গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে পর্ব -১৮+১৯+২০+২১+২২

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৮

কপালে পড়ে থাকা ঘন চুলের ফাঁকে একটা ছোট লম্বা দাগে হাত বুলিয়ে তার হাতে থাকা ফাইলের দিকে একমনে চেয়ে রয়েছে নির্জন। তার হলুদ ফর্সা চেহারায় হালকা গাঢ় দাগটা সর্বদা চুলে নিচে ঢাকা থাকে। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফাইলটা ঠেলে দিয়ে চেয়ারে ঠেস দিয়ে নির্জন বলল,
“অনেক ভাবলাম। মাথায় তেমন কিছুই আসছে না। যা আসছে সব কনফিউশানের ভেতরে। রাগিনী কেন দুটো টিকিট কাটবে? তাও নিজের নামে? আই উইকনেসের কথা অনুযায়ী রাগিনী একা ট্রেনে আসছিল। তাও ‘ছ’ কোচের আশেপাশে। তাহলে ‘গ’ কোচে কেন আরেকটা টিকিট কাটলো? এক্ষেত্রে দেখতে গেলে রাগিনীকেই ভিক্টিম মনে হচ্ছে। কারণ কোনো চালাক ক্রি’মিনাল নিজের নামে টিকিট কেটে ফাঁসতে চাইবে না। হতে পারে রাগিনীকেই উল্টো ফাঁসানো হচ্ছে? কিন্তু রাগিনীকে কেন ফাঁসানো হবে? এটা কোনো শত্রুতার খেলা নয়। এটা আ’তঙ্ক ছড়ানোর খেলা! আবার অন্যদিকে দেখতে গেলে এটাও হতে পারে যে রাগিনী আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে ভুল বোঝানোর চিন্তা করছে। আই ডোন্ট নো, এর মধ্যে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল! দুটোরই পসিবিলিটি আছে। আই রিয়েলি ডোন্ট নো। এই প্রথম কোনো কেসের ঘটনা আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।”

“স্যার, সবে আপনার মাথা কাজ করা বন্ধ করল? আমার জানামতে আপনি যেদিন রাগিনী তাজরীনকে দেখেছিলেন সেদিনই মস্তিষ্কের কাজ থেমে যাওয়ার কথা! যাক, তাও যে এতোদিন পর হলেও মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নয়ত আপনাকে রোবটই ভেবে ফেলতাম।”

গভীর ভাবনায় মত্ত নির্জনের কানে মেহরাজের বলা কথাগুলো পৌঁছালেও বুঝতে পারল না। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিছু বললে?”

মেহরাজ মনে মনে খুশি হলো। সে খুব মুক ফস্কে কথা বলতে ভালোবাসে। মুখে কোনো ব্রেক ট্রেক নেই বোধহয়। এটা তার কোনো জন্মেই ছিল না। ফলে অদ্ভুত সব কথাগুলো বলার সাথেই তার উপর দিয়ে ছোটখাটো ঝড় বর্ষিত হয়। মেহরাজ মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না স্যার! কিছু না। বলছিলাম যে আপনার হাতে কী হয়েছে স্যার? এমন লাল দেখাচ্ছে কেন?”

হাতের দিকে তাকায় নির্জন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আজকাল কারোর চিন্তায় পড়ে তার ভালো চাইতে নেই মেহরাজ। ফলাফল আমার মতো হতে পারে।”

মেহরাজ কিছুটা বুঝতে পারলো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসিটা আঁটকে বলল,
“স্যার আপনার কি মনে হয় না? আপনি যাকে পরাজিত করতে চাইছেন সে নিজেই আপনাকে ঘায়েল করে উল্টো পরাজিত করে দিচ্ছে?”

চোখজোড়া সরু হয়ে আসে নির্জনের। ঘাড় কাঁত করে জিজ্ঞেস করে,
“মানে?”

“অফিসার নির্জন আহমেদের সাথে আমি অনেকদিন কাজ করেছি। সে এমন কখনোই ছিল না স্যার। তার চোখে আমি কখনো কারোর প্রতি ব্যাকুলতা দেখতে পাইনি। সেই চোখে কখনো কোনো নারীর জন্য অস্থিরতার চিহ্ন ছিল না।”

নির্জন তখন স্তব্ধ। হয়তবা মেহরাজের বলা কথাগুলোই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। মেহরাজ আবারও বলে,
“কখনো দেখিনি, আপনি যাকে দৃঢ় সন্দেহ করছেন তাকেই রক্ষা করে নিজে আঘা’ত পেতে। সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল না স্যার?”

থম মেরে বসে রইল নির্জন। চোখ জুড়ে রয়েছে বিস্ময়। নিজের প্রতি হয়তবা নিজেই অবাক। পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
“অযথা কথার বলার সময় নেই মেহরাজ। লেট ইট গো! যেই টপিকটার কোনোরকম লজিক নেই সেটা নিয়ে এখানে কথা হবে না। তুমি এক কাজ করো! চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্টেশনের সব সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করো। আই ওয়ান্ট দিস!”

মেহরাজের উত্তর শুনতে পেলো না এবার নির্জন। দৃষ্টিটা তার দিকে নিয়ে যেতেই তার হাসি হাসি মুখটা নির্জনের চোখে পড়ল। মেহরাজের চোখ নির্জনের দিকে পড়তেই নির্জন ভ্রু উঁচিয়ে তার হাসির কারণ জানতে চাইলে মেহরাজ আরেক দফা মুচকি হেঁসে বলল,
“স্যার, আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? আমার সামনে লজ্জা না পেলেও চলবে স্যার। আমি তো আপনার…”

কথাটুকু অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। নির্জন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মেহরাজের গলা শুঁকিয়ে এলো। আর অন্যকোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দরজার দিকে ছুট লাগালো। যত তাড়াতাড়ি পালানো যায় ততই ভালো। মেহরাজের কাছে নির্জন আহমেদ স্বয়ং একটা বো’ম! যেটা যেকোনো সময় ফে’টে যায়। তাই তার উপরে ফেটে যাওয়ার আগে কেটে পড়াই উত্তম।

মেহরাজ যাওয়ার পরপরই চোখ বুঁজে ধপ করে বসে পড়ল নির্জন। চোখে রাজ্যের ঘুম। সারারাত ঘুমোতে পারেনি। দুচোখের পাতা এক হয়নি। বিরবির করে বলে,
“এখন না ঘুমোতে পারলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাব। আই নিড টু স্লিপ!”

চোখ মেলে তাকায় নির্জন। ইতিমধ্যে ঘুমের অভাবে লাল হয়েছে চোখ। চোখ উপর ঘষে উঠে দাঁড়ায় সে। হাতে তার লং কালো কোট নিয়ে ঘাড়ের উপর তুলতেই কোটের পকেট থেকে পড়ে যায় একটা কাগজ। একটু ঝুঁকে কাগজটা তুলে ভাবতে থাকে এটা আসলে কীসের কাগজ? স্মরণে আসে না তার। কাগজের ভাঁজ খুলতেই বেরিয়ে আসে এক মানবীর স্কেচ। তৎক্ষনাৎ নির্জনের চোখমুখের রঙটাই যেন পরিবর্তন হয়ে যায়। ঝলকে ওঠে তার নেত্র। নেত্রপল্লবে দৃশ্যমান হতে থাকে বাস্তব নারীটির মুখশ্রী। সেই দৃঢ় দৃষ্টির কথা মনে পড়লেই গলা শুঁকিয়ে আসে নির্জনের। ঢক গিলে দেয় সে। না চাইতেও বলে ফেলে,
“যুদ্ধ ময়দানে যদি অ’স্ত্রের বদলে সেই ধারালো এবং দৃঢ় দৃষ্টি থাকে তবে যে কেউ পরাজিত হতে বাধ্য। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।”

নির্জন দ্রুত গুটিয়ে নেয় সেই কাগজ। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। অতঃপর শক্ত কন্ঠে বলে,
“কিন্তু আমিও দেখতে চাই তুমি কতক্ষণ আমাকে পরাস্ত করতে পারো। আমি পরাস্ত হয়েই জিতে যেতে চাই এবার।”

তখন রাত ঘনিয়ে এসেছে। দিনশেষে ঘনিয়ে এসেছে কালো মেঘ এবং তার মাঝখানে একটা চিকন চাঁদ। অমাবস্যার পরের রাত আজ। চাঁদকে বেশিই চিকন দেখা যাচ্ছে। বাহিরের বাতাসে নড়ছে গাছের পাতা গুলো। শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝি পোকার দৈনন্দিনের কন্ঠ। রাশেদ সাহেব বাড়ি ফিরেছেন। খাবার টেবিলে খেতে বসে রাগিনীর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু মেয়েটা আজ এখনো নিচে নামলো না। রাগিনীর জানা রয়েছে রাশেদ সাহেব নিয়ম করে রাত নয়টার দিকেই খেতে বসেন। আর রাগিনী বাড়িতে থাকলে তাকে নিয়েই বসেন খেতে। আজ নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। তবুও রাগিনী আসছে না। সৈয়দ এবার রান্নাঘর থেকে এসে জুসের একটা জগ রেখে দিল। আর বলল,
“স্যার, রাগিনী মাকে ডেকে দিই?”

“আর পাঁচ মিনিট যাক। হয়তবা কোনো কাজে ব্যস্ত আছে। তখন না এলে ডেকে দিও।”

“ঠিক আছে।”

কথাটুকু বলেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল সৈয়দ। মুখে নেই কোনো কথা। তবে তার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রাশেদ সাহেব গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
“আরো কিছু বলতে চাও সৈয়দ? এনি প্রবলেম?”

“একটা কথা বলার ছিল স্যার।”

“হ্যাঁ বলো।”

সৈয়দ উশখুশ করতে থাকলো। যেন বলতে চেয়েও তা বলতে পারছে না। কোনো অস্বস্তি তার উপর ভর করেছে। রাশেদ সাহেব এসব খুব সহজেই ধরতে পারেন। সৈয়দকে আশ্বস্ত করে বলেন,
“কোনো সমস্যা হলে সংকোচবোধ করতে নেই সৈয়দ।”

“বিষয়টা আমার সমস্যার না স্যার। আসলে কথা হইতেছে, আজকে আবার এখানে ওই পাগলটা আসছিল।”

এবার টনক নড়ে রাশেদ সাহেবের। গাম্ভীর্যের সাথেই সৈয়দের দিকে তাকান এবং জিজ্ঞেস করেন,
“মানে? কোন পাগল?”

“ওইতো! কোহিনূর না কি যেন নাম। রাগিনীর সাথে লুকিয়ে দেখা করতে এসেছিল। রাগিনী আমাদের বিষয়টা জানায় নি। কিন্তু আমি দেখে ফেলেছিলাম।”

“রাগিনী জানায় নি?”

সৈয়দ মাথায় ঝাঁকান। এবার রাশেদ সাহেবের চোখেমুখে দেখা যায় চিন্তার ছাপ। সৈয়দ একটু কেশে সংকোচবোধ করেই বলে,
“ছোটমুখে হয়ত বড় কথা হয়ে যায় স্যার। কিন্তু রাগিনীকে তো ছোট থেকে আমিও দেখে আসছি। আমার মেয়ের মতোই মনে করি। সেখান থেকেই বলতেছি রাগিনী হয়ত ওই পাগলটার উপর একটু বেশিই মনোযোগ দিয়ে ফেলতেছে। আর এই বয়সটা ভালো না। আর একটা সামান্য পাগলের জন্য এতো চিন্তাভাবনা আমার চোখে ঠিক লাগল না।”

রাশেদ সাহেব মাথা দুলিয়ে সায় দিয়ে বলেন,
“আমি বুঝতে পারছি। হয়ত রাগিনী তাকে অতিরিক্তই মনোযোগ দিচ্ছে এই ভেবে যে সে তার প্রথম পেশেন্ট এবং সে ভাবে কোহিনূরকে তার যেকোনোভাবেই ঠিক করে তুলতে হবে! হয়ত এজন্যই তার এতো চিন্তা। তুমি যাও জগে পানি নেই। পানি নিয়ে এসো।”

সৈয়দ মাথায় নুইয়ে চলে গেল রান্নাঘরে হাতে জগ নিয়ে। রাশেদ সাহেবের মস্তিষ্কে ঝেঁকে বসল সৈয়দের বলা কথাগুলো। নিজেকে শান্তনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো সৈয়দকে বললেন ঠিকই তবে মাথা থেকে চিন্তা গেল না। হঠাৎ করেই সিঁড়ির কাছ থেকে রাগিনীর কন্ঠস্বর পাওয়ায় চোখ তুলে তাকালেন রাশেদ সাহেব। রাগিনী কোলে ছোট্ট রিওকে নিয়ে নামছে। বেশ আদুরে ভঙ্গিতে বলছে,
“তুমি তো দেখছি বেশ দুষ্টু রিও! আজ সারাদিন কিন্তু দুষ্টুমি করেছো।”

রিও যেন রাগিনীর কথা বুঝে মিউ করে ডেকে ওঠে। রাশেদ সাহেবের বুঝতে বাকি থাকে না আজ ছোট্ট বিড়াল ছানাকে নিয়েই রাগিনীর ব্যস্ত দিন কেটেছে। উনি মনে মনে খুশি হন। মেয়েটা সারাদিন একা বাড়িতে থাকে। বিড়াল ছানা থাকায় সময় কাটানো সুবিধা হবে। রাগিনী রিওকে সোফার উপর ছেড়ে দিয়ে খাবার টেবিলের সামনে রাশেদ সাহেবের সামনের চেয়ারে বসে নম্র সুরে বলে উঠল,
“বাবা, অনেকক্ষণ ধরে ওয়েট করছিলে না? আসলে রিও কে খাওয়াতে গিয়ে লেট হয়ে গিয়েছে।”

“সমস্যা নেই। আমিও কেবলই এসে বসেছি।”

রাগিনী সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে রাশেদ সাহেবকে আগে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে খেতে আরম্ভ করে। রাশেদ সাহেবও একবার খাবার মুখে নিয়ে বলেন,
“একটা কথা জানার ছিল তোমার থেকে। কাল তুমি অসুস্থ ছিলে তাই আর কথা বলা হয়নি। হঠাৎ করে তোমার জ্বর এলো আর কোহিনূরের আ’ঘাত লাগলো কী করে? তুমি কি কোনো বিষয়ে ভয় পেয়েছিলে?”

