গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব ৩৭+৩৮

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩৭
.
.
🦋
JM বের হতে বের হতে গুলি আওয়াজ যেন আরো কাছাকাছি আসতে লাগলো৷ JM রুম থেকে বের হতে নিবে তখনি একটা গুলি এসে JM এর হাতে লাগে ৷ JM কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারিদিক কালো ধোয়ায় ছেয়ে যায়৷

___________

হসপিটালের করিডরে প্রাণো RV সিমি অপেক্ষা করছে ডক্টরের জন্য, ডক্টর এক ঘন্টা আগে কণাকে নিয়ে ভেতরে নিয়ে গেছে৷ এখনো কোন খবর পাওয়া যায়নি৷ প্রাণো দম মেরে চেয়ারে বসে আছে৷ RV মুখে হাত দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে ৷ ভালোবাসার মানুষটা যখন কষ্টে থাকে তখন কতোটা বুকে যন্ত্রনা হয় তা কেবল মাত্র RV মতো প্রেমিকরা জানে, সিমি RV কে সামলানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷

কিছুক্ষণ বাদে ডক্টর এসে জানায় কণাকে কেভিনে শিফট করে দেওয়া হয়েছে৷ রেপ কেস বিধায় ডক্টর পুলিশ কে খবর দিতে চেয়েছিলো কিন্তু প্রাণো ডক্টরের সাথে আলাদা কথা বলে ৷ প্রাণো আর ডক্টরের মাঝে কি কথা হয়েছে সেটা সিমি বা RV কেউ জানে না৷ ডক্টর প্রাণোর কথায় রাজি হয়ে পুলিশকে কিছু জানায় না৷ কণার যেহেতু জ্ঞান ফেরেনি তাই কাউকে এখন কণার কেভিনে এলাউ করছে না ডক্টর৷ সিমি RV প্রাণো বাইরে কণার জ্ঞান ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো৷

সিমি প্রাণোকে দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ প্রাণো অদ্ভুত ভাবে এতোটা শান্ত স্থির হয়ে বসে আছে তা দেখে প্রচন্ড রকমের আশ্চর্য হয় সিমি৷ সিমি RV কে সামলাতে সামলাতে বলতে লাগলো ,” RV প্লিজ নিজেকে শান্ত করো ৷ তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে কণাকে সামলাবে কে? দেখো কণার সামনে মটেও কাঁদবে না বরং স্ট্রং হয়ে ওর পাশে দাড়িয়ে বলবে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ ওর পাশে আমরা সবাই আছি ৷ কিচ্ছু হয়নি এটাকে একটা দূর্ঘটনা মনে করে ভুলে যেতে বলবে৷ কিন্তু প্রাণোর কি হলো ও এমন চুপ হয়ে আছে কেন RV?”

সিমির কথা শুনে RV প্রাণোর দিকে তাকিয়ে দ্রুত ঘড়ি দেখে বলে উঠলো ,” প্রাণো চলো তোমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসি৷ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে৷ ”

প্রাণো হুম বলে উঠে দাড়ায়৷ সিমি অবাক হয়ে যায় এটা দেখে প্রাণো এখানে থাকার জন্য কোন জোর করলো না ৷ বরং চলে যাওয়ার উঠে দাড়িয়েছে৷

RV কোন কথা না বলে দ্রুত বেগে হাটতে লাগলো তার পিছু পিছু প্রাণো যেতে লাগলো৷

পুরো রাস্তায় প্রাণো বা RV কেউ কারোর সাথে কথা বলেনি ৷ স্মরণের বাড়ির পেছনের রাস্তায় প্রাণোকে নামিয়ে দেয় RV ৷ প্রাণো গাড়ি থেকে নেমে RV উদ্দেশ্য বলে, ” জানোয়ারটার শরীরে যেন একটা আচর ও না পড়ে RV , এন্ড ইটস মাই ওডার্র ৷ ”

” ঠিক আছে ৷ ওই কুত্তার বাচ্চা শরীরে কোন ফুলের টোকাও পড়বে না কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে ওর এমন অবস্থা করবে যেন বেঁচে থাকতে মরে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবে৷”

প্রাণো RV কথার প্রত্ত্যুতরে কিছু বললো না বরং পেছনের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল৷

প্রাণো তাদের রুমের ব্যালকনি দিয়ে যেভাবে নেমে ছিলো ঠিক সেভাবে উঠে যায়৷ পেছনের লাইট বন্ধ থাকায় প্রাণোকে কেউ দেখেনি৷ প্রাণো রুমে ঢুকে দ্রুত ফ্রেস হয়ে প্রিয়ার নাম্বারে ডায়াল করে, প্রিয়া প্রাণোর নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে কল কেটে চাবি নিয়ে দ্রুত প্রাণোর রুমে সামনে গিয়ে তালা খুলে ভিতরে ঢুকে যায়৷

” আপু কণা আপু কে খুজে পেয়েছো?”

” হুম পেয়েছি৷ স্মরণ কোথায়?”

” দুলাভাই! ওহ তোকে বলতে ভুলে গেছি ৷ আমাদের শশুর বাবা কে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ তুই যাওয়ার পর থেকে, তাই দুলাভাই সাজিত দাভাই আব্বু ওদের খুজতে গেছে৷ ”

” বাকিরা কোথায়?” শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো প্রাণো ৷

” বাকিরা ড্রইংরুমে ৷ মামুনি খুব কাঁদছে আপু৷ ”

” গেস্টরা সবাই চলে গেছে?”

