খেয়া ঘাটের প্রেম পর্ব ২৪+২৫+২৬

#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২৪

— নানাভাই তুমি আমার ঘরে?। না মানে তুমি তো কখনো আসো নাই তাই জিজ্ঞেস করছি।

– কেনো আসতে পারিনা বুঝি রায়হান শেখ বলে।

— অবশ্যই আসতে পারো। তাছাড়া এটা তোমারই বাড়ি তোমারই ঘর। যেখানে খুশি আসতে পারো যেতে পারো তুমি। কিন্তু আমরা আসার পর তো কখনো আসোনাই আমার ঘরে তাই খুব অবাক হচ্ছি আর কি।

— রিক বলে নিশ্চয় আমাদের চলে যাওয়ার জন্য বলতে এসেছে এখান থেকে। তুর্য সবার আড়ালে রিকের কোমরে চিমটি কেটে বলে চুপ থাক শুনতে দে।

– তোমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো এখানে। যত হোক জমিদার বাড়ির মেহমান তোমরা। তোমাদের ভালো মন্দ দেখা আমাদের কর্তব্য।
– রায়হান শেখের কথা শুনে রিক তুর্য আয়ান সহ সবাই ভীষণ ভাবে অবাক।

— দরজার বাইরে অনু নুসরাত তাসনু দাঁড়িয়ে আছে৷ তারাও রীতিমতো শকড রায়হান শেখের কাজে।

— রায়হান শেখ আয়ানকে বলে এদিকে আয় নানাভাই। আয়ান তো এবার চরম অবাক। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না তার নানাভাই তার সাথে এমন করে কথা বলছে। আয়ান চোখ ছলছল করে উঠে।

— রিক তুর্যকে বলে আমাকে একটা চিমটি কাট ভাই। মনে হচ্ছে আমি দিবাস্বপ্ন দেখছি। তুর্য সত্যি সত্যি রিককে জোরে চিমটি কাটে। তাতে দিক জোরে আউচ করে উঠে। রিক আর তুর্যর কান্ডে তাসনুরা হাসে আড়াল থেকে।

— আয়ান আস্তে আস্তে রায়হান শেখের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু চোখ দুটো রায়হান শেখের সমস্তমুখ বিচরণ করছে আয়ানের।

— আয়ান কাছে যেতেই রায়হান শেখ আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আর আয়ান সেও পরম আবেশে জড়িয়ে নেয় রায়হান শেখকে। তখনই আয়ানে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে একফোটা পানি। সবার দৃষ্টিগোচর না হলেও তাসনু ঠিকি দেখতে পেয়েছে।

— আমাকে মাফ করে দিস নানাভাই। আমি তোদের উপর অন্যায় করেছি। তোদের অপমান অবহেলা করেছি। জানি অনেক কষ্ট দিয়েছি তোদের তাও এই বুড়োটা কে মাফ করে দিস। ২৬ বছরের রাগ জেদ অভিমান লালন করে আসছি। সেটা থেকে বের হতে একটু সময় লাগবে।

– ছি ছি নানাভাই কি বলছো এই সব। তুমি যে আমাদের মেনে নিয়েছো। আমাদের কাছে টেনে নিয়েছো এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওনা। আজ কতটা খুশি তোমাকে বোঝাতে পারব না নানাভাই। জানো মা কতটা কষ্ট পায় তোমাদের কথা ভেবে। আমি তো দেখেছি মাকে এই বাড়ির সবার জন্য চোখের পানি ফেলতে। অনেক ভালবাসে তোমাদের সবাইকে মা। সব কিছু ভুলে কাছে টেনে নাওনা নানাভাই। আমার মা যে অনেক কষ্টে আছে তোমাদের ছাড়া।

— আয়ানের কথা শুনে রায়হান শেখের চোখে পানি আসে। সত্যি অনেক বড় শাস্তি দিয়ে ফেলেছে সে তার মেয়েকে।

— ( নুরজাহান বিবি ওই কথা গুলো বলার পর রায়হান শেখ খুব গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেখে সত্যি তো এই রাগ জেদ অভিমান নিয়ে এতবছর পার করে কি লাভ হলো। শুধু প্রিয় আপনজনের থেকে দূরে থাকা। কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করা। তার মেয়ে তো খুব সুখে আছে সেখানে তাহলে কেনো মেনে নিতেপ পারছে না। একটা ভুল না হয় করেছে তার জন্য তো শাস্তিও দিয়েছে এতদিন দূরে রেখে। তাই রায়হান শেখ সিদ্ধান্ত নেয় সব ঠিক করে নিবে। তার একমাত্র মেয়েকে আবার কাছে টেনে নিবে। সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকবে।)

— অনু গিয়ে নুরজাহান বিবিকে সব বলে। নুরজাহান বিবি সব শুনে আনন্দে চোখে পানি চলে আসে। তারপর অনুকে নিয়ে আয়ানের ঘরে আসে।

— তাসনু নুসরাত ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে অনেক আগেই। নুরজাহান বিবি ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলে খুব আদর হচ্ছে নানা নাতিতে তাই না। আমার কথা দেখি সবাই ভুলে গেছে।

— নুরজাহান বিবি এমন বাচ্চামু কথা শুনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠে।

— বুইড়া বয়সে ঢং দেখলে বাঁচিনা তাসনু বলে নুরজাহান বিবিকে।

– এই আমাকে বুড়ি বলবি না একদম
আমি এখনো কত সুন্দরী আর মায়াবী দেখতে। তোদের দাদু তো এখনো আমার প্রেমে হাবুডুবু খায় হু।

– আহ নুর কি হচ্ছে বাচ্চাদের সামনে লজ্জা নিয়ে বলে রায়হান শেখ।

– বুড়ি বয়সের ভীমরতি দাদাভাই আর কিছু না নুসরাত বলে। এবার সবাই হো হো করে হেসে উঠে।

— তার মানে তুমি আন্টিকে মেনে নিয়েছো নানাভাই রিক প্রশ্ন করে রায়হান শেখকে।
– রিকের কথা শুনে রায়হান শেখ মুখটা বেজার করে বলে পুরোটা বললে ভুল হবে। তবে সময় লাগবে আমার আরও। আর হ্যাঁ তোমাদের সব কথা কিন্তু শুনেছি ইয়াং ম্যান। তুমি আমাকে যত খারাপ মনে করো তত খারাপ কিন্তু রায়হান শেখ না।

— রিক এবার নিজের মাথা চুলকে বলে ইয়ে মানে আসলে..

রাখো তোমার ইয়ে মানে আসলে এর শাস্তি পেতে হবে হু। রায়হান শেখের কথা শুনে রিক তুর্য চমকে উঠে।

– ভাই আয়ানকে রেখে এবার আমাদের বের করে দিবে নাতো।

— রায়হান শেখ আবারও জোরে হেসে উঠে রিকের মুখোভজ্ঞি দেখে। তারপর বলে আরে আমি তো মজা করছিলাম তোমাদের সাথে।

– আয়ান নানুভাই শুনো এখনই তোমার মাকে কিছু বলার দরকার নেই সময় হলে আমি নিজে যোগাযোগ করব আঁখির সাথে। আমাকে একটু সময় দাও।

– আর কত সময় নিবে নানাভাই.। ২৬ বছর তো পার করে দিলে সময় নিতে নিতে।
রায়হান শেখ আর কিছু না বলে আসছি বলে চলে আসে ঘর থেকে।

– রাগ করল নাকি রে আয়ান আবার নানাভাই তুর্য বলে।

— না না রাগ করেনি আসলে তোমাদের নানা ভাই নিজের কষ্ট চোখে পানি কাউকে দেখাতে চাইনা তাই পালিয়ে গেলো একপ্রকার বলতে পারো। মানুষটা তো আমি চিনি খুব ভালো করে।

— সত্যি রায়হান শেখের চোখে পানি চলে আসে আয়ানের কথায়। কিন্তু সে পানি কাউকে কখনো দেখাতে চাইনা। তবে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে সে। অযথা রাগ জেদ করে অনেক বড় শাস্তি দিয়েছে আঁখিকে।

— তুর্যের ফোন বেজে ওঠে তখনই। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তুহিন কল করেছে। তুহিনের ফোন পেয়ে তুর্যের মুখে হাসি ফুটে। তুর্য বলে তোরা কথা বল আমি ফোন রিসিভ করে আসছি। তাই বলে সাইডে চলে যায়।

— ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই তুহিন বলে কেমন আছো ভাইয়া। ( তুর্য আর তুহিন জমজ হলেও কয়েক মিনিটের ছোট বড় তারা। তুর্য আগে তারপর তুহিন হয়েছিল। তাই তুহিন তুর্যকে ভাইয়া বলে ডাকে। তবে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের থেকে কম কিছু না। সব কথা দুজন দু’জনকে সেয়ার করে।)

– এতদিনে ভাইয়ের কথা মনে হলো তাহলে। তুর্য বলে তুহিনকে।

– আসলে ভাইয়া অনেক ব্যস্ত ছিলাম কদিন। কথা বলার সময় হয়ে উঠেনি। তাছাড়া তুমিও তো একবার ফোন করোমি আমায়।

— এখানে অনেক নেট সমস্যা। গ্রাম তো তাই সব সময় নেট কানেক্টে হয়না। আচ্ছা কেমন আছিস। মা বাবা কেমন আছে।

– সবাই ভালো আছে। তোমার কি অবস্থা সব ঠিকঠাক ওইদিকে।

– এইদিকের খবর তো খুবই ভালা। তারপর সব খুলে বলে তুহিনকে তুর্য। সব শুনে তুহিন খুব খুশি হয়।

— এবার তাহলে আন্টির অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে বলো। কত আক্ষেপ আফসোস করত আন্টি। আন্টি তাদের বাবার বাড়ির সবাইকে কত ভালবাসে কিন্তু তারা কিভাবে এতদিন থাকে রাগ করে।

— যাই হোক এখন মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখা যাক। তবে আয়ানের বড়মামা আফজাল শেখ সে ভীষণ রাগী বদমেজাজি একজন লোক।।আমার তো দেখলেই ভয় করে। কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে সব সময়।

… তা নতুন চাকরি পেয়েছিস শুনলাম। একবার বললি না তো আমাকে তুর্য বলে।

-জানানোর জন্য তো ফোন দিলাম তোমায়।

– তো কেমন লাগছে নতুন চাকরি। যদিও তোর ভালো লাগবে জানি। যে পড়ুয়া মানুষ তুই। তোর জন্য শিক্ষকতা একদম ঠিক আছে।

— আর চাকরি। বরং না হওয়া ভালো ছিল। কি যে একটা প্যারা এসে হাজির হয়েছে।

– তুর্য ভ্রু কুচকে বলে মানে। কি সমস্যা?

– আর বলো না একটা মেয়ে পিছু পড়েছে। নাছরবান্দা মেয়ে একটা। কি যে বেহায়া বেশরম বলে বোঝাতে পারব না তোমায়।

— তুর্য রসিকতা করে বলে বাহ আমার এমন গম্ভীর মুডি ভাইকে জ্বালাচ্ছে কম কথা নয়। আমি তো জানি তোর গম্ভীর লুকের জন্য কোনো মেয়ে কাছে আসার চেষ্টাও করে না ভয়ে।।আর এই মেয়ে তো রীতিমতো খুবই সাহসী।

– ভাইয়া তুমিও ওই মেয়ের হয়ে কথা বলছো। ভীষণ প্যারাযুক্ত একটা মেয়ে। তারপর সব খুলে বলে তুহিন তানির বিষয়ে।

– তুর্য সব শুনে হো হো করে হেসে উঠে। তারপর হাসি থামিয়ে বলে। বেশ দারুণ তো। তবে এটা বুঝতে পারছি খুব চঞ্চল আর মিস্টি একটা মেয়ে তানজিলা। নাহলে আমার এমন ভাইকে কেউ নাকানিচুাবানী খাওয়াতে পারে।

— এই সব বাদ দাও। শুনলাম প্রেম করছো ওইখানে গিয়ে। তুহিনের কথা শুনে তুর্য চমকে উঠে বলে কে বলেছে এই কথা।

– লুকিয়ে লাভ নেই সব জানি৷ রিক ভাইয়া ফোন করেছিল আর সব বলেছে মাকে। মা বাবা সবাই জানে তোমাদের কথা। এবার বলো ভাবি দেখাচ্ছো কবে।

– এই রিককে নিয়ে কি যে করি। আজ তো ওকে আমি মেরেই ফেলব।।তুর্যের কথা শুনে তুহিন হেসে বলে সে মেরো। তবে মা বলেছে মেয়ের একটা ছবি নিতে। তারা তো উতলা হয়ে পড়েছে তাদের একমাত্র বউমাকে দেখার জন্য।

– তুর্য মুচকি হেসে বলে সময় হলে দেখাবো। সামনে থেকে দেখাবো। তবে অনেক ঝামেলা আছে। জানি না আমাদের সম্পর্কের পরিনতি কি হবে। এই গ্রামের নিয়ম কানন উল্টো পালটা। তাছাড়া আঁখি আন্টি প্রেম করে বিয়ে করেছে বলে এতকিছু ভাবতে পারছিস আমাদের কি হবে।

— কিছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে সময়ের সাথে চিন্তা করো না। আচ্ছা ভাইয়া এখন রাখি পড়ে কথা হবে। নিজের খেয়াল রেখো।বলে ফোন কেটে দেয় তুহিন।

– তুর্য একটা টানা নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর ঘরে আসে।
ঘরে এসে দেখে সবাই বসে গল্প করছে। তুর্য নুসরাতের দিকে তাকায় নুসরাতও তুর্যের দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

তো সব ঠিকঠাক অবশেষে। এবার তোর বড়মামা সব মেনে নিলে সমস্যা সমাধান।

– বাবা এত সহজে মানবে না আমার বিশ্বাস। আমি বাবাকে জানি। বাবার অভিমানে দেয়াল অনেক উঁচু আর শক্ত।

– আয়ান বলে আমি সব ঠিক করে তবেই এখান থেকে যাব। তার জন্য যা করতে হয় করব।
———————

– আয়ান ছাদে দাঁড়িয়ে আঁখির সাথে কথা বলতেছিল। আঁখি আজ ভীষণ খুশি। আয়ান রায়হান শেখের সব কথা বলে আঁখিকে। খুশিতে আঁখির চোখে পানি চলে আসে।

– তাসনুও সেই সময় ছাদে আসে। অতিরিক্ত গরম পড়াই ছাদে আসে হাওয়া খাইতে। এসে দেখে আয়ান ফোনে কথা বলছে।

– তাসনু গলা খ্যাকাড়ি দিয়ে তার উপস্থিতি জানান দেয়। আয়ান এক পলক তাসনুর দিকে তাকিয়ে আবার কথা বলায় মনোযোগ দেয়।

– তাসনু এবার সাহস জুগিয়ে আয়ানকে বলে কার সাথে কথা বলছেন নিশ্চয় ফুপি আছে লাইনে।

– আয়ান মুচকি হেসে হ্যাঁ জানায়।

— আঁখি তাসনুর সব কথায় শুনতে পাচ্ছে তাই আয়ানকে জিজ্ঞেস করে পাশে কে। আয়ান সোজা ভাবে উত্তর দেয় তাসনু আছে।

– আঁখি মুলত আয়ানের থেকে সব জেনেছে। এই পরিবারে কে কে আছে সবার নাম। কথায় কথায় সবাইকে চেনা হয়ে গেছে আঁখির যদিও কথা বা দেখা কিছু হয়নি। তবে আয়ানের বলার ভিত্তিতে পরিচিত হয়েছে সবাই। আর তাসনু অনু নুসরাতের দুস্টামি সব বলেছিল আয়ান আঁখিকে। সেদিন কি হাসি পেয়েছিল আঁখির এদের কান্ড শুনে।

– আঁখি আয়ানকে বলে তাসনুকে একটু দিবি কথা বলব। খুব ইচ্ছে করছে কথা বলতে মিস্টিমার সাথে। তাসনুকে আঁখি মিস্টিমা বলে। কারণ তাসনুর বর্ননায় যা বলেছিল আয়ান আঁখিকে। তাতে আখি বুঝেছিল তাসনু খুব মিস্টি দেখতে আর মিস্টি একটা মেয়ে।

– আয়ান তাসনুকে বলে তোমার সাথে মা কথা বলতে চাই। বলবে কথা।
– তাসনু চমকে উঠে বলে আ আমি। যদি বাবা জানতে পায় ভীষণ বকবে।

— আঁখির মন খারাপ হয়ে যায় তাসনুর কথা শুনে। চোখ ভরে পানি চলে আসে। তার ভাইয়া কি কখনো মেনে নিবেনা তাকে। কাছে টেনে নিবে না কখনো বোন বলে।

