গুমোট অনুভূতি পর্ব ৩৯

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_Extra

সায়ান কেবিনে ঢুকে ঘুমন্ত রুশির দিকে তাকিয়ে,আঁখিপল্লব হাল্কা কাঁপছে। কিছুক্ষণ পুর্বেই ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে! তারা বলেছেন তেমন গুরুতর কিছু হয়নি বিধায় আজকেই বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে তবে সাবধানে থাকতে হবে। যেহেতু ব্লিডিং হয়েছে তাই সাবধানে চলাফেরা করতে হবে আর প্রায় বেবি হওয়া পর্যন্ত রেস্টে থাকতে হবে।রুশির সামনে পরিক্ষা কিন্তু সায়ান ওকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায়না তাই অলরেডি ভেবে নিয়েছে রুশিকে বলবে এই সেমিস্টার ড্রপ দিতে। আর যাইহোক বেবির মুল্য বেশি আর এই বেবির কারণেই রুশির ওর জীবনে আসা নাহয় ও কোথায় খুজে পেতো রুশিকে?ওতো ভাবতেই পারছেনা রুশিকে ছাড়া থাকার কথা।

সায়ান রুশির কপালে হাল্কা ঠোঁট ছোয়ালো তারপর হাত চেপে ধরে বসলো হঠাৎ ওর মাথায় কিছু আসলো। ও ফোন বের করে বিভিন্ন এংগেলে ছবি তুলতে লাগলো, কখনো চোখে তাকিয়ে থেকে কখনো, কখনো হাতে হাল্কা ঠোঁট ছুইয়ে কখনো বা কপালে। যখন কেমেরার দিকে তাকিয়ে রুশির গালে কিস করার জন্য এগুচ্ছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে রুশি চোখ মেললো আর সায়ান আঁৎকে উঠে হাত থেকে ফোন ফেলে দিলো আর রুশির দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো, অপরদিকে রুশি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো

“কি করছিলেন আপনি?”

“ক্ কিছু না, হে হে আমিতো জাস্ট ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করেছিলাম। আ্ আর কিছু না!”

“আপনার ব্যাবহার কেমন যেনো সুবিধার ঠেকছে না, মনে হচ্ছে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন!”

“হোয়াট! তুমি আমাকে চোর বলছো?কোন এংগেলে আমাকে চোর মনে হয়?এতো হ্যান্ডসাম ছেলে কখনো চোর হয়?”

“আমি কিন্তু আপনাকে চোর বলিনি শুধু বলেছি চোরের মতো করছেন কিন্তু আপনিতো দেখছি স্বিকার করে নিচ্ছেন। ব্যাপারটা হলো না “ঠাকুর ঘরে কে?আমিতো কলা খাইনি!” আর আপনার অবস্থা দেখে বর্তমানে সব এংগেল থেকেই আপনাকে চোর মনে হচ্ছে। আর রইলো হ্যান্ডসাম হওয়ার বিষয়!মশাই আপনি নিজের একটু ওভার প্রশংসা করছেন না?আপনি হ্যান্ডসাম এটা কে বলেছে আপনাকে?”

“আমি তাহলে হ্যান্ডসাম নই?তুমি বলতে চাইছো আমি বাজে দেখতে?”

“নাহ তাওতো বলিনি! আপনি হ্যান্ডসাম না আবার বাজেও দেখতে না। ওই মোটামুটি কিছুটা কিউট দেখতে এর বেশিনা”

সায়ান রুশির মুখভঙ্গি দেখে হাসলো, তারপর কিছু একটা ভেবে বললো

“তাহলে তোমার কেমন ছেলে পছন্দ? সামওয়ান হু ইজ হ্যান্ডসাম অর কিউট”

“ইট ডিপেন্ডস আমি তাকে আমার লাইফে কিভাবে চাই। ধরুন যারা হ্যান্ডসাম দেখতে তাদের দেখে সবাই ফিদা হয়ে আর তাদের প্রতি এট্রাকশন কাজ করাও স্বাভাবিক। আর যারা কিউট দেখতে তাদের দেখলে আদর পায় হয়তো মায়াও যাগে!দেখলেই মনে হয় গাল টেনে ধরে বলি ‘অওওও সো কিউট’!”

