খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ১৯+২০+২১

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১৮

–” কেটে যায় দুদিন!

– তানু মন খারাপ করে ক্লাসে বসে আছে। সামিরা বলে আচ্ছা এই শোক দিবস কত দিন চলবে। ধুর ভালো লাগে না। তাই বলে মুখ ঘুরিয়ে উল্টো বসে হয়ে। তানু জানে এই ভাবে দেখতে সামিরার ভালো লাগছে না তাকে। কিন্তু সে কি করবে। চাইছে তো নিজেকে সামলাতে কিন্তু পারছে কই।

— আচ্ছা শুনেছি আমাদের ইংরেজি স্যার নাকি বদলি হয়ে নতুন স্যার আসছে। আর এই স্যার নাকি ইয়াং আর দারুণ হ্যান্ডসাম।

— সামিরার কথায় তানু কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। আগের মতো বসে থাকে। সামিরা তানুর এমন গা ছাড়া ভাব দেখে বলে আমি কিছু বলছি কেউ কি শুনতে পাচ্ছে জোরে চিৎকার করে বলে।

— আহ কি শুরু করেছিস সামু। কানটা কি কালা করে দিবি নাকি। শুনেছি সব কিন্তু ইন্টারেস্ট নেই। তাই চুপ আছি ওকে।

— ওহ! এমন ভাব করছিস আমার খুব ইন্টারেস্ট। আকি শুনেছি তাই বললাম। তুই তো বলতি যদি ইয়াং একটা স্যার থাকতো আমাদেএ ইউনিভার্সিটিতে তাহলে পটিয়ে বিয়ে করে ফেলতি। তাই তোকে বললাম।
–“হয়েছে তোর বাজে বকবক এবাএ চুপ কর। আর এত যদি সখ থাকে তো তুই গিয়ে সেই ইয়াং সুন্দর হ্যান্ডসাম স্যারের গলায় ঝুলে পড়। আমাকে বিরক্ত করবি না বুঝেছিস। আচ্ছা এখন তো ইংরেজি ক্লাস হবে৷ নতুন স্যার কি আজ থেকেই জয়েন হচ্ছে নাকি?

— আমি কি জানি সামিরা বলে।।
– সেটাই তুই তো অকাজ গুলো জানিস। কাজের কিছুই জানিস না।

— তুই কিন্তু আমাকে অযথা কথা শুনাচ্ছিস। মেহি রাগ নিয়ে বলে সামিরা। যাহ আর কিছু বলবই না তাই বলে আবার মুখ ঘুরিয়ে বসে। তানু মনে মনে ভাবে বেশি হয়ে গেলো মনে হয়। তাই তানু মুখে একটু মলিন হাসি এনে বলে সামু সোনা। রাগ করেছিস জানু৷ সরি রে আসলে আমি কথাটা ওই ভাবে বলিনি। আচ্ছা স্যার আসুক দেখি কেমন তারপর না হয় 😇।

— সামিরা ভ্রু কুচকে তাকাই তানুর দিকে। তারপর তানুর পিঠে জোরে চাপড় মেরে বলে এইতো আমাদের তানু ড্রামাকুইন আগের ফর্মে এসেছে। জানিস তোকে মন খারাপ দেখতে একটু ভালো লাগে না। তাই হাসবি সব সময় হাসবি বুঝেছিস।

— তানু হেসে হ্যাঁ বলে মাথা ঝাকায়।

–“তখনই ক্লাসে প্রবেশ করে স্যার। কিন্তু তানু আর সামিরার সেদিক খেয়াল নেই। দুজন তো কথা বলতে ব্যস্ত। স্যার ক্লাসে আসার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দাড়িয়ে যায় কিন্তু সামিরা আর তানু বাদে। সামিরা কথা বলতে বলতে স্যারের দিকে নজর যেতেই তার চোখ ইয়া বড় বড় হয়ে যায় সাথে মুখ হা করে দাঁড়িয়ে পড়ে।

— সামিরার এমন কাজে তানু বিস্ময় নিয়ে সামনে তাকিয়ে যা দেখে তাতে তারও চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় 😳😳। এমন হবে তানু কখনোই আসা করেনি। সামনে সয়ং তুহিন দাঁড়িয়ে স্যার হয়ে। তানু এবার দাড়িয়ে পড়ে হা করে তাকিয়ে থাকে। সামিরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে আমাকে একটা চিমটি কাটবি দোস্ত। আমি মনে হয় জেগে থেকেও স্বপ্ন দেখছি।

— সামিরা তানুর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে এটা বাস্তব কোনো স্বপ্ন নয়। তোর আমার সামনে তুহিন ভাইয়াই। কিন্তু তুহিন ভাইয়া এখানে কেনো 🤔। প্রেম করতে তুহিনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে তানু।

— তানুর কথা শুনে সামিরা চোখ বড় বড় করে তানির দিকে তাকিয়ে বলে শুরু হলো আবার। তখনই তুহিন তানুর সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে আপনাদের কি ইনভাইট কার্ড দিয়ে বসতে বলতে হবে। এতখনে তানু সামিরা দুজনেরই ধ্যান ভাঙ্গে। সামিরা বসে পড়ে সাথে সাথে কিন্তু তানু এখনো দাঁড়িয়ে। সামিরা তানুর হাত ধরে টানে বসার জন্য কিন্তু তানু দাঁড়িয়ে আছে।