রাগিনীর খাওয়া বন্ধ হলো। গতকালকের ঘটনা মনে পড়তেই চোখে ভেসে উঠল গো’লাগু’লির দৃশ্য। রাশেদ সাহেব লক্ষ্য করলেন রাগিনীর হাত কাঁপছে। রাগিনী নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে,
“গতকাল একটু গ্রামের দিকে গিয়েছিলাম। ছোটখাটো এক্সিডেন্ট ছিল। তেমন কিছুই না।”

“ছোটখাটো এক্সিডেন্ট? তোমার হাত কাঁপছে! আমি তোমার বাবা হওয়ার সাথে সাথে একজন সাইকোলজিস্ট। আমি বুঝি কার মনে কী চলে। কি হয়েছিল গতকাল?”

“বাবা তেমন কিছুই না। গাছের ডাল লেগে উনার কাঁধে আ’ঘাত পায় আর তুমি তো জানো যে আমি র’ক্ত দেখতে পারি না। সেকারণেই প্যানিক এট্যা’ক করে।”

বলেই মাথা নিচু করে জোরে জোরে খাওয়া শুরু করে রাগিনী। সে কখনোই চায় না তার বাবা তার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ুক। কোনোরকম হার্টে কোনো গুরুতর সমস্যা হক। তাই তো এতো মিথ্যে বলা। রাশেদ সাহেব আর কিছু বলেন না রাগিনীর অস্থির হওয়া দেখে। নিজেও খেতে শুরু করেন।

খাওয়া তখন শেষদিকে। রাগিনী উঠে যেতে লাগে। রাশেদ সাহেব ডেকে শান্ত গলায় বলেন,
“আরো একটা কথা ছিল রাগিনী! তুমি যেহেতু আমার মেয়ে তাই এই বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলা উচিত। তাই সোজাসুজি বলছি কোহিনূর বা ওর সম্পর্কে এতো স্ট্রেস বা চিন্তা নেওয়ার দরকার নেই। তোমার হাতে আর দেড় মাসের মতো সময় আছে। তারপর আবার চট্টগ্রাম যেতে হবে। আশা করছি তোমাকে আমি কোহিনূরের সুস্থতার দায়িত্ব দিয়ে কোনো ভুল করিনি।”

রাগিনী বুঝে উঠতে পারল না তার বাবা হঠাৎ করে এমন কথা কেন বলল। শুধু বুঝল তার বাবা অনেক কিছুই ভেবে নিয়েছে। তবে তা জানতে চেয়ে আর কথা বাড়াল না সে। মাথা দুলিয়ে বলল,
“জি বাবা।”

ঘরে এসে দরজা লাগালো রাগিনী। মাথায় একদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে বাবার বলা কথাগুলো। অন্যদিকে কোহিনূরের কিছু অদ্ভুত ব্যবহার যা রাগিনীর চোখে লেগেছে। রাশেদ সাহেবের মুখে এমন ধরনের কথা শুনে অভ্যস্ত নয় রাগিনী। তাই তার অস্বস্তি লাগছে। আর কোহিনূর আজ যেভাবে গাড়ির দিকটা সামলে নিল তাতে রাগিনী সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে। আর তার রাগটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। যেন সেই মানুষকে চিনতোই না রাগিনী। আর কোহিনূরের গাড়ির দরজা খোলার ব্যাপারটাও রাগিনীর চোখে পড়েছে। যেন সে গাড়ির দরজা খুলতে মেলতে বেশ অভ্যস্ত। খুব সহজেই এক টানে গাড়ির দরজা খোলার দৃশ্য রাগিনীর মস্তিষ্ক থেকে বের হচ্ছে না। মাথায় আসছে আজেবাজে চিন্তা। মাথায় হাত রেখে চুপ থাকে কিছুক্ষণ রাগিনী। সে কি বিশ্বাস হারাচ্ছে তবে? মানুষটার প্রতি থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে নিতে মন চায় না একদম। কেন মানুষটা তার বিশ্বাস ভাঙবে? একদমই ভাঙতে পারে না।

তবুও অনেক ভেবে বালিশের নিচ থেকে নিজের ফোনটা বের করে রাগিনী। ফোন অন করে তার কললিস্টে গিয়ে একটা নম্বর ডায়াল করে কল করে ফোনটা কানে ধরে সে। ঘড়ির দিকে তাকায় অতঃপর। ঘড়িতে দশটা বাজতে চলেছে। ফোনটা ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই রাগিনী তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
“হ্যালো! আমি রাগিনী তাজরীন বলছি।”

ওপর পাশ থেকে বিনয়ের সাথে একটা মেয়েলি সুর ভেসে আসে,
“ইয়েস ম্যাম, আমরা কীভাবে আপনাকে হেল্প করতে পারি?”

“হসপিটালের এক পেশেন্ট। যার দায়িত্বে আমি নিজে রয়েছি। কোহিনূর! টাইটেল আমি জানি না। উনার সমস্ত ডিটেইলস আমার চাই। উনাকে কে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তার ফোন নম্বর বা তারও কোনো ডিটেইলস হলে ভালো হয়। এক কথায় যত ইনফরমেশন আছে কোহিনূরের ব্যাপারে সব আমার লাগবে।”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৯

ফোন ধরে বসে রয়েছে রাগিনী। মাঝে মাঝে দুটো হাত দিয়ে ফোন মুচড়ে ধরছে। ঠোঁট কামড়ে গভীর কোনো চিন্তায় মশগুল। তার অক্ষিকোটরে থাকা সেই প্রগাঢ় কৃষ্ণবর্ণের মণি দুটো ফ্লোরের দিকে স্থির। খুব কম টেম্পারেচারে চালিয়ে রাখা এসিও রাগিনীর কপালের ঘাম কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। একটা সময় পর দৃষ্টিটা ফোনের দিকে নিয়ে এসে ফোনের লকটা খুলে আবারও কল লিস্টে প্রবেশ করল সে। অনেক হন্নি হয়ে খুঁজে একটা নম্বরে এসে চোখ আটকালো তার। একবার দম নিয়ে কল করল সেই নম্বরে। কানে ধরল। কিছুক্ষণ প্রতীক্ষার পর ভেসে এলো এক চিকন মেয়েলি কন্ঠ।
“হ্যালো, রাগিনী। হোয়াটস্ আপ? কী খবর? পড়াশোনায় একদমই ডুব লাগিয়েছিস নাকি? কোন গর্তে গিয়ে লুকিয়েছিস?”

রাগিনী না চাইতেও হেঁসে শান্ত গলায় উত্তর দেয়,
“তেমন কিছু না, উর্মিলা। একটু পড়াশোনায় বিজি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এক্সাম শেষে এখন একদম ফ্রি! ঢাকায় এসেছি বেশ কয়েকদিন হলো।”

“তোর যা চাপ! আঙ্কেলের মতো সাইকোলজিস্ট হবি। কিপ ইট আপ। তো আয় একদিন দেখা করি। কতদিন তোকে দেখিনা ইয়ার!”

“অবশ্যই একদিন দেখা করব। কিন্তু একটা কথা ছিল।”
বেশ গাম্ভীর্যের সাথে কথাগুলো বলল রাগিনী। অপরপাশ থেকে আগ্রহের সাথেই জবাব আসে।
“কি কথা বল না!”

রাগিনী কিছুটা সংকোচ নিয়েই বলে,
“তুই বলেছিলি না? তোর মামা মেন্টাল পেশেন্ট নিয়ে রিসার্চ করে? স্পেশালি পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের পেশেন্ট নিয়ে?”

“হ্যাঁ। মামা তো এসব নিয়েই বিজি থাকেন এখন পার্টনারস্ নিয়ে।”

“তো উনার থেকে একটা হেল্প লাগতো। তুই কি পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের পেশেন্ট নিয়ে যত ইনফরমেশন আছে বা যত আর্টিকেল আছে সব কালেক্ট করে দিতে পারবি?”

উর্মিলা ওপাশ থেকে উচ্ছ্বাসের সাথে বলে ওঠে,
“হুয়াই নট। দিতে তো পারব। কিন্তু হঠাৎ তোর এগুলো কোন কাজে লাগবে?”

কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় রাগিনী। নিজের মনে জমে থাকা সব কথাগুলো আয়ত্তে করে নেয়। নিজেকে সামলে বলে,
“ফোনে এতো কথা বলা পসিবল নয়। একদিন দেখা করিস। সেদিন বলবো।”

উর্মিলা হচ্ছে কথার ঝুরি। যার কথা শুরু হলে থামানো বড্ড মুশকিল। এক কথায় বাঁচাল যাকে বলা হয়। এই মেয়েটা রাগিনীর বান্ধবী সেই স্কুল জীবন থেকেই। দুজনে একসঙ্গে স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করলেও রাগিনীর ভাগ্যে পড়ে চট্টগ্রাম। সে সেখানে তার খালার বাড়ি থেকে পড়াশোনা শুরু করে। ফলে দুজনের যোগাযোগ কমে। আজ উর্মিলা তার পুরোনো বান্ধবীকে কাজ ছাড়া করবেই না। কথার উপর কথার বর্ষন হতে থাকে। প্রায় গুনে গুনে ত্রিশ মিনিট পর রাগিনী ঘুমের বাহানা দিয়েই ফোনটা কাটে। ফোনটা বিছানায় রেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাগিনী আপনমনে আউড়ায়,
“মুখে যেন পপকর্ণ। আগের মতোই রয়ে গেল মেয়েটা।”

কথাটুকু শেষ হবার পর চুপচাপ বসে থাকে রাগিনী। কথার মাঝে দরজা খুলে রিওকে নিজের ঘরে এনেছিল সে। এখন রিও পরম শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। তার গায়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয় রাগিনী। রাত বেশি না হলও সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে আজ তার ঘুম হবে না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা হচ্ছে যেন। সে খুব করে চায় তার বিশ্বাস জিতে যাক। সেই বিশ্বাস যাকে ভর করে সে কোহিনূরকে আস্তে আস্তে নিজের মনের সংলগ্নে এনেছে। সে চায় তার দেখা জিনিসগুলো ভুল প্রমাণিত হক। সঠিক হক তার দেখা সেই সুন্দর দৃষ্টি। ঠিক প্রমাণিত হক মানুষটির বলা প্রতিটা কথা!

পরদিন রাগিনী ঠিক করল সে আজ কোহিনূরের কাছে যাবে না। বাড়িতেই থাকবে। তার বাবার কথা রাখার চেষ্টা করল সে। যেই ভাবা সেই কাজ। সারাদিন বাড়িতেই কাটল তার। তবে কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে। কিছুটা অশান্তি নিয়ে। মূলত অশান্তি কোথায় সেটা তার জানা নেই। চারিদিকে সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এতো ফাঁকা ফাঁকা লাগার কারণও তার জানা নেই। একদিনেই কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠেছে। বাড়িতে আর ভালো লাগছে না। ক্ষণে ক্ষণে গিয়ে নিজের আঁকা স্কেচ খুলে খুলে দেখছে। যেখানে সে কোহিনূর সাহেবকে সে নিজের মতো করে এঁকেছিল। তবুও যেন এই স্কেচটা জীবন্ত নয়। এতে সেই দৃষ্টি নেই যেই দৃষ্টি রাগিনীর মনে উথাল-পাতাল সৃষ্টি করে। এই স্কেচ তার সাথে কোনোরকম কথা বলে না। উদ্ভট সব কথা বলে তাকে রাগিয়ে দেয় না। এই স্কেচে থাকা মানবটিকে রাগিনী চোখ রাঙানি দিতে পারে না। এতো মহা মুশকিল!

