আরো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এত সাজ-সজ্জা, আয়োজন কোন কিছু তার ভালো লাগছে না। মন চাইছে সব কিছু শেষ করে দিতে।

— বিয়েটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আপু অনু বলে তাসনুকে। তাসনু কিছু বলে না অনুর কথার পতি উত্তরে। শুধু একটা হাসি দেয়। যে হাসিতে প্রকাশ পায় হাজার বেদনা, না পাওয়ার গ্লানি, অভিযোগ, অভিমান।
— আচ্ছা এমন হতে পারে না আয়ান ভাইয়া হঠাৎ এসে বলল চলো তাসনু আমরা পালিয়ে যায়। আমি তোমাকে চাই। সত্যি যদি এমন মিরাক্কেল হয় তাহলে খুব ভালো হতো তাই না রে অনু নুসরাত বলে। তাসনু বলে তোরা দয়া করে এই বিষয়টা বাদ দিবি। জোর করে কখনো কিছু হয় না। তাছাড়া আমি কি করব আমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে৷ সবাই ভালো থাক, সাথে আমিও শান্তি চাই অনেক শান্তি বলে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

— ভাই হাতে এখনো চার দিন সময় আছে দয়া করে এখনো বোঝার চেষ্টা কর। সঠিক টা ভাব। পরে কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাবে রিক বলে। নিজেকে তো অনেক কষ্ট দিয়ে দেখলি কি লাভ হলো তাতে। এখনো সেই কষ্ট পেয়ে যাচ্ছিস আরো পেতে থাকবি। ভাই এখনো বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখ। তাসনুকে দেখেছিস কি হাল হয়েছে মেয়েটার। চোখ মুখের দিকে তাকানো যায় না। নুসরাত তো বলল ও নাকি ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করছে না। নিজের যত্ন নিচ্ছে না। তুই কিন্তু কখনো ভালো থাকতে পারবি না ওকে কষ্ট দিয়ে ।

— আয়ান নিরব দর্শক হয়ে রিক তুর্যর কথা শুনছে। আসলে কি বলবে সে। কষ্ট সেও তো কম পাচ্ছে না। তাসনুকে ছাড়া যে সে নিজেও ভালো থাকবে না এটা জানার পরও কিছু করতে পারছে৷ যদি নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে যায় তাহলে তার মা সারাজিবন একটা নিরব কষ্ট বয়ে বেড়াবে। হয়ত প্রকাশ করবে না তার মা। কিন্তু মনে ঠিকই আফসোস দুঃখ থেকে যাবে এই বাড়ির মানুষের প্রতি।

— আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে রিক বলে তুই এখনো চুপ করে থাকবি৷ কিছু করবি না৷ আমাদের কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেনো রেগে বলে ।
— আমার কিছু বলার নেই নতুন করে। তোরা আমাকে এই নিয়ে জোর না করলে খুশি হবো হাত জোড় করে বলে আয়ান।

– তুর্য বলে খুব আফসোস করবি ভাই সেদিন কোনো লাভ হবে না একটা কথা বলে রাখলাম। তাই বলে রিককে নিয়ে বের হয়ে যায় ঘর থেকে। আয়ান চোখ বন্ধ করে ফেলে সাথে সাথে এক ফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। ছেলেরা নাকি কাঁদে না। তাদের নাকি কষ্ট হয়না। কিন্তু সেটা সব সময় ভুল ধারণা। ছেলেরাও কাঁদে। তারাও কষ্ট পাই। কিন্তু তাদের কান্নাটা কেউ দেখতে পায় না। হৃদয় জুড়ে যে দহন শুধু যার হয় সেই একমাত্র উপলব্ধি করতে পারে।

— রিক তুর্য আয়ানের ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য হাটতে থাকে তখন সামনে পড়ে অনু নুসরাত। সবার মুখে একটু বেদনার ছাপ। দুটি মানুষের জন্য কেউ ভালো নেই। আচ্ছা ভাইয়া কি এখনো বুঝতে পারছে না তাসনু আপুর কষ্টটা। কেনো এমন করছে ভাইয়া। আমার আর আপুকে এইভাবে দেখতে ভালো লাগছে না নুসরাত বলে।

– তোমাদের কি মনে হয় আমাদের কি ভালো লাগছে এমন দেখতে দুজনকে। কিন্তু আয়ানের দিকে টাও একবার ভাবা উচিত। তাসনুকে যে ও অনেক ভালবাসে সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু আন্টির জন্য আয়ান কিছু করতে চাইছে না আর না কিছু করতে পারছে।

— তাহলে এইভাবেই দুটি ভালবাসা শেষ হয়ে যাবে ভাইয়া অনু তুর্যকে উদ্দেশ্য করে বলে। অনুর কথায় সবার মুখ মলিন হয়ে যায়।
— আচ্ছা আমরা যদি আন্টির সাথে কথা বলি তাহলে কেমন হয়। আন্টি আয়ানকে খুব ভালবাসে আন্টি নিজের জীবন দিয়ে হলেও আয়ানকে খুশি করতে পিছুপা হবে না৷ আর এখানে তো খুবই নরমাল বিষয় রিক বলে কথাটা।

— সবাই একটু ভাবার পরে বলে দারুণ আইডিয়া৷ এখন একমাত্র আন্টি পারে কোনো কিছু করতে। তাহলে চল রিক আন্টিকে ফোন দিয়ে সব বলি। তোমরা যাবে আমাদের সাথে অনু নুসরাতকে বলে। ওরা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তারপর সবাই ছাদে চলে আসে।

