গোধুলীর শেষ প্রহরে পর্ব -১৬

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ১৬
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

মুহু নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। ফুলবাবুর কথা ভেবে নিজেকে আয়নায় দেখতে মগ্ন সে। যেনো সে নিজেকে তার ফুলবাবুর চোখ দিয়ে দেখছে। এরকম নরম গোলাপি ঠোঁট, ছোট ছোট চোখের কালো কুচকুচে মনি, নেচারাল লালচে আভা মাখা ফর্সা গাল, মেদ বিহীন তন্বী শরীর, দেহের প্রতিটি বিভঙ্গ আবেদনময়ী। এই প্রথম, এই প্রথম বোধ হয় সে নিজেকে এতোটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। এসবের মধ্যেই মায়ের ডাকে হুস ফিরলো ওর। হঠাৎ এভাবে কেন ডাকছে ওর মা ওঁকে? কি কারণে? এভাবে রুঢ় ভাবে তো তার মা কখনোই বাড়িতে কথা বলে না। তবে আজ কি হলো? বুকের মধ্যে কোথাও যেনো একটা খচ করে কাটা বিধলো! তাহলে কি মা সব টা জানতে পারলো? খালামনির আজকের এখানে আসার রিজন টা তো জানা হয়নি। তাহলে কি খালামনিকে ফুলবাবু কিছু বলেছে? সে ভদ্র মেয়ের মতো নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো সবাই কেমন বিষন্ন চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সবার দৃষ্টিদূত যেনো এখন সে। বাবাও চলে এসেছেন অফিস থেকে। সবাই এভাবে তাকে উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছে কেন? এমন কি শিউলী আপাও হাতে খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হইতো রান্না করছিলো। খালামনি আর ফুলবাবু এভাবে মাথা নিচু করে কেন আছেন? সে হালকা ঠোঁট ফাঁক করে জিজ্ঞেস করলো,

‘ক-ক-কি হয়েছে? আমাকে এভাবে দেখছো কেন তো-তোমরা সবাই?’

প্রিতি চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলে, ‘এসব কি শুনছি মুহুলতা?’

‘মুহুলতা’ সাধারণত মা তাকে মুহুলতা বলেন না। আজকে এভাবে ডাকছে তার মানে গুরুতর কিছু হয়েছে। সে আবার ইতস্তত করেই বলে,

‘আমি কি করেছি মা?’

‘কি করিস নাই সেটাই বল?’

‘প্লিজ বুবু! কি হয়েছে খোলাসা করে বলবা?’

‘তোমার খালামনি কি বলছেন এসব? তুমি নাকি সারাফকে**’

বাবার বাকি কথা শুনলো না মুহু। দৌড়ে চলে গেলো ঘরে। অর্ধেক কথা শুনেই সে বুঝে গেছে সব টা। তার মানে ওর ধারণা সত্যিই হলো। এখন কি হবে? দেখে তো মনে হলো না ওরা কেউই মানবে বলে এই সম্পর্ক। তার উপর বুবুর এখনো বিয়ে হয়নি। সালমান হোসেন সহ প্রত্যেকে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কারোর বুঝতে আর বাকি রইলো না, সব সত্যি। প্রিতি হসপিটাল থেকে আসতেই সাহিরা মুহু আর সারাফের বিয়ের প্রস্তাব রাখে। এতে প্রিতির ঘোর আপত্তি। যেখানে উনার বোন কোনো দিন সুখী হয়নি সেখানে উনার মেয়ে কি করে সুখী থাকবে? জেনে শুনে তো আর মা হয়ে মেয়েকে এরকম ভাবে গভীরে সাগরের জলে ঠেলে দিতে পারেন না তিনি। সাহিরা যে কষ্ট পাচ্ছে সেই সেইম কষ্ট যদি মুহুও পাই তখন! এরপরে কি হয়েছে না হয়েছে সেসব কিছুই জানলো না মুহু। সাহিরা দম নিয়ে উঠে এসে দাঁড়িয়ে প্রিতির হাত ধরে বলে,

‘দেখো আপা সারাফ আর মুহু দুজন দুজনকে
পছন্দ করে। হতে পারে সারাফ আমার নিজের সন্তান নয়। কিন্তু খুব ভালো ছেলে। এ যুগে এমন ছেলে পাওয়া ভাড়! ওর এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন খুব ভালো। জার্মানিতে খুব ভালো একটা জব করছে এখন। আমাদের মুহু ওর সঙ্গে খুব ভালো থাকবে। তুমি প্লিজ আপত্তি করো না আর!’

