গোধূলী আকাশ লাজুক লাজুক ২ পর্ব -১২+১৩

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১২, সম্পূর্ণ নতুন ভাবে)
সিজন ২
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

২৪.
ইরফানের বাসা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে শুনে মেহজার কাছে তা মজা মনে হয়েছিল। তবে সেটা পরবর্তীতে সত্যিই প্রমাণ হলো। মেহজা রাফসানের থেকেই শুনল যে ইরফানের মা নাকি ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজছেন। এখন জিজ্ঞেস করেছেন যে মেহজাকে দিবে কীনা। মেহজার মা আপাতত মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে ভাবছেন না বলে জানালো। ইরফানের মা বলল চাপ নেই। তাড়াহুড়োর দরকার নেই ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে। মেহজা এই কথা শোনার পর থেকে ঘোরে আছে। তবে শুধু শুধু রাফসানের কথা বিশ্বাস করা যায়না। সে মাঝে মাঝে বড় ধরনের মজা করে বসে। মেহজা দুই তিনবার মায়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে। কিন্তু তার মা কিছুই বলল না। বাবা আর ভাইকে তো ভুলেও কিছু বলা যাবেনা। কথাটা শোনার পর থেকেই তার মনের এক অংশ পুলকিত হয়ে উঠছে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সে নতুন আরেকটা খবর পেল। রাফসান নিজেই বলল,
-‘বুঝছিস! একটা গড়বড় হয়ে গেছে।’
-‘কীসের গড়বড়?’
-‘মা তো তোকে বিয়ে দিবেনা।’
-‘আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছিস কেন? তোর আর কাজ নেই!’
-‘তোর রুমটা আমি স্টুডিও বানাবো ভাবছিলাম। তুই থাকতে তো আর সেটা হচ্ছেনা।’
-‘দিব এক থাপ্পড়। যা এখান থেকে!’
-‘যাচ্ছি! বসে থাকছিনা। তোকে জানাতে এসেছিলাম যে চমক আপা আসবে দুপুরে। তোর জায়গায় বিয়েটা সে করবে বুঝলি!’
-‘মানে?’
-‘মানে আর কী! তুই তো বলছিস চলে যেতে। চলে যাই। তুই অন্য কারো থেকে জেনে নিস।’
-‘আরে প্রিয় ভাইটা আমার! রা’গ করিস কেন? বল না!’
-‘কী বলব?’
-‘বিয়ের ব্যাপারেই বল।’
-‘ফুপু চমকের বিয়ে দিবে ভাবছেন। মা ফট করে বলল ইরফান ভাইয়ের জন্য বলে দেখলে কেমন হয়! তাই এখন ফুপুরা আসবে। ইরফান ভাইদের বাসায় মা যাবে। কথা বলবে চমক আপার ব্যাপারে। চমক আপা এখানে থাকলে সুবিধা থাকবে যে তাকে একবার দেখে গেল। তাই তাকে নিয়ে আসছে।’
-‘চমক রাজি?’
-‘ওমা! রাজি মানে? সে মহাখুশি। ইরফান ভাই যে সুন্দর রাজি না হয়ে উপায় আছে!’

মেহজার কলিজা জ্ব’লে যাচ্ছে। হিং’সা হচ্ছে ভীষণ! চমকটা তবে সঠিক চাল চেলেই দিল। মেহজার সবচেয়ে বেশি রা’গ হচ্ছে তার মায়ের উপর। চমকের মা মেয়ের বিয়ে দিতে পারে তো সে কেন পারেনা? বয়সে দুইটাই সমান। মেহজার ইচ্ছে করছে কেঁদে কুটে সারা বাড়ি ফাঁটিয়ে ফেলতে। রাফসান চলে গেল। মেহজা বিছানায় গড়াগড়ি দিতে থাকে। এখন সে কী করবে? যদি চমককে তাদের পছন্দ হয়ে যায়? ইরফানের যদি চমককে পছন্দ হয়! না না, সে কখনোই এরকম হতে দিবেনা। তাকে কিছু করতেই হবে।

চমকরা এসেছে বিশ মিনিট হয়ে গেছে। চমকের মা বেশ খুশি। ভাবীর সাথে বসে আলাপ করছে যে কীভাবে কী বলবে ইরফানদের। চমককে বারবার বলছে তাদের সামনে কীভাবে যেতে হবে। অবশ্য চমক আরো এক ধাপ উপরে। সে এখানে একেবারে বিয়ের সাজ দিয়ে বসে আছে। মেহজা বুঝে পাচ্ছেনা এখনই এত সাজার কী আছে! তারা তো এখনও তাকে দেখতে আসবে কীনা সেটাই নিশ্চিত করল না। আর ও এখনই সেজেগুজে বসে আছে। একটা ফা’ল’তু মেয়ে! মেহজা চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। মেহজার ফুপু তাকে ডেকে বলল,
-‘শোন! তুই এখন তোর ম্যামদের বাসায় যা। তোর মা কাচ্চি বিরিয়ানি রান্না করেছে। তুই এক বক্স সেখানে নিয়ে যা। তারপর বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিবি। চমক এরপরেই যাবে তোকে ডাকতে। ওকে বাসার ভেতরে ঢুকাবি কিন্তু। তোর ম্যামের ভাইয়ের সামনে ওকে যেকোনো ভাবেই হোক নিয়ে যাবি। একটু দেখাদেখি হোক তারপর মন গলে গেলেই বিয়ে পাকা হবে।’

মেহজার তব্দা খেয়ে গেল। তার ফুপু এত বড় মাস্টারমাইন্ড! এমন একটা পরিকল্পনা সে কীভাবে করল? ফুপু যদি জানতেন যে ইরফানের মা মেহজার জন্য প্রস্তাব রেখেছেন তাহলে কখনোই মেহজাকে সেই দিকে পাঠাতেন না। তবে তার মা মেহজার ব্যাপারটা তাকে জানায়নি যার ফলে সে মেহজাকে নিয়ে চিন্তা করছেন না।

