গোধুলীর শেষ প্রহরে পর্ব -১৪+১৫

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ১৪ এবং ১৫
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

সারাফ গাড়ি চালাচ্ছে আনমনে। মনে হাজার টা প্রশ্ন উঁকি দিলেও নিশ্চুপ সে। এক্সাক্টলি কোথায় যেতে চাইছেন সাহিরা মা ওর ধারণা নেই। আজকে ড্রাইভার কাকাও নেই। তাই ওঁকেই ড্রাইভ করতে হচ্ছে। কিছুক্ষন আগে একটা শপে নেমে সাহিরা কিছু কেনাকাটা করেছেন। সারাফ তখনও নামে নি গাড়ি থেকে। সাহিরা কেনাকাটা শেষ করেই আসতেই আবার চলতে শুরু করেছে ওঁরা। সারাফ যেনো বুঝতে না পারে সেজন্য অন্য রাস্তা বলেছেন সাহিরা। মুহুদের বাড়িতে যাওয়ার আরেকটা রাস্তাও আছে। সারাফ কে চমকে দিতে চাইছেন তিনি। এদিকে অজান্তেই সারাফের মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। মুহুর কথা ভাবলেই ভেতর থেকে অদ্ভুত ভাবে শিহরিত হচ্ছে সে ক্ষনে ক্ষনে। মেয়েটা মন মস্তিষ্ক জুড়ে এমন ভাবে গেথে গেছে যে চাইলেও সরাতে পারছে না। সাহিরা মা তো এরপরে তাকে আর মুহুর বিষয়ে নিয়ে কিছুই বলেনি। এতেই যেনো সারাফের অনুচিন্তন টা বেশি বেড়েছে। হঠাৎ সাহিরা মা চেচিয়ে উঠলেন,

‘সাবধানে সারাফ!’

সারাফ মুহুর ভাবনায় এতোটাই তলিয়ে ছিলো যে সামনের কিছুই এই মুহুর্তে তার চোখে পরে নি। সামনেই একজন মহিলা হেটে যাচ্ছে রাস্তার এক সাইড দিয়ে। সাহিরা মায়ের কথায় সম্বিত ফিরে পেতেই সারাফ গাড়ির স্টিয়ারিং টা জোরে ঘুরিয়ে দিলো ডান দিকে। ঘটনার আকষ্মিকতায় সারাফ ঘাবড়ে গেছে ভীষণ। হঠাৎ নিজের এতো অসাবধানতায় একজন মহিলার এক সাইডে লেগে গেলো ভাবতেই একরাশ খারাপ লাগারা ভর করলো ওর মনে। গাড়ি থামিয়ে হড়বড় করে গাড়ি থেকে নেমে আসলো সে এক্সিডেন্ট কৃত ব্যাক্তির কাছে। মহিলা টি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতে চাইলেন। কিন্তু সফল হলেন না। মনে হচ্ছে পায়ে লেগেছে। এর মধ্যেই সাহিরা নেমে এলেন গাড়ি থেকে। সাহিরা পেছন থেকে দেখলেন মহিলার গায়ে হসপিটালের সাদা এপ্রোন জড়ানো। ঘাড় ঘুরিয়ে ভালো করে মহিলার মুখ টি দেখে সাহিরা দু কদম পিছিয়ে গেলেন। এতো দিন পর মানুষ টাকে দেখবে তিনি আশাও করেন। তিনি অপ্রসন্ন ভাবে ব্যাগ থেকে মাস্ক বের করে পরে নিলেন। যতটা সম্ভব আড়ালে থাকা যায় তিনি নিজেকে আড়াল করলেন।

সারাফ লক্ষ্য করলো মাঝ বয়সি মহিলাটির গায়ে হসপিটালের এপ্রোন জড়ানো। ডক্টর হবেন হইতো তিনি। পরে যাওয়ার ফলে সাদা এপ্রোনে ধুলো লেগেছে তার। সারাফের বুকের ভেতর টা কেমন তরাস করে উঠলো মহিলা টিকে দেখে। সে দ্রুততার সাথে গিয়ে মহিলাটিকে তুলে ধরলো। এরি মধ্যে ভীর জমে গেছে সেখানে। একজন বলে উঠলেন,

‘আরে ভাই সাবধানে গাড়ি চালাতে পারেন না আপনারা? এখনি তো চাপা দিয়ে দিচ্ছিলেন উনাকে!’

