গল্পটা_পুরনো পর্ব ৯+১০

#গল্পটা_পুরনো।
পর্ব – ৯
লেখা – মুনিরা জলী।

* * *
ভোর বেলায় আজানের সুমধুর আহবানে ঘুম ভেঙ্গে গেল তোয়ার। তবুও আরামের ঘুমঘোরে আলসেমি করে কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটায় সে। ‘ ঘুম হতে নামাজ উত্তম ‘ একথা শোনার সাথে সাথেই গা ঝারা দিয়ে উঠে বসলো তোয়া। আড়মোরা ভেঙ্গে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বাথরুমে গিয়ে অজু করে এসে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয় সে। জায়নামাজ ভাজ করে তুলে রেখে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে দিকে তাকালো। এখনো সূর্য উঠেনি। হেমন্তের ভোরে হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে আছে চারিদিকে। গাছের পাতা বেয়ে সারারাতের জমে থাকা কুয়াশা টুপটাপ ঝরে পরছে মাটিতে। ভোরের শিতল বাতাসের সাথে শিউলি , হাস্না হেনা ফুলের সুবাস ভেসে আসছে জানালার ফাঁক গলে। তোয়া আচ্ছন্ন হয়ে চেয়ে থাকে ঘোলাটে আবছায়া আলোয় মাখামাখি হয়ে থাকা দুরের পুকুরের দিকে। কুয়াশা যেন চাদরের মত ঝুলে আছে পুকুরের ঠান্ডা শান্ত পানির উপর। তোয়ার খুব ইচ্ছে হয় পুকুরের পারে যাওয়ার। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে ছিল জানা নেই তার। তখনই দেখতে পায় সে অসম্ভব মোহনিয় রুপ নিয়ে কুয়াশা ভেদ করে গোলাকার টিপের মতো লালচে আভা ছড়িয়ে দিতে দিতে সূর্য্যি মামা উকি দিচ্ছে প্রকৃতির বুকে। তোয়া মুগ্ধতায় বুদ হয়ে চেয়ে থাকে সেদিকে। কতক্ষণ ওমনি দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে শাহানার ডাকে তার ঘোর কাটে।

” তুই উঠে পরেছিস। ”

” হ্যাঁ মামি। সূর্যোদয় দেখছিলাম। ” তোয়া আকাশের দিকে তাকিয়েই মুগ্ধ গলায় বলে , ” দেখ কি অপূর্ব দেখাচ্ছে না আকাশটাকে! ”

শাহানা জানালার কাছে এগিয়ে এসে বাইরে উঁকি দিলেন। আনমনে বললেন তিনি , ” হুম সুন্দর! এইজন্যই তো ভোর বেলায় প্রকৃতি এতো স্নিগ্ধ , সজিব সতেজ থাকে। ”

” ওয়াও! মামি দারুণ বলেছো তো! ”

শাহানা লাজুক হেসে বললেন , ” ধুর! কি যে বলিস না? ” তারপর মনে হতেই জিজ্ঞেস করলেন তিনি ,

” চা করব? খাবি এখন? ”

” এখন না। আমি একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি? ” অনুমতির আশায় মামির দিকে তাকিয়ে আছে তোয়া।

শাহানা বললেন , ” বেশ ত যানা , ঘুরে আয়। আমি ততক্ষণে নাস্তাটা তৈরি করে ফেলি। ”

“ওকে মামি , তাহলে যাই , একটু মরনিং ওয়াক করে আসি। ” বলেই হেসে ফেললো তোয়া।

ওড়নাটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে নিচে নেমে এলো সে। আজকের আর শিউলি তলায় দাঁড়িয়ে না থেকে গেট খুলে সোজা বাইরে বেরিয়ে আসে। হাটতে হাটতে পুকুর পারে এসে কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সে। তারপর ধীরে ধীরে পুকুরের পার ঘেঁষে হাঁটতে থাকে। রাস্তা ধরে হাটছিল যখন তখনই হঠাৎ রাদিবের একেবারে মুখোমুখি পরে যায় সে ।
যদিওবা তোয়ার কাছে হঠাৎ নয়। সে মনে মনে রাদিবের অপেক্ষায় ছিল । হাটতে আসা আসলে বাহানা , তোয়ার উদ্দেশ্য ছিল রাদিবকে এক নজর দেখতে পাওয়া। মাত্র দুদিনের পরিচয় মানুষটির সাথে। কিন্তু তার ভিতরে কি যেন হয়ে গেছে , যা তার নিজের কাছেই বোধগম্য নয়। গতকাল ভোর বেলায় রাদীবের সাথে দেখা হয়েছিল। তাই তার অবচেতন মন আজকেও এই ভোর বেলায় ওকে বাইরে টেনে এনেছে।
কিন্তু এখন মানুষটির সামনে দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যিই সে লজ্জায় , মরমে মরে যাচ্ছে। কি লজ্জা! কি লজ্জা! কিন্তু না তার কিছুতেই এখন মানুষটির সামনে ধরা পরলে চলবেনা। তাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। ভাবনার রাস টেনে যখন সে বর্তমান ধরায় মন পাখিটিকে নামিয়ে আনতে পারে ততক্ষণে রাদিবের সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকেই নির্লজ্জের মতো চেয়ে আছে। এবার সে কোথায় যাবে? মনটা চাচ্ছে এখনই ধরনী ফাঁক হোক , আর সে ধরনীর বুকে সেধিয়ে যাক। কারণ সেই মানুষটি তার দিকেই তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। যেন খুব মজার কোন জিনিস দেখছে। তোয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে ,

