গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া পর্ব ৯

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৯
.
.
🦋
লোকটার কথা শেষ হতে মেয়েটি ফোন টা বিছানার উপর ছুড়ে মেরে ল্যাপটপে প্রাণোর কল ডিটেইলস দেখতে লাগলো ৷

” প্রাণো প্রাণো প্রাণো তোমাকে আমার হাতের মুঠোয় নিতেই হবে ৷ নাহলে যে আমি আমার উদ্দেশ্য কখনই পূরণ করতে পারবো না৷ তুমি হবে আমার হাতের পুতুল ৷ তোমাকে সামনে রেখে আমি আমার উদ্দেশ্য পূরণ করবো প্রাণো৷ তোমাকে তো আমি খুজে বের করবোই৷ যেখানে লুকিয়ে থাকো না কেন? ”

কথা গুলো বলে আগুন্তক মেয়েটি ফোন টা হাতে তুলে নিয়ে অন্য একটা নাম্বারে ডায়াল করে ৷

_______

” এই মেয়ে এই সব কি খেতে দিয়েছো আমাকে হাহ!”

ক্ষেপে তেরে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলতে লাগলো সাজিত ৷ প্রিয়া নিজের ভাব ভঙ্গি ঠিক রেখে বিছানার উপর পায়ের উপর পা দিয়ে ঠান্ডা গলায় বলতে লাগলো, ” মিস্টার ডেভিল হাসবেন্ট আপনি কিন্তু আপনার সর্ত ভাঙ্গছেন?”

” কিহ! কিসের সর্তের কথা বলছো তুমি?”

” এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? যাই হোক আমার কোন সমস্যা নেই আপনাকে সর্ত গুলো আর একবার মনে করিয়ে দি?”

“প্রথমতঃ আমাকে তুই বলতে পারবে না তুমি বলবে ৷ দ্বিতীয়তঃ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের সামনে আমাকে যথাযথ সন্মান দিবে৷ তৃতীয়তঃ আমার উপর কোন চেঁচামেচি করা যাবে না৷ চতুর্থতঃ আমার আপুর দিকে আর হাত বাড়াবেন না ৷”

” এখন বলুন খাবার টা খাবেন নাকি আমি পুলিশে ফোন করবো?”

” তাই বলে এই পোড়া রুটি আর ডাল! বাকিরা তো পরোটা ডিমের পোচ আর ভাজি দিয়ে খেয়েছে ৷ তাহলে শুধু আমাকে কেন এই খাবার দিলে?”

” কারণ এটার-ই যোগ্য আপনি তাই আপনাকে এটাই খেতে হবে৷”

” হাউ ডেয়ার ইউ ”

” উপ’স এখনো আমায় চিনলে না মাই ডেভিল হাসবেন্ট ৷ আমার সাহস বড়াবড় একটু বেশি ৷ ”

” এর জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে প্রিয়া ৷ তবে মনে রেখো আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসবো না ৷ আর না কখনো স্ত্রীর অধিকার দিবো৷ ”

” কে বললো আমি আপনার মতো নিকৃষ্ট একটা অমানুষের থেকে ভালোবাসা চাইবো! একটা কথা মন দিয়ে শুনুন মিস্টার সাজিত , এই প্রিয়া কখনো আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার চাইবে না আর না ভালোবাসা ৷ তবে এটা ভাববেন না অতিতে যা করেছেন তার জন্য আপনি মুক্ত কোন শাস্তি পাবেন না৷ আপনি শাস্তি পাবেন আর তা দেওয়া হবে তিলে তিলে যাকে বলে স্লো পয়জনের মতো , ”

” প্রিয়া কাজ টা তুমি মটেও ঠিক করছো না৷ আমি তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছি মাত্র কিছু বছর কিন্তু তুমি বলতে পারবে না আমি কখনো তোমাকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করেছি বা তোমার দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছি৷”

সাজিতের কথা শুনে প্রাণো তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে,” তাই নাকি? আচ্ছা আমি মেনে নিলাম আপনি এগুলো আমার সাথে করেন নি তবে আমার ফিলিংসের সাথে কেন খেললেন? একটা নয় দুটো নয় পুরো তিন টে বছর ৷ ভালোই যদি না বাসেন তাহলে আমার সাথে প্রতারনা কেন করলেন?”