সালমান হোসেন সাহিরার দিকে গম্ভীর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘দেখো সাহিরা, ওর এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন , জন্ম পরিচয় নিয়ে আমার কোনো অসুবিধা নেই। যেহেতু সারাফ তোমার কাছে থেকে মানুষ হয়েছে নিঃসন্দেহে সে ভালো ভাবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তোমার স্বামী মানবে তো এই বিয়ে?’

সারাফ এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন সে কিছু বলার জন্য উদ্যত হলো। সে খুবই ভদ্র আর সহবত নিয়ে বলে,

‘দেখুন আমি জানি বড়দের মাঝে আমার কথা বলা উচিত নয় তবুও আমার মনে হলো কিছু কথা না বললেই নয়। শাহরিয়ার সাইফ, উনি আমাদের বিয়েটা মানবে কি না জানা নেই। উনি না মানলেও আমার কিছু করার থাকবে না। কারণ আমি যখন একবার আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছি তখন তাকেই বিয়ে করবো। কারণ সংসার টা আমার আর আপনার মেয়ের হবে আংকেল। তাই আমি কাকে আমার জীবন সঙ্গিনী করবো সেটা সম্পুর্ন আমার ব্যাক্তিগত বিষয় বলেই আমি মনে করি। তাছাড়া উনার তো আমার বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আছে বলে আমার মনে হয় না। তাই আমি চাইবো আপনি উনার কথা ভাববেন না। আপনি চাইলে আমি খুব শীঘ্রই মুহুকে বিয়ে করবো।’

এরকম বিচক্ষণ আর স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড ছেলে তিনি কখনোই দেখেন নি। নিজের বিয়ের কথা কীভাবে সবার সামনে দাঁড়িয়ে কতটা সাবলীল ভাবে বলছে। যা হোক ছেলেটা কে তার অপছন্দ হয়নি। অপছন্দ হলেও তার এখানে কিছু করার থাকতো না। যেহেতু তার ছোট মেয়ে পছন্দ করেছে ছেলেটা কে সেহেতু মেনে নেওয়াই শ্রেয় হবে। তা না হলে অযথায় ঝামেলা বাড়বে। মেয়েদের সুখ ই তার সুখ।সন্তানের সুখই তো বাবা মায়ের পরম সুখ সব সময়। তিনি সারাফের দিকে তাকিয়ে শ্লেষ গলায় বলেন,

‘ঠিক আছে আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু আমাদের একটা শর্ত আছে!’

প্রিতি মুখ থমথমে করে আছেন। তিনি এখনো বিষয় টা মানতে পারছেন না। কুহুও চুপ করে আছে। ওর এখানে কিছুই বলার নেই। ছোট বোন টা যে এতোটা বড় হয়ে গেছে বুঝলোই না সে। এই তো সেদিন ওর হাত ধরে হাঁটা শিখলো। তাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না ওর ছোট্ট বোন টা। সাহিরা আর সারাফ দুজনেই করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সালমান হোসেন এর দিকে। কে জানে এখন কি শর্ত দেওয়া হবে। ভেবেই শুকনো ঢুক গিলে সারাফ। মুহু রানী তোমার জন্য যে আর কতটা বেহায়া হতে হবে কে জানে! সালমান হোসেন গলা পরিষ্কার করে বলেন,

‘আগে আমার বড় মেয়ের বিয়ে হবে তারপর তোমাদের বিয়ে দেবো। যতই হোক মুহু আমাদের ছোট মেয়ে। বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়া টা সমাজের চোখে দৃষ্টি কটু। তুমি এই শর্ত মানতে রাজি?’

সালমান হোসেনের কথা শুনে সারাফ আর আর সাহিরার মুখে হাসি ফুটলো।সারাফ ফট করে বলে, ‘আমি রাজি আংকেল!’

সারাফের কথায় সালমান হোসেন ঠোঁট চেপে হেসে প্রিতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ কি গো কুহুর মা! তুমি কি বলো?’