———————
–আমজাদ চৌধুরী আঁখির উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত প্রায়। কারণ একে তো তার ছেলে বাড়ি ছেড়ে এতদিন আছে। তার উপর ওই বাড়ি গিয়ে তার ছেলে শেষে কিনা ওই বাড়ির মেয়ের প্রেমে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে। আঁখি আমজাদ দুজনেই আয়ানকে ভীষণ ভালবাসে। আয়ানের কষ্ট মানে দুজনের পৃথিবীটা শেষ হয়ে যাওয়া।

— দেখো আঁখি আমি আমার ছেলেকে যেকোনো মুল্যে ভালো রাখতে চাই খুশি দেখতে চাই। তাই আমার ছেলে যাকে ভালবাসে যাকে চাই তাকেই নিয়ে আসব আমি। দরকার হয় এবার আমি আফজাল শেখের মুখোমুখি হবো তাও আমার ছেলেকে কষ্টে দেখতে পারব না।

— তোমার কি মনে হয় আমি ভালবাসি না আমার ছেলেকে৷। আমি চাইনা আয়ান ভালো থাক সুখে থাক। কিন্তু তোমার ছেলে বুঝতে চাইছে না। নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে সাথে ওই বাচ্চা মেয়েটাকেও।

— আয়ান তোমার জন্য কোনো কিছু করতে চাইছে আঁখি। তোমাকে তো ভীষণ ভাবে ভালবাসে তোমার ছেলে। আমজাদ চৌধুরীর কথা শুনে আঁখির চোখে পানি চলে আসে।

— আমার ছেলে ভালো থাকলে তবেই আমি ভালো থাকব। আমার ওই বাড়ির কাউকে চাইনা। আমি যেতেও চাইনা ওই বাড়ি কিন্তু আমার ছেলে ভালো থাক। আমি আয়ানকে বলব যেকোনো মুল্যে আমার তাসনুকে এই বাড়িতে চাই। কিভাবে কি করবে তোমার ছেলে আমি জানি না।

– এত কিছুর মাঝেও আমজাদের মুখে হাসি আসে আঁখির এমন কথা শুনে। সামিরা বলে ইসস ভাইয়া তো এবার তাহলে নায়কের মতো গিয়ে বিয়ের আসর থেকে তাসনু আপুকে তুলে সোজা চৌধুরী বাড়িতে ল্যান্ড করবে। ওয়াও কি মজা।

— সামিরার কাজে দুজনে হেসে দেয়। এর মধ্যে ফোন বেজে ওঠে আঁখির। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রিকের ফোন। আঁখি ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকায়। তারপর ফোন রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে।

— তুহিনরা আজ চট্রগ্রাম যাচ্ছে। অবশ্য তুহিন যাচ্ছে বললে ভুল হবে তাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে সাথে তার বাবা মা। তুহিনের একটা রিলেটিভের মেয়ের বিয়ে তাই তুহিনদের ইনভাইট দিয়েছে। তুর্য তো এখানে নেই আর থাকলেও সে যেতো না। তুহিনও এই সব পছন্দ করে না একা থাকতে সে ভালবাসে। কিন্তু এবার তার মা নাছড় হয়ে লেগেছে। তাই বাধ্য হয়ে যাওয়া লাগছে তাকে।

— আয়ান চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিল। কোনো কিছু ভালো লাগছে না তার। আবার চাইলেও চলে যেতেও পারছে না এখানে থেকে।

— কি ব্যাপার শরীর খারাপ নাকি তোমার রনি বলে। আয়ান রনির কথা শুনে চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে মুখে হাসি এনে বলে তেমন কিছু না। জাস্ট এমনি আর কি।

– বিয়ের আর চারদিন বাকি আছে। এখানে তো আমার কেউ নেই বাবা মা ছাড়া তাই আমি চাই আমার বিয়ের সব দায়িত্ব তুমি নাও।
– রনির কথায় আয়ান চমকে উঠে। অসহায়ের মতো রনির দিকে তাকায়। যে তাকানোর মানে রনির বোধগম্য নয়।

— রনি আবারও বলে কি থাকবে না আমার বিয়েতে আমার পাশে। তুমি আমার সব থেকে ভালো বন্ধু। তোমার উপর আমার অনেক ভরসা আছে।
— আয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে ঠিক করেছিল তাসনুর বিয়ের সময় থাকবে না এখন তাকে কিনা এই বিয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। নিয়তি আজ কোথায় এনে দাড় করিয়েছে তাকে।

– কি হলো বলো থাকবে না আমার বিয়েতে।
— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি অবশ্যই থাকব। কেনো থাকব না। অনেক মজা করব আনন্দ করব। তুমি আমার বন্ধু আর বন্ধুর এই বিশেষ দিনে থাকব না এমন হয় নাকি। চোখে পানি কিন্তু মুখে হাসি নিয়ে বলে।

— উহু শুধু থাকলে হবে না। বিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব তোমার। আচ্ছা বাকি দুজন কোথায় ওদেরও কোনো ছাড় নাই কিন্তু বলে রনি হাসতে থাকে। আয়ানে সাথে তাল মিলায় হাসির। কিন্তু মনে চলছে ঝড়।