বিকেল বেলা কোহিনূরের স্কেচই ঘাটাঘাটি করছিল রাগিনী। অবশেষে না পেরে স্কেচটা একটা বড় ফ্রেমে সেট করে খালি দেয়ালে আঁটকে দিয়েছে। কাজটা করেই ফিরে এসে বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে সে। ব্যাকুল চোখ দুটো সরে না স্কেচ থেকে। আনমনে সে বলে ওঠে,
“কোহিনূর রত্ন, আপনি আমার কাছে একজন অদ্ভুত জাদুকর। আপনি কি সেই জাদু দিয়েই আমাকে ভুল প্রমাণ করতে পারবেন?”

কোনোকিছুর স্পর্শ পেতেই নিচু হয়ে তাকায় রাগিনী। রিও তার সামনের পা দিয়ে রাগিনীকে ডাকছে বারবার। রাগিনী তাকাতেই সে ভং ধরে শুয়ে পড়ে খেলা করতে লাগে। রাগিনী হেঁসে ফেলে তৎক্ষনাৎ। রিওর মাথায় হাত রেখে বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“এতো ভং ধরা কই থেকে শিখেছো লিটল কিউটি?”

কথাটা বলতেই তার স্মরণে এলো কোহিনূরের বলা কথাগুলো। লোকটা বলেছিল, ‘দেখো একদিন হতে না হতেই তোমার সঙ্গে থেকে থেকে সে তোমার স্বভার পেয়ে যাচ্ছে। যখন তখন আমাকে ধমকাচ্ছে।’

রাগিনী আবার নিঃশব্দে হাসলো। পরমুহূর্তেই মুখটা ভার হলো তার। সে আবারও কোহিনূরের কথা মনে করছে? নিজের মাথা জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে রিও এর দিকে একটু ঝুঁকে রাগিনী আদুরে সুরে বলে,
“তুমি বাড়ি থেকে বোর হচ্ছো রিও? তাহলে চলো বাহিরে থেকে ঘুরে আসি?”
রিও যেন মনে মনে খুশি হয়। দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াতে থাকে। সেও বোধহয় বাহিরে যেতে চায়। রাগিনী মুচকি হেঁসে তাকে কোলে তুলে নেয়।

বিকেলে আকাশ জুড়ে নামে রঙিন মেঘের খেলা। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি নিজেরে নীড়ে ফিরতে দেখা যায়। সূর্যের দিনের শেষ রোদটা তখন একটু নমনীয় হয়ে ওঠে। হালকা রোদের তাপে তখন পরিবেশ স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে।

ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত ছিল রায়ান। গাড়িতে তেল নেই। পাম্প স্টেশনে দাঁড় করানো ছিল তার গাড়ি। রাস্তার একপাশে রায়ান একনাগাড়ে ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলে চলেছে ব্যস্ত ভঙ্গিতে। শার্টের মাঝখানে ঝোলানো সানগ্লাসটা নড়ছে। স্কাই ব্লু রঙের শার্টের বোতামের ফাঁকে আটকানো সেটি। মুখে পড়েছে বিকেলের সেই নম্র রোদ।
“হ্যাঁ। আমি আসছি এখনি। আর পনেরো মিনিটের মতো লাগবে।”

বলেই ফোনটা কাটে রায়ান। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে আসে গাড়ির দিকে। বিল মিটিয়ে দিতেই গাড়ির দরজা খুলে যখন বসতে যাবে তখনই তার নজরে পড়ে গাড়ির পেছনে থাকা একটা মেয়ের। তৎক্ষনাৎ রায়ান বলে ওঠে,
“কে ওখানে?”

গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি হকচকিয়ে ওঠে। রায়ান দ্রুত পেছনের দিকে যেতেই মেয়েটি বেরিয়ে আসে। মুখটা মাস্ক দিয়ে ঢাকা সেই নারীর। চোখটা বেরিয়ে থাকলেও সামনের চুলগুলোতে লেয়ার কাট দেওয়ায় কপাল ও চোখের অর্ধেকটাও ঢেকে গিয়েছে। পরনে ছিমছাম সুন্দর একটা টপস আর গলায় একটা স্কার্ফ ঝোলানো। মেয়েটা ভয়াতুর গলায় বলে ওঠে,
“বিলিভ মি! আমি কিচ্ছু করিনি।”

“বিলিভ করার মতো কোন কাজটা করলেন ম্যাডাম? গাড়ির পেছনে চোরের মতো লুকিয়ে থাকলে কাকে বিলিভ করা যায়?”

মেয়েটির চোখে স্পষ্ট ভয়। আমতা আমতা করছে। রায়ানের ভ্রু কুঁচকে যায়। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে মেয়েটাকে। কিন্তু ঠিক মনে আসছে না। রায়ান হাত নাড়িয়ে আবারও বলে,
“ও হ্যালো! কিছু বলুন নাহলে…”

“আ…আসলে আমার ভাই এ…এক্সিডেন্ট করেছে। আমি তো টাকা নিয়ে বের হতে ভুলে গেছি। তাই কেউ লিফট দিচ্ছে না।”

রায়ানের কাছে বিষয়টা অযৌক্তিক লাগলেও সে বিষয়টা এড়িয়ে বলে উঠল,
“তাহলে চলুন আমি আপনাকে পৌঁছে দিই?”

“আ…আপনি…”

মেয়েটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রায়ান বলে ওঠে,
“হ্যাঁ। কাম।”

মেয়েটা একটু একটু করে পিছিয়ে যায়। রায়ান ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকায়। তীব্র সন্দেহ জাগছে তার মনে। তাকে জানতে হবে মেয়েটা কে। রায়ান এগিয়ে যেতেই মেয়েটি তড়িঘড়ি করে ফোন ধরে বলে,
“হ্যালো, মা। তোমরা পৌঁছে গেছো? আমি দেরিতে গেলেও হবে?”

বলেই চুপ রইল মেয়েটি। আঁড়চোখে তাকালো। রায়ান এখনো সন্দিহান হয়ে তার দিকেই চেয়ে রয়েছে দেখে মেয়েটি আবারও বলল,
“ঠিক আছে তাহলে রাখছি।”

বলেই ফোনটা রাখল মেয়েটি। আর রায়ানের উদ্দেশ্যে ধড়ফড়িয়ে বলে উঠল,
“থ্যাংক ইউ আপনাকে। কিন্তু আমার আর লিফট লাগবে না। মা হসপিটালে পৌঁছে গেছে।”

বলেই রায়ানকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মেয়েটি দ্রুত পেছন দিকে হাঁটা ধরল। রায়ান ডাকতে চাইলো। কিন্তু এই রাস্তায় কোনো মেয়েকে আটকানো ঠিক হবে না বলে মনে করল। তাই মেয়েটির অযৌক্তিক কথাগুলো চিন্তা করতে করতে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল সে। গাড়ি স্টার্ট দিল। সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ল দ্রুত। বেশ কিছুদূর যেতে যেতে কিছুক্ষণ আগে দেখা হওয়া সেই মেয়েটির মুখ স্মরণে এলে হঠাৎ করেই রাস্তার মাঝে দ্রুত গাড়ি সাইড করে গাড়ি থামায় সে। কেমন যেন গোলমেলে লাগছে সে। মাথায় অতিরিক্ত চাপ দিতেই তার মনে পড়ে সে এই মেয়েটাকে চিনে। হুবহু সেই রাগিনী তাজরীনের মতোই ছিল চোখ। যদিও অনেকাংশেই ঢাকা ছিল মুখশ্রী কিন্তু রায়ানের চোখ চিনতে ভুল করবে না। সে বিরবির করে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে,
“তবে সে আমার গাড়িতে কী করছিল?”

কিছু একটা মনে আসতেই আশংকা করে ঝড়ের গতিতে নিজের গাড়ির সিট বেল্ট খুলতে শুরু করে সে। গাড়ির দরজায় হাত লাগায়। টেনশনে গাড়ির দরজাও সহজে খুলতে পারছে না। অবশেষে সক্ষম হয়েই বাহিরের দিকে নেমে অনেকটা দৌড়ে কংক্রিটের দিকে যেতেই তীব্র বিকট শব্দে আশপাশ কেঁপে ওঠে। রায়ান সবে তিন থেকে চার ধাপ রাখতে পেরেছিল বাহিরে। তৎক্ষনাৎ এমন ঘটনায় বেশ দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে সে উপুড় হয়ে। শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কোনোরকমে মাথা উঠিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরে দেখে তার গাড়িতে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। সেই আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। আর একটু হলে বোধহয় সে নিজেও সেই গাড়ির সাথে পুড়ে জ্বলে যেতো। ঝাপ্সা দেখতে চারিপাশ। চোখজোড়া হয়ে আসছে নিস্তেজ।

পা টিপে টিপে করিডোর দিয়ে হাঁটছে রাগিনী। একহাতে একটা ব্যাগ। অন্যহাতে রিও। আশেপাশে তাকাচ্ছে সে বারংবার। চোরের মতো উঁকিঝুঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটি আশেপাশেই নেই তো? মন যে মানছে না আর। শুধু একটুখানি খবর পাওয়ার জন্য ছটফটিয়ে উঠেছিল। দম বন্ধ হয়ে এসেছিল। অন্যদিকে মস্তিষ্ক বলেছিল, হসপিটালে আজকের দিনটা অন্তত পা না রাখতে। তবে দিনশেষে মন ও মস্তিষ্কের কঠিন লড়াইয়ে মনের জিত হয়। মনের আদেশ পালন করতে রাগিনী আবারও হসপিটালে পা রাখে। তবে তার উদ্দেশ্য একটাই। কোহিনূরকে সে দেখা দেবে না। কোনোমতে খাবার তার ঘরে রেখে পালাবে।

সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কোহিনূরের রুমের সামনে এসে দাঁড়াল সে। উপরে রুম নম্বর লিখা ১০৭। দরজা হালকা করে ভিড়িয়ে দেওয়া। রাগিনী আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখার চেষ্টা করেও বৃথা গেল চেষ্টা। বিরক্তিতে ‘চ’ এর ন্যায় শব্দ করে আরেকটু দৃষ্টি প্রবল করে দেখতে চাইলো। সেই মূহুর্তেই চোখের সামনে আস্ত প্রশস্ত হাত চলে এসে তার চোখ দুটো চেপে ধরল। হতবিহ্বল হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল রাগিনী। ঢক গিলে ফেলল বেশ কয়েকটা। মনে হচ্ছে পুরো প্ল্যানটাই পানিতে গেল। কারণ এই হাওয়ায় এমন সুভাস তখনি আসে যখন তার আশেপাশে সেই কাঙ্ক্ষিত মানবটির আনাগোনা হয়। এই শীতল স্পর্শ রাগিনীর পরখে পরখে চেনা। এবার সেই পুরুষালি কন্ঠে শিরশির করে কেঁপে উঠল রাগিনী।
“এতো কাছে এসেও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তো হবে না মিস!”

“কেন?”

“আপনি যতই অতলে গিয়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন কিংবা অজস্র নারীর মাঝে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করুন আমার এই দৃষ্টি ঠিক আপনার উপরেই পড়বে। আপনাকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চিনে নেবে। কাছে এভাবেই টেনে নেবে।”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২০

“আমি কেন আপনার থেকে পালানোর চেষ্টা করব বলুন তো? আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”

রাগিনীর এমন কথা শুনে ঠোঁট বাঁকায় কোহিনূর। ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়িয়ে অতঃপর এক ঝলক হেঁসে দরজায় হাত রেখে একটু ঝুঁকে উত্তর দেয়,
“বাঘ বা ভাল্লুককে তো শি’কার করা যায়, বন্দি বানানো যায়। কিন্তু কোহিনূরকে আপনি শি’কার করতে পারেন না। বন্দিও করতে পারেন না। তাই নিজেকে বন্দি রাখার চেষ্টা করছে। এম আই রাইট?”

রাগিনী দমে না। তবে দৃষ্টিটা নামিয়ে নেয় এবার। দৃষ্টি মেলানো সম্ভব হচ্ছে না মানুষটির সাথে। কন্ঠে খানিকটা ঝাঁঝ এনে বলে,
“কীসব আজেবাজে কথা। পাগল লোক!”

“তা সেই পাগলের সেবা করতে সবে হাজির হলে? আরো আগে হাজির হওয়া উচিত ছিল তোমার। পেশেন্টের প্রতি এতো ইরেসপন্সিবল হলে হয়?”