প্রিতির মুখ গম্ভীর! তিনি গাম্ভীর্য বজায় রেখেই বলেন,

‘আমি আর কি বলবো যেখানে সবাই রাজি। আমার কি আর কথার দাম আছে! বড় মেয়ের থেকে শুনো সে বিয়ে করতে রাজি হবে কিনা।’

সাহিরা ঠোঁট গোল করে লম্বা শ্বাস ছাড়লেন। যাক অবশেষে মানলো আপা। কিন্তু চিন্তা এখন শুধু একজন কে নিয়ে শাহরিয়ার সাইফ। যতকিছুই হোক না কেন তাকে ছাড়া তো আর সারাফের বিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।বাবার মায়ের কথা শুনে প্রতিবাদী কন্ঠে কুহু বলে,

‘বাবা এখানে বোনুর বিয়ের কথা হচ্ছে হোক।আমাকে কেন টানছো এর মধ্যে? আমি বিয়ে করছি না কিছুতেই না।’

বলে ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো ভেতরে। প্রিতির এখানে আর কি ই বা বলার আছে। যেখানে উনার স্বামী মেনে নিয়েছেন বিয়েটা। সাহিরা ইষৎ ইতস্তত নিয়েই একটা প্রস্তাব রাখলো ওঁদের কাছে,

‘দুলাভাই যদি কুহু আর মুহু দুই বোনের একই দিন বিয়ে টা হয় তাহলে কেমন হবে?’

‘তাহলে তো মন্দ হয় না। বড় মেয়ের জন্য সম্বন্ধ দেখেছি। ছেলেটা ভালো ঘরের। দুজনের সংসার ওঁদের। ছেলের বাবা নেই। কিন্তু বড় মেয়ে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না বিয়ের জন্য। সে নাকি এখন বিয়ে করবে না। তবুও দেখা যাক কি হয়। একই দিনে বিয়ে হলে আমার খরচ বাঁচবে।’

সালমান হোসেনের কথা শুনে এতক্ষণে সবার মুখে হাসি ফুটলো। শিউলী আপা তো হালকা লাফিয়ে বলে উঠলো, ‘বড় আফা আর ছোডু আফার বিয়ে একদিনেই। কতই না মজা হইবো হাই হাই!’

সবাই হেসে উঠলো একত্রে। শুধু প্রিতির মুখে হাসি নেই। তবুও নিশ্চুপ রইলেন। সাহিরা খুশি মনে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে বিদায় নিলেন। এদিকে কুহু, মুহু দুজনের একজন ও জানলো না বিয়ে সম্পর্কে কিছুই।

শাম্মীর বার বার সারাফ নামের ছেলেটার কথা মনে পরছে। এতোটা মিল কি করে হতে পারে একজন মানুষের সাথে। সুপ্রিয় নিজের মাকে আপসেট দেখে এগিয়ে এলো। তার মাকে কেমন উদাসীন আর বেপরোয়া লাগছে। কোনো দিন তো এমন দেখাইনি। আজ কে এমন কি হলো যে মা এমন করে বসে আছেন।
সাধারণত ওর মা হসপিটাল থেকে এসে ওর কাছে যায়। দেখা করে তারপর ফ্রেশ হয়ে নেন। কিন্তু আজ তার কাছেও যান নি ফ্রেশ হন নি। তাই ওর একটু খটকা লাগলো ব্যাপার টা। সুপ্রিয় সোফায় ওর মায়ের পাশে বসলো।আলতো করে মায়ের হাত ধরে মাকে শুধালো,

‘কি হয়েছে আম্মু? আজ ফিরে আমার সঙ্গে দেখা করলে না যে একবারও!’

টলটলে চোখে তাকালেন তিনি ছেলের দিকে। অশ্রু সজল চোখ টা তিনি আড়াল করতে পারবেন না ছেলের কাছে। ধরা পরবেই পরবে। তিনি আড়াল না করে নিজের মনের সুপ্ত কথা গুলো উগড়ে দিলেন,

‘তুমি জানো আজকে আমি একজন কে দেখেছি যার সঙ্গে আমি তার চেহেরার মিল খুঁজে পেয়েছি। সে হারিয়ে গেছিলো অনেক ছোট বেলায়। কিন্তু আজকে ওই ছেলেটা কে দেখেই আমার ভেতরে কেমন করে উঠেছে। মায়ের মন তো ভুল বলে না বলো। সেইম বার্থ সাইন একই পাশে, একই স্থানে, এতোটা মিল একজনের সাথে কিভাবে থাকতে পারে বলো তো?’