” হুম তারা অনেক আগেই চলে গেছে৷ তোকে দুলাভাই ডাকতে চেয়েছিলো শশুর বাবার কথা জানানোর জন্য কিন্তু আমি বারণ করেছি৷”

“ভালো করেছিস৷ এখন তুই তোর কাজে যা আমি ঘুমাবো৷”

” মানে! আমাদের শশুর বাবা কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুই এতোটা শান্ত থেকে কি করে বলছিস তুই এখন ঘুমাবি হাউ?”

” প্রিয়ু আমার এখন কথা বলতে ভালো লাগছে ৷ ”

প্রিয়া প্রাণোকে এতো শান্ত আর গম্ভির গলায় কথা বলতে দেখে প্রিয়ার কেন যেন ঘটকা লাগছে৷ তার বোন যে কোন ছোট খাটো বিষয় নিয়ে গম্ভির হয় না সেটা সে ভালো করেই জানে কিন্তু আজ তার বোন প্রাণোকে একদম আলাদা লাগছে অদ্ভুত লাগছে ৷ বাইরে টা শান্ত দেখতে হলেও ভেতরে যে আগ্নেয়গিরি লাভা টকবগ করে ফুটছে সেটার ধারণা কিছুটা হলেও প্রিয়া বুঝতে পারছে৷

প্রাণো বেডের উপর শুয়ে পরে বলে, ” যাওয়ার সময় লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে যাস৷ ”

প্রিয়া প্রাণোর কথা মতো লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে নিচে চলে যায়৷

_________

” মিস কণার বাড়ির লোক কে এখানে?”(নার্স)

” আমরা বলুন কি হয়েছে? কণা ঠিক আছে তো?” ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো RV.

” পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে৷ আপনারা চাইলে দেখা করে আসতে পারেন তবে একজন একজন করে৷ আর একটা কথা পেশেন্টকে উত্তিজিত করবেন না এটা তার জন্য ক্ষতি কর৷”

” ওকে নার্স আমরা কণাকে উত্তিজিত একদম করবো না নিশ্চিন্ত থাকুন৷ আর RV তুমি গিয়ে আগে কণার সাথে দেখা করো তারপর আমি না হয় যাবো৷”

RV আর কিছু শুনলো না দ্রুত কেভিনের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে কণার হাত ধরে পাশে বসে পড়লো৷ কণা চোখ মেলে তাকাচ্ছে না ৷ অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছে৷

RV বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে কণা জেগে আছে৷ RV কণার হাতে চুমু খেয়ে বলে, ” কণাপাখি চিন্তা করো না তুমি দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে৷ তোমাকে এই হসপিটালে শুয়ে থাকা অবস্থায় একদম মানাচ্ছে না৷ প্লিজ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাও৷”

কণা ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু কান্না আটকাতে না পেরে কেদেঁ ফেলে৷ RV কণার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে কণার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,” যা হয়েছে তা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও কণাপাখি৷ তুমি যদি ভেবে থাকো এই সামান্য বিষয় নিয়ে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো তাহলে সেটা তুমি ভুল ভাবছো৷ RV ভালোবাসা এতোটাও দূর্বল নয় যে তোমাকে ছেড়ে দিবে৷ ”

” আমি অপবিত্র হয়ে গেছি RV ৷ নষ্ট হয়ে গেছি আমি , তুমি আমাকে ভালোবেসে কিচ্ছু পাবে না RV তার চেয়ে তুমি আমাকে ভুলে যাও ৷ এই নষ্ট মেয়েকে ভালোবেসে জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয়না ৷”

কণার কথা শেষ হতেই কণার গালে RV হাত উঠে গেল৷ থাপ্পড় খেয়ে কণা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলো৷ RV যে তার কথা শুনে ভিষণ ভাবে ক্ষেপে গেছে তা কণা বেশ ভালো করে জানে৷ RV রাগে ফুসতে ফুসতে বলতে লাগলো,” তোর সাহস কি করে হয় নিজেকে এতো জঘন্য কথা বলতে হাহ! একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ তুই আগেও যেমন আমার কাছে পবিত্র ছিলি আর এখন ও আছিস ৷ কিছু নোংরা হাত তোকে ছুঁয়েছে তুই তো চাস নি তাহলে! তোকে জোর করে ছুয়েঁছে দোষ তাদের অপবিত্র তারা তুই না৷ যখন কেউ কারো অনুমতি বিহিন স্পর্শ করে তখন দোষ হয় একটা মেয়ের কিন্তু আমার কাছে সেই পুরুষ দোষি যে একজন নারীর অনুমতি বিহিন স্পর্শ করে নিজের পুরুষত্ব জাহির করে৷ আমি একজন পুরুষ হয়েও ধিক্কার জানাই এই সমাজ কে যারা একজন নারীর পাশে না দাড়িয়ে পুরুষের পাশে দাড়িয়ে নারীর দোষ গুন নিয়ে আলোচনা করে৷

তোমাকে আমি একটা কথাই বলবো ভুলে যাও আজকের ঘটনা৷ ভুলে যাও সব কিছু শুধু মনে রাখো RV তোমার প্রেজেন এন্ড ফিউচার ৷ ডক্টর তোমাকে যেদিন হসপিটাল থেকে ছুটি দিবে তার পরের দিন আমরা বিয়ে করবো৷ ”

” বিয়ে!”