” কি? ”

” তোমার চিন্তা ভাবনা শেষ হলো? তা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কি এতো ভাবছিলে বলতো? ”

তোয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলো । থুতনিটা বুকের সাথে লেগে আছে। মাথা তুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছেনা সে। মুখে কোন কথাও আসছেনা। কি
বলবে সে এখন?
রাদিব আমোদিত নয়নে তোয়ার লাজরাঙা মুখপানে চেয়ে চেয়ে দেখছে । মেয়েটার লজ্জানত মুখটা দেখতে যে কি সুন্দর লাগে মেয়েটা কি জানে? কিন্তু এতো লজ্জা পাওয়ার মতো কি এমন হলো এখন , বুঝতে পারেনা সে। তোয়াকে কিছু বলতে না দেখে আবার রাদীবই আমুদে গলায় কথা শুরু করলো ,

” সো , ফুল পরী আজ ফুল ছেড়ে রাস্তায় কেন? ”

মাথা তুলে তাকায় তোয়া। রাদীবকে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখে নিজেকে সামলে নিলো। বললো ,

” ফুল পরী? সেটা আবার কি? ”

রাদীব একটু ইতস্তত করে বলে , ” আসলে সেদিন তোমাকে শিউলি গাছের নিচে যখন দেখলাম তখন এই নামটাই আমার মাথায় এসেছিলো। তোমার ড্রেসের কালারও ছিল শিউলি ফুলের মতো , কমলা আর অফহোয়াইট। তোমাকে একদম এত্তো বড় একটা শিউলি ফুলের মতো লাগছিল। ফুল আর তুমি মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলে। সত্যি বলছি ঐ মুহূর্তে তোমাকে একেবারে পরী লোক থেকে নেমে আসা সাক্ষাৎ ফুল পরী মনে হচ্ছিল। একটা ছবি তুলে রাখলে ভালো হতো। ইশ! মিস হয়ে গেল। ” শেষের কথাটা একটু আফসোস করে বলে রাদীব।

তোয়ার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অবশেষে লাজুক হেসে বললো ,

” ধ্যাৎ! কিসব অদ্ভুত কথা বলছেন। কোনো মাথা মুন্ডু নেই কথার। ”

রাদীব হেসে বললো , ” সিরিয়াসলি , বিশ্বাস কর আমার তখন যা মনে হয়েছিল তাই বললাম। মোবাইলটা সাথে ছিলনা তখন , নইলে সত্যিই
ছবি তুলে রাখতাম। ”

তোয়া এবার ঘুরে দাঁড়ায়। এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে তারপর বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। তোয়াকে এগোতে দেখে রাদীব দ্রুত পায়ে ওর পাশে এসে হাটঁতে হাটঁতে বললো ,

” শিট গুলো দেখেছিলে? ”

তোয়া হাটঁতে হাটঁতেই বলে , ” দেখেছি। ”

” পড়া আছে সব? ”

“বেশির ভাগ পড়া আছে। বাকিটা একটু দেখে নিব। ”

” নতুন করে আর পড়ার খুব একটা দরকার নেই। যা পড়েছ সেগুলোই রিভিশন দাও , ঠিক আছে? ”

কথা বলতে বলতে ওরা বাড়ির সামনে চলে এসেছে। তোয়া এবার দাঁড়িয়ে বলল , ” নাহ , এখন নতুন করে পড়ার সময় কোথায়? জাস্ট রিভিশনের ফাঁকে টুকটাক নজর বুলিয়ে নেয়া আরকি। ”

” তো কাল সকালে হাঁটতে বের হবে? কাছেই একটা সুন্দর পার্ক আছে। আমি ওখানেই রোজ জগিং করতে যাই। তুমি যাবে? ”

