খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ২১+২২+২৩

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২১

— কেটে যায় আরো দুদিন।

-” তানু তুহিনের পিছে পিছে ঘুরেছে। নানা ভাবে জ্বালিয়েছে তাকে। তুহিন মুখ বুজে সহ্য করে গেছে। তানু তুহিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু তুহিন সে সুযোগ দিচ্ছেই না তানুকে। তাই তানু খুবই বিরক্ত তুহিনের উপর। তানু ঠিক করেছে আজ তুহিনের সাথে কথা বলেই ছাড়বে সে।
— তুহিন অন্য একটা ক্লাস থেকে ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছিলো তখনই তানু তুহিনের পিছে পিছে আসে।

— তুহিন তানুকে দেখতে পেয়েও না দেখার ভান করে পাশ কেটে চলে যায়। তানু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে আরে আমাকে কি পড়েনা নাকি 😒।

— ভাইয়া ও ভাইয়া শুনেন না। তুহিন এবার আর না দাঁড়িয়ে পারে না। চোখ মুখ কুচকে তানুর দিকে ফিরে তুহিন। তোমাকে বলেছি না তানজিলা আমাকে ভাইয়া বলবে না কলেজে। আগে ভাইয়া ছিলাম কিন্তু এখন তোমাদের স্যার আমি। তাই স্যার বলবে আমাকে।

— আর এভাবে সব সময় পিছে পড়ে থাকো কেনো আমার। সবাই কি ভাববে দেখলে। অনেকে খারাপ নজরে দেখে বিষয়টা লক্ষ্য করেছো। কি সমস্যা তোমার৷ কি চাও বলো?

— চাই তো আপনাকে কিন্তু কি করে বলি মনে মনে বলে তানু।

— কি হলো বলো চুপ কেনো।

– তানুর এবার ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে বলে আসলে ভাইয়া না মানে স্যার আপনাকে কতটা মিস করছিলাম আমি জানেন মুখ মলিন করে বলে তানু।

– কেনো আমাকে মিস করছিলে। আর আমাকে মনে করার মত কি এমন সম্পর্ক তোমার সাথে।

— না মানে স্যার সবার একটা প্রিয় মানুষ থাকে। মানে পছন্দের মানুষ। তো আপনি আমার কাছে তেমন একটা তাই মিস করছিলাম খুব দাত কেলিয়ে বলে তানু।

— আচ্ছা স্যার আপনি কি আমাকে মিস করেন নাই একটু। জিগাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে তানু তুহিনের দিকে।

— তুহিন তানুর কথায় হকচকিয়ে যায়। তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে কেনো আমি কেনো মিস করতে যাব তোমাকে। আরো ভালো ছিলাম এটা ভেবে যে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে তাই। কিন্তু কপাল তো টেনে আবার এখানে নিয়ে আসলো।

–তাহলে ভাবুন স্যার কত টান আমাদের মনের। আমি মিস করছিলাম আপনাকে আর আপনি ঠিক এখানেই হাজির হয়ে গেলেন। আচ্ছা এটা কি শুধু মনের মিল নাকিইইই একটু টেনে বলে তানু কথাটা।

– তুহিন জানে এই মেয়ের সাথে কোনো কথা বলে লাভ নেই। এত প্যারা একটা মেয়ে হয় কি করে তুহিন ভাবতে থাকে। তুহিন বলে দেখো এত কিছু জানতে চাই না। আমাকে আর বিরক্ত করবে না। সবাই খারাপ ভাববে। এবার কিন্তু আমি প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দেব তোমার নামে আমাকে ডিস্টার্ব করলে।

— 😒😒😒😒 সত্যি, তানু বলে.।
— অবশ্যই সত্যি। তাই বলে চলে যায় তুহিন।

— হুহ আসছে প্রিন্সিপালের ভয় দেখাতে আমাকে। আমার নামও তানজিলা রহমান আমাকে চেনো না চান্দু😎।

– কিরে ড্রামাকুইন এখানে কি করিস দাঁড়িয়ে পেছন থেকে সামিরা বলে।
– কিছুই না৷ তোর হাদারাম ভাই তুহিনের একটু ক্লাস নিচ্ছিলাম 😇।

— তুই আর ঠিক হইলি না। চল ক্লাসে যেতে হবে তো।

— হ্যাঁ হ্যাঁ চল। তারপর ওরা চলে যায়।

———————

–” আয়ান, রিক, তুর্য, তাসনু, নুসরাত, অনু সবাই আক একসাথে বের হয়েছে গ্রাম ঘুরতে। এটা মুলত নুসরাতের জন্য হয়েছে। সকালে তাসনুকে গিয়ে বলে নুসরাত সবাই একসাথে ঘুরতে গেলে কেমন হয়।

— তাছাড়া আয়ানরা এসে সেই ভাবে তো ঘুরতে পারে নাই। তাসনু আর কিছু বলেনি এই নিয়ে৷ এক কথায় রাজি হয়ে যায়। আয়ানের সংস্পর্শে থাকতে এখন কেনো জানি তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু কেনো ভালো লাগে সে জানেনা।