” হ্যাঁ বিয়ে, তোমাকে নিয়ে আমি আর রিক্স নিতে চাই না কণাপাখি ৷ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা বিয়ে করে নিবো৷ ওহ কথা বলতে বলতে তো ভুলেই গেছি বাইরে সিমি দাড়িয়ে আছে তোমার সাথে দেখা করবে ৷আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ৷”

কণা মাথা নেরে সায় জানায়৷ RV কেভিন থেকে বেরিয়ে সিমি কে বলে ভিতরে যেতে…..

দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে কণা তাকিয়ে দেখে সিমি ৷

” কণা এখন কেমন আছো?”

কণা কোন উওর দিলো না দেখে সিমি আবার বলতে লাগলো,” শোন কণা জীবনে এমন অনেক কিছু অনাক্ষিত ঘটনা ঘটবে যা আমরা মেনে নিতে না পারলেও মেনে নিতে বাধ্য হই৷ আর এখানে তোমার কোন দোষ নেই তাই নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করে এটাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও৷ RV মতো এমন একজন আন্ডারস্ট্যান্ডিং হাসবেন্ট কিন্তু সবার কপালে জোটে না৷ তুমি ভাগ্যবতী তাই এমন একজন পেয়েছো৷ শুধু একটা কথাই বলবো কণা নিজের একা ভেবো না কখনো কারণ তোমার পাশে আমরা সবাই আছি ৷ RV আমি অলটিম মেম্বার আর প্রাণো৷ ”

” প্রাণো! প্রাণো কোথায় সিমি আপু?”

” বাড়িতে চলে গেছে৷”

” প্রাণো আমার সাথে দেখা না করেই চল গেল? আমি জানি কেন প্রাণো আমার সাথে দেখা করেনি৷ ”

” কেন কণা?”

” আমার আজ এই অবস্থার জন্য প্রাণো নিজেকে দায়ি করছে৷ ঠিক সময়ে আমাকে বাচাঁতে পারেনি বলে নিজেকে দোষারোপ করছে৷”

“কিন্তু ওকে তো বাইরে থেকে একদম শান্ত দেখতে লাগলো কণা!”

” তুমি এখনো প্রাণোকে চেনোনি আপু৷ প্রাণো কে দেখে তুমি কখনোই ওর মনের তল খুজে পাবে না৷ ওর মনে কি চলছে তা একমাত্র ওই বলতে পারবে৷ ”

সিমি কণার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর নার্স এসে তারা দেয় যাতে পেশেন্টকে কম কথা বলানো যায়৷ সিমি কণার থেকে বিদায় নিয়ে কেভিন থেকে বেরিয়ে RV কে বলে,” RV আমি আজ কণা সাথে থেকে যাচ্ছি তুমি বরং বাড়ি ফিরে যাও৷”

” না সিমি আমি থাকবো ওর পাশে তুমি শানের কাছে ফিরে যাও আর আমার বাড়িতে এমন কেউ নেই যে ফিরে গিয়ে তাদের সাথে দু একমিনিট কথা বলতে পারবো৷”

” ওকে তাহলে তুমি থাকো আমি যাচ্ছি ৷ কাল সকাল বেলা আমি তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসবো ৷ ”

” ওকে”

সিমি চলে যেতে RV কেভিনে প্রবেশ করে৷

___________

নাম করা বিজনেসম্যান হওয়ায় পুলিশ চব্বিশ ঘন্টা হওয়ার আগেই জীবন মাহমুদ কে খুজতে লাগলো৷পুরো শহরে চিরনি তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ তার সাথে সাথে জুনাইদ কবির সাদমান স্মরণ সাজিত নিজেদের লোকদের দিয়েও খুজে যাচ্ছে কিন্তু ফলাফল শূন্য ৷ ভোর রাতে স্মরণ সহ বাকিরা বাড়িতে ফিরে আসে৷ সবাই সারা রাত না ঘুমিয়ে ড্রইংরুমে কেঁদে কেটে সময় কাটিয়ে দেয়৷ স্মরণ সাজিত সাদমান জুনাইদ কবির কে আসতে দেখে সাহারা বেগম স্মরণ কে জড়িয়ে ধরে বলে,” স্মরণ বাবা তোর বাবা কোথায় পেয়েছিস ওকে? বল বাবা পেয়েছিস?”

সাহারা বেগম এর কথার উওর স্মরণ না দিয়ে সাজিত বলে ওঠে ,” না আম্মু বাবা কে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি৷ ইভেন বাবার ফোন ও ট্রেস করা যাচ্ছে না৷ ”

” আল্লাহ মানুষটা কোথায় গেল?”

সাজিত হঠাৎ বলে ওঠে ,” ভাইয়া বাবার নিখোজ হওয়ার সাথে সাথে তার পিএ রানাও তো নিখোজ ওকে ও তো খুজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ ওর সাথে কি বাবার নিখোজ হওয়ার কোন সংযোগ আছে?”