তোয়া চমকে তাকায়। ‘ তুমি যাবে ‘ এই কথাটি এমন ভাবে বললো রাদীব , বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠলো তোয়ার। ‘ মানুষটি কি জেনে শুনে বলছে? যাওয়ার লোভ তো হচ্ছে। কিন্তু সেটা কি ঠিক হবে? ‘
তোয়াকে নিরবে ভাবছিল। তাই দেখে রাদীব আবার বলে উঠলো ,

” তোমার আপত্তি থাকলে থাক। আসলে দুদিন ধরে দেখছি তো , তুমি ভোরে উঠে বাইরে হাঁটতে বের হও। তাই বললাম –

রাদীবের কথা শেষ না হতেই মাঝে থামিয়ে দিয়ে তোয়া বলে উঠে, ” না না আমি যাব তো। ” বলেই সে লজ্জায় পরে যায়। ‘ ছি ছি কি ভাবছে মানুষটা তাকে। সে বললো আর আমি হ্যাংলার মতো যাবো বলে নাচতে শুরু করলাম? ‘ নিজের মনেই ভাবে সে।

রাদীব অবশ্য তোয়ার লজ্জিত ভাব খেয়াল করে না। সে খুশি হয়ে বলে , ” ঠিক আছে , কাল সকালে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব । এখন তাহলে আসি। ”

রাদীব আর দাঁড়ায় না। গটগট করে হেটে নিজেদের বাড়ির গেটের ভিতর ঢুকে গেল। তোয়া কিছুক্ষণের জন্য বোকার মতো সেদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাদীবের আচরণ ওকে বেশ ভাবনায় ফেলে দিল। রাদীবের সঙ্গে কথা বলতে কেমন অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ভরে থাকে তোয়ার মনটা। যেটুকু সময় রাদীবের সাথে কাটায় সে , তখন তোয়ার মনে হয় যেন খুব সুন্দর কোন স্বপ্ন দেখছে। কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে যায় তখন সে । রাদীব যখন চলে যায় তখন সব কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এই যেমন এখন লাগছে। আর যেন কিছুই ভালো লাগেনা , কোন কিছুতে মন বসেনা। মনটা বিচলিত হয়ে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে সে। ‘ কিন্তু রাদীব ওকে এতো প্রশ্রয় দিচ্ছে কেন? হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগে তোয়ার। কিন্তু জবাব খুঁজে পায়না তোয়া। ভাবনার কোন শেষ থাকেনা। তাই রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো এভাবে ভাাবনা চিন্তা করার মতো বোকামি থেকে নিজেকে আপাতত রেহাই দিয়ে গেটের ভিতর পা বাড়ায় তোয়া।

* * *
এরপর সময় গুলো যেন প্রায় উড়ে উড়ে চলে যায়। সারাদিন শাহানা , রুহী গোছগাছ করতে ব্যস্ত ছিল। তোয়া সবরকম সাহায্য করেছে তাদেরকে। শাহানা বেশ কিছু তরকারি রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিয়েছেন। তোয়া বারবার মানা করেছে , কিন্তু শাহানা শুনতে রাজি না। অগত্যা রান্নায় মামিকে সাহায্য করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে । মাছ , চিকেন , মাংস , সব্জি সব আইটেমই বানিয়েছেন তিনি। তারা মাত্র দুটি মানুষ। এতো খাবার কিভাবে খাবে? কিন্তু মামিকে কে বোঝায়? তোয়া নিশ্চিত মামারা ফিরে দেখবে অর্ধেক খাবারই রয়ে গেছে। ভাত আর রুটি বানানোর দায়িত্ব আবার বুয়া আসমার মাকে দিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং তোয়া শুধু খাবে আর পড়াশুনা করবে। আর কিছুই করতে হবে না তার।

সারাদিন এসব নিয়ে ব্যস্ত সময় কেটেছে। এখন মামাদের যাওয়ার সময় যত এগিয়ে আসছে তোয়ার মনটাও ততই খারাপ লাগছে। তোয়ার গোমড়া মুখ দেখে রুহি বললো ,

” আপু মন খারাপ করোনা , মাত্র তিনটা দিনইতো। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকলে ব্যস্ততায় দেখবে সময় কোনদিক দিয়ে কেটে গেছে টেরই পাবে না। ”

ওদের কথার মাঝে একটা ব্যাগ হাতে শাহানা ঘরে এলেন। রুহির কথা শুনে বললেন ,

” ভালো না লাগলে ছাদে চলে যাবি , পাশের বাসার উর্বীর কাছেও যেতে পারিস নয়তো ওকে ডেকে এনেও গল্প করতে পারবি। কি পারবিনা? ” চোখ নাচিয়ে শেষ কথাটা বললেন তিনি ।