” প্রাণোর জন্য কেন তা তুমি খুব ভালো করেই জানো প্রিয়া ”

” নাহ আমি জানি না ৷ আমি জানতে চাই আপনার মুখ থেকে বলুন আমাকে কেন ঠকিয়েছেন আমাকে?”

” দেখ প্রিয়া আমি তোমার সাথে রিলেশনে জড়িয়ে ছিলাম তার একমাত্র কারণ ছিলো তোমার বোন৷ আমি প্রাণোকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলি৷ মনে আছে তোমার তুমি যখন প্রথম দিন কলেজে এলে প্রাণোর হাত ধরে তখন হুট করে একটা ছেলের সাথে প্রাণো ধাক্কা লাগে? সে ছেলেটা ছিলাম আমি, ওই দিন প্রথম দেখাতে আমি প্রাণোর প্রেমে পড়ে যাই ৷ তখন এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি তোমার বড় বোন প্রাণো ৷ তারপর থেকে তোমার পিছু নিতাম তোমার সাথে বন্ধুত্ব করলাম আর তারপর রিলেশন ৷ সবটাই নাটক ছিলো প্রাণোর সম্পর্কে জানার জন্য, আর তুমি বোকার মতো সব সময় তোমার বোনের সম্পর্কে বলতে ৷ আপু এটা পছন্দ করে এটা ভালোবাসে ওটা করে এ্যাভরিথিং ৷ আার কাজটাও তুমি সহজ করে দিলে৷ তারপর একদিন সুযোগ বুঝে তোমার সাথে….. ” বাকি টা বলার আগে প্রিয়া বললো..” ব্রেকয়াপ করলে তারপর আপুকে প্রপোজ করলে আপু না মানায় বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠালে ৷ যেহেতু তুমি ভালো প্রতিষ্ঠানে জব করো তাই বাবা মা না করেনি ৷ আর তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কখনো আপুর সুখের পথে কাটা হয়ে দাড়াবো না তাই তুমি ঠিক এই চালটাই চাললে ৷ কিন্তু দেখো সব চালটার দানই উল্টো তোমার উপর ভারি হয়ে পড়লো৷ তোমার স্ত্রী আপু নয় আমি হলাম৷”

” দেখ প্রিয়া আমি সত্যি বুঝতে পারেনি তুমি ব্রেকয়াপের পর এতো কষ্ট পাবে ৷ জানলে হয়তো এমন টা করতাম না৷ ”

” কি করতে আর কি না করতে এটা আমি শুনতে চাই না সাজিত ৷ তুমি শুধু এতোটুকুই মনে রেখো আপু যদি কখনো জানতে পারে তুমি আমাকে ঠকিয়েছো তাহলে তোমাকে যে আপু কি শাস্তি দিবে এটা আমি নিজেও জানি না৷ ”

” কি সব বলছো ? প্রাণোর মতো সহজ সরল নরম মেয়ে আমাকে শাস্তি দিবে হাউ ফানি”

সাজাতের কথার প্রত্ততরে প্রিয়া রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,” আল্লাহর কাছে দোয়া করো আপু যেন এই সব কথা জানতে না পারে ৷ যদি একবার জেনে যায় তাহলে তখন বুঝতে পারবে আপু কতো টা নরম মনের মানুষ নাকি শক্ত মনের মানুষ৷ খাবার টা খেয়ে নেও আমি ননোদিনী কে একটু দেখে আসি৷ ”

প্রিয়া রুম থেকে বের হতে সাজিত শুকনো রুটি ডালে ভিজিয়ে চিবতে লাগলো৷

সাজিতের বাবা জীবন মাহমুদ সাজিতের বিয়ের পর থেকে গম্ভির মুখে থাকে সব সময় , সাজিতের মা সাহারা বেগম তার স্বামীর সাথে কথা বলতে বেশ ভয় পান৷ হুট হাট করে রেগে যায় তার স্বামী ৷ মোট কথা বাড়িতে যতোটুকু সময় থাকবে নিজের রুমে বসে থাকে শুধু মাত্র খাবার টাইমে এসে খেয়ে চলে যায়৷ বউ ভাতের অনুষ্ঠান পর্যন্ত করেন নি৷ সাহারা বেগম এই নিয়ে কথা বলতে এলে ধমকে ধামকে চুপ করিয়ে দেয়৷ প্রিয়ার অবশ্য এই নিয়ে কোন উৎসাহ নেই৷ বাড়িতে আসা সব মেহমান গতকাল বিদায় নেয় বলে বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে প্রিয়ার কাছে৷ বাড়িতে শুধু মাত্র প্রিয়ার শশুড় শাশুড়ি ননোদিনী আর তার স্বামী আছে ৷ প্রিয়া আগেও শুনেছে তার স্বামীর বড় ভাই আছে তাকে প্রিয়া দেখেনি অবশ্য তবে শুনেছে তিনি নাকি বিশাল বিজনেস আছে৷ আর ভিষণ রাগি গম্ভির ৷