জুনাইদ কবির হুট করে বলে উঠলো , ” থাকতে পারে সাজিত বাবা ৷ আমাদের উচিত পুলিশকে পিএ রানার ব্যাপারটা জানানো৷”

সাহারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো প্রাণোর বাবা কে..” ভাই সাহেব আপনারা কি করবেন আমি জানি না কিন্তু জীবন কে আমার কাছে ফিরে দিন ৷ ”

” আপনি কোন চিন্তা করবেন না ভাবি৷ জীবন কে যদি কেউ কিডন্যাপ ও করে থাকে তাহলে তো মুক্তিপণ হিসেবে টাকা চাইবে তাই না? ”

” আর যদি মুক্তিপণ হিসেবে টাকা না চায়! শশুর বাবার যদি কোন ক্ষতি করে দেয় তখন?” সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠলো প্রাণো…

স্মরণ প্রাণোর চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো৷ প্রাণোর চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে , চুল গুলো এলোমেলো , চোখের কাজল খানিকটা লেপ্টে গেছে৷ প্রাণোকে দেখে মনে হচ্ছে প্রাণো পুরো রাত ঘুমায়নি কিন্তু চোখে মুখে কোন কষ্টের ছাপ দেখছে না বরং কাঠিন্যতা ফুটে আছে৷

প্রাণোর কথায় কেউ প্রত্ত্যুতর না করায় প্রাণো আবার বলতে লাগলো,” হতে পারে উনি কারোর সাথে কোন জঘন্য কিছু করেছে তাই তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ওনাকে তুলে নিয়ে গেছে৷”

” তুমি কি করে জানতে পারলে প্রাণ?”(স্মরণ)

” আমি কি করে জানবো স্মরণ? আমি তো যাস্ট গেস করলাম এখন বাকি টা পুলিশ খুজে বের করবে ৷ ”

স্মরণের কেন যেন প্রাণোর কথা গুলো ঠিক পছন্দ হলো না ৷ হয়তো নিজের বাবার বিরুদ্ধে কথা গুলো বলেছে তাই হয়তো! তবে প্রাণো এই বিষয় নিয়ে একদমি ভাবছে না৷ বরং প্রাণো কিচেনে গিয়ে সবার জন্য চা কফি বিস্কিট নিয়ে আসে৷

প্রিয়া সাজিত সাদমান জুনাইদ কবির স্মরণ প্রাণোর এমন নরমাল ব্যবহার দেখে ভিষণ অবাক হয় ৷ কিন্তু আমলে নেয় না এটা ভেবে হয়তো সবার কথা ভেবে নিজেকে স্ট্রং রেখে সবার দেখভাল করছে৷

প্রিয়া হুট করে প্রাণোর হাত ধরে টেনে কিচেনে নিয়ে গিয়ে বলে…..
.
.
.
#চলবে…………….
[ আগামিকাল সবার জন্য ধামাকা পর্ব অপেক্ষা করছে ৷ কি সবাই তৈরি তো?]#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩৮
.
.
🦋
প্রিয়া সাজিত সাদমান জুনাইদ কবির স্মরণ প্রাণোর এমন নরমাল ব্যবহার দেখে ভিষণ অবাক হয় ৷ কিন্তু আমলে নেয় না এটা ভেবে হয়তো সবার কথা ভেবে নিজেকে স্ট্রং রেখে সবার দেখভাল করছে৷

প্রিয়া হুট করে প্রাণোর হাত ধরে টেনে কিচেনে নিয়ে গিয়ে বলে, ” আপু কণা আপুকে খুজে পেয়েছিস?”

” পেয়েছি তার সাথে সেই জঘন্য লোকলোকটাকেও পেয়েছি যে কণাকে কিডন্যাপ করিয়েছে৷”

” আপু লোকটাকে কোন মতে ছাড়বি না ৷ সেই লোকটাকে কঠিন মৃত্যু দিবি ৷”

” না প্রিয়ু তাকে আমি এতো সহজে আমি মৃত্যু দিবো না ৷ ওকে আমি বাচিঁয়ে রাখবো তবে এই বেঁচে থাকার থেকে সে মৃত্যু কামনা করবে কিন্তু সেটাও তার কপালে জুটবে না ইভেন আমি জুটতে দিবো না৷”

কথা গুলো বলার সময় প্রাণোর চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুন ঝড়তে লাগলো৷ প্রিয়া বুঝতে পারছে প্রাণো এই মুহূর্তে প্রচন্ড রেগে আছে ৷ প্রিয়া কথা ঘুড়ানোর জন্য বলে উঠলো , ” আপু শশুর গতকাল রাত থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ লোকটা কোথায় গেল বল তো?” চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল প্রিয়া৷

প্রিয়ার কথা শুনে প্রাণো দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে তাকিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো , ” জাহান্নামে , জাহান্নামে আছে তোর শশুর ”

” আহা! আপু রেগে যাচ্ছিস কেন? আর এভাবে কেন বলছিস উনি তো তোর আমার দুজনের শশুর ৷”

” যাস্ট স্যাটয়াপ প্রিয়া ৷ একটা কথা কান খুলে শুনে নে ওই লোকটা তোর আমার কেন কারো বাবা স্বামী বন্ধু হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই বুঝেছিস? ” খানিকটা জোড়ে চেঁচিয়ে বললো প্রাণো ৷ প্রাণোর এমন কঠিন ধমকে কথা শুনে প্রিয়া ভয় পেয়ে যায়৷ এই প্রথম প্রাণোকে এতোটা রাগতে দেখলো৷ তার উপর প্রাণো তার উপর এভাবে কখনো রেগে উচ্চস্বরে কথা বলেনি কিন্তু আজ বলেছে৷ তারমানে এমন কিছু ঘটেছে যেটা তাদের শশুর জীবন মাহমুদ এর সাথে সংযোগ আছে৷