— আচ্ছা এটা কি সত্যি আপনি ভাইয়া আইমিন স্যার 🤔।

“” বাজে বকা শেষ হলে দয়া করে বসুন আমি আমার ক্লাস শুরু করি। তানু দাত বের করে হেসে বলে হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই শুরু করুন না। তারপর তানুও বসে যায়।

— তুহিন বলে আবার শুরু হলো এই মেয়ের পাগলামি। না জানি কি আছে কপালে। আল্লাহ রক্ষা করো বলে চুল গুলো উপরে ঠেলে দেয় হাত দিয়ে৷ তারপর নিজেকে ঠিকঠাক করে সবার উদ্দেশ্যে বলে তুহিন, আমি তোমাদের নতুন ইংরেজি স্যার। আজ থেকে তোমাদের ইংরেজি ক্লাস নেব ইতি মধ্যে তোমরা অনেকে সেটা জেনে গেছো হয়ত। আমার নাম তুহিন খান তোমাদের নতুন টিচার আপাতত এটাই আমার পরিচয়। আজ যেহেতু আমার প্রথম দিন তাই আজ আমি সবার থেকে পরিচয় নেব। তারপর আমরা ক্লাস শুরু করব ওকে। সবাই সম্মতি জানায় তারপর একে একে সবাই পরিচয় দিয়ে থাকে।

———————

–” জমিদার বাড়ির সবাই রেডি হচ্ছে উদ্দেশ্য গ্রামের মেম্বারের মেয়ের বিয়ে। তাই সেই উপলক্ষে সবার দাওয়াত পড়েছে জমিদার বাড়ির। সাথে আয়ান রিক তুর্যরও। সবাই গ্রামের জেনে গেছে এখন যে, জমিদার বাড়ির একমাত্র মেয়ের ছেলে এসেছে তাই সবাই বেশ উৎসুক হয়ে আছে তাকে দেখার জন্য।

— মেম্বার সাহেব তো বিশেষ অনুরোধ করেছে আয়ানকে সে জেনো অবশ্যই যায়। নাহলে নাকি সে বেজার হবে৷ আয়ানও যেতে ইচ্ছুক কারণ সে শুনেছে গ্রামের বিয়েতে নাকি অনেক আনন্দ হয়। তাই সে দেখতে চাই সবটা। আজ যেহেতু গায়ে হলুদ তাই সবাই সন্ধ্যার পর বের হবে। কিন্তু রায়হান শেখ আর আফজাল শেখ নেই৷ তারা কোনো এক কাজে বাইরে আছেন।

— আয়ানরা সবাই রেডি অপেক্ষা তাসনু আর বাকিদের। আশরাফ শেখ আয়ানের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে কি রে ভাগ্নে হলো তোর। মেয়েদের মতো এত সময় নিস তোরা রেডি হতে৷ আমাকে দেখ সবার আগে রেডি তাই বলে হাসে সে। আয়ানরাও হেসে দেয় আশরাফের কথা শুনে।।
— ওয়াও মামা তোমাকে তো দারুণ লাগছে। জাস্ট অসাধারণ রিক বলে। দেখতে হবে না মামাটা কার ভালো তো লাগতেই হবে।

— ওমনি না৷ সব কিছুতে তোর ক্রেডিট চাই। বলি মামা কি তোর একার নাকি আমাদেরও তো বল রিক, তুর্য বলে।

— আশরাফ শেখ বলে সেতো অবশ্যই। আমি সবার মামা। যাই হোক আমাকে কেমন লাগছে রে পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করতে করতে বলেন তিনি।

— আশরাফ শেখ একটা কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছেন। তাতে বেশ ভালো লাগছে তাকে। রিক, তুর্য, আয়ান সবাই কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পড়েছেন। সবাই অনেক সুন্দর লাগছে। আয়ানের ফর্সা শরীরে কাঁচা হলুদ রঙ বেশ মানিয়েছে।

— কিরে তোদের হলো আর কত সময় নিবি। সব তো শেষ হয়ে যাবে আমরা যেতে যেতে নাহিদা বেগম তাসনুদের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন। সাথে আছেন নুরজাহান বিবিও।

— এইতো হয়ে গেছে ছোটমা। আর একটু তাহলে হয়ে যাবে।

— একটু একটু করে আর কত সময় নিবে বনু নুরজাহান বিবি বলে। তাসনু কানে দুল লাগাতে লাগাতে নুরজাহান বিবির দিকে ফিরে। তাসনু অবাক হয়ে বলে দাদিমা তোমাকে কি কিউট লাগছে গো। ইসস দাদুভাই যদি এখন দেখতো তোমায় নতুন করে আবার প্রেমে পড়ে যেতো বিশ্বাস করো।

