চতুর্থা পর্ব ৩

ছোটগল্পঃ
চতুর্থাঃ (৩য় খন্ড)
মোর্শেদা হোসেন রূবীঃ
~~~~~~~~~~~~~
বাড়ী ফেরার পর থেকেই মাথাটা ব্যথা শুরু হয়েছে পারুলের। এর অন্যতম কারন হলো ফেরার পথে ঐ গাড়ল ব্যাটা একগাদা পেস্ট্রি, টানা পরোটা আর ঝাল প্যাটিস প্যাকেট করে সাথে দিয়ে দিয়েছে। পারুলের শত বাধা সত্ত্বেও সে ওগুলো তার দোকানের ছেলেটাকে দিয়ে একেবারে রিক্সায় তুলে দিয়েছে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো পারুলের।
পথে ঈষিতা বেশ কয়েকবার ওর হাত ধরে স্যরি বলেছে। সে নাকি বুঝতেই পারেনি ছোটমামা যে ওকে দেখে অমন পাগলামী শুরু করবে। ঈষিতার বদ্ধমূল ধারনা পারুলকে নাকি তার দিলে লাগছে।
পারুল রেগে গিয়ে বলেছে, “আমার সব কথা জানার পরও আমাকে তার দিলে লাগার কোনো কারন নাই ঈষিতা। তুই নিশ্চয়ই তাকে এমন কিছু বলেছিস যার জন্য উনি এমন করেছে। তাছাড়া ওরকম মটু লোককে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে। একেতো দাড়ীওয়ালা, তার উপর ভুড়িওয়ালা। কথারও কোনো স্টেশন নাই, মেল ট্রেনের মতো ছুটছো তো ছুটছেই।’

ঈষিতা অবশ্য মামার হয়ে সাফাই গেয়ে বলেছে, ‘ বিশ্বাস কর, আমি মামাকে কিছুই বলি নাই। মামা একদিন তোর ছবি আমার মোবাইলে দেখে বললো,” এটা কে রে..! তখনি তোর সম্পর্কে টুকটাক কথা বললাম। ”

-” বাহ্, টুকটাকের মধ্যেই সে আমার আদ্যোপ্যান্ত সব জেনে ফেললো ? ”

-” কারন মামা তোর সম্পর্কে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো সেদিন। জানতে চেয়েছিলো তুই প্রেমট্রেম করিস কিনা। তখনি বাধ্য হয়ে সব বলে দিলাম। সব শুনে মামা তোর সাথে একদিন দেখা করতে চাইলো তো আমি কি করবো। অনেকদিন থেকেই বলছিলো, তোর বান্ধবীর সাথে একদিন দেখা করিয়ে দে..না। তারপরেও এড়িয়ে গেছি। ইদানীং তোর আর ইসতিয়াক ভাইয়ের ঝামেলার কথা শুনে মনে হলো মামার সাথে তোর দেখা হলে বোধহয় মন্দ হয়না। অন্তত তুই বিপরীত কিছু ভাবার সুযোগ পাবি আর পছন্দ না হলে তো না’ই। তবে এটুকু বলতে পারি, মামার ঐ একটাই দোষ, বেশী কথা বলা। নইলে সে মানুষ হিসেবে অসাধারন।’

পারুল আর কিছু বলেনি। তবে ঈষিতাকে অনেক সেধেছিলো দু একটা প্যাকেট সাথে নেবার জন্য কিন্তু ঈষিতা নেয়নি। বলে এসব বাসায় রোজই আনে মামা।
পারুল ভেবে পাচ্ছিলো না বাসায় কি জবাব দেবে এতোসব নাস্তার। কমসে কম হাজার খানেক টাকার খাবার রয়েছে এখানে।

বাড়ী ফেরার পর মা তো দেখেই চোখ কপালে তুলে বলেছে, ” এতোসব নাস্তাপানি কে দিলো রে পারু…?”