প্রিয়া আর প্রশ্ন করার কোন সাহস পেল না প্রাণোকে; প্রাণো প্রিয়াকে কিচেনে রেখে নিজের রুমে চলে গেল৷ রুমে ঢুকে দেখে স্মরণ বেডের উপর শুয়ে আছে৷ প্রাণো কোন কথা না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে লাগলো৷ প্রাণো ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে স্মরণে উদ্দেশ্য কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগে স্মরণ বলে উঠলো ,” প্রাণ নিচে তখন ড্যাড এর নামে ওই কথা গুলো কেন বললে?”

স্মরণের মুখে ড্যাড নামটা শুনে ধপ করে রাগ টা পূনরায় প্রাণোর মাথা চরা দিয়ে উঠলো৷ এমন একটা জঘন্য নিকৃষ্ট বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ যে স্মরণের বাবা হতে পারে এটা প্রাণো কল্পনাও করতে পারে না কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত এই জঘন্য নিকৃষ্ট বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষটাই স্মরণ এর জন্মদাতা ভাবতেই প্রাণোর পুরো শরীর গিন গিন করে উঠলো৷

স্মরণ প্রাণোর কোন রেসপন্স না দেখে আবার বলে উঠলো ,” প্রাণ তোমাকে আমি কিছু জ্বিজ্ঞাসা করেছি?”

স্মরণের কথায় প্রাণো তার ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে ৷

” তখন কথাটা মাথায় এসেছিলো তাই বলেছি স্মরণ ৷”

” হঠাৎ এই ভাবনাই কেন তোমার মাথা এলো প্রাণ?”

” জানি না৷ এখন এতো কথা না বলে কিছুক্ষণ রেস্ট নেও৷ ভোরের আলো আর একটু ফুটলে তুমি তোমার ড্যাড কে খুজতে যাবে৷ ”

” যাবো কিন্তু তুমি আমার ড্যাড না বাবা না বলে তোমার ড্যাড বললে যে?”

” তোমার জন্য কড়া করে চা বানিয়ে নিয়ে আসছি স্মরণ ততোক্ষণে ফ্রেস হয়ে নেও৷”

স্মরণের প্রশ্ন ইগনোর করে নিজের কথা গুলো বলে প্রাণো রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷ স্মরণ প্রাণোর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ প্রাণোর হঠাৎ এমন অদ্ভুত ব্যবহার স্মরণ কেন যেন মেনে নিতে পারছে না৷ কোথায় না কোথায় যেন প্রাণো নাম টার পেছনে একটা বিস্ময়সূচক চিহ্ন ঝুলছে৷ মেয়েটা দিনকে দিন রহস্যময় হয়ে উঠছে৷ স্মরণ ধিরে সু্স্থে বেড থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷

সকালে কেউ ঠিকঠাক নাস্তা না করে বেড়িয়ে যায় জীবন মাহমুদ কে খুজতে৷ প্রাণো আর প্রিয়া দুজনে যোগ্য বউয়ের মতো পুরো বাড়ি সামলে নেয়৷

প্রাণো দুপুরের খাবার রান্না করে প্রিয়াকে বলে ” প্রিয়ু আমি একটু পর বের হবো ৷ কেউ আমার কথা জানতে চাইলে সামলে নিতে পারবি তো?”

” তা পারবো কিন্তু তুই কি ভাবে বের হবি? তার থেকে ভালো হয় তুই সবাইকে বল তুই ও বাবাকে খুজতে বের হবি৷”

কথা টা বলতে বলতে থেমে যায় প্রিয়া প্রাণোর অগ্নি দৃষ্টি দেখে৷

” আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা প্রিয়া৷”

” আ’ম স্যরি আপু ভুল করে মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে৷” বলেই দৌর দিয়ে কিচেন থেকে বেড়িয়ে যায় প্রিয়া৷ প্রিয়া চলে যেতে প্রাণো বলে ওঠে , ” ওই কুকুরের বাচ্চার আসল চেহারাটা যদি তুই জানতে পেতি প্রিয়ু তাহলে হয়তো এই ভুলটা তুই দ্বিতীয় বার করতি না৷ ”

প্রাণো রেডি হয়ে সাহারা বেগম কে বলে বেড়িয়ে যায়৷ সাহারা বেগম বাড়ির গাড়ি নিতে বললেও প্রাণো গাড়ি না নিয়ে সিএনজিতে করে চলে যায়৷ কিছু দুর যেতে প্রাণো সিএনজি থামিয়ে নেমে পড়ে ৷

অন্য দিকে স্মরণ পুলিশের সাথে জীবন মাহমুদ কে খুজতে থাকে কিন্তু তাকে না পেয়ে স্মরণ সির্ধান্ত নেয় সে একা একাই জীবন মাহমুদ কে খুজবে ৷ স্মরণ কাউকে সাথে না নিয়ে গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়৷

রাস্তায় দাড়িয়ে পাচঁ মিনিট অপেক্ষা করার পর টিমের একজন গাড়ি নিয়ে হাজির হয় প্রাণোর সামনে৷ প্রাণো দ্রুত গাড়িতে উঠে বসতে টিমের ছেলেটি প্রাণোর দিকে মাক্স এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ,” ম্যাম ম্যাক্সটা পড়ে নিন৷ ”