— সত্যি তো৷ তোমাকে তো সেই লাগছে বুড়ি অনু বলে।

— আমাকে বুড়ি বলবি না খবরদার। আমি তোদের থেকেও জোয়ান আছি। এখনো কত ছেলে আমার পিছে লাইন দিয়ে ঘুরবে জানিস৷ যদি তোদের মতো একটু সেঁজেগুজে বের হয় ভাব নিয়ে বলে নুরজাহান বিবি।

— মা আপনিও এদের সাথে সাথ দিচ্ছেন। এই তোরা তাড়াতাড়ি কর। ওইদিকে সবাই রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। তাসনুর বুকের মধ্যে ধক করে উঠে এবার। কারণ আয়ান সহ যাচ্ছে সেটা মাথায় থেকে তার বেরিয়ে গিয়েছিল। এখন আয়ানের সামনে যেতে ভীষণ লজ্জা করে তাসনুর। সেদিনের পর থেকে তো তাসনু আয়ানের থেকে এক প্রকার প্রায় পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছে।

— কি গো তোমাদের আর কতখন লাগবে। বলি একবারে কি কাল বিয়ে বাড়ি যাবে বরযাত্রী সেঁজে আশরাফ শেখ বলে। এইতো বাবা হয়ে গেছে আমাদের চলো নুসরাত বলে।

— তাসনু, অনু, নুসরাত কলাপাতা রঙের শাড়ী পড়েছে বাঙ্গালী ভাবে৷ সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে। দেখতে পুরো বাঙ্গালী বধু লাগছে তাদের।

— চলো ছোটবাবা আমরা তৈরি 🥰।

— দেখি দেখি সোজা হয়ে দাড়া দেখি আশরাফ শেখ বলে তাসনুকে। তাসনু ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আশরাফের দিকে। আরে ওইভাবে কি তাকাচ্ছিস৷ তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে রে মা। কারো নজর জেনো না লাগে তাই বলে মাথায় হাত রাখ।

— শুধু আপুকেই ভালো লাগছে বুঝি। আর আমরা আমাদের চোখে পড়ে না কারোর 😑 নুসরাত বলে।

– আরে আমি তোদের খেয়ালই করিনি। কি সেজেছিস এই গুলো পুরো ভুত্নি লাগছে তোদের। অনু এবার কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে ছোটবাবা খেলব না যাও।

— তুমি আর এখন মজা করো না এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে চলো তো নাহিদা বেগম বলে।

— আশরাফ শেখ অনু নুসরাতকে দুইহাত ধরে টেনে বাহুতে আগলে নিয়ে বলে সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে। তোরা তো আমার মা। খারাপ লাগবে সস্তা বুঝি হুম। আচ্ছা চল চল৷ বাইরে ছেলে গুলো অপেক্ষা করছে। অনু, নুসরাত, তাসনু এবার এক সাথে লজ্জায় মাথা নুয়ে নেয়। তারপর সবাই বের হয়ে পড়ে।

— আয়ানরা বাইরে অপেক্ষা করছিল আর দুটো চোখ একজনকে খুজেছিল তিনজনেরই। অবশেষে দেখা মিলল তাদের প্রত্যাশিত ব্যাক্তিদের। আয়ান, রিক, তুর্য হা করে তাকিয়ে আছে তাসনু,অনু, নুসরাতের দিকে।

— রিক তুর্যের কাধে মাথা রেখে বলে অপুর্ব। তুর্য বলে যা বলেছিস ভাই মনে হচ্ছে সামনে পরী আসছে।

— আয়ান মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাসনুকে। আর তাসনুও মুগ্ধ চোখে আয়ানের দিকে চেয়ে আছে। চাইলেও কেউ কারো থেকে চোখ সরাতে পারছে না।

— নুসরাত চোখ নাচিয়ে ইশারা করে তুর্যকে। তুর্য বুকের বা,পাশে হাত রেখে বলে দারুণ। নুসরাত লজ্জা মিশ্রিত হাসি দেয় একটা। তোরা কি এইভাবেই রাত শেষ করবি এখানে। চল এবার। সবার হুস আসে এতখনে। তারপর আয়ানরা আগে আগে যায় আর তাসনুরা পরে আসে।

— বিয়ে বাড়ি সবাই বসে আছে তারা। জমিদার বাড়ির সবাইকে আসতে দেখে সবাই অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে আপ্যায়ন করার জন্য। তার উপর আয়ানরা নতুন মেহমান গ্রামের তাই সব দিকে যেনো ঠিকঠাক হয় সেটা নিয়ে চিন্তিত মেম্বার সাহেব।

– তাসনুরা এসেই কনের পাশে বসে পড়েছে। সবাই মিলে বেশ হাসি ঠাট্টা করছে। আর ওইদিকে আড়ে আড়ে দেখছে আয়ান তাসনুকে। তাসনূও আয়ানকে মাঝে মধ্যে দেখে নিচ্ছে।

— তুর্য ঠিক করে আজই নুসরাতকে মনের কথা বলে দিবে। তাই সে একটু সুযোগ খুজছি নুসরাতের সাথে আলাদা কথা বলার। তুর্য এবার নুসরাতের ফোনে ছোট করে একটা মেসেজ দেয় সাইডে আসার জন্য। তারপর অপেক্ষা করে নুসরাতের মেসেজ সিন করার।