-” ইয়ে, ঈষিতার মামার দোকানে গিয়েছিলাম তো। উনিই আসার সময় দিয়ে দিলেন আর বললেন তোমার আম্মাকে আমার সালাম দিও!” মিন মিন করে নিরেট সত্যি কথাটাই বলে দিলো পারুল।

মা তাতেই মহাখুশী। বললো,” ভালোই তো। নাস্তাগুলো কাজে আসবে রে..। আজ সন্ধ্যায় তোর মেজফুপীরা আসবে। আমার আর টাকা খরচ করে নাস্তা কিনতে হলো না। শুধু রবিনকে দিয়ে এক বোতল স্প্রাইট বা ফান্টা আনায়া নেই, কি বলিস..?” রবিন হলো পারুলের ছোট ভাই। নাস্তা
আনার কাজটা সাধারনত ওকে দিয়েই করাতে হয় কিনা।
পারুল কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরোজা বন্ধ করে দিলো। এই ঘরটা আগে ওদের তিন বোনের ছিলো। বড় আপা আর মেজআপার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পারুল এখন এটার একচ্ছত্র অধিপতি। আবায়া খুলে জামা কাপড় বদলে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে রইলো সে।
এমন সময় ফোন বাজলো। আননোওন নাম্বার দেখে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে পরে রিসিভ করলো পারুল।
সালাম দিতেই শুনলো সদ্য পরিচিত একটি কণ্ঠ ,” ওয়াআলাইকুম, পৌঁছাইসেন তো ঠিকমতো? ”

-” জ্বী…? কে বলছেন ?”

-” আরে আমি আমজাদ বলছিলাম। বাহ্, এরই মধ্যে ভুলে গেলেন। অবশ্য, আমি মনে রাখার মতো তো কেউ না। কিন্তু আপনি মনে রাখার মতো। আপনার সাথে দেখা হবার পর মাথা থেকে আপনারে সরাইতে পারতেসিনা। কি করি বলেন তো ? যা হোক্, আপনার আম্মার সাথে আলাপ সালাপ করে ঈশিতাকে ফোনে জানিয়ে দিয়েন। আমি কিন্তু এই শুক্রবারে ফ্রি আছি..!”

-” কি জানিয়ে দেবো ? আজব তো..! আর আপনি শুক্রবারে ফ্রি থাকলে আমার কি? ” পারুলের এবার একটু বিরক্ত লাগলো। আচ্ছা গায়ে পড়া লোক তো। বিয়ে করার জন্য এমন উঠে পড়ে লেগেছে কেন এটা? অবশ্য লাগবে নাই বা কেন। আধাবুড়া ভুড়িঅলা এসএসসি পাশ হয়ে ওর মতো এম.এ পাশ মেয়ে পাচ্ছে। বিয়ে করার জন্য তো অস্থির হবেই।’ চিরাচরিত এক আত্মগর্ব পারুলকে কিছুটা গর্বিত করে তুললো। ওপাশের বেহায়া লোকটা এখনো হাসছে।

পারুল ফোন রেখে ভাবনায় পড়লো। এই গাড়লকে বিয়ে না করলে তো ইসতিয়াককে বিয়ে করতে হবে ওর। ইসতিয়াকের বয়স ওর কাছাকাছি, দেখতে হ্যান্ডসাম লুক আর উচ্চশিক্ষিত। সেখানে এই লোক পারুলের কমসে কম সাত-আট বছরের বড়। এ তো ইসতিয়াকের সামনে কিছুই না। মা-বাবা কি এর সাথে বিয়েতে রাজী হবে ? ইসতিয়াক না থাকলে হয়তো রাজী হয়ে যেতো। ধুর, তাতে কি ! পারুল নিজেই কি এখানে রাজী হবে নাকি, যত্তসব ! ‘ নানান এলোপাতাড়ী ভাবনা ভাবতে ভাবতেই চোখ লেগে এলো ওর।

সন্ধ্যায় মায়ের ধাক্কায় ঘুমটা ছুটে গেলো। মেজফুপীরা নাকি এসে সামনের ঘরে বসে আছে। মা পারুলকে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে জামা বদলে সামনের ঘরে আসতে বললেন। পারুল বিরক্তিতে মুখ কুঁচকালো, “আমি এখন জামাটামা বদলাতে পারবো না মা। যেভাবে আছি সেভাবেই যাবো। তোমার ননদ নিজের বাতিল মাল এখানে চালাতে আসছে। কাজেই গরজটা তারই বেশী। এতো আদিখ্যেতা দেখানোর কিছু নাই! আমি হলাম ভাঙ্গারী দোকান। সব বাতিল জিনিস এখানে চালাতে আসে লোকজন।