মেহজা হাতে একটা বড় একটা ঢাকনাযুক্ত বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরফানদের বাসার সামনে। অন্য সময় হলে সে হাসতে খেলতে প্রবেশ করত তবে এখন সে যেতে চাইছেনা কেবল একটা কারণেই। চমককে সে ইরফানের সামনে নিবেনা। তার বন্ধুর মতো বোনটা যে এখন তার চোখের বালি হয়ে উঠবে তা সে ভাবতেও পারেনি কখনো। তবে করার কিছু নেই। এখন কিছু পেতে হলে কিছু হারাতেও হবে। মেহজা বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছে। দেখা যাক সেই হিসেবে কাজ কতটা এগিয়ে যায়।

কলিংবেল বাজতেই ইরা গিয়ে দরজা খুলল। মেহজাকে দেখে ভীষণ মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলল,
-‘আরে মেহজা? কতদিন পর এলে! তুমি তো ভুলেই গেছ আমাদেরকে।’
-‘না আপু আসলে পরীক্ষার প্রেশারে ছিলাম তো তাই সময় পায়নি।’
-‘থাক! এটা একটা ডাল-ভাত অযুহাত। পুরোনো হয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে চলছে। আসো ভেতরে আসো। এসেছ যখন আমাদের সাথেই দুপুরে খাবে।’

মেহজা ভেতরে ঢুকল। আজ তার মোটেও থাকতে ইচ্ছা করছেনা। থাকলে তো চমক এসে পড়বে। চলে গেলে আবার ফুপু চেঁচামেচি করবে। কী একটা সংকটপূর্ণ অবস্থা! মেহজা ইরাকে হাতের বাটিটা দেখিয়ে বলল,
-‘আম্মু কাচ্চি রান্না করেছেন। আপনাদের জন্যেও দিলেন।’
-‘তাই নাকি? কাচ্চি আমাদের সবার বেশ ভালো লাগে। মজার ব্যাপার হলো, দেশে আসার পর কিন্তু আমার একবারও কাচ্চি খাওয়া হয়নি। আজ তাহলে যাত্রা করা হবে।’
ইরা মেহজার হাত থেকে বাটিটা নিয়েই অবাক হয়ে বলল,
-‘ইশ! বেশ ভারী তো! তুমি এতক্ষণ যাবৎ এটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলে কীভাবে?’

ইরা বাটি নিয়ে ডাইনিং এর দিকে গেল। মেহজা দাঁড়িয়ে হাত ঝারা দিল। আসলে এতক্ষণ সে যে ভাবনায় ছিল তাতে তার একটুও ব্যথার কথা মনে হয়নি। ব্যথা অনুভবও হয়নি। কিন্তু সে কিছুক্ষণ আগেও দরজার সামনে এই বাটি নিয়েই বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিল। এখন ইরার বলাতে আপনাআপনি হাত ব্যথা কোথা থেকে দৌঁড়ে এসেছে যেন!

ইরা মেহজাকে ডেকে নিয়ে গেল তাদের রান্নাঘরের দিকে। দুপুরের রান্নাবান্নার আয়োজন তাদের প্রায় শেষের দিকে। বাড়ি খালি, আর কাউকে চোখে পড়ছেনা। ইরা আর মাহিমা বেগম রান্না করছিলেন। মাহিমা বেগম মেহজাকে দেখে একগাল হাসলেন। বললেন-
-‘কী খবর মামনি? ভালো আছ?’
-‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন আন্টি?’
-‘হ্যাঁ মা, আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। সেদিন তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম। তুমি ছিলে না তখন। আমরা যে গিয়েছিলাম তুমি শুনেছ?’
-‘জ্বি আন্টি, শুনেছি।’
-‘ওহ। তা কী বলল তোমার মা তোমাকে?’
-‘আম্মু তো কিছু বলেননি। রাফসান বলল যে আপনারা গিয়েছিলেন।’

মাহিমা বেগমের চেহারা দেখেই বোঝা গেল তিনি তার কথায় বেশ আ হ ত হয়েছে। এখন মেহজা কী বলত? সে কী বলে দিত যে বিয়ের কথা সে জানে! তাছাড়া এমন অগ্রীম বললে যদি তাকে বাজে ধরনের মেয়ে ভাবে? দরকার কী! অপরদিকে, মাহিমা বেগম ভেবেছিলেন হয়তো মেহজার পরিবার মেহজার হাতে এভাবে খাবার পাঠিয়ে তাদের প্রস্তাব গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে। ইরা মায়ের এমন চেহারা দেখে চোখের ইশারায় স্বাভাবিক থাকতে বলল। মেহজার ভালো লাগছেনা একটুও। চমক হয়তো চলে আসবে আর কিছু সময়ের মধ্যে। ইরফানকেও তো দেখা যাচ্ছেনা। ইরফান না থাকলে অবশ্য ভালো হয়। চমকের সাথে দেখা হবে না। তবে ইরফানদের বাসায় এসে ইরফানকে দেখতে না পারার ক’ষ্ট যে কতটা তা মেহজা ছাড়া আর কয়জন বুঝবে? মেহজা বলল,
-‘বাসায় আর কেউ নেই আন্টি?’
-‘না। আমরা আছি আর ইরার বাচ্চারা ওদের নানার সাথে বাহিরে গেছে। চলে আসবে কিছু সময়ের মধ্যে।’
-‘ওহ।’
মেহজা ল জ্জায় ইরফানের কথা বলার সা হ স পাচ্ছেনা। তাই চুপ করে আছে। কিন্তু মুখভঙ্গি এমন সে কথা বলতে চাইছে কিন্তু পারছেনা। ইরা তার ভেতরকার কথা জানল কীনা বোঝা গেল না তবে সে ফট করে বলে উঠল,
-‘ইয়াজ ছাদে গেছে সেই কখন! এখনও আসছেনা কেন মা?’
-‘কী জানি! কল করে দ্যাখ।’
-‘মোবাইল রুমেই রেখে গেছে।’
-‘চলে আসবে। হয়তো নতুন গাছ গুলো লাগাচ্ছে।’