— ফোনে আলো জ্বলে উঠতে দেখে নুসরাত ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তুর্যের মেসেজ। তারপর হাসি মুখে মেসেজ দেখে চোখ কপালে উঠে যায়। এতো মানুষের ভীড়ে আড়ালে দেখা করা ঠিক হবে না। তাই নুসরাতও মেসেজ দিয়ে বলে সে যেতে পারবে না। কিন্তু তুর্যও ছাড়ার পাত্র নয়।৷ রাগ দেখিয়ে আবার মেসেজ দেয়। নুসরাত এবার পড়ে যায় ভীষণ বিপদে। কি করবে বুঝতে পারছে না। চিন্তা আর ভয়ে হাতের নখ কামড়াচ্ছে নুসরাত। অনু বিষয়টা লক্ষ্য করে নুসরাতকে ইশারা করে কি হয়েছে।

— তারপর অনুকে সব বলে নুসরাত। অনু মিটিমিটি হাসতে থাকে। নুসরাত অনুর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে আমি আছি আমার জ্বালায় ওর উনি হেসে মরছে😒😒….
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_১৯

–” অনু কিছুখন ভেবে বলে একটা কাজ করি আপুকে বলি বিষয়টা তারপর দেখি আপু কি বলে।

— আমার লজ্জা করছে তুই বল নুসরাত বলে। অনু নুসরাতকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলে আসছে লজ্জাবতী। প্রেম করার সময় লজ্জা করে নাই না। এখন লজ্জা নিয়ে গবেষণা করছেন।

— 😒😒😒

–“এমন করে কি দেখছিস ঠিকই বলেছি আমি অনু বলে। আচ্ছা যাই হোক আমি গিয়ে বলছি তুই থাক তাই বলে অনু তাসনুর দিকে এগিয়ে যায়। তাসনুকে ইশারা করে ডেকে নেয় কাছে। তারপর সব বলে অনু।

– তাসনু একবার নুসরাতের দিকে তাকায় তারপর অনুর দিকে। নুসরাত লজ্জাতে তাসনুর দিকে তাকাতে পারছে না যত হোক বড় বোন তো হয়। সম্পর্ক যত বন্ধুত্বের হোক না কেনো।

– তাসনু মিটিমিটি হেসে বলে আচ্ছা আমি দেখছি। কিন্তু তুর্য ভাইয়া হঠাৎ নুসরাতকে ডেকে পাঠালো কেন।

— আমি কি জানি তার। আমাকে আগে বলে রেখেছে নাকি 😐 অনু বলে।

— তাও কথা৷ আচ্ছা নুসরাতের কাছে চল তাই বলে ওরা নুসরাতের কাছে আসে। তারপর নুসরাত কে নিয়ে আড়ালে আসে ওরা।
— আয়ান তাসনুর দিকে তাকিয়ে ছিল এতখন। রিকের ডাকে তার দিকে ফিরে। রিক বসে বোরিং হচ্ছে তাই সে আয়ানকে ডাকে। তুর্যতো নুসরাত কে নিয়ে ব্যস্ত। রিক কোনো কথা বললে হা হু করছে আর নয়ত চুপ থাকছে। কারণ তুর্যের মাথায় চলছে অন্য কথা।

— আয়ান রিকের পাশে গিয়ে বসে তারপর তাসনু যেখানে ছিল সেখানে তাকিয়ে দেখে তাসনু নাই। আয়ান ভ্রু কুচকে আশেপাশে খুজতে থাকে কিন্তু পায়না। আয়ানের ছটফটানি দেখে রিক বলে তুই আবার কি শুরু করলি। একজন তো প্রেমে মজনু হয়ে গেছে কারো কথা তার কান অব্দি যাচ্ছে না। আর তুই এমন করে ভাব করছিস গায়ে কেউ বিছুটি পাতা ঘষে দিয়েছে।

— রিকের কথায় আয়ান এবার চুপচাপ বসে থাকে। কিন্তু দুটি চোখ ঠিকই একজনকে খুঁজছে।

— নুসরাত চিন্তিত মুখ নিয়ে তাসনুর দিকে তাঁকায়। নুসরাতের মুখের অবস্থা দেখে জোরে হেসে দেয় তাসনু সাথে অনুও হাসে। আর নুসরাত ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে।

– তাসনু হাসি থামিয়ে বলে প্রেম শুরু না হতেই এই অবস্থা। পড়ে কি করবি বোন আমার। তাই বলে আবার হাসতে থাকে। নুসরাত বলে আপু আমি কিন্তু কান্না করব এবার হাসলে। আমার চিন্তা হচ্ছে খুব কি করব বলো। কোথায় বিয়ে বাড়ি আনন্দ করব না নয়। উটকো ঝামেলা 🤦‍♀️।

,,কি আর করবি দেখা করবি, কথা বলবি, কি বলে শুনবি।।

— নুসরাত- 😳😳😳.