– আমি কথা বলব ফুপির সাথে নুসরাত বলে উঠে। সাথে অনুও আছে।

– আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ফুপির সাথে কথা বলার। তুমি না বলো আমি বলব কথা। এবার অনু বলে না আমি আগে বলব ফুপির সাথে কথা। আঁখি সবার কথায় শুনতে পাচ্ছে। এদের সবার বাচ্চামু দেখে আঁখি ফোনের ওপাশ থেকে হেসে উঠে।

– এহ আসছে কথা বলতে। ফুপি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে তাই আমি আগে কথা বলব পড়ে তোরা।

– কেনো কথা বলবে। তুমি না বললে বড়বাবা তোমাকে বকবে। তাই তোমাকে বলতে হবে না আমি বলব।

– তাসনু এবার আয়ানে থেকে ফোন নিয়ে নেয়৷ তারপর বলে আমি বলব বলেছি মানে আমি আগে বলব। নুসরাত অনু তাসনু এবার ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে। আয়ান এদের কান্ড দেখছে অবাক হয়ে। এদের বাচ্চামু স্বভাব আর গেলো না।

– ফোনের ওপাশ থেকে আঁখিও এদের কান্ডে অবাক। এতদিন আয়ানের থেকে শুনে এসেছে এখন নিজ কানে শুনে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু চোখে আছে আনন্দ অশ্রু। অনেক ভালো লাগছে আজ আঁখির

-“আয়ান বলে ফোনটা আমায় দাও।

– কেনো কথা বলব না ভাইয়া ফুপির সাথে আমরা অনু বলে।

– অবশ্যই বলবে তবে একে একে। তারপর ফোন লাউডস্পিকার বাড়িয়ে দিয়ে তাসনুর হাতে দেয়।

– তাসনু ফোন নিয়ে বলে কেমন আছো ফুপি।

– তাসনুর থেকে ফুপি ডাক শুনে সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে গেলে আখি সাথে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা আনন্দের কান্না।

– এরপর সবাই কথা বলতে থাকে। কখনো অনু তো কখনো নুসরাত আবার তাসনু কখনো কথা বলছে।
– এর মাঝে আসে সামিরা। আঁখিকে জিজ্ঞেস করে কে কথা বলছে। তাসনুদের কথা শুনে সামিরা আখির থেকে ফোন নিয়ে কথা বলতে শুরু করে।

– সামিরা বলে আপু আমার খুব ইচ্ছে তোমাদের দেখার। নানুবাড়ি যাওয়ার। সামিরার কথা শুনে সবার মন খারাপ হয়ে যায়। তাসনু বলে অবশ্যই আসবে। আর খুব শীগ্রই আসবে। তখন আমরা সবাই একসাথে মজা করব আনন্দ করব সামিরা।।

– সামিরা উৎফুল্ল হয়ে বলে সত্যি বলছো।

– একদম পাক্কা সত্যি সামু অনু বলে।। তারপর কথা বলা শেষ হলে আয়ানকে ফোন দিয়ে দেয় তাসনু।

– তাসনু আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে ধন্যবাদ।
কেনো? আয়ান জিজ্ঞেস করে।

— ফুপির সঙ্গে কথা বলানোর জন্য। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল। এখন খুব ইচ্ছে ফুপিকে দেখার। বাবার জন্য সাহস করে কিছু বলতে পারি না মন খারাপ করে বলে তাসনু।

– সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন আর অবশ্যই দেখবে সবাই। তারপর সবাই নিচে চলে আসে।

— পরের দিন সকালে জমিদার বাড়ির সামনে দুটি কালো গাড়ি এসে থামে। তাসনু তার ঘরে ছিল গাড়ি থামার শব্দ শুনে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।

– গাড়ি থেকে কালো শুট বুট পড়া একজন সুদর্শন যুবক নামে। তাসনু ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে থাকে….

চলবে..#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#বোনাস_পর্ব

— জমিদার বাড়ির সামনে দুটি কালো গাড়ি এসে থামে। তাসনু কোতুহল নিয়ে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। তখনই গাড়ি থেকে নামে কালো শুট বুট পড়া এক সুদর্শন যুবক।
— হাইট ৬ ফুটের মতো।সাদা ফর্সা আর সুঠাম দেহ। এক কথায় অনেক কিউট আর সুন্দর একজন মানুষ। যেকোনো মেয়ে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাবে।

– অনু এসে দাঁড়ায় তাসনু পাশে। তারপর বলে এটা আবার কোথায় থেকে উদয় হলো। কি হ্যান্ডু লুক মাইরি।
– অনুর কথায় তাসনু ভ্রু কুচকে অনুর দিকে তাকায়। অনু তাসনুর তাকানো দেখে ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে। আমতাআমতা করে আরে আমি তো মজা করছিলাম। তখনই নুসরাত আসে ঘরে।

— বাইরে এ-ই ছেলেকে দেখলাম কে বলো তো। কখনো দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।

– অনু ঠোঁট উল্টিয়ে বলে সেও জানে না। আচ্ছা সবাই নিচে যায় চলো৷ তবেই না জানা যাবে। তাসনু বলে ঠিক বলেছিস চল যায়।।

– রিক আয়ানের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে বাইরে একটা ছেলেকে দেখলাম আবার কে আসলো এ বাড়িতে। আয়ান বলে হয়ত এদের কেউ হবে। চল নিচে যায়।তারপর রিক তুর্য আয়ানও নিচে যায় দেখার জন্য।

– রনি জমিদার বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। আফজাল শেখ রনিকে দেখে রীতিমতো মতো অবাক। সকাল সকাল এত বড় সারপ্রাইজড পাবে ভাবেনি। ( হ্যাঁ ছেলেটা আর কেউ না। তাসনুর জন্য যে ছেলে দেখা হয়েছিল সেই রনি এটা।)

— আরে ইয়াং ম্যান। হঠাৎ দেশে তুমি। আগে জানাও নাই কেনো।

– রনি হেসে বলে জানালে সারপ্রাইজ দিতাম কেমন করে। তাছাড়া দেশে আসার জন্য আমার মন প্রাণ খুবই ছটফট করতে ছিল তাই আর দেরি না করে সোজা এখানে।

– তোমার শরীর কেমন আছে বাবা এখন। রনির সারা শরীর দেখতে দেখতে বলে আফজাল শেখ।

– আরে আংকেল ব্যস্ত হবেন না৷ আমি একদম ঠিক আছি। ফাইন এন্ড ফিট 😊। সামান্য একটু লেগেছিল। কিছুদিন রেস্ট নিয়েছি একদম পার্ফেক্ট সব কিছু।

– তোমার বাবা মা আসলেন না যে? আফজাল শেখ রনিকে প্রশ্ন করে।
— বাবার একটা ইমপোর্টেন্ট কাজ পড়ে যাওয়াই আর আসতে পারল না।।তবে সামনের সপ্তাহে আসবে সব শেষ করে। তারপর নাহয় বিয়ের দিন করা যাবে।

– তাসনু আয়ান বাকি সবাই দাঁড়িয়ে এদের কথোপকথন শুনছিল। কারো আর বুঝতে বাকি নেই এটা কে।

– তাসনুর বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই। হঠাৎ এমন একটা পরিস্থিতি হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি। আয়ানও এমন কিছু আশা করিনি।

– রিক রায়হান শেখের দিকে তাকিয়ে বলে দাদুভাই রাইট।
– রায়হান শেখ মুচকি হেসে বলে তুমি আমার রনি দাদুভাই। আমার তাসনু দিদিভাইয়ের হবু জামাই।

– রনি লজ্জা পায় রায়হান শেখের কথায়। তারপর রায়হান শেখকে সালাম করে এগিয়ে গিয়ে। রায়হান শেখ বলে আরে কি করছো থাক থাক সালাম করতে হবে না। দোয়া করি অনেক ভালো থাকো। তবে এটা বেশ ভালো লাগছে দেখে বিদেশে থেকেও দেশের সস্কৃতি এখনো ভুলো নাই।

– এই দেশ আমার জন্মভূমি বেড়ে উঠা না হয় বিদেশ কিন্তু জন্মেছি তো এই দেশেই। কি করে ভুলি বলো।

– ” নুরজাহান বিবিকে বলে তুমি আমার সুইটি কিউটি সুইটহার্ট দাদিমা তাই না। তাই বলে তাকেও সালাম করে।

– নুরজাহান বিবি রনির কপালে ভালবাসার পরশ একে দিয়ে বলে বেঁচে থাকো ভাই।

– একে একে সবার সাথে পরিচয় হয় রনির। তাসনুকে রনি ছবিতে দেখছে। আর প্রথম দেখাই খুব ভালো লাগে তাসনুকে। বলা যায় প্রেমে পড়ে গেছে তাসনুর প্রথম দেখাই রনি। লাভ এট ফার্স্ট সাইড বলে একটা কথা আছে এটা বুঝি তাকেই বলে।

– এবার দৃষ্টি যায় আয়ানেরে উপর রনির। আয়ানের কাছে গিয়ে বলে তোমাকে তো চিনলাম না ব্রো।

– আয়ান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে হাই আমি আয়ান চৌধুরী এই বাড়ির..