প্রাণো কোন কথা না বলে মাক্সটা পড়ে নেয়৷ ছেলেটি দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে পৌছে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়৷
প্রাণো গাড়ি থেকে নেমে অফিসে ঢুকে নিজের কেভিনে গিয়ে দ্রুত চেন্জ করে নেয়৷ কারণ প্রাণো এতো তাড়াতাড়ি নিজের দ্বিতীয় চরিত্রটা সবার কাছে উম্মুক্ত করবে না৷ প্রাণো তার কেভিন থেকে বের হতে নিলে সিমি এসে হাজির হয়৷

” সিমি আপু তুমি এখন এখানে? হসপিটাল যাওনি?”

” গিয়েছিলাম , RV আর কণার জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম ৷ আমি ওখান থেকে এখানে আসছি৷ ”

প্রাণো চুপ হয়ে গেল৷ কণাকে ঠিক সময়ে বাঁচাতে পারেনি বিধায় আজ কণা হসপিটালে ৷ প্রাণো শুধু নিজেকে দোষারোপ করছে৷ এতো বছর কাজ করে কখনো কোন টিম মেম্বারের ক্ষতি হতে দেয় নি৷ কিন্তু এবার সে হেরে গেল ৷

প্রাণো দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেভিন থেকে বেড়িয়ে সিগ্রেট দরজা দিয়ে টর্চার সেলে ঢুকে যায় ৷ সিমিও প্রাণোর পিছু পিছু টর্চার সেলে ঢুকতে প্রাণো সিমিকে বলে ওঠে ,” সিমি আপু মুখে মাক্স পড়ে নেও৷”

” ওকে প্রাণো৷”

জীবন মাহমুদ কে যে সেলে রাখা হয়েছে সে সেলে প্রাণো ঢুকতেই সব লাইট জ্বলে উঠলো ৷ গতকাল রাত থেকে অন্ধকার সেলে পরে ছিলো জীবন মাহমুদ ৷ তার হাত কাটা তার দিয়ে বাধা ছিলো বিধায় একচুল নরতে পর্যন্ত পারেনি৷ লাইটের আলো চোখে পড়তে জীবন মাহমুদ চোখ মুখ কুচকে ফেলে তখনি প্রাণো বলে ওঠে ,” ওয়েলকাম টু হেল মিস্টার JM অরফে জীবন মাহমুদ ৷”

প্রাণোর কথা শুনে চমকে ওঠে জীবন মাহমুদ ৷ জীবন মাহমুদ এর দুনাম্বারি ব্যাবসা যারা করে এক মাত্র তারাই জানে JM কে , তার বাইরে কারোর জানা পসিবেল না৷

” ক,,কে তুই? আমাকে এখানে বন্দি করে রেখেছিস কেন? ”

প্রাণো জীবন মাহমুদ এর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সিমিকে চোখের ইশারা করতে সিমি সেল থেকে বেড়িয়ে গিয়ে ফোন নিয়ে এসে ভিডিও ক্যামেরা চালু করে৷

প্রাণো হাতে দুবার তালি বাজাতে চার জন ছেলে এসে জীবন মাহমুদ কে একটা লোহার বেডে শুইয়ে হাত পা আবার বেধে দেয়৷ প্রাণো জীবন মাহমুদ এর পাশে দাড়াতে একজন একটা ট্রেতে করে নানা রকম ছুড়ি নিয়ে আসে৷

” তোর প্রথম প্রশ্ন কি ছিলো ? আমি কে? তাই তো? ”

জীবন মাহমুদ ভীত চোখে তাকিয়ে আছে প্রাণোর দিকে, প্রাণোর নীল দুচোখ ছাড়া জীবন মাহমুদ আর কিছুই দেখতে পায় না৷

” আমি কে জানতে চাস তুই কুত্তার বাচ্চা তাহলে শোন আমি হলাম সে যে তোর সম্রাজ্ঞ্য ধ্বংসের কারণ৷ আমি হলাম সে যে তোর পার্টনার তোর সাথি সঙ্গিদের পথে বসিয়েছি ৷ আমি হলাম সে যে তোর মৃত্যুদূত হয়ে তোর সামনে এসে দাড়িয়েছি৷ খুব শখ না মেয়েদের অসন্মান করার হাহ্! এই হাত দিয়ে তুই আমার বন্ধু আমার বোন কে স্পর্শ করেছিস তাই না? ” কথাটা বলেই প্রাণো ধাড়ালো ছুড়ি হাতে নিয়ে জীবন মাহমুদ এর হাতের আঙ্গুল গুলো কাটতে লাগলো৷ সিমি একটু দুরে দাড়িয়ে উপভোগ করছে জীবন মাহমুদ এর আত্মচিৎকার আর্তনাদ ৷

জীবন মাহমুদ চিৎকার করতে করতে বলতে লাগলো,” আ,, আমাকে ক্ষমা করো আ,, আমি আর কখণো এমন পাপ কাজ করবো না৷”

জীবন মাহমুদ এর কথা শুনে সিমি রেগে উত্তিজিত হয়ে বলে উঠলো , জানোয়ারের বাচ্চা তোর মতো কুত্তা কোন দিন ভালো হয় না৷ ছাব্বিশ বছর আগে কথা মনে পড়ে তোর? একটা দুধের শিশুর থেকে তার মা’কে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিস তুই তারপর তারপর তুই আমার মাকে খুন করেছিস ভুলে গেছিস সে সব কর্মকান্ড?”