ওইভাবে দেখিস না চোখ বেরিয়ে আসবে। বল সাইডে আসতে তুর্য ভাইয়াকে। আমরা আছি পাশে। কাউকে যেতে দেব না সমস্যা নেই। তবে তাড়াতাড়ি করবি যা করার। বিয়ে বাড়ি অনেক লোকজন বুঝতেই পারছিস।কেউ দেখলে বিপদ হয়ে যাবে।

— তাসনুর কথায় নুসরাতের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে আরো। ভয়ের চটে নুসরাত বলে আমি পারব না। থাক দেখা করা যদি কেউ দেখে তো।তখন যদি বড় বাবা জানতে পায় আমি শেষ বইনে।

— ছিঃ তুই নাকি আমার বোন। প্রেম করতে কে বলেছে তোকে এই সাহস নিয়ে। ভিতু একটা। তুর্য ভাইয়ার প্রেমের ফুল আর ফুটলো না মনে হয়। বেছে বেছে একটা ভিতু মেয়ের প্রেমে পড়লো শেষে 🤦‍♀️।

— মোটেও না। আমি বেশ ভিতু নয়। আমার অনেক সাহস আছে।।

— তাই 😱। তাহলে গিয়ে দেখা তোর অনেককক সাহস টেনে বলে কথাটা অনু।

— যাব বলছিস নুসরাত বলে।

– অবশ্যই 😁।

———————

— ভাই আমি আজ নুসরাতকে মনের কথা বলে দিতে চায়। প্লিজ সাহায্য কর আয়ান আর রিককে বলে তুর্য।

— কিহ! আয়ান আর রিক একসাথে বলে উঠে। তুর্য ওদের কাজে চমকে উঠে বলে এমন করছিস কেনো তোরা। কি এমন বললাম যে ষাড়ের মতো চিৎকার করা লাগবে।

— না মানে তুই সত্যি নুসরাতকে প্রপোজ করবি ভাই রিক বলে।

— তাহলে কি আমি এমনি বললাম নাকি। আমি আর দেরি করতে চায় না।

— সেটাই শুভ কাজে দেরি করতে নেয়। আচ্ছা নুসরাত যদি না মানে তাহলে কি করবি।
— এমন কথা বলিস না ভাই বুকে লাগে। আমি খুব ভালবাসি ওকে তাই ভালো কথা বল। আর দোয়া কর সব ঠিকঠাক থাকে।

— আয়ান বলে সেতো অবশ্যই দোয়া করি কিন্তু দোয়া কতটা কাজে দিবে বুঝতে পারছি না। আচ্ছা চল তাহলে দেখি কি হয়।

— নুসরাত অনেক আগেই এসএমএস দিয়ে তুর্যকে পুকুর পাড়ের দিকে আসতে বলে। পাশেই একটা পুকুর আছে ছোট। গ্রামে তো এমন পুকুরের অভাব নেই। সেদিন মানুষজন আসে না বলতে গেলে। নুসরাত সেখানে অপেক্ষা করছে তুর্যের জন্য।

— তুর্য আয়ান রিক একসাথে আসে সেখানে। তারপর তুর্যকে নুসরাতের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আয়ান একটু দূরে চোখ দিতেই দেখে তাসনু আর অনু দাঁড়িয়ে গল্প করছে। তাসনুকে দেখে আয়ানের মুখে হাসি আসে এতখনে।

– ভাই ওরাও কি আমাদের মতো পাহারাদার, রিক বলে।
–” হতে পারে। আমরা যেমন তুর্যের জন্য আসছি ওরা হয়ত নুসরাতের জন্য।

— বাহ! এমন বোন লাখে একটা মিলে। ছোট বোন প্রেম করছে আর বড় বোন পাহারা দিচ্ছে কি কপাল। আমাদের কপালে কি আছে ভাই 😤।

— বেশি কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে চারিদিকে নজর রাখ কেউ আসলে তোর খবর আছে। রিক আর কিছু বলে না।।আর আয়ান এক দৃষ্টিতে তাসনুকে দেখতে থাকে। রিক মশার কামড় খাচ্ছে আর বকবক করছে।

— কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন।।কেউ দেখে নিলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।

— তুর্য ভীষণ নার্ভাস হয়ে আছে। কিভাবে কি বলবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছে না। তাই সে চুপ করে এদিক ওদিক দেখছে আর মেয়েদের মতো হাত মোচরামোচরি করছে। নুসরাত তা দেখে ভ্রু কুচকে বলে কি হলো এমন করছেন কেনো।।আপনার কি শরীর খারাপ করছে।

— নুসরাতের কথায় চমকে বলে তুর্য হ্যা না না আমি ঠিক আছি। আসলে আমি একটা কথা বলতে চাই তোমাকে যদি কিছু মনে না করো।

— হ্যাঁ তো বলুন৷ শুনার জন্য তো আসছি তবে জলদি ওকে।

— তুর্য এবার নুসরাতের হাত টেনে তার হাতের মাঝে নেয় আর নুসরাতের চরম অবাক হয়ে তুর্যের দিকে তাকায়।

— জানি না কখন কিভাবে আমার মনে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। আমার ছোট্ট বাগিচায় তোমাকে সুন্দর ফুল ভেবেছি। অজান্তে কখন ভালবেসে ফেলেছি জানি না৷ তবে আমি তোমাকে ভালবাসি আর অনেক বেশি ভালবাসি এটা বলতে পারি।