আরও কেউ কিছু বলার আগেই মহিলা টি বললেন, ‘আপনারা যান আমি ঠিক আছি। ভুল টা আসলে আমার। আমিই অসাবধানে হাটছিলাম। আপনারা দয়া করে ভীর কমান। বাকিটা আমি বুঝে নিচ্ছি।’

সবাই বেশ বিরক্ত হলো মনে হয়। তবে কেউ আর কোনো কথা না বলে চলে গেলো সেখান থেকে।কেউ কেউ বিরবিরও করলো যাওয়ার আগে।

সারাফ চিন্তিত ও অনুতপ্ত হয়ে বলে,

‘আপনার কোথাও লাগে নি তো? ক্ষমা করবেন আমি ইচ্ছে করে করিনি! চলুন আপনাকে এক্ষুনি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।’

শাম্মী হসপিটাল যাচ্ছিলেন। হসপিটাল উনার বাড়ি থেকে বেশি দুরত্বে নয়। তাই তিনি হেটে হেটেই যাওয়া আসা করেন। তবে তিনি এখন হসপিটালে যাওয়ার আগে সামনের একটা ফার্মেসী তে যাচ্ছিলেন। কিছুক্ষন আগেই প্রিতি উনাকে জানিয়েছেন যে জরুরি একটা ওষুধের প্রয়োজন! তিনি যেহেতু যাচ্ছেন ই হসপিটাল সেহেতু আসার সময় যেনো ওষুধ টা নিয়ে আসেন। যে ওষুধ টা এখন উনার প্রয়োজন তা এখন হসপিটালে নেই। তাই প্রিতির কথায় সামনের ফার্মেসি থেকে তিনি ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অসাবধানতায় এরকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলেন তিনি। যদিও তিনি তেমন ব্যথা পাননি।নিজেই ছিটকে সরে গেছিলেন গাড়ি দেখতে পেয়েই। সারাফ গিয়ে শাম্মীকে তুলতেই হাসার চেষ্টা করেন তিনি।গায়ের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে তিনি অনুদ্ধত গলায় বলেন,

‘ইটস ওকে। দোষ আমারও আছে বাবা।’

কথা শেষ করেই তিনি ভালো ভাবে তাকালেন সারাফের দিকে। আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলেন তিনি সারাফের। এক মুহুর্তের জন্য উনার অভিব্যক্তি বদলে গেলো সারাফের জন্মদাগ দেখতেই। চোখ টলটলে জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো উনার। সারাফের বাম ভ্রু যুগলের উপর জন্ম দাগে উনার চোখ আটকে গেছে। এই জন্মদাগ তো তারও ছিলো। সেইম স্থানে, সেইম বার্থ সাইন। উনি মুখে হাত দিয়ে দুই কদম এগিয়ে এসে সারাফের চিবুক ছুয়ে দিলেন। সারাফ আচমকা এরকম স্পর্শে কেঁপে উঠলো। এই স্পর্শ টাই যেনো ও মাতৃত্বের ছোঁয়া পেলো। শাম্মী সারাফের দু চোখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ কি নাম তোমার বাবা? কোথায় থাকো তুমি? কি পরিচয় তোমার? তোমার বাবার নাম কি?’

পর পর এমন প্রশ্নের সম্মুখে হয়ে সারাফ অবাক হয়ে গেছে বৈকি। মহিলা টি হঠাৎ ওঁকে এরকম প্রশ্ন কেন করছে? সে পেছনে ফিরে দেখলো সাহিরা মাকে কেমন অন্য রকম লাগছে। কেমন অদ্ভুত! মুখে মাস্ক পরেছেন কেন তিনি? চাহনি অগোছালো। যেনো কোনো গুপ্তচর ধরা পরেছে যার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তার কাছে। একটি বার সাহিরা মা এগিয়ে কেন এলেন না এই মহিলার কাছে?প্রশ্ন জাগলো ওর মনে। উলটে মুখে মাস্ক পরেছেন তিনি। যেনো মনে হচ্ছে নিজেকে আড়াল করতে চাইছেন। ধুর এসব কি ভাবছে সে। সারাফ নিজের মাথা থেকে এসব কথা ঝেড়ে ফেলে। তারপর মহিলা টিকে উদ্যেশ্য করে স্বরে নিষ্প্রভতা টেনে আবারও বলে,

‘আপনার কি সত্যিই কোথাও লেগেছে? বলুন আমাকে। আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি সামনের হসপিটালে আমার গাড়ি করে।’