— ধান খেতের পাশ দিয়ে হেটে আসছে সবাই। উদ্দেশ্য যাবে ঘাটের পাড়ে। ওইখানে দৃশ্যটা সব সময় মনোমুগ্ধকর থাকে। তাসনু হাটছে আর ধানের গায়ের সাথে তার হাত স্পর্শ করে চলেছে। আয়ানের বেশ ভালো লাগছে এটা। তাই তাসনুর অজান্তে কিছু ছবি য়ুলে নেয় এই মুহুর্তের।

– রিক আর অনু একসাথে হাটছে। মুলত তারা গ্রামের অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলছে। নুসরাত আর তুর্য তারা এখন যুগলবন্দী পায়রা। তারাও কথা বলছে নানা বিষয় নিয়ে আর এগিয়ে চলেছে।

— ঘাটের কিনারায় এসে দাঁড়ায় সবাই। ফুরফুরে বাতাস এসে সবার শরীর মন শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে। তাসনুর চুল গুলো উড়ে মুখে বাড়ি খাচ্ছে। আর তাসনু মুখ কুচকে সেগুলো বারবার ঠিক করছে। আয়ানের বেশ ভালো লাগছে এটা তাই এটাও ক্যামেরা বন্দি করে নেয় সে।

— আয়ান চল গোসল করি নেমে। আমার তো খুব ইচ্ছে করছে এত সুন্দর পানি। আহ কি দারুণ জায়গা। একটুকরো প্রশান্তি যেনো এখানে রিক বলে।

— গ্রাম মানে মুগ্ধতায় ভরা। সব কিছু ফ্রেস থাকে এখানে। মন খুলে শ্বাস নেওয়া যায় এখানে। প্রাণ খুলে হাসা যায় এখানে, আর ভালবাসা স্বপ্ন সব কিছু খাটি থাকে তাসনু বলে কথা গুলো।

– আয়ান মুগ্ধ হয়ে তাসনুর কথা শুনছে। সবাই বেশ আপ্লুত হয়ে শুনছে তাসনুর কথা। তুর্য বলে সত্যি এখানকার মানুষ কত ভালো। মানুষকে কত সহজে আপন করে নিতে পারে। আবার পরিবেশ সব কিছু মিলিয়ে অসাধারণ।

— শুধু আয়ানের নানাভাই আর মামাটা কেমন। আমাদের মেনে নিতেই পারছে না আর না পারছে আপন করে নিতে রিক বলে ।

– আয়ানসহ বাকি সবার মন খারাপ হয়ে যায় রিকের কথায়। হঠাৎ পাশে সোরগোল শোনা যায়। অনেক বাচ্চা সহ কিছু মানুষের চিৎকার চেচামেচির শব্দ আসছে। আয়ান ভ্রু কুচকে বলে কি হলো ওইখানে চলতো দেখি। আয়ান আগে যায় সেদিকে। আয়ানের সাথে রিক তুর্যরা সবাই আসে।

— ডুবে গেলো ডুবে গেলো। বাঁচাও কেউ ওই যে ডুবে যাচ্ছে। বাচ্চারা এই বলে চিৎকার করছে।

– আয়ান গিয়ে একটা বাচ্চাকে বলে এই বাবু ক হয়েছে?
— ভাইয়া ওই আমরা সবাই গোসল করতে ছিলাম ঘাটে আমাদের সাথে একজন ডুবে যাচ্ছে ওই দেখুন। আয়ান সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বাচ্চা ঘাটের মধ্যে ডুবছে উঠছে। বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

— আয়ান আর কিছু না ভেবে সোজা ঘাটে লাফ দেয়। তারপর বাচ্চাটাকে ধরে গিয়ে। কিন্তু এখন আয়ান নিজে ডুবে যাচ্ছে। এক হাতে বাচ্চাটাকে উঁচু করে ধরেছে আর আয়ান ডুব খাচ্ছে।

— রিক তুর্য তাসনুরা এসে দেখে আয়ান পানির মধ্যে। সবার মুখে আতংকের ছাপ।

— আরে আয়ান তো সাঁতার জানে না। ওতো ডুবে যাচ্ছে তুর্য বলে।
– ওর কি দরকার লাফ দেওয়ার। এখন কি হবে।

— আয়ান সাঁতার জানে না কথাটা শুনা মাত্র তাসনুর ভেতরে এক অজানা ভয় বাসা বাধে। কিছু হারিয়ে ফেলার অনুভূতি হয় তার। সবার চোখ মুখে এখন ভয় আতংকের ছাপ।

– কিহ! আয়ান ভাইয়া সাঁতার জানে না নাকি অনু জিজ্ঞেস করে।

– না অনু ও সাঁতার জানে না।৷ দেখো ডুবে যাচ্ছে ও। তাসনু আর কিছু শুনা বা জানার অপেক্ষা না করে স্র্ব লাফ দেয় ঘাটে। সবাই অবাক হয়ে দেখছে। কিন্তু সবার মুখে ভয় বিদ্যমান।