-” বেশী ঢং করিস না। এতো ফুটানী কিসের তোর ? দুই একজন লাইনে থাকলেও নাহয় বুঝতাম। একটা ভালো পাত্র তো চোখে দেখিনা। সেই দিক দিয়ে ইসতিয়াক তো ভালোই। আর ছেলেরা ওরকম একশোটা বিয়ে করলেও পচে না। সোনার আংটি আবার কখনো বাঁকা হয় নাকি..!” পারুল চাপা রাগ নিয়ে মায়ের চলে যাওয়া দেখলো। মায়ের এ জাতীয় মন্তব্য ওর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছেলে জাতটা মাথায় উঠেছে এসব স্তুতি শুনে শুনে।

আলস্যভরে বিছানা থেকে পা দুটো মাটিতে ছোঁয়াতেই চমকে উঠলো পারুল। কারন আচমকা ঘরে ঢুকেছে ইসতিয়াক। পারুল দ্রুত ছোঁ মেরে নিজের ওড়নাটা টেনে নিয়ে গায়ে জড়ালো।

কিছুটা অসহিষ্ণু কণ্ঠে বললো,” এটা কি ধরনের অভদ্রতা। অনুমতি না নিয়ে ফট করে আমার রুমে ঢুকে গেলে কি মনে করে ? এই ম্যানার্সটুকুও কি জানা নাই..? ”

পারুল একটু অবাকই হলো, কারন এর আগেও ইসতিয়াক ওর বউদের নিয়ে দু’একবার বেড়াতে এসেছে এবাড়ীতে। তবে কোনোদিন পারুলের ঘরে ঢুকে নাই। ওর বৌ’রা ঢুকেছিলো। ওর সাথে কথাও বলেছে। তবে প্রথম জনের দেমাগ একটু বেশী ছিলো বলে তেমন কথা বলেনি কিন্তু দ্বিতীয় বৌ’টা অন্যরকম ছিলো। সে নিজেদের অনেক ব্যক্তিগত কথা বলে ফেলেছিলো সেদিন। এমনকি কথায় কথায় এটাও জিজ্ঞেস করেছিলো, “তোমরা নাকি একসাথে বড় হয়েছো ? তা দুজনে প্রেম ট্রেম করোনি ? শুনলাম ও তো নাকি তোমারে পড়াইতো ? ও তো আবার দেখতে হ্যান্ডসাম। তবে প্রেম না করে ভালোই করেছো। ও হলো আগাছা…! আগাছা বুঝো…?” পারুল মেয়েটার উত্তর না দিয়ে কথাটা এড়িয়ে গিয়েছিলো সেদিন।

আজ ইসতিয়াকের এভাবে ঘরে ঢোকাটা তাই কিছুটা বিস্ময়কর তো বটেই। পারুলের কথার জবাবে ইসতিয়াক হাসিমুখে বললো, ” নিজের বৌ এর কাছে আসবো তাতেও কি ম্যানার্স পালন করা লাগবে নাকি, জানতাম না তো..!”
” অবশ্যই পালন করা লাগবে। এটাই নিয়ম। আর নিজের বৌ মানে, কে তোমার বৌ ? কোনো প্রমান আছে ?”

-” প্রমান লাগবে কেন। আমরা নিজেরা তো জানি। আমাদের মন জানে। এখন নতুন করে বিয়ে করলে সমাজও জানবে। আর তুমি যদি একান্তই পুরোনো কিচ্ছা চাউর করতে চাও তো প্রয়োজনে আমি এ সপ্তাহে খুলনা যাবো। গিয়ে আমাদের বিয়ের কাবিননামাটা তুলে নিয়ে আসবো। টাকা দিলে আর্জেন্ট বের করে দিবে ওরা। তুমি কি বলো, করবো এটা…?”

পারুল নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ইসতিয়াকের দিকে। সে বেশ বুঝতে পারছে ইসতিয়াক আসলে ওকে কথার ছলে ভয় দেখাচ্ছে ওদের বিয়ের কথা ফাঁস করে দেবার। আর দিলেই বা কি, পারুল নিজেই তো কখনো লুকিয়ে বিয়ে করতে চায় নি। তবে এতো বছর পর বাবা-মা’কে এটা জানাতে চায় না এই যা। তাদের বিশ্বাসের ভিত নড়ে যাবে। বিশেষ করে বাবাকে নিয়েই ওর ভয়। এখনতো ইসতির মতলব দেখে মনে হচ্ছে সে এটাকেই এখন পারুলকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে।

পারুলকে মুখ নামিয়ে ভাবতে দেখে ইসতিয়াক হঠাৎ ওর অনেকটা কাছে চলে এলো। পারুল ছিটকে দুরে সরে যাবার চেষ্টা করতেই সে হ্যাঁচকা টানে নিজের গায়ের উপর এনে ফেললে পারুল রেগে গেলো।
চিবিয়ে চিবিয়ে বললো ,” মা যে কোনো মুহূর্তে এ ঘরে এসে পড়বে, ইসতিয়াক ছাড়ো ! হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি….?”