” একদম ঠিক বলেছেন কাকি। ” বলতে বলতে ঘরের ভিতর এসে দাঁড়ায় উর্বী। ওরা তিনজনই একসঙ্গে ঘুরে তাকায় ওর দিকে। উর্বী তোয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আবার বলে , ” তোয়া আপু যদি সংকোচ করে নাও যায় আমি সকাল বিকাল ঠিক এসে হাজির হবো। আবার আমাদের বাসায়ও টেনে নিয়ে যাব। কি আপু তোমার আপত্তি নেই তো? ” বলেই তোয়ার দিকে স্বপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় সে।

তোয়া লাজুক হেসে বলে , ” কিযে বলনা , আপত্তির কি আছে? তুমি এলে বরং আমার আরও ভালো লাগবে। ”

উর্বী মিষ্টি হেসে শাহানার দিকে ফিরে বললো , ” তো কাকি সবকিছু গোছানো কমপ্লিট? ”

শাহানা ব্যাগের চেইন লাগিয়ে তাতে তালা লাগাচ্ছিলেন। তালা লাগিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ,
” হ্যাঁ সব কমপ্লিট। এখন কেবল রেডি হতে হবে। এইতো একটু পরেই রওয়ানা দেব। “কথাটা বলেই রুহীর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার বললেন , ” রুহী তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে। নয়তো তোর বাবা আবার যাওয়ার সময় অযথা অশান্তি করবে। ”

মামির কথা শুনে খিলখিল করে হেসে ওঠে তোয়া। হাসতে হাসতেই বলে , ” কি বল মামি! মামা করবে অশান্তি? মামা অশান্তি করতে পারে? ”

রুহী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচরাচ্ছিল। তোয়ার কথা শুনে ঝট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে উঠে সে , ” তুমি আব্বুকে চেননা তাই বলছ এই কথা। আব্বু খুব মজার মানুষ এটা যেমন সত্যি , তেমন একটু এদিক ওদিক হলে আব্বুর কিন্তু আরও একটা রুপ আছে।”

” রুহী , এখন এসব গল্প করার সময় না। জলদি রেডি হয়ে নে। ” রুহীর কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে কথাটা বলেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন শাহানা।

তোয়া আর উর্বী বসে কথা বলতে থাকে। এরমধ্যে রুহী রেডি হয়ে গেছে। সেই সময় তোয়ার নানি এসে হাজির হয় রুমে।

” কিরে তোদের কদ্দূর? দেরি হলে ট্রেন ধরতে পারবি? ট্রেন তো চলে যাবে। ”

রুহী বলল , ” আমরা রেডি দাদিমা। আর এখনো অনেক সময় আছে। ট্রেন মিস করার সম্ভাবনা নেই। ”

নানি উর্বীকে দেখে বললেন , ” তোমার এই কয়টা দিন আমার নানুভাইকে একটু সময় দেওয়া লাগবে।” নিজেকে ইশারায় দেখিয়ে আবারও বলেন , ” বুঝতেই পারতেছ এই বুড়ী মানুষ একটা জোয়ান মেয়েরে কতক্ষন আর সময় দিতে পারে? ”

তোয়া প্রতিবাদ করে বলে উঠে , ” নানু তুমি ভালো করেই জান তুমি থাকতে আমার আর কোন কিছুরই প্রয়োজন পরবেনা। ” নানিকে জড়িয়ে ধরে বলে , ” তাহলে এমন কথা কেন বললে? ”

নানি হেসে ওঠে। কিছু বলতে যাবে তখনই তোয়ার মামা রাকিবুল হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকেই তাড়া দিয়ে বলে উঠেন , ” সব রেডি? গাড়ি এসে গেছে , লাগেজ গুলো একে একে নামাতে হবে। ”

রাকিবুল কথা বলতে বলতেই একটা ব্যাগ হাতে তুলে নিলেন। ততক্ষনে রাদীব আর শাহীলও এসে পরেছে। তোয়া আর রাদীবের একে অপরের উপর চোখ পরতেই দুজনের মধ্যে একটা অচেনা অনুভূতি খেলে গেল। এই অনুভূতি সম্বন্ধে দুজনেরই কোন ধারণা নেই। কিন্তু একটা মিষ্টি মধুময় ভালোলাগায় নিমিষেই দুজনকেই আচ্ছন্ন করে ফেলে। রাদীব কয়েক সেকেন্ড স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তোয়ার দিকে। তোয়া অস্বস্তি বোধ করে রাদীবের তীব্র চাওনির সামনে। লজ্জিত দৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকায় সে। রাদীব পরিবেশ পরিস্থিতির দিকে খেয়াল হতেই নিজেকে সামলে নেয়। তারপর একটা ব্যাগ হাতে তুলে নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