– দূর সম্পর্কের রিলেটিভ। কদিনের জন্য গ্রামে ঘুরতে এসেছে৷ আবার চলে যাবে সময় হলে আয়ানকে বলতে না দিয়ে আফজাল শেখ বলে উঠে।

– উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হয় আফজাল শেখের কথায়। আয়ান কষ্ট পায় কিন্তু প্রকাশ করে না। রিক বলে তুই কিছু বললি না কেনো।

– আয়ান একটা মলিন হাসি দিয়ে বলে ঠিকই তো বলেছে সে। আমি তো তার কাছে দূর সম্পর্কের কেউ। আর কিছুদিনের অতিথি।

— মন খারাপ করিস না ভাই। জানিসই তো তোর মামা কেমন মানুষ। আমি কিছু মনে করিনি চিন্তা করিস না আয়ান বলে।

— আচ্ছা রনি তুমি গিয়ে রেস্ট করো এতটা পথ জার্নি করে এসেছো। পরে কথা হবে।। আমি এখন বের হবো একটু।

– ওকে আংকেল আপনি আসুন তাহলে। পরে দেখা হচ্ছে।

– এই কে আছিস জিনিস গুলো গেস্ট রুমে নেওয়ার ব্যবস্থা কর। আফজাল শেখ বলে চলে যায়।

– তাসনু অনু নুসরাত দাঁড়িয়ে ছিল। সবার সাথে কথা হলেও এদের সাথে কথা হয়নি৷ রনি এবার নুসরাতের সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর হাত বাড়িয়ে বলে হাই আমি রনি। নুসরাত তুর্যের দিকে একবার তাকায় আর রনির হাতের দিকে একবার। তুর্য রাগী লুক নিয়ে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।৷ নুসরাত একটা ঢোক গিলে বলে আসসালামু আলাইকুম। আমি নুসরাত জাহান।

– রিক হাত নামিয়ে হেসে বলে ওয়ালাইকুমুস সালাম
বেশ সুন্দর নাম তবে আমি আগে শুনেছি তোমার কথা আংকেলের থেকে। ইনফ্যাক্ট অনু ইউ রাইট অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে। অনু তো হা হয়ে গেছে রনি তার নাম জানে কি করে।

– মুখটা অফ করো অনু মাছি চলে যাবে তো। রনির কথায় অনু লজ্জা পেয়ে নিজেকে সংযত করে।

— এবার তাসনুর সামনে এসে দাঁড়ায় রনি। ইউ আর তাসনিম সুলতানা বিউটি কুইন। তবে ছবিতে যা দেখেছি তার থেকেও অপরুপ সুন্দর তুমি।

– তাসনু রনির কথায় বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে। একে তো রনির এই ভাবে হুট করে চলে আসা মানতে পারছে না তার উপর এই সব কথা৷ অসয্য লাগছে তাসনুর সব কিছু। হঠাৎ আয়ানে কথা মাথায় আসতে তাসনু আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান তাসনুর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। তাসনুও করুণ চোখে আয়ানের দিকে তাকায়। দুটি হৃদয়ের ভালবাসার কথা প্রকাশ পায়নি ঠিকই কিন্তু প্রতি মুহূর্তে তাদের ভালবাসা জানান দেয়৷ চোখ কথা বলে ভালবাসার। মায়াবী মুখ জুড়ে ভালবাসা বিচরণ করে দুটি মানুষের। আয়ান আর ওইখানে দাঁড়ায় না। সোজা নিজের ঘরে চলে যায়। এতে তাসনু হতাশার একটা নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর সেও দৌড়ে ঘরে চলে যায়।

– রনি বলে ও চলে গেলো কেনো। আমার উপর কি রাগ করলো।

– রায়হান শেখ বলে আরে রাগ করবে কেনো লজ্জা পেয়েছে হয়ত আমার দিদিভাই।।গ্রামের মেয়ে লাজ লজ্জা একটু থাকে বুঝোই তো। যাও দাদুভাই তুমি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করো।

– রনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে চলে যায় ঘরে ।

———————

-” তানু আজ সুন্দর করে সেঁজেগুজে ইউনিভার্সিটি আসে৷ আজ তুহিনকে সবার সামনে প্রপোজ করবে। সামিরা বলে এখনো সময় আছে ইয়ার ভেবে দেখ৷ এটা ঠিক হবে না কিন্তু।
– আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো কিছু হবে না দেখিস। হয় এক্সেপ্ট করবে নয়তো রিজেক্ট করবে এইতো।

-সবার সামনে রিজেক্ট করলে তোর খারাপ লাগবে না। সবাই তোমার হাসবে তখন তোকে নিয়ে।

– তুই আগে খারাপ চিন্তা কেনো করছিস। তখনই তানুর চোখ যায় ইউনিভার্সিটির গেটের দিকে। তুহিন আজ একটা মেরুন রঙের পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে তাতে। তানু মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

– ইসস কত্ত কিউট আমার বাবুটা। সামিরা তানুর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেশে তুহিন আসছে। তবে পাঞ্জাবিটাও বেশ মানিয়েছে তাকে সত্যি।

– তুই থাক আমি আমার কাজ শেষ করে আসি তাই বলে উঠে চলে যায়৷ সামিরাকে কিছু বলার সুযোগটাএ দেয় না।

– তুহিন ইউনিভার্সিটি মাঠের মাঝ বরাবর আসতেই তানু পথ আটকে দাঁড়ায়। তুহিন ভ্র কুচকে বিরক্তর সহিত বলে আবার তুমি এমন পাগলামি শুরু করেছো। সরে যাও তানজিলা। সবাই দেখে তাকিয়ে তোমার তামাশা দেখছে।
– তখনই তানু হাটু গেড়ে বসে লাল টকটকে তিনটি গোলাপ তুহিনের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলে। আমি আপনাকে অনেক ভালবাসি স্যার৷ আপনাকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়। তারপর আমার কল্পনা জল্পনা স্বপ্ন সব কিছুতে আপনি শুধু আপনি। দয়া করে ফিরিয়ে দিবেন না আমায়।

— তুহিন রাগে ফুসতে থাকে। হাত দুটো মুঠো করে ফেলে রাগ কমানোর চেষ্টা করতে থাকে। ইউনিভার্সিটির সকলে এক জোটে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে৷ কেউ কেউ কানাঘুষা করছে৷ কেউ আড়ালে মিখ টিপে হাসছে।

তানু এবার উঠে দাঁড়ায়। তারপর তুহিনকে বলে এবার তো বলবেন এটা আমার আবেগ নাকি সত্যি ভালবাসা তখনই তুহিন এমন একটা কাজ করে বসে যা কারো ধারণা ছিল না। তানু সামিরা কেউ ভাবেনি এমনটা হবে…..