-” কারন এটা আমার অধিকার। আর মামী এখন ভুলেও এদিকে আসবে না। সে নিজেই আমাকে তোমার ঘরে যেতে বলেছে। সো, আমরা এখন অনেক কিছু করতে পারি ! আচ্ছা, তুমি আমাকে আগের মতো ইসতি না ডেকে ইসতিয়াক ডাকো কেন বলো তো !” ইসতিয়াক সেই পাঁচ বছর আগের মতো করেই পারুলকে আদর করার চেষ্টা করলো।

পারুল মরিয়া হয়ে হাত মুচড়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কেঁদে ফেললো এবার। বললো,” কি মনে করো তুমি আমাকে? তোমার হাতের পুতুল? যখন খুশি ছুঁড়ে ফেলে দেবে, আর যখন খুশি কাছে টেনে নেবে। আমাকে আরেকবার বিয়ে করতে চাওয়ার পেছনে তোমার উদ্দেশ্য কি আমি কিছু বুঝি না মনে করেছো? ”

-” কি উদ্দেশ্য ? উদ্দেশ্য তো একটাই। আর সেটা হলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না! ”

-” তাই নাকি ? আজ যদি তোমার বউ দুটো তোমাকে ছ্যাঁচা দিয়ে চলে না যেতো কিংবা আমার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যেতো তখন কোথায় থাকতো এই ভালোবাসা, শুনি…?” ইসতিয়াকের বেপরোয়া আচরনে পারুল অসহায় বোধ করছে। ওর শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। ভেঙ্গে পড়তে চাইছে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যুহ। পারুলকে নির্জিব পেয়ে ইসতিয়াকের হাতও অবাধ্যতা শুরু করে দিয়েছে।

হঠাৎ বিকেলের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো পারুলের। ঈষিতার মামা একটা কথা বলেছিলেন , “দেখেন, বিয়ে বলেন চায় সংসার, যে কোনো কাজ সুন্নাতানুসারে করলে সেটা হবে ইবাদত। আবার নামাজ রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও সুন্নত মেনে না করলে সেটা হবে বিদআ’ত। সেই মতে বিয়েও একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সুন্নত মেনে স্ত্রীসংসর্গেও পাওয়া যায় সদকার সাওয়াব, আর না মানলে জেনা। বোঝেন কিছু…? আপনি যেভাবে বিয়ে করছেন এটা তো কোনো সুন্নতী তরীকা না। বিয়েও কি চুরি করে করার জিনিস ? বিয়ে তো কোনো গোপন জিনিস না, জেনা হলো গোপন জিনিস। বরং এতে তো আপনার জন্মদাতা বাবাকে তার হক থেকে বঞ্চিত করলেন। আরে সাহাবীরা তো ঢাল তলোয়ার বেচে মোহরানা দিয়েছেন, খেজুর খাইয়ে হলেও ওয়ালিমা করছেন। আর এখনকার ছেলেমেয়েরা….? শোনেন, নিজেদের সুবিধা আর মনের সান্তনার জন্য এমন কাগুজে বিয়েকে খুব বেশী হইলে “যায়েজ” বলে চালায়া দিতে পারেন। কিন্তু জেনে রাখেন হাদীসে এমন বিয়ে বাতিল। তাছাড়া আপনি তখন নিজেই নাবালিকা। বয়স্কা হলে বিষয়টা তবু অন্যরকম হতো। আচ্ছা বলুন তো, সে তো আপনার কাছ থেকে নিজের হক ঠিকই আদায় করে নিসে, সে আপনার মোহরানা কতটুকু আদায় করছে…? ”

কথাটা মনে আসামাত্রই পারুলের যেন গায়ে আগুন ধরে গেলো। এতক্ষণ সে কিছুটা অনিচ্ছাতেই নিজেকে সঁপে দিয়ে যাচ্ছিলো। আচমকা ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তীব্র প্রতিবাদ করে বসলো। কোথায় এতো শক্তি পেলো পারুল জানে না। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ইসতিয়াককে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে আচমকা ওর হাতে কামড় দিয়ে বসলো সে। ইসতিয়াক দ্রুত ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের হাত চেপে বসে গেলো। পারুলের চোখে তখনো আগুন জ্বলছে। তর্জনী উঁচিয়ে দরোজার দিকে হাত তুলে হিসহিস করে বললো,” বের হ, এই ঘর থেকে। আমি তোর রক্ষিতা না ! পশু কোথাকার…! ”