রুশি হাত নিজের গাল টেনেই দেখালো যাতে সায়ানের হাসি পেলেও সামলে নিলো তারপর মৃদু স্বরে বললো

“ওহ আচ্ছা তার মানে আমাকে দেখলে তোমার আদর পায়?”

কথাটা শুনে রুশির কাশি উঠে গেলো, আমতা আমতা করে বললো

“সেটা আমি কখন বললাম?”

“একটু আগেই বললে আমি হ্যান্ডসাম না কিউট দেখতে, আর কিউট ছেলেদের দেখলে তোমার আদর পায়। এর মানে তো এটাই দাঁড়ালো যে আমাকে দেখলে তোমার আদর পায়”

কথাগুলো বলতে বলতে সায়ান রুশির দুপাশে হাত রেখে ওর দিকে অনেকটা ঝুকে গেলো। রুশির হার্টবিট বেড়ে গেলো ইনহিউমেন স্পিডে, ও কয়েকটা ঢোক গিলে বললো

“আপনি একটু সরে বসুন, আমার অস্থির লাগছে!”

সায়ান আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো

“কেনো অস্থিরতা কেনো কাজ করে তোমার? এখন আদর পাচ্ছে না?”

“নাহ, কারণ এই মুহুর্তে আপনাকে কিউট লাগছেনা”

“তাহলে কি হ্যান্ডসাম লাগছে যা দেখে তুমি এট্রাকটেড ফিল করছো?”

“আমি ক্ কবে বললাম সেটা?”

“ও তাহলে কাজ করছে না?কিন্তু আমিতো বড্ড এট্রাকটেড ফিল করছি!”

বলেই রুশির দিকে ঝুঁকে পড়লো আর রুশি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। অনুভব করলো কেউ ওর চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিচ্ছে,হঠাৎ করে গরম নিশ্বাস না পড়াতে রুশি চোখ খুললো আর দেখে যে সায়ান ওর পেটে দিকে তাকিয়ে আছে, রুশি ভ্রু কুচকে তাকালো, কি ভেবেছিলো আর কি হলো?ছিছিছি কি ভাবছিলি তুই রুশি আবার কিছু না হওয়াতে ডিজেপয়েন্টেডো ফিল করতেছিস?শেম অন ইউ!

“আর ফিলিং হট বেবি? তোমার মাম্মামের শরীরের তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে তোমার গরম লাগারই কথা”

বলেই রুশির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো আর রুশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। কি বলছে এই ছেলে?ও নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখলো নাহ তাপমাত্রাতো ঠিকই আছে! রুশি সন্দিহান দৃষ্টিতে বললো

“কই শরীর তো গরম নয়?”

“আমি কি তোমাকে বলেছি? আমি বেবির সাথে কথা বলেছিলাম।ব্যাপারটা এমন না?’ঠাকুর ঘরে কে?আমিতো কলা খাইনি!”

“আমার কথা আমাকে ফেরত দিচ্ছেন?”

“যদি ভাবো তাহলে তাই!আমিতো…”

সায়ান কিছু বলার আগেই কেবিনের দরজা খুলে গেলো আর সাহিল খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাহিল থতমত খেয়ে বললো

“স্যরি বস আমি বুঝতে পারিনি,আমি আসছি ইউ গাইজ কেরি অন”

রুশির যেনো নাক কান সব কাটা যাচ্ছিলো কিন্তু সায়ানকে সরানোর চেষ্টা করেও সরাতে পারছে না। কেমন ভাবলেশহীন ভাবে ওর দিকে ঝুঁকে আছে। লজ্জায় ও কোথাও লুকিয়ে যেতে চাইছে। সায়ান সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বললো

“সাহিল! আগামী একবছর তুমি ওভারটাইম করবে আর তিনমাসের বেতন কাটা হলো”

সাহিলের যেনো মাথায় হাত!কেনো যে এই সাইকো বসের রোমান্টিক মুমেন্ট ও স্পয়েল করতে গেলো? ও জানে বস বেতন কাটবে ঠিকই কিন্তু ওভারটাইম ঠিকই করাবে। ইশশ কি পোড়া কপাল আমার!