‘ওওও মা! দেখো এরকম অনেক জনেরই জন্মদাগ হতে পারে। তাই বলে সে আমার হারিয়ে যাওয়া বড় ভাই নয়। তুমিই তো বলেছিলে সে আর বেঁচে থাকতে পারে না।’

‘হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু আমি তো আশা ছাড়িনি। তুই তো জানিস আমি আজও তার অপেক্ষায় প্রহর গুনি। আমার মনে হয় এই বুঝি সে দৌড়ে আসবে, এসে বলবে, মা আমিই সেই তোমার হারিয়ে যাওয়া সন্তান!কিন্তু আফসোস সে আসে না।’

কান্নায় ভেঙে পরলেন শাম্মী। সুপ্রিয় দুই হাতে মাকে জড়িয়ে আগলে ধরলো৷ সে জানে তার মা ভাইয়ের কথা উঠলেই এমন পা’গ’লা’মি করেন। মাকে শান্ত করতে সে বলে,

‘মা প্লিজ শান্ত হও! সে যদি বেঁচেও থাকে নিশ্চয়ই তোমার কথা মনে থাকবে না। এখন আমি আছি তোমার কাছে। আমাকে নিয়ে ভাববে তুমি। তুমি প্লিজ শান্ত হও মা। নইলে অসুস্থ হয়ে পরবা!’

সুপ্রিয় মাকে শান্ত করার জন্য অনেক কিছু বলছে। শাম্মীর যখনই মনে পরে তার প্রথম সন্তানের কথা তখনই তিনি এমন পা’গ’লের মতো প্রলাপ বকেন। সুপ্রিয় জানে এখন তার মা ঘুমিয়ে পরবে প্রলাপ বকতে বকতে। সে দুই হাতে মায়ের চোখ মুছে দিলো। তার মা সময় মতো ঠিক ও হয়ে যাবে আবার। সে তার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের কথা অনেক শুনেছে ওই অব্দি তার মায়ের কাছে। সে ওর দুই বছরের বড় ছিলো। ও যদি থাকতো তাহলে ওর একটা বড় ভাই থাকতো ওর মাথায় হাত রাখার জন্য। বাবার মতো আগলে রাখতো তাকে। তার বাবা বেঁচে থাকলে হইতো আরও সুন্দর হতো তাদের জীবন টা। ভেবেই দীর্ঘশ্বাস বেরোলো তার ভেতর থেকে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মানুষ কি আদোও ফিরে আসে। সে চাই তার মায়ের ইচ্ছে টা পুরন হোক। সত্যিই একদিন তার হারিয়ে যাওয়া বড় ভাই ফিরে আসুক। ওঁদের কে চমকে দিয়ে বলুক আমি এসেছি ভাই, আমি এসেছি মা! বড় বড় হওয়ার সাথে সাথে সে প্রায় রোজ দেখেছে তার আমাকে গুমরে গুমরে কাঁদতে। সে সন্তান হয়ে মায়ের এই কষ্ট মানতে পারে না।


কুহুকে সত্যিই ভালোবাসে শৈবাল। আজকাল কোনো কিছুতেই ওর মন বসে না। দম বন্ধ লাগে, খাবার গলা দিয়ে নামতে চাই না। ভীষণ অনীহা আর অবসাদ ঘিরে রয়েছে ওর মন টাকে। এতোটা ভালোবাসলো প্রথমবার কাউকে। কিন্তু কোনো দাম ই পেলো না ওর ভালোবাসা। কেন দাম পেলো না ওর ভালোবাসা? প্রশ্ন জাগতেই কি রকম একটা দম বন্ধ হওয়া, দলা পাকানো কান্নারা এসে ওর গলার কাছ টাই আটকে থাকে। মনে মনে ও ভাবতে থাকে,

‘যেখানে আমার সকাল হতো অন্যন্য মেয়ের মুখের ছবি দেখে সেখানে আমার সকাল কাটছে কুহুলতার ছবিটি দেখে। যার কথা ভেবে আমার নিঃশ্বাস থেমে যায়, নিস্তব্ধতা বেড়ে যায়, যার সুন্দর কন্ঠের কথার ধাচে পুরেছে আমার মন সে আমার কথা একবারও কেন ভাবলো না? এটাই কি তবে ভালোবাসার প্রথম ধাপ। দহনক্রীয়া,পীড়নপূর্ণ ভালোবাসা! যার সীমাবদ্ধতা শুধুই আমাতেই রয়েছে। এই জীবন রেখে আর লাভ কি তাহলে যদি তাকে না পাই?’