এবার তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে রাগিনী। তেতে উঠে বলে,
“হেই লিসেন, আমি এই হসপিটালের কোনো ডক্টর নয় যে আপনার প্রতি আমাকে রেসপন্সিবল হতে হবে। বাকি যারা আছে তারা দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছিল না। তাই আমাকে এসব করতে হচ্ছে।”

আরেক দফা হাসে কোহিনূর। তার হাসিটা যখন বেড়েই চলে তার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলে রাগিনীর হৃৎস্পন্দন। শরীরটা কেমন যেন শিউরে ওঠে। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তার দৃষ্টি এক জায়গায় আঁটকে যায়। বেহায়া হয়ে মানবটির হাসির সৌন্দর্য উদ্ঘাটন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাগিনীর কানে এবার কোহিনূরের বলা কথাগুলো ঝনঝন করে বেজে ওঠে।
“তাই যদি হয় তাহলে বাকিদের নিয়ে ব্যস্ততা নেই কেন তোমার? তারাও তো এখানকার। কেন তোমার হাজারও ব্যস্ততার মাঝে শুধুই কোহিনূর বিরাজ করে?”

কান গরম হতে থাকে রাগিনীর। কথাগুলো হজম হয় না। সত্যিই তো তাই। কেন এই মানুষটিকে ঘিরেই তার এতো ভাবনা? রাগিনী আর ভাবতে চায় না। কথা কাটিয়ে তাড়াতাড়ি করে রাগিনী তার হাতে থাকা ব্যাগটা ধরিয়ে দেয় কোহিনূরের হাতে। আর বলে,
“ধরুন আপনার জন্য খাবার। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। আমাকে যেতে হবে। আজকে গাড়িও নিয়ে আসিনি আমি।”

রাগিনী এই বলে পেছন ফিরে হাঁটা ধরে। কোহিনূর তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পেছন থেকেই শান্ত সুরে বলে ওঠে,
“যেও না রাগিনী! কিছুক্ষণ থাকো।”

লোকটার কথাতেও যেন জাদু রয়েছে। তার কথা হয়ে দাঁড়াল রাগিনীর কাছে মস্ত বড় বাঁধা যা টপকে রাগিনী আর এক পাও হাঁটতে পারছে না। সেই ছোট্ট কথায় মিশে ছিল করুণ সুর। হাঁটা থামিয়ে পেছন ফিরে না তাকিয়ে রাগিনী রিওকে ভালো করে কোলে নেয়। আর বলে,
“কেন? আমি তো শুনলাম আপনার কাউন্সেলিং ভালোভাবেই হয়েছে আজ। তাই আমার দায়িত্ব তো শুধু ছিল খাবার পৌঁছে দেওয়া। কারণ এখানকার খাবার খেতে আপনি পারেন না। খাবারের জন্যই তো আমাকে প্রয়োজন ছিল তাই না?”

কোহিনূরের বলা কিছু মূহুর্তের জন্য থেমে গেল। বিস্ময়ে ছেয়ে গেল তার চোখ। আজ রাগিনীর কথাবার্তা তার বেশ অন্যরকম লাগছে। মেয়েটার এমন কথা বলার কারণ সে বুঝে উঠতে পারছে না। সরাসরি তীব্র আঘা’তও হানছে সেইসব কথা। কথা গুলোর ধার এতোই তীব্র হয় বুঝি? তবে কোহিনূর মুখে কিছু বলল না। রাগিনী আবারও যেতে ধরল। তখন আবারও কোহিনূর নিরবতা ভেঙ্গে বলে ওঠে,
“আর একটু থাকলে হতো না?”

“কেন?”

কোহিনূর না চাইতেও জোর পূর্বক হেঁসে বলে ওঠে,
“মিস. রাগিনী থাকলে আমি যা খাবারই খাই না কেন তা আরো দশগুন বেশি স্বাদে পরিণত হয়। আই থিংক ইউ আর অ্যা ম্যাজিশিয়ান। একটু থাকবে?”

আবদারের সুরে বলা কথাগুলো এড়াতে পারলো না রাগিনী। তবে তার হাসি পেলো এমন কথায়। হাসিটা চাপিয়ে রেখে সামনে ঘুরলো সে। তার সামনে ঘোরা দেখে হাসি ফিরল কোহিনূরের। হঠাৎ তাকে চমকে দিয়েই রিও তার সামনের দুটো পা উঁচিয়ে ছটফটিয়ে জোরে মুখ দিয়ে শব্দ করে কোহিনূরকে ধমকালো যেন। রাগিনী তা দেখে রিও এর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করতে করতে বলল,
“দেখেছেন? সেও বাড়ি যেতে চাইছে।”

“ছোটবেলায় আমার বাবাও আমার দিকে এতোবার চোখ গরম আর ধমকানি দিয়েছে নাকি আমার জানা নেই যতবার এই পিঁপড়ের মতো দেখতে এই ছানা আমাকে ধমকায়।”

রাগিনী এবার হাসি থামাতে পারল না। ফিক করে হেঁসে দিল। সেই হাসির ঝংকারে কোহিনূরের মনের দ্বারে যেন শান্তির বাতাস বয়ে গেল। এইতো! রাগিনী আগের মতো হাসছে। এভাবেই তো তাকে ভালো লাগে।

খাওয়ার সময় কোনো প্রকার কথা বলেনি রাগিনী ও কোহিনূর। কোহিনূর নিরব ভাবে খেয়েছে আর রাগিনী কখনো রিওকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে নয়ত কোহিনূরকে আঁড়চোখে দেখার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। এমনভাবেই সময় শেষ হয়। পৃথিবী জুড়ে অন্ধকার নামে। রাগিনীর যাওয়ার তাড়া শুরু হয়। তার বাবা আসার আগে বাড়ি ফিরতে হবে। সে আবারও সেসব অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা শুনতে চায় না। তাই সে তড়িঘড়ি করে বলে,
“আপনার খাওয়া তো শেষ। আমি এখন যাচ্ছি।”

“জাস্ট ফাইভ মিনিটস্।”

হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে উৎসুক সুরে বলে কোহিনূর। বসে থম ধরে বসে থাকে। কোহিনূর তাকে প্রশ্ন করে,
“আজ এভাবে পালাতে চাইছিলে যে?”

এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রাগিনী। আমতা আমতা করে বলে,
“এমনি। বাড়িতে কাজ আছে আমার।”

“কী কাজ?”

রাগিনী বিরক্ত হবার ভান করে বলে,
“সব কিছু আপনাকে বলতে হবে নাকি?”

কোহিনূর আরো কিছু বলতে উদ্যত হয়। তবে বলতে গিয়েও থেমে যায়। কিছুক্ষণ ভাবুক হয়ে বসে থেকে ফট করে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।”

বলেই আর দেরি করে না কোহিনূর। প্রস্থান করে। সে যাওয়ার সাথে সাথে রিও এর দিকে তাকায় রাগিনী। তার ঘুম পেয়েছে বেশ। ঘুমে টলে টলে পড়ছে। দ্রুত বাড়িতে গিয়ে আগে তাকে খাওয়াতে হবে। কিন্তু এই জেদি লোকটার কারণেই তো যত সমস্যা!

মিনিট পাঁচেক পর ফিরল কোহিনূর। কেমন যেন এলোমেলো লাগল তার ভঙ্গি। রাগিনীর সাথে কোনোরূপ কথা না বলে এবার ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তাড়ার সাথে বলল,
“রাগের রানী! আমার খুব ঘুম পেয়েছে। তুমি যাও তো। আমি ঘুমাবো।”

অবাক না হয়ে পারল না রাগিনী। এবার মানুষটার কণ্ঠে বাচ্চামি। সে তড়তড় করে বলল,
“আমি তো সেই কখন থেকে যেতে চাইছি। আপনিই তো যেতে দিচ্ছেন না।”

কোহিনূর নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিল,
“তখন মন চাইছিল না যেতে দিতে। এখন আমার ঘুমোতে ইচ্ছে করছে তাই যেতে বলছি। তুমি কি আমার সাথে থাকতে চাও? ঘুমাবে? তাহলে সমস্যা নেই।”

“মহা অসভ্য লোক তো আপনি। আমি যাচ্ছি।”

বলেই তাড়াহুড়ো করে হাতে ব্যাগ আর রিও কে নিয়ে উঠে দাঁড়াল রাগিনী। রাগে বিরবির করতে করতে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সে যাবার সাথে সাথে চোখ খুলে তার প্রস্থান দেখল কোহিনূর। সঙ্গে সঙ্গেই উঠে বসল। বড় একটা শ্বাস নিল।

আধো আধো চোখে চারিপাশটা দেখার চেষ্টা করল রায়ান। চোখটা খুলতে পারছে না তবুও জোর করে খুলছে। আশপাশটা হালকা আলোয় অস্পষ্ট। কেমন যেন উদ্ভট গন্ধ এসে ঠেকছে নাকে। হাতটা একটু খানি নাড়ানোর চেষ্টা করতেই ব্যথা অনুভব করে সে। চোখমুখ সরিয়ে আসে। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে ব্যথিত হয়ে ‘উহ’ করে ওঠে। চোখটা বড় বড় করে মেলতেই সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সোজা হয়ে বসে থাকা পুরুষটি। প্রথমে বুঝতে না পারলেই পোশাক পড়ার ধরন দেখে বুঝতে সময় লাগে না মানুষটা নির্জন। মাথা একটু ঝাঁকিয়ে দৃষ্টি প্রখর করার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারে এটা হসপিটাল। আর নির্জন তাকে দেখতে এসেছে। রায়ানের জ্ঞান ফিরতে দেখে নির্জন বলে ওঠে,
“আর ইউ ওকে?”

রায়ানের কথা বলতে আরেকটু সময় লাগবে। গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না। তাই সে একটু মাথা দুলিয়ে জানান দেয় সে ঠিক আছে। বুকে হাত বটে নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে নির্জন। আর জিজ্ঞেস করে,
“কী করে হলো এসব?”

রায়ানের চোখে এবার ভেসে ওঠে তার সাথে ঘটা সেসব ভয়াবহ ঘটনা। সেই মানবীর চোখ, কথা বলার ধরণ স্মরণে আসতেই অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“রাগিনী! রাগিনী তাজরীন। সে রাগিনী তাজরীন ছিল।”

চকিতে তাকায় নির্জন। পায়ের উপর পা নামিয়ে দিয়ে আবারও সোজা স্থির হয়ে বসে। হাত নামিয়ে বেডে রেখে বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে,
“হোয়াট?”

“হ্যাঁ। সে রাগিনী তাজরীন ছিল। যে আমার গাড়িতে বো’ম ফিট করছিল। আমি তাকে দেখেছি। শুধু মুখে মাস্ক ছিল। আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে পালায়। আমি ধরতে পারিনি।”

নির্জন নিরব হয়ে কিছু একটা ভাবে। আর পরক্ষণেই উত্তরে বলে,
“ইটস ইম্পসিবল ইন্সপেক্টর রায়ান। আপনাকে দেখতে আসার আগে আমি রাগিনীর ফোনের লোকেশন চেক করেছি। যেটা ছিল রাগিনী তাজরীনের বাড়ির পার্কের কাছে, এর আশেপাশে আর মেন্টাল হসপিটাল অবধি। আর আপনার গাড়ি ব্লা’স্ট করেছে সেটা মিনিমার ফাইভ কিলোমিটার দূরে। তাই এটা একপ্রকার অসম্ভব!”

মাথায় যেন পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে রায়ানের। কপালের ভাঁজ প্রগাঢ় হয়ে ওঠে। বিস্ময়ের সাথে বলে,
“তাহলে ওই মেয়েটা কে ছিল? সে তো অনেকটাই রাগিনীর মতো দেখতে ছিল।”

“রাগিনীর মতো দেখতে আর রাগিনীই ছিল দুই কথার মধ্যে অনেক পার্থক্য ইন্সপেক্টর রায়ান।”

“এমন হওয়া তো অসম্ভব নয় যে সে আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। হতে পারে ফোনটা অন্য কারো কাছে ছিল? আর আপনাকে বোকা বানানোই ওর আসল কাজ!”

এবার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল নির্জন। তার কাছে এসব বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না। সে শক্ত গলায় বলে উঠল,
“নো, ইন্সপেক্টর রায়ান। আমি আর রাগিনী তাজরীনকে জোর করে ফাঁসাতে চাই না। হতেও তো পারে ওকেই ফাঁসানো হচ্ছে!”

রায়ান চোখ সরু করে তাকালো। আস্তে করে ওঠার চেষ্টা করল। নির্জন তাকে ধরতে গিয়েও ধরল না। সাহায্য না করার কারণ ভেতরে থাকা কোনো দ্বিধা! দুজনের মন ভর্তি ইগো! রায়ান নিজে নিজে উঠে বসে বলে,
“আপনি কি রাগিনীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন অফিসার নির্জন?”