সাহিল যেতেই সায়ান রুশির দিকে তাকালো,তারপর বললো

“তো কি যেনো বলছিলাম আমি?

সায়ানের চেহারায় সে আগের মতো হাসি! অথচ মিনিট কয়েক পুর্বেও সেটাতে স্পষ্ট রাগ ছিলো। এই ছেলে দেখি গিরগিটির চেয়েও ফাস্ট রং বদলায়! রুশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_৩৯

আকাশটা বড্ড মেঘলা! গুটিগুটি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে পিচঢালা রাস্তা, মানুষজন দৌঁড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে। শীতকালে বৃষ্টি হওয়া অমাবস্যায় চাঁদ দেখা, কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির! সেই গুটিগুটি বৃষ্টির ফোঁটা ভিজিয়ে দিচ্ছে চন্দ্রিকার, চুল, দেহ এমনকি মনও।আকাশে থাকা কালো মেঘ বৃষ্টিরুপে জমিন ছুলেও ওর মন খারাপের কালো মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে নামছে না। হয়তো কোন ভারী বর্ষনের অপেক্ষায়!

এই মুহুর্তে নিজেকে নিঃস্ব ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে, এতিমদের জন্য তো আশ্রয় হিসেবে এতিমখানা রয়েছে কিন্তু ওর জন্য তাও নেই। নিজের হাতের ফোনটাও শাহেদের গাড়িতে ফেলে এসেছে তাড়াহুড়ায় তাই কাউকে কন্টাক্ট করতে পাচ্ছেনা। যদিও কন্টাক্ট করার কেউ নেইও শাহেদ ছাড়া! ও আনমনে হাঁটছে, একদম গন্তব্যহীন ভাবে। এই চলার না আছে শুরু না আছে শেষ তবুও ও চলছে অজানা পথে! চন্দ্রিকা আনমনে হাটলেও বেশ কিছুক্ষণ ধরে হর্নের তীব্র আওয়াজ ওর কানে আসছে তাই ভাবলেশহীন ভাবে সেদিকে তাকালো আর একটা কালো কালার গাড়ি দেখতে যা কিছুটা পরিচিত মনে হলো কিন্তু পাত্তা না দিয়ে আবার হাটা শুরু করলো!

কিছুক্ষণ বাদে খেয়াল করলো গাড়িটা ওর সাথে স্লোলি চলছে আর অনবরত হর্ন দিয়ে যাচ্ছে। ও থেমে গেলো আর সেদিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, গাড়ির সামনের কাঁচ নামাতেই একজন সুদর্শন ছেলেকে সানগ্লাস পরে বসে থাকতে দেখলো সিটে, তার দৃষ্টি সামনের দিকে যেনো ওর দিকে তাকালেই পান খসে চুন পড়ে যাবে।এটা দেখে ওর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো কিন্তু ঝগড়া করার মুডে ও নেই তাই আবারও হাঁটা ধরলো। এতে যেনো হর্নের আওয়াজ আরো বেড়ে গেলো, চন্দ্রিকা বিরক্তি নিয়ে পেসেঞ্জার সিটে গিয়ে বসলো। কারণ এই ছেলেকে হারে হারে চিনে যা একবার করতে চাইবে তা করেই ছাড়বে তাই ঝামেলা করে বিশেষ লাভ নেই। চন্দ্রিকার এসব ভাবনার মাঝেই সে ওর দিকে ঝুকে গেলো আর সিটবেল্ট বেধে দিলো। চন্দ্রিকা নিজের অবস্থান থেকে একটুও নড়লো না যেনো এমনকিছু হবে আগে থেকেই জানতো! চন্দ্রিকাকে স্বাভাবিকভাবে বসে থাকতে দেখে সে বাঁকা হাসলো তারপর বললো

“এখন আর আমাকে ভয় পাওনা দেখছি!”

