চন্দ্রাবতী পর্ব ৩

#চন্দ্রাবতী
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক


বারিষ আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,’মাহমুদের সাথে আমার রাগারাগী হয়েছে এটা তুই জানিস কী করে?’
চন্দ্রা নিজেকে খুব চতুর ভাবতো। কিন্তু আজ সে ফেঁসে গেল।সে ভাবতেই পারেনি যে তার বারিষদা তারচেয়ে বেশি চতুর।অথচ ছোট্ট বেলা থেকেই দেখে এসেছে তার বারিষদা খুব চুপচাপ,ভীতু টাইপের ছেলে। হঠাৎ একটা কথা মনে করে চন্দ্রা ফিক করে হেসে ফেললো। তখন বারিষ উচ্চ মাধ্যমিকে সদ‍্য ভর্তি হয়েছে। সেই সময় একটা মেয়ে তাকে প্রেমপত্র দিয়েছিল। সেই প্রেম পত্র এনে সে তার মায়ের কাছে দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিল,’মা,দেখো একটা অসভ্য মেয়ে আমায় কী দিয়েছে!’
মামী ছেলের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। এমন বোকা ছেলেও কী পৃথিবীতে আছে!
সেই বারিষদা তাকে এভাবে প্রশ্ন করে হকচকিয়ে দিতে পারলো!
চন্দ্রাকে চুপ থাকতে দেখে বারিষ তার আরো কাছে ঘেঁষে গিয়ে বললো,’কী রে চুপ হয়ে আছিস কেন? মাহমুদের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে তা তুই জানিস কী করে?’
‘না এখন যে মাহমুদ ভাই বাসায় আসে না তাই ধারণা করে বলছি।’
চন্দ্রা কথাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললো।
বারিষ হেসে বললো,’ও আচ্ছা। তুই দেখি মস্ত বড় ধারণাবীদ হয়ে গেছিস!’
চন্দ্রা ফিক করে হেসে ফেললো। তারপর বললো,’আমি অনেক কিছু ধারণা করতে পারি বারিষ দা।’
বারিষ বুকে প্রচণ্ড সাহস জোগাড় করে বলে ফেললো,’আচ্ছা তুই কী আমার সম্পর্কেও কিছু ধারণা করে বলতে পারবি?’
‘হুম বলতে পারবো।’
‘আচ্ছা বলতো কিছু আমার সম্পর্কে।’
‘তুমি খুব ভাগ্যবান পুরুষ। তোমার বউ ভাগ‍্যও খুব ভালো। তোমার বউ হবে স্বর্গের অস্পরীদের মতো সুন্দর।হি হি হি।’
বারিষ দু ঠোঁট নেড়ে কী যেন বললো। কিন্তু তা ঠিক ধরতে পারলো না চন্দ্রা।

ভূবন পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। ওদের সাথে হেঁটে তিনি কুলিয়ে উঠতে পারেননি। এবার পেছন থেকে ডেকেই উঠলেন তিনি।
‘কী রে তোরা কী আমায় রেখেই চলে যাবে নাকি রে!’
ওরা দাঁড়ালো। তারপর দুজনের চোখ পড়লো দুজনের চোখে।চন্দ্রা কী ভেবে ফিক করে হেসে উঠলো।বারিষের বা বুকটায় তখন কেমন তুলপাড় ব‍্যাথা শুরু হলো। সেই ব‍্যাথায় তার চোখে জল পর্যন্ত এসে গেল।কী অদ্ভুত পুরুষ এই বারিষ দা।

বাসায় ফিরে চন্দ্রা তার মামীর ফোনটা খুব সাবধানে হাতে নিয়ে এক দৌড়ে ঘরের ছাদে চলে গেল। তারপর এ পাশ ও পাশ ভালো করে দেখে মাহমুদের নম্বরে কল দিলো।
ও পাশ থেকে মাহমুদ ধরে বললো,’চন্দ্রাবতী।’
চন্দ্রার কী যে ভালো লাগলো ডাকটা শুনে।সে অন‍্য কিছুর জন্য না হলেও শুধুমাত্র এই চন্দ্রাবতী ডাকটা শুনার জন্য মাহমুদের সাথে কথা বলতে চায় রোজ একবার হলেও।
চন্দ্রা বললো,’মাহমুদ ভাই, আপনি কেমন আছেন?’
মাহমুদ বললো,’মোটেও ভালো না। তোমায় নিয়ে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি।’
চন্দ্রা খানিক শিউরে উঠে বললো,’কী স্বপ্ন?’
‘বলতে আমার লজ্জা করে যে!’
‘তবুও বলুন।বলতে হবেই।’
‘দেখেছি বারিষ তোমায় —‘
‘কী?’
‘না বলবো না।এসব কথা প্রেমিকা আর বউ ছাড়া আর কাউকেই বলা যায় না। লজ্জা করে।’
‘আচ্ছা আমায় শুধু বলে ফেলুন প্লিজ!’
‘না বলবো না।’
‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ!’
‘দেখেছি তোমায় না বারিষ জোর করে বিয়ে করে ফেলেছে। তারপর তোমার সাথে ওইসব করছে।’
বলে লজ্জায় মরে যেতে লাগলো মাহমুদ।
চন্দ্রা অবাক হলো।একইরকম স্বপ্নই কীভাবে দুজন দেখে ফেললো।চন্দ্রা বললো,’
কী সব করেছে আমার সাথে বারিষ দা। বলুন না ভাইয়া!’
‘ছিঃ! অসভ্য মেয়ে। আমি কিন্তু ফোন কেটে দিবো।’
চন্দ্রা বললো,’না বললে কিন্তু আমি আর আপনার সাথে কোনদিন কথা বলবো না।’
মাহমুদ খানিক সময় চুপ করে রইলো। তারপর বললো,’আমি তো আগেই বলেছি এসব কথা নিজের বউ আর প্রেমিকাদের কাছেই শুধু বলা যায়।’
‘তাহলে আপনি কী এই স্বপ্নের কথা আপনার প্রেমিকার কাছে বলেছেন।’
‘ছিঃ! আমার কী এসব আছে নাকি?’
‘তাহলে করেন না কেন?একটা প্রেম করে ফেলুন। প্লিজ প্লিজ করে ফেলুন।’
মাহমুদ হেসে বললো——-
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here