_________

প্রাণো স্মরণ সাফা নিলয় ঐশী আকাশ স্মিতা সাগর চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে প্রথমে শৈলপ্রপাত দর্শনের জন্য বেড়িয়ে পড়ে৷

শৈলপ্রপাত মিলনছাড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং বান্দরবান থেকে থানচীগামী সড়কের চার কিলো মিটারের মধ্যেই৷ বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাতের মধ্যে এটি একটি৷ বর্ষাকালে এখনকার পানির প্রবাহ খুব বেশি থাকে৷ এখানে ভ্রমণ কালে ছোট ছোট বাজার গুলোতে আদিবাসীদের তৈরি হস্ত শিল্প, তাঁতের দ্রব্যাদি ও খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যায়৷ প্রাণো হস্ত শিল্প গুলো হাত দিয়ে বার বার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে৷

” কতো সুন্দর আদিবাসিদের হাতে কাজ তাই না স্মরণ?”

” হুম , তুমি কিছু কিনবে প্রাণো?”

” উম নাহ কিনবো না ৷ এতো কিছু কোথায় রাখবো কিনে?”

স্মরণ আর কিছু বললো না৷ কিন্তু হুট করে স্মরণে চোখ একটা শালের উপর পড়লো ৷ শালটার কাজ টা ভিষণ সুন্দর করে করা৷ স্মরণ প্রাণোর আড়ালে শালটা কিনে নেয়৷ বাকিরাও ভিষণ আনন্দতার সাথে কেনা কাটা করতে লাগলো ৷ এখানে মুখরোচর খাবার বলতে কেক চিপস বিস্কুট বাচ্চাদের কিছু খাবার দেখতে পেল৷ আর একটু এগিয়ে গিয়ে প্রাণো নানা রকমের পিঠা বিক্রি করতে দেখলো এক আদিবাসী মেয়ে কে , মেয়েটার বয়স আনুমানিক পনেরো বছর হবে৷ প্রাণো মেয়েটার কাছে গিয়ে কয়েক রকম পিঠা থেকে অনেক গুলো পিঠা কিনে নেয় সবার জন্য, মেয়েটাও বেশ খুশি হয় এতো গুলো পিঠা বিক্রি করতে পারলো বিধায়৷

স্মরণ সহ বাকিরা পিঠা খেতে খেতে হেটে শৈলপ্রপাত দেখতে পেল ৷ গতকাল বর্ষা হওয়ায় দরুণ পানির স্রোত টা একটু বেশী ৷ হাটু পর্যন্ত পানি থাকার কথা সেখানে কোমড় পর্যন্ত পানি৷ তবুও বিভিন্ন পর্যটকরা ভিষণ আনন্দ করে ঝড়নায় ভিজছে৷ ভীতও প্রচুর৷ প্রাণো সাথে কোন ড্রেস না আনায় পানিতে নামবার সাহস করলো না৷ অন্য দিকে বাকিরা পানিতে নেমে একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে ভেজাতে লাগলো৷ স্মরণ প্রাণোর পাশে দাড়িয়ে ছিলো ৷ এতো ভীর ছিলো বিধায় স্মরণ প্রাণোকে একা ছাড়লো না৷ প্রাণো সবাই কে আনন্দ করতে দেখছে কিন্তু স্মরণ কে না দেখতে পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে স্মরণ তার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে৷

” কি বেপার স্মরণ আপনি ওদের সাথে গেলেন না কেন?”

” তুমি কেন যাও নি প্রাণ?”