চলবে..#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২৫

–” আমাকে কি এখনো ছোট মনে হচ্ছে। আবেগ মনে হচ্ছে আমার সব কিছু দেখে হাসি মুখে বলে তানু।
— তানু কথা শেষ করার আগেই তুহিন ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয় তানুর গালে। তানু সহ উপস্থিত সবাই চমকে উঠে। সামিরা কেঁপে উঠে তুহিনের কাজে।

— তানু গালে হাত দিয়ে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তুহিনের দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।

— তুহিন জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে – প্রথম দিন থেকে তোমার সব পাগলামি সহ্য করে যাচ্ছি। ভেবেছি সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি এমন একটা নির্লজ্জ মেয়ে যে কখনো শুধরানোর না। বলে ছিলাম আমার থেকে দূরে থাকতে আমাকে বিরক্ত না করতে।

– কি ভেবেছিলে৷ সবার সামনে সো কলড মেয়েদের মতো প্রপোজ করবে আর আমি এক্সেপ্ট করে নেব কথাটা জোরের সাথে বলে তুহিন। তানু ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে তুহিনের কথা শুনছে শুধু তবে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে সে।

– তোমার এই প্রেম ভালবাসা আবেগ অন্য কোথাও গিয়ে দেখাবে কাজে দিবে। ইনফ্যাক্ট অনেকে তোমার পিছে কুকুরের মতোও ঘুরবে। আমাকে তাদের দলে ভেবো না। আজকের পর তোমার মুখ যেনো আমাকে দেখতে না হয়। আর কখনো আমাকে বিরক্ত করার দুঃসাহসও দেখাবে না। নাহলে আমি ইউনিভার্সিটি ছাড়তে বাধ্য হবো৷ বুঝেছো আমার কথা গুলো বলেই চলে যায় তুহিন। এখনো রাগ কমছে না তুহিনের রাগে গজগজ করতে করতে তার রুমের দিকে যায়।

– তানু একই ভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে৷ সবাই নানান কথা বলছে। হাসি মজা করছে৷ সামিরার অনেক রাগ লাগে সবার উপর কিন্তু কি করার তানু এমন কাজ করেছে হাসি মজা তো করবেই। কিন্তু তানুর কারো কথা কানে গিয়েও যেন যাচ্ছে না। তুহিনের বলা শেষের কথা গুলো এখনো তানুর কান বাজছে।

– সামিরা এবার দৌড়ে তানুর কাছে যায়৷ তানুর হাত মুঠোয় নিয়ে বলে আগেই বলেছিলাম এমন করিস না। ভাইয়া ভীষণ রাগী। কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না৷ হলো তো এবার শান্তি সামিরাও কেঁদে দেয় এবার। সবার সামনে নিজেকে জোকার করে খুব ভালো লাগছে না। তানু এবার সামিরাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।

– তানু ভীষণ নরম মনের মানুষ। সবাইকে সহজে আপন করে নিতে পারে৷ সবার সাথে মিশে যেতেও তার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে৷ কিন্তু তানুর অভিমানের দেয়ালও ভীষণ উঁচু। কোনো কিছুতে জেদ আসলে সেটা করে ছাড়ে। আবার যদি কোনো কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় সেদিক আর ফিরেও তাকায় না সে। জেদ অভিমানের পাল্লা ভীষণ ভারী তার।

– সামিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানু সামিরাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে ইউনিভার্সিটির বাইরে চলে আসে। সামিরা পিছু ডেকেও লাভ হয়না। সামিরা জানে তানুর এখন একা থাকা খুব দরকার। তবে ওর রাগ জেদ অনেক এটাও জানে৷ ভুল কিছু করবে না তো।৷ সামিরাও ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। আজ আর ক্লাসে মন বসবে না তাই সামিরাও বাড়ি ফিরে যায়।

— তুহিন রুমে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে চুপচাপ বসে থাকে। রাগ যখন পড়ে যায়৷ তখন তুহিন মনে মনে ভীষণ আফসোস করতে থাকে। এমন বাড়াবাড়ি না করলে পারতো সে। বেশি হয়েছে গেছে সব কিছু। কি করবে রাগ উঠলে হিতাহিত জ্ঞ্যান থাকে না তুহিনের। তুহিন মনে মনে ভাবে তানুকে এক সময় ডেকে সরি বলে ভালো করে বুঝিয়ে বলবে। এই ভেবে সে নিশ্চিন্তে ক্লাস নিতে চলে যায় নিজেকে ফ্রেস করে।

———————-
-” আয়ান ঘরে এসে টেবিলের উপর রাখা পানির বোতল ছুড়ে ফেলে। দুইহাত দিয়ে নিজের চুল গুলো পেছনে টেনে ধরে বসে পড়ে মেঝেতে। তুর্য রিকও আসে আয়ানের পিছে পিছে।

– আয়ানকে এইভাবে দেখে বুঝে গেছে কি চলছে আয়ানের মনে। ওরা জানতো এমন কিছু হবে তাই আয়ানের সাথে সাথে আয়ানের ঘরে আসে তারা।

— এবার তো স্বীকার কর তুই তাসনুকে ভালবাসিস। কেনো কষ্ট দিচ্ছিস নিজেকে। এখনো সময় আছে ভাই তাসনুকে মনের কথা জানিয়ে দে। তাসনুও তোকে ভালবাসে আমরা জানি।

– আয়ান করুণ চোখে তুর্যের দিকে তাকিয়ে একটা তাছ্যিলের হাসি দিয়ে বলে কি লাভ এখন বলে। তাসনুর জন্য যে পাত্র ঠিক করা হয়েছে সেতো চলে এসেছে। সবাই কত খুশি। তাছাড়া মামা তো আমাদের সহ্য করতেই পারে না৷ তাই কখনো মেনে নিবে না আমাদের। মামা নিজে রনিকে পছন্দ করে এনেছে।
সবাই কষ্ট পাবে শুধু শুধু।

— আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা। সেটা কি কিছু না। তাসনুকে দেখেছিস কেমন নীরব হয়ে গেছে। তাসনু যে খুশি না এটা কিন্তু স্পষ্ট একদম রিক বলে।

– ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷ তাসনুও মেনে নিবে রনিকে। সময় দে একটু ওদের বুঝে উঠার মাটির দিকে তাকিয়ে বলে আয়ান।

— তারপরও এই কথা বলবি তুই৷ কেনো এমন করছিস ইয়ার। ভালবাসিস তুই অন্যায় কিছু তো করছিস না। তাহলে ভালবাসার মানুষটাকে কাছে রাখতে সমস্যাটা কোথায়।

– তুই জানিস না সমস্যা কোথায়? আমি আমার মাকে নিয়ে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতে চাইনা। আমি আমার মায়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। নানাভাই সব আমাদের মেনে নিতে শুরু করেছে এখন যদি আমি আবার কোনো ভুল করি তাহলে কেউ আমাদের আর কখনো ক্ষমা করবে না। আমার মা কখনো এখানে আসতে পারবে না আর। তার পরিবারের সাথে দেখা করতে পারবে না। ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাবে আমার মা ভেতরে ভেতরে। আমি কি করে সেসব মেনে নিই বল। অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার মা তার পরিবারের থেকে দূরে থেকে। না আমি আর কোনো ভুল করতে চাইনা। সবাইকে খুশি রাখতে চাই। নানাভাইকে তার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে চাই। বোনকে তার ভাইয়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। তাই আমাকে দুর্বল হলে চলবে না। হয়ত কষ্ট হবে কিন্তু একদিন ঠিক ভুলে যাব সব কিছু। কিন্তু এবার এই পরিবারে কোন দাগ পড়লে আর কখনো মিলবে না.।

— তুর্য রিক আর কিছু বলে না। কারণ আয়ান যা বলেছে একদম ঠিক। তাসনুর সাথে আয়ানের সম্পর্ক কখনোই আফজাল শেখ মেনে নিবে না৷ আবার সবাই ভুল বুঝবে। দুরত্ব বেড়ে যাবে দুই পরিবারের মাঝে।

— তুর্য আয়ানে কাধে হাত রেখে বলে তারপরও বলব যা করবি ভেবে চিন্তে করিস। একটা ভুল যেনো সারাজীবনের দায় হয়ে না থাকে৷ রিক তুর্য ঘর থেকে চলে যায় তারপর।

— তাসনু ঘরে এসে জানালার পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে থাকে। মনের মধ্যে চলছে কালবৈশাখী ঝড়। আয়ানকে খুব ভালবেসে ফেলেছে অজান্তে। তাসনু আয়ানের চোখেও তার জন্য ভালবাসা দেখেছে। ভালবাসা প্রকাশের আগেই কি সেই অনুভূতি শেষ হয়ে যাবে। দুটি মনের না বলা কথা কি চাপা পড়ে রবে পরিবারের সিদ্ধান্তে। কি করবে তাসনু বুঝতে পারছে না। তখনই নুসরাত পেছন থেকে বলে উঠে ভালবাসো আয়ান ভাইয়াকে।

— তাসনু চমকে পিছে তাকায়। নুসরাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে আবার আগের ন্যায় দাঁড়ায়৷

– কি হলো বলো আপু। আয়ান ভাইয়াকে ভালবাসো তুমি। আমি জানি তুমি আয়ান ভাইয়াকে ভালবেসে ফেলেছো অনেক আগেই। তাহলে প্রকাশ করছো না কেনো? কেনো ভাইয়াকে মনের কথা জানাচ্ছো না আপু?