ইরফান ছাদে শুনে মেহজার বেশ আনন্দ হলো। ছাদে এই সময় বেশি কেউ থাকেনা। এখন সে গেলে হয়তো দু দন্ড ইরফানের সাথে বসে কথা বলতে পারবে। তাকে দু’চোখ ভরে দেখতে পারবে। মেহজার চলে যেতে ইচ্ছা করছে। এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। ইরা বলল-
-‘ইয়াজ এসেছে হয়তো। আমি গিয়ে দেখি!’
ইরা আবারও দরজা খুলতে গেল। কিছুক্ষণ পর সাথে করে চমককে নিয়ে এলো। মেহজাকে বলল,
-‘তোমার বোন এসেছে মেহজা। তোমাকে নাকি ডাকছে তোমার মা।’
-‘ওহ তাই? চল চল বাসায় যাই।’
চমক কেমন করে তাকালো মেহজার দিকে। যার অর্থ তোকে যেভাবে কাজ করতে বলেছে তুই সেভাবে কর। আমাকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিস কেন? মেহজার বেশ রা গ হলো। তবুও করার যেহেতু কিছু নেই আপাতত তাই সে চুপ করে গেল। তবে মেহজা যখন বলেই ফেলল চল যাই, তখন তো আর বসে থাকা যায়না। অগত্যা চমককে নিয়ে হাঁটা ধরল কিন্তু ইরা থামিয়ে দিল। বলল,
-‘কী করছ হ্যাঁ? মেহমান মানুষ এসেছে তুমি তাকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছ কেন? দুইজন খেয়ে যাবে। এত তাড়া কীসের? তুমি এসেছ মাত্র দশ মিনিট হয়েছে। এখনই কী দরকার?’
মেহজার হয়ে চমকই জবাব দিল। গলার স্বর বেশ নরম করে ভালো লক্ষী মেয়ে সেজে সে বলল-
-‘আপু আসলে মামানি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছেন।’
-‘ও এই ব্যাপার! খাবার খেতেই তো ডাকছে। তোমরা এখানেই খাবে। খাবার খাওয়া নিয়েই তো কথা! কোথায় খেল সেটা ফ্যাক্ট না।’

ইরার কথা শুনে চমক মৃদু হাসে। সে তাড়া দেখিয়ে বলল,
-‘না ফুপুরা আছেন। সবাই মিলে একসাথে খাবার খাব বলেছিলাম। এখন না গেলে কেমন দেখায়? ফুপু রাগ করবেন। আমরা এখন যাচ্ছি আপু পরে আবার একদিন এসে খেয়ে যাব।’
ইরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে চমকের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। চমক মেকি হাসি দিয়ে মেহজার সাথে সেখান থেকে চলে আসে। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে সে বেশ ক্ষি প্ত হয়ে ওঠে মেহজার প্রতি। মেহজা তাকে ভোলাতে বলল,
-‘আরে বেকুব শোন! তোকে নিয়ে এসেছি ভালো করেছি। ইরফান ভাইয়া নেই তো বাসায়। তুই শুধু শুধু ওদের সাথে বসে কী গল্প করবি! তোর তো দরকার ইরফান ভাইকে। তারচেয়ে ভালো হয় এখন খেয়ে একটা ঘুম দে। বিকেল বেলায় নাহয় মা গিয়ে কথা বলবে। আন্টি আর ইরাপু তো তোকে দেখেইছে। তাদের পছন্দ অপছন্দ তো এই কিছু সময়ের মধ্যে হয়েও গেছে হয়তো। খামোখা চিন্তা করিস না। চমককে আরো নানান ভাবে ভুলিয়ে বাসায় আসার পর ফুপুকেও বেশ কিছু কথা বলে বোঝাতে হয়েছিল। মেহজা যার ফলে বেশ টায়ার্ড হয়ে পড়ে। তবুও তার টায়ার্ড হলে তো চলবেনা। দ্রুত গোসল সেরে ভেজা জামা কাপড় নিয়ে সে ছাদে গেল। যদিও বারান্দাতেই তা দিতে পারত তবুও সে এক ঝলক ইরফানকে দেখতে ছাদে গেল। ইরফান এতক্ষণে আছে কীনা সে জানেনা। তবে সে মনে আশা নিয়েই ছাদে গেল। আর তার ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল। ছাদে গিয়ে সে ইরফানের দেখা পেল। হাতে পায়ে কাঁদামাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তার হাতে একটা ছোট গোলাপের চারা। সেটা কোথায় লাগাবে এটাই দাঁড়িয়ে ভাবছিল। কারণ টব আর বাকি নেই। এখন এই গাছটা কী করবে? মেহজাকে দেখে সে হেসে বলল,
-‘আরে মেহজা নাকি? এই সময়ে ছাদে!’
মেহজা হাতের বালতিটা দেখিয়ে বলল-
-‘জামা কাপড় রোদে মেলতে এসেছিলাম।’
-‘ওহ স্যরি। আমি আসলে খেয়াল করিনি তোমার হাতের বালতিটা।’
-‘কোনো ব্যাপার না।’