“তোমাকে আমার ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই শাহেদ,মানুষ ভয় তখনি পায় যখন তার হারানোর কিছু থাকে!আমার হারানোর কিছুই অবশিষ্ট নেই তাই আমার ভয় পাওয়ারও কোন কারণ নেই, না তোমাকে না অন্যকাউকে”

“বাহ বেশ কথা বলা শিখেছো দেখছি!আমি তো জানতাম তোমাকে যা শিখিয়ে দেয়া হয় তাই শুধু বলতে পারো তুমি, নিজের থেকে তো তোমার বলার মতো কিছু থাকেই না”

“মানুষের একটা বটম লাইন আছে সেটা জানেন?যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ থাকে না বরং সামনের দিকেই এগুতে হয়। আমারও সামনে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই!”

“কেনো?তোমার সায়ান তোমাকে নিজের কাছে রাখেনি?ছুড়ে ফেলে দিয়েছে?অথচ তোমার মতো মেয়েকে এর থেকে বেশি আর কি করা যায়?সায়ানের লাইফে যে তুমি ফার্স্ট প্রায়োরিটি নও সেটা তো বুঝেই গেছো তবে আমি তোমার জীবনের সেকেন্ড অপশন হয়েই রইলাম! যেমন তোমার কললিস্টের মতো, সবার আগে কলটা সায়ানের কাছেই দিয়েছিলে তুমি!”

চন্দ্রিকা জবাব দিলো না হয়তো বলার মতো কিছু নেই তা শাহেদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তারপর বললো

“আর আমাকে দেখো! এতোকিছুর পরও তোমাকে একা ফেলে যেতে পারিনি, তিনবার গাড়ি স্টার্ট দিয়েও যাইনি। বরং এভেবে বসে ছিলাম যে যদি সায়ান তোমাকে কোন ব্যাবস্থা না করে দেয় তাহলে তুনি কোথায় যাবে?হোয়াট ফুল আই এম!”

বলেই স্টেয়ারিংয়ে বারি দিলো, কিন্তু চন্দ্রিকার কোন ভাবান্তর হলো না। ও সেদিকে তাকিয়েই রইলো। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললো

“প্রয়োজন আর প্রিয়জন পার্থক্য বুঝ? তুমি কারো প্রয়োজন মানে হচ্ছে লোহার মতো!ব্যাবহার শেষে ফেলে দেয় আর প্রিয়জন হচ্ছে স্বর্ণের মতো। মানুষ সেটাকে তুলে রাখে, রং চলে গেলে আবারও রং করায় বা সেভাবেই যত্ন করে রেখে দেয় কিন্তু কখনো ফেলে দেয়না। আমার আর ওই লোহার মাঝে বিশেষ পার্থক্য নেই, আমি সবার প্রয়োজনই ছিলাম আজীবন কিন্তু কারো প্রিয়জন হতে পারলাম না। হয়তো যোগ্যই না তাই!ভালোবাসা নামক বস্তুটা আমার কপালে নেই।আমার রুশির প্রতি খুব হিংসে হয়! ওতো আমার মতোই অনাথ কিন্তু ওকে কেউ প্রথমে একজন এডপ্ট করে নিয়েছে আর বাবার মতো ভালোবেসেছে। খান বাড়িতে আসার একজন মা পেয়েছে আর এখন সায়ানের মতো স্বামী! কিন্তু আমি কারো ভালোবাসাই পাইনি বরং সবার জীবনের ভ্যাম্প হয়ে আছি। আমার খারাপ দিকটা সবাই দেখেছে কিন্তু আমি কেনো খারাপ সেটা কেউ দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। মাঝেমাঝে মনে সুইসাইড করলেই হয়তো সব মিটে যাবে কিন্তু পারিনা। বাঁচার বড্ড লোভ আমার!সুইসাইড করতেও সাহসের প্রয়োজন হয় সেইটুকু সাহসও নেই আমার মাঝে। আম জাস্ট আ পুশওভার!”