– কি লাভ এখন এই সব বলে। নিচে দেখলি না বাবার পছন্দের ছেলে এসে হাজির। আর কয়দিন পর বিয়ের দিন করা হবে। তারপর বিয়েও হয়ে যাবে তাসনু বলে চোখে সমুদ্র মন্থন চলে। বুকে হাহাকার না পাওয়া ভালবাসার।

— মেনে নিতে পারবে সব কিছু। যতটা সহজে বলতে পারছো তত সহজে সব মেনে নিয়ে পারবে রনিকে বিয়ে করতে।

– তাসনু এবার নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে তাহলে কি করব আমি বল। আমার আর কি করার আছে। আয়ানদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন জানিস তো। বাবা কখনো মেনে নিবে না আমাদের। ফুপি এখনো ক্ষমা করতে পারেনি বাবা তার উপর যদি আমরা এমন করি তাহলে বাবা কখনোই আর ফুপিকে ক্ষমা করবে না। আর আমাদেরও মেনে নিবে না।

– তাই বলে এমন ভাবে কষ্ট পাবে৷ তিলেতিলে শেষ করে দিবে নিজেকে। ভালবাসার মানুষকে ভোলা কি এতই সহজ আপু৷

– তাসনু এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে আমি জানি না কিচ্ছু জানি না। কি করব বুঝতে পারছি না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে রে। আমি যে সত্যি আয়ানকে ভালবাসি। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না। কিন্তু কি করব আমি তাও। কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে তাসনু। তারপর হাটুতে মাথা গুজে কাঁদতে থাকে। নুসরাতের চোখেও পানি চলে আসে।

— আপু তুমি ভাইয়াকে বলে দাও সব কিছু। ভাইয়া তো তোমাকে ভালবাসে ঠিক কিছু একটা করবে দেখো। তাও এই ভাবে চুপ করে থেকো না। পরে কিন্তু হাজার আফসোস করেও ভুলটাকে সংশোধন করতে পারবে না বলতে বলতে ঘরে ঢুকে অনু।

— তাসনু মাথা তুলে অনুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। তারপর বলে কি বলছিস এই সব। এখন আর কোনো কিছু সম্ভব না।

– মিথ্যে জেদ করো না আপু। এখনো সব কিছু হাতের বাইরে যায়নি। যথেষ্ট সময় আছে এখনো। আগে ভাইয়ার সাথে কথা বলো তারপর সব দেখা যাবে।

– তাসনু এবার আশার আলো দেখতে পায়। চকচক করে উঠে চোখ দুটি নতুন কোনো আসায়। মুখে আসে অল্প হাসি।

— নুসরাতও চোখ দিয়ে ইশারা করে আশ্বস্ত করে।

— তাসনু চোখের পানি মুছে ফেলে বলে সত্যি আমি আয়ানকে সব কিছু বলব। যদি সে আমাকে ভালো না বাসে তাহলে। যদি আমাকে মেনে না নেয়।

– আহ আপু সব সময় বাজে চিন্তা করো কেনো বলো তো। ভালো চিন্তা করো৷ সব ভালো হবে। তাছাড়া ভাইয়া যে তোমাকে ভালবাসে সেটা আমরা সবাই বুঝি বেশ। তাসনুর মুখে এবার গাঢ় হাসি দেখা যায়।

– আমি সত্যি এবার আমার মনের সকল আবেগ ভালবাসা সব কিছু আয়ানের সামনে প্রকাশ করব। বলব তাকে আমার ভালবাসার কথা। হ্যাঁ বলব।

– তিনজনের মুখে এবার হাসি ফুটে।

— সন্ধ্যায় আয়ান ছাদে বসে আছে। কোনো কিছু তার ভালো লাগছে না। সবার সামনে নিজেকে ভালো দেখালেও ভেতর ভেতর ভেঙ্গেচুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

“” সত্যি তাসনুকে ছাড়া কি করে থাকবে। ভালবাসা গুলো এমন কেনো হয়। যাকে পাবো না তার উপর কেনো এই বেহায়া মনের এত মায়া হয়। কেনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখে তাকে নিয়ে। আর এত কষ্ট কেনো পায় সেই মানুষটা দূরে গেলে”। কেনো অন্য কাউকে আর জায়গা করে দিতে পারে না। আর কিছু ভাবতে পারছে না আয়ান। তোলপাড় শুরু হয়েছে বুকে তা শেষ হওয়ার না। ইতি মধ্যে কাশির শব্দ কানে যায় আয়ানের। মানুষটা কে বুঝতে তার এক সেকেন্ড দেরি হয়নি। চোখ বন্ধ করে ফেলে আয়ান। নিজেকে আর সামলাতে পারছে না।

— আয়ানকে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে তাসনু হতাশ হয়। তারপর মুখ ফুটে বলে আমার কিছু কথা ছিল আপনার সাথে যদি শুনতে কথা গুলো।

– তাসনুর কথায় বুকের মাঝে ধক করে উঠে আয়ানের। সাথে সাথে সামনে ফিরে তাকায়। আয়ানকে ঘুরতে দেখে তাসনু মাথা নামিয়ে নেয়।

— হ্যাঁ বলো কি বলবে আয়ান বলে।

– তাসনু কিছুখন চুপ করে থাকে। মুখ দিয়ে যেনো কোনো কথায় আসছে না তার। হয়ত এই প্রথম কোনো মেয়ে লাজ সরম ভুলে বিয়ের আগে অন্য পুরুষকে নিজের ভালবাসার কথা জানান দিচ্ছে। কিন্তু তাও বলতে হবে নিরুপায় তাসনু। আর যাই হোক আয়ানকে সে ছাড়তে পারবে না। ভাবনার মাঝেই আয়ান বলে আবারও কি হলো বলো। এই ভাবে কেউ দেখলে সমস্যা হবে তাই যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।

— তাসনু এবার চোখ বন্ধ করে আমি আপনাকে ভালবাসি আয়ান। খুব বেশি ভালবাসি ।

— তাসনুর কথা শুনে আয়ান চমকে উঠে। হাত পা তার ঠান্ডা হয়ে আসে। এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে তাকে ভাবেনি। এতখনে নিজেকে সামলে রাখলেও এখন আর পারে না চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা জল।

– তাসনু এবার চোখ খুলে আয়ানের দিকে তাকায়। আয়ানের মুখোভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করছে। আয়ান তাসনুর দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছে না।

– কিছু তো বলুন৷ দয়া করে চুপ করে থাকবেন না। আমি সত্যি আপনাকে ভালবাসি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। ছলছল চোখে বলে তাসনু।

— এই সব কি বলছো তাসনু তুমি। তুমি কি বলছো ভেবে দেখেছো। আর এটা কখনো সম্ভব না। সব কিছু তো জানো। জানার পরও কি করে বলতে পারো এটা।

— আপনি কি আমাকে ভালবাসেন না? প্রশ্ন করে তাসনু আয়ানকে। তাসনুর প্রশ্নে আয়ান ঘাবড়ে যায়। আবারও চুপ করে থাকে।

— কি হলো বলুন। আপনি আমাকে ভালবাসেন না। আমি আপনার চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখেছি৷ এখনো দেখতে পাচ্ছি তাহলে কেনো এমন করছেন।

– তুমি ভুল দেখেছো তাসনু। আমার কারো জন্য কোনো ভালবাসা নেই আর না আমি কাউকে ভালবাসি নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলে আয়ান।

— তাসনু এবার অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকায় চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে বেদনার অশ্রুপাত। তাসনু এবার ছুটে গিয়ে আয়ানের বুকে পড়ে। আয়ানের বুকে মাথা রেখে বলে কেনো মিথ্যে বলছেন। আমি জানি আপনি আমাকে ভালবাসেন আপনিও আমার মতো কষ্ট পাচ্ছেন তাহলে কেনো স্বীকার করছেন না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না৷ প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।। আপনাকে ছাড়া আমি মরেই যাব।

– তাসনুর কথায় মোচড় দিয়ে উঠে আয়ানের বুকের মাঝে৷ কি করবে বুঝতে পারছে না আয়ান। তাসনুকে যে সে ভালবাসে না তা তো নয়। কিন্তু কোথায় একটা বাধা থেকে সব কিছু হয়েও হচ্ছে না।

– তাসনু আয়ানকে জড়িয়ে রেখেছে কিন্তু আয়ান আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তাসনু মাথায় হাত দিতে গিয়ে আবার নামিয়ে নিয়ে বলে কি করছো তাসনু ছাড়ো। কেউ দেখে নিলে বিপদ হয়ে যাবে। আমাদের আর এবাড়ি থাকা হবে না৷ তুমি কি সেটা চাও।