মেহজা একপাশে গিয়ে জামা কাপড় গুলো মেলতে থাকে আর বারবার আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফানকে বেশ ভাবুক লাগছে। কারণ সে এখনও সেই একই জায়গা দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কী যেন ভাবছে। মেহজা জামা কাপড় মেলে দেওয়ার পর খালি বালতিটা হাতে নিয়ে ইরফানের দিকে এগিয়ে গেল। বলল,
-‘কী ভাবছেন ভাইয়া?’
ইরফান যেন ঘোর কেটেছে এমনভাবে চমকে গেল। তারপর মেহজার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
-‘আসলে এই গোলাপ গাছটা কোথায় রোপণ করব বুঝতে পারছিনা। টব একটা কম তাই এটার এখনও কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি।’
-‘ওহ টব লাগবে? আগে বলতেন! আমার একটা খালি টব পড়ে আছে। একবার ক্যাপসিকাম গাছ লাগিয়েছিলাম হয়নি। মরে গেছিল। তখন থেকে সেটা খালিই পড়ে আছে। আমি এনে দিচ্ছি আপনি অপেক্ষা করুন।’
মেহজা টব আনতেই যাচ্ছিল ইরফান কিছু একটা ভেবে তাকে পেছন থেকে ডেকে বলল,
-‘শোনো, গাছটা বরং তুমিই নিয়ে যাও। কষ্ট করে টব আনা লাগবেনা।’
-‘আমি নিব? কিন্তু গাছটা তো আপনার!’
-‘সমস্যা নেই। মূলত এটা রোপণ করারই চিন্তা ছিল। আমি আরো বেশ কয়েকটা লাগিয়েছি। আমার অনেক আছে। তুমি বরং নাও। আমি একটু দেখি তুমি কেমন পরিচর্যা করতে পারো! তুমি বরং গাছে ফুল আসলে আমাকে একটা দিও।’
-‘সত্যি নিব!’
-‘না, মিথ্যে মিথ্যেই নাও।’
ইরফান হেসে গাছটা মেহজার হাত ধরিয়ে দিল। তারপর বলল,
-‘যাক! অবশেষে কাজ শেষ। এবার আমি মুক্ত। যা অবস্থা হয়েছে। উফ! এক্ষুণি শাওয়ার নিতে হবে।’
এই বলে নিজের টি-শার্টটা ঝারতে থাকে।
মেহজা ইরফানের দিকেই তাকিয়ে থাকল। কড়া রোদের মধ্যে ইরফানের ঘর্মাক্ত মুখটা যেন চকচক করছে। ইচ্ছা করছে নিজের ওড়না দিয়ে তার মুখেই সেই ঘাম মুছে দিতে। হঠাৎ ইরফান তার দিকে তাকায়। এতে দুজনের চোখেচোখ পড়ল। মেহজা ল জ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। ইরফান বলল,
-‘কী বাসায় যাবে তো নাকি!’
-‘হ্যাঁ। বাসাতেই যাচ্ছি।’
-‘চলো, একসাথেই যাই।’

দুজনে লিফটে উঠল। ইরফান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছেনা। মেহজাও তাই আর কিছু আগ বাড়িয়ে বলল না। ইরফানদের ফ্লোর আসতেই ইরফান নড়ে চড়ে দাঁড়ায়। এক ঝলক মেহজার দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘তোমার শ্যাম্পুর ঘ্রাণটা বেশ তো! আমার কেমন নে শা হয়ে যাচ্ছে।’
মেহজা এই কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর তাকে আরো অবাক করে দিয়ে ইরফান তার দিকে একটু ঝুকে চুলের কাছে নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে বলল,
-‘বেশ রিফ্রেশিং ও বটে।’
তারপর সে তার মতো লিফট থেকে বেরিয়ে গেল। আর মেহজা শূন্য মস্তিষ্কে তার যাওয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।

২৫.
ইরফানের দেওয়া গাছটা বাসায় আনার পর বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাকে। একবার মা জিজ্ঞেস করল কে দিয়েছে, একবার চমক জিজ্ঞেস করল একবার ফুপু বলল। সবাইকে জবাব দিতে দিতে তার বিরক্তি এসে গেছে। তবে সে এটা একবারও বলল না যে গাছটা ইরফান দিয়েছে। সে বলল,
-‘তনুশ্রী দিয়েছে।’

মেহজা বেশ যত্নের সাথে, ভালোবাসার সাথে গাছটা রোপণ করল। ইরফানের দেওয়া প্রথম উপহার! ইশ! ইরফান তখন কী বলেছিল? একটা ফুল দিতে! সেটা না বললেও হতো। মেহজা তো সেই কবে থেকেই অপেক্ষায় ছিল ইরফানকে গোলাপ দেওয়ার জন্যে। আর তারপর লিফটে কী বলেছিল? না থাক! সেই কথা মনে পড়লে এখন আর ঘুম হবেনা। ল জ্জা লাগছে কেন এত কথাটা ভাবতেই? মেহজা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ইরফানকে নিয়েই ভাবতে থাকে। তখনিই রুমে চমক এলো। এসেই বলল,
-‘মেহু!!! মামানি উনাদের বাসায় যাচ্ছেন।’
-‘উনাদের আবার কাদের?’
-‘আরে বুঝিস না নাকি! তোর হবু দুলাভাইদের বাসায় যাচ্ছে।’
মেহজার এত রা গ উঠল। মানে তার শরীর রীতিমত জ্ব লে যাচ্ছে। তার মনের ভেতর থেকে আরেক মেহজা বলে উঠল-
-‘ঢং দেখলে বাঁচিনা!’