” আমি সাথে কোন এক্সট্রা ড্রেস আনেনি ওরা এনেছে আর তারচেয়ে বড় কথা আমার যে ড্রেস পড়ে আছি এটা ভিজে গেলে খুব বাজে দেখাবে৷ তাই যাই নি৷ কিন্তু তুমি কেন যাও নি?” প্রাণো তার ভ্রু যুগল নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো স্মরণ কে,

” আমি যাই নি কারণ তোমাকে পাহাড়া দিতে হবে তাই”

” মানে! আমাকে কেন পাহাড়া দিতে যাবেন আপনি? আর আমি কোন মহা মূল্যবান সম্পদ নই যে আমাকে তোমার পাহাড়া দিতে হবে৷ যাও গিয়ে ওদের সাথে আনন্দ করো৷”

প্রাণোর কথা শুনে স্মরণ বিড় বিড় কর বলল, ” তুমি যে আমার জীবনের মহা মূল্যবান সম্পদ বলে তোমাকে পাহাড়া দিচ্ছি নিজের জন্য এটা কবে বুঝবে? ”

” কিছু বললে স্মরণ?”

” হু , সামনে তাকিয়ে দেখো কেন তোমাকে পাহাড়া দিচ্ছি”

প্রাণো স্মরণের কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে বার বার ওর দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে ৷ ওদের তাকানো টা খুব একটা ভালো লাগে নি প্রাণোর বাতাস টাও খুব জোড়ে ছিলো বিধায় ওড়নাটা ঠিক শরীরে জড়িয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না খুব বিরক্ত লাগছে প্রাণোর৷ প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো প্রাণো৷ উচু পাহাড়ের গা ঘেষে পানির ধারা গুলো আচড়ে পড়ছে পাথরের উপর , অনেক ছেলে মেয়ে ঝড়নার পানিতে ভিজছে সাথে একে অন্যকে ভিজিয়ে দিচ্ছে৷ প্রাণোর ও খুব ইচ্ছে করছে ঝড়নায় পা দুটো ভেজাতে৷ কিন্তু তা সম্ভব নয় এটা বুঝে মন খারাপ করে দাড়িয়ে রইল প্রাণ৷ হঠাৎ শরীরে শাল জড়িয়ে দিতে দেখলো প্রাণো ৷ পেছনে তাকয়ে দেখে স্মরণ ৷ প্রাণো কিছু বলতে যেয়ে ও বললো না কারণ শালটার এখন তার সত্যি প্রয়োজন ছিলো৷ কিন্তু শালটা স্মরণ পেলো কোথায়? একবারও তো দেখেনি স্মরণকে শালটা কিনতে! তাহলে স্বরণ শালটা কিনলো কখন! আর আমার যে এটা এখন প্রয়োজন বুজলো কি করে স্মরণ? এই সবই ভাবতে লাগলো প্রাণো৷

বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভীর কিছুটা কমে আসতে স্মরণ প্রাণোর হাত ধরে হাটতে লাগলো৷ প্রাণো অবাক হয়ে স্মরণকে জ্বিজ্ঞাসা করলো,” কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে স্বরণ?”

” দেখতেই পাবে ৷ এখন চুপচাপ চলো৷”

ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে সাবধানে প্রাণোর হাত ধরে একটা শুকনো মাঝাড়ি সাইজের পাথরের উপর দাড়িয়ে বলে,” এখানে বসে পা ভিজাতে পারো প্রাণ ৷ এখানে কোন অসুবিধা হবে না৷”

” আশ্চর্য স্মরণ কি করে আমার মনের কথা বুঝতে পাড়লো?”

” তোমার মনের কথা বুঝতে পারলাম কি করে এটা না ভেবে বসে পড়ো তো৷” কথাটা বলে স্বরণ তার জিন্স পা থেকে কিছু টা গুটিয়ে নিয়ে জুতো খুলে পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো৷ প্রাণো এখন ভাবছে স্মরণ কি করে তার মনের কথা বুঝতে পারলো? স্বরণ কি তাহলে মন পড়তে পারে?