— তাসনু আয়ানের কাছে গিয়ে বলে আমার হাত ধরুন আয়ান। আয়ানের কানে যেনো তাসনুর কথা যাচ্ছেই না। চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে আয়ানের। কিন্তু বাচ্চাটাকে দে ঠিকই উচা করে ধরে আছে। তাসনু এবার সাঁতার কেটে আয়ানের কাছে তারপর আয়ানকে ধরে। সাথে আরো দুজন নামে ঘাটে।

– তাসনু বাচ্চাটাকে ওদের কাছে দিয়ে আয়ানকে ধরে পাড়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। আয়ান এবার সমস্ত ভার তাসনুর উপর ছেড়ে দেয়। তাসনু অনেক কষ্টে পাড়ে নিয়ে আসে আয়ানকে। সবাই ধরে আয়ানকে তুলে পাড়ে শুয়ে দেয়। তাসনুও শুয়ে পড়ে আয়ানের পাশে। সে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে আয়ানকে নিয়ে আসতে।

– এমন সুদর্শন যুবকে একা এইভাবে নিয়ে আসা অনেক কঠিন বিষয় তাও আবার পানির মধ্যে থেকে। কিন্তু তাসনুর যেনো কিছু মনে আসেনি এমন। তার শুধু একটা চিন্তা ছিল আয়ানকে বাঁচানো।

– এই আয়ান চোখ খুল। চোখ খুল ভাই। কি হয়েছে তোর। তুই তো সাঁতার জানিস না তাএ কেন পানিতে লাফ দিতে গেলি রিক তুর্য একসাথে বলে।

– অনু আর নুসরাত কান্না করে দেয় প্রায়।

— তাসনু উঠে আয়ানের মাথাটা তার কোলে নিয়ে আয়ানকে ডাকতে থাকে। তাসনুর চোখে পানি ছলছল করছে।

– এই আয়ান উঠুন না। দয়া করে চোখ খুলুন। দেখুন আমরা সবাই আছি এখানে। কি হলো চোখ খুলুন। আপনার কিছু হতে পারে না। আমি কিছু হতে দেব না। চোখ খুলুন প্লিজ বলে তাসনু জোরে কেঁদে দেয়। সাথে সবাই কেঁদে দেয়।

— আচ্ছা ওর পেটে চাপ দিয়ে দেখি৷ যদি পানি খেয়ে নেয় তো। নুসরাত বলে ভাইয়ার হয়ত অক্সিজেন লাগবে। কিছু একটা করুন তাড়াতাড়ি।

– তাসনু এবার আর কোনো কিছু না ভেবে আয়ানের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। সবাই বেশ অবাক হয়ে যায় তাসনুর কাজে কিন্তু কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়না এখন। কারণ তাসনু এমন কেনো করছে সবাই বুঝতে পারছে।

— কিছুখন পর আয়ান চট করে চোখ খুলে তাকায় আর সবাই হাফছেড়ে বাঁচে। সবাই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফোস করে। অনু নুসরাতের মুখে হাসি ফুটে।

– আয়ান চোখ খুলে দেখে তাসনু তার অনেক কাছে। আয়ানকে এইভাবে তাকাতে দেখে তাসনু লজ্জা পেয়ে যায়। তারপর দূরে সরে আসে। লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে যায় তাসনু। আয়ান মুচকি হাসে উঠে বসে।

– খুব বাহাদুরি করতে গিয়েছিলেন তো আপনি। একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন কি অবস্থা করেছেন নিজের। আর একটু হলে তো আপনি নিজেই উপরে. আহ থাক রিক। বাদ দে যা হওয়ার হয়েছে।

– তবে ভাইয়া এমন করা আপনার ঠিক হয়নি। আপনি জানেন সাঁতার জানেন না তাও কি দরকার ছিল অনু বলে।

— কি করব অনু৷ দাঁড়িয়ে থেকে ওই বাচ্চাটাকে ডুবতে দেখতাম আমি। কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম যদি বাচ্চাটার কিছু হতো। আচ্ছা কেমন আছে ওই বাচ্চাটা।

– সে ভালো আছে। আর সেভ আছে চিন্তা করিস না তুর্য বলে।

— আচ্ছা চল বাড়ি যায়। আজ জা কান্ড হলো৷ আমাদের প্রাণ তো আর একটু হলে.. আচ্ছা থাক রি সন কথা এখন চলুন সবাই। তারপর জমিদার বাড়িতে হাটা দেয় তারা….
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২২

–” রাতে তাসনু ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় আয়ানের কথা মনে আসে তার। কারণ আয়ান তখন বাড়ি আসার পর থেকে হাল্কা জ্বর ছিল শরীরে। রাতে খাবার সবাই একসাথে খায়। রায়হান আর আফজাল শেখ বাদে। খাওয়ার সময় আয়ান তেমন কিছু খাইনি। কিছু ভালো লাগছে না এই বলে চলে আসছে সে।