— আয়ানের ফোন বেজে উঠায় রনি বলে আচ্ছা কথা বলো আমি এখন যাই তাহলে পরে আসব। আয়ান আর কিছু বলে না আর না।
— ফোনে মা লিখাটা ভেসে উঠে। আয়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করে।
— কেমন আছো মা। বাবা সামিরা সবাই ভালো আছে। আয়ান জিজ্ঞেস করে।
— কেউ ভালো নেই এখানে আয়ান। আঁখির কথায় আয়ানের বুকে ধক করে উঠে। ব্যস্ত হয়ে বলে কেনো মা কার কি হয়েছে। তোমার শরীর ভালো আছে তো। আচ্ছা বাবার কিছু হয়নি তো।।সামিরা ও কেমন আছে।

— সবাই ভালো আছে আয়ান কিন্তু শারীরিক ভাবে। মানসিক ভাবে কেউ ভালো নেই।

– আঁখির কথার মানে বুঝতে না পেরে আয়ান বলে মানে।
– যেখানে আমার কলিজার টুকরো ছেলেটা ভালো নেই সেখানে আমরা কেমন করে ভালো থাকি বলতে পারিস। আয়ান এবার বুঝতে পারে আঁখি ঠিক কি বোঝাতে চাচ্ছে।

– কে বলেছে তোমাদের ছেলে ভালো নেই। আমি অনেক ভাল আছি মা। চিন্তা করো না।

– আমাকে বুঝাতে আসিস না আয়ান। আমি চিনি জানি আমার ছেলেকে। তোর কাছে আমার একটা দাবি আছে আয়ান। বলতে পারিস আবদার এটা তোর কাছে আমার রাখবি তুই বাবা।

– এমন করে কেনো বলছো মা। বলো না কি চাও তুমি। আমি তোমার জন্য আমার জান দিতেও প্রস্তুত।

— আয়ানের কথায় আঁখি হেসে বলে কোনো মা কি কখনো কোনো সন্তানের জান নিতে পারে বাবা। সন্তানের জন্য জান দেওয়া যাই নেওয়া না। আসল কথা শুন আমার তাসনুকে চাই আমার ছেলের বউ হিসেবে। এটা তোর কাছে তোমার মায়ের দাবী আবদার আবার আদেশও বলতে পারিস।

– আঁখি কথায় আয়ান ভীষণ রকম অবাক হয়ে বলে কি বলছো এই সব। কি করে সম্ভব এটা।
— আমি কিছু জানি না। কেমন করে কি করবি কিন্তু এটা জানি আমার বাড়ির পুত্রবধূ হিসেবে তাসনু কে চাই এটা তোর মায়ের আদেশ বলে ফোন কেটে দেয় আঁখি। আয়ানকে কিছু বলার সুযোগও দেয় না।

– আয়ান এবার পড়ে যায় মহাবিপদে। আবার আঁখিকে ফোন দেয় কিন্তু আঁখি ফোন ধরে না। আয়ান আর ফোন দেওয়াএ চেষ্টা করে না। কারণ সে জানে তার মা একবার যা বলে তাই হয়। এর বাইরে আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু হঠাৎ এমন আদেশ করার কারণ কি তার মায়ের। আর যদি তাসনুকে আয়ান বিয়ে করে তাহলে তো কেউ মানবে না।।আবার ঝামেলা হবে দুইবাড়ির। আয়ান চিন্তার মাথা চেপে ধরে। কি করবে মাথায় আসছে না।

– একদিনে মায়ের আদেশ আরেক দিকে বন্ধুর বিশ্বাস ভরসা কোন দিক যাবে সে…..
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-২৯

— তুহিনরা চট্রগ্রাম চলে এসেছে অনেক আগেই। বিয়ে বাড়ি মানে অনেক হৈচৈ ঝামেলা। যার কোনোটাই তুহিনের ভালো লাগছে না। তাই তুহিন এই সব থেকে দূরে চলে আসে। একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে সেখানে বসে থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে। তানুকে খুবই মিস করছে সে৷ প্রতিটা মুহুর্তে তানুকে অনুভব করছে।

— তুহিনের এখানে আসার পর থেকে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে ভেতরে । মনে হচ্ছে তার প্রিয় মানুষটা খুব নিকটে আছে তার। তুহিন একবার চারিপাশে তাকিয়ে সব দেখে নেয়। তারপর হতাশ হয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। নিজের এমন বোকামিতে তুহিন নিজেই তাছিল্য করে। তানু এখানে কোথায় থেকে আসবে। যাকে এতো খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না সে কিনা নিজে থেকে ধরা দেবে মনে মনে ভাবে তুহিন।

— তখনই কারো খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ আসে তুহিনের কানে। হাসিটা খুব পরিচিত তুহিনের। তুহিন চমকে উঠে হাসির শব্দ শুনে। মুখে ফুটে এক চিলতে হাসি। তুহিন দাঁড়িয়ে চারিপাশে খুঁজতে থাকে সেই হাসির মালিক কে। এটা যে তানুর হাসি তুহিনের খুব ভালো করে চেনা এই হাসি। তুহিন অস্থির হয়ে এদিক ওদিক দেখতে থাকে। কোন দিক থেকে আসছে হাসির শব্দটা বোঝার চেষ্টা করে।

” হাসির শব্দ থেমে গেছে অনেক আগেই। তুহিন এদিক ওদিক দেখে যখন কাউকে না পায় আবার হতাশ হয়ে বসে পড়ে। কাছে পেয়েও যেনো হারিয়ে ফেলছে সব কিছু। ভেবেছিল এখানে এসে হয়ত একটু স্বস্তি পাবে। কিন্তু এখানে এসেই যেনো আরো বেশি করে তানুর কথা মনে পড়ছে তুহিনের।