– আয়ানের কথায় তাসনু আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।

– আয়ান বলে দেখো তাসনু আমাদের সম্পর্ক কখনোই তোমার বাবা মেনে নিবে। আর না আমার মাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে। আমি চাই আমার মা তার পরিবারের কাছে ফিরে আসুক। আমার মা খুশি থাকুক। তাই আমাকে দয়া করে দুর্বল করে দিবে না। রনি কিন্তু খুব ভালো ছেলে তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।

– তাসনু মলিন চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আয়ানের কথা শুনছে৷ আর কিছু বলার মতো ভাষা তার কাছে নেই।

– ভুলে যাও সব কিছু। মনে করো আমার জন্য কখনো কোনো অনুভূতি আসেনি তোমার মাঝে । আমি সব ঠিক করতে এসেছি এখানে তাই নিজে কোনো ভুল করে আগের ভুলকে স্থায়ী করতে চাই না। আমাকে ক্ষমা করে দাও বলে চলে যায় আয়ান।

– তাসনু ওইখানেই বসে পড়ে কিন্তু এখন আর তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে না। অনুভূতি শুন্য হয়ে গেছে সে।……
#খেয়া_ঘাটের_প্রেম
#লেখনী_আলো_ইসলাম
#পর্ব_২৬

— তাসনু কিছুখন বসে থাকার পর নিচে চলে আসে৷ তাসনু এখন অনুভূতি শুন্য কোনো দিকে তার খেয়াল নেই। এলোমেলো পায়ে ঘরে প্রবেশ করে তাসনু। অনু নুসরাত তাসনুর আসার অপেক্ষা করছিল। তাসনুকে দেখে ওরা চমকে উঠে। কারণ তাসনুকে কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে।

– অনু বলে ভাইয়া কি বলল? নুসরাত ও উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে জানার জন্য।

– তাসনু খাটের এক পাশে চুপচাপ বসে। কোনো কথা বলে না। অনুর কথা হয়ত কান পর্যন্ত যায়নি তাসনুর।

– অনু এবার তাসনুর বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে আপুউউ কথা বলছো না কেনো। কি বলল ভাইয়া?
— অনুকে জাপটে ধরে তাসনু এবার জোরে কেঁদে উঠে। এতখন নিজেকে ঠিক রাখলেও এখন আর পারছে না। এতখনের চাপা আর্তনাদ চিৎকার করে কান্না করে প্রকাশ করে। নুসরাত অনু দুজনে বেশ অবাক হয় তাসনুর কান্না দেখে তাদের চোখেও পানি চলে আসে৷ নুসরাত বলে কি হয়েছে আপু। তুমি কান্না করছো কেনো। ভাইয়া কি মেনে নেয়নি তোমার ভালবাসা। তোমাকে কি… বাকিটা বলার আগে তাসনু বলে আমার অনুভূতি ভুলে যেতে বলেছে সে। আমার সব কিছুকে মিথ্যা করে দিয়েছে সে। বুঝেনি ভালবাসা আমার বলে আবার কান্না করতে থাকে।

— কিন্তু ভাইয়াও যে তোমাকে ভালবাসে তাহলে নুসরাত বলে।
– কেউ ভালবাসে না আমাকে। আমি ভুল ছিলাম। আমি ভুল করেছি কাউকে ভালবেসে। আমার অনুভূতি প্রকাশ করে ভুল করেছি আমি। আমি এখন কি করব বলতে পারিস। আমি রনিকে কি করে মেনে নেব৷ আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না। আমি আয়ানকে খুব ভালবাসি যে। দুইহাত দিয়ে চুল টেনে ধরে তাসনু এবার।
– আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে কি কি বলেছে বলো তো শুনি। তাসনু চোখের পানি মুছে নিজেকে শান্ত করে সব খুলে বলে।

— তার মানে ভাইয়া ফুপির কথা ভেবে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে অনু বলে । তাসনু মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।
— কি হবে কিছু বুঝতে পারছি না ঘরে পাইচারি করতে করতে বলে নুসরাত।
— আমাকে একটু একা থাকতে দে তোরা। যা এখান থেকে তাসনু বলে। অনু নুসরাতকে ইশারা করে চলে আসতে বলে। তাসনুর একা থাকা খুব দরকার। নিজেকে সামলানোর জন্য কিছু মুহূর্ত একা থাকতে হবে তাকে।

— আয়ান ঘরে এসে খাটের কিনারা ঘেষে বসে পড়ে। তাসনুকে ফিরিয়ে দিয়ে খুব খারাপ লাগছে তার। তাসনুর কান্নারম মুখ যতবার ভেসে উঠছে ততবারই আয়ানের ভেতর টা ভেঙেচুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি করবে সেও যে নিরুপায়৷ আয়ান মনে মনে ভাবে এখানে না আসলে মনে হয় ভালো হতো। তাহলে তাসনুর সাথে দেখাও হতো না এমন পরিস্থিতি হতো না। আচ্ছা তাসনুকে যে ফিরিয়ে দিল সে কি নিজে পারবে তাসনুকে ছেড়ে থাকতে৷। তাসনুকে ভুলে যেতে। আয়ানের চোখেও পানি চলে আসে।

–ছেলেরা সব সময় অসহায় থাকে। তারা কষ্ট পেলে মেয়েদের মতো চিৎকার করে কাঁদতে পারে না। কাউকে কষ্টের কথা বলতে পারে না। বুকে পাহাড় চেপে বয়ে বেড়াতে হয় সব কিছু। এমন সময় রনি আসে আয়ানের ঘরে। দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে আসতে পারি।

– আয়ান তাকিয়ে দেখে রনি দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান চোখের পানি মুছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে অবশ্যই। আসো ভেতরে আসো।

– একা একা খুব বোরিং ফিল হচ্ছিল। তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে টাইম স্পেন্ড করি। আচ্ছা তোমার কোনো সমস্যা নেই তো বা কোন কাজ। বিরক্ত হচ্ছো?

– আরে না না কি যে বলো। তাছাড়া আমার কোনো কাজ নেই।
– ওহ তাহলে তো ভালোই হলো৷ অনেক সময় পাওয়া যাবে। বাই দ্যা ওয়ে আচ্ছা তোমরা কেমন রিলেটিভ এই বাড়ির। এর মাঝে ঘরে আসে রিক তুর্য।

– রিক কিছু বলতে যাবে তার আগে আয়ান বলে ওইতো দূরসম্পর্কের আত্বিয় আমরা। কিছুদিনের জন্য ঘুরতে আসা। গ্রামে তো আগে কখনো আসা হয়নাই তাই আর কি।

– রিক বেশ বিরক্ত হয় আয়ানের উপর। এই ছেলে সব সময় বাড়াবাড়ি করে এই ভেবে।

– রনি রিক আর তুর্যকে দেখতে পেয়ে বলে আচ্ছা তোমরা কি ফ্রেন্ড সবাই নাকি..
– হ্যাঁ আমরা ফ্রেন্ড শুধু ফ্রেন্ড না বেস্ট ফ্রেন্ড। বলতে গেলে আমরা এক প্রাণ হাসি মুখে বলে আয়ান কথা গুলো।

– রিক বলে ওয়াও ভেরি ইন্টারেস্টিং। এখন তো এমন বন্ধুত্ব দেখায় যায়না। অনেক ভালো লাগলো তোমাদের দেখে। হাই আইম রনি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় তুর্যের দিকে।
– তুর্যও হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে আমি তুর্য আর ও রিক।
– আচ্ছা আমি কি তোমাদের বন্ধু হতে পারি রনি বলে। আমাকে কি বন্ধু হিসেবে নেওয়া যায়না। নাকি বন্ধু হতে পারব না।

– রিক এতখন রনির উপর ক্ষিপ্ত থাকলেও এখন বেশ ভালো লাগছে রনিকে। তাই রিক বলে বন্ধু হতে চাও সত্যি?