ইসতিয়াক অবাক হয়ে পারুলের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পারুলের এই রুদ্র মূর্তি আশা করেনি সে। পারুলের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস প্রবলবেগে ওঠানামা করছে। সে প্রানপনে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলেও তার চোখের জল যেন বাধা মানছে না, কান্না যেন তার ছিটকে বেরোতে চাচ্ছে। নিজেকে সামলাতে গিয়ে পারুল দ্রুত বাথরুমে ঢুকে সশব্দে দরোজা আটকে দিলো।

ঘন্টাখানেক পরে পারুলের ডাক পড়লো। পারুল শান্ত ভঙ্গিতে ফুপীর সামনে হাজির হলে ফুপী ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কিছুক্ষণ দেখলেন। ইসতিয়াককে দেখা গেলো পরাজিত সৈন্যের মতো মুখ নিচু করে এক কোণে বসে মোবাইল টিপছে। ফুপী বিরস মুখে বলতে লাগলেন, ” আজকালকার মেয়েদের বিশ্বাস নেই গো ভাবী, এদের দুই চারটা বয় ফ্রেন্ড থাকেই। এজন্যেই তো ঝাঁটা মেরে ওগুলোকে বিদায় করসি। অমন দুশ্চরিত্রা রূপসী আমার দরকার নেই। ওরা আমার ইসতির উপযুক্ত না। পারুল কালো হোক যা’ই হোক, তবু তো আমার ঘরের মেয়ে।”
পারুল বুঝতে পারছে ফুপী কথাগুলো ওকে শোনানোর জন্যই বলেছেন। পারুল থমথমে দৃষ্টিতে ইসতিকে একবার দেখলো। সে যেন এই দুনিয়াতেই নাই এমনভাবে মোবাইলে মন দিয়েছে। পারুলের হঠাৎ বেশ অস্থির বোধ করলো। মা’কে বলে উঠে নিজের ঘরে চলে এলো সে।

==

এই কয়েকদিন ঈষিতা ফোন করেনি। আজ ফোন করে ফের একগাদা স্যরি বলে নিজের সেদিনকার ভুল আচরনের জন্য ক্ষমা চাইলো। পারুল ওসব আলাপে গেলো না আজ। নিরবে সব শুনে মৃদু স্বরে ইসতিয়াকের ঘটনাটা খুলে বললো ঈষিতাকে।
ঈষিতা অবাক হয়ে বললো, “ইস্, কি পরিমান অভদ্র রে..! একটু সম্মান বোধ তো তোর প্রতি তার থাকা উচিত। তোর কাছে একটাবার স্যরি না হয়ে কাছে এসেই পাছড়া পাছড়ি..? এ কেমন লম্পট…! তারপরেও তুই একেই বিয়ে করবি..? আচ্ছা, আমার মামী হতে তোর সমস্যা কি বলতো ? আমার মামা লেখাপড়া কম জানে বলে ? লেখাপড়া বেশী জেনে ইসতিয়াক কি বিরাট উন্নত মানুষ হয়ে গেছে? তাছাড়া আমার মামা তো ফকির না, সে স্ট্যাবলিসড । মান্থলি ভালো ইনকাম করে। সর্বোপরি সে তোকে খুব পছন্দ করেছে। আমি তো মনে করি, এটাই তার বড় যোগ্যতা। মামা আজ সকালে কি করেছে জানিস ? ”

-“কি…?” বলবে না ভেবেও প্রশ্নটা মুখ ফসকে করে বলে বসলো পারুল।

ঈষিতা খিলখিল করে হেসে বললো,” সকালে উঠে দেখি মামা ব্যয়াম করছে। আমাকে বলে কি, ‘ঈষু, দ্যাখতো, ভুড়িটা কম লাগছে না….হি হি হি…!”
ঈষিতার হাসি পারুলের মাঝেও সংক্রমিত হলো। নিরবে হেসে ফেললো সে।

ঈষিতা বললো,” যাই হোক্, বিয়েশাদী সারাজীবনের ব্যপার। সাময়িক আবেগের সিদ্ধান্তের খেসারত সারাজীবন দিতে হবে। তাই ভালো করে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিস। তবে মামাকে বেশ এক্সাইটেড দেখলাম। বুঝলাম, তোকে ভীষন মনে ধরেছে তার। বলে কি, পোলাপান মানুষ একটা ভুল করে ফেলেছে… হি হি হি..!” ঈষিতা আবারো হেসে খুন।

পারুল দু চোখ বন্ধ করে খানিক ভেবে বললো ,” ঈষিতা শোন্ ! তুই আমার আম্মার সাথে কথা বলতে পারবি ওনার ব্যপারে..?”