ইরফানদের বাসায় মেহজার মা যাওয়ার পর থেকেই ফুপু আর চমক মেহজার মাথা খেয়ে ফেলছে। একবার এটা জিজ্ঞেস করছে তো একবার ওটা। ফুপু জিজ্ঞেস করছে,
-‘ছেলে ম দ গাঁ জা খায় নাকি?’
চমক জিজ্ঞেস করছে,
-‘আগে রিলেশনে ছিল নাকি?’
তাদের প্রশ্ন দেখে মেহজার এমন অবস্থা হয়েছে যে তার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে বলতে,
-‘আমাকে এত কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন? আমি কী তার পরিবার নাকি! এমন ভান করছিস দুইজন মিলে মনে হয় তার সাথে বছরের পর বছর সংসার করেছি!’

#চলবে।

(রি-চেইক দেইনি। ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন। আর অবশ্যই আজকের এই পর্বে রেসপন্স করবেন। কেননা আপনারা আদৌ এটা পড়তে আগ্রহী কীনা তা আমাকে জানতে হবে। নয়তো অযথা ক’ষ্ট করার মানে হয় না। আমি চাই আপনারা আমাকে উৎসাহ দিন যাতে আমি আমার সর্বোচ্চ ভালোটা দিতে পারি। পুনরায় লেখা আমার জন্য ক’ষ্টকর। তবুও আমি লিখছি কেবল আপনাদের জন্য। এখন আপনাদের সাড়া পেলে সেই ক’ষ্ট আর থাকবেনা। আশা করি সবাই পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।)#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১৩)
সিজন ২
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

২৬.
মেহজা বসে আছে তার মায়ের সামনে। মা থমথমে মুখ করে আছে সেই কখন থেকে। মেহজারও একটু খা’রা’প লাগছে। একটু আগেই ফুপি চমককে নিয়ে চলে গেছে। যাওয়ার আগে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিয়ে গেছে মেহজার মা’কে। মেহজার মা ননদের মুখের উপর কোনো কথা বলল না। ফুপি যতটা না খুশি হয়ে এসেছিলেন তার চেয়েও বেশি রা’গ আর অসন্তুষ্টি নিয়ে বি’দায় হলেন। মেহজার ফুপির উপর ভীষণ রা’গ হচ্ছে। মায়ের সাথে করা ফুপির এমন শ’ক্ত আচরণ সে স’হ্য করতে পারেনি।

তখন মেহজার মা ইরফানদের বাসায় কী কথা বলেছেন তা মেহজা জানেনা। তবে এতটুকু বুঝতে পারল যে ওপাশ থেকে ভালো সংকেত আসেনি। ফুপি আর মা রুমে বসে কী কথা বলেছে সে তার কানা কড়িও জানেনা। ফুপি বের হলো বেশ রা’গী চোখ মুখ করে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ তার মাথার উপর দিয়ে রোলার কোস্টার চালিয়ে নিয়ে গেছে। ফুপি এসে মেহজার দিকে একটা ক’ড়া দৃষ্টিতে তাকায়। যা মেহজার চোখ এড়ায় না। ফুপি চমককে বলল,
-‘তৈরি হয়ে আয় এক্ষুণি। আমরা বাসায় যাব।’
চমকের মাথায় যেন আকাশ ভে’ঙে পড়ল সে এমন অবাক হয়ে মা’কে বলল,
-‘হঠাৎ বাসায় যাব কেন?’
-‘একটা থা’প্প’ড় দিব। বে’য়া’দ’ব মেয়ে! যা বলেছি তা কর।’
ফুপির রা’গী মুখ দেখে চমক আর কথা বলল না। তার মায়ের রা’গ জে’দ তার থেকে ভালো আর কে চিনবে?
ফুপি যখন চলে যাচ্ছিল মেহজার মা বেশ অনুনয় বিনয় করে আ’ট’কানোর চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় না। ফুপি বলল,
-‘ভাবী, এত সুন্দর করে ডেকে এনে এমন অ’প’মা’ন না করলেও পারতে। আমার ভাইয়ের কথা আর কী বলব! বউকে এত বেশি লাই দিয়ে উপরে উঠিয়েছি যে এখন তাদের আর কোনো কিছুতেই চিন্তা ভাবনা করা লাগেনা। ফট করে একটা বলে তারপর সেটা করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। একটা মানুষকে সেই কাজে টেনে আনে তারপর হঠাৎ করেই ধা’ক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি তুমি তোমার মেয়েকেই বিয়েটা দাও।’

ফুপি এত গুলো কথা বলে চমককে টানতে টানতে নিয়ে গেল। চমকের কা’ন্না করার অবস্থা। সে একটু আগেও বসে প্ল্যান করছিল বিয়ের দিন কোন গানে নেঁচে এন্ট্রি করবে।

মেহজা তখনকার কথা গুলো ভাবছিল এতক্ষণ। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল সে আগের মতোই চুপচাপ বসে আছে। তাই সে আর বসে না থেকে উঠে নিজের রুমে গেল। তারপর দরজা বন্ধ করে সে একটা গান ছেড়ে ধীরে ধীরে হাত পা ছড়িয়ে নাঁচতে থাকে। আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নানান অঙ্গ ভঙ্গি করতে থাকে।

তারপর একটা হালকা হলুদ রঙের থ্রী পিস পরে একটু সেজে নিল। চুল বাঁধতে নিলে মনে পড়ে একদিন ইরফান বলেছিল তাকে খোলা চুলে সুন্দর লাগে। তবে সে চুল খোলা রাখল না বরং বেণী করল। কারণ আজ বেণীতেই বেশি ভালো লাগবে। আজ তার খুশির দিন। তাই সে কেবল নিজেকে খুশি করবে। অন্য কাউকে খুশি করার কোনো দরকার নেই। আজকের সাজ নিজের জন্য।

তারপর শেষ বার নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে গুনগুনিয়ে গাইতে লাগল,
“কোয়ি ক্যায়সে উনহে ইয়ে সামঝায়ে
সাজানিয়া ক্যে মান ম্যে
আভি ইনকার হ্যায়
জানে বালমা ঘোড়ে প্যে কিউ সাওয়ার হ্যায়!”