— I Love You নুসরাত শেষের কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে ফেলে তুর্য। আর নুসরাত সেতো তুর্যের কথায় হতবাক হয়ে গেছে। কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়েছে। সুখের সকল দরজার যেনো তার খুলে গেছে। সুখ রাজ্যের পরম আবেশ গায়ে মাখছে যেনো। খুশিতে চোখে পানি ছলছল করছে নুসরাতের।

— তুর্য নুসরাতের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে নুসরাতের দিকে তাকায়। তখনই নুসরাত যা করে তুর্য কখনো কল্পনাও করেনি।

— তুর্য মুচকি হেসে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে নেয় নুসরাতকে। হ্যাঁ নুসরাত তুর্যকে জড়িয়ে ধরে। তুর্য চোখ খোলার সাথে সাথে নুসরাত গিয়ে তুর্যকে জাপটে ধরে। আলাদা করে আর কিছু বলতে হয়নি নুসরাতকে তুর্য এতেই য়ার সকল উত্তর পেয়ে গেছে।

— এইদিকে তাসনুদের না দেখে নুরজাহান বিবি আশরাফকে বলেন কোথায় আছে দেখার জন্য। একটু পড়ে নাচ-গান হবে। গ্রামের বিয়েতে হলুদের দিনে অনেকে নিত্য করে। নাচ-গান নানা ধরের মজ ঠাট্টা কৌতুক করে থাকে। এখানেও গ্রামের ছেলে মেয়েরা নাচ-গান করবে। বিশেষ করে তাসনু রা নাচ করবে আগে থেকে ঠিক করা আছে।

— আশরাফ শেখ বলে আমি দেখছি ওদের তাই বলে খোজ শুরু করেন তিনি।

–এত সময় লাগলো আপনার ভালবাসি কথাটা বলতে- নুসরাত বলে।

— কেনো আরো আগে বলার কথা ছিল বুঝি।
— জানি না। তবে আমিও আপনাকে ভালবাসি এটা কি বুঝেন বা বুঝতে পেরেছেন।

— তাহলে আগে বলো নাই কেনো তুর্য বলে নুসরাতকে।

— এহহ আসছে। আমার বয়ে গেছে বলতে আগে। আমি জানতাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন আর ঠিম বলবেন একদিন।

— যদি না বলতাম কখনো তাহলে কি করতে?
— কিছুই না। এই ভাবেই থাকতাম।

– তারমানে তুমি তাও বলতে না।

– নুসরাত লজ্জা মিশ্রিত মুখ নিয়ে বলে নাহ।

— তাসনু দেখে আশরাফ শেখ তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাসনু এবার ভয়ে অনুর হাত চেপে ধরে। অনু বুঝতে পারে না তাসনু কেনো এমন করছে। তাই সে ইশারাতে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।

— তাসনু ভয়ার্ত মুখ নিয়ে বলে ছোটবাবা আসছে এইদকে। যদি দেখে নেয় আমাদের খবর আজই হয়ে যাবে। এবার অনুও চিন্তিত হয়ে যায়।

– তাহলে কি হবে এখন আপু। নুসরাত তো ওইখানে আছে সাথে তুর্য ভাইয়াও……….
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২০

— তাসনু আর অনু দুজনেই ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। অনু তো ভয়ে তাসনুর হায় চেপে ধরে বলে এখন কি হবে আপু। ছোটবাবা যদি দেখে নেয় তাহলে।

— আশরাফ শেখ দূর থেকে তাসনুদের দেখতে পেয়ে হাত নাড়িয়ে বলে এখানে কি করছে তারা। তাসনুর এবার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে ভয়ে।

-” এই রে আমাদের তো দেখে ফেলেছে৷ এবার কি হবে। যদি নুসরাত কোথায় জিজ্ঞেস করে কি বলব। আমার খুব ভয় করছে আপু।
– কিছু হবে না চুপচাপ দাড়িয়ে থাক। ভয় তো নিজে পাচ্ছিস সাথে আমাকেও পায়িয়ে দিচ্ছিস। কিছু একটা বলতে হবে ভাবতে দে।

-” আশরাফ তাসনুদের কাছে এসে বলে কি রে, তোরা এখানে কেনো। অনুষ্ঠান হচ্ছে ওইখানে আর তোরা এখানে কেনো। অনুর তো জান যায় যায় অবস্থা ভয়ে। আর তাসনু ঘনঘন ঢোক গিলে ভাবছে কি বলবে কিন্তু চোখ মুখে চিন্তা আর ভয়ের চাপ উভয় আছে।

— এমনি এইদিকটা একটু ঘুরতে এসেছিলাম মামা। গ্রামে তো তেমন ঘোরায় হয়নি আমাদের। তাই তাসনুদের বললাম যদি আশেপাশে একটু আমাদের ঘুরিয়ে দেখাইতো। এমনিতেও বসে বসে বোর হতে ছিলাম ওইখানে আয়ান বলে কথা গুলো পেছন থেকে।