— তাসনু মনে মনে ভাবে একবার কি গিয়ে দেখে আসবো। সন্ধ্যায় তো হাল্কা জ্বর ছিল এখন কি কম নাকি বেশি। তাসনু দোটানায় পড়ে যায়। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সে আয়ানের ঘরে যাবে একবার দেখে না আসলে ওর শান্তি লাগবে না।

— সবাই প্রায় শুয়ে পড়েছে। তাসনু একাই থাকে রুমে। আর নুসরাতের রুমে নুসরাত আর অনু থাকে। এর আগে তাসনুও থাকত একসাথে তিনজন কিন্তু নুসরাতের ঘুমানো খারাপ। তাই তাসনু এখন একাই থাকে তার রুমে।

— রাত প্রায় ১১টা সবাই ঘুমিয়ে গেছে। গ্রামে রাত ১১ টা মানে মধ্যরাত প্রায়। তাসনু নুসরাত অনু প্রায় অনেক দেরি করে ঘুমায়। তারা একসাথে আড্ডা দিয়ে তবে ঘুমাতে যায় যে যার ঘরে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আজ তাসনু বেশি তেমন কথা বলেনি।।ওদের কথায় হা হু ধরে গেছে প্রায়।

— তাসনু তার রুমের দরজা খুলে চারিপাশে দেখে নেয় চোখ বুলিয়ে। কাউকে দেখতে পায়না সে। একটা টানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় আয়ানের ঘরের দিকে।

– আয়ানের ঘরে ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতে সব কিছু দেখা যাচ্ছে প্রায়। আয়ানের ছোট থেকে অভ্যাস ঘরে অল্প হলেও আলো থাকা লাগবে আর তাসনু সম্পুর্ণ তার বিপরীত যত অন্ধকার হয় রুম তত ভালো ( আমার মতো 😁)।

— তাসনু আয়ানের ঘরের সাথে এসে দরজা হাল্কা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। কারণ তাসনু আগে থেকেই যানে আয়ান ঘরের দরজা সব ভেজানো থাকে রাত বা দিন যাই হোক।

– তাসনু আয়ানের দিকে তাকাতেই তার ভ্রু কুচকে আসে। কোতুহল নিয়ে আরো ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে আয়ান প্রায় কাপছে শীতে। গায়ের চাদর টেনে মাথা পর্যন্ত দিয়ে তবুও থরথর করে কেঁপেই চলছে। তাসনু আর কোনো কিছু না ভেবে সোজা ঘরে ঢুকে পড়ে তারপর আয়ানের কাছে গিয়ে কোনো দ্বিধা ছাড়াই আয়ানের কপালে হাত দিতেই সে চমকে উঠে। কারণ আয়ানের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।

— আয়ান গরম হাতের ছোয়া পেয়ে একটু কেঁপে উঠে তারপর তাসনুর হাত টেনে জড়িয়ে ধরে।

— তাসনু আয়ানের কাজে চমকে উঠে সাথে একরাশ ভয় চেপে বসে। তারপর তাসনু খেয়াল করে দেখে আয়ানের কোন জ্ঞ্যান নেই যেনো। জ্বরে তার কোনো হুস নেই। তাসনু আর কোনো কিছু না ভেবে আয়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।।কারণ সে আয়ানকে জলপট্টি দেব তাই হাতটা ছাড়ানো দরকার।

— আয়ান এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তাসনুর হাত যে ছাড়ানোই যাচ্ছে না। তাসনু অনেক কষ্টে আয়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে একটা পাত্রে পানি আর একটা ফ্রেস কাপড় নিয়ে আসে। তারপর আয়ানেকে জলপট্টি দিতে থাকে।

— রাত প্রায় ২টার কাছাকাছি। তাসনু এতখন বসে জলপট্টি দিতে ছিল আয়ানকে। এখন আয়ানের জ্বর অনেকটা স্বাভাবিক। তাসনু এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে। এতখন তার বুকে একটা অজানা পাথর জেকে বসে ছিল যেনো। আয়ানের শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করে। সাথে জ্বরটাও নেমে যায়। তাসনু এবার ভাবতে থাকে সে ঘরে যাবে নাকি এখানেই আর একটু থাকবে।।যদি আবার জ্বর আসে তখন। তাসনু ঠিক করে ভোর পর্যন্ত এখানেই থাকবে তারপর চলে যাবে। এইদিকে তাসনুর চোখে ঘুমেরা দল বেধে আসতে শুরু করেছে। তাই তাসনু আয়ানের মাথার কাছে বসে হেলান দিয়ে ওইখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।

— ভোর আলো প্রায় ফুটে উঠেছে। পাখিরা তাদের কিচিরমিচির শব্দে জানান দিচ্ছে আরেকটা দিনের সুচনা। সূর্য তার নিয়ম মতো পুর্ব দিকে ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে। এর মধ্যে আয়ানের ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু সে বুকে ভারী কিছু একটা অনুভব করে। আয়ান চোখ খুলে যা দেখে তাতে তার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