রাকিবুলদের রওনা দেয়ার সময় রাদীবের মা , একতলার ভাড়াটিয়া দম্পতি ওরাও এসেছিল বিদায় জানাতে।ওরা চলে যাওয়ার পরে রাদীবের মা বাসায় যাওয়ার আগে তোয়াকে বললেন ,

” মন খারাপ করোনা , আমরা আছিতো। যখনি মনে হবে বাসায় চলে আসবে। নয়তো উর্বীকে ডাক দিও , ও চলে আসবে। ঠিক আছে? আর যেকোনো প্রবলেমে পরলে কোনরকম সংকোচ না করে নির্দ্বিধায় আমাদের জানাবে। কেমন? আচ্ছা এখন তাহলে বাসায় যাও , ” বলেই নরম হেসে আবারও বললেন , ” যাও। ”

তোয়া ঘাড় কাৎ করে সায় দিয়ে রাদীবের দিকে একপলক তাকায়। রাদীব একটু হেসে ইশারায় ওকে আস্বস্ত করে। তাই দেখে তোয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। একটা অদ্ভুত ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে বাসার ভিতর পা বাড়ায় সে।
#গল্পটা_পুরনো।
লেখা -মুনিরা জলী।
পব – ১০।

অবিরাম বৃষ্টি ঝরে চলেছে সেই মাঝরাত থেকেই। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরার শব্দটা মাথার মধ্যে অনবরত ছন্দোময় গানের মতো বেজে চলেছে। এমন মন কেমন করা অলস করে দেয়া বৃষ্টি তোয়ার ভিষণ পছন্দের। অন্য কোন সময় এমন একটা বৃষ্টি মুখর সকাল বেলায় সে বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে মটকা মেরে শুয়ে থাকতো। কারও সাধ্য নেই ওকে কাঁথার নিচে থেকে বের করে আনার। অথচ আজ কেউ নেই ওকে কাঁথার নিচে থেকে জোর করে টেনে তোলার। কিন্তু তোয়া আজ নিজেই উঠে সেই কখন থেকে বারান্দায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে অবিরাম ঝরতে থাকা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখছে। আজ আর সূর্য তার ভোরের প্রথম আলোর রুপোলী ঝলক পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার সূযোগ পায়নি। ভোর বেলা থেকেই আকাশ এমন মুখটা কালো করেই রেখেছে। সেই সাথে তোয়ার মুখটাও বেজার হয়ে আছে। কোথায় ও ভেবেছিল আজকের সকালটা স্বপ্নময় সুন্দর একটা সময় কাটাবে রাদীবের সঙ্গে। তাতো নয় , হঠাৎ এই বৃষ্টি তার সমস্ত আশার উপর জল ঢেলে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে যেন।
‘ ধুর আর কিছুই ভালো লাগছে না। পুরো সকালটাই মাটি হয়ে গেছে। না পড়ায় মন বসছে, না ঘুম হলো। ‘ নিজের মনেই স্বগোতক্তি করতে করতে ঘরের ভিতর চলে আসে তোয়া। বইটা হাতে নিয়ে বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুতেই ফোনটা বেজে উঠল। চমকে তাকায় সে মোবাইলটার দিকে। ‘ এতো ভোর বেলায় কে ফোন করে আবার? ‘ ভাবতে ভাবতে খাটের পাশে রাখা সাইড টেবিলের উপর থেকে হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। কল রিসিভ করে ফোনটা কানে ধরে বলল ,

” হ্যালো , আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছ?”

কণ্ঠস্বর শুনে এক মুহূতের জন্য থমকে যায় তোয়া। যদিও ফোনে কখনও কথা হয়নি তাদের , তবুও তার চিনতে একটুও ভুল হয়নি। রাদীবের কন্ঠস্বরে কি যেন একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। ভরাট , গাঢ় আর ভিষন মিষ্টি। আর কথাও বলে খুব সুন্দর করে , পরিস্কার , শুদ্ধ উচ্চারণে । যখন রাদীব কথা বলতে থাকে তোয়া মুগ্ধ হয়ে শোনে। রাদীবের উচ্চারণ করা প্রতিটা শব্দ একেবারে তোয়ার হৃদয়ের গভীরে গিয়ে স্পর্শ করে। এখন এই মুহূর্তে তোয়ার হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির তাল একেবারে বেতালে ছুটছে। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে জোরে একটা নিঃশ্বাস নেয় সে। নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠে ,