সিমির কথা শুনে জীবন মাহমুদ অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ” তুমি কি করে এই সব কথা জানলে?”

” আমি কি করে জানলাম? আমি জানলাম কারণ সেদিনের সেই দুধের শিশু আমি ছিলাম ৷ তুই আমার মাকে আমার থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়েছিস ৷ আমাকে আমার মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিচ করেছিস৷ আমার ড্যাডকে সারা জীবন একা করে দিয়েছিস তুই আর তোকে আমি ভুলে যাবো? এতোই সোজা?”

প্রাণোর হাত থেকে ছুড়ি টা নিয়ে সিমি জীবন মাহমুদ এর পায়ের আঙ্গুল গুলো কাটতে লাগলো৷ জীবন মাহমুদ চিৎকার করছে অথচ কেউ কারোর কানে পৌছাচ্ছে না৷

” সিমি আপু তুমি এই লোকটার জিব্বাহ কেটে ফেলো৷ তারপর ওকে জীবিত রেখে ওর শরীরের একটা একটা অংশ আমি কেটে ফেলবো৷ কিন্তু প্রানে মারবো না ওকে৷”

সিমি যেন প্রাণোর এমন নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলো৷ সিমি সময় নষ্ট না করে জীবন মাহমুদ এর গলা চেপে ধরতে জিব্বাহ বের হয়ে আসে তখনি সিমি জীবন মাহমুদ এর জিব্বাহ কেটে ফেলে৷

প্রাণো আর সিমির ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি৷

” সিমি আপু তোমার কাজ এখানে শেষ বাকিটা আমি করবো ৷”

প্রাণো দ্বিতীয়বার হাতে তালি দিতে একজন ট্রেতে একটা ইনজেকশন আ নিয়ে হাজির হয়৷

” ম্যাম আপনার কথা মতো এ্যাবরোড থেকে এই লিকুইট মেডেসিন আনিয়েছি আর এই যে বোতল এটাতে এসিড আছে৷ এই এসিড এখনো মার্কেটে আসেনি ৷ গবেষকরা এটা নতুন আবিষ্কার করেছে৷ এই এসিড কোন মানুষের শরীরে পড়লে সেখানে পুরোটা গলিয়ে ফেলে ৷ ”

” গ্রেট এমন একটা জিনিস আবিষ্কার হয়েছে বেপার টা সত্যি দারুন ৷ আর আজ এগুলো আমরা JM অরফে জীবন মাহমুদ এর উপর এ্যাপলাই করবো৷”

” সিমি আপু ইনজেকশন টা রেডি করো৷ ”

” ওকে”

প্রাণো ওদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ছুড়ি নিয়ে জীবন মাহমুদ এর হাত এবং পায়ের রগ কেটে ফেলে জীবন মাহমুদ দু হাতে ছুড়ি দিয়ে লিখে দেয় ” আমি ধর্ষক”

জীবন মাহমুদ এর আগের দিন হাতে গুলি লাগে আর আজ প্রাণোর এমন নির্মম নির্যাতন সইতে না পেরে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে৷

“ম্যাম লোকটাতো অজ্ঞান হয়ে গেছে৷”

” পানি মারো ওর মুখে, আর একটা কথা এর সাগরেত রানা কে ট্রিম বক্সে ঢুকিয়ে দেবে ৷ আমি এটার কাজ শেষ করে আসছি ৷ ”

” ওকে ম্যাম”

ছেলেটি সেল থেকে বের হওয়ার পর পর সিমি জীবন মাহমুদ এর মুখে পানি ছুড়ে মারে ৷ কিছুক্ষণ পর জীবন মাহমুদ এর জ্ঞান ফিরে আসতেই প্রাণো জীবন মাহমুদ এর কানে কানে বলে ওঠে, ” শশুর মশাই এখন কেমন লাগছে?”

শশুর মশাই শব্দ গুলো শুনে জীবন মাহমুদ চমকে ওঠে৷ তা দেখে প্রাণো আবার বলতে লাগলো, ” কি হলো চমকে উঠলেন শশুর মশাই ডাকতে! তাহলে এখন যা দেখবেন তা দেখার পর আপনার অবস্থা কি হবে ? ইসস বুঝতে পারছেন না তাই না? তাহলে আমি নিজেই বুঝিয়ে দিচ্ছি বাট ইউ প্রমিস মি হার্ট এট্যাক করবেন না তাহলে কিন্তু আমি আর আপনাকে কষ্ট দিয়ে মারতে পারবো না৷ তাই নো হার্ট এট্যাক ওকে?”