— তাসনু আয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের চারিপাশে বিচরণ করছে। গোলাপি ঠোঁট দুটি মাঝে মাঝে হাল্কা কেঁপে উঠছে। ঘুমন্ত তাসমুকে যেনো একটা নিস্পাপ শিশু লাগছে। আয়ানের ঠোঁটেও আসে মৃদু হাসি। পরোক্ষে মনে আসে যখন তাসনু এখানে কি করে আর কেনো তখনই কপালে ভাজ করে আয়ানের।

— আয়ান ভাবছে তাসনুকে জাগাবে নাকি জাগাবে না। যদি কেউ দেখে নেয় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই ভেবে আয়ান আর কোনো কিছু না ভেবে তাসনুকে ডাক দেয়। তাসনু ঘুমঘুম মাতাল করা কন্ঠে বলে আর একটু ঘুমায় প্লিজ। এত সকালে উঠতে ভালো লাগে না ছোটমা।

— আয়ান মুচকি হাসে তাসনুর কথায়। সাথে শীতল হাওয়া বয় হৃদয় জুড়ে তাসনুর ঘুম জড়ানো কন্ঠে।

–” আয়ান এবার জোরের সাথে ডাক দেয় তাসনুকে। তাসনু সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে তবে আয়ানের বুকে এখনো মাথা রেখে আছে।

— আয়ানের চোখে চোখ পড়তেই দুজন নীরব চাহনিতে দেখতে থাকে দুজনকে। তারপর তাসনুর খেয়াল আসে সে তো আয়ানের ঘরে ছিল। তাসনু সাথে সাথে উঠে যায় সেখান থেকে। কি করেছে সে বুঝতে পেরেই লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। তাসনুর এখন মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর সে তার ভেতরে চলে যাবে।

— আয়ান তাসনুর লজ্জা বুঝতে পেরে সেটা কাটানোর জন্য বলে তুমি আমার ঘরে কি করে এলে। কেউ যদি দেখে নিত তাহলে খারাপ হয়ে যেতো ব্যাপারটা।

— আসলে রাতে আপনার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তো আপনার ঘরের দরজা খোলা দেখে দাড়িয়েছিলাম।

— তো? আয়ান বলে।

– না মানে তারপর কোতুহল বসত ঘরে এসে দেখি আপনার অনেক জ্বর। আপনি অনেক কাঁপতে ছিলেন জ্বরে। তাই এতো রাতে আর কাউকে ডাকি নাই। আমি জলপট্টি দিতে ছিলাম কথাটা মাথা নিচু করে বলে তাসনু।

— আয়ানের মুখে হাসি কিন্তু তাসনুর আড়ালে। প্রিয় মানুষটাকে পাশে কে বা না চায়। আর যদি সেবাটা প্রিয় মানুষের হাত থেকে হয় তাহলে তো আর কোনো কথায় নেই। আয়ানের অনেক ভালো লাগছে। মনটা ফুরফুরে লাগছে আজ তার।

— আচ্ছা ঠিক আছে এখন তোমার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। আমার জন্য তোমার অনেক কষ্ট করতে হলো। আমি দুঃখিত আর অসংখ্য ধন্যবাদ হেসে বলে আয়ান।

— আমি ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য কিছু করি নাই মুখ গোমড়া করে বলে তাসনু। কারন আয়ানের কথাটা তার ভালো লাগেনি। সেতো তার প্রিজনের সেবা করেছে আর সেটা ভালো লাগা থেকেই করেছে। তাহলে ধন্যবাদ কেনো দিতে হবে। প্রিয়জন কেউ ধন্যবাদ দেয় বুঝি। মনে মনে থেকে গেলো দুটি মনের কথা কারো কাছে প্রকাশ পেলো না কথা গুলো।

— তাও দিলাম এটা সৌজন্য বলতে পারো।

– রাখেন আপনার সৌজন্য আপনার কাছে আমার লাগবে না। আর ওষুধ খেয়ে নিয়েন জ্বর নেই বলে অবহেলা করবেন না। তাই বলে চলে যায় তাসনু।

— আয়ান বলে যা বাবা রাগ করলো কেনো৷ আমি কি কোনো খারাপ কথা বললাম নাকি। তারপর আয়ান আর কিছু না ভেবে ফ্রেস হতে চলে যায়।

———————

-” ভাইয়া না মানে স্যার আপনার সাথে আমার কথা আছে। আর আমার কথা গুলো আপনাকে শুনতেই হবে আজ। নাহলে আমি শান্তি পাচ্ছি না কোনো কিছুতে তানু বলে কথা গুলো তুহিনকে।

— তুহিন তার রুমে বসে ছিল ক্লাসে যাবে তার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে তখন তানু আসে তুহিনের অফিসরুমে। এসেই কথা গুলো বলে তুহিনকে।

— তুহিন বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে বলে কি সমস্যা তোমার তানজিলা। এইভাবে হুটহাট চলে আসো কেনো৷ কারো রুমে আসার আগে পারমিশন নিতে হয়ে জানো না।

– সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না। তবে আপনার সাথে আমার কথা আছে দয়া করে কথা গুলো শুনবেন।