চন্দ্রিকার গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো কিন্তু ও স্থির হয়ে বসে আছে! কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো

“কিন্তু এইসব কিছুতে আমার কোন দুঃখ ছিলো না যদি আমি আমার বেবিকে বাঁচাতে পারতাম কিন্তু এতোকিছু করার পরও আমি কেনো ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি বলতে পারো?সায়ান বলেছে আমি নারী হিসেবে কি করে রুশিকে একটা ছেলের রুমে পাঠালাম! কিন্তু আমাকেও যে একই ভাবে পাঠানো হয়েছে তার বেলা?আমি কি কাউকে বলতে পেরেছি?রুশি তো জানে যে ওর সন্তানের বাবা সায়ান, সায়ান ওকে বিয়েও করেছে কিন্তু আমি?আমিতো জানিই না ওইদিন ওই বদ্ধঘরে কে ছিলো!সেই শিকলে বেঁধে রাখা অবস্থার কাটানো রাত সম্পর্কে আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করেছে?নাহ করেনি।কারণ আমিতো কারো প্রিয়জন নই প্রয়োজন যাকে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়াতে অস্তিত্ব বিলিন করে দেয়ার চেষ্টায় আছে সবাই।”

শাহেদ চন্দ্রিকার দিকে তাকালো তারপর বললো

“তুমি নিজ থেকে এবর্শন করাও নি?”

“তোমার কি আমাকে এতোটাই জঘন্য মনে হয় যে মা হিসেবে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলবো?এবর্শন করার থাকলে তো প্রথম মাসেই করিয়ে ফেলতাম, দীর্ঘ চারটি মাস লুকিয়ে রাখতাম না সবার থেকে!যাইহোক আমাকে নিজের সাথে নিচ্ছো?আমাকে দিয়ে তোমার কোন কাজে আসবে না, এর চেয়ে ভালো দূরে থাক আমার থেকে”

“আমি কি করবো না করবো তার জ্ঞান তোমার থেকে নিবো না। চুপচাপ বসে থাকো আর একটা কথাও বলবে না। পারলে একটু ঘুমাও ভালোলাগবে”

“এতো কেয়ার করে মনে মিথ্যে আশা জাগাবেন না মি.শাহেদ। ছুড়ে ফেলে দিলে বড্ড কষ্ট পাবো! যদিও কেউ মানুষ ভাবে না আমায়!”

“সবকিছু নিয়ে এতো মাথা ঘামাও কেনো তুমি?চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো। ওকে…”

চন্দ্রিকা আর কথা বললো না, কথা বলার শক্তি আর নেই ওর। ধীরেধীরে কোনসময় ঘুমিয়ে পড়লো ওর জানা নেই।

______________________

রুশি আর সায়ান বাসায় ফিরে এসেছে,এমনভাবে এসেছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে ও হসপিটালে ছিলো।গাড়িতে থাকা সময় ছাড়া বাকি রাস্তা সায়ান রুশিকে কোলে করেই এনেছে। প্রেগন্যান্সির কারণে রুশির ওজন তো কম হয়নি কিন্তু তবুও সায়ান কোলে করেই আনবে। রুশি অনেকবার না করেই বিশেষ ফল পায়নি তাই হাল ছেড়ে দিলো,সোফায় বসার কিছুক্ষণ পরই রুশির বাবা ওকে দেখতে এলো। প্রায় পাঁচমাস পর বাবাকে দেখলো! রুশিতো খুশিতে আটখানা, বাবার সাথে গল্প জুড়ে দিলো আর সায়ান অসহায় দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে আছে। বাবাকে পেয়ে ওর ভুলেই গিয়েছে যে এখানে আরেকজন ব্যাক্তিও আছে যে ওর এটেনশন চাচ্ছে!