শাম্মীর ধ্যান ফিরলো। তিনি সরে গেলেন সারাফের থেকে। মনে মনে ভাবলেন, ‘এতো দিন পর সে কি করে হতে পারে? এরকম তো অনেকেরই জন্মদাগ থাকতে পারে। পুরনো স্মৃতিতে ঘা পড়াই হঠাৎ আবেগের বসে অদ্ভুত বিহেভিয়ার করে ফেলেছেন তিনি এই অপরিচিত ছেলেটির কাছে। তিনি থড়বড় করে বলেন,

‘না না আমার লাগে নি। আ-আ-আমি ঠিক আছি! আমি এই সামনের হসপিটালেই চাকরি করি। গিয়ে না হয় একবার চেক-আপ করিয়ে নিবো।’

কথা শেষ হতেই শাম্মী চলে যাচ্ছিলেন কিন্তু মনের খচখচানিটা দূর করতেই তিনি আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘তোমার নাম টা বাবা?’

‘আমার নাম শাহরিয়ার সারাফ আন্টি!’

‘ওহ আচ্ছা, আচ্ছা!’

বলেই শাম্মী উল্টো দিকে চলে এলেন। সারাফ জাষ্ট হা হয়ে গেলো মহিলা টির এরকম উইয়ার্ড বিহেভিয়ারে। সে আর কিছু না ভেবে গাড়িতে বসে পরলো। ভাগ্যিস বড় কিছু হয়নি। ওর তো কখনোই এরকম টা হয় না। জার্মানিতে তো ও নিজেই ড্রাইভ করে। কই কখনো তো এরকম অসাবধান হয়ে চলে নি সে। মুহু মেয়েটার জন্য ওর সাথে এরকম টা হচ্ছে। নিজেকে গোছাতে সক্ষম হচ্ছে না সে। জার্মানিতে কম প্রপোজাল সে পাইনি কিন্তু কখনো কাউকেই মনে ধরে নি ওর। অনেকে অন্য ধর্মের ও ছিলো যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেও ওঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো।

এবার সারাফ গাড়ি চালানোই মনোযোগী হলো। অন্য কোনো কিছুই ভাবলো না সে। সাহিরা আগেই গাড়িতে উঠে বসেছেন। তবে এরপর থেকে সাহিরা আর একটাও কথা বলেননি। এটাও বেশ ভাবালো সারাফ কে। এমন অদ্ভুত কেন লাগছে সব টা? অন্য কোনো গোলকধাঁধা নেই তো এর মধ্যে? প্রশ্নরা মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে জট বাধালেও সে চুপচাপ গাড়ি চালানোই মনোযোগ দিলো।

মুহু সোফায় হাতে চিপসের প্যাকেট সহ অর্ধশোয়া হয়ে আছে। কলিং বেল বাজতেই সে শিউলী আপা কে বললো দরজা টা খুলে দিতে। শিউলি আপা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজার সামনে সাহিরা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সে বলে,

‘আরে ছোডো খালা যে। আহেন ভিতরে আহেন।’

সারাফ ভাবতেও পারে নি সাহিরা মুহুদের বাড়িতে আসবেন। আজ অন্য রাস্তা ধরে এসেছেন বিধায় সারাফ বুঝতে পারেনি প্রথমে। তার কাছে এখনো পরিষ্কার না কেন, ঠিক কি কারনে সাহিরা মা এখানে এসেছেন? শিউলি আপার কথা শুনে কুহু ভেতর থেকে আসতে আসতে বললো,

‘শিউলি আপা কে এসেছে গো?’

‘বড় আফা আফনের ছোডো খালা আইছে।’

মুহুর বুকের ভেতর দুরুম দুরুম করে আওয়াজ হচ্ছে। হার্টবিট হঠাৎ করেই ফার্স্ট হলো কেন ওর খালামনি এসেছে শুনেই? সেও কি এসেছে নাকি? সে সোজা হয়ে বসে এগিয়ে এলো। মুহুর আগেই কুহু জোরে জোরে পা ফেলে গিয়ে সাহিরা কে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘কেমন আছো খালামনি?’

‘ভালো আছি আম্মু? তুমি কেমন আছো? মুহু কই?’