-” কিইইই….? কি বললি তুই..? সত্যিই পারু..?” ঈষিতা খুশিতে টগবগিয়ে উঠলো।

-” হম, আমি রাজী। সত্যি বলতে তোর মামা ভেতরে মানুষটা কেমন আমি জানিনা। তবে আমি তোকে জানি, তুই আমার বাল্যবান্ধবী। আমার এতোটুকু বিশ্বাস আছে যে, আমজাদ খারাপ হলে তুই নিজেই আমাকে এই সম্পর্কে জড়াতে নিষেধ করতি। তাছাড়া, যে আমাকে সম্মানের চোখে দেখবে তাকে আমিও সম্মান দিতে কুণ্ঠা করবো না। আর ভালোবাসা….ওটাতো হয়েই যায়। আজ পর্যন্ত তো ভালোবাসার সংজ্ঞাটাই বুঝলাম না। অথচ ভালোবাসার দায়েই পাঁচটা বছর কাটিয়ে দিলাম। যাই হোক, ওনাকে মানে তোর আমজাদ মামাকে বলিস, ইসতি হয়তো ঝামেলা করতে পারে। ওর কানে গেলে তোর মামার দোকানে গিয়ে আজেবাজে কথা বলে বিয়েটা ভাঙ্গার চেষ্টা করতে পারে। ও এখন আমাকে জেদের বশে পেতে চাইছে আর আমি কোনোভাবেই ওকে মন থেকে মেনে নিতে পারছি না রে…!”

” আমি মামাকে সব বলবো। তুই ভাবিস না। ছোটোমামা যে চীজ। তুই রাজী হয়েছিস শুনলে নির্ঘাত সারারাত ব্যায়াম করবে।” আবার এক প্রস্থ হাসির ফোয়ারা চললো।

পারুল ফোন রেখে বিমর্ষ হয়ে খানিক বসে রইলো। ভাবতে চেষ্টা করলো, সিদ্ধান্তটা নিয়ে ভুল করলো না তো। ঈষিতার ছোটমামার আগ্রহের কারনেই তার প্রস্তাবে রাজী হয়েছে সে যদিও মনের দিক থেকে অতটা উৎসাহ পাচ্ছে না। কেবলি মনে হচ্ছে, সবাই দেখলে কি বলবে। মা তো প্রথমেই বলবে, তুই কি দেখে এই ছেলেকে বিয়ে করতে রাজী হলি বলতো..?”
পারুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো। গত কয়েকদিন ধরে ইস্তেখারা করছে সে। রেজাল্ট একই আসছে। আমজাদ। বিশেষ করে গতরাতের স্বপ্নটা ওর চেতনাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ফলে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে পারুল। দেখা যাক্, ওর ভাগ্য ওকে কোথায় নিয়ে যায়। ঈষিতা আসার আগে মায়ের সাথে আজই এ নিয়ে কথা বলতে হবে।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পরই মা’কে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে এলো। মায়ের হাত ধরে বললো,” মা, তোমাকে আজ কিছু কথা বলবো। তুমি ঠান্ডা মাথায় পুরোটা শুনবে কিন্তু কোনো চ্যাঁচামেচি করতে পারবেনা। কারন বাবা এখনো জেগে।”

-“কি এমন কথা বলবি যে এতো শর্ত দিচ্ছিস?” মায়ের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে কিছুটা কুঁকড়ে গেলো পারুল। কিন্তু মা’কে না বলে আজ উপায় নেই ওর। একা একা এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ওর পক্ষে। ফলে ধীরে ধীরে ইসতিয়াক আর তার প্রথম বয়সের আবেগ, তা থেকে প্রেম ও হুট করে করা বিয়ের সমস্ত কথা খুলে বলে কাঁদতে লাগলো পারুল।
বললো,” আমাকে মাফ করো মা..! আমি অনেক বড় ভুল করেছিলাম। তার খেসারত আজো দিচ্ছি। নিজেকে নষ্টা মনে হচ্ছে মা। আমি তখন বুঝতে পারিনি, ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ইসতি যে এভাবে….!” বলে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মুখ রক্তশূণ্য ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মৃদু কাঁপছেন তিনি।
কোনোমতে বললেন,” এ তুই কি করেছিস পারু…? তোর বাবা শুনলে তো হার্টফেল করবে রে…! তোকে নিয়ে কত গর্ব তার..!”