সায়ানের মন খারাপ হয়তো রুশির বাবা আন্দাজ করতে পেরেছে কিছুটা,তাই রুশিকে উপরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললো। রুশিও সায়ানের সাহায্যে উপরে গেলো আর ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলো। সায়ানও চেঞ্জ করে বসে রইলো, রুশি বেরুতেই ওর কাছে এসে মাথার পানি মুছে দিতে লাগলো তোয়ালে দিয়ে আর রুশি বলে উঠলো

“আরে আরে আমি করতে পারবো দিন না!”

“তোমাকে করতে হবে না, ডাক্তার কি বলেছে মনে নেই?সম্পুর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত আর বেবি হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ করা যাবে না। তাই আজ থেকে তোমার সব কাজ আমি করবো আর তুমি রেস্ট করবে!

“আর অফিস কে দেখবে?আপনার ভুত?”

“সবকিছুর জন্য এতো চিন্তা তোমার নিজের জন্যও তো করতে পারো তাইনা?আর অফিস ভুত চালাতে যাবে কেনো? অলরেডি সম্পুর্ণ অফিস আমার বাড়িতে শিফট হয়ে গেছে, এখন থেকে বেবির একবছর হওয়া পর্যন্ত আমি বাড়িতেই থাকবো”

“একবছর! আর ইউ মেড?লোকে কি বলবে আর এতোদিন গ্যাপ দিলে চাকরী থাকবে?”

“আমার চাকরী কে খাবে শুনি? যেখানে আমি সবার চাকরী খাই?আর আমাদের বেবির সাথে বেশি সময় কাটাতে চাই তোমার কোন সমস্যা?”

“নাহ!আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু মি.খান হঠাৎ এতো কেয়ার করার মানে কি?প্রেমে টেমে পড়ে গেলেন নাকি আমার?”

“স্যরি মিসেস খান!আমার বউ আছে তাই অন্যের প্রেমে পড়া বারণ আমার জন্য আর আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ!তার কেয়ার করবো নাতো কার কেয়ার করবো?”

“তা মনেপ্রাণে সেই বউটাকি চন্দ্রিকা?”

কথাটা শুনতেই সায়ানের মুখ কালো হয়ে গেলো, রুশির মুখ থেকে এমন কথা এই মুহুর্তে আশা করেনি যদিও বলাটা স্বাভাবিক। রুশি নিজেও বুঝতে পারলো ভুল জায়গার ভুল কথা বলে ফেলেছে কিন্তু সায়ানের মুখ থেকে তো ওর বের করতে হবে যে সে শুধু রুশিকে চায়। কিন্তু সায়ান তেমন কিছুই বললো না বরং তোয়ালে পাশে রেখে বললো

“টেক কেয়ার। আমি খাবার নিয়ে আসছি, খাট থেকে নামবে না”

সায়ান যেতেই রুশি ভেংচি দিলো,বিড়বিড় করে বললো

“হুহ ভাঙবে তবু মচকাবে না। আমিও দেখি কি করে নিজের মনের না বলে থাকতে পারে!আমাকে তো চিনেনা।

সায়ান নিচে এসে খাবার পাঠিয়ে দিলো উপরে আর রুশির বাবার সামনে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বললো

“আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই, জানিনা করা ঠিক হচ্ছে কিনা! তবে আমার জানা খুব জরুরী!রুশি আগুনে ভয় পায় কেনো?ও আগুন দেখলে এতোটা ডেস্পারেট হয়ে যায় কেনো?”

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here