অস্বস্তিতে পড়ে যায় নির্জন। কেমন যেন গরম লাগতে শুরু করে। জোর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আমি কেন তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করব?”

বেশ শান্ত ভাবেই রায়ান জবাব দেয়,
“কারণ হতেই পারে আপনি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছেন।”

চোখমুখ পুরো শরীরে গরম লাগতে শুরু করে নির্জনের। বার বার চোখের পলক ফেলে আশেপাশে তাকায়। কান থেকে যেন ধোঁয়া বেরিয়ে যাচ্ছে। সে রাগান্বিত সুরে বলল,
“দেখুন, আপনি কিন্তু যা ইচ্ছা তাই বলছেন। আপনি এসব বলতে পারেন না। কাজের কথায় আসুন। আপনি যেই মেয়েকে দেখিছিলেন তার ড্রেসআপ কেমন ছিল?”

রায়ান একটু ভেবে বলে,
“টপস্, স্কার্ফ, মাস্ক ছিল মুখে। ঘাড়ে একটা ব্যাগও ঝোলানো ছিল।”

“আর রাগিনীর ড্রেসআপ ছিল লং একটা জামা। আই ডোন্ট নো কী বলে সেটাকে। আর গলায় লম্বা ওড়না ঝুলিয়ে রেখেছিল। মুখে মাস্ক ছিল না। আপনিই বলুন, আপনার সঙ্গে যেই ঘটনা ঘটল সেটা সাড়ে ৫ টায়। রাগিনী মেন্টাল হসপিটালে গেল ঠিক ৬ টায়। আধঘন্টার মধ্যে এতো কাজ সেড়ে ফেলল সে?”

রায়ান এবার ভাবে সত্যিই তাই। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে সে যাকে দেখল সে কে? মাথায় তো আর কাজ করছে না। নির্জন স্পষ্টভাবে বলল,
“রাগিনীকে কেউ ফাঁসাচ্ছে। তার প্রমাণ আমি প্রতি পদে পদে পেয়েছি। যেটুকু সন্দেহ বাকি আছে সেটাও দূর করব। আই নিড দ্যা মেইন কার্লপ্রিট।”

বলে থামে নির্জন। উঠে দাঁড়ায় এবার। নিজের পরনে কোট ঠিকঠাক করে বলে,
“আপনার শরীর ভালো নেই অনেক স্ক্র্যাচ পড়েছে। কাল তো অভিরূপ চৌধুরী আসছে। তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার উপর পড়েছিল। কিন্তু যা কন্ডিশন! আপনি রেস্ট করুন। ওইদিক দেখে নেব।”

বলেই বাহিরে যাবার জন্য পা বাড়ায় নির্জন। পেছন থেকে রায়ান সোজা কথায় বলে,
“সেটার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি ঠিক আছি। হাত-পায়ে লেগেছে একটু। ভেঙ্গে যায়নি। থ্যাংকস ফর ইউর সাজেশন অ্যান্ড হেল্প। আপনি আপনার কাজ করুন। আমি কালকে এয়ারপোর্টের দিক সামলে নিতে পারব।”

নির্জন কিছু বলতে গিয়েও বলল না আর। কিছু মানুষকে সাহায্য করতে গেলেও তারা এমন ভাব ধরে যেন তাদের সাহায্য জীবনে প্রয়োজনই নেই। কথা আছে, ভাঙবে তবু মচকাবে না। রায়ান যেন তেমনই একটা মানুষ। চুপ থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে এলো নির্জন।

সকাল ঠিক সাতটা। এয়ারপোর্টে বেশ ভীর জমেছে। অনেকে কাজের সূত্রে এখানে এসেছে। আবার অনেকে দেশে পদার্পণ করা সেই গায়ককে দেখতে ছুটে এসেছে। ইন্ডিয়া থেকে প্লেন ল্যান্ড করেছে। ডার্ক ব্লু শার্ট ও সাদা প্যান্ট পরিহিত সুদর্শন পুরুষ তাড়াহুড়ো করে চেক আউট করছে। মুখে জড়িয়ে স্নিগ্ধ হাসি। যেন তার তড় সইছে না একদমই। তড়িঘড়ি করে আউট করতেই লাগেজ ঠেলে নিয়ে যেতে যেতে সে বলে উঠল,
“দারুন ওয়েদার!”

পেছন থেকে নোমানের চেক আউট করতে দেরি হওয়ায় সে লাগেজ ঠেলে কিছুটা দৌড়েই অভিরূপের পিছু আসতে আসতে বলল,
“আরে দাঁড়া।”

অভিরূপ দাঁড়াল। অন্যরকম লাগছে তার। আশপাশটা ভালো করে দেখল। হঠাৎ করে তার সামনে ভীর জমা শুরু হতেই কিছু সিভিল ড্রেসে থাকা পুরুষ তার সামনে দাঁড়াল। অভিরূপ সরু চোখে বোঝার চেষ্টা করল এরা কারা। তৎক্ষনাৎ উচ্ছ্বাসের সাথে বলে উঠল,
“ইন্সপেক্টর রায়ান রাইট?”

রায়ান একটু সৌজন্যমূলক হেঁসে মাথা দুলাতেই অভিরূপ নিজের হাসি প্রসারিত করে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। রায়ানও নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যান্ডশিপ করল। এরপর নোমানও তার হাত বাড়িয়ে বলল,
“হ্যালো, ইন্সপেক্টর রায়ান!”

“হ্যালো। আই হোপ, আমাদের দেশটা আপনাদের ভালো লাগবে। এই উচ্ছ্বাস আপনাদের শেষ অবধি থাকবে।”
নোমানের দিকেও হাত বাড়িয়ে দিল রায়ান। বুঝতে পারল তারা অন্য দেশের হলে কী হবে? যতই হক না কেন ফেমাস পারসন! বেশ মিশুক। রায়ানের বেশ ভালো লাগল। তার চোয়ালে ব্যথা করছে। বাম হাতের কনুইয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ। হাঁটতেও একটু কষ্ট হচ্ছে। গালের একপাশে একটু ফুলে গেছে। তবুও নিজেকে সামলে নিল সে। আশপাশটা ভীর জমলো অভিরূপকে দেখার জন্য। সেখানে উপস্থিত থাকা সব গার্ড সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রায়ান বলল,
“বাহিরে গাড়ি আছে।”

বলার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা ধরল অভিরূপ। কিন্তু তাকে দেখার জন্য যারা এসেছে তাদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ালো। কোনো কোনো মেয়ে প্রসন্ন হলো। কেউ কেউ উদ্বিগ্ন হলো তার সাথে যদি একটা ছবি তোলা যায়!

সমস্ত ভীড় ঠেলে বাহিরে আসতেই মেঘলা আকাশ দেখে শান্ত হয়ে দাঁড়াল অভিরূপ। অন্যরকম আবহাওয়া তার মনে শান্তি এনে দিল। তার দাঁড়ানোতে নোমান সহ সকলেই দাঁড়িয়ে পড়ল। হঠাৎ করেই দুহাত ছড়িয়ে কিছুটা জোরেই বলে উঠল,
“ওয়েলকাম টু মি, বাংলাদেশ!”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২১

রায়ান বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অভিরূপের পাগলামি আচরণ তাকে অবাক করে তুলেছে। সে যতদূর জানে কোনো ফেমাস পারসনের এটিটিউড, স্টাইল হয় সবার থেকে আলাদা। কিন্তু এখানে তো পুরোপুরি উল্টো। ছেলেটাকে তো উন্মাদ লাগছে। এই জন্যই বুঝি তার দেশের লোকজন তাকে এতো পছন্দ করে?

গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দুজন গার্ড। কথাবার্তা চলছে দুজনের মাঝেই। এর মাঝে দুজনের সামনে এসে দাঁড়াল এক নারী। মুখটা কেমন যেন ওড়না দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছে। যেন অস্বস্তি বোধ করছে পুরুষের সামনে। তার এক হাতে থাকা হরেক রকম গোলাপের তোড়া এগিয়ে দিয়ে খুব করুণ সুরে বলল,
“ফুল নিবেন? একদম তরতাজা।”

মেয়েটির নিখুঁত চোখ লাল টকটকে। চোখের নিচে কালো। মুখে ওড়না ধরে রেখেছে। কপাল বিন্দু বিন্দু ঘামে ভেজা। গার্ড দুজন ভ্রু কুঁচকে তাকায় একে অপরের দিকে। অতঃপর তাদের একজন বলে ওঠে,
“এটা কি ফুল বিক্রি করার জায়গা? এটা এয়ারপোর্টের বাহিরের সাইড। এখনি গায়ক অভিরূপ চৌধুরী আসবে। আপনি অন্য কোথাও গিয়ে চেষ্টা করুন।”

“আমিও শুনছি তার আসার খবর ভাইজান। আমি গরীব হলে কী হইব? আমার কি শখ আহ্লাদ নাই? আমিও একটু দেখার জন্যই আসছি। উনি কি এই গাড়ি কইরা যাবেন?”

“আপনার এতো কৌতূহল না দেখালেও হবে। দূরে দাঁড়ান এতো দেখার ইচ্ছা হলে এখানে ভীর করবেন না।”

মেয়েটার মনটা যেন এবার খারাপ হলো। চোখ ছোট ছোট করে গাড়ির দিকে পর্যবেক্ষণ করে স্থান ত্যাগ করল দ্রুত পায়ে। প্রথমজন দ্বিতীয়জনের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“সব ঠিকঠাক দেখে নিয়েছিস তো? মনে রাখিস এই গাড়িতেই কিন্তু অভিরূপ চৌধুরী যাবেন। তাই গাড়িতে কোনো সমস্যা থাকা যাবে না।”

“সব ঠিকঠাক আছে। কোনো সমস্যা নেই। অভিরূপ চৌধুরী কোনো অভিযোগ সুযোগই পাবে না।”
অপরজন কথা বলতেই দুজনই আশ্বস্ত। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল আগের মতোই।

বেশ কিছুদূর ফুলের তোড়াগুলো নিয়ে হেঁটে মেইন রোডের ফুটপাতে থাকা এক গাছের তলায় এসে দাঁড়াল সেই বিক্রেতা নারী। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল একবার। তারপর গাছের একদম নিচে থাকা একটা দশ থেকে বারো বছর বয়সী ছেলের দিকে ফুলগুলো এগিয়ে দিয়ে হাজার টাকার নোটও বের করে দিয়ে বলল,
“ধর। এখন বিদায় হ। অনেক সাহায্য করেছিস ফুলগুলো দিয়ে তার বখশিশ। এখন যা।”

ছেলেটার মুখে যেন রাজ্য জয়ের হাসি টাকার চেহারা দেখতে পেয়ে। ঠিক এই কারণেই তো না চেনা সত্ত্বেও নিজের বিক্রি করার কথা ছিল যেসব ফুল সেসব দিয়েছিল অচেনা এই মেয়ে মানুষকে। টাকা আর ফুল তড়িঘড়ি করে হাতে নিয়ে রাস্তার বিপরীতে পা বাড়াল ছোট বয়সী ছেলেটা। সে বেশ কিছুদূর যাওয়ার সাথে সাথে সেই অচেনা নারী তার থেকে কিছু মিটার দূরে থাকা দুটো লোকের মধ্যে একজনকে ইশারা করে ছেলেটির পিছু নিতে বলল। বয়সে অনেকটা বড় সেই লোকটা হাঁটা ধরল ছোট ছেলেটির পিছু পিছু। তারা আড়াল হতেই কোথা থেকে যেন বাটন ফোন বের করল মেয়েটি। কাউকে বেশ দ্রুত কল লাগালো। কল রিসিভ হলেই আস্তে করে বলে উঠল,
“ছেলেটা আমাদের জন্য সেফ নয়। বরং আলাদা একটা ঝামেলা। ওকে বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই। দশ মিনিটের ব্যবধানে ওকে শে’ষ করে ফেলো।”

কথাগুলো মুখ দিয়ে বের হওয়া মাত্র কল কেটে দিল মেয়েটি। আবারও তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা আশপাশ পর্যবেক্ষণ করে নিল। তারপর ফোনের পেছনের অংশ খুলে সিম কার্ড বের করে সেটা পায়ের নিচে ফেলল। পিষতে থাকল অনবরত সিম। তারপর তার থেকে কিছু দূরত্বে থাকা লোকটিকে হাত দিয়ে ইশারায় কাছে ডাকতেই লোকটি কাছে এসে অনুনয়ের সাথে বলে,
“আপনি চাইলে কাজটা আমি করে দিই বস?”

“নো নিড। তোকে বলেছি কয়েকদিনের জন্য গা ঢাকা দিতে সেই কাজটাই কর কবীর। নয়ত ম’রবি আমার হাতে। দেখি ব্যাগটা দে।”

“কাজটা বেশি রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না, বস?”