— আয়ান চিন্তিত হয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে। কি করবে কোন দিক যাবে ভেবে পাচ্ছে না। তবে তার মা যে সবার আগে এটা আয়ান খুব ভালো করে জানে। আবার তাসনুকে কি করে বোঝাবে এখন। তাসনু যে অনেক অভিমান করে আছে আয়ানের উপর। আয়ান যেনো আর কিছু ভাবতে পারছে না। চিন্তায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।

— কি রে এমন কি রাজকার্যের চিন্তায় পড়েছিস তুর্য কথাটা বলতে বলতে ঘরে আসে৷ সাথে রিকও আছে। আয়ান অসহায় দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকায়।

– রিক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।
— ঝামেলা হয়ে গেছে ভাই৷ এমন একটা পর্যায়ে এসে পড়েছি কি করব না করব কিছুই মাথায় আসছে না।
— তো হয়েছেটা কি বলবি তো। তিক তুর্য মিটিমিটি হাসে। কারণ তারা খুব ভালো করে জানে কি হয়েছে।

– মা আদেশ দিয়েছেন তাসনুকে তার ছেলের বউ হিসেবে দেখতে চাই। মা হঠাৎ এমন পাগলামি শুরু করলো কেনো বুঝতে পারছি না। মা আমাকে কিছু বলার সুযোগ টা ও দিলো না। মা বুঝতে পারছে না কত বড় ঝামেলা হয়ে যাবে তাসনু কে আমি বিয়ে করলে। কখনো আর ক্ষমা করবে তারা মাকে।

– শুন অনেক ভেবেছিস আর ভাবিস না ভাই দয়া করে। আন্টি সব দিকে ভেবে তবেই হয়ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তুই আর কোনো উল্টো পালটা চিন্তা না করে আন্টির কথাটা কি করে পালন করবি সেই চিন্তা কর।

– তাহলে যে রনিকে ঠকানো হবে। জানিস রনি আমাদের কতটা বিশ্বাস করে ভরসা করে। কি করে ওকে ঠকাই বল। রনিও তাসনুকে ভালবাসে। আমি ওর চোখ মুখ দেখে বুঝেছি। ভালবাসা হারানোর কি যে জ্বালা, কত কষ্টের আমি এই কদিনে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি। কি করব আমি সত্যি বুঝতে পারছি না। একদিনে মা এক দিকে বন্ধুত্ব ।
— তুর্য রিকেরও খারাপ লাগছে রনির জন্য কিন্তু কিছু করার নাই। একটা মানুষের জন্য তো আর দুটি মানুষের জীবন নষ্ট করা যায় না। আয়ানকে বলে তুর্য দেখ ভাই তোর বিষয় টা বুঝতে পারছি। রনির জন্য আমাদেরও খারাপ লাগছে৷ কিন্তু কিছু করার নেই ভাই। যে কোনো একজনকে রাখতে হবে তোকে। হয় আন্টির কথা নাহলে বন্ধুত্বের ভরসা। কি করবি এখন সম্পুর্ণ তোর সিদ্ধান্ত।

– আমি আমার মাকে কখনো কষ্ট দিতে পারব না এটা খুব ভালো করে জানিস তোরা। আমার মায়ের কথা আদেশ আমার কাছে শেষ কথা। আমি তাসনুকে অন্য কারো হতে দিতে পারবো না। কিন্তু রনিকেও কষ্ট দিতে পারব না আমি।

– আয়ানের প্রথম কথা শুনে তুর্য রিক খুশি হলেও পরের কথায় আবার মন খারাপ হয়ে যায়। কি করতে চাইছে এই ছেলে কখন কি বলছে তাদের মাথায় যাচ্ছে না।

— আচ্ছা কি করতে চাইছিস তুই একটু ক্লিয়ার করবি দয়া করে রিক বলে।

— আমি রনির সাথে কথা বলব এই বিষয়ে। আমি বলব তাসনুকে আমি ভালবাসি আর তাসনু আমাকে।

— যদি রনি না মানে তাহলে কি করবি। যদি তোর মামাকে বলে দেয় তাহলে কিন্তু এক মুহুর্ত আর আমাদের এই বাড়িতে রাখবে না। তুর্যের কথা শুনে আয়ানের মন খারাপ হয়ে যায়। সত্যি তো রনি যদি না মেনে নেয়। যদি ঝামেলা করে এটা নিয়ে তাহলে কি করবে। আয়ানের এবার রীতিমতো মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায় এত চিন্তা ভাবনা আর নিতে পারছে না। তার মাথার যেনো চিরে যাচ্ছে।

— নুসরাত অনু মিটিমিটি হাসছে তাসনুর সামনে এসে। তাসনু ওদের কান্ড দেখছে। ভ্রু কুচকে আসে তাসনুর।
— এমন জোকারের মতো বিহেভ করছিস কেনো তোরা। আমাকে জোকার মনে হচ্ছে নাকি তোরা নিজেরা জোকার কোনটা।
– তাসনুর এমন কথায় দুজনেই হকচকিয়ে যায়। অনু আমতাআমতা করে বলে না মানে এমনি তোমার বিয়ে না কত মজা করব আনন্দ করব। তাই ভেবেই খুব খুশি লাগছে আর খুশিতে হাসি আসছে 😁।

— তাসনু ওদের কথা শুনে চোখ ছোট করে ফেলে সাথে অনেক অবাক হয়। মনে মনে ভাবে বলে কি এরা। এতখন তো আমার সাথে শোক পালন করতে ছিল হঠাৎ হলো কি বিয়ে নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দিয়েছে।