প্রাণোর ভাবনার মাঝে স্মরণ প্রাণোর হাত টান দিতে প্রাণো টাল সামলাতে না পেরে স্মরণের কোলে পড়ে যায়৷ প্রাণো যেন পানিতে পড়ে না যায় সে ভয়ে স্মরণ প্রাণোকে বুকের সাথে আকড়ে ধরে৷ প্রাণো ভয় পেয়ে যায় ৷ স্মরণের বুকে মাথা রেখে স্মরণের হার্টবিট শুনতে লাগলো৷ প্রাণোরও যে হার্টবিট বেড়ে গেছে তা স্মরণ বুঝতে পারছে৷ কিছুটা সময় একে অন্যকে অনুভব করায় এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে আশে পাশের মানুষ গুলো যে তাদের দেখছে তা তাদের খেয়াল নেই ৷ হাঠাৎ পাশ থেকে হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়ে প্রাণো স্মরণের ধ্যান ভেঙে যায়৷ দু’জনের অস্বস্থিতে পড়ে যায়৷ প্রাণো নিজেকে সামলে নিয়ে উঠতে গেলে স্মরণ বলে, ” প্রাণ এভাবে উঠতে গেলে পড়ে যাবে ৷ ” প্রাণো মাথা নিচু করে রাখলো৷ প্রচন্ড লজ্জা লাগছে তার , লজ্জায় গাল দুটো লাল টকটকে রঙ ধারণ করেছে৷ স্মরণের ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে প্রাণোর গাল দুটো কামড়ে খেয়ে ফেলতে৷ লজ্জা পেলে কোন মেয়েকে এতোটা সুন্দর লাগে সেটা প্রাণোকে না দেখলে বোঝা যেত না ৷ স্মরণ নিজেকে কোন ভাবে সামলে প্রাণোকে কোল থেকে উঠিয়ে পাশে বসিয়ে দিলো৷ প্রাণো লজ্জায় আর স্মরণের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল৷

ওখানে দু’ঘন্টা কাটিয়ে সবাই আবার বেড়িয়ে পড়লো স্বর্ণ মন্দিরের উদ্দেশ্য, যেহেতু দুপুর হয়ে গেছে তাই তারা ঠিক করে স্বর্ণ মন্দিরের কাছাকাছি হোটেলে খেয়ে নিবে৷ প্রত্যেকে কথার ফুল ঝুড়ি নিয়ে বসেছে ৷ শুধু মাত্র স্মরণ আর প্রাণো দু’জনে চুপচাপ প্রকৃতি দেখতে ৷ দু’ঘন্টা পর গাড়ি মন্দিরের সামনে দাড়াতে একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে মন্দিরের এরিয়ায় ঢুকার পূর্বে এক হোটেল থেকে তারা খেয়ে খেতে বিকেল চারে চারটা বেজে যায়৷ তারপর তারা স্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশ করে ৷ বান্দরবান থেকে দশ কিলোমিটার এবং বালাঘাটা থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এ মন্দির অবস্থিত৷ এখানে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি৷ মাটি থেকে ২০০ ফুট উচু এই মন্দিরের নির্মান কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালে শেষ হয়৷
শুধু বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীই নয় , দেশ- বিদেশের যে কোন পর্যটকের জন্যই এটি একটি আকর্ষনীয় স্থান৷ পাহাড় চূড়ায় মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি ছোট্ট পুকুর যেটা ” দেবতাদের পুকুর ” নামে পরিচিত৷ এই জায়গা থেকে বালা ঘাটা এবং এর চার পাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়৷ প্রতি বছরই এখানে মেলার আয়োজন করা হয়৷ মন্দিরটি বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মক্ত থাকে ৷ তবে মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য প্রত্যেকের জন্য ১০ টাকা করে টিকেট কেটে ঢুকতে হয়৷ মন্দিরে ঢুকতে গেলে জুতা পরে ঢুকার অনুমতি নেই তাই সবাই জুতা খুলে প্রবেশ করে ৷ পুরো মন্দিরের ঘুরে দেখে স্মরণ সবাইকে দ্রুত ফেরবার জন্য তারা দেয় ৷ যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তাদের ফিরতে হবে৷ প্রাণোরাও লেট করলো না দের ঘন্টার মধ্যে আবার বেড়িয়ে পড়লো৷

রিসোর্টে ফিরে সবাই বেশ ক্লান্ত হয়ে৷ প্রাণো রুমে এসে রেস্টুরেন্টে খাবারের অর্ডার করে দেয় ফোন করে৷ তারপর দ্রুত গোছল সেরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়৷ ক্লান্ত থাকায় দ্রুত ঘুমিয়ে পরে প্রাণো৷

অন্যদিকে স্মরণ রিসোর্টে ফিরে ফ্রেস হয়ে আবার বেড়িয়ে পড়ে ৷ নিলয় কিছু জানতে চাইলে স্মরণ জানায় তার কাজ আছে ডিনারের আগে ফিরে আসবে৷ আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায় স্মরণ৷
.
.
.
#চলবে……
[আজকের পার্ট টা খুব একটা গুছিয়ে লিখতে পারি নি৷ ভুল ট্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here