গ্যাংস্টার পর্ব ১

#গ্যাংস্টার
#Sabriha_Sadi (সাদিয়া)
পর্ব : ১

আজ কলেজে নতুন স্যার আসবে। সবার মাঝে টানটান উত্তেজনা। বিশেষ করে মেয়েদের। তবে একজন বাদে।

হুম রানির সেদিকে না আছে কোনো আগ্রহ আর না আছে কোনো উত্তেজনা। কলেজের আসার পর থেকে দেখছে মেয়েদের হুড়াহুড়ি আর কলরব। সবার মুখে এক কথা “নতুন স্যার।” নতুন স্যার কে নিয়ে সবাই কথা বলছে। শুনা গেছে সে দেখতে খুবি সুদর্শন আর স্মার্ট। কিন্তু একমাত্র রানিরই সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ তার মন দখল করে আছে অন্য কেউ।

প্রিন্সিপাল সহ সব প্রফেসর আর স্টুডেন্ট হাতে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নতুন স্যার কে শুভেচ্ছা জানাবে। সবার হাতে ফুল আর মুখে হাসি। কিন্তু রানির মুখ বেজার। বিষয়টার তার “ডোন্ট কেয়ার” ভাব পাত্তাই দিচ্ছে না এটার মাঝে।

ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সামিয়া।

“তুই এত লাফালাফি করছিস কেন? দম যেন তোর আহামরি করছে। ভালো করে একটু দাঁড়া। এখনি তো আমার পা টা বর্তা করে দিতি।”

রানির কথা শুনে সামিয়া জবাব দেয়,
“দেখ আজ এমন করিস না। শুনেছি নতুন স্যার নাকি অনেক সুন্দর। দেখতে নাকি প্রিন্স। ইসস আমার যে আর তর সইছে না।”
“তো আমি কি করব? তোর মতো কি আমি লুচ্চা নাকি? পারলে তুই গলায় ঝুলিয়ে নাচতে থাক। আজাইরা।”
“ঢং। যতসব বাজে কথা।”
“বাজে কি বললাম আমি?”
“এএ তুমি পাইছো একজন রে। চিনো না জানো না দেখোনি। তার জন্যেই দেওয়ানা হয়ে থাকো সবসময়। আর কারো দিকে নজর দেস না তুই। কত ভালো ভালো ছেলে কে তুই রিজেক্ট করেছিস জানিস? একেক জন কতটা সুন্দর আর স্মার্ট ছিল দেখেছিলি কি একটু নজর দিয়ে?”

সামিয়ার কথা শুনে রানি রেগে যায়।
“বান্দরনী ভুলেও আমার রাজ কে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। না হলে এখানেই তোর মাথা ঘেরে রাখব।”

সামিয়া একটা মুখ ভেংচি দেয়। বিড়বিড় করে বলে,
“পাইছে এক আবাল। যাকে কোনো দিন দেখেওনি তার জন্যে তিনি পাগল। কিছু বললেও তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।”
“কি বললি? কি বললি তুই?”
“দোস্ত সিনক্রিয়েট করিস না। এখনি হয়তো..”

সামিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েদের চিৎকার শুনা যায়। নতুন স্যার চলে এসেছে।

সবাই এক সাথে চিৎকার করছে। যেন স্যার না মডেল এসেছে।

কলেজের গেইট দিয়ে ইয়া বড় এক হোয়াইট গাড়ি এলো। সেখান থেকে কালো একজোড়া সু দেখা গেল। ভেতর থেকে যে বেরিয়ে এসেছে তাকে দেখে সবাই চুপ করে রইল। সবার নজর তার দিকে। মেয়েদের বুকের ভেতর হার্টবিট বাড়তে থাকে। আরো কিছু হচ্ছে কি না তা শুধু তারাই জানে।

সাদা প্যান্ট সাদা কোট সাদা ট্রাই কালো সানগ্লাস। লম্বা খাড়া চুল। চিকন লাল আভা যুক্ত ঠোঁট। এক হাত প্যাকেটে দিয়ে এগিয়ে আসছে।
খুব লম্বা, গায়ের রং ধবধবে সাদা। বডি তো দেখার মতো। সব মিলিয়ে সুদর্শনের থেকেও বেশি।

তার এমন স্টাইল দেখে সব মেয়েদের জান যায় যায়। সবাই মুখ হা করে তাকিয়ে আছে।

একে একে সবাই তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। শুধু রানি অন্যমনে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

নতুন স্যার এগিয়ে আসতে আসতে রানির কাছে যায়। রানি অন্য দিকে মুখ করে ফুল এগিয়ে দেয়। স্যার এক মনে তাকিয়ে থেকে বিষয়টা খেয়াল করে। অন্যমনস্ক থাকায় স্যারের পায়ে তার পা লেগে যায়।

“হোয়াট দ্যা হ্যাল..”