-” আমি কিচ্ছু জানি না মা..! তুমি বাবার কানে কথাটা যেতে দিও না মা…! প্লিজ..!”

-” আমি এখন কি করবো? এসব কথা চাউর হলে তো তোর জীবনেও বিয়ে হবে না। এখন তো পায়ে পড়ে হলেও সাহিনার কথায় রাজী হতে হবে। সাহিনা কি এসব জানে?”

-” না, মা। ফুপী হয়তো জানে না তাছাড়া আমি ইসতিয়াককে বিয়ে করতে চাই না মা। ওর মতো ভন্ড, লোভী, প্রতারককে বিয়ে করে আমি সুখী হতে পারবো বলে তুমি মনে করো ? তাছাড়া ওর ইনফারটিলিটির সমস্যা আছে! ”

-” সেটা আবার কি…?”

-” বন্ধাত্ব্য। মা…আমি তোমাকে এতো কথা খুলে বলতে পারবো না। শুধু এতোটুকু জেনো, ওর দুই বউই এসব কারনে চলে গেছে। কথাটা মেজফুপী তোমাকে বলেনি কিন্তু ইসতিয়াকের দ্বিতীয় বউ একদিন নিজে আমাকে বলেছে যে ডাক্তার ওকে বলেছে, বাচ্চা না হবার সমস্যা ওর বৌ এর না, ইসতিয়াকের !”

-” বলিস কি..?”

-” হ্যাঁ, মা। তবু যদি ও মানুষ ভালো থাকতো আমি ওর জন্য সব মেনে নিতাম। একটা বাচ্চা দত্তক নিয়ে নিতাম কিন্তু ইসতিয়াক শুধু শারিরীক ভাবেই না, মানসিক ভাবেও পঙ্গু। সে এখন জেদের বশে আমাকে হাসিল করতে চায়! ”

-” তা বুঝলাম কিন্তু তোরও তো কোনো দিকে কিছু হচ্ছে না। বিয়ে শাদীর কোনো যোগাযোগ পেলে নাহয়…!”

-” মা, তোমাকে আরেকটা কথা বলা হয়নি!” মা’কে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ঈষিতার মামার কথাটা খুলে বলতেই মায়ের মুখে আলো ফুটে উঠলো। পারুলের মাথায় হাত রেখে বললেন,” আল্লাহর অশেষ দয়া। তিনি আমজাদকে সময় মতোই পাঠিয়েছেন। শোন্ রে মা, জীবনের তিরিশ বছরের সংসারে জানি যে, রূপ সৌন্দর্য টাকা পয়সার চেয়ে বড় জিনিস হলো চরিত্র। যার ওটা নাই তার বাকি সব থাকলেও সে পথের ভিখারী। আর আমি তোকে কোনো ভিখারীর হাতে তুলে দিবো না। তুই ঈষিতাদের আসতে বলে দে..!” পারুল অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ভাবতেই পারেনি মা এইভাবে নেবে ব্যপারটাকে। মনের মধ্যে অনেকটা সাহস পাচ্ছে সে এবার।

====

ঠিক পরদিনই ঈষিতা এসে হাজির। সাথে ওর আম্মু আর নানু। পারুলের মা যথাসাধ্য ভালোভাবেই অতিথি আপ্যায়ন করে দিলেন। ঈষিতার নানু যাবার সময় পারুলের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে ওর হাতে দুই হাজার টাকা দিয়ে গেলেন। বললেন,” আপনাদের দিক থেকা কোনো আপত্তি না থাকলে আমরা তাড়াতাড়িই কাবিনটা করায়া ফেলতে চাই। কিন্তু আপনারা তো ছেলে দেখেন নাই। একদিন আইসা আমার ছেলেটারে দেইখা যান ! ”

পারুলের মা শান্ত হেসে বললেন,” মেয়ে ছেলে দুজন যেখানে নিজেদের পছন্দ করেছে সেখানে আমার দেখা না দেখা সমান । আমি ওর বাবার সাথে কথা বলে আপনাদের জানাবো..!” যাবার আগ দিয়ে পারুলের মায়ের হাতে আমজাদের ছবি বায়োডাটা দিলো ঈষিতা নিজেই।
পারুলের কানে কানে বললো,” মামা ঢাকায় নেই। কাল ফিরবে। ফিরে সব শুনলে হয়তো আগে তোকেই ফোন করবে। একটু কথা বলিস। বেচারা তোর চিন্তায় একেবারে কাহিল হয়ে গেছে। আজকাল দেখলাম ডায়েটিংও করছে। তবে তোর আগের ঘটনা কাউকে জানায়নি। আমাকেও বলেছে, সবার জানার কোনো দরকার নাই। আমি জানসি , এইটাই যথেষ্ট। আমি চাই সবার মাঝখানে ও সম্মান নিয়ে থাকুক। কখনো কিছু হলে আমি ফেস করবো, আর প্রয়োজন মনে করলে পরে আমিই আম্মাকে ধীরে সুস্থে জানাবো, কিন্তু এখন এসব আলাপ একদম না !”