– তোদের সমস্যা কি বলতো 🤨।
— আ আমাদের। আমাদের আবার কি সমস্যা হবে নুসরাত বলে।
– তোরা না একটু আগে মরা কান্না করতে ছিলিস আমার জন্য। তাহলে এখন বিয়ের আনন্দ ধেইধেই করে বেড়াচ্ছিস যে।

– আসলে কি বলো তো আপু। অনেক ভেব্ব চিনতে আমরা দেখলাম যে, মন খারাপ করে থেকে শোক পালন করলেও তোমার বিয়ে হবে আবার নেচে গেয়ে আনন্দ করলেও তোমার বিয়ে। তো আমরা কেন অযথা মন খারাপ করে থেকে বিয়েটা মাটি করব। তাই প্ল্যান চেঞ্জ আমরা মজা মাস্তি করে তোমার বিয়েটা কাটাবো। ভালো আইডিয়া না আপু তাসনুকে জিজ্ঞেস করে।

– তাসনু একটা শকের মধ্যে আছে এদের কথা শুনে। বলে কি এরা। তবে যুক্তি এদের ঠিকই আছে। যাই করি না কেনো বিয়ে তো হবেই ভেবেই আবার মন খারাপরা জেকে বসে তাসনুর।

– অনু বলে শুনো আপু একটা উপদেশ দিই তোমায়। যেহেতু বিয়ে তোমায় করাই লাগবে তো আমি বলি কি৷ আর মন খারাপ করে থেকো না। তুমিও আনন্দ করো মজা করো। বিয়ে তো তোমার নাকি একটু মাস্তি না করলে হয়। বিয়ে তো একবারই হয় নাকি। পরে কিন্তু পস্তাবে বলে রাখছি।
— অনুর কথায় তাসনু এবার খেপে যায়। তারপর বলে অনেক পাকা পাকা কথা বলেছিস বাড়া ঘর থেকে এখনই।

— আসলেই ভালো কথার দাম নেই।

— তোর ভালো কথা তোর কাছে রাখ আর আমার ঘর থেকে এখুনি দুজন বের হবি আর ভুলেও আমার সামনে আসার চেষ্টা করবি না। বিয়ে খাবি মজা করবি না তোরা। নেচে বেড়া যা।

— ওকে তাই হলো। এই চল নুসরাত তাই বলে চলে যায় ওরা। আর তাসনু অবাক হয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখছে। এদের এমন ব্যবহার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাসনুর। তারপর ভাবে তার জীবনটাই তো এলোমেলো। সব কিছু উল্টোপালটা। তাহলে এরাও যে পরিবর্তন হবে স্বাভাবিক। ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাসনু।

———————
– তুহিন যেখানে বসে ছিল ওইখানেই বসে আছে।মুলত তার ভালো লাগছে এখানে বসে থাকবে। কোনো কোলাহল নেই। নিরব শান্ত পরিবেশ। তবে বিয়ের বাড়ির আনন্দ হৈ-হুল্লোড় মাঝে মাঝে কানে বাজছে।

— তুহিনে কানে আসে একটা কন্ঠস্বর। কাউকে ডাকছে এই কণ্ঠনালী দিয়ে। কিন্তু ভয়েস টা সুপরিচিত তুহিনে। তুহিন এবার লাফ দিয়ে উঠে পিছে ঘুরে দেখে তানু দাঁড়িয়ে সাথে একটা ছেলেও আছে। ছেলেটা তুহিনের বয়সি হবে। দেখতে সুন্দর আছে। সব দিয়ে ভালো এক কথায়।

– তানু ওই ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তুহিন মুগ্ধ হয়ে তানুর হাসিমুখ দেখছে। কতদিন দেখতে সে তানুকে। এই এক সপ্তাহ তুহিনের কাছে শতযুগের সমান মনে হয়েছে।

– কিন্তু ওই ছেলেটা কে? তানু এমন ভাবে কেনো এত হেসে হেসে কথা বলছে ওই ছেলের সাথে এটা মাথায় আসতে তুহিনের খুব রাগ হয় তানুর উপর। তার চিন্তায় চিন্তায় একটা মানুষ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সে আছে খুব আমোদে অন্যজনকে নিয়ে।

— আচ্ছা তানু এখানে কি করে। স্বপ্ন দেখছে না তো তুহিন। বারবার চোখ ডলে দেখছে তুহিন আর ঠিক তত বারই তানু সামনে হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে। তানু তুহিনকে দেখতে পায়নি এখনো।

– তুহিন রাগে ফুসতে ফুসতে এবার তানুর দিকে এগিয়ে যায়।
— তানুর কাছাকাছি আসতেই তানু কারো একটা ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিক চলে যায়। তুহিন ডাকার আগেই অন্ধকারে হারিয়ে যায় তানু। চারিদিকে হন্নি হয়ে খুজেও পাইনা আর।

– ওহ নো বলে মাটিতে হাটু মুড়ে বসে পড়ে তুহিন। এত কাছে থেকেও আবার হারিয়ে ফেললো তানুকে সে। কিছুখন ওই ভাবে বসে থাকার পরে তুহিনের মুখে এমনি আসে চলে আসে এই ভেবে যে, তানুকে যখন এখানে দেখেছে তার মানে বিয়ে বাড়িতে তানুও আছে। তানু এখানে কেনো। কে হয় তারা। তুহিন আর কিছু না ভেবে বিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায় তানুকে খুজতে।