— এতখনে তাসনু আর অনু দুজনের দেহ প্রাণ ফিরে। তারা একটা স্বস্তি নিশ্বাস ছাড়ে। অনু তো ভয়ে ঘেমে নেয়ে সেই অবস্থা। শাড়ির এক প্রান্তের অংশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নেয় সে।

— ওহ তোমরা আছো সহ ভাগ্নেরা। আমি ভাবছি ওরা একা এখানে কি করছে। তা আমাকে বললে তো পারতে আমি সহ নিয়ে আসতাম। যাই হোক ওইদিকে চলো আমাদের সবাই খুজছে। আর তোরা নাকি নাচ করবি তাই তো সবাই তোদের হননি হয়ে খুজে চলেছে তাই তো আমি তোদের খুজতে খুজতে এইদিকে আসলাম। এসে দেখি এখানে দাঁড়িয়ে তোরা। আচ্ছা নুসরাত কোথায়?

— তাসনুর মধ্যে আবার ভয় জেকে বসে। তার তো এতখনে মাথা থেকে এটা বেরিয়ে গিয়েছিল। আয়ান নাহয় কিছু বলে বাচিয়ে দিল কিন্তু এখন কি করবে। তখনই নুসরাত বলে এইতো বাবা আমি এখানে। তোমার পিছে দাঁড়িয়ে অথচ আমাকে দেখতেই পাচ্ছো না। বলি চোখ কি এখনই শেষ করে বসে আছো বাবা।।

— চোখ মুখে ভয় স্পষ্ট তাও মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে নুসরাত। আর তুর্য নুসরাতের পাশ থেকে আয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

— তুই এখানেই ছিলিস। কই দেখলাম না তো।

— হ্যাঁ হ্যাঁ এখানেই ছিলাম। তোমার পিছে ছিলাম তাই হয়ত দেখতে পাওনি। আচ্ছা তুমি না বললে আমাদের সবাই খুজছে আর এখন তুমি খুজতে এসে গল্প জুড়ে দিয়েছো৷ চলো ওইদিকে।

— এই চল সব। আমাদের তো আবার বাড়ি ফিরতে হবে সব শেষ করে। তাই বলে সবাই সেখান থেকে চলে যায়। তাসনু যাওয়ার আগে আয়ানের দিকে কোতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। আয়ান মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেয় শুধু তার পরিবর্তে।

— কিছুখন আগে……

— আয়ান তাসনুর দিকে লক্ষ্য রেখেছিল। কিন্তু তাসনুর সেদিক খেয়াল ছিল না। তাসনুরা যখন আশরাফ শেখকে দেখে ভয়ে কাতর হলো যায়। আয়ান তখন তাসনুর ভয়ার্ত চেহারা দেখে ভ্রু কুচকে সামনে অনুসরণ করে দেখে আশরাফ শেখ তাদের দিকেই আসছে। যার জন্য তাসনুর চেহারায় ভয়ের ছাপ দেখতে পায় আয়ান।

– আয়ান রিককে ডেকে আশরাফ শেখকে দেখালে৷ রিকও চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারপর রিক দ্রুত নুসরাত আর তুর্যের কাছে গিয়ে তাদের বলে নুসরাতের বাবা আসছে এদিকে। নুসরাত তো ভয়ে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে এবার কি হবে। বাবা জানলে আমাকে জ্যান্ত পুতে রাখবে।

— এতো চিন্তার কিছু নাই। আয়ান গেছে ওইদিকে সামলে নেবে৷ তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। তারপর তিনজন একসাথে সেখান থেকে এসে আশরাফ শেখের পিছে দাঁড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আশরাফ শেখ কিছুই বুঝতে পারে না।

— “” গ্রামের অনেক মেয়েরা নাচের জন্য তৈরি হয়ে গেছে অপেক্ষা করছিল তাসনুদের আসার। সবাই মিলে একসাথে নাচ করবে। তার ছেলে আর মেয়ের নাচের প্রতিযোগিতা হবে।

— কি রে তাসনু কই আছিলি তোরা। নাচের কথা কি ভুলে গেছিস। আজ কিন্তু আমাদের জয়ী হতেই হবে। তাসনুর মাথায় আসে এবার অন্য একটা প্ল্যান। তাসনু বাকা হেসে গ্রামের একটা মেয়েকে ডেকে কানে কানে কিছু একটা বলে। তারপর ফুঁ দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দেয় তাসনু।

———————

— শুরু হয় মেয়েদের নাচের উৎসব। প্রথমে সকল মেয়েরা মিলে একটা গানে নাচ করে। সাথে কনেকে নিয়েও নাচে তারা। নাচের তালে তালে তারা সবাই সবাইকে হলুদ ছোঁয়ায়।

— আজ কন্যার গায়ে হলুদ কাল কন্যার বিয়ে……. এই গানের সবাই সুর মিলিয়ে গায়ছে সাথে নাচও করছে। সবাই বেশ মজা করে হলুদ ছোঁয়ানো শেষ করে। এবার ছেলে আর মেয়েদের নাচের উৎসব হবে। কারা জিতে তাই নিয়ে তর্ক হচ্ছে ছেলে মেয়ে উভয়ের মাঝে। আয়ানরা বসে বসে সবার তামাশা দেখছে।