সাহিরা সবে মাত্র এসেছেন বাড়িতে। সোফায় আনমনা হয়ে শৈবাল কে বসে থাকতে দেখে উনার খটকা লাগলো। সারাফ ও শৈবালের এমন চেহেরা দেখে বিষ্মিত। এরকম তো কখনোই লাগে না ভাই কে। সারাফ শৈবাল কে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই শৈবাল সাহিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আমার একটা মেয়েকে খুব পছন্দ! আর একটা মেয়েকে দেখতে যাওয়ার জন্য একজন মা’কে অর্থাৎ একজন মহিলা মানুষ বা গুরুজনের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি গিয়ে মেয়েটাকে দেখে আসতেন তাহলে খুশি হতাম!’

খুশিতে সাহিরার চোখে জল এসে গেছে। দীর্ঘ বারো বছরের ও বেশি শৈবাল উনার সাথে এতোটা নরম গলায় কথা বলেনি। আজকে যখন উনার সাথে কথা বলেছে শৈবাল তখন উনার মন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছে। আজ যখন সে কথা বলে নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করেছে তখন অবশ্যই সেই ইচ্ছে তিনি রাখবেন। প্রান দিয়ে রাখবেন। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে শৈবালের দিকে তাকালেন,

‘ কি বললে বাবা? আমি দেখতে যাবো সেই মেয়েকে আমি দেখতে যাবো?’

‘হ্যাঁ আপনি যাবেন না তো কে যাবে? আপনি ছাড়া কি আর কোনো মুরুব্বি আছে?’

সারাফ ভীষণ খুশি হয়ে শৈবাল কে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তাহলে তো ভারী মজা হবে। আমরা দুই ভাই এক সাথে বিয়ের পিড়িতে বসবো। কি বলিস ভাই?’

শৈবাল অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘কিহ তোমার বিয়ে?’

‘হ্যাঁ! আমরা মেয়ের বাড়ি গেছিলাম আর এখন সেখান থেকেই আসছি। কিন্তু তোর কথা
শুনে তো মন টা দ্বিগুন খুশি হয়ে গেলো!’

শৈবাল ঠোঁট উলটে অভিমানী গলায় বলে,

‘তুমি একজন মেয়েকে পছন্দ করলে আর আমাকে বললে না পর্যন্ত!’

‘আমারও অভিমান হয়েছে! আমি বুঝতে পারছিলাম তুই প্রেমে পরেছিস। কিন্তু আমাকে বলিস নি। তাই আমিও আমার ব্যাপার টা লুকিয়ে গেছি। সিম্পল! তা ভাই তোর পছন্দের মানুষের নাম টা কি?’

শৈবাল লজ্জা পেলো বোধহয় একটু। সে মাথা চুলকে বলে, ‘ আমাদের ভার্সিটির নতুন শিক্ষিকা। ওর নাম ইকরা কুহুলতা!’

সারাফের শৈবালের কথাটি কর্ণকুহরে পৌছতেই ভীষণ ভাবে হোচট খেলো। কাশি উঠে গেলো। ইকরা কুহুলতা তো তার ই হবু বউয়ের বড় বোনের নাম। শেষে কিনা দুই ভাই একই বাড়ির জামাই হবে? সে অবাক হয়ে জানতে চাইলো,

‘কোন ইকরা কুহুলতা ভাই?’

শৈবাল আর দাঁড়াইনি। হাতে থাকা মোবাইলের ছবিটি সারাফের হাতে দিয়ে লজ্জা পেয়ে চলে গেলো ঘরে। এদিকে সারাফের মাথায় হাত ছবি দেখে।

সাহিরা ওরা দুই ভাই কথা বলছিলো বিধায় চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শৈবাল যখন মেয়ের নাম টা নিলো তখন তিনি থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন। তিনি সারাফের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে ছবিটি দেখতেই আরও বিস্মিত হলেন। শৈবাল তাদের কুহুকে পছন্দ করে। এদিকে বড় ভাইকে দিয়ে তার ছোট ভাগনি মুহুর বিয়ের পাকা কথা বলে এলেন আর অন্যদিকে ছোট ছেলে কিনা তারই বড় ভাগনিকে নিজের জন্য পছন্দ করেছে। এখন তিনি কি করবেন? তাছাড়া কুহুর বিয়ের কথা নিয়ে এখন যদি সাহিরা যান তবে যে সারাফ আর মুহুর ঠিক হওয়া বিয়েটাই ভেঙে যাবে? নিঃসন্দেহে কুহু শৈবাল কে রিজেক্ট করবে। কারণ কুহু শৈবালের বড়! মহা মসিবতে পরলেন তো তিনি?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here