” আ- আপনি? আমার ফোন নাম্বার আপনি কোথায় পেলেন? ”

” বোকার মতো প্রশ্ন কর কেন?” প্রায় ধমকের সুরে বললো রাদীব।

তোয়া থতমত খেল। ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো, ” বোকার মতো কি বললাম? আজব তো! ”

” বোকার মতোই কথা বলেছ। কাকু মানে তোমার মামা আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়ে গেছে সেই কথা মনে আছে তো? ”

” হ্যাঁ মনে আছে। ” গম্ভীর স্বরে একইভাবে বললো তোয়া।

” তাহলে তিনিই আমাকে তোমার নাম্বারও দিয়ে গেছেন যাতে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি। মাথায় ঢুকেছে এবার? ”

তোয়া এবার লজ্জায় চুপ করে রইলো। ওকে চুপ থাকতে দেখে রাদীবই আবার বলে উঠে ,

” কি হলো? এখন আবার মেজাজটা হঠাৎ মিইয়ে গেল কেন? ” আমুদে গলায় আবারো বললো , ” ভালোই তো লাগছিল। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি লাজবন্তী তোয়া , লজ্জা পাওয়াই তোমার একমাত্র কাজ। ” বলেই হাসতে শুরু করে রাদীব।

তোয়ার সকাল থেকে এমনি মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আর এখন এই লোকটা মেজাজের পারদ আরও বাড়িয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে যেন । তোয়া এবার রেগে গিয়ে বললো ,

” আপনি কি সকাল সকাল এইসব আজেবাজে কথা বলার জন্য ফোন করেছেন? ”

রাদীব এবার গলা ছেড়ে হেসে উঠলো। তোয়া এর আগে কখনো রাদীবকে এভাবে হাসতে দেখেনি। রাদীবের হাসির শব্দটা মোবাইলের ওপাশ থেকে ভেসে ভেসে তোয়ার সমস্ত শরীরে সঞ্চারিত হতে থাকে। কানের কাছে রাদীবের হাসির ঝংকার তোয়ার হৃদয়ে উথাল পাথাল ঢেউ তুলে ওকে আপাদমস্তক অবশ করে ফেলছে যেন । তোয়া আবেশে চোখ বুজে ফেলে। একটা ঘোরের মধ্যে ওর মন ও মস্তিস্ক জুড়ে সুরের মূর্ছনার মতো অনবরত বাজতে থাকে। এভাবে কতগুলো মুহূর্ত কেটেছে জানা নেই কারও। এক সময় রাদীবের হাসি থেমে যায়। তখন সেই আবার বললো ,

” তোয়া? ”

তোয়া নিশ্চুপ হয়ে আছে। কোন জবাব না পেয়ে এবার একটু জোরেই ডেকে ওঠে রাদীব ,

” তোয়া। তুমি কি আছ? ”

এবার তোয়ার চেতনা ফিরে। সসংকোচে বলে সে ,
” হুম আছি তো , বলেন। ”

” তুমি দেখছি বড় অদ্ভুত একটা মেয়ে। এই দেখি লজ্জা পাও , এই দেখি রেগে যাচ্ছ , আবার মুহূর্তেই একেবারে কোথায় যেন হারিয়ে যাও। একই সাথে এত রকম মুড? এমনি কি কথায় বলে , মেয়েদের মন স্বয়ং বিধাতারও বোধগম্য নয়। ”

তোয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। ‘ সত্যিই তো , কি বলবে সে এখন? মানুষটির সামনে এলে ও আর নিজের মধ্যে থাকেনা। এমনই ডুবে যায় যে তখন , চার পাশের সবকিছুর থেকে কেমন অচেতন হয়ে যায়। এইযে আবারও আন্মনা হয়ে গেছে। ‘ এতক্ষণ শুয়ে কথা বলছিল। এবার উঠে বসল সে। কেমন মন খারাপ করা গলায় বললো ,

” আপনি তখন থেকে কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছেন। এম্নিতেই আমার মন খারাপ লাগছিল। আপনি সেটা আরও বাড়িয়ে দিতে যেন উঠে পড়ে লেগেছেন। ”

তোয়ার মন খারাপ শুনে আর এভাবে মনমরা হয়ে বলা কথা গুলো একেবারে রাদীবের বুকে গিয়ে লাগে। ‘ সত্যিই তো মেয়েটা এখানে এসেছে। অথচ তোয়ার নানি ছাড়া বাসায় এখন কেউ নেই। খালি বাসায় মন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এখন বৃষ্টির উপর সত্যিই রাগ লাগছে। অনেকটা বিরক্তিমাখা স্বরে বললো সে,