লেডি বস কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়,
“এই কাজটা আমি নিজহাতে করতে চাই। কোনো ভুল হওয়া যাবে না। আর বাকিদেরও রেডি থাকতে বল। যদিও কোনোভাবে প্ল্যান ফেল করে তোদের এ’কশন শুরু করতে হবে। আজ যে করেই হক দ্যা গ্রেট সিঙ্গার অভিরূপ চৌধুরীর লা’শ এখান থেকে যেন ইন্ডিয়ায় তার ফ্যামিলির কাছে ফিরে যায়। আজ এয়ারপোর্টে ধামাকা হবে। দরকার পড়লে লেডি বস সেখানে মৃ’ত্যুখেলা সৃষ্টি করবে।”

নারীর চোখমুখে কাঠিন্যতা দেখেই কবীরের হাত-পা কাঁপে। সে শুনেছে, নারীর হৃদয় কোমলতার শীর্ষে বিরাজ করে। কিন্তু সেই নারীর মনে যখন নৃশং’সতার বাসনা জাগে তখন যে কতটা ভয়ংকরী হয়ে উঠতে পারে সেটা কবীর আগেও দেখেছে এখনো দেখছে। সে আর কথা বাড়ানোর সাহস জুগিয়ে উঠতে পারে না। ব্যাগটা হাতে দিয়ে মাথার ক্যাপ ঠিকঠাক করে বিদায় নেয়।

এয়ারপোর্টের বাহিরের স্পেসে দাঁড়িয়ে আছে লেডিস শার্ট আর স্কার্ট পরিহিত এক মেয়ে। চুলগুলো আহামরি বড় নয়। সেসব ঝুটি করে রাখলেও সামনের চুলগুলো বাঁধা সম্ভব হয়নি। গোলগাল গাল দুটো আরো বেশি ফুলে উঠেছে। গরমের চোটে চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে। দরদর করে ঘামছে। কিছুটা সামনে থাকা গ্যারেজ স্পেসের কাছে জমেছে বেশ ভীর। মূল কারণ হচ্ছে অভিরূপ চৌধুরী। মেয়েদের এতো ভীড়ে বিরক্তির শ্বাস ফেলে সামনের চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে মেয়েটি বলল,
“নয়ন, আজকে আর তোর স্বপ্ন পূরণ হবে না। যেই কারণে তুই এয়ারপোর্টে এসেও তিন ঘন্টা ধরে বসে আছিস সেটা বৃথা যাবে। একটাও সেল্ফি তুলতে পারবি না অভিরূপের সাথে। লাইন ইজ ফুল ওফ পেইন।”

মেয়েটি নয়নতাঁরা। তার দেশে ফেরার কথা ছিল আরো আগে। কিন্তু সেদিন সে ফ্লাইট মিস করে এতো কিছুর মাঝে। হোটেলে অবস্থান নিয়েছিল সে লন্ডনে। তাই আজকের ফ্লাইটে দেশে ল্যান্ড করতে হলো তাকে। তারপর থেকে শুনছে আজকে নাকি অভিরূপ চৌধুরী আসবে। একমাত্র তার কন্ঠের গান শুনেই নয়নতাঁরা প্রসন্ন হয়। তার গানের মাধ্যমে সে নিজেকে এবং তার বহুকালের ক্রাশ রায়ানকে একসাথে কল্পনা করতে পারে। তাই এই মহান গায়কের সাথে একটা ছবি তোলা বা অটোগ্রাফ না নিলেই নয়। সেই আশায় ভোর থেকে এখানেই বসে ছিল সে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এই ভীরের মধ্যে পড়লে সে নির্ঘাত এই লম্বা লম্বা হাতির মতো মেয়েগুলোর পায়ের নিচে পড়ে আ’হত হয়ে যাবে। নয়ত মুখমন্ডলই বদলে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এমনিতেই সে আহামরি দেখতে ভালো না। ছোটখাটো অ্যাপেলের মতো। নয়নতাঁরা নিজের দুটো গালে হাত রেখে বলে,
“এমনিতেই আমি দেখতে ভালো না। মুখমন্ডল পাল্টে গেলে ইন্সপেক্টর রায়ান একটুও পছন্দ করবেন না আমায়।”

কথাটুকু আফসোসের সুরে বলল নয়নতাঁরা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মাথা নিচু করতেই চোখের সামনে এসে পড়ল একঝাঁক চুলের মেলা। চোখমুখ কুঁচকে হাত দিয়ে চুল সরাতেই সামনের এয়ারপোর্টের সাথে যেই গ্যারেজ স্পেস আছে সেখান দিয়ে কংক্রিটের ছোট রাস্তায় চোখ পড়তেই মুখটা না চাইতেও হা হয়ে গেল তার। চোখমুখের রঙটায় বদলে গেল এক নিমিষে। ফ্যাকাশে হয়ে এলো মুখশ্রী। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল একবার ভয়ে। চোখের পাতা ঘনঘন ফেলতে লাগল। অস্পষ্ট সুরে বলে উঠল,
“বিগ ব্রাদার!”

এবার কেঁদে উঠতে মন চাইলো নয়নতাঁরার। গলার ছোট্ট স্টাইল করে বেঁধে রাখা স্কার্ফটা তড়িঘড়ি করে খুলে মাথায় দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে লাগল। আবারও চোরের মতো উঁকি দিয়ে সেই রাস্তার দিকে চাইলো। পুরুষটির মুখে মাস্ক। বেশ বড় বড় পায়ের ধাপ ফেলে তড়িঘড়ি করে নয়নতাঁরা যেখানে আছে সেদিকেই এগিয়ে আসছে অন্য একজনের সাথে ব্যস্ত ভাবে কথা বলতে বলতে। মুখে মাস্ক, মুখশ এমনকি চেহারা পাল্টে ফেললেও নিজের বিগ ব্রাদারকে চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল করবে না নয়নতাঁরা। তার হাঁটার ভঙ্গি, মাঝে মাঝে হাত নাড়ানো সবই নয়নতাঁরা চিনে রেখেছে। র’ক্তের টান বলেও তো একটা বিষয় আছে। নয়নতাঁরা চোখ বড় বড় করে নিজমনে বলে উঠল,
“আমি ম’রার আগ অবধি এই ছেলেটা আমাকে জ্বালিয়ে যাবে। বাঁচতে চাইলে পালা নয়নতাঁরা।”

বলেই ফের এয়ারপোর্টে প্রবেশ করার গেট ধরে দৌড় দিল নয়নতাঁরা। তাকে আর পাওয়ায় যাবে না। কিছুতেই না।

সকাল সকালেও যে এতোটা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা পড়বে সেটা ভাবেনি রাগিনী। আজ উর্মিলার সাথে তার দেখা করার কথা। সেকারণেই সে বেরিয়েছে। ইতিমধ্যে দুবার কল দিয়ে ফেলেছে উর্মিলা। রাগিনীর জানা নেই আর কতবার কল রিসিভ করতে হবে। তার স্কাই ব্লু কালার ওড়না ঠিক করে বেঁধে রাখা চুলগুলো পেছনে সরিয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে,
“সামনে কি কিছু হয়েছে চাচা? এতোক্ষণ লাগছে কেন?”

“মনে হইতেছে এক্সিডেন্ট হইছে কোনো।”

কিছুটা আঁতকে উঠল রাগিনী। আর বলল,
“কী? কোনো বড়সড় সমস্যা?”

“মনে তো হয় সমস্যাই হইছে কিছু একটা।”

রাগিনী নিরব হয়ে বসে রইল বেশ খানিকক্ষণ। মনটা টিকতে চাইলো না আর। তবুও যেন জোর করেই বসে রয়েছে। হঠাৎ করেই পাশের লাইনের ফুটপাতে চেনা পরিচিত কাউকে চোখে পড়ল রাগিনীর। তাড়াহুড়ো করে গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে হাত নাড়িয়ে একটু জোরে ডেকে ওঠে,
“ফাহমিদ!”

ফুটপাতের ভীরের মাঝে হেঁটে যাওয়া চশমা পড়া ছেলেটি মাথা উঁচিয়ে রাস্তায় থাকা রাগিনীর গাড়ির দিকে তাকালো। রাগিনীকে হাত নাড়াতে দেখে আশেপাশে তাকালো ফাহমিদ। বোঝার চেষ্টা করল রাগিনী কি তাকেই ডাকছে? আশেপাশে অন্যকাউকে থামতে না দেখে ফাহমিদ বোকাসোকা চাহনি নিয়ে রাগিনীর দিকে তাকিয়ে নিজের বুকে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলল,
“আমি?”

রাগিনী দ্রুত মাথা নাড়াতেই ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ফাহমিদ। রাগিনী তাকে দেখেই বেশ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভালো হয়েছে তোমার দেখা মিলল। সামনে থেকে আসছো? কী হয়েছে কিছু জানো?”

ফাহমিদ মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলল,
“আ…আমি..”

“ওহ হো ফাহমিদ! কথার স্পিড বাড়াও। এমন করছো যেন নিজেই ভয় পেয়ে গেছো।”

“ভয় তো পেয়েছিই। তুমি তো জানো আমার এসব দেখলে কতটা ভয় করে। কী ভয়ানক কান্ড! একটা গাড়ি ব্রেকফেল করে এক্সিডেন্ট করেছে। আর সেই গাড়ির ধা’ক্কা খেয়েছে একটা ছোট ছেলে। ছেলেটা অনেক গরীব। তাকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই জানো তো! সবাই পড়েছে গাড়ির মধ্যে থাকা দুইটা বড়লোক ছেলেকে নিয়ে। এদিকে ছোট ছেলেটার মাথা ফে’টে র’ক্ত বেরিয়ে যা-তা অবস্থা।”

রাগিনীর চোখেমুখে উদ্বিগ্নের ছাপ দেখা গেল। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে তাড়াতাড়ি করে বলল,
“কোথায় ওই বাচ্চা ছেলেটা?”

ফাহমিদ কিছু বলার আগেই কোথা থেকে একটা ছেলে টলমল করতে করতে এসে ফুটপাতে পড়ে যেতে দেখতে পেল রাগিনী। নিজেকে থামাতে পারল না সে আর। ফুটপাত লাল হয়ে উঠছে ক্রমশ র’ক্তে। লোকজন জমা হয়েছে। সরব করতে শুরু করেছে কিন্তু কাজের কাজ করার বেলায় একেবারেই শূন্য। গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার রাগিনীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
“তুমি কোথায় যাইতেছো? তোমার তো র’ক্ত দেখে ভয় করে। ওইদিকে যেয়ো না মামনী!”

কে শোনো কার কথা! কথা গুলো বলার আগেই ভীর ঠেলে ছেলেটির নিকট চলে গিয়েছে রাগিনী। ড্রাইভার নামতে চাইলে ফাহমিদ তাকে মানা করে বিচলিত সুরে বলে,
“আমি দেখছি। আপনাকে নামতে হবে না।”

ছেলেটির কাছে হাঁটু গেঁড়ে বসেছে রাগিনী। র’ক্তের স্রোত বইছে যেন ছেলেটির মাথার কা’টা অংশ থেকে। তা দেখে ইতিমধ্যে রাগিনীর অবস্থা অন্যরকম হতে শুরু করেছে। হাত-পা কাঁপা শুরু করেছে। সে কিছু বলতে চেয়েও পারল না। উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের ওড়নার কিছু অংশ ছেলেটার মাথায় চেপে ধরে বলল,
“কে…কেউ সাহায্য করো পি…প্লিজ! আমার গাড়ি অবধি রেখে আসুন।”

“তুমি উঠে দাঁড়াও। আমি ওকে কোলে নিচ্ছি।”

নির্লিপ্তভাবে বলা ফাহমিদের কন্ঠস্বরে আশ্বস্ত হলো রাগিনী। ফাহমিদ ছেলেটা বোকাসোকা। তবে অন্যদের মতো নয়। সাহায্য করতে তার কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু ঝামেলা একটু ভয় পায় এই আরকি। রাগিনী উঠে দাঁড়াতেই ছেলেটিকে দুহাতে তুলে নিল ফাহমিদ। তার শরীরও একটু ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল বটে। র’ক্তে মাখামাখি অবস্থা ছেলেটির। দুজন মিলে আস্তে করে ধরে নিয়ে গাড়ি অবধি গেল তারা। রাগিনী গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলল,
“ড্রাইভার চাচা! সিটি হসপিটাল যেতে হবে। তাড়াতাড়ি গাড়িটা চালাবে। বাচ্চা ছেলেটার অনেক ব্লি’ডিং হচ্ছে।”

ছেলেটাকে গাড়িতে আধো শোয়া করে রেখে রাগিনী উঠে বসল। ছেলেটার অন্যপাশে বসল ফাহমিদ। সে জানে রাগিনী একা এসব সামলে উঠতে পারবে না। তার সাহায্যের প্রয়োজন।

প্রায় আধঘন্টা হয়ে গিয়েছে। অভিরূপের আশপাশ থেকে লোকজনের সরগরম কমছে না। বাড়ছে তো বাড়ছেই। এবার গার্ড ডাকা হয়েছে। ভীড় কমানো হচ্ছে। অভিরূপ যেন এক গভীর সমুদ্রের মধ্যে পড়েছিল। নিশ্বাস নিতে পারছিল না এই ভীড়ে। এতো মানুষের মাঝ থেকে বেরিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল অভিরূপ। নোমান তড়তড় করে বলে উঠল,
“বেঁচে আছিস? আরো যা নিজ থেকে এগিয়ে ফ্যান ফলোয়ারস্ দের আশা মিটিয়ে দিতে। আর একটু হলে তোকেই হসপিটালাইজড করতে হতো।”

“এমনভাবে বলছিস কেন? ওরা এতো আশা নিয়ে এসেছে। পূরণ না করলে লেডিস্ দের ক্রাশ কীভাবে থাকব?”