তারপর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তার কোচিং শুরু হতে আর ত্রিশ মিনিট বাকি আছে। মা তাকে দেখে বললেন,
-‘কোচিং এ যাচ্ছিস?’
-‘হুম। আজকে আসতে একটু দেরি হবে।’
-‘কেন?’
-‘টিএসসি যাব।’

মেয়েকে কিছু বলবে ভেবেও আর কিছু বলল না সাবিনা বেগম। তার মন মেজাজ ভালো নেই। এই মুহূর্তে চুপচাপ থাকলে বা একটু ঘুমিয়ে নিলেই ভালো হবে। তিনি বললেন,
-‘সন্ধ্যার বেশিক্ষণ পর বাহিরে থাকা চলবেনা। তোর বাবা জানলে কিন্তু বকা দিবেন।’
-‘আচ্ছা।’

মেহজা বাসা থেকে বের হয়ে ভাবতে থাকে মা এত শান্ত কীভাবে থাকতে পারছে? স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে রে’গে আছে। তবুও এত ঠান্ডা ব্যবহার কীভাবে করছে! অন্যসময় তো সে আর কারো উপর না হলেও মেহজার উপর রা’গ ঝারে। আজ সেটাও করছেনা। যাই হোক! মেহজা এত ভাবল না। আজকে মন ভালো দিবস। এই দিবসে শুধু মন ভালোই হবে। উল্টা পাল্টা ভে’বে মন খারাপ করা লাগবেনা।

২৭.
কোচিং শেষে টিএসসিতে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে অনা আর প্রথিকে বিদায় দিয়ে মেহজা হাঁটা ধরলো। রিকশা পাওয়া যাচ্ছেনা। রিকশা আছে, যে দিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই রিকশা আছে। তবে যাত্রী সমেত! তাই উপায়ন্তর না পেয়ে হাঁটাই ধরতে হলো। একটু সামনে গেলেই হয়তো খালি রিকশা পাওয়া যাবে। ফুটপাথ ধরে হাঁটতেই খেয়াল করল একটা গাড়ি তার পাশ দিয়ে বেশ ধীরে চলছে। মেহজার মনে হলো তাকে ফলো করছিল গাড়িটি। তাই সে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন গাড়িটিও থেমে যায়। যার অর্থ তার স ন্দে হ ঠিক। সে নড়ল না এমনভাবে দাঁড়িয়ে রইল যেন সে কারো অপেক্ষা করছে। গাড়িটিও একই জায়গায় স্থির থাকে। হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে একটা ছেলে বেরিয়ে আসে। ছেলেটিকে মেহজা চিনতে পারল। ছেলেটি অয়ন। ইরফানের ফুপাতো ভাই। মেহজা আড়চোখে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি তাক করে। তখন অয়ন এসে বলল,
-‘হাই মিস! চিনতে পারছেন?’
মেহজা প্রথমেই চিনতে পারে তবে এখন একটু সময় লাগিয়ে অনেক ক’ষ্টে মনে পড়েছে এমন ভান করে বলল,
-‘আপনি ওই লোকটা না যার সাথে কিছুদিন আগে রাস্তায় দেখা হয়েছিল?’
-‘জ্বি হ্যাঁ। তবে ওই লোকটা বলবেন না প্লিজ। আমাকে ছেলে বলা যায় তবে লোকটা আসলে ঠিক বেমানান।’
-‘স্যরি। এতকিছু ভাবিনি।’
-‘সমস্যা নেই। আপনি এখানে কী করছেন?’
মেহজার বিরক্ত লাগল। অযাচিত লোকের অযাচিত প্রশ্ন তার মোটেও ভালো লাগেনা। তবুও ভদ্রতার খাতিরে বলল,
-‘ঘুরতে এসেছিলাম।’
-‘তা দাঁড়িয়ে আছো কেন? কারো জন্য অপেক্ষা করছিলে?’
-‘রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি।’
-‘বাসায় যাবে তো?’
-‘হ্যাঁ, বাসায় নয়তো আর কোথায় যাব!’
-‘তুমি তাহলে আমার সাথে চলো।’
-‘কেন?’
-‘না মানে আমিও সেখানেই যাচ্ছি। মামার বাসায়।’
-‘না আপনি যান। আমি রিকশা পেয়ে যাব।’
-‘সন্ধ্যা নেমেছে আরো আগে। জায়গাটা অতটা সেইফ না। তাছাড়া সেই তো বাসাতেই যাচ্ছো। আমার সাথে চলো! সময় বাঁচবে রিকশা ভাড়াও বাঁচবে।’
মেহজা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-‘আপনার কী মনে হয় আমি রিকশা ভাড়া দিতে হিমশিম খাই?’
-‘ছিঃ ছিঃ আমি সেটা বলছিনা। তুমি প্লিজ পজিটিভলি নাও।’

মেহজা খেয়াল করল ছেলেটা আপনি থেকে সরাসরি তুমিতে চলে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। গায়ে পড়া ছেলে ছাড়া অয়নকে সে আর ভালোভাবে নিল না।
-‘তুমি কী আমাকে ভরসা করতে পারছ না?’
অয়নের চোখে কাতরতা দেখা যাচ্ছে। মেহজার মনে হলো ছেলেটা হয়তো একটু গায়ে পড়া তবে বা’জে ছেলে নয়। তাছাড়া ছেলেটার বাবাকে সে চিনে। ভদ্র লোকের ছেলে ভদ্র লোকই হবে।
-‘আচ্ছা চলুন।’