” সে জন্যই তো ফোন করেছিলাম। মরার বৃষ্টি আসার সময় আর পেলনা। আজই আসা লাগে?নইলে এতক্ষণে আমরা ফোনে নয় বরং বাইরে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতাম। ভাবলাম তুমি একা একা বোর হচ্ছো, তাই আসলে….. ” রাদীব একটু ইতস্তত করে। কি বলবে? বেশি বলে ফেলছে নাতো? তাই বললো , ” মানে কি বলবো ভুলে গেছি। ”

বলেই মোবাইলটা হাত দিয়ে চেপে ধরে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার নিশ্বাস ছেড়ে মোবাইলটা আবার কানে ধরে। আসলে রাদীব এরপর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ততক্ষণে তোয়া রাদীবের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে ওঠে। তোয়ার মুখে হাসি শুনে রাদীবের ঠোঁট জোড়া আপনা আপনি অনাবিল হাসিতে প্রসারিত হয়ে যায়। ‘ যাক মেয়েটির মুখে হাসি ফুটে উঠেছে তবে। ‘ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে।

তোয়া হাসতে হাসতেই বললো , ” এতো সুন্দর বৃষ্টি মুখর সকাল বেলা তাও আবার ছুটির দিন , দেখেন গিয়ে বেশির ভাগ মানুষ এখনো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। আর আপনি বলছেন মরার বৃষ্টি। সত্যিই আপনি অদ্ভূত! ” বলেই আবার হেসে ওঠে তোয়া।

” আচ্ছা এখন আমি অদ্ভুত? ” অভিযোগের সুরে বললো রাদীব।

” তাই তো। তা নয়তো কি? ”

” একেই বলে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। তোমার মন খারাপ শুনে বৃষ্টির উপর রাগ লাগছিল। বৃষ্টি না এলে তোমাকে এসময় একলা ঘরে বসে থাকতে হত? হতো না। ”

রাদীবের কথা শুনে যতটুকু মন খারাপ ছিল তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মন কানায় কানায় ভরে গেল। রাদীব ওকে নিয়ে এতো ভাবে? ওর মন ভালো থাকা খারাপ থাকা এসব কেয়ার করে সে, ভেবেই হঠাৎ তোয়ার হৃদয়ে ভালো লাগার ঢেউ আছড়ে পরছে। মনে মনে ভাবে তোয়া , ‘ এই ভালো লাগার মিষ্টি অনুভব কেবল আমার একার নয় , আমার বিশ্বাস আপনিও একই রকম অনুভব করছেন। ‘ কিন্তু মুুখে বললো সে ,

” আমার মন এখন একদম এত্তো বেশি ভালো হয়ে গেছে যে , আর কোন কিছুরই দরকার নেই। আর হাঁটতে তো যেকোনো দিন যাওয়া যায়। কাল ওয়েদার ভালো থাকলে কালকেই যাওয়া যাবে। তাই না? ”

তোয়ার কথা শুনে রাদীবের মনটাও ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কেমন ঘোর লাগা গলায় বলে উঠলো সে ,

” হুম তবে কাল যাব। একসাথে পাশাপাশি হাঁটব। ”

তোয়াও ফিসফিস করে একই ভাবে বললো , ” হুম। ”

* * *
তোয়ার ঘুম ভাঙতে ভাঙতে অনেক বেলা হয়ে যায়। তাও এতো বেলা পর্যন্ত তোয়াকে উঠতে না দেখে নানি এসে ডেকে তুলে তাকে। তখনও ঝুম বৃষ্টি ক্লান্তিহীন ভাবে ঝরে চলেছে। আসমার মা তখনও আসেনি। তোয়া চা বানায়। নানি নাতনি দু’জনে মিলে অনেকটা বেলা করে সকালের নাস্তা খেয়ে নেয়। বৃষ্টি একটু কমতে বুয়া আসে। তোয়া দুপুর নাগাদ মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করে কাটায়।

দুপুরের দিকে বৃষ্টি থামে। দুপুরের খাবারের পরে নানি ঘুমাতে গেলে তোয়া আবার একা হয়ে পরে। অনেক বেলা করে ঘুম দিয়ে উঠার কারণে তোয়ার এখন আর ঘুমাতে ইচ্ছে করেনা। বেশ কিছু সময় ফোনে কথা বলে কাটায়। বাসায় ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। মায়ের কাছে জানতে পারে ওর ভাই নাশীদ রওনা দিয়েছে। আজকের রাতেই এসে পৌছাবে। শুনে তোয়ার খুশি আর দেখে কে? খুশিতে ডগমগ হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে সে,