অভিরূপের নির্লিপ্ত বানী শুনে নোমানের আর কিছু বলতে ইচ্ছে করল না। রায়ানের সাথে সাথে হাঁটা ধরল সে। গাড়ির কাছাকাছি যেতেই একটা সাদা রঙের দামী ব্র্যান্ডের গাড়ির দরজা খুলে দেওয়া হলো। অভিরূপকে রায়ান ইশারা করে গাড়িতে বসতে বলল। অভিরূপ গাড়ির মধ্যে ঢুকতে যাবে সেই মূহুর্তেই বিকট এক শব্দ হলো। আশেপাশের সবটা যেন নড়ে উঠল। সকলের অনুভূত হলো গরম একটা বাতাস। দাউদাউ করে জ্বলে ছারখার হয়ে গেল একটা কালো রঙের গাড়ি। তাপের চোটে মুখ ঢেকে নিল অভিরূপ। আশপাশে সকলের মধ্যে ছেয়ে গেল আতংক। কী করে এমন হলো? রায়ান নিজেকে সামলে পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠল,
“সবাই সতর্ক হও। আর মি. চৌধুরী! আই এম সরি ফর দ্যাট। আমাদের দেশে এসেই আপনার এমন বাজে এক্সপেরিয়েন্স হবে আমরা ভাবতে পারিনি। আসলে আপনি হয়ত জানেন যে আমাদের ঢাকায় একটা টে’রোরিস্ট টিমের আগমন হয়েছে। হতে পারে এটা তাদেরই কাজ। আমি জানি এটা আপনার মনে হতেই পারে যে আমরা এখানকার কেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি তাহলে! হয়ত আমাদের আরো সতর্ক থাকা উচিত ছিল। উই আর সরি। আমরা কী যেতে পারি?”

অভিরূপ দাঁড়িয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তৎক্ষনাৎ স্মিত হাসি দিয়ে বলল,
“এতো রচনা ভালো লাগে না আমার শুনতে। যা হয়েছে হয়ে গেছে। চোখের সামনে প্রথম ব্লা’স্ট দেখলাম। বেশ ইন্টারেস্টিং!”

রায়ান অবাক হলো আরো। ছেলেটার মনে বিন্দুমাত্র ভয় নেই? আশ্চর্য তো! রায়ান বিপরীতে একটা হাসি দিতেই এবার আরো বিকট শব্দ শোনা গেল। লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করল এবার। রায়ানের বুঝতে সময় লাগল না টে’রোরিস্ট টিমের উদ্দেশ্য আজ পুরো এয়ারপোর্ট ধ্বংস করার। সেই সঙ্গে অভিরূপকে শে’ষ করার প্ল্যানিং নিয়েই এরা আজকের কাজটা শুরু করেছে। তাড়াহুড়ো করে রায়ান অভিরূপ আর তার টিমের বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“গাড়িতে বসো। আর ড্রাইভার তুমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাও এয়ারপোর্ট থেকে। কুইক!”

কথা শেষ হতে না হতেই রায়ানের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেল একটা গু’লি। নিচু হলো রায়ান। গু’লি গিয়ে লাগল গাড়ির কাঁচে। ভেঙ্গে গেল গাড়ির কাঁচ। রায়ান ‘শিট’ বলতেই নিজের পেছনের পকেট থেকে রি’ভলবার বের করে তার টিমের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“বি রেডি!”

আত’ঙ্কবাদীর সবাই আড়াল থেকে গু’লি ছুঁড়ছে। রায়ান এবং সবাই মিলে একটা গাড়ির পেছনে গিয়ে লুকালো। অভিরূপকে বসানো হলো গাড়িতে। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করল। নোমানও এবার ভয় পেয়ে গেছে। অভিরূপের উদ্দেশ্যে শক্ত গলায় বলে উঠল,
“এইজন্যই! ঠিক এই কারণে আমি তোকে এখানে আসতে মানা করেছিলাম। দেখ এখন কী হচ্ছে!”

অভিরূপ গাড়ির সিটে ঠেস দিয়ে বেশ উত্তেজনার সাথে বলো উঠল,
“আরে চিল! দেখ না কেমন অ্যাডভেঞ্চার ফিলিং আসছে। আমার তো দারুণ লাগছে। গানও গাইতো ইচ্ছে করছে। তোর ইচ্ছে করছে না।”

এবার রেগেমেগে নোমান অভিরূপের গালে এক চাপড় দিয়ে বলল,
“নিকুচি করেছে তোর গানের। প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারলে হয়।”

আচমকা গাড়ি থামালো ড্রাইভার। অতিরিক্ত ব্রেক নেওয়ার কারণে গাড়ির পেছনের সিটে বসে থাকা নোমান এবং অভিরূপ দুজনেই ভড়কে গেল। নোমান সোজা হয়ে বসে বলল,
“এখন কী সমস্যা ভাই! গাড়ি থামালে কেন?”

ড্রাইভার ভয়ে ভয়ে জবাব দিল,
“সামনে একটা বাচ্চা।”

অভিরূপ গাড়ি থেকে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল। সামনে একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে কাঁদছে অনবরত। গোলা’গু’লিতে ভয় পেয়েছে বেশ। অভিরূপ বলল,
“আরে ওকে তো বাঁচানো দরকার।”

অভিরূপ তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নামতে যায়। কিন্তু তার আগেই গাড়ির দিকে তাক করে গু’লি ছুঁড়তে এগিয়ে আসে হাতে রি’ভলবার ধরা কয়েকজন। অভিরূপের হাত টেনে ধরে নোমান। কড়া গলায় বলে,
“অভিরূপ, তুই নামবি না। তুই নামলে বেঁচে কিন্তু ফিরতে পারবি না।”

অভিরূপ হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর কঠিন সুরে বলে,
“বাচ্চাটার জীবনেরও তো দাম আছে।”

নোমান হাত ছাড়ে না তবুও। অভিরূপ খেয়াল করে একটা অল্পবয়সী মেয়েকে। যেই মেয়ে বাচ্চাটিকে আগলে ধরল বেশ সাহসের সাথে। তার সাহস দেখে অবাক হলো অভিরূপ। চোখমুখ ছলকে উঠল তার। মাথাটা জানালার বাহিরে বের করে আরো মনোযোগের সহিত চেয়ে দেখতে লাগল মেয়েটির অঙ্গিভঙ্গি। তার মুখের অর্ধেকাংশে কাপড় জড়িয়ে রাখা। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরতে চেয়ে কাপড়টা মুখ থেকে নিচে নেমে যায়। দৃশ্যমান হয় এক মায়াবী মুখের। অস্থিরতা ছড়ানো সেই মুখে। ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে অন্যহাতে আবারও মুখে কাপড় জড়াতে চাওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিরূপের অপলক দৃষ্টি সরতেই চাইছে না আর। আঁটকে গেছে সেই অস্থির মুখে।

চলবে…

[#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২২

অভিরূপ শুনেছিল অধিকাংশ মানুষ নাকি রূপ থেকে প্রেমের পড়ে। কিন্তু সে তো গাড়ির সামনে থাকা সেই নারীটির সাহসের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। সেই টান টান চেহারায় অভিরূপের চোখে পড়ল না কোনোরকম ভয়। সেই চোখে ছিল না কোনো ভয়মাখা দৃষ্টি। তবে ছিল এক ধরনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেই দৃষ্টিতে অভিরূপ হারিয়ে গেছিল এক অতল গভীরে। অতিরিক্ত সরব, চেঁচামেচি, গো’লাগু’লিতে এবার চকিতে তাকায় অভিরূপ। এক নতুন টিমের আবির্ভাব হয়েছে। তারা একনাগাড়ে নিজের রিভ’লবার চালিয়ে প্রতিহত করতে ব্যস্ত। হয়তবা পুলিশেরই কোনো লোক হবে। আচমকায় অভিরূপের কানের ঠিক উপরে অনেকটা নিকট দিয়ে চলে গেল একটা তীব্র গু’লি। একটুর জন্য তা এসে লাগল না অভিরূপের কপালে। তৎক্ষনাৎ নোমান তার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে এলো। রাগে কটমট করে বলে উঠল,
“তুই দিনকে দিন এমন জ্ঞান হয়ে যাচ্ছিস কেন অভিরূপ! এক্ষুনি কী হতো জানিস? পাগল হয়ে গিয়েছিস নাকি?”

অভিরূপের মধ্যে কোনো রকম হেলদোল দেখা গেল না। ডোন্ট কেয়ার ভাবটা জারি রেখে বলল,
“হতে গিয়েছিল। হয়নি তো। জাস্ট চিল! আমাকে যদি সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রাখতে চায় তাহলে আমি বাঘের খাদ্য হয়েও বাঘের পেটের মধ্যে গিয়েও বেঁচে ফিরে আসব সুইটহার্ট!”

বলেই অভিরূপ নোমানের দাড়ি ভর্তি গালে হাত দিয়ে টানতে গেল। নোমান হাতটা সরিয়ে রাগের ভাবটা নিয়েই বলল,
“ডোন্ট কল মি সুইটহার্ট। গালে হাতও দিবি না খবরদার। এতো কিছুর মাঝে তুই এখনো শান্ত আছিস কীভাবে? তোর চিন্তা হচ্ছে না যে বেঁচে ফিরতে পারব কিনা?”

“তোর দাড়িওয়ালা গালে আমার এমনিতেও হাত দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। অতি আবেগে হাত দিয়ে ফেলেছি। বাই দ্যা ওয়ে, ওই মেয়েটা…”

কথা অসম্পূর্ণ রেখে সামনের কাঁচ দিয়ে বাহিরের দিকে দেখার চেষ্টা করল অভিরূপ। তার উৎসুক চোখ খুঁজে বেরোলো যেই সাহসে ভরা নেত্রপল্লবকে। পেল না। সামনে মেয়েটির কোনো চিহ্ন নেই। আর না আছে সেই বাচ্চাটি। অভিরূপ কিছুটা বিস্মিত হলো। এটা মেয়ে নাকি ম্যাজিশিয়ান? এতো দ্রুত কীভাবে গায়েব হতে পারে? তখনি নোমান ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল,
“গাড়ি স্টার্ট করুন। তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হতে চাই আমরা।”

ড্রাইভার নোমানের কথা অনুযায়ী গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিন্তু গাড়ি একটুও এগোয় না। কেমন যেন নড়েচড়ে ওঠে। নোমান বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“হলো টা কী?”