অয়নের মুখটা আকস্মিক উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে দৌঁড়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল। মেহজা ধীরে সুস্থ্যে গিয়ে বসল। অয়নও দ্রুত গাড়িটি উঠে পড়ল। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিল। মেহজা ততক্ষণে সিটবেল্ট বেঁধে নিয়েছে।

সারা পথ অয়ন বকবক করতে থাকে। এই সেই নানান তথ্য দিতে থাকে নিজের সম্পর্কে। মেহজা বুঝতে পারে অয়ন তাকে ইম্প্রেস করতে চাইছে। তবে যত যাই করুক সে তো অয়নকে না অয়নের ভাইয়ের উপরেই ইম্প্রেসড্ হবে। অয়ন কত কিছু করছে কিন্তু মেহজা মুগ্ধ হচ্ছেনা। আর ইরফান কিছু না করলেও সে মুগ্ধ হয়। হয়তো এটাই ভালোবাসা। যাকে ভালোলাগে তার সবই ভালো লাগে। আর যাকে ভালো লাগেনা তার কিছুই ভালো লাগেনা। অ্যাপার্টম্যান্টের সামনে গাড়ি আসতেই মেহজার চোখ গেল ইরফানের গাড়ির দিকে। গাড়িটাও বোধ হয় মাত্রই এসে থেমেছে। তা দেখে মেহজার কিছুটা ভ’য় হলো। এখন অয়নের সাথে দেখে ইরফান যদি তাকে ভুল ভাবে? যদি বা’জে মেয়ে মনে করে? তার একদমই উচিত হয়নি অয়নের সাথে আসার। এখন সে আফ’সোস করছে কেন সে অয়নের সাথে এক গাড়ি করে আসতে গেল!

অয়ন ইরফানকে দেখেই বলল,
-‘বাহ! আসতে না আসতেই ইয়াজ ভাইয়ের গাড়ির দর্শন হলো। এবার তারও দর্শন হবে।’

মেহজা গাড়ি থেকে নামতে নিলেই অয়ন বলল,
-‘তুমি প্লিজ আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি গাড়িটা পার্ক করেই আসছি।’
মেহজা কী করবে বুঝতে পারছেনা। চলে গেলে বলবে মেয়েটা সুবিধাবাদী, কাজ শেষ তাই আর দাম দিচ্ছেনা। আর অন্যদিকে ইরফান তাকে দেখলে কিছু একটা ভেবে বসতে পারে এই চিন্তাও হচ্ছে। উফ! আচানক মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেল তার। গাড়ি থেকে নেমে সোজা লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দোটানায় পড়েছে সে। ভাবাভাবি করতেই সে সময় পার করে দিল। তার মধ্যেই সেখানে আগমন ঘটল ইরফান আর অয়নের। দুজনেই কী নিয়ে কথা বলছিল আর হাসছিল। মেহজা সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। অয়ন তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল। যার অর্থ মেহজা তার জন্য অপেক্ষা করাতে সে খুশি। ইরফান মেহজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুশিও হলো না, অবাক ও হলো না। সে একদম স্বাভাবিক। মেহজা তাড়াতাড়ি লিফটে উঠে পড়ল। তখনিই অয়ন দৌঁড়ে এসে ভেতরে ঢোকে। আর কিঞ্চিৎ রা’গ দেখিয়ে বলল,
-‘দেখছেন না আরো দুইটা মানুষ আসছে। তাদের জন্য একটু অপেক্ষা করবেন তো নাকি?’

ইরফান কথাটা শ্রবণ করে। তাই সেও ভেতরে প্রবেশ করে বলল,
-‘ও অপেক্ষা করবে কেন?’
কথাটা বলে সে লিফটে ঊনিশ, বিশ দুইটা বাটন চাপ দিল। এই ছোট ব্যাপারটাও মেহজাকে মুগ্ধ করল। সে খেয়াল করে কী সুন্দর মেহজার ফ্লোরের বাটনে চাপলো। তার মুখে একটু হাসি ফুঁটল। অয়ন তা দেখে বলল,
-‘ল’জ্জা পাচ্ছেন কেন? ভাই কি আর জানে নাকি আমাদের মধ্যকার কথা।’
মেহজা এই কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তাদের মধ্যকার কথা মানে? ইরফানও কেমন বাঁকা চোখে তাকায়। অয়ন মেহজার হাবভাব দেখে বলল,
-‘মানে আমাদের ব্যাপারটা!’
মেহজা ক্ষি’প্ত স্বরে বলল,
-‘আমাদের ব্যাপার কী আবার?’
-‘না না। মানে আমি বলতে চাইছি..
-‘চুপ থাকুন। উল্টা পাল্টা কথা বলছেন শুধু।’

ইরফান বেশ মনযোগ দিয়ে দুজনকে পরখ করছিল। তারপর বলল,
-‘তোমরা পূর্ব পরিচিত?’
অয়ন চট করে জবাব দিল,
-‘ হ্যাঁ! আগেই পরিচয় হয়েছিল।’
-‘ওহ।’
ইরফান তেমন একটা ঘাটল না। দরকার কী অন্যের ব্যাপারে কথা বলার। মেহজা ক’ড়া চোখে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে লিফট থেকে ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দিতে। ইরফান মেহজার দিকে তাকায়। মেহজাও অয়নের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে ইরফানের দিকে তাকাতেই চোখ চোখ পড়ে। ইরফান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহজা ল’জ্জা পেল। সে চোখ সরিয়ে নিলেও ইরফান তাকিয়ে থাকে। এরপর আর কেউ কোনো কথা বলল না। অয়ন বেশ কয়েকবার মেহজার দিকে তাকায় তা ইরফান দেখল। তবে কিছু বলল না। মেহজাদের বাসার সামনে লিফট আসতেই মেহজা দ্রুত লিফট থেকে নেমে পড়ল। অয়ন কিছু বলতে নিলেও সে শুনল না। তার আপাতত বুক কাঁ’প’ছে। পানি দরকার! এক্ষুণি পানি পান না করলে বাঁ’চা মুশ’কিল।