– তাড়াতাড়ি বলো কি কথা আর হ্যাঁ কোনো আজেবাজে কথা কিন্তু বলবে না কোনো দরকারী কথা থাকলে বলতে পারো।

– হ্যাঁ অনেক জরুরী কথা বলব। আমার জিবনের প্রশ্ন এটা। দরকারী তো বটেই।

– তানুর কথায় তুহিন ভ্রু কুচকে তানুর দিকে তাকিয়ে বলে মানে।

– স্যার আমি আপনাকে ভালবাসি। প্রথম যেদিন দেখি সেদিন থেকে আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি। অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে বোঝানোর কিন্তু পারিনি। আমার আপনাকে চাই স্যার। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। মাথা নিচু রেখেই বলে কথা গুলো তানু।

– তুহিন অবাক সাথে রাগী লুক নিয়ে তাকায় তানুর দিকে তারপর বলে তুমি আমাকে এই সব ফালতু কথা বলার জন্য এতখন অপেক্ষা করালে। আমার ক্লাস আছে এখন যেতে হবে তোমার ক্লাসে যাও এখন।

– না আগে আমার কথার উত্তর নেব তারপর যাব আমি এখান থেকে। তুহিন এবার অনেক বিরক্ত নিয়ে বলে কি পাগলামি হচ্ছে তানজিলা। আমি তোমার স্যার ভুলে যেওনা। সম্মান দিয়ে কথা বলো। আর তোমার সাথে আমার কখনো কোনো সম্পর্ক হবে না। আর আমি এই সব জড়াতে চায়না।

— তোমরা এখনকার যুগে তাল মিলিয়ে চলতে লেগে সব কিছু ভুলে যাও। মাথায় শুধু প্রেম ভালবাসা এই গুলো ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই তোমাদের। পড়াশোনায় মন দাও জীবনে কিছু করতে পারবে।তোমাকে ছেলের পেছনে না ছেলেরা তোমার পেছনে দৌড়াবে।

— আমার অন্য ছেলে লাগবে না। আমি শুধু আপনাকেই চাই। দয়া করে আমাকে নিরাশ করবেন না। চোখে পানি টলমল করছে তানুর।

— দেখো তানজিলা তোমার এখন আবেগের বয়স তাই এমন মনে হচ্ছে। সময় দাও সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে দয়া করে আর বিরক্ত করবে না।

— আমি ছোট বাচ্চা নয় স্যার যে আবেগে ভাসবো। আমি অনার্স স্টুডেন্ট। একজন অনার্সে পড়া মেয়ে নিশ্চয় বাচ্চা নয়। যথেষ্ট এডাল্ট সে।

– তোমার সাথে আমি কোনো তর্কে যেতে চাই না। আমার দ্বারা সম্ভব না। তোমার মতো কত মেয়ে ঘুরেছে আবার তারা ফিরেও গেছে সব ভুলে ভালো আছে। তুমি ভুলে যাবে সব সময় দাও নিজেকে। আর হ্যাঁ দয়া করে আমার সামনে আর আসবে না এই সব বাজে কথা নিয়ে। আমি তোমার বাসা প্লাস প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে নালিশ দেব। তারপর তুহিন চলে যায় আর তানু সেখানে বসেই কাঁদতে থাকে।

–“দোস্ত অনেক দিন তো হলো এবার তো আমাদের ফিরতে হবে ঢাকায় রিক বলে।
– আমি সব ঠিক না করে যাব না। তোরা তো জানিসই আমার এখানে আসার মুল উদ্দেশ্য কি। সেটা শেষ না করে কেমন করে যায়। আমি তো আমাকে কথা দিয়েছি রিক।

— বুঝতে পারছি সব কিন্তু কিভাবে সব ঠিক হবে বল। আমি কোনো আসায় দেখছি না৷ এই রায়হান শেখ আর আফজাল শেখ কঠিন হৃদয়ের মানুষ। এদের মন সহজে গলবে না।
-তাও আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাব। আমাকে সব ঠিক করতেই হবে। তোদের সমস্যা হলে চলে যেতে পারিস আমি একাই থাকব এখানে।

– এমন কথা বলতে পারলি তুই আমাদের আয়ান তুর্য বলে। এই বন্ধু ভাবিস আমাদের যে তোর বিপদের সময় আমরা চলে যাব। তোর কাজ মানে সেটা আমাদেরও। তাই একসাথে সব করব। আর দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

– শালা খুব কথা শিখেছো। তোদের সমস্যা হলে তোরা চলে যেতে পারিস মুখ ভেংচি কেটে বলে রিক। যাব না কি করবি তুই।
— রিকের এমন বাচ্চামো কথা শুনে আয়ান তুর্য দুজনে হেসে উঠে তারপর তিনজন তিনজনকে জড়িয়ে ধরে…..
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২৩

–” আর কত দিন তোমাদের রাগ,জেদ,অভিমান, অহংকারের দেয়াল থাকবে বলতে পারো। কতদিন আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে থাকব নুরজাহান বিবি রায়হান শেখকে বলেন কথা গুলো।

— আহ নুর আবার এই কথা কেনো এতদিন পর। তোমাকে না বলেছি তুমি এইসব কথ কখনো বলবে না এই বাড়িতে তাহলে আজ কেনো?