“মনে হয় ওরা গাড়ির চাকায় গু’লি করেছে। তাহলে গাড়ি তো চলবে না।”

নোমানের রাগ হয়। এ কোথায় ফেঁসে গেল? আদেও এখান থেকে বের হতে পারবে? নাকি এখানেই প্রা’ণত্যাগ করতে হবে? সব দোষ তার সঙ্গে থাকা এই অভিরূপের। নোমানের এই মূহুর্তে খুব ঝাড়তে ইচ্ছে করছে তাকে। কিন্তু নিজের রাগ দমিয়ে নিরবই থাকল সে। বাহিরের আওয়াজ কিছুটা কমেছে। হয়ত পুলিশ টিম ধীরে ধীরে সব সামলে নিচ্ছে। একটুখানি হলেও নিশ্চিন্ত হয় নোমান।

রায়ানের টিমের বাকি সকলে ব্যস্ত টেরো’রিস্ট টিমকে প্রতিহত করতে। রায়ান এক লাল গাড়ির আড়ালে বসে কাতরাচ্ছে। প্যান্ট ছেদ করে একটা গু’লি ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। ডান পা র’ক্তে ভিজে গেছে। নিচেও ছড়িয়ে পড়েছে র’ক্ত। নিজের পা নিয়ে নড়তেও পারছে না সে। চোখ বন্ধ করে গাড়ির সাথে ঠেস লাগিয়ে বসল সে। কেমন যেন নিস্তেজ লাগছে নিজেকে। হঠাৎ করে নিজের পাশে অন্য অস্তিত্বের উপস্থিতি পেলো রায়ান। টের পেলো কেউ তার কাছেই এসেছে। অন্যরকম সুভাস ছড়ালো হাওয়ায়। আবার কোনো আত’ঙ্কবাদী দলের লোক নয় তো? হতেই পারে। এছাড়া কেউ তো আসার সম্ভবনা নেই। চোখ বুঁজেই নিজের কাছে থাকা রি’ভলবার হাতালো রায়ান। হাত দিয়ে ধরতেই চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে রি’ভলবার তাক করল ঠিক তার ডানপাশে। দৃশ্যমান হয় এক মেয়ের শুঁকনো চোখমুখ। রি’ভলবার তার দিকে তাক করতে দেখে চেহারার রঙ আরো পাল্টে যায় মেয়েটির। সেকেন্ডে সেকেন্ডে একবার এই ভয়া’নক অ’স্ত্রের দিকে তাকায় তো একবার রায়ানের দিকে। তারপর আর কোনো কিছু না ভেবে চোখমুখ খিঁচে একটা চিৎকার লাগায় সে। রায়ান ধড়ফড়িয়ে ওঠে। বুঝতে পারে মেয়েটা কোনো ষড়যন্ত্রকারী নয়। হয়ত লুকানোর উদ্দেশ্যে এই জায়গায় বেছে নিয়েছে। কিন্তু তাকে এই মূহুর্তে থামানো দরকার। সে হম্বিতম্বি করে বলে ওঠে,
“স্টপ প্লিজ, স্টপ। চিৎকার করবেন না।”

মেয়েটির চিৎকার থামে না। কোনোদিক না তাকিয়ে নিজের চিৎকারে যেন গভীর মনোযোগ দিয়েছে সে। আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে সে জোরে বলে ওঠে,
“আপনি চুপ না করলে হা করে চিৎকার করার জন্য মুখের ভেতরে রি’ভলবারের যে কয়টা গু’লি অবশিষ্ট রয়েছে সব ঢুকিয়ে দেব। ফর গড সেক, চুপ করুন।”

মেয়েটি হেঁচকি তুলে পরক্ষণেই থেমে যায়। সে ভেবেছিল রায়ান তাকে আ’তঙ্কবাদীর দলের লোক ভেবে আজকে উপরে পাঠিয়েই ছাড়বে। সে মিনতি করে বলে উঠল,
“আমি কিছু করিনি। আমি তো শুধু লুকিয়েছিলাম। আচ্ছা আপনি তো ইন্সপেক্টর রায়ান! তাই না?”

বলেই মেয়েটি খুব উৎসুকের সাথে তাকিয়ে রয় রায়ানের মুখের দিকে। রায়ানের অস্বস্তি বোধ হয় মেয়েটির এমন চাহনিতে। ছোট ছোট চোখে নিষ্পলক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রয়েছে সে। সে নড়েচড়ে বলে,
“হ্যাঁ কিন্তু আপনি আমাকে কীভাবে চিনলেন?”

মেয়েটি এক ঝলক হেঁসে আগ্রহের সাথে বলে ওঠে,
“আ…আমি নয়ন। মানে নয়নতাঁরা। আমি নয়নতাঁরা। আমাকে চিনতে পেরেছেন?”

রায়ান ভ্রু কুঁচকালো এবার। চেনার চেষ্টা করল। মুখশ্রী তো অচেনা। সে ভেবেও পাচ্ছে না এই সিচুয়েশনে একটা মেয়ে কীভাবে নিজেকে ইন্ট্রডিউস করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে? নয়নতাঁরার মুখটা এবার ভার হয়। লোকটা কী এতো ভাবছে? সে কী তাকে চিনতে পারেনি? নয়নতাঁরার খেয়ালে আসে রায়ানের র’ক্তাক্ত পা। তড়িঘড়ি করে সে বলে ওঠে,
“আরে আপনার পায়ে কী হয়েছে? দেখি!”

এবার গু’লির শব্দে রায়ান ও নয়নতাঁরা দুজনেই চমকে ওঠে। নয়নতাঁরা চিৎকার দিয়ে উঠে নিজের কান চেপে ধরে। রায়ান এবার কোনোরকমে উঠে দাঁড়ায়। হাতে রি’ভলবার নিয়ে তাক করে বেশ কয়েকটা গু’লি ছুঁড়তে থাকে একাধারে। তা দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে নয়নতাঁরা। তার হাতে টান পড়ে। রায়ান তার হাত ধরে বলে,
“এখানে এভাবে ভয়ে জড়ো হয়ে থাকলে ওরাই আপনার চিৎকারে গু’লি একাধারে আপনার মুখে পুড়ে দেবে মিস। আমার সাথে চলুন বাঁচতে চাইলে।”

নয়নতাঁরা উঠে দাঁড়াতেই আবারও বিকট শব্দ হয়। দুজনে দ্রুত মাথা নিচু করে চলে আসে। দুজন অন্য গাড়ির আড়ালে দাঁড়ায়। আঙ্গুল উঁচিয়ে রায়ান আর উদ্দেশ্যে বলে,
“লিসেন, যতই শব্দ হক মুখে তালা দিয়ে রাখবেন। আর এখান থেকে বের হওয়ার চিন্তাও মাথাতে আনবেন না।”

কথাটুকু শেষ করে আর দেরি করে না রায়ান। নয়নতাঁরা কিছু বলার আগেই সে সেখান থেকে প্রস্থান করে। নয়নতাঁরা ভার মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। সেও বাহিরে যেতে চায়। কিন্তু রায়ান তো তাকে মানা করে দিয়েছে। দুটো হাত মুঠো করে বলে,
“ধুর! ভালো করে কথাও বলতে পারলাম না। উনার কতটা লেগেছে। র’ক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। তবুও থামার নাম নেই। ইশশ…!”

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে নিজের রি’ভলবার তাক করে দুইজনকে মে’রেছে রায়ান। তার রি’ভলবারে অবশিষ্ট নেই কোনো গু’লি। তাই সেটা ছুঁড়ে মারল একজনের মাথায়। পেছন থেকে অন্যজন তেড়ে এলো ধারা’লো ছুরি নিয়ে। রায়ান ঘুরে তার সঙ্গে হাতাহাতি করতে গিয়ে পড়ে গেল। এই পা নিয়ে আর উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পেলো না। সেই ছুরি দ্বারা রায়ানকে প্র’তিহত করার চেষ্টায় ধেয়ে আসে টে’রোরিস্ট টিমের একজন। রায়ানের মনে হয় এটাই কী তার শেষ? তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। রায়ান দেখে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই ছুরিটার ধা’রালো অংশ শক্ত করে হাতের মুঠোয় ধরে আছে। হাত বেয়ে টুপটুপ করে পড়ে যাচ্ছে তাজা র’ক্ত। ডার্ক ব্লু কোট পরিহিত লোকটি রি’ভলবার তাক করে একে একে দুইবার ট্রিগারে চাপ দিতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ল সামনে থাকা সেই লোকটি। ঘাড় ঘুরিয়ে রায়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করল সে। স্মিত হেঁসে বলল,
“ইন্সপেক্টর রায়ান! আমি বলেছিলাম আপনি একা পারবেন না।”

রায়ান ওঠার চেষ্টা করে। আর বলে,
“অফিসার নির্জন! আপনি এখানে?”

নির্জন হাত বাড়িয়ে দেয় রায়ানের দিকে। রায়ান না চেয়েও হাতটা ধরে উঠে দাঁড়ায়। নির্জন রি’ভলবার নিজের পকেটে ঢুকিয়ে জবাব দেয়,
“আমি না এলে আপনাকে প্রাণে কে বাঁচাতো বলুন তো? আপনার আমাকে থ্যাংকস বলা উচিত।”

বলে থামে নির্জন। নিচে তাকিয়ে রায়ানের পা পর্যবেক্ষণ করে বলে,
“সিচুয়েশনে অনেকটা কন্ট্রোলে এসেছে। আপনি আমার সঙ্গে হসপিটাল চলুন কুইক! ব্লিডিং হচ্ছে। এজ অ্যা অফিসার, আমার দায়িত্ব আমার অন্য টিমের সদস্যকে সাহায্য করা।”

রায়ান প্রথমে রাজি হয় না। কিন্তু পায়ের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় নির্জন মেহরাজকে ডেকে এম্বুলেন্সের সাহায্যে রায়ানকে সিটি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। আড়াল থেকে সবটা দেখে নয়নতাঁরা নিজে। কিন্তু আফসোস একটাই! সে বের হতে পারে না। যেতে চেয়েও যেতে পারে না।

সবটা শান্ত হবার পর নির্জন মেহরাজের উদ্দেশ্যে বলে,
“মেহরাজ, আরো যারা যারা আহত হয়েছে আমাদের টিমের সবাইকে হসপিটালাইজড করার ব্যবস্থা করো। আর যারা আটকা পড়েছে তাদেরকে কাস্টারিতে রাখার ব্যবস্থা করো। দেখো দেখো কে কে বেঁচে আছে। আর অভিরূপ চৌধুরী কী এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছে?”

মেহরাজ দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
“ইয়েস স্যার। অভিরূপ চৌধুরী সহ তার বন্ধু সেফলি অন্য গাড়ি নিয়ে হোটেলের দিলে রওনা দিয়েছে।”

“তাহলে আমাদের গাড়িও বের করো। আমিও সিটি হসপিটাল যেতে চাই।”

“ইন্সপেক্টর রায়ানকে দেখতে?”

উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে মেহরাজ। নির্জন অটল থেকে বলে,
“গো ফাস্ট, মেহরাজ।”

মেহরাম তবুও যায় না। আবারও জিজ্ঞেস করে,
“স্যার, যার সঙ্গে আপনার এতো রেষারেষি। যার সাথে আপনার একটুও বনে না। তাকে নিয়ে আপনি টেনশনও করেন কেন স্যার? কাল যখন ইন্সপেক্টর রায়ানের গাড়ির ব্লা’স্ট হওয়ার খবরটা পেলেন সব ছেড়ে আপনি রায়ানের কাছে উপস্থিত হলেন। আপনাকে বোঝা খুব মুশকিল।”

“তাহলে বোঝার চেষ্টা করে নিজের মস্তিষ্ক আরো খারাপ কেন করছো। যাও আর গাড়ি বের করো।”

এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলল নির্জন। মেহরাজ থতমত খেয়ে বলল,
“ই…ইয়েস স্যার।”

হসপিটালের রিসেপশনে অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাগিনী। চোখেমুখে উদ্বিগ্নতা। মাথায় আ’ঘাত পাওয়া বাচ্চা ছেলেটির জন্য মনে এক রাশ বিষণ্ণতা। সবকিছু মিলিয়ে সে হসপিটালের ফর্মালিটি পূরণ করতে এসেছে। রিসেপশনিস্ট তাকে জিজ্ঞেস করে,
“ম্যাম, পেশেন্টের নাম?”

রাগিনীর মুখটা আরো চুপসে যায়। সে কী করে বলবে ছেলেটির নাম? সে তো তাকে রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছে। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে উত্তর দিল,
“আমি তো জানি না ঠিক। আসলে তাকে আমি এক্সিডেন্টলি পেয়েছি। আই মিন রাস্তায় সেন্সলেস অবস্থায়।”

“আচ্ছা পেশেন্টে এজ কত?”

রাগিনী একটু ভেবে উত্তর দেয়,
“দশ বছর মতো!”

রিসেপশনিস্ট মাথা নাড়িয়ে তা কাগজে লিখে। রাগিনী বলে,
“যত টাকা লাগবে আমায় বলবেন। আমি ব্যবস্থা করব। কিন্তু ছেলেটির টেক কেয়ারের কোনো কমতি রাখবেন না প্লিজ!”

“ডোন্ট ওয়ারি ম্যাম।”

রাগিনী আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে তার কানে এক পরিচিত কন্ঠস্বর পৌঁছালো। থমকে গেল সে। এই গম্ভীর গলা তার অতি পরিচিত। তার পাশ কাটিয়ে এক লম্বাটে পুরুষ হেঁটে চলে গেল। সে বলছিল,
“ইন্সপেক্টর রায়ানের সব ফর্মালিটিস্ পূরণ হয়েছে? কেমন আছেন উনি এখন?”

রাগিনী তড়িঘড়ি করে পেছন ফিরে তাকায়। বেশ কয়েকজন লোককে লিফটে উঠতে দেখল। কিন্তু মুখটা দেখতে পেল না রাগিনী। বিরবির করে বলে উঠল,
“মনে হলো কোহিনূর আমার পাশ কাটিয়ে গেলেন!”

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here