বলতে বলতেই সাহিরা ভেতরে এলেন। মুহুকে জড়োসড়ো হয়ে চিপস হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি ওর চিবুক নেড়ে আদর করলেন। পিছনে পিছনে সারাফ ও ঢুকলো। ওর চোখ অন্য কিছু খুজতে ব্যস্ত। কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির মুখ দেখতেই ওর মুখ টা ঝলমল করে উঠলো।

মুহু যখন সারাফ কে দেখলো ওর পুরো পৃথিবী টা এক নিমিষে বদলে গেলো। পেটের মধ্যে যেনো হাজার হাজার রঙীন প্রজাপতি পাখনা মেলে রঙ ছড়াচ্ছে। কালো শার্ট আর হোয়াইট কালার প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সারাফ। এই মুহুর্তে মুহু কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনো তার হাতে চিপসের প্যাকেট। মুহু চিপসের প্যাকেট রেখে খালা মনির সঙ্গে কথা বললো। কথায় কথায় তিনি জানতে পারলেন প্রিতি হসপিটালে। তাদের সন্ধ্যা অব্দি থাকতে হবে এখানে।
খালার সঙ্গে খুশ মেজাজে গল্প করতে ব্যস্ত কুহু। সারাফের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে সে মুহুকে বলে,

‘এই মুহু উনাকে ঘরে নিয়ে যাহ তো। উনি ফ্রেশ হতে চাচ্ছেন। আমি চা করে আনছি।’

মেহমান আসলে সেই চা, কফি করে। শিউলি আপা রান্না ঘরে কাজ করতে ব্যস্ত। ওর রান্নার হাত বেশ ভালো। কুহুর সেজন্য ওর রান্না নিয়ে কোনো রকম অভিযোগ নেই। মা না থাকলে শিউলি আপায় যে রান্না করেন। সারাফ ঠোঁট চেপে হেসে দিলো মুহুর দিকে তাকিয়ে আছে। সাহিরার নজর এড়ালো কোনো কিছুই। যাক অবশেষে ছেলেটার মুখে হাসি দেখা গেলো।

মুহু ভেতরে ওর ঘরে নিয়ে গেলো সারাফ কে। সারাফের ফ্রেশ হওয়া টা বাহানা মনে হলো মুহুর কাছে। তবুও যখন দেখলো সারাফ ফ্রেশ হতে গেলো তখন সে তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়ে রইলো। ফ্রেশ হয়ে এসে সারাফ এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে মুহুর হাত থাকা তোয়ালে নিলো। মুহু চলে আসতে নিলে সারাফ বাধা দিলো।

‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মুহু। কিন্তু তুমি দেখছি এখনো ছোট বাচ্চাদের মতো চিপস খাও!’

সারাফের ব্যাঙ্গাত্মক কথা বুঝতে অসুবিধা হলো না মুহুর। সে বলে উঠলো,

‘আর লজ্জা দিও না তো ফুলবাবু। আর চিপস তো যে কেউ খেতে পারে। শুধু কি বাচ্চারাই খাই নাকি?’

এই কথার উত্তর দিলো না সারাফ। সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে নিলো সে। দেয়ালে কুহু আর মুহুর ছবি টানানো। যেটা তে মুহুকে দারুন লাগছে। একদম বাচ্চাদের মতো। কুহু বেশ সুন্দরী। নিঃসন্দেহে মুহুর থেকে বেশি সুন্দরী কিন্তু মুহুর থেকে কম সুন্দরী লাগলো ওর কাছে কুহুকে। এটা কি এই জন্য যে মুহুর প্রতি তার ভালো লাগা উপলব্ধি হয়েছে। নাকি সে সত্যিই ভালোবাসে মুহুকে সেকারনে অন্য কাউকে ওর চোখে সুন্দরী লাগছে না। সে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বলে,

‘বাহ! খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছো তো তোমার ঘর টা।’

‘তুমি দেখছি আমার সব কিছুই পছন্দ করো।কি করে বলো তো?

‘আর তুমি জানো আমার ঘরের যা হাল এসব দেখে আমি নিজেই ফাস্টু খেয়ে যায়?’

কথা শেষ করেই সারাফ হাসলো। এখন তার কারণে অকারণে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠছে। অশান্ত মন শান্ত হয়েছে। অতীব অপেক্ষায় থাকার পর মানুষ যখন নিজের জিনিস টা হাতে পাই তখন যেমন আনন্দিত হয় ঠিক সেরকম সেও আনন্দিত। এটাকেই কি প্রেমে পড়ার লক্ষ্যন? ভালোবাসার মানুষ কে দেখা মাত্রই অশান্ত মন কেমন শান্ত হয়ে গেছে। মনের মধ্যে আলাদা একটা প্রশান্তি লাজ করছে।

মুহু আনমনে বলে, ‘আচ্ছা আমি আস্তে আস্তে ঠিক করে দিবো একদিন গিয়ে। তা এতো দূর কি আমার ঘরের প্রশংসা করতে এসেছো ফুলবাবু নাকি? নাকি অন্য কিছু?’