– আমি আর চুপ থাকতে পারছি না। আমার একটা মাত্র মেয়ে কিন্তু আমার থেকে আজ ২৬ বছর দূরে। না পারি একটু ছুঁয়ে দেখতে কাছে পেতে। আমি তো মা আমার তো ইচ্ছে করে মেয়ে জামাই নিয়ে সুখে থাকার।

– আমার কি কষ্ট হয়না। আমি তো বাবা। আমার কি খারাপ লাগে না আমার মেয়ের জন্য। কত আদরের সন্তান সে আমাদের।

– যদি কষ্ট হতো খারাপ লাগতো তাহলে এই ভাবে ২৬ বছর থাকতে পারতে না। তোমরা পাষাণ তোমাদের মন পাষাণ হয়ে গেছে। যার জন্য তোমাদের কোনো খারাপ লাগা বা কষ্ট নেই। আমি আমার মেয়েকে চাই সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। মরার আগে অন্তত এই আশা টা আমার পুরন করো।

– নুর জোরের সাথেই বলে রায়হান শেখ। কি বাজে বকছো এই সব।

– বাজে শুনতে লাগলেও এটাই সত্যি। কেনো এমন করছো তোমরা। কি লাভ হচ্ছে এতে। শুধু আপন মানুষ গুলো থেকে দূরে থাকা। তাছাড়া আমার মেয়ে তো ভালো আছে অনেক সুখে আছে তাহলে সব মেনে নিতে সমস্যা কোথায়। তোমাদের এত কিসের জেদ।

– ছেলে গুলোর সাথে তোমরা খারাপ ব্যবহার করেছো পর্যন্ত। অবহেলা অপমান করেছো। ওরা ভালো আর রক্তের সম্পর্ক বলে কিছু মনে করেনি যদি পর হতো তাহলে কখনোই এই গুলা দেখত না। একেই বলে রক্তের টান। তাই তো ছুটে এসেছে এতকিছুর পরও কিন্তু তোমরা তাও বুঝলে না।

– নুরজাহান বিবির কথা গুলো ভেতর থেক ভাবাচ্ছে আজ রায়হান শেখকে। সে নিশ্চুপ হয়ে নুরজাহান বিবির কথা শুনে যাচ্ছে।

– এখনো সময় আছে সব ঠিক করে নাও। মেয়েকে কাছে নাও৷ সব অতীত ভুলে যাও তাই বলে নুরজাহান বিবি বের হয়ে যায় ঘর থেকে। অনেক দিনের জমে থাকা ক্ষোভ আজ প্রকাশ পেয়েছে। নুরজাহান বিবি আজ কথা গুলো বলার সাথে অঝোর ধারায় কান্নাও করেছে। আসলে মানের মন তো সন্তানের জন্য সব সময় কাঁদে।

–” কি রে মন খারাপ করে কেন। আবার কি হলো তোর সামিরা বলে তানুকে।

— আর বলিস না ইয়ার। স্যার আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। আমার নাকি এই গুলো আবেগ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে তানু কথাটা।

– তোকে তো আগেই বলেছিলাম তুহিন ভাইয়া অন্য রকম মানুষ। তার পিছে ঘুরে লাভ নেই এখন হলো তো।

আমিও হার মানার পাত্রী নয়। আমার নামও তানজিলা রহমান ওরফে তানু। ভালবাসতে হবে মানে হবেই 😎।

– কি করবি তাহলে এখন। বললি তো রিজেক্ট করে দিয়েছে৷ তাও তুই বেহায়ার মতো।

– হপ। ভালবাসায় একটু আট্টু বেহায়া হতে হয় তিই ছোট মানুষ বুঝবি না 😁।
– হ্যাঁ আপনি তো সব বুঝে বসে আছেন বুড়ী দাদি একটা 😏।

– আচ্ছা দোস্ত শুন না আমার মাথায় একটা আইডিয়ে এসেছে। এবার তো আমাকে এক্সেপ্ট করতেই হবে ওই চারচোখ গোমড়া মুখোকে।

-🙄🤔🤔🤔🤔

– আরে তোর তুহিন ভাইয়া। দেখিস না সব সময় মোটা ফেমের চশমা পড়ে কেমন মুড নিয়ে থাকে৷ দেখে মনে হয় নবাব রায়জাদা হুহ।

– তো আইডিয়া কি বলে আমাকে উদ্ধার করুন মহারাণী কটকটি 😁।

— কিহ তুই আমাকে কটকটি বললি আমি কটকটি তাহলে তুই কি সাকচুন্নি একটা।

– যাক মন ভালো হয়েছে তাহলে সামিরা বলে।

তানু বলে মানে। কি বলিস।
– তোর মন খারাপ দেখতে একটুও ভালো লাগে না তাই তোকে এতখন হাসানোর জন্য এত কিছু বলা। যাই হোক প্ল্যান কি বল শুনি।