বলতে বলতে পেছন দিক ফিরে মুখ থেকে মাক্স আর শরীর থেকে কালো লং জ্যাকেট টা খুলে সিমির হাতে দিয়ে জীবন মাহমুদ এর দিকে ফিরতে জীবন মাহমুদ শক্টড৷ এতোটাই শক্টড হয়েছে যে চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেছে৷

তা দেখে প্রাণো তার শশুরের কাছে গিয়ে দাড়াতে জীবন মাহমুদ সরে যেতে নিলে পারে না৷ কারন তার শরীরে আর কোন শক্তি বেঁচে নেই ৷ হাত পা নাড়াতে বা নিজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারবে না৷ সে ক্ষমতা জীবন মাহমুদ হাড়িয়ে ফেলেছে৷

জীবন মাহমুদ কিছু বলতে চাইছে কিন্তু মুখ থেকে রক্ত বিধায় আর কোন শব্দ বের হচ্ছে না৷

” ওহ্! শশুর মশাই আমাকে দেখে এই অবস্থা আপনার! কি আর করার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের না দেখা ব্লাক রোজ কে দেখতে চেয়েছেন বলে আমার টিমের মেয়ে তুলে নিয়ে ….. তো! কেমন দেখলেন এই আমিকে? আন্ডারওয়ার্ল্ডের বড় বড় মাফিয়ারা পর্যন্ত ব্লাক রোজ নাম শুনলে কেঁপে ওঠে অথচ তোর মতো দু নম্বরী ব্যবসায়ী আমার টিম মেম্বারের ক্ষতি করিস? কি ভেবেছিস তুই আমি তোকে ছেড়ে দিবো? কখনো না সিমি আপু!”

সিমি ইনজেকশন টা নিয়ে প্রাণোর হাতে দেয়৷

প্রাণো ইনজেকশন টা হাতে নিয়ে জীবন মাহমুদ কে বলে এটা কিসের ইনজেকশন জানিস ? আমি বলছি এটা যখন তোর শরীরে আমি ইনজেক্ট করে দিবো তার তিন ঘন্টা পর থেকে তোর শরীরে একটু একটু করে পচন ধরবে৷ তোর শরীরের হার গুলো গলতে শুরু করবে৷ দৃষ্টি শক্তি লোপ পাবে৷

ইনজেকশন জীবন মাহমুদ এর শরীরে ইনজেক্ট করে দিয়ে আবারো সেই রক্তাক্ত ছুড়িটা হাতে নিয়ে জীবন মাহমুদ এর বুকে স্পষ্ট লিখে দেয় ” আমি ধর্ষক ৷ আমি খুনি ৷”

জীবন মাহমুদ আবারো জ্ঞান হারায় তখন প্রাণো সিমি কে বলে, ” এই জন্তটাকে শহরের ডাসবিনে ফেলে দে ৷”

” কিন্তু প্রাণো আজ যা টর্চার করলে এই জানোয়ারটা মরে যাবে না তো? আর যদি বেঁচেও থাকে তাহলে হসপিটালে নিলে… ” বাকিটা বলার আগে প্রাণো বলে ওঠে ,” বিশ্বের কোন ডাক্তার কিছু করতে পারবে না৷ এই যে ইনজেকশন টা কুত্তার বাচ্চার শরীরের ইনজেক্ট করে দিয়েছি এটাই সব কাজ করে দিবে৷”

” জীবন মাহমুদ তো তোমাকে দেখে ফেলেছে ৷”

” তাতে কি ? এই জানোয়ারের কোন শক্তি নেই যে আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে৷ ইভেন জ্ঞান ফেরার পর হয়তো আমাকে দেখেই ভয় পেতে শুরু করলো?”

” কিন্তু….” বাকিটা বলার আগে প্রাণোর ফোনটা বেজে ওঠে ৷ প্রাণো জেকেট থেকে ফোন বের করে দেখে RV কল৷

” হ্যালো প্রাণো ?”

” RV তোমার ফোনে আমি এখুনি একটা ভিডিও সেন্ড করছি ৷ তুমি এবং কণা দুজনে ভিডিও টা দেখে নিও রাখছি৷”

RV কে বলার সুযোগ না দিয়ে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো প্রাণো৷

” সিমি আপু ভিডিওটা RV কে পাঠিয়ে দেও৷”

” ওকে বাট তুমি এখন কোথায় যাবে ? ওই রানাকে তো এখনো শাস্তি দেওয়া বাকি আছে৷”

” ওটাকে পড়ে দেখে নিবো কিন্তু এখন আমাকে বের হতে হবে৷ ”

প্রাণো টর্চার সেল থেকে বের হতে নিবে তখনি দেয়ালের উপর ছোট একটা জানালা যেটা দিয়ে বাইয়ে আলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারে খানিকটা সেখান থেকে একটা ছায়া সরে গেল৷

টর্চার সেল অফিসের নিচে অর্থাৎ মাটির বেশ কিছুটা নিচে হওয়ায় জানালা টা শুধু ভেতরে বানানো হয়নি৷ উপরে দিয়েছে যাতে বাইরের আলো কিছুটা হলেও ভিতরে প্রবেশ করে৷

প্রাণোর ঘটকা লাগে বিষয়টা কিন্তু সিমিকে কিছু জানায় না৷ প্রাণো টর্চার সেল থেকে বের হয়ে চেন্জ করে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি পেছন থেকে রুমাল দিয়ে প্রাণোর মুখ চেপে ধরতে প্রাণো সেন্সলেস হয়ে যায়৷

চোখে মুখে পানির ছিটে পড়তে প্রাণোর জ্ঞান ফিরে আসে ৷ চোখ মেলে পিট পিট করে তাকিয়ে প্রাণো তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে চমকে যায় অস্পষ্ট গলায় প্রাণো বলে ওঠে….” স্ম,, স্মরণ! ”
.
.
.
#চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here