‘সেটা তো তুমিও জানো আমি কি জন্য এসেছি।’

‘এতো আকর্ষণ ভালো না ফুলবাবু। আমি যদি না থাকি তখন কি করবা তুমি?

‘আমি তুমি ছাড়া ভাবতে চাইছি না। তুমি আসো আমার কাছে একটু বসো তো। একটু ভালো করে দেখি তোমাকে!’

‘পাশে ওভাবে বসবো কি করে বাড়িতে সবাই আছে তো।’

‘কোলে বসতে বলিনি। পাশে তো বসতে বলেছি। পাশে তো বসতেই পারো।’

প্রশঙ্গ বদলাতে মুহু বলে,

আ-আ-আগে বলো কি খাবে? চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস। বুবু নিশ্চয়ই এতক্ষণে করেও ফেলেছে এসব!’

‘তোমাকে খাবো।’

সারা ঘরে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যে। সর্বাঙ্গে অদ্ভুত শিহরণ খেলা করলো তার। হার্ট বিট আরও বেগতিক ভাবে ফার্স্ট হয়েছে। স্টেথোস্কোপ দিয়ে মাপলে নিশ্চিত সব চেয়ে ফার্স্ট দেখাবে ওর হার্টবিট। সে আস্তে আস্তে বলে,

‘ছিহ তুমি খুব দুষ্টু ফুলবাবু! তুমি বসো তো আমি আসছি।’

‘আরে দাঁড়াও তো!’

“আবার কি হলো? বাইরে বুবু আছে, খালামনি আছে।’

মুহুর কথায় পাত্তা দিলো না সারাফ! সে মুহুর কাছে ঘেসে ফিসফিস করে বলে,

‘আরেকটা কথা, তোমার সব কিছুই আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। তোমার সরলতা, তোমার আমার হুটহাট কাছে আসা, তোমার সব কিছুই আমাকে আকর্ষন করে। তোমার প্রতি এটা আমার ভালো লাগা নাকি ভালোবাসা জানা নেই আমার। তবে আমি অনুভুতি কখনোই হারাতে চাই না। এই অনুভূতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছি আমি। বিশেষ করে তোমার ফুলবাবু ডাক টা, এই ডাকে আমি বার বার ম’র’তে রাজি, বার বার বিমোহিত হয়েছি চুম্বকের মতো। পুল মি টু ইউ লাইক আ’ ম্যাগনেট মুহু!’

সারাফ অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন মুহুর দিকে। তারপর ‘আসছি’বলে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। মুহু পাথরের মতো জমে গেছে। সারাফের প্রতি টি কথায় ওর মন কে অস্থির করে তুলেছে। শিহরিত করেছে অন্য অনুভূতি তে।

সেই আগুন্তক ব্যাক্তিটি একজন কে ফোন করলো। অপর পাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই সে বলে,

‘তোমাদের আর দরকার পরবে না আমার। শৈবাল কে আমি নিজেই হাতিয়ার করতে পারবো। তোমাদের পাওনা তোমরা পেয়ে যাবে।’

মেয়েটা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এতো দিনে কম চেষ্টা চালাই নি তারা। কিন্তু শৈবাল অবিচল, অবিচ্ছেদ্য। না ওঁদের কে দেখেছে, না ওদেরকে পাত্তা দিয়েছে। মেয়েটি বলে,

‘ওকে স্যার। আপনি যা বলবেন।’

ব্যাক্তি টি ‘ওকে’ বলেই কল কেটে দিলো।আর বিরবির করে আক্রোশের সহিত বলে উঠলো,

‘আমি নিস্তব্ধ হয়েছি তোর জন্য শৈবাল। তোর উচিত হয়নি আমার প্রান কে আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া। তোর কারনে সে এখন আমাকে বিশ্বাস করে না। তোর কারণে তার মনে হয়েছে অন্য কোনো পুরুষ মানুষ ভালো হতে পারে না। তোর করা প্রতিটি মেয়ের সাথে অন্যায় আমার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে শাহরিয়ার শৈবাল। আগ্নেয়গিরির মতো প্রচন্ড গর্জনে ফেটে পরবার জন্য তৈরি হচ্ছি। বুকের ভেতর আগ্নেয়গিরির লাভা টগবগ করে ফুটছে ঘৃণা আর বিদ্বেষের অসহ্য উত্তাপে। সেই উত্তাপে তোকে জ্বালাতে আমিই যথেষ্ট শৈবাল! তৈরি থাক তুই।’

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here