— তানুর নানুবাড়ি চট্রগ্রামে আগেই বলেছি। তানু তার নানুবাড়ি এসে থাকে সেদিনের পর। তানুর নানুবাড়ি এলাকার নামি-দামি মানুষ হওয়ায় তারাও ইনভাইটেড। তাছাড়া তাদের বাড়িও পাশাপাশি। তাই এখানে তানু সহ তানুর নানুবাড়ির সবাই উপস্থিত আছে। আর তানুর সাথে যে ছেলে ছিল সে তানুর মামাতো ভাই রুহান। দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছে। তানুর সাথে তার বেশ ভাব। তানু তাকে মামাতো ভাই বলে মনে করে। কিন্তু রুহান মনে মনে তানুকে ভালবাসে। তানু এখানে আসার পর মন খারাপ করে ঘরে থাকত সব সময়। রুহান তানুকে সময় দিয়েছে। ঘুরে নিয়ে বেড়ানো, হাসানো, তানুর মন খারাপ গুলো কে সহজে ভুলতে সাহায্য করেছে। কিন্তু চাইলে কি সব ভুলা যায়। সারাদিন এটা ওটাই নিজেকের ব্যস্ত রাখলেও রাতে তুহিনের জন্য মন পুড়ে তানুর। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুহিনের সামনে কখনো যাবে না আর। যত কষ্ট হোক তার।

— গায়ে হলুদ ছিল আজ। তানু কনের পাশে বসে আছে। অনেক মেয়ে আছে সেখানে। তানুর দুইটা মামাতো বোনও আছে। একটা তানুর বয়সী আর একটা ছোট। তানু তো এমনি মিশুক মেয়ে। যেখানে যায় নিজেকে সেই পরিবেশে সহজে মানিয়ে নেয় সে ( আমার মতো 🙂)। সবার কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে অল্প সময়ে তানু। সবার সাথে বসে মজা ঠাট্টা করছে। তুহিন ভেতরে এসে তানুকে আবার দেখতে পায়।

– তানুকে পেয়ে তুহিন প্রান ফিরে পায়। তুহিন এবার তানুর সাথে কথা বলেই ছাড়বে তাই তানুর দিকে আবার এগুতে থাকে। এর মাঝে রুহান এসে তানুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়৷ এটা দেখে তুহিনের মাথার রক্ত উঠে যায়৷ রাগে দুইহাত মুস্টিবন্ধ করে ফেলে।

— তানুর শাড়িতে হলুদ মেখে গিয়েছে। তানু গায়ে হলুদ উপলক্ষে শাড়ি পড়েছে। ইনফ্যাক্ট সব মেয়েরাই শাড়ি পড়েছে।
– শাড়িতে হলুদ মেখে যাওয়া অংশটা পরিস্কার করার জন্য তানু ওয়াসরুমের দিকে যায়। ওয়াসরুমের কাছাকাছি আসতেই কেউ একজন তার হাত ধরে টেনে একটা ঘরের মধ্যে নেয়। তানু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাথে হাজারো ভয় অস্বস্তি জেকে বসে। তুহিনের বুকের সাথে মাথা দিয়ে আছে তানু চোখ বন্ধ করে। তারপর চেনা পারফিউমের গন্ধ পেয়ে ঝট করে চোখ খুলে যা দেখে তাতে তানুর চোখ চড়কগাছ। তানু হা হয়ে গেছে মানুষটা কে দেখে………
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-৩০

— তাসনুর সাথে কথা বলতে হবে একবার। নাহলে আয়ান শান্তি পাচ্ছে না।অনেক কষ্টে নিজেকে দূরে রেখেছে আয়ান। আর না। তাসনুও অনেক কষ্ট পেয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাইবে, সব ঠিক করে নেবে আয়ান কথা গুলো ভাবছে আর ঘরে পায়চারি করছে। তাসনু তো ঘর থেকে তেমন বেরও হয়না এখন। তাহলে কি করে কথা বলবে।

— আয়ানের ঘর থেকে তাসনুর ঘর দেখা যায়। আয়ান বারবার তাসনুর ঘরের দিকে তাকাচ্ছে আর পায়চারি করছে। তাসনুর ঘরের দরজা বন্ধ। আয়ান হতাশ হয়ে বসে পড়ে বিসানায়। তখনই তাসনুর ঘরের দরজা খোলার শব্দ আসে৷ আয়ান ছুটে দরজার পাশে যায়। দেখে তাসনু ঘর থেকে বের হয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে।

– রাত প্রায় ১০ টা বাজবে এমন। তাসনুর ঘরে দম বন্ধ লাগছিল তাই সে এখন যাচ্ছে ছাদে নিজেকে একটু ফ্রেস করতে।

– আয়ানের মুখে হাসি চোখে মুখে আসার আলো। আয়ানও তাসনুর পিছু নেয়। তার আগে চারিদিকে দেখে নেয় কেউ আছে নাকি।

— আপনি এখানে কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলে তানু। তুহিন বলে কেনো অন্য কাউকে আসা করেছিলে বুঝি।
– তানু ভ্রু কুচকে বলে মানে।

– ছেলেটা কে ছিল তোমার সাথে। এত মাখামাখি কিসের ওই ছেলের সাথে।। কে হয় ছেলেটা তোমার। এক নিশ্বাসে বলে কথা গুলো তুহিন। আর তানু অবাক হয়ে তুহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

– কি হলো চুপ কেনো বলো কে ছেলেটা ছিল। তোমার হাত ধরার সাহস হয় কি করে তার।

– তানুর এবার রাগ উঠে যায়। তুহিনের হাত থেকে ছাড়ার চেষ্টা করতে থাকে। ব্যর্থ হয়ে তানু চুপ হয়ে যায়। তারপর বলে আমি কার সাথে কি করছি না করছি। কে আমার হাত ধরুক বা আমাকে টাচ করুক তাতে আপনার কি। আপনার কিসের সমস্যা এতো। আর আপনি কেনো আমাকে ফলো করছেন।

— তুহিন বলে সমস্যা অনেক কিছু আমার। সেটা তোমার না বুঝলেও চলবে৷ কিন্তু নেক্সট টাইম আমি আর চাইনা কেউ তোমার হাত ধরুক তুমি কারো সাথে বেশি মেলামেশা করো।

– তানু অবাক হয়ে যায় তুহিনের কথায়। তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে। আপনি বললেই আমাকে শুনতে হবে নাকি। কেনো শুনব আমি আপনার কথা কে হোন আমার। তাছাড়া আমি আপনার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করছি না। ছাড়ুন আমাকে। কেনো পিছু করে এখানে আসছেন। চলে আসছি তো আপনার জিবন থেকে। তাহলে কেনো এমন করছেন৷ আমাকে একটু ভালো থাকতে দিবেন না বলে ঠিক করেছেন।

– নিজেকে যখনই একটু একটু করে সামলে নিচ্ছি গুছিয়ে তুলছি তখনই এসে সব এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছেন। নাকি আরো অপমান বাকি আমাকে করার। সেটা কি পুরন করার জন্য আসছেন।

– তুহিন নিশ্চুপ হয়ে তানুর সকল অভিযোগ শুনছে। তুহিন চাই তানু সব বলুক তাকে।।তার মনের মধ্যে যত ক্ষোভ আছে তুহিনের বিরুদ্ধে সব প্রকাশ করুক। তানুকে সে অনেক বড় আঘাত দিয়ে ফেলেছে।।তাই এই গুলা তার প্রাপ্য।

– তানু কথা গুলো বলে কেঁদে দেয়। তুহিনের এবার হুস আসে। তানুকে কাঁদতে দেখে তুহিনের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। তুহিন তানুর হাত ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।৷ তানু বারবার তুহিনের হাত সরিয়ে দেয় আর তুহিন মুচকি হেসে তানুর চোখের পানি মুছে দিতে যায়।

– দয়া করে আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমার সামনে আসবেন না প্লিজ হাত জোড় করে বলে তানু। আমি আর দুর্বল হয়ে পড়তে চায় না৷ আর কারো জীবনে বিরক্তের কারণ হতে চায় না। বলেই তানু বের হয়ে যেতে যায় তুহিন আবার তানুর হাত ধরে টেনে বুকে ফেলে। তানু তুহিনের বুকে আচঁড়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে ফেলে। খোলা চুল গুলো সারামুখ জুড়ে বিচরণ করে।

– তুহিন ফু দিয়ে তানুর মুখের চুল গুলো সরিয়ে দেয়৷ আর তানু আরো চোখ মুখ কুচকে ফেলে তুহিনের ফু- তে।
— তানুর কানের কাছে মুখ নিয়ে দিয়ে তুহিন ফিসফিস করে বলে।শাড়িতে তোমাকে পরীর মতো লাগছে। তানুকে ছাড়া তুহিন বৃথা, তার এই বিরক্তকন্যাকে চায়। ভালবেসে ফেলেছে এই ঝামেলাটাকে, খুব করে মিস করছে সেই হাসি দুস্টামি। একটু কি ভালবাসা দেওয়া যায় না এই গুমড়ো মুখোটাকে।

– তুহিনের এমন ফিসফিসিয়ে কথাতে তানুর মধ্যে এক অন্য শিহরণ জাগে। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। আরো চোখ চেপে ধরে।

– তুহিন তানুর কান্ড দেখে হেসে দেয়। তারপর আবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালোবাসি ম্যাডাম আপনাকে। একটু জায়গা দিবেন সব রাগ, অভিমান, অভিযোগ সরিয়ে প্লিজ। এই কদিনে খুব করে বুঝতে পেরেছি এই ডিস্টার্বটা আমার কাছে কতটা মুল্যবান। তুহিনের কথা শুনে তানু এবার চট করে চোখ খুলে তুহিনের চোখের দিকে তাকায়।

– তানু ইশারা করে বোঝায় সে সত্যি বলছে। তারপর আবার বলে , আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। আমি তোমাকে কখন কিভাবে ভালবেসে ফেলেছি জানি না। তবে তুমি আমার থেকে দূরে আসার পর বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।

— তানু এবার তুহিনের থেকে দূরে আসে৷ নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে কিন্তু আমি আর কাউকে ভালবাসি না। আমার আর কারো জন্য কোনো অনুভূতি নাই। তাই আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হবো আমি।

– তানু প্লিজ আমাকে একটিবার ক্ষমা করে দাও৷ আমি এই কদিনে অনেক শাস্তি পেয়েছি আমার ভুলের জন্য৷ আমি আর নিতে পারছি না। আমি কখনো জানতাম না ভালবাসার অনুভূতি কেমন হয়। ভালবাসা কেমন হয়। কিন্তু তোমাকে ভালবাসার পর বুঝতে পেরেছি ভালবাসা কত মুল্যবান আর কতটা কষ্টের প্রিয় মানুষ থেকে দূরে থাকা।

* দেখুন আমি আগেই বলেছি আমাকে এই সব কথা বলে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না। আমি আর কারো মায়ায় পড়তে চাই না। বলে তানু ঘর থেকে বের হয়ে আসে৷ তুহিন আশাহত হয়ে ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে তানুর চলে যাওয়া দেখে।