– কেনো হতে পারি না৷ আমি এতটাই অযোগ্য তোমাদের বন্ধু হওয়ার।
— না না তেমন কিছু না। অবশ্যই হতে পারো। ওকে লেটস ফ্রেন্ড বলে হাত মিলাই তুর্য। তারপর রিক দেয় হাত। আয়ান বসে আছে কিন্তু হাত বাড়াচ্ছে না। সবাই ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়। রনি বলে তোমার বন্ধু হয়ত আমাকে ফ্রেন্ড ভাবতে পারছে না।
– আয়ান সবাইকে অবাক করে দিয়ে রনিকে জড়িয়ে ধরে। রিক তুর্য তো প্রায় বেশ অবাক। রনিও শকড।

– আয়ান বলে এবার কি মনে হচ্ছে তোমার। বন্ধু মানতে পেরেছি নাকি..
– থ্যাংকস ইয়ার রনি বলে ।
উহু নো থ্যাংকস নো সরি তারপর তিনজন হেসে উঠে। তারপর গল্পে মেতে উঠে তারা।

— পরের দিন সকালে..
“”জমিদার বাড়ির হবুজামাই এসেছে বলে নানান রকম খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনি কম হয় না কিন্তু আজ আরো বেশি কিছু রান্না করা হয়েছে। সব আফজাল শেখের আদেশে করা হয়েছে।

— রনি এত খাবার দেখে বলে। এত বাঙ্গালী খাবার ওয়াও। কত দিন পর খাব৷ উফফ আমার তর সইছে না৷ রনির কান্ডে আফজাল শেখ, রায়হান শেখ, নুরজাহান বিবি সহ তাসনু, অনু, নুসরাত, আশরাফ শেখ, নাহিদা বেগম সবাই হাসতে থাকে। আয়ানরা এখনো আসে নি নিচে।

– রায়হান শেখ নাহিদা বেগমকে ডেকে বলে বউমা আয়ান নানুভাইরা কই? এখনো আসছে না কেনো ওদের ডাকা হয়নি?.
– আমি তো ডাকতে পাঠিয়েছিলাম বাবা ওদের৷ আফজাল শেখ বলে কারো জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই বাবা শুরু করুন। ওদের খাবার নাহয় ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এমন সময় আয়ান, রিক, তুর্য এসে হাজির হয় আর আফজাল শেখের সব কথা শুনতে পায়।

– আয়ান চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখনই রনি বলে আরে আয়ান ওইদিকে কোথায় যাচ্ছো। আসো এখানে বসো। তুর্য, রিক তোমরাও বসো। দেখো কত বাঙ্গালী খাবার এখানে। তাড়াতাড়ি বসো ইয়ার আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। আয়ান আফজাল শেখের দিকে তাকায়। আফজাল শেখও আয়ানের দিকে তাকায়। আফজাল শেখ আর কিছু বলে না।
– আয়ান বসে তারপর রিক তুর্য বসে। আয়ানের সোজাসুজি তাসনু বসেছিল। দুজনের চোখাচোখি হয়। কিছুখন চেয়ে থাকে দুজন নিরবে তারপর আয়ান চোখ নামিয়ে নেয়।

———————

— তুহিন ভার্সিটি এসে তানুর খোঁজ করতে থাকে। কিন্তু কোথাও দেখতে পায়না। ভার্সিটির একটা রুমের সামনে সামিরা দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে ছিল। সামিরাকে দেখে তুহিন সেদিকে যায়। এসে সামিরার সামনে দাঁড়ায় সে।

— সামিরা তুহিনকে দেখে বলে ভাইয়া কিছু বলবে সরি স্যার।
– ইটস ওকে সামিরা এখন তো ক্লাসে নেই আমি ভাইয়া বলতে পারো। আচ্ছা তানজিলাকে দেখছি না কোথাও। ও কি আজ ভার্সিটি আসে নাই।

— তানুকে কাল থেকে পাচ্ছি না ভাইয়া। ওর বাসার সবাই খুব চিন্তা করছে। কাল ও বাড়ি ফিরেনি। আন্টি অনেক কান্নাকাটি করছে। আংকেল অসুস্থ হয়ে পড়েছে ওর চিন্তায়। সব জায়গায় খুজেছে কিন্তু ওকে কোথাও পাওয়া যায়নি।

– সামিরা কথা শুনে তুহিনের বুকে মাঝে মোচড় দিয়ে উঠে। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে তুহিনের। সত্যি কাল অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। আচ্ছা ওর নাম্বারটা দিতে পারবে আমাকে।

– ওর ফোন সুইচ অফ কাল থেকে। আমি অনেকবার ট্রাই করেছি লাভ হয়নি।
–তুমি কাল ওর সাথে এমনটা না করলে পারতে ভাইয়া। ও ভীষণ জেদি একটা মেয়ে। তোমার অপমান অবহেলা ও সহ্য করতে পারিনি কাল। তোমাকে সত্যি ভালবাসে তানু ভাইয়া বলে মাথা নামিয়ে নেয় সামিরা।

– তুহিন দুইহাত দিয়ে চুল টেনে ধরে। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে। কোথায় পাবে এখন তানুকে। তাকে যে সরি বলতেই হবে তানুর কাছে। আচ্ছা আমি এখন আসছি। কোনো দরকার হলে অবশ্যই বলো আমাকে আর তানজিলার কোনো খোঁজ পেলে আমাকে জানাবে প্লিজ।

– সামিরা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তুহিন চলে যায় সেখান থেকে। বুকের মাঝে কেমন একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। প্রিয় কোনো জিনিস খুব কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেললে যেমন হয় ঠিক তেমন ফিল হচ্ছে তুহিনের আজ। আজ হয়ত তুহিন কিছুটা হলেও তানুর অনুপস্থিতি বুঝতে পারছে।

— কেটে যায় বেশ কিছুদিন। গ্রামে বেশ ভালো রকম শীত পড়া শুরু করেছে। আয়ান রনির সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়েছে এই কদিনে। রনি তাসনুর সাথে যতবার কথা বলতে গেছে তাসনু রনিকে এড়িয়ে গেছে। রনিও এটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে এটা ভেবে তাসনু লজ্জা পাচ্ছে হয়ত তার সাথে কথা বলতে বা তার সামনে আসতে।

— আয়ানের ঠান্ডা লেগেছে। সাথে হাল্কা কাঁশিও। নুরজাহান বিবি নাহিদা বেগমকে বলেন আয়ানের জন্য আদা চা করে দিতে তাহলে একটু ভালো লাগবে খেলে।

– নাহিদা বেগম চা নিয়ে আয়ানের ঘরে আসতেছিল এমন সময় রায়হান শেখ ডাক দেয় তাকে। সামনে তাসনুকে দেখতে পেয়ে তাসনুর হাতে চা- টা দিয়ে বলে আয়ানকে দিয়ে আসতে। চা তাসনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় নাহিদা বেগম । তাসনুকে কিছু বলার সুযোগও দেয় না সে। তাসনু বেশ ইতস্ততবোধ করে আয়ানের ঘরে যেতে।

– সেদিনের পর থেকে তাসনু আয়ানের থেকে দূরে দূরে থেকেছে। কিন্তু ভালবাসা আয়ানের প্রতি কমেনি না অনুভূতি এক ফোটা কমেছে। শুধু শারীরিক ভাবে দূরে রেখেছে নিজেকে কিন্তু মানসিক সব কিছু জুড়ে শুধু আয়ানের বিচরণ সেখানে। তাসনু আয়ানের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

– আয়ান চেয়ারে বসে তাসনুর তোলা ছবি গুলো ঘুরে ফিরে দেখতে ছিল। আর একা একা হাসতে ছিল সে। আয়ানের ভালো থাকার উপায় এই একটা এখন। যখনই তাসনুর কথা খুব করে মনে হয় তখনই তাসনুর দুস্টামি ভরা ছবি, গোঁফ আকাঁ ছবি, কান ধরে উঠবস করার সময়ের ছবি, প্রকৃতির ছোঁয়া পরম আবেশে অনুভব করার মুহূর্তের ছবি গুলো দেখতে থাকে।

– তাসনু আয়ানের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। বুকের মাঝে ধুকধুক করে তাসনুর। এই মানুষটার সামনে আসলে নিজেকে সামলাতে পারে না তাসনু। একটা টানা নিশ্বাস ছেড়ে ঘরে ঢুকে তাসনু নিঃশব্দে। আয়ানের কাছাকাছি আসতে তাসনু দেখতে পায় আয়ান তার তোলা ছবিগুলো আয়ান ফোন স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে। তাসনুর চোখে পানি চলে আসে খুশিতে। আয়ান যে তাকে ভালবাসে সে আগেই জানত এখন আর কোনো সন্দেহ নেই এই বিষয়ে তার।

– এতই যখন ভালবাসেন তাহলে প্রকাশ করছেন না কেনো আয়ান।

– তাসনুর কথা শুনে আয়ানের হাত থেকে ফোন টা পড়ে যায়…….

চলবে..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here