সব শুনে পারুল জবাবে কিছু বললো না। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো কেবল। ঈষিতারা যাবার পরপরই মা মেজফুপীকে ফোন দিলেন। তাকে মা কি বলেছে পারুল জানে না কিন্তু সেদিনই ইসতিয়াক ফোন করলো পারুলকে।

পারুল রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ইসতিয়াক বললো, ” কি ব্যপার? এরিমধ্যে একটাকে জুটিয়ে ফেলেছো শুনলাম?”

-” শুনেছো ই তো, আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?”

ইসতিয়াক খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললো,” মামী যতই বলুক, এটা তোমার পছন্দের পাত্র কিন্তু আমি তো জানি তুমি আমাকে ছাড়া আর কাউকে পছন্দ করো না। তার উপর একেবারে হুট করে! যাক্, যেজন্য ফোন করেছি। তোমার বিয়ের কাবিন নামা তুলে আনলাম। ভাবছি, তোমার কাবিনের দিন তো আমার দাওয়াত থাকছেই তোমাদের বাড়ীতে। সেদিনই কাবিননামা সহ উপস্থিত হয়ে একটা ধামাকা লাগিয়ে দিলে কেমন হয়। দেখি, মা মেয়ে কেমন সামলাতে পারো। তোমার বাপে তো এমনেই হাফ জান। ঐ দিন স্ট্রোক ফ্রোক হলে আবার আমাকে দোষ দিওনা কিন্তু..! উফ্, ঐ দিন বাড়ী ভর্তি আত্মীয় স্বজনের ভীড়ে যা জমবে না!” ইসতিয়াক মুখ দিয়ে “টাক” জাতীয় একটা শব্দ করলো।

-” তুমি কি আমাকে থ্রেড দিচ্ছো ?” পারুলের নিঃশ্বাস দ্রুততর হলো!

-” থ্রেড মনে করলে থ্রেড..! কিন্তু তোমার দেমাগ আমি ঐ দিন ভাঙ্গবোই। এতোদিন ধরে আমার জন্য ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসেছিলে আর আজ যখন আমি তোমাকে মেনে নিতে রাজী হয়েছি, এখন তোমাদের ডাট বেড়ে গেছে। কোত্থেকে এক মোটকু যোগাড় করে ফেলেছো। শালা মুদী দোকান চালায় আবার তোমারে বিয়ে করার খায়েশ জেগেছে !”

-“তুমি ওকে চেনো..? ”

-” উরেব্বাপরে….এক্কেবারে ‘ওকে..?’ ভালোই তো খেল জমিয়েছো। শালা মোটকুর বিয়ে করার শখ আমি বার করছি। বামুন হয়ে চাঁদে হাত দিতে আসছে..!”

-” মুখ সামলে কথা বলো। সে মানুষ হিসেবে তোমার চেয়ে অনেক উন্নত। অন্তত তোমার মতো ছদ্মবেশ ধারী না। যা বলার মুখের উপর সোজা সাপটা বলে। জিলাপীর প্যাঁচ কষে না! আর আজ আমি বড় চাঁদ হয়ে গেলাম তোমার কাছে। গত পাঁচ বছর তো পায়ের জুতা হয়েছিলাম ! আমি এখন ফোন রাখছি। আমার তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না!” বলে পারুল ফোন রেখে দিয়ে নিরব কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। হায় আল্লাহ! ইসতিয়াক আমজাদের খবরও জেনে গেছে। এটা নিশ্চয়ই মায়ের কাজ। ফুপীকে বলতে গিয়ে হয়তো সবই বলে দিয়েছে। না জানি ইসতিয়াক কোন ঝামেলা পাকায়! এই ইসতিয়াক কি ওকে জীবনে শান্তিতে থাকতে দিবে না।

(ইনশাআল্লাহ, আগামী পর্বে সমাপ্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here