২৮.
রাতে মেহজা পড়ার টেবিলে বসে কোচিং এর পড়া গুলো দেখছিল। হঠাৎ তার মা এসে বলল,
-‘ইরা এসেছে। তোকে ডাকছে।’
-‘কেন?’
-‘জানিনা। ওদের বাসায় যেতে বলছে।’
-‘এখন কেন যাব?’
-‘জানিনা। তবে তুই যাবিনা। ও জোর করলেও যাবিনা।’
-‘কেন? যাব না কেন!’
-‘দরকার কী! পড়তে বসেছিস পড়। এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।’
-‘আচ্ছা।’

ড্রয়িং রুমে ইরা বসেছিল। মেহজাকে দেখে মিষ্টি হাসে। বলে,
-‘আমাদের বাসায় চলো। আমরা সবাই মিলে একটা ছোট খাটো পার্টি দিয়েছি।’
-‘না আপু। এখন সম্ভব না। আমি আসলে পড়ছিলাম।’
-‘পড়ছিলে? আচ্ছা বেশি না একটু সময়ের জন্য চলো। প্লিজ!’
-‘আপু আসলে!’
-‘দ্যাখো, আমি বাসায় এসে ডাকছি তুমি তবুও যাবেনা?’
মেহজা অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকায়। মেহজার মা ও ইরার শেষ কথাটা শুনে একটু নরম হলেন। তাই চোখের ইশারায় অনুমতি দিলেন। মেহজা অনুমতি পেয়ে মৃদু হেসে বলল,
-‘আচ্ছা আপু। একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি।’
-‘কোথায় যাচ্ছ?’
-‘না মানে এই পোশাকে তো যেতে পারিনা।’
-‘কী পোশাক? জাম্পস্যুট খা’রা’প কোথায়? আমাদের ইকরাও তোমার বয়সে এই পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতো। চলো। কিছু হবেনা।’

ইরা মেহজাকে নিয়ে বাসায় গেল না। ছাদে গেল সোজা। সেখানে গিয়ে মেহজা দেখল তারা চার ভাই-বোন আর অয়ন আছে সেখানে। ইকরা মেহজাকে দেখে বলল,
-‘কী খবর পিচ্চি?’
মেহজা একটু ল’জ্জা পেল। তাকে জাম্পস্যুটে বাচ্চা বাচ্চাই লাগে। সে চাইছে ক্রাশের সামনে বড় হতে কিন্তু তাকে ধরে বেঁধে সবাই বাচ্চা-ই বানাতে চাইছে। সে হেসে বলল,
-‘ভালো আপু। আপনার কী খবর!’
-‘বেশ ভালো।’
মেহজা দেখল ছাদের কর্ণারে ইরফান আর অয়ন বারবিকিউ করছে। আর ইমা তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। এটা ওটা ভুল ধরছে। ইরফানের মুখটা দেখা গেল শ’ক্ত হয়ে আছে। হয়তো বোনের এত বেশি ভুল ধরা আর খ’ব’র’দা’রি সে স’হ্য করতে পারছেনা। অয়ন এতক্ষণ ওদিকে মুখ করা ছিল। তাই মেহজাকে খেয়াল করেনি। এখন পেছন ফিরে মেহজাকে দেখে সে লাফিয়ে উঠল খুশিতে। দ্রুত পায়ে সামনে এগিয়ে এসে বলল,
-‘তোমাকে তো প্রথমে চিনতেই পারিনি। দুপুরে যুবতী মনে হচ্ছিল এখন খুকি মনে হচ্ছে।’
কথাটা শুনে মেহজার নাকের ডগা লা’ল হয়ে গেল। তার ইচ্ছা করছে এবার লোকটাকে ছাদ থেকে ফে’লে দিতে। ইরফান অয়নের কথা শুনে সামনে তাকায়। মেহজাকে সে ও লক্ষ্য করেনি শুরুতে। তবে অয়নের কথাটা শুনে সে বেশ বি’র’ক্ত হলো। এত কথা বলার দরকার কী? ইরফান মেহজাকে পরখ করে। তার ভাষ্যমতে মেহজা ছোট। ছোট বাচ্চা-ই! আর বাচ্চাটাকে আজকে বেশি বাচ্চা লাগছে।

মেহজার ভালো লাগছেনা। অ’স্বস্তি লাগছে ভীষণ। ইরাকে বলল,
-‘আপু এবার আমি যাই। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
-‘মাত্রই তো এলে। কী আর দেরি হবে?’
অয়নও বলল,
-‘ঠিকই তো। এখন যাওয়া চলবেনা।’
অয়নকে মেহজা রীতিমত পাত্তা দিল না। একটুতেই সে বেশি মাথায় উঠে পড়ছে। আর একটু দিলে নাঁচানাঁচি শুরু করবে। দরকার নেই। ইমার হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ইরফান সামনে এগিয়ে আসে। মেহজাকে বলল,
-‘বি ইজি। আমরা আমরা-ই তো! বসো। আপাদের সাথে কথা বলো। ভালো লাগবে।’
তারপর অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘তুই আমার সাথে আয়।’

#চলবে।
(আজকে প্লিজ সাড়া দিবেন। আমি প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে লিখেছি। রি-চেইক ও দেইনি। তাই জানি ভালো হয়নি। তবুও আপনাদের মন্তব্য আশা করছি।)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here