– তানু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে সামিরা কে৷ ভার্সিটির সবার সামনে ওই চারচোখ গোমড়া মুখোকে প্রপোজ করব। তাহলে আর আমাকে ফেরাতে পারবে না দেখিস।

— কিহ! চিৎকার করে বলে সামিরা।।
– আরে কানের পর্দা ফাটিয়ে বয়রা করে দিবি নাকি। না চিল্লাই কথা শুন আগে।

– কাল আমি ভার্সিটি সবার সামনে তুহিনকে প্রপোজ করব। মনের কথা আবার বলব। তাহলে দেখিস কেমন রাজি হয়।

– তুই বাড়াবাড়ি করছিস তানু। এটা ঠিক হবে না। ভাইয়া কিন্তু অনেক রাগী আমি জানি। তাই বলছি অন্য কিছু ভাব তাও এটা না প্লিজ ইয়ার।

– আরে রাখ৷ কিছু হবে না৷ কাল দেখ শুধু কি হয়৷ চল বাড়ি যাই আজ ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।

– ওকে চল। তবে ভেবে দেখিস আবার ইয়ার।

— কিরে প্রেম বয় তোর প্রেম কেমন চলছে পিঠে চাপড় মেরে বলে রিক তুর্যকে।

– আর কত নাম হবে ভাই। খুজে দেখ আর কিছু বাদ গেছে নাকি।

– আয়ান তুর্যের কথা শুনে হাসে কিন্তু কিছু বলে না।

– দোস্ত তোর ভবিষ্যৎ আমি একদম আঁধার লাগানো অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি।

– আয়ান আর তুর্য 😳😳😳😳। আঁধার আর অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য কি 😕।

— রিক মনে মনে বলে সত্যি তো দুটোই তো এক৷। ধুর কি বলতে কি বলে ফেলেছি।
“” না মানে আঁধার তো আছে সাথে অন্ধকারও 😁😁।

তো এটা হওয়া কারণ কি? আয়ান বলে রিককে।

– কি আবার৷। এমন বাড়ির মেয়েকে ভালবেসেছে যে জীবন যাবে তাও প্রেম সফল হবে না। পুরো গ্রামে যে প্রেম বারণ করেছে তার বাড়ির মেয়ের সাথেই সম্পর্ক ভাবা যায়। তোদের কি হবে সত্যি জানি না ভাই।

– কথাটা শুনে তুর্য মন খারাপ করে ফেলে। সত্যি এমনটা ভেবে দেখিনি সে। কি হবে কেউ তো মানবে না।

– এমনি তোর ওই হিটলার নানাভাই আর হিটলার মামা খেপে আছে আমাদের উপর। জানি না কবে এদের এই পাথর মন গলবে৷ আদো গলবে কিনা তাও জানি না। সব সময় এমন রুপ নিয়ে থাকে যেকোনো সময় কাঠগরায় রাখবে রিক বলে এই বাড়ির সবাই ভালো তোর বড় মামা আর নানাভাই বাদে।

— আয়ান বলে এমন করে বলিস না। এরাও ভালো আসলে কি বলতো প্রিয় কোনো কিছু থেকে যদি আঘাত পায় তাহলে সেটার জখম খুব বাজে ভাবে হয়। এদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নানুর থেকে শুনচিছ না সবাই মাকে কেমন ভালবাসতো। বিশেষ করে বড় মামা কতটা চোখে হারাতো মাকে। কিন্তু এখন সেই ভালবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়েছে । যার কারণ এই অহংকার জেদের পরিমাণ এখন অনেক থেকে আরো অনেক হয়ে শক্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে। যা সহজে ভাঙ্গবে না।

– আর নানাভাই সেও মাকে অনেক ভালবাসে ইনফ্যাক্ট এখনো ভালবাসে কিন্তু সে প্রকাশ করেনা কখনো। কিন্তু আমি নানাভাইয়ের চোখে মায়ের ভালবাসা দেখেছি। সময় দে সব ঠিক হয়ে যাবে।

– আমারও মনে হয় ওই হিটলার গুলো কখনো ভালো হবে না। তাহলে আমার কি হবে তুর্য বলে।

– তখনই আয়ানের ঘরে প্রবেশ করে রায়হান শেখ।

– রায়হান শেখকে দেখে সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। সাথে অনেক অনেক অবাক হয়। কারণ এতদিন আসা হয়ে পর্যন্ত রায়হান শেখ একবারও আয়ানের ঘরে আসেনি ভালো ভাবে কখনো কথায় বলেনি।

– রিক তুর্যর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে সব শুনে ফেলে নাই তো ভাই৷ তাহলে আজই আমাদের এই বাড়িতে শেষ দিন হবে।।

– রায়হান শেখ গোমড়া মুখ করে দাঁড়িয়ে আর আয়ান রিক তুর্য একদিনে ভয় আরেকদিনে অনেক ভালো লাগা কাজ করছে…..

চলবে..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here