— একটা মেয়ে এর মাঝে বলে ছেলেরা কখনোই আমাদের সাথে নাচে পারবে না। সাহস থাকলে জিতে দেখাক। এমন কেউ আছে এখানে আমরা মেয়েদের টক্কর দিবে নাচে। সকল ছেলেকে চ্যালেঞ্জ করছি আমরা মেয়েরা। আমাদের থেকে জিতে দেখান।

— তুর্য বলে ভাই ওপেন চ্যালেঞ্জ করছে যে আমাদের। যদি আমরা না জিততে পারি মান সম্মান সব প্লাস্টিক হয়ে যাবে। আয়ান বাকা হেসে বলে তাহলে হয়ে যাক একটা কমপিটিশন দেখা যাক কার দৌড় কত।

— রিক বলে অবশ্যই হবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ করা। গ্রামের কিছু ছেলে বলে আমরাও আছি সাথে ভাই। চলেন আজ আমরা দেখিয়ে দেব কারা পারে আর কারা পারে না।

— আয়ান উঠে বলে তাহলে হয়ে যাক প্রতিযোগিতা। দেখি কাদের দম বেশি।
— তাসনু বলে আমরা গ্রামের খাটি সোনা। সব দিকে এগিয়ে আছি। তাই শহরে বিড়াল মেও মেও না করে কাজে দেখিয়ে দেন কেমন। তাসনুর কথা শুনে সব মেয়েরা উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

— এতো বড় অপমান। আজ দেখিয়ে দেবো শহরের মানুষ কম যায়না। এই গান বাঁজাও তোমরা

— এরপর সবাই যে যার পজিশনে দাঁড়িয়ে নাচ শুরু করে।

— মেয়েরা এক সাইডে আর ছেলেরা এই সাইডে হাতে হা রেখে নাচ শুরু করে।

— পালঙ্ক সাজাইলাম গো ফুলের মালা দিয়া, দেখো খুশি মনে বয়ছে দামান রুমাল মুখে দিয়া, তাসনুসহ বাকি মেয়েরা মাজা দুলিয়ে নাচে আর ঠোঁট মিলায় গানে।
– দেখো হাসি মুখে বয়ছে দামান রুলাম মুখে দিয়া বলে আয়ানকে ভেংচি কাটে তাসনু। আর আয়ান হেসে এবার গেয়ে উঠে নেচে –

–দেখো কন্যার মায়ে কান্দন করে কোন্দালে বসিয়া। আর এতো সাধের ফুড়ি আমি কেমনে দিমু বিয়া – বলেই আয়ান রিক তুর্য কান্নার ভান করে দেখায়।

— সবাই বেশ মজা করছে এদের নাচ। কেউ কারো থেকে কম না। শেষে সবাই একজোট হয়ে হয়ে ঘুরে গুউরে নাচে। আয়ান তাসনু,রিক অনু, তুর্য নুসরাত আর বাকিরা সবাই একসাথে নাচতে থাকে।

– আয়ান আর তাসনু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে এক ঘোরে চলে গেছে যেনো। নাচ শেষে সবাই থেমে যায় কিন্তু আয়ান আর তাসনু ঘুরে যাচ্ছে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই। সবার করতালির শব্দ শুনে তাদের হুস ফিরে। তারপর চারিপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে আর হাততালি দিচ্ছে। এতে আয়ান আর তাসনু দুজনেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে সরে যায় দুজনের থেকে।

— কোন জগতে হারিয়ে গিয়েছিলেন ভাই আপনি। বাব্বাহ এত প্রেম আসে কই থেকে। শুধু আমারই প্রেম আসে না। কোথায় যে বসে আছে আমার প্রেম একা একা রিক বলে।

— শালা বাড়ি চল তোর মজা দেখাচ্ছি। আজকাল খুব মুখে খই ফুটে তোর আয়ান বলে ।
-“একদম ঠিক বলেছিস আয়ান। বেশি কথা বলা ধরেছে এই শালা। আজ বাড়ি চল দেখাইছি তোকে তুর্য বলে।

— 😒😒 আজকাল সত্যি বললেও দোষ।

— খুব চোখে চোখে কথা হচ্ছিল বুঝি। অনু নিজের আঙ্গুল দেখতে দেখতে বলে তাসনুকে। আর তাসনু ভ্রু কুচকে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে দিনদিন খুব পাজি হচ্ছো তুমি। বাড়ি চলো দেখছি তোমায়।

— একদম ঠিক আপু। কি যে পাকা হচ্ছে এই মেয়ে নুসরাত বলে।

তুমি বেশি কথা বলো না। তুমি তো এমন বাড় বেড়ে গেছো বড় বোনের আগে প্রেম শুরু করে দিয়েছো।

— 😳😳😳😳😳 অনু আর নুসরাত।

— না মানে বলছিলাম আমার তো আগে প্রেম করার কথা ছিল কিনা।।কিন্তু দেখ আমি সিঙ্গেল আর তোরা প্রেম করছিস তাই আর কি। আচ্ছা চল বাড়ি যেতে হবে। তারপর ওরা নুরজাহান বিবির কাছে এসে দাঁড়ায়।……

চলবে….

( করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here