” তোমরা তাহলে সোমবার আসছ কনফার্ম। তাই তো? ”

“হ্যা। সোমবার আসছি। এতো লম্বা জার্নি করে আসবে ছেলেটা। দুদিন অন্তত রেস্ট নিতে হবে তো নাকি? মাত্র দুটো দিনই তো। ”

তোয়া মনে মনে একটু হিসেব করে নিয়ে বলে , ” হুম ঠিক বলেছ। তারমানে সোমবার আসছ , ঠিক আছে অপেক্ষা করলাম নাহয় আরও দুদিন।

নাহিদা হাসেন মেয়ের কথা শুনে , ” কেনরে? তোর কি ওখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না? ”

” তাই বলেছি নাকি? মামারা যাওয়ার পর একটু একটু খারাপ লাগছিল। কিন্তু… ” রাদীবের সাথে কথা বলার সময় গুলো মনে করে নিজের অজান্তেই লজ্জা পায় সে। নিঃশব্দে হেসে ওঠে। তোয়াকে নিরব থাকতে দেখে নাহিদা জিজ্ঞেস করে ওঠেন ,

” কিন্তু কি? কি ভাবছিস? ”

তোয়া চট্ করে বলে উঠে , ” কিছু না। আসলে পড়তে পড়তে সময় কিভাবে চলে যায় টেরই পাইনা। তাছাড়া নানুর সাথে কতদিন পরে দেখা হলো বলতো। কতো কথা জমে ছিল। এইতো আম্মু বেশ কেটে যাচ্ছে সময় গুলো। কোন সমস্যা হচ্ছেনা। ”

” যাক তোর ভালো লাগছে জেনে আমি নিশ্চিত হলাম। সোমবার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। ”

তোয়া এবার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো , ” সত্যি বলছি আম্মু আমার একদম তর সইছেনা। কতদিন পর ভাইয়াকে দেখব বলোতো। কিযে ভালো লাগছে! ”

মায়ের সাথে কথা শেষ করে মামা মামির সাথেও কিছুক্ষন কথা বলল তোয়া। এরপর কিচেনে গিয়ে এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে বারান্দায় এলো সে। বারান্দায় একটা সুন্দর দোলনা টাঙানো আছে। সেই দোলনায় বসে দোল খেতে থাকে সে। আর চা পান করতে করতে বাইরে অদূর-পানে আনমনে তাকিয়ে থাকে। গত কদিনে ঘটে যাওয়া সব কিছু এক এক করে ওর মানসপটে ভেসে ওঠতে থাকে। চা শেষ করে কাপটা এক পাশে মেঝেতে নামিয়ে রাখে সে। ছুটির দিন দুপুর বলে বাইরের রাস্তায় কোন মানুষের আনাগোনা চোখে পরেনা। ভোর থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ার পরে হালকা একটা মিষ্টি রোদের ছোঁয়ায় চারিদিকের প্রকৃতি ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার দেখাচ্ছে। এমন পরিবেশে মনটাও ঝলমলে ফ্রেশ হয়ে যায়। কিন্তু তোয়ার হৃদয় আজ উন্মনা , উতলা হয়ে আছে। কিছু যেন ভালো লাগছে না। প্রকৃতির এমন সুনসান নীরবতা তোয়াকে আরও আনমনা করে তোলে । সকালের রাদীবের সাথে সেই যে ফোনে কথা হয়েছিল এরপরে আার একটি বারের জন্য তার দেখা পায়নি। বেয়ারা অবচেতন মন এখন আবার তার ফোনের ও অপেক্ষা করছে। কিন্তু অকারণে কেন ফোন করবে? প্রশ্নটি যুক্তিসঙ্গত হলেও মন কি আর মানে? সকালের ফোনকলের কারণ ছিল। কিন্তু তারপরও অপেক্ষা কষ্টের জেনেও অবাধ্য মনটা কান খাড়া করে থাকে রাদীবের নাম্বার থেকে একটা ফোন কলের আশায়।

এভাবেই কতক্ষণ কেটে যায় জানা নেই তোয়ার। আসরেের আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেই ধ্যানমগ্নতা ভাঙে তার। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এবার উঠে দাঁড়ায় সে। নামাজ পড়ে নানির সাথে বসে কিছুটা সময় গল্প করে কাটায়। তারপরে ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন হেটে আসবে ভেবে উঠে পরে তোয়া। তখনই কলিং বেলটা বেজে ওঠে। তোয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে ওর মুখে তৎক্ষনাৎ হাসি ফুটে ওঠে।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here