রানি ঘাবড়ে সামনে তাকায়। লোকটার দিকে রানি কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। এই কয়েক সেকেন্ডেই তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। লোক টা আসলেই সুদর্শন। শুধু সুদর্শন বললেও ভুল হবে তার থেকেও বেশি। কি বডি। জিম বডির মাংস গুলি কোট বেদ করেও রানির যেন খেয়াল হলো। আবার চোখ নামিয়ে নিচে তাকায়।

স্যারের পায়ের উপর তার পা। খুব ভয় পেয়ে যায়। পা সরিয়ে,
“স সরি স্যার।”

এই টুক বলে রানি সামিয়ার হাত টেনে কোনো রকম সেই জায়গা থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় সামিয়া বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে স্যার কে দেখছিল।

স্যার দুই আঙ্গুল দিয়ে সানগ্লাস টা খুলে রানির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মনে মনে বলে উঠে,
“এই মেয়ে প্রথম দিনি এমন কান্ড করল?”

তার সামনে এসে প্রিন্সিপাল বলে,
“ওয়েলকাম টু আওয়ার কলেজ মিস্টার শুষ্ক আহমেদ।”
“ও ইয়েস।”

দুজন হাত মিলিয়ে অফিস রুমের দিকে যায়। যাওয়ার সময় একবার পিছন ফিরে রানি কে দেখার চেষ্টাও করল।

চিকন লম্বা ফর্সা মেয়েটার মুখ বারবার তার চোখের সামনে ভাসছে। টানা চোখ, ঘন চোখের পাঁপড়ি, লাল ঠোঁট লম্বা চুলের সেই মুখখানা শুধু ভাসছে শুষ্কের চোখে।

শুষ্ক অফিস রুমে চলে গেলে সব মেয়ে রা তাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। কি এটিডিউট, কি স্টাইল, কি স্মার্ট। এক কথায় পারফেক্ট। মন কেড়ে নেওয়ার মতো মানুষ।

রানি সামিয়া কে নিয়ে মাঠের এক কোণায় চলে যায়। ভাবতে থাকে লোকটা কে নিয়ে সবাই এমনি তেই মাতামাতি করছে না। লোকটার মাঝে সত্যিই এমন কিছু আছে। রানি দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়া রাগে বলল,
“আমাকে টেনে আনলি কেন? তোর ভালো লাগছিল না কিন্তু আমার তো সেই ভালো লাগছিল তবে?”
“….
“কি ভাবছিস তুই? বল কেন আনলি?”
“চুপ করবি তুই? মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই গিলে ফেলছিলি তুই।”
“তাতে তোর কি? সবাই তো তাই করছিল।”

“চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
“ইসস আজ যদি নতুন স্যার টা শুরুতে ক্লাস নিত।”

রানি রাগে সামিয়ার দিকে তাকায়।
“আর একটা কথা বললেও তোকে ফোসকা বানিয়ে গিলে ফেলব। মনে থাকে যেন।”

রানির কথা শুনে সে চুপ করে রানির সাথে যেতে থাকে।

ক্লাসের মাঝে থাকা যাচ্ছে না শুধু নতুন স্যার, নতুন স্যার আর নতুন স্যার। সব মেয়েদের মুখে এই এক মানুষের নাম ডাক। একেক জন একেক কথা বলছে। সবাই তার স্মার্ট আর সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলছে। তারা বলা বলি করছে উনার সাথে যদি রিলেশন করা যায়। এমন একজন কে পেলে জীবন ধন্য। এখন থেকে প্রতিদিন সেজেগুজে আসবে যদি একবার উনার নজর পড়ে। আরো কত রকম কথা।

রানির শুধু এই গুলি বিরক্ত লাগছে।
কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। মুহূর্তে ভাবনার জগতে ডুব দেয়। ভাবতে থাকে কবে রাজের সাথে তার দেখা হবে?
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here