– বাইরে ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ছে। তাসনু একটা চাদর গায়ে জরিয়ে আছে৷ হাল্কা শীত হলেও বাতাসে শীতের পরিমাণ একটু বেশি লাগছে। তাই তাসনু দুই হাত দিয়ে যথা সম্ভব নিজেকে জরিয়ে নিচ্ছে চাদর দিয়ে। কোনো কিছুই যেন তার ভালো লাগছে না। সব কিছু থেকে দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে তার

– আয়ান তাসনুর পিছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাসনুকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে । তারপর কাঁশি দিয়ে তাসনুকে তার উপস্থিতি জানান দেয়৷ তাসনু পরিচিত কন্ঠে কাঁশির শব্দ শুনে আতকে উঠে। দম বন্ধ হয়ে আসে এমন ভাব। আয়ানের সামনে সে যায়নি কত দিন হলো। ভালো ভাবে দেখাও হয়না তাদের।

– তোমার সাথে কিছু কথা আছে তাসনু। দয়া করে আমার কথা গুলো শুনবে। আয়ানের এমন দুর্বল কন্ঠ শুনে তাসনুর মায়া হয়৷ বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়৷ তাও যথা সম্ভব নিজেকে ঠিক রেখে আয়ানের দিকে ঘুরে বলে জ্বি বলুন কি বলবেন। আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি বলবেন যাই বলুন। কেউ দেখে নিলে সমস্যা আছে। সামনে আমার বিয়ে এটা নিশ্চয় জানেন। যদি আমার হবু বর জানতে পায় যে মাঝ রাতে আমি কোনো পরপুরুষ এর সাথে কথা বলছি একা ছাদে দাঁড়িয়ে তাহলে হয়ত তার খারাপ লাগবে।

– আয়ানের বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি যে তাসনু কথা গুলো তাকে ইঙ্গিত করে বলছেন।

– তাসনু আমার ভুল হয়ে গেছে৷ তোমাকে ওই ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি আমি সেদিন ভুল করেছি।

– তাসনু আয়ানের কথা শুনে খুব একটা অবাক হয়নি। কারণ তাসনু জানে আয়ান তাকে ভালবাসে৷ আর তার কাছে ফিরে আসবে এই বিশ্বাস ছিল৷। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে যেনো না হয়ে যায় সেই অপেক্ষায় ছিল।।কিন্তু এত জলদি যে সে কাজ হয়ে যাবে ভাবেনি।

– দেখো তাসনু। আমি কেনো এমন করেছি তুমি খুব ভালো করে জানো। আমার কিছু করার ছিল না। তাই কষ্ট হলেও নিজেকে দূরে রেখেছি।।চেষ্টা করেছি দূরে থাকার।।কিন্তু এখন আর স্বম্ভব না। আমি তোমাকে ভালবাসি তাসনু অনেক বেশি ভালবাসি।

— হয়েছে আপনার কথা শেষ এবার আমি আসতে পারি?

– তাসনুর কথায় আয়ান অবাক হয়ে বলে তুমি কিছু বলবে না এ-ব্যাপারে।

– তাসনু একটা তাছিল্যের হাসি দিয়ে বলে কি বলব আমি। আমার এখন কি বলার আছে মিস্টার আয়ান। আর দুইদিন পর আমার বিয়ে আর আপনি এখন আসছেন আমাকে নাকি ভালবাসেন৷ আমাকে ছাড়া নাকি থাকতে পারবেন না এই কথা গুলো বলতে। কোথায় ছিল সেদিন আপনার ভালবাসা যেদিন আমি সকল লাজ লজ্জা ভুলে নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করেছিলাম আপনার কাছে। একটু ভালবাসা ভিক্ষা চেয়েছিলাম। সেদিন তো সাড়া দেন নাই আমার ভালবাসার ডাকে। অবহেলা করেছেন। অস্বীকার করেছেন সব কিছু।

– আর এখন আসছেন ভালবাসার দাবী নিয়ে। যেখানে আর একটা দিন আছে মাঝে। কি করব এখন ভালবাসা নিয়ে। কি করার আছে এখন আর।

– কিছু করার নেই আর।।এই ভাবে দিন যাবে।।এই ভাবে ধুকেধুকে কষ্ট পেয়ে মরতে হবে। এই ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাসনু বলে।

তুমি শুধু একবার বলো।আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো। আমাকে ভালবাসো তুমি। তাহলে আমি সব করতে পারব। তোমাকএ আমার থেকে দূরে যেতে দেব না কথা দিচ্ছি।

— তাসনু আবার একটা তাছিল্যের হাসি দেয়। তারপর বলে এটা কি কোন সিনেমা হচ্ছে। ভালবাসি বললাম আর আপনি আমাকে সকল বাধা পেরিয়ে,, যুদ্ধ করে, আপন করে নিলেন। এটা বাস্তব আয়ান। আর এখানে কিছু করার মতো আর কিছু না। অনেক সময় চলে গেছে।।এখন বিয়েটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেয়। তাই আমি বলব সব কিছু মেনে নেন। যেটা হচ্ছে হতে দেন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না বলেই দৌড়ে চলে যায় তাসনু। আয়ান ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে থাকে। তাসনুর অভিযোগ, অভিমান করা মিথ্যা না। যা কষ্ট পেয়েছে সেই থেকেই এই গুলা স্বাভাবিক। কিন্তু আয়ান হাল ছাড়বে না। তাসনুকে অন্য কারো হতে দেবে না।

– একদিকে মায়ের আদেশ পালন করবে অন্য দিকে প্রিয়জন কে কাছে রাখবে সে।

চলবে…
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here