খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ৩০+৩১+৩২

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-৩০

— তাসনুর সাথে কথা বলতে হবে একবার। নাহলে আয়ান শান্তি পাচ্ছে না।অনেক কষ্টে নিজেকে দূরে রেখেছে আয়ান। আর না। তাসনুও অনেক কষ্ট পেয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাইবে, সব ঠিক করে নেবে আয়ান কথা গুলো ভাবছে আর ঘরে পায়চারি করছে। তাসনু তো ঘর থেকে তেমন বেরও হয়না এখন। তাহলে কি করে কথা বলবে।

— আয়ানের ঘর থেকে তাসনুর ঘর দেখা যায়। আয়ান বারবার তাসনুর ঘরের দিকে তাকাচ্ছে আর পায়চারি করছে। তাসনুর ঘরের দরজা বন্ধ। আয়ান হতাশ হয়ে বসে পড়ে বিসানায়। তখনই তাসনুর ঘরের দরজা খোলার শব্দ আসে৷ আয়ান ছুটে দরজার পাশে যায়। দেখে তাসনু ঘর থেকে বের হয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে।

– রাত প্রায় ১০ টা বাজবে এমন। তাসনুর ঘরে দম বন্ধ লাগছিল তাই সে এখন যাচ্ছে ছাদে নিজেকে একটু ফ্রেস করতে।

– আয়ানের মুখে হাসি চোখে মুখে আসার আলো। আয়ানও তাসনুর পিছু নেয়। তার আগে চারিদিকে দেখে নেয় কেউ আছে নাকি।

— আপনি এখানে কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলে তানু। তুহিন বলে কেনো অন্য কাউকে আসা করেছিলে বুঝি।
– তানু ভ্রু কুচকে বলে মানে।

– ছেলেটা কে ছিল তোমার সাথে। এত মাখামাখি কিসের ওই ছেলের সাথে।। কে হয় ছেলেটা তোমার। এক নিশ্বাসে বলে কথা গুলো তুহিন। আর তানু অবাক হয়ে তুহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

– কি হলো চুপ কেনো বলো কে ছেলেটা ছিল। তোমার হাত ধরার সাহস হয় কি করে তার।

– তানুর এবার রাগ উঠে যায়। তুহিনের হাত থেকে ছাড়ার চেষ্টা করতে থাকে। ব্যর্থ হয়ে তানু চুপ হয়ে যায়। তারপর বলে আমি কার সাথে কি করছি না করছি। কে আমার হাত ধরুক বা আমাকে টাচ করুক তাতে আপনার কি। আপনার কিসের সমস্যা এতো। আর আপনি কেনো আমাকে ফলো করছেন।

— তুহিন বলে সমস্যা অনেক কিছু আমার। সেটা তোমার না বুঝলেও চলবে৷ কিন্তু নেক্সট টাইম আমি আর চাইনা কেউ তোমার হাত ধরুক তুমি কারো সাথে বেশি মেলামেশা করো।

– তানু অবাক হয়ে যায় তুহিনের কথায়। তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে। আপনি বললেই আমাকে শুনতে হবে নাকি। কেনো শুনব আমি আপনার কথা কে হোন আমার। তাছাড়া আমি আপনার কথা শোনার প্রয়োজন মনে করছি না। ছাড়ুন আমাকে। কেনো পিছু করে এখানে আসছেন। চলে আসছি তো আপনার জিবন থেকে। তাহলে কেনো এমন করছেন৷ আমাকে একটু ভালো থাকতে দিবেন না বলে ঠিক করেছেন।

– নিজেকে যখনই একটু একটু করে সামলে নিচ্ছি গুছিয়ে তুলছি তখনই এসে সব এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছেন। নাকি আরো অপমান বাকি আমাকে করার। সেটা কি পুরন করার জন্য আসছেন।

– তুহিন নিশ্চুপ হয়ে তানুর সকল অভিযোগ শুনছে। তুহিন চাই তানু সব বলুক তাকে।।তার মনের মধ্যে যত ক্ষোভ আছে তুহিনের বিরুদ্ধে সব প্রকাশ করুক। তানুকে সে অনেক বড় আঘাত দিয়ে ফেলেছে।।তাই এই গুলা তার প্রাপ্য।

– তানু কথা গুলো বলে কেঁদে দেয়। তুহিনের এবার হুস আসে। তানুকে কাঁদতে দেখে তুহিনের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। তুহিন তানুর হাত ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।৷ তানু বারবার তুহিনের হাত সরিয়ে দেয় আর তুহিন মুচকি হেসে তানুর চোখের পানি মুছে দিতে যায়।

– দয়া করে আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমার সামনে আসবেন না প্লিজ হাত জোড় করে বলে তানু। আমি আর দুর্বল হয়ে পড়তে চায় না৷ আর কারো জীবনে বিরক্তের কারণ হতে চায় না। বলেই তানু বের হয়ে যেতে যায় তুহিন আবার তানুর হাত ধরে টেনে বুকে ফেলে। তানু তুহিনের বুকে আচঁড়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে ফেলে। খোলা চুল গুলো সারামুখ জুড়ে বিচরণ করে।

– তুহিন ফু দিয়ে তানুর মুখের চুল গুলো সরিয়ে দেয়৷ আর তানু আরো চোখ মুখ কুচকে ফেলে তুহিনের ফু- তে।
— তানুর কানের কাছে মুখ নিয়ে দিয়ে তুহিন ফিসফিস করে বলে।শাড়িতে তোমাকে পরীর মতো লাগছে। তানুকে ছাড়া তুহিন বৃথা, তার এই বিরক্তকন্যাকে চায়। ভালবেসে ফেলেছে এই ঝামেলাটাকে, খুব করে মিস করছে সেই হাসি দুস্টামি। একটু কি ভালবাসা দেওয়া যায় না এই গুমড়ো মুখোটাকে।

– তুহিনের এমন ফিসফিসিয়ে কথাতে তানুর মধ্যে এক অন্য শিহরণ জাগে। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। আরো চোখ চেপে ধরে।

– তুহিন তানুর কান্ড দেখে হেসে দেয়। তারপর আবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ভালোবাসি ম্যাডাম আপনাকে। একটু জায়গা দিবেন সব রাগ, অভিমান, অভিযোগ সরিয়ে প্লিজ। এই কদিনে খুব করে বুঝতে পেরেছি এই ডিস্টার্বটা আমার কাছে কতটা মুল্যবান। তুহিনের কথা শুনে তানু এবার চট করে চোখ খুলে তুহিনের চোখের দিকে তাকায়।

– তানু ইশারা করে বোঝায় সে সত্যি বলছে। তারপর আবার বলে , আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। আমি তোমাকে কখন কিভাবে ভালবেসে ফেলেছি জানি না। তবে তুমি আমার থেকে দূরে আসার পর বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।

— তানু এবার তুহিনের থেকে দূরে আসে৷ নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে কিন্তু আমি আর কাউকে ভালবাসি না। আমার আর কারো জন্য কোনো অনুভূতি নাই। তাই আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হবো আমি।

– তানু প্লিজ আমাকে একটিবার ক্ষমা করে দাও৷ আমি এই কদিনে অনেক শাস্তি পেয়েছি আমার ভুলের জন্য৷ আমি আর নিতে পারছি না। আমি কখনো জানতাম না ভালবাসার অনুভূতি কেমন হয়। ভালবাসা কেমন হয়। কিন্তু তোমাকে ভালবাসার পর বুঝতে পেরেছি ভালবাসা কত মুল্যবান আর কতটা কষ্টের প্রিয় মানুষ থেকে দূরে থাকা।

* দেখুন আমি আগেই বলেছি আমাকে এই সব কথা বলে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না। আমি আর কারো মায়ায় পড়তে চাই না। বলে তানু ঘর থেকে বের হয়ে আসে৷ তুহিন আশাহত হয়ে ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে তানুর চলে যাওয়া দেখে।

– বাইরে ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ছে। তাসনু একটা চাদর গায়ে জরিয়ে আছে৷ হাল্কা শীত হলেও বাতাসে শীতের পরিমাণ একটু বেশি লাগছে। তাই তাসনু দুই হাত দিয়ে যথা সম্ভব নিজেকে জরিয়ে নিচ্ছে চাদর দিয়ে। কোনো কিছুই যেন তার ভালো লাগছে না। সব কিছু থেকে দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে তার

– আয়ান তাসনুর পিছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাসনুকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে । তারপর কাঁশি দিয়ে তাসনুকে তার উপস্থিতি জানান দেয়৷ তাসনু পরিচিত কন্ঠে কাঁশির শব্দ শুনে আতকে উঠে। দম বন্ধ হয়ে আসে এমন ভাব। আয়ানের সামনে সে যায়নি কত দিন হলো। ভালো ভাবে দেখাও হয়না তাদের।

– তোমার সাথে কিছু কথা আছে তাসনু। দয়া করে আমার কথা গুলো শুনবে। আয়ানের এমন দুর্বল কন্ঠ শুনে তাসনুর মায়া হয়৷ বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়৷ তাও যথা সম্ভব নিজেকে ঠিক রেখে আয়ানের দিকে ঘুরে বলে জ্বি বলুন কি বলবেন। আর হ্যাঁ তাড়াতাড়ি বলবেন যাই বলুন। কেউ দেখে নিলে সমস্যা আছে। সামনে আমার বিয়ে এটা নিশ্চয় জানেন। যদি আমার হবু বর জানতে পায় যে মাঝ রাতে আমি কোনো পরপুরুষ এর সাথে কথা বলছি একা ছাদে দাঁড়িয়ে তাহলে হয়ত তার খারাপ লাগবে।

– আয়ানের বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি যে তাসনু কথা গুলো তাকে ইঙ্গিত করে বলছেন।

– তাসনু আমার ভুল হয়ে গেছে৷ তোমাকে ওই ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি আমি সেদিন ভুল করেছি।

– তাসনু আয়ানের কথা শুনে খুব একটা অবাক হয়নি। কারণ তাসনু জানে আয়ান তাকে ভালবাসে৷ আর তার কাছে ফিরে আসবে এই বিশ্বাস ছিল৷। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে যেনো না হয়ে যায় সেই অপেক্ষায় ছিল।।কিন্তু এত জলদি যে সে কাজ হয়ে যাবে ভাবেনি।

– দেখো তাসনু। আমি কেনো এমন করেছি তুমি খুব ভালো করে জানো। আমার কিছু করার ছিল না। তাই কষ্ট হলেও নিজেকে দূরে রেখেছি।।চেষ্টা করেছি দূরে থাকার।।কিন্তু এখন আর স্বম্ভব না। আমি তোমাকে ভালবাসি তাসনু অনেক বেশি ভালবাসি।

— হয়েছে আপনার কথা শেষ এবার আমি আসতে পারি?

– তাসনুর কথায় আয়ান অবাক হয়ে বলে তুমি কিছু বলবে না এ-ব্যাপারে।

– তাসনু একটা তাছিল্যের হাসি দিয়ে বলে কি বলব আমি। আমার এখন কি বলার আছে মিস্টার আয়ান। আর দুইদিন পর আমার বিয়ে আর আপনি এখন আসছেন আমাকে নাকি ভালবাসেন৷ আমাকে ছাড়া নাকি থাকতে পারবেন না এই কথা গুলো বলতে। কোথায় ছিল সেদিন আপনার ভালবাসা যেদিন আমি সকল লাজ লজ্জা ভুলে নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করেছিলাম আপনার কাছে। একটু ভালবাসা ভিক্ষা চেয়েছিলাম। সেদিন তো সাড়া দেন নাই আমার ভালবাসার ডাকে। অবহেলা করেছেন। অস্বীকার করেছেন সব কিছু।

– আর এখন আসছেন ভালবাসার দাবী নিয়ে। যেখানে আর একটা দিন আছে মাঝে। কি করব এখন ভালবাসা নিয়ে। কি করার আছে এখন আর।

– কিছু করার নেই আর।।এই ভাবে দিন যাবে।।এই ভাবে ধুকেধুকে কষ্ট পেয়ে মরতে হবে। এই ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তাসনু বলে।

তুমি শুধু একবার বলো।আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো। আমাকে ভালবাসো তুমি। তাহলে আমি সব করতে পারব। তোমাকএ আমার থেকে দূরে যেতে দেব না কথা দিচ্ছি।

— তাসনু আবার একটা তাছিল্যের হাসি দেয়। তারপর বলে এটা কি কোন সিনেমা হচ্ছে। ভালবাসি বললাম আর আপনি আমাকে সকল বাধা পেরিয়ে,, যুদ্ধ করে, আপন করে নিলেন। এটা বাস্তব আয়ান। আর এখানে কিছু করার মতো আর কিছু না। অনেক সময় চলে গেছে।।এখন বিয়েটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেয়। তাই আমি বলব সব কিছু মেনে নেন। যেটা হচ্ছে হতে দেন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না বলেই দৌড়ে চলে যায় তাসনু। আয়ান ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে থাকে। তাসনুর অভিযোগ, অভিমান করা মিথ্যা না। যা কষ্ট পেয়েছে সেই থেকেই এই গুলা স্বাভাবিক। কিন্তু আয়ান হাল ছাড়বে না। তাসনুকে অন্য কারো হতে দেবে না।

– একদিকে মায়ের আদেশ পালন করবে অন্য দিকে প্রিয়জন কে কাছে রাখবে সে।
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-৩১

— কি রে ঢংগী আসব নুরজাহান বিবি বলে তাসনুকে। তাসনু অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিল। নুরজাহান বিবির কথা কানেই উঠেনি। নুরজাহান বিবি তাসনুর এমন খাপছাড়া ভাব দেখে কাছে গিয়ে জোরে ধাক্কা দেয়। কি এত ভাবছিস রে দাদিমা। মন খারাপ নাকি আমার ড্রামকুইনের।

— তাসনু চমকে উঠে বলে কিছু না তো। নুরজাহান বিবি এতে অবাক হয়। কারণ এত কিছু বলছে নুরজাহান বিবি কিন্তু তাসনু কিছুই বলছে না। অন্য সময় হলে বাড়ি মাথায় তুলে চেঁচিয়ে। নুরজাহান বিবি বুঝতে পারছে তাসনুর মন খারাপ আর কেনো মন খারাপ সেটাও জানে।

— ভালবাসিস আয়ান নানুভাইকে দিদিভাই।
— নুরজাহান বিবির এমন প্রশ্নে তাসনু চমকে উঠে। মনে দানা বাধে ভয়ের। দাদিমা কি করে জানলো ভাবতে থাকে।
– কি ভাবছিস আমি কি করে জানলাম তাই তো। আমার চোখকে ফাকি দেওয়া এতই সোজা দিভাই। আমি অনেক আগে থেকে জানি। কিন্তু কিছু বলি নাই। কিন্তু আমি চাই তুই আয়ান নানুভাইয়ের সাথে বিয়ে কর। তোর কষ্ট, দুঃখ অভিমান সব বুঝিরে দিভাই।

— কিন্তু দাদিমা এখন কি করে কি করব। কাল থেকে তো বিয়ের আয়োজন শুরু। তাছাড়া বাবা অনেক কষ্ট পাবে এখন। জানো আজ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মা থাকলে হয়ত আমার মনের কথা ঠিক বুঝে যেতো। আমার কষ্ট দুঃখ সব আগলে রাখতো তাই না দাদিমা।।

— তাসনুর কথায় নুরজাহান বিবির চোখে পানি চলে আসে। আজ কয়দিন ধরে দেখছে তাসনুকে কষ্ট পেতে কিন্তু কিছু বলতে পারিনি সে। গত রাতে আয়ান যখন তাসনুর সাথে কথা বলে তখন নুরজাহান বিবি সব শুনে ফেলে। কিন্তু এতে তার রাগ না হাসি এসেছিল মুখে। কারণ সেও চাই তার দুই নাতি নাতনি ভালো থাক। ভালবাসার মানুষকে পায় যেনো তারা।

— কি এত কথা হচ্ছে দাদি – নাতির শুনি। দুই বুড়ি হঠাৎ এক সাথে যে আজ কথাটা বলতে বলতে আফজাল শেখ ঘরে ঢুকেন তাসনুর৷ তাসনু আর নুরজাহান বিবি চুপ হয়ে যায়। নিজেদের স্বাভাবিক করে মুখে হাসি নিয়ে এসে বলে তাসনু।দেখো না বাবা তোমার এই বুড়ি মা আমার পিছে লাগছে শুধু শুধু।

–অওও এখন এই বুড়ির দোষ হয়ে গেলো তাই না। আফজাল শেখ দুজনের ছেলেমানুষী দেখে হাসে। তারপর তাসনুর মাথায় হাত রেখে বলে কেমন আছিস মা। এই কদিন কাজে তোর সাথে তেমন কথা বলায় হয়নি। কিছু মনে করিস না মা। জানিস তো তোর বাবা কত ব্যস্ত থাকে।

– কাল বাদে পড়শু পরের ঘরে চলে যাবি তখন খুব মিস করব আমার এই মাকে। তাসনু এবার কেঁদে দেয় তারপর আফজাল শেখকে জড়িয়ে ধরে বলে বাবা তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও। আমি এই বিয়ে করব না।

— আফজাল শেখ ভ্রু কুচকে ফেলে তাসনুর কথায়। নুরজাহান বিবি বুঝতে পেরে বলে আরে মেয়ের কথা শুনো। বিয়ে ভেঙে দাও। শুন দিভাই সবাইকে একদিন স্বামীর বাড়ি যেতে হয়। আজ নয় তো কাল। মন করিস না।

– তাসনু কিছু বলে না।।কারণ সে জানে এখানে বলে কোনো লাভ হবে না।

— আফজাল শেখ কিছু একটা ভেবে বলে আচ্ছা তুই খুশি তো এই বিয়েতে। তোর মত আছে তো।

– হ্যাঁ হ্যাঁ কেনো মত থাকবে না। তাছাড়া ও কি বলবে তোরা যা করবি তাই হবে। ও ছোট মানুষ কি বুঝে এই সবের নুরজাহান বিবি বলে আফজাল শেখকে।
– আফজাল শেখ মুচকি হেসে বলে। তুই অনেক ভালো থাকবি ওইখানে দেখিস। রনি খুবই ভালো ছেলে। তাসনু কিছু আর বলার সাহস পায়না। আফজাল শেখকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছাড়তে থাকে।
— তোর বিয়েটা ভালো করে শেষ হলে তবেই আমার স্বস্তি। আমার সকল আশা ভরসা তুই মা। তারপর তাসনুর কপালে একটা ভালবাসার পরশ এঁকে দিয়ে চলে যায় আফজাল শেখ।

— তাসনু কি করবে বুঝতে পারছে না। একদিকে বাবার স্বপ্ন আরেক দিকে ভালবাসার মানুষকে হারানোর ভয়।
— আমি কি করব দাদিমা। কোন দিকে যাব এখন আমি। আমি তো বাবাকে কষ্ট দিতে পারব না আর না আয়ানকে ছাড়া থাকতে।

– চিন্তা করিস না দিভাই যে কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আল্লাহ যা করে দেখবি ভালোর জন্য করবে। কিন্তু আয়ান নানুভাই অনেক কষ্টে আছে দিভাই। ওর সাথে একটু কথা বলে নিস। আমরা সব সময় তোদের পাশে আছি বলেই চলে যায় নুরজাহান বিবিও।

– আয়ানের ঘরে রিক, তুর্য, নুসরাত, অনু আয়ান সবাই বসে আছে। কাল তাসনুর গায়ে হলুদ। কি করবে না করবে সেই প্ল্যান চলছে। আয়ান চিন্তিত হয়ে বসে। তাসনুকে কোনো ভাবে বোঝানো যাচ্ছে না। অভিমান করে বসে আছে। এই সময় তাসনু যদি না এগিয়ে আসে তাহলে একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না।

– আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে। তাই এখন এমন অভিমান করে আছে ভাইয়ার উপর। কিছু বুঝতে চাইছে না। কি করব আমরা বুঝছি না। একবার দুলা বেঁকে বসে তো আরেকবার দুলহান। আমরা মাঝখান থেকে বেচারা চিপায় পড়ে অনু বলে।

— এই সত্যি তোরা কি শুরু করেছিস বলত। একবার তুই না না করে বসে থেকে সময় পার করে দিলি। এখন যেটুকু সময় আছে তাসনু অভিমান করে বসে। তোদের আর কিছু হবে না। তুই রেডি হো ভাই আমাদের সাথে বিয়ে খেতে আর তোমরা তাসনুকে গিয়ে রেডি করাও রনির সাথে বিয়ের জন্য। এদের নিয়ে আমরা আর ভাবতে পারব না মুখ বেকিয়ে বলে রিক।

– আয়ান সবার দিকে অসহায় ভাবে তাকায়।

– ওইভাবে কি দেখছিস হা। তোদের জন্য আমাদের কত দুঃচিন্তা হচ্ছে বুঝতে পারছিস তুর্য বলে।

– আচ্ছা এই সব বাদ দাও দেখো কি করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই কিন্তু আমাদের নুসরাত বলে উঠে।

— সেটাই ঠিক এখন। এদের দিয়ে কিছু হবে না।যা করার আমাদের করতে হবে। এর মধ্যে রায়হান শেখ আর রনি ঘরে আসে।

— কি ব্যাপার ইয়াং ম্যানরা কি করছো তোমরা আমাদেরও বলো। সবাই চমকে উঠে রায়হান শেখের কথায়। তারপর সবাই সবার মতো সংযত হয়ে যায়।
— কি আলোচনা করছিলে তোমরা আমাদেরও বলো শুনি রনি বলে।

— রিক আমতাআমতা করে বলে তেমন কিছু না। তোমাদের বিয়েতে আমরা কে কি করব, কেমন পোশাক পড়ব এই সব নিয়ে আরকি। তাই না আয়ান। আয়ানের দিকে ইশারা করে বলে।

— আ হ্যাঁ হ্যাঁ । সেটাই আমরা বিয়ে নিয়ে কথা বলতে ছিলাম।
– তা বেশ তো। কাল থেকে তো সব শুরু। আয়ান নানুভাই তোমাকে কিন্তু সব দিক সামলাতে হবে বলে রাখছি।
– অবশ্যই নানাভাই৷ আমাকেই তো সব সামলাতে হবে। নাহলে কি করে হবে।

– রনি বলে মানে।
– তেমন কিছু না। আচ্ছা বসো তোমরা। সবাই এক সাথে আড্ডা দিই।

———————

তুহিন তানুকে অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু তানু সে কোনো ভাবেই বুঝতে চাইনা। তানুর অভিমানের ভীত এত গাঢ় যে সহজে তা যাওয়ার না। তুহিন হতাশ হয়ে পড়ে।

– তুহিন মাথায় হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে ভাবতে থাকে কি করা যায়। হাতে বেশি সময় নেই। বিয়ে শেষ হলে চলে যাবে তারা। তখন হয়ত তানুর সাথে এই ভাবে কথা বলার সুযোগও পাবে না। তানু তো তুহিনকে দেখলে ইগ্নোর করে যাচ্ছে।

— তুহিনকে একটা মেয়ে ফলো করছে অনেক আগে থেকে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। অনেক মেহমান আসছে। অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়েরাও এসেছে। তুহিন চারিদিকে চোখ বুলাতে গিয়ে এই মেয়ের দিকে চোখ পড়ে। মেয়েটা তুহিনের তাকানো দেখে একটা হাসি দেয়। তুহিন বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে।

– পরোক্ষণে তুহিন মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা আলতো হাসি দেয়। ব্যাচ এতেই মেয়েটা ফিদা হয়ে যায় তুহিনের হাসিতে। দূর থেকে তানু আড়ে আড়ে সবই লক্ষ্য করতে ছিল। তুহিনের এমন চোখে চোখে ইশারা দেখে রেগে বোম হয়ে যায় তানু। মনে মনে হাজারটা গালি দিতে থাকে তুহিন সাথে মেয়েটাকে।

— মেয়েটা এবার তুহিনকে হাত দিয়ে হাই জানায়৷ তুহিনও হাসি মুখে হাই বলে। তানু তো দেখছে আর জ্বলছে ভেতর ভেতর। রাগে দুইহাত মুঠো করে ফেলে। শালা তুহিন্নার বাচ্চা তোরে আজ আমি খাইছি। যেই একটু পাত্তা দিই নাই অমনি অন্য মেয়ের দিকে নজর। শালা ছেলে জাত গুলো এমন।। ধুর ভাল্লাগেনা 😤।

— মেয়েটা এবার তুহিনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তুহিন তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। একে তো মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলে না। এতখন তানুর জন্য এই গুলো করেছে। আবার মেয়েটা এখন কাছে আসছে৷ আল্লাহ জানে কি বলবে এসে।

— মেয়েটাকে তুহিনের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে তানু জোরে হেটে তুহিনের সামনে দাঁড়ায়। তুহিন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু ভাব খান এমন দেখায় যেনো কিছু হয়নি।
– কি ব্যাপার তুমি সামনে এসে দাড়ালে যে। সরো সামনে থেকে। সবে একটা মেয়ে পটানোর চেষ্টা করছি এতে পানি ঢেলে দিচ্ছে।

– তানু এবার রাগে তুহিনের কলার চেপে ধরে। তানুর কাজে তুহিন হকচকিয়ে যায় সাথে অবাক। তানু যে এতটা রেগে যাবে বুঝতে পারেনি।

– তুহিনের কলার চেপে ঘরাতে মেয়েটা ভয় পেয়ে যায় আর এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়না৷ তাই পাশ কেটে চলে যায়।

— খুব সখ না মেয়ে পটানোর। প্রেম করার খুব সখ তোর। একটু আগে পর্যন্ত তুই আমার পিছে ঘুরঘুর করতে ছিলিস যেই আমি পাত্তা দিই নাই আর অমনি অন্য মেয়ের দিকে নজর তাই না। তোর চোখ আমি তুলে নেব তারপর মার্বেল খেলবো সেই চোখ দিয়ে আমার নামও তানু বুঝেছিস।

– তুহিন মুগ্ধ হয়ে তানুর কথা শুনে। ভেতরে তার শীতল হাওয়া বয়ছে। আগের তানুকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি খুশি লাগছে তার।
— ওই কথা বল। কি দেখছিস এমন করে৷ আগে কখনো কি আমার এই রুপ দেখিস নি কলার ঝাকিয়ে বলে তানু।
– তুহিনের এবার হুস আসে। তানুর হাত থেকে কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে আর বলে কি করছো তানজিলা ছাড়ো। আশেপাশে সবাই দেখছে। আমি যাই করি তোমার কি। তুমি তো আর আমাকে ভালবাসো না। আমাকে নাকি তোমার সহ্য হচ্ছে না।

– তাই আমি ঠিক করেছি তোমার পিছে আর ঘুরব না। নতুন একটা খুজে নেব। যে আমাকে ভালবাসে না তার পিছে ঘুরে কি লাভ।

— কে বলেছে আমি তোকে ভালবাসি না। কান খুলে শুনে রাখ তুহিন শুধু তানুর। ভালবাসলেও তানুর আর না ভালবাসলেও তানুর বুঝেছিস৷ অন্য মেয়ের সাথে প্রেম তো দূরে থাক ধারে কাছেও আসতে দেব না হু।

– তুহিনের চোখ মুখে খুশির ঝলক। অবশেষে কাজ হয়েছে।
– কি বললে তুমি আবার বলো।।আমাকে ভালবাসো। সত্যি আমাকে ভালোবাসো। তুমি না কাল বললে আমাকে নাকি আর ভালবাসো না। আমাকে দরকার নাই আর।

— তানু এবার জড়িয়ে ধরে তুহিনকে। তুহিন তো সেই রকম অবাক হয় তানুর কাজে৷ অন্য রকম শিহরণ জাগে মনে। সকল সুখ এসে দোলা দেয় হৃদয়ে।

– আপনি খুব খারাপ তুহিন। আপনি শুধু আমাকে কষ্ট দেন। আমার ভালবাসা আপনি কখনো বুঝতে পারেন না। যেদিন আমি সত্যি অনেক দূরে চলে যাব সেদিন কিন্তু বাকিটা আর বলতে দেয় না তুহিন৷ তানুকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলে খবরদার না। আর একটাও বাজে কথা না। আমি ভুল করেছি আর এই ভুল করতে চায় না। ভুলের মাশুল দিয়েছি আমি কষ্ট পেয়েছি। আর না এবার আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই। সাথে থাকতে চাই। ভালবাসি তানজিলা তোমাকে। অনেক ভালবাসি ।

– তানুর মুখেও হাসি ফুটে। আমিও ভালবাসি অনেক ভালবাসি। কিন্তু হ্যাঁ অন্য মেয়ের দিকে যদি চোখ যায় না তাহলে কিন্তু।

– সেকি আমি আর জানি না।।আমার মাথা যে আর মাথার জায়গায় থাকবে না আমি খুব ভালো করে জানি। আল্লাহ কি গুন্ডি মেয়ে আমার কপালে দিলে।। তুহিনের কথা শুনে তানু মুচকি হেসে চিমটি কাটে। তুহিন আউচ বলে হেসে দেয়।

— অবশেষে এক জোড়া প্রেম পরিনতি পেলো। সকল অভিমান রাগ সব কিছু শেষ করে এক সাথে পথা চলা শুরু করবে তারা। এই ভাবে ভালো থাকুক সকল ভালবাসা। একসাথে চলার অঙ্গিকার নিয়ে পাশাপাশি থাকুক আজীবন।
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
পর্ব-৩২

–রাত প্রায় ১টা কাছাকাছি।

“সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম নেই শুধু দুটি মানুষের চোখে। তাসনু আর আয়ান দুজন ছটফট করছে শুয়ে। কাল সকাল হলে বিয়ের ধুমধাম শুরু হয়ে যাবে। কাল গায়ে হলুদ পড়শু বিয়ে।

— আয়ান উঠে বারান্দায় আসে। কি করবে, কি করে তাসনুকে বোঝাবে কিছুই মাথায় আসছে না তার।
— তাসনু বিসানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। কাল তার গায়ে হলুদ তারপর বিয়ে। তাসনু উঠে বসে পড়ে। এইভাবে জেদ করে থাকা কি ঠিক হচ্ছে মনে মনে ভাবে তাসনু। আয়ানকে ছেড়ে অন্য কাউকে… না না কোনো ভাবে সম্ভব না। আয়ানের সাথে কথা বলতে হবে। তাসনু উঠে আয়ানের ঘরের উদ্দেশ্য হাটা দেয়।

– আয়ান ঘর থেকে বারান্দা আর বারান্দা থেকে ঘর পায়চারি করছে। কোনো কিছুতে স্বস্তি মিলছে না তার। আয়ান ছাদে যাবে বলে ঠিক করে। বাইরে ঠান্ডা পড়ছে তাই একটা চাদর টেনে নেয় গায়ে। বাইরে যাওয়ার জন্য যা দরজাটা খুলেছে৷ অমনি তাসনু হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করে। আয়ান চমকে যায় এতে। এত রাতে তাসনুকে কোনো ভাবেই আশা করিনি। তবে আয়ানের এখন ভালো লাগছে তাসনুকে দেখে। মনে শান্তি অনুভব হচ্ছে।

— তাসনু কোনো কথা না বলে আগে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আয়ান তাসনুর কাজে বেশ অবাক হয়। তাসনু যে কান্না করছে আয়ান বেশ বুঝতে পারছে। এবার আয়ানও তাসনুকে আগলে নেয় বাহুডোরে।

— আমাকে মাফ করে দিন দয়া করে। আমার তখন খুব রাগ হয়েছিল তাই আপনাকে ওইসব বলে ফেলি। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। আপনাকে ছাড়া কোনো ভাবে থাকা সম্ভব না৷ কিছু একটা করুন আয়ান৷ আমি এই বিয়ে করতে চায়না।

— তাসনুর কথা শুনে আয়ানের মুখে হাসি ফুটে। অবশেষে তাসনু বুঝতে পেরেছে৷ একটা চিন্তা মাথা থেকে গেলো। এবার বিয়েটা কি করে বন্ধ করা যায় সেটা ভাবার বিষয়।
— আরে কান্না করছো কেনো। আমি তো আছি নাকি। আমার উপর ভরসা নেই। আমি থাকতে তোমাকে অন্য কারো হতে দেব ভাবলে কি করে।

— কাল গায়ে হলুদ তারপর তো বিয়ে। কি করবেন আপনি এই দুদিনে। আমার খুব ভয় করছে আয়ান যদি বিয়েটা রনির সাথে হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেব আয়ানের বুকে মাথা রেখে বলে তাসনু।
– আয়ান তাসনুকে আরো শক্ত করে ধরে বলে এই সব কথা বলো তাসনু আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে।

-আমার থেকে তোমাকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমার উপর বিশ্বাস রাখো৷ সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া আমরা তো একা না। রিক, তুর্য, অনু, নুসরাত এমনকি ছোট মামি নানুও আছে আমাদের সাথে। আমরা ঠিক কিছু না কিছু একটা করে বিয়েটা ভেঙে দেব।

– আয়ানের কথায় তাসনু একটু স্বস্তি পায়। মুখে মৃদু হাসি আসে। আয়ান তাসনুর কপালে একটা ভালবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলে ঘরে যাও এখন। যদি কেউ এইভাবে দেখে নেয় তো তাহলে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তাসনুও আর কিছু বলে না। আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে এক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ছুটে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।

– আমি কিন্তু সত্যি বলছি যদি রনির সাথে কোনো ভাবে বিয়ে হয় তাহলে নিজেকে শেষ করে দিতে একবারও ভাবনা। বলেই আয়ানকে ছেড়ে চলে যায়।

– আয়ান তাসনুর কথায় বেশ চিন্তিত হয়ে যায়। তাসনুকে তো বলে দিলো সব মেনেজ করে নেব৷ কিন্তু কিভাবে কি করবে। কিন্তু তাসনু যে সব অভিমান ভুলে ফিরে আসছে এটা অনেক। আয়ান মুচকি হেসে ঘুমাতে যায়।

———————
— আজ তাসনুর গায়ে হলুদ। আয়ান সহ বাকি সবাই বেশ চিন্তিত। রিক তুর্য মুখ ভাড় করে বসে আছে। গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত তারা। কিছু একটা উপায় আজই বের করতে হবে নাহার সময় নেই।

— এর মধ্যে আয়ানের ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে সামিরা ফোন দিয়েছে। নাক মুখ কুচকে ফোন রিসিভ করে আয়ান।

” অল দ্যা বেস্ট ভাইয়া” সামিরা বলে।
– সামিরার কথা শুনে আয়ানের মুখে হাসি আসে। সামিরা তাকে কেনো এই কথা বলছে আয়ান ভালো করে জানে।

— কেমন আছিস আর মা কেমন আছে। সবাই ভালো আছিস তোরা আয়ান বলে সামিরাকে।

– আমাদের কথা বাদ দে। আমরা সবাই আছি বিন্দাস। ভাইয়া জানিস মা পুরো বাড়ি বাড়ি সাজিয়েছে। আর সকল আত্বিয়স্বজনকে বলেছে তুই বউ নিয়ে আসবি। আমার কি যে এক্সাইটেড লাগছে না ভাইয়া৷ তোকে বলে বুঝাতে পারব না।

– আয়ান হেসে বলে আচ্ছা থাক তোর উত্তেজনা তোর কাছে রাখ। তাছাড়া তোর পেত্নী যে নাচানাচি করবে এটাই স্বাভাবিক।

– সামিরা মুখ গোমড়া করে বলে ভাইয়া দেখ ভালো হচ্ছে না কিন্তু। ভাবি আসুক শুধু আমি নালিশ দেব তোর নামে।

– আচ্ছা ভাইয়া ওইদিকে সব ঠিকঠাক তো।৷ মা তো খুবই চিন্তায় আছে তোদের কি।

– চিন্তা করিস না। সব ঠিক হবে। আমার উপর ভরসা রাখতে বলিস মাকে। তার কথা রাখবে তার ছেলে। তাছাড়া আমিও তাসনুকে ভালবাসি খুব। তাই আমাকে তো সব পারতেই হবে। আচ্ছা বাবা কোথায় রে।

; বাবা তো অফিসে গেছে৷ বলেছে তাড়াতাড়ি আজ চলে আসবে। তোর বিয়ে নিয়ে সবাই তো সেই উল্লাসে আছে। আমি তো অপেক্ষা করছি কখন তুই তাসনু আপুকে নিয়ে আসবি। সামিরা মাথায় নিজে নিজে বাড়ি মেরে বলে। সরি তাসনু আপু না তাসনু ভাবি।

– আয়ান বলে এখনো তোর ভাবি হয়নি পাগলী।

– তাতে কি৷ ভাবি যে আমারই হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আচ্ছা এখন রাখছি৷ আর হ্যাঁ কোনো দরকার হলে ফোন দিস ভাইয়া

– আয়ান কথা বলে রেখে দেয় ফোন ।

— অনু নুসরাত ঘরে আসে। কি ব্যাপার সবাই এমন মুখ করে বসে কেনো সবাই।

– কি করব বুঝতে পারছি না। তাসনুকে এখানে থেকে বের করব কি করে। বাইরে তোমার বড়বাবা দেখি আজ গার্ড বসিয়েছে। হঠাৎ গার্ডের দরকার পড়লো কেনো বুঝলাম না। রিক বলে।

– আমিও এটাই ভাবছি হঠাৎ পাহারা কেনো রাখতে হলো চিন্তিত হয়ে বলে অনু।

– আচ্ছা ওই সব বাদ দাও এখন বলো তাসনুকে নিয়ে কি করে বের হবে আয়ান এখানে থেকে। তোমরা কিছু ভেবেছো তুর্য নুসরাতদের প্রশ্ন করে।

– আমি একটা আইডিয়া পেয়েছি। কিন্তু আজ না যা করার কাল করতে হবে।

– কাল বিয়ের পরে করবি নাকি অসহায় ফেস বানিয়ে বলে অনু।
– অনুর কথায় বিরক্ত হয়ে বলে চুপ থাক সব সময় ভুলভাল বকা কাজ। আমি যা বলি শুন সবাই। তারপর নুসরাত ওদের সব বুঝিয়ে বলে।।

– নুসরাতের কথা সবার ভালো লাগে। আর এমনটাই করবে বলে ঠিক করে সবাই।

– তুর্য নুসরাতের গাল টেনে বলে অলে আমার জান্টুসের কত বুদ্ধি।। আয়ান তুর্যর কথা শুনে কাশি দেয়। তুর্য নুসরাত দুজনেই লজ্জা পায়। রিক অনু হেসে দেয়।

— রনির ঘর থেকে আয়ানের ডাক পড়ে। আয়ান ওদের বলে চলে যায় রনির ঘরে।

– কি ব্যাপার এমন ভাবে বসে আছো কেনো রনিকে বলে আয়ান।
– কি পড়ব বুঝতে পারছি না। তাছাড়া এই হলুদ আমার ভালো লাগে না৷ কিন্ত করাতো লাগবেই রিচুয়াল বলে কথা।

– এত চিন্তার কি আছে আমি আছি তো। তাছাড়া তোমার আর তাসনুর জন্য তো হলুদের ড্রেস নেওয়া হয়েছে। সেটাই তোমরা আজ সন্ধ্যায় পড়বে।
— হ্যাঁ তা ঠিক আছে। তবে তোমার আর আমার হলুদের ড্রেস তো একই ভুলে না সবাই তোমাকে বর ভেবে বসে।

– রনির কথায় আয়ানের কেমন একটা রহস্য লাগে। তাই ভ্রু কুচকে রনির দিকে তাকায়।

– রনি সেটা বুঝতে পেরে বলে আরে ইয়ার জাস্ট জোকিং। তাছাড়া আমি তো তোমাকে বলেছি আমাদের পোশাক একই নেওয়ার জন্য।

– আচ্ছা তুমি রেডি হও আমি আসছি। ওইদিকের কি খবর দেখে আসি বলে আয়ান রনির ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর রনি আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

— জমিদার বাড়িতে মেহমানে ভরপুর। সবাই প্রায় এসে পড়েছে। আর বাকি যারা আছে কাল বিয়েতে আসবে।

– তাসনু চিন্তিত হয়ে ঘর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনু নুসরাত ঘরে এসে বলে একি তুমি এখনো রেডি হওনি। একটু তো অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাসনু ওদের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে বিয়ের রঙ লেগেছে তোদের তাই না।
– আমি মরছি আমার জ্বালায় আর ইনারা আসছে মজালুটতে।

-আরে আপু এত চিন্তা করছো কেনো আমরা আছি তো নাকি। আমাদের উপর একটু ভরসা নেই তোমার,😒😒 অনু বলে।

– তোরা আছিস বলে তো এত চিন্তা তাসনু বলে।

” নুসরাত কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তখনই দরজায় টোকা পড়ার শব্দে পেছনে ফিরে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে। আয়ানকে দেখে তাসনু মায়াবী চোখে তাকায়।

– আয়ান ঘরে এসে অনু, নুসরাতকে বলে তোমরা বাইরের দিকটা একটু দেখবে আমার তাসনুর সাথে কথা আছে একটু।

– অনুরা চলে যায় বাইরে। দরজার সামনে পাহারায় থাকে তারা।

– আমার খুব ভয় করছে আয়ান। সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো।
– তুমি এতো চিন্তা কেনো করছো তাসনু। বলেছি তো আমার উপর ভরসা রাখো। এখনো সাঁজোনি কেনো। একটু পর তো সবাই তোমাকে নিতে আসবে হলুদের জন্য।

– ধুর আমার ভালো লাগছে না। ওই রনির জন্য সাঁজতে আমার বয়ে গেছে। আর আমি কিন্তু ওর ছোয়ানো হলুদ কিছুতেই গায়ে লাগতে দেবনা বলে রাখছি।

– আয়ান তাসনুর কথায় হেসে তাসনুর এক হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে আসে। তাসনু লজ্জা পায়। গাল দুটোই লাল আভা ফুটে উঠে।

– তো ম্যাডাম আপনি কার জন্য সাঁজবেন একটু বলবেন।

– আয়ানের এমন কথায় তাসনু আরো লজ্জা পেয়ে যায়। তারপর আয়ানের বুকে মুখ লুকায়।।
– শুনো তাসনু আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে পার করতে হবে। তাই নিজেকে যথা সম্ভব গুছিয়ে চলবে। সবাইকে তোমার হাসি মুখ দেখাবে৷ আমি যেনো তোমার মন খারাপ না দেখি কখনো।। বিয়ে আমার সাথেই হবে তোমার এটা নিশ্চিত থেকো।

– রনি তাসনুর ঘরের দিকে আসতে থাকে। রনি মুলত তাসনুর সাথে কথা বলতে চাই হলুদের আগে। রনিকে তাসনুর ঘরের দিকে আসতে দেখে অনু নুসরাত দুজনে ঘাবড়ে যায়। ভয়ে দুজন দুজনের হাত চেপে ধরে।

– রনি তো এইদিকে আসছে এখন কি হবে অনু বলে।
– নুসরাত নখ কামড়াতে থাকে।
– কি ব্যাপার তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে যে রনি বলে অনুদের।

– রনির কন্ঠ শুনে তাসনু আয়ান দুজনে চমকে উঠে। তাসনু ভয়ে আয়ানের হাত খামচে ধরে। আয়ান তাসনুর হাতের উপর হাত রেখে আস্বস্ত করে।

– নুসরাত আর অনু মুখে জোর পূর্বক হাসি এনে বলে ওই ওই হয়েছে কি।

– রনি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি?

– আসলে আপু ড্রেস চেঞ্জ করছে তাই আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি একটানা বলে দেয় অনু।

— নুসরাত এবার মাথা জোরে জোরে ঝাকিয়ে বলে হ্যাঁ হ্যাঁ আপু তো ড্রেস চেঞ্জ করছে। কেনো ভাইয়া কোনো দরকার বুঝি।

– তাসনুর সাথে আমার একটু কথা ছিল তাই আর কি।

– আরে ভাইয়া কথা বলার কত সময় পাবেন। এখনই এতো তাড়া কিসের। কি ব্যাপার হবু বউকে ছেড়ে থাকতে পারছেন না বুঝি রসিকতা করে বলে অনু।

– অনুর কথায় রনি লজ্জা পেয়ে বলে আরে তেমন কিছু না। তাসনুর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল এই জন্য । আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ও রেডি হয়ে নিক তারপর নাহয় কথা বলব।

– হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। আপনি বরং পরে আসুন। আপু রেডি হয়ে তো স্টেজে যাবে তখন না হয় কথা বলে নিয়েন।

– রনি চলে যায়। অনু নুসরাত হাফ ছেড়ে বাঁচে। তাসনু আয়ানও স্বস্তি পায়।

— নুসরাত দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করে। ভাইয়া হয়েছে আপনাদের কথা৷ আর একটু হলে ধরা পড়ে যেতাম।
– আচ্ছা আমি এখন আসছি।।আমাদের কথা শেষ। আয়ান দুই পা এগিয়ে আবার ঘুরে অনু আর নুসরাতকে উদ্দেশ্য করে। ধন্যবাদ তোমাদের বলে হেসে চলে যায়।

— সন্ধ্যায় সবাই ব্যস্ত হয়ে ছুটাছুটি করছে। গায়ে
হলুদে আসা মেহমানদের কেউ আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। কেউ আবার ছেলে মেয়েকে হলুদ পড়াতে হবে তার জন্য আয়োজন করছে।

– রনি তৈরি হয়ে গেছে। আয়ান রনিকে রেডি করে দেয়। তারপর নিজেরা রেডি হয়। তাসনু অনু নুসরাত সবাই রেডি হয়ে গেছে।

– তাসনুকে দারুণ লাগছে হলুদ শাড়িতে৷ ফুলের গহনা সাথে হালকা মেকাপ সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে তাসনুকে। অনু নুসরাত সেম সাঁজ।

— তাসনুকে স্টেজে নিয়ে আসা হয় যেখান রনি আগে থেকে উপস্থিত ছিল। আয়ান মুগ্ধ হয়ে তাসনুকে দেখছে৷ তুর্য নুসরাতের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। আর রিকের আজ অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে অনুকে দেখে।

– নুসরাত তুর্যের দিকে তাকালে তুর্য একটা ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দেয়৷ এতে নুসরাত লজ্জায় কুকড়ে উঠে।

– তাসনুকে দেখে আয়ান বুকের বা পাশে হাত দেয়। তাসনু এটা দেখে মুচকি হাসে।
রনি মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাসনুকে। অপরুপ সুন্দর লাগছে তাসনুকে হলুদের সাঁজে।

— চলবে…………

( কাল গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন। রাতে আরেক পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।)
চলবে…
( ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন। গল্প দেব না ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন ভালো লাগছে একটু